এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-২৪+২৫

0
430

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-২৪
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
কী করবে?কি করা উচিৎ এখন?পিছিয়ে আসা যাবে না। এভাবে ছাড় পেলে সামনে আরো কত মানুষের প্রাণ যাবে হিসেব নেই। সেখানে শুধুমাত্র নিজের প্রাণ গেলে ক্ষতি নেই।তবে প্রাণের মায়া সবারই আছে। রূপন্তীরও ব্যাতিক্রম নয়।এরমধ্যে এখন তার সাথে আরো কয়েকটা জীবন জড়িয়ে আছে। বাকিদের কথা বাদ দিলেও সায়নেরটা মুখ্য। তবে কি সায়নকে জানিয়ে রাখবে?
তাহলে যদি রাফি এহমাদ আরো বেড়ে যায়?!সত্যি সত্যি যদি ভয়ংকর কিছু করে ফেলেন?মন বলছে পিছিয়ে আসতে।বিবেক মনে করিয়ে দিচ্ছে বাচ্চা মেয়েটার কথা।
নিজের সাথে যুদ্ধ করতে করতেই কানে জয়ার ডাক ভেসে আসলো।নিচে খেতে যাওয়ার জন্য ডাকছে। ভেবেছিলো এখানে যে কয়দিন থাকবে, নিশ্চিন্তে কাটাবে। কিন্তু পারবে বলে মনে হচ্ছে না।
সবাই ইতিমধ্যে টেবিলে বসে গেছে। সায়নও বেশ আয়েশ করে খাচ্ছে। খাবেই তো।এই বেয়াদবের তো কোনো প্রকার অশান্তি কিংবা দুশ্চিন্তা নেই।

রূপন্তী তারিফ সাহেবকে সালাম দিল।তারিফ চৌধুরীও পুত্রবধূর খোঁজ খবর নিতে লাগলেন।জয়া রূপন্তীর পাতে খাবার তুলে দিলেন।
সবাই টুকটাক গল্প করতে লাগলো খেতে খেতে।যেখানে রূপন্তী শুধুমাত্র শ্রোতা। প্লেটে থাকা খাবারের মনে হয় শুধুমাত্র এক লোকমা মুখে দিয়েছে।সবার যখন খাওয়া শেষ, তার প্লেটে খাবার তখনও আগের মতো।জয়া বেশ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
– তুমি খাচ্ছো না কেনো মা?কোনো সমস্যা?

রূপন্তী হাসার চেষ্টা করলো।একটু দোনামোনা করতে করতে বলল,
– মা, আপনারা যদি মনে না নেন তবে আমি খাবারটা নিয়ে উপরে যাই? আমার এখন আসলে খেতে ইচ্ছে করছে না তো,পরে আস্তে ধীরে খাবো।
– হ্যা হ্যা সমস্যা নেই।নিয়ে যাও।

পুরো ঘটনার এক মাত্র নীরব সাক্ষী সায়ন। যেই মেয়েটা সারাটা বিকাল আর সন্ধ্যা উৎফুল্ল ছিলো,তার হঠাৎ এমন চুপ হয়ে যাওয়ার পেছনে কোনো একটা কারণ আছে।এটা নতুন না।গত দশ-বারোদিন ধরে রূপন্তী এই ব্যাপারটা ঘটাচ্ছে।ডাক্তারি পড়ার সঙ্গে সাইকোলজির সুক্ষ্ম একটা কানেকশন আছে।প্রত্যেক ডাক্তারের এর উপর ছোট খাটো ধারণা থাকে।রোগীর চিকিৎসার জন্য সবার আগে তার মন মানসিকতা বোঝা লাগে।সেই থেকে এখন বাকিদের মন মানসিকতা বুঝতে দেরি হয় না।তবে মানুষটা যদি নিজের সমস্যা মুখ ফুটে না বলে, তবে তা সমাধান করাও সম্ভব না।
