#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-১৬
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
রূপন্তী পরেরদিন অনেক রাতে ফেরত আসলো।বাই রোড আসতে হয়েছে।তারপর আবার নারায়ণগঞ্জ গিয়ে রিমিকে একেবারে গার্মেন্টসের ম্যানেজারের সাথে দেখা করিয়ে হোস্টেলে রেখে এসছে।তারপর ফেরার সময় ঢাকার ভিতরে ঢুকতে খেয়েছে জ্যাম।
ক্লান্ত শরীর নিয়ে বাসায় ঢুকে সব নীরব পেলো।সায়নের রুমের দরজা বন্ধ। হতে পারে একেবারে শুয়ে গেছে।
ভেতরে ভেতরে তাকে দেখার তেষ্টা থাকলেও সে আর সেদিকে গেলো না।প্রথমত সে অনেক ক্লান্ত। দ্বিতীয়ত যে জিনিস সে আগলে রাখতে পারবে না, সেটার জন্য মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই। ক্লান্ত ভঙ্গিতে রান্নাঘর থেকে বিস্কুটের বয়াম টা নিয়ে সেও নিজের রুমে চলে গেলো।আজকের মতো সেও রুম থেকে আর বের হচ্ছে না।
কোনো এক বিচিত্র কারনে সায়নের সাথে তার আগামী চারদিন আর দেখা হলো না।সে সকালে উঠে হয় তাকে ঘুমে পায় নাহয় সায়ন চলে যায়। রাতে হয় সে দেরি করে ফেরে নাহয় সায়ন দেরি করে ফেরে।
আজ পঞ্চম দিনে দুজনের দেখা হয়ে গেলো।
রূপন্তী কোনো একটা কারনে রাগে হিসহিস করছে।সে আপাতত ড্রয়িং রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছে।ঠিক সেসময় সায়ন আসলো।হাতে এপ্রোন,কাঁধে ব্যাগ। প্রচুর ক্লান্ত!
সে এসে রুমে গিয়ে ফ্রেশও হয়ে আসলো অথচ রূপন্তীর কোনো ভাবাবেগে নেই।সে হিসহিস করেই যাচ্ছে আর ল্যাপটপে টাইপ করেই যাচ্ছে।
সায়ন তাকে অবাক নয়নে অবলোকন করতে করতে পাশে বসলো।স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো রূপন্তী কাওকে ইমেইল লিখছে।কিন্তু ফুঁসছে কেন?
দুই এক মিনিট চুপ থেকে সে ধাম করে রূপন্তীর মাথায় একটা চাপড় মারলো।রূপন্তী এই জগৎ এ ফেরত আসার মতো করে সায়নের দিকে তাকালো।অবাক সুরে জিজ্ঞেস করলো,
– তুই মারলি আমাকে?
সায়ন বিরক্ত হলো।কোনো একটা কারনে কোনো বেকুবি বা ন্যাকামি রূপন্তীর সাথে মানায় না।হতে পারে সেটা সেই স্টুডেন্ট লাইফ থেকে তার গম্ভীর ভাব দেখে আসার কারনে।
সায়ন সেদিকে না গিয়ে উত্তর দিলো,
– না ভূতে মেরেছে।এবার বল এরকম নাগীনের মতো হিসহিসাচ্ছিলি কেন?