রূপন্তীকে নিয়ে ঠিক এখানেই সমস্যা হচ্ছে। মেয়েটার পেটে বোমা ফেললেও মনে হয় না সহজে মুখ খুলবে।
সবাই উঠে গেছে। সায়নও উঠে হাত ধুয়ে রান্নাঘরের দিকে এগোলো। চায়ের নেশা ধরেছে।হুট করে কি মনে করে আর গেলো না।চা রূপন্তীকে নিয়ে খাবে। তার আগে মেয়েটাকে খাবার খাইয়ে দেয়া আসা দরকার।
আস্তে ধীরে উপরে উঠে এলো।রুমে এসে দেখলো রূপন্তী এক মনে ফোনে কিছু একটা দেখছে।সায়ন কিছু বলল না।ওয়াশরে গিয়ে হাত ধুয়ে এসে টেবিলে রাখা খাবারের প্লেটটা নিয়ে রূপন্তীর সামনে বসলো।
রূপন্তী এবার যেনো ধ্যান ভাঙলো। সায়ন কখন এসেছে খেয়ালও করেনি।মাথা তুলে সায়নের দিকে তাকানোর আগেই এক লোকমা ভাতের উপস্থিতি দেখলো নিজের চোখের সামনে।কিছু বলবে তার আগেই সায়ন খ্যাক করে উঠলো,
-কথা বললে একটা থাপ্পড়ও নিচে পড়বে না।চুপচাপ খা।

এই বেয়াদব ছেলেকে ভয় পাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবুও রূপন্তী তাকে আর ঘাটালো না।খাবারটুকু মুখে নিয়ে নিলো।গলা দিয়ে নামতে না চাইলেও পুরোটা খাবার জোর করে গিললো।
খাওয়ানো শেষ করে রূপন্তীকে চা বানিয়ে আনতে বলল।রূপন্তীও বাধ্য মেয়ের মতো চুপচাপ নিচে চলে গেলো।
পনেরো মিনিটের মাথায় হাতে এক কাপ চা নিয়ে ফেরত আসলো সে।সায়ন কাপটা হাতে নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– নিজের জন্য আনিস নি?
– উহু।
সায়ন বিরক্ত হয়ে বিড়বিড়ালো,”বেরসিক একটা! কাছে টানতে চাচ্ছি, কিন্তু আসতে চাচ্ছে না।ভেতরে ভেতরে ঠিকই আবার ভালোবেসে মরবে।বেয়াদব একটা!”
রূপন্তী ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
– কিছু বললি?
সায়ন মেকি হাসলো।মাথা নেড়ে না জানালো।রূপন্তী তখন আবার বলল,
– আচ্ছা।আমি ঘুমাতে যাচ্ছি। তুই দেখ কি করবি।
বলে সায়নের উত্তরের অপেক্ষাও করলো না।লাগেজ থেকে নাইট স্যুট বের করে ওয়াশ্রুমে চলে গেলো। সায়ন কিছুক্ষন সেদিকে তাকিয়ে থেকে রুম থেকে বের হয়ে গেলো।নিচে গিয়ে টিভি দেখবে এখন।
.
সায়ন রুমে আসলো রাত দেড়টার দিকে।এতক্ষন বসে বসে একটা মুভি দেখেছে, তাই এত দেরি।
রূপন্তী ইতিমধ্যে ঘুমিয়ে গেছে।ভারি নিশ্বাসের আওয়াজ কানে লাগছে।
সেও ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লো।ছুটিতে এসে এখন বেহুশের মতো ঘুমানোর কথা।কিন্তু সায়ন টানা পনেরো মিনিট এপাশ ওপাশ করেও চোখের পাতা এক করতে পারলো না।অস্থির লাগছে। কেনো লাগছে সে জানে।রূপন্তীর ঠোঁটের ছোয়া পায়নি আজ।মেয়টা তার আগেই ঘুমে বিভোর।
আরো কিছুক্ষন এপাশ ওপাশ করে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলো না।আস্তে করে রূপন্তীর দিকে ফিরলো। তারপর হাত দুটো এগিয়ে রূপন্তীর গায়ে রাখলো।
জেগে গেলে কিছু একটা বলে সামাল দেওয়া যাবে। তার আগে চেষ্টা করে দেখতে সমস্যা কী। এই মেয়ে এমনেও ঘুমানোর সময় হুশ জ্ঞান হারিয়ে ঘুমায়।টের নাও পেতে পারে।
খোদাকে স্মরণ করতে করতে ওকে আলতো হাতে টেনে এদিকে ফিরালো।রূপন্তীর চোখের পাতা একটু নড়ে উঠলেও খুললো না।
সায়ন আর দেরি করলো না।মেয়েটাকে টেনে এনে নিজের কোলের মাঝে আবদ্ধ করে নিলো।
ইশ!এত নরম কেন মেয়েটা।একটু জোরে ধরলেই মনে হয় ব্যাথা পাবে। আরেকটু খাটো হলে একদম বুকের ভেতর ঢুকিয়ে রাখতো।এই মেয়েটার প্রতি অনুভুতিগুলো দিন দিন এভাবে বুলেট গতিতে কেন বাড়ছে?!
নরম গালে ভরে ভরে চুমু খেলো।ঠোঁটে চুমু খেতে গিয়েও নিজেকে সামলালো।সুযোগ নিয়ে এতোটাও বাড়াবাড়ি করা উচিত না।অতপর মুখ গুজলো গলার মাঝে।শোয়ার আগে মিস্ট লাগিয়েছে নাকি!নেশা ধরে যাচ্ছে রীতিমতো।
নিজেকে শক্তভাবে সামলালো।তবে সহজে পারলো না।অনেক্ষন ধরে মেয়েটার গালে,কপালে চুমু খেয়ে, আদর করে নিজেকে শান্ত করলো।এখন একটা শান্তির ঘুম দিবে। সকালে উঠে ভাবা যাবে রূপন্তীর অনুপস্থিতে সে কাজটা ঠিক করেছে নাকি করে নাই। তবে মনে মনে রূপন্তীর ঘুমের প্রশংসা না করে পারলো না।এত গভীর স্পর্শ পাওয়ার পরও মেয়েটা গভীর ঘুমে মগ্ন।
.
রূপন্তীর ঘুম ভাঙলো মুখে ছোট ছোট ছোয়া পেয়ে। অতি কষ্টে চোখ খুলে মুখের নিকট ছোট্ট একটা মুখ আবিষ্কার করলো।কপালের বেবি হেয়ারগুলো বার্বি ক্লিপ দিয়ে লাগানো।সেই ফোলাফোলা গাল।রূপন্তী সাথে সাথে লাফ দিয়ে উঠে বসলো।রুহি বেচারি ভড়কে গিয়ে মায়ের কাছে ঘেষে বসলো।
রূপন্তী সবটা ঠাওর করতে একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।ডানপাশে সোফায় সায়ন বসা।
আর বিছানায় রূপন্তীর বাম পাশে সীমন্তী আর তার কোলে রুহি বসা।
রুহিকে দেখেই তার মনটা ভালো হয়ে গেলো।হাত বাড়িয়ে পিচ্চিটাকে নিজের কোল নয়ে আসলো।রুহিও মামনির কোলে আসতে আপত্তি জানালো না।রূপন্তী ওর ফোলা গালে একটা চুমু খেয়ে সীমন্তীর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কেমন আছেন আপু?
– আলহামদুলিল্লাহ। তোমার খবর কী?
– এই তো যাচ্ছে।কখন আসলেন?