রূপন্তী ক্লান্ত ভঙ্গিতে মাথা নাড়তে নাড়তে বলল,
– আর বলিস না!গতকাল একটা পেশেন্ট এসেছিলো।একটা বাচ্চা মেয়ে,ষোলো সতেরো বছর হবে। তার নাকি খাওয়া দাওয়ায় অরুচি,বমি হয়,শরীর ক্লান্ত লাগে। মেয়েটা আন্ডারওয়েট বুঝছিস?!আমার মাথায় প্রথমেই অত কিছু আসে নাই।আমি ভাবলাম কিডনি বা লিভারে প্রবলেম হচ্ছে নাকি।আল্ট্রাসাউন্ড এর সাথে কিছু টেস্ট দিলাম।আজকে রিপোর্ট নিয়ে এসেছে। আমি আল্ট্রার রিপোর্ট দেখে একদম বেকুব হয়ে গেলাম।জিজ্ঞেস করলাম পিরিয়ড কত দিন আগে হয়েছে?সে মাথা নিচু করে নিলো। অর্থাৎ সে এই ব্যাপারে আগে থেকেই অবগত।আমি লেজিট বেক্কল হয়ে গিয়েছিলাম।মানে পিচ্চি একটা মেয়ে ভাই।কোন ক্লাসে পড়ে জিজ্ঞেস করতেই জানালো ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে।সাথে কেউ এসেছে নাকি জিজ্ঞেস করতেই মাথা নাড়ালো। আমি বললাম নিয়ে আসতে।নিয়ে আসলো।
রূপন্তী চোখ বড় বড় করে সায়নের দিকে তাকিয়ে বলল,
– গেস হোয়াট?একটা ২০/২১ বছর বয়সী ছেলে ঢুকলো।ঢুকে নগদেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল,”সরি ম্যাম,খেয়াল ছিলো না।প্লিজ কিছু একটা করেন।” আমি হতভম্ব হয়ে কিছুক্ষন বসে রইলাম।এরপর আমদের হাসপাতালেরই একজম গাইনীর কাছে রেফার করে দিলাম।স্ট্রিক্টলি বলে দিলাম যাতে মা বা বড় কেউ ছাড়া না যায়। তখন তো মেয়েটার সে কি কান্না!বাবা-মা জানলে তাকে মেরে ফেলবে। অথচ নিজের সর্বনাশ করার আগে একবারো সেটা ভাবলো না।মা কলেজের টিচার, বাবা ব্যাবসায়ী। মেয়েকে ভরসা করে একা ছেড়ে দিয়েছে।বাচ্চা মেয়েটার কান্না দেখে পরে বললাম মা’র ইমেইল আইডি দিতে, আমি মেইল করবো। বের হয়ে রাদিয়া আপা(গাইনী), উনার সাথেও কথা বললাম।এতক্ষন বসে মেয়ের মাকে পাঠানোর জন্য ইমেইল লিখছিলাম।লিখতে গিয়ে মেজাজটা খারাপ হয়ে গেলো।
সায়ন এতক্ষন পুরো কথা মনযোগ দিয়ে শুনেছে।রূপন্তী কথা শেষ করতেই সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
– এসব ব্যাপার এখন কমন।আমার কাছেও গতমাসে দুটো এসেছিলো।অবশ্য দুটোই ম্যাচিউর ছিলো।পরে গাইনী দেখাতে বললাম।কিন্তু তোর তো মেয়েটা আন্ডারএইজ।
– হুম।
বলে টাইপিং শেষ করে ই-মেইল টা পাঠিয়ে দিলো।তারপর সায়নের দিকে পরিপূর্ণ নজরে তাকালো।সাথে সাথে ভ্রূ জোড়া কুঁচকে এলো।সায়ন জিজ্ঞাসু মনোভাব প্রকাশ করতেই সে জিজ্ঞেস করলো,
– তুই রাতে ঘুমাস না?চোখের নিচে কালি পড়েছে কেন?
সায়ন একটু দম নিয়ে বলল,
– হুম।গত পাঁচ ছয়দিন ধরে ঘুম হয় না।
রূপন্তী তখন উঠে রান্নাঘরে যেতে যেতে বলল,
– আর আমি এই কয়দিন মরার মতো ঘুমাচ্ছি।যদিও ঔষধ খাচ্ছি বলেই ঘুমাচ্ছি।
সায়ন উঠে এসে ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো,
– ঔষধ আবার কিসের জন্য খাচ্ছিস? তাও ঘুমের ঔষধ?