– আধঘন্টা হবে। আচ্ছা বাকি কথা পরে হবে।তুমি আগে ফ্রেশ হয়ে আসো।আমরা নিচে যাচ্ছি।
সীমন্তী রুহি নিয়ে চলে গেলো।রূপন্তী বিছানায় বসেই আড়মোড়া ভাঙতে লাগলো।ততক্ষন সায়ন উঠে এসে বিছানার সামনে দাঁড়িয়েছে।
রূপন্তী ঘড়ির দিকে এক পলক তাকয়ে আসমান থেকে পড়লো।লাফ দিয়ে বিছানা থেকে নামলো।দুপুর সাড়ে বারোটা বাজে।সাথে সাথে চারপাশ থেকে আজানের ধ্বনি কানে আসতে লাগলো।
সায়ন ততক্ষনে রূপন্তীর একদম সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।রূপন্তী ওর দিকে তাকাতেই হাত বাড়িয়ে মেয়েটার কপালের কাছের চুলগুলো কানের পাশে গুজতে গুজতে নরম গলায় বলল,
– অনেক গভীর ঘুমে ছিলি। তাই আর ডাকিনি। হুট করে এত ঘুম আসলো কোথা থেকে?
রূপন্তী আমতা আমতা করতে করতে বলল,
– আসলে অনেকদিন পর ব্রেক পেয়েছি তো।সেজন্যই হয়তবা।
– আচ্ছা যা ফ্রেশ হয়ে আয়।
রূপন্তী ওয়াশরুমে যেতেই সায়ন বিছানা গুছাতে লাগলো।ঠিক তখন সাইড টেবিলে রাখা একটা ঔষধের পাতায় নজর পড়লো।পাতাটা হাতে নিয়ে নামটা দেখে তার ডাক্তারি মাথা বুঝতে দেরি করলো না এটা কীসের ঔষধ। যথেষ্ট হাই পাওয়ারের ঘুমের ঔষধ। সাথে সাথে গতরাতে রূপন্তীর অমন বেহুশ হয়ে ঘুমানোর কারণ তার কাছে স্পষ্ট হয়ে গেলো।
#চলবে।

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-২৫
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
রূপন্তী বসলো নাস্তা খেতে আর বাকিরা বসলো দ্বিতীয় বারের মতো চা খেতে।বাকিরা বলতে শুধু সায়ন আর সীমন্তী।বছরের শেষ বলে জয়ার অফিসে প্রচুর চাপ।
রূপন্তী কেমন জানি ঝিমাচ্ছে। খুবই ধীরে ধীরে খাচ্ছে। ওর এই অবস্থা দেখে সীমন্তী জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি এমন থম মেরে আছো কেন রূপন্তী।
রূপন্তী একটু আমতা আমতা করতে করতে বলল,
– বেশি ঘুমিয়ে ফেলেছি আপু।এজন্য মাথাটা ঝিম ধরে আছে।
-তাহলে নাস্তা শেষ করে চা খাও।ফ্রেশ লাগবে।
-হুম।
খাওয়ার এক ফাঁকে সায়নের দিকে চোখ পড়তেই রূপন্তীর বুক কেঁপে উঠলো।এই পোলা গম্ভীর মুখ করে এমন ধারালো দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কেন?কি মতলব?!
ঠিক একই সময় রুহি একটা চিৎকার মারলো।রূপন্তীর সাথে সাথে সায়নও একটু চমকে উঠলো।
রুহি এদিকে সীমন্তীর দিকে তাকিয়ে কি কি জানি বলেই যাচ্ছে যা সীমন্তী বাদে আর কারো কাছে বোধগম্য নয়।
সায়ন তখন জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে রে?
-আরেহ মুখে এক টুকরো রুটি দিয়েছিলাম।কেন দিয়েছি এটা নিয়ে রাগ উঠে গেছে।
সায়ন তখন রুহিকে নিজের কোলে নোট নিতে বলল,
-ঠিকই আছে।মায়ের মতোই তো হবে।
তারপর রুহির দিকে তাকিয়ে বলল,
– তাই না মামা?তোমার মা একটা চুন্নি না?