রূপন্তী তখন খাবার দাবার টেবিলে এনে রেখে নিজে বসেছে।সায়নের প্রশ্ন শুনে বুঝলো সে নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেছে।কি বলবে ভেবে না পেয়ে সত্যটাই বলে দিলো।নিচু কণ্ঠে বলল,
– আমারও রাজশাহী যাওয়ার আগে পর্যন্ত কয়দিন ধরে ঘুম হতো না।রাজশাহী থেকে আসার পর থেকে ঔষধ খেয়ে ঘুমাই।
সায়নের মনটা হালকা দুলে উঠলো।কারণটা তার কাছে পরিষ্কার হতে চাইলেও সে দিলো না।কিছু দ্বিধার মাঝে আটকে রাখলো।পরপর বিষয় চেঞ্জ করে বলল,
– টিন মেয়েদের প্রেগ্নেন্সি দেশে দিন দিনে বেড়েই চলেছে।সেদিন একটা স্ট্যাটিস্টিক্স দেখলাম।
রূপন্তী মুখে এক লোকমা ভাত তুলে বলল,
– বাড়বেই তো।আমাদের দেশে ইন্টিমেসির ব্যাপারটা এখনো ট্যাবু হিসেবে রয়েছে। বাবা-মা কথা বলতে লজ্জা পায়।কোনো ইন্সটিটিউসনে এটার উপর বলা হয় না।বাচ্চারা এটার উপর আইডিয়া পাবে কিভাবে? তাদের জন্য তো এটা এখন ইন্টারেস্টিং ব্যাপার।প্রেম করা মানেই তাদের কাছে শরীর নিয়ে খেলা করা।এসব ব্যাপারে জ্ঞান নেই বলেই তো আনসেফভাবে এসব দিন দিন বাড়ছে। ফল হিসেবে হয় মেয়েরা প্রেগন্যান্ট হচ্ছে নয়তো বিভিন্ন ডিজিজের আউটব্রেক হচ্ছে।
– হুম।কিন্তু ফরেইন কান্ট্রির ও একটু হলে ইফেক্ট আছে। দিন বদলাচ্ছে।মানুষ ওয়েস্টার্ন কান্ট্রিগুলোকে ফলো করার চেষ্টা করছে।
– সেটা বুঝলাম।তাহলে ওয়েস্টার্ন কান্ট্রির ভালো দিকগুলো ফলো করুক।তাছাড়া একটা সন্তান তার মোরাল, রিলিজিয়াস সব শিক্ষা পায় নিজের পরিবার থেকে।তুই তো দীর্ঘ কত বছর বাহির থেকে আসলি, কখনো রুমডেট করেছিস?করিস নাই,কারন পরিবার থেকে তেমন শিক্ষা পেয়েছিস।আর আমি তো মানুষের সাথে ঠিকমতো মিশিই নাই।এসব তো দূরের কথা।
– হ ভাই।তুই তো এক নাম্বারের একটা নার্ডের বাচ্চা ছিলি।
এই কথার উত্তরে রূপন্তীর গলা ফাটিয়ে ঝগড়া করার কথা থাকলেও করলো না।বরং হেসে দিলো। দুজনে অতীত নিয়ে আরো গল্প করা শুরু করলো।
এভাবেই টুকটাক খুনশুটিতে তাদের দিন যেতে শুরু করলো।দুজনেই আবার পড়াশোনা শুরু করেছে।অতঃপর খুব বেশি গল্প করাও তাদের হতো না।খাওয়ার সময়টাতেই যা হয়।।
চোখের পলকে তিন মাস কেটে গেলো।ফাহাদের সেই “সবাই মিলে একদিন আড্ডায় বসবো ” কথাটা এই তিন মাসে আর হয়ে উঠেনি।সকলেই ব্যাস্ত।আর তাছাড়া তারা এখন প্রচুর প্র্যাক্টিস করে। যার ফলে একটার পর একটা ওটি লেগেই থাকে।
ইতিমধ্যে শীতের আগমন ঘটেছে। ভোরে উঠলে দেখা মিলে কুয়াশার।
আজকে সায়ন আর রূপন্তী ব্যাস্ত নিজেদের বাসা সাজাতে।অনেকদিন পর তারা বন্ধু-বান্ধব রা আজ একসাথ হবে। সবাই রূপন্তীর বাসায় আসবে।শেষমেশ বহুদিন পর তারা একসাথে আজ একটু হাসি ঠাট্টা করবে।
#চলবে
#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-১৭
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
দুইজনই দ্রুত নিজেদের কাজ শেষ করে গোসল করতে চলে গেলো।সবাই চলে আসবে।রূপন্তী নামাজ শেষ করে কি মনে করে শাড়ি পরলো।নীল রঙের একটা সিল্কের শাড়ি। পড়ার পর মনে হলো সে মনে হয় আগের থেকে একটু মোটা হয়েছে। সাথে সাথে তার টনক নড়লো।মোটা হওয়া যাবে না। আয়নায় ঘুরে ফিরে কয়েকবার নিজেকে দেখলো।নাহ,জিমে যেতে হবে। এভাবে চললে সে আবার সাস্থ্য বাড়িয়ে ফেলবে।খাওয়া দাওয়াও কমাতে হবে।
সে আপাতত ওই চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেললো।কাজল বের করে চোখের নিচে লাগিয়ে নিলো।ঠোঁটে লিপ্সটিক লাগাতে গিয়ে মনে হলো একটু পরে খেয়ে বসবে।লিপ্সটিক খাওয়ার পর লাগাবে বলে এখন খালি লিপ বাম লাগিয়ে নিলো।কপালে ছোট্ট একটা কালো টিপ পড়লো।কানে পড়লো একটা ছোট ঝুমকা।চুলগুলো খোপা করে ফেললো।তার চুল এই কয়েক মাসে অনেক লম্বা হয়ে গেছে। এত লম্বা চুল ভেজাল করলেও ঠিক করেছে এবার আর কাটবে না।তাই সারাদিন খোপা করে রাখে। এখনও তাই করলো।
সাজগোজের মাঝেই কলিং বেল বাজলো।সায়ন এখনও রুমে। তাই সে ই গিয়ে দরজা খুললো।আরহান,আরাদ্ধা,ফাহাদ, তিনজন এক সাথেই এসেছে। তিনজনই রূপন্তীকে দেখে একসাথে বলে উঠলো,’বারাকাল্লাহ!’
ওদের এইরূপ রিয়েকশনে রূপন্তী লজ্জা পেয়ে গেলো।ওদের কে নিয়ে এসে নিজের আরেকটা খালি রুমে ঢুকলো।এই রুমের বিছানাটা বড়।সবাই আরাম করে বসে আড্ডা দিতে পারবে।
ফাহাদ আর আরহান মিলে সায়নকে ডাকতে গেলো।রূপন্তী গেলো খাবার গরম করতে। পিছে পিছে আরাদ্ধাও গেলো।সেও একটা সবুজ জামদানী শাড়ি পড়েছে।তাকেও দেখতে অসম্ভব সুন্দর লাগছে।বের হওয়ার আগ মুহূর্তে আরহানের মাথা বিগড়ালেও আরাদ্ধা জোর করে টেনে এনেছে।কিন্তু তার বদলে আরহানকে গুনে গুনে তেরোটা চুমু খেতে দিতে হয়েছে।
আরাদ্ধা বান্ধবীকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।উচ্ছলিত কণ্ঠে বলল,
– তোকে যে কি সুন্দর লাগছে রূপু!বলে বোঝাতে পারবো না।
তারপর ওকে ছেড়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে মুখ বাঁকিয়ে বলল,
– এত সুন্দরী একটা মেয়ের সাথে একই বাসায় থাকলে আমি যদি ছেলে হতাম,তবে সেই কবেই প্রেমে পড়ে যেতাম।সায়নটা যে কি গাধা!
রূপন্তী মুচকি হেসে বলল,
– সায়নের চোখে আমি কখনোই সুন্দর ছিলাম না।
– তোর মাথা। ও কখনো তোকে ঠিক করে দেখেই নাই।একবার যদি চোখ তুলে খুটিয়ে খুটিয়ে দেখে, তখন বুঝবে যে তার কাছে সাক্ষাৎ আগুন আছে।
রূপন্তী লজ্জায় ঝামটা মেরে বলল,”যাহ!”
.
সবাই আড়াইটার দিকে খেতে বসলো।খাবারের মেনু হচ্ছে তেহারি,সবজি,মুরগির ঝোল, সালাদ ও কোক।
খাওয়ার মাঝে রূপন্তীর এক পালা প্রশংসা হয়ে গেলো।সবাই রীতিমতো চেটেপুটে খেয়েছে।খাওয়া শেষ করার পর সবাই ঠিক করলো ঘুরতে বের হবে। পাশেই হাতিরঝিল। সেদিকেই যাবে ঠিক করলো।ছেলেরা সব সায়নের রুমে গেলো ঠিকঠাক হতে।আরাদ্ধা রূপন্তীর পিছে পিছে ওর রুমে গেলো।
সবার রেডি হয়ে বের হতে হতে সাড়ে চারটা বেজে গেলো।গিয়ে সবাই হাটা দিলো রাস্তার ধারে।এরপর সবাই ছবি তুললো।আরহান ফাহাদকে ফোনে কিছু একটা দেখাচ্ছিলো।তাই আরাদ্ধা সায়নের হাতে ফোন দিয়ে বলল ওর আর রূপন্তীর একটা ছবি তুলে দিতে।সায়ন ফোন হাতে ওদের ছবি তুলতে গিয়ে এক দৃষ্টিতে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে রইলো।কি দেখছে, কাকে দেখছে সে নিজেও জানে না।তবে বুকের মধ্যে একটা নাড়া দিয়ে উঠলো।সেই সময় আরাদ্ধা চিৎকার মারলো,
– তুলেছিস?আর কতক্ষন দাঁতি কেলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবো?
সায়ন তখন ছবি তুলে ওদের কাছে এগিয়ে গেলো।আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে নীরস কণ্ঠে বলল,
– তোর তিন টোলের হাসি এত সুন্দর!আগে খেয়াল করলে আরহান ভাইয়ের আগে তোকে আমিই ধরে বেঁধে বিয়ে করে ফেলতাম।
আরহান আর ফাহাদ তখন ওদের সাথে দাঁড়িয়েছে মাত্র। এই কথা শুনে সে সাথে সাথে সায়নের মাথায় একটা চাপড় মারলো।তারপর আরাদ্ধার পাশে দাঁড়িয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে সায়নের উদ্দেশ্যে বলল,
– একদম আমার বউয়ের দিকে নজর দিবি না।এমনেই অনেক কষ্টে তোর বোন আমার কাছে ধরা দিয়েছে।
সায়ন ভ্রূ কুঁচকে মাথা ডলতে ডলতে বলল,
– কেন?ও তো তোমার বিরহে আরও এক যুগ আগে থেকে পুড়ছে৷
ফাহাদ তখন মুখ টিপে হাসতে হাসতে বলল,
– ওদের অনেক কাহিনী আছে।
রূপন্তী তখন উৎসাহিত ভাবে বলল,
– কি কাহিনী?
আরাদ্ধা তখন ওকে থামিয়ে বলল,
– বাসায় গিয়ে শুনিস।
তারপর সায়নের দিকে তাকিয়ে বলল,
– আশেপাশে আরো অনেক সুন্দর জিনিস আছে। চোখটা ভালো করে খুলে দেখ।
সায়নেরটা জানা নেই,তবে রূপন্তীর কথাটার মানে বুঝতে এক সেকেন্ড ও লাগলো।সায়নের দিকে তাকাতেই চোখে চোখ পড়ে গেলো।অর্থাৎ সায়নও আরাদ্ধার কথা শুনে তার দিকে তাকিয়েছে। সে দ্রুত চোখ সরিয়ে ফেললো।মনের মধ্যে একটা কথাই আবার উঁকি মারলো,”মায়া বাড়িয়ে লাভ নেই!”
.
ওরা ফিরলো সাতটার দিকে। রূপন্তী চেঞ্জ করে আবার রান্নাঘরে গেলো।উদ্দেশ্য সন্ধ্যার নাস্তা বানানো ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা করা।ঝটপট চাউমিন বানিয়ে ফেললো।রাতের খাবারের জন্য রুই মাছ বসিয়ে দিলো।সাথে ভাত আর সবজি।
খাবার হাতে রুমে এসে দেখলো একেকজন হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। সেও যুক্ত হলো।খাওয়া শেষে আরহান ফাহাদকে জিজ্ঞেস করলো,
-তুই আজ এত আনমনা কেন?বেশি কথাও বলছিস না। কোনো সমস্যা?
ফাহাদ মাথা নাড়ালো।তখন রূপন্তী বলল আরহান আর আরাদ্ধার বিয়ের কাহিনী বলতে।ফাহাদ সবেমাত্র অর্ধেক কাহিনী শেষ করেছে তখন রূপন্তী ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো সাড়ে নয়টা বাজে। অতএব ফাহাদকে সেখানেই থামিয়ে ডিনার সার্ভ করতে চলে গেলো।বাকিদের বলে গেলো ডাইনিং এ আসতে।
সবাই ডিনার শেষ করে আবার আড্ডায় বসলো।আজকে ছুটি ছিলো।কালকে আবার শুক্রবার। তাই কারো তাড়া নেই।
সবার হায়ে রূপন্তীর বানানো ব্রাউনি। ব্রাউনির উপর এক স্কুপ করে আইস্ক্রিম।চুলায় ইতিমধ্যে চা বানানো আছে। খাওয়ার সময় গরম করে আনবে।ফাহাদ আরহানদের কাহিনী শেষ করতেই আরাদ্ধাকে তার গাধামির জন্য কিছুক্ষন পচানো হলো।
রূপন্তী তখন আরাদ্ধাকে মুগ্ধর কথা জিজ্ঞেস করলাও।আরাদ্ধা নির্বাক কণ্ঠে উত্তর দিলো,
– মুগ্ধ, সায়রা, দুটোই গায়েব। মনে হচ্ছে কোনো কাহিনী ঘটিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে।
ফাহাদ তখন পাশ থেকে বলল,
– হুম,মনে হয় বিয়ে করে ফেলছে।
সায়ন তখন বলল,
– কিন্তু মুগ্ধরা তো অনেক হাই সোসাইটি থেকে বিলং করে। সায়রাকে ওর বাবা মা মানবে?!
আরাদ্ধা উত্তর দিলো,
– সেটা বলতে পারি না।তবে সায়রার মাঝেও কোনো কমতি নাই।।
এসব কথা থেকে হুট করে সবাই বাবা মাকে নিয়ে বলা শুরু করলো।ছোটবেলার গল্প করতে লাগলো সময়।
ফাহাদ আগে থেকেই চুপ। রূপন্তীর ও এই ব্যাপারে বলার কিছু নেই।সে মনযোগ দিয়ে বাকিদের গল্প শুনছে।
সায়ন নিজের বাবা মাকে নিয়ে কিছু বলছিলো।মূলত তার বাবার খারাপ দিক গুলো বলছিলো।রূপন্তী এর মাঝে একবার থামিয়েছে।সায়ন পাত্তা দেয় নাই। দ্বিতীয় বার যখন বলল,
– বাবা-মাকে নিয়ে এমন বলতে হয় না।
সায়ন তখন ক্ষেপে গিয়ে ঠাশ করে বলে ফেলল,
– এতিম, এতিমের মতো থাক। এসব ব্যাপার তুই বুঝবি না।
সাথে সাথে পরিবেশ ঠান্ডা হয়ে গেলো।সায়ন নিজেও বুঝতে পেরে চোখ খিঁচে ফেললো।
আরহান তখন দ্রুত পরিবেশ ঠান্ডা করতে কথা ঘুরিয়ে ফেললো।সায়নকে কয়েকটা ঝাড়ি মারলো কয়েকটা।আবার সবাই টুকটাক কথা বলতে লাগলেও আর জমলো না।
এক ফাঁকে রূপন্তী “আমি একটু আসছি” বলে উঠে গেলো।ওর পিছে পিছে আরাদ্ধাও গেলো।বাকি দুইজন সায়নকে ইচ্ছেমতো ঝাড়তে লাগলো।
#চলবে।