ঠিক সেই সময় রূপন্তী বলে উঠলো,
– মামনি!মামাকে একটা কামড় দাও তো
সবাইকে অবাক করে দিয়ে রুহি সত্যি সত্যি নিজের সামনের পাটির চারটা দাঁত দিয়ে সায়নের নাক কামড়ে ধরলো।
ছোট্ট মানুষ তো কি হয়েছে!দাঁত গুলো ইঁদুরের দাঁতের চেয়েও ধারালো।
সায়ন চিৎকার মারলো একটা। অনেক কষ্টে রুহিকে ছাড়িয়ে ওর দিকে আতংকিত দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকালো।রুহি তখন ঠোঁট নেড়ে কিছু একটা বলার চেষ্টা করলো।সায়ন তখন ‘চুপ থাক’ বলে ওকে পাশে বসা রূপন্তীর কাছে দিয়ে দিলো
রূপন্তী আর সীমন্তী এতক্ষন মামা ভাগ্নির কাহিনী দেখে হাসতে হাসতে পেটে খিল ধরিয়ে ফেলেছে।রূপন্তীর কোলে বসে রুহি এখন আবার ভদ্র বাচ্চা। সে এখন মনোযোগ দিয়ে নিজের হাত দেখছে।
সায়ন সমানে নিজের নাক ডলে যাচ্ছে।সীমন্তী কোনো মতে নিজের হাসি থামিয়ে বলল,
– হয়েছে হয়েছে।এত ঢং করিস। এই এক রত্তির বাচ্চার কামড়ে আর কতটুকুই বা ব্যাথা পাওয়া যায়।
– চুপ থাক।ওইটা মানুষের বাচ্চা না।ওইটা ইন্দুরের বাচ্চা একটা।
তখন রূপন্তী বলে উঠলো,
– এতটুকুতেই এই অবস্থা!একবার চিন্তা করে মা’দের খাওতে গেলে কি অবস্থা হয়!
সীমন্তীও সায় জানালো।সায়ন তখন আপনমনে বিড়বিড়ালো,”তারা তো বিয়ের রাত থেকেই অভ্যস্ত।নতুন করে আর কি কষ্ট হবে!”
বিড়বিড় করে বললেও পাশে বসে থাকা রূপন্তী সেটা শুনে ফেললো।সায়ন ওর দিকে তাকাতেই সে আগুন চাহনি দিতে দিতে চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,”অশ্লীল নোংরা কোথাকার!”
সায়ন ঠোঁট উল্টালো।বাস্তব কথা বললেও এখন গালি খেতে হয়।
এভাবে হাসা হাসির মাঝে ওরা এক ঘন্টার মতো আড্ডা দিলো।
এরপর সবাই উঠে নিজেদের রুমে চলে গেলো।রুহি ততক্ষনে ঘুম।
রূপন্তী রুমে আসতেই আবারো সায়ন তীক্ষ্ণ দৃষ্টির কব্জায় পড়লো।একটু আগেও তো ঠিক ছিলো,আবার কী হয়েছে।সে ভ্রূ নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো ‘কী’?
সায়ন তখন গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
– এমনেও কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাস। এরমধ্যে গত রাতে ঘুমের ঔষধ খেয়েছিস। কেন?
ধরা পড়ে রূপন্তীর মুখটা কালো হয়ে গেলো।কি বলবে?কিভাবে বলবে?
সায়ন অত জোরাজোরি করলো।রূপন্তীর সামনে দাঁড়িয়ে ওর মুখটা নিজের হাতের আজলায় নিয়ে নরম গলায় শুধালো,
– কি হয়েছে রূপু?সমস্যা না খুলে বললে তো সমাধান হবে।তোর এমন চুপচাপ স্বভাব আমার ভালো লাগে না।একবার খুলে বল,নিজের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করবো তা সমাধান করার।

আহ্লাদ পেয়ে চোখ দুটো জ্বলে উঠলো।বলতে মন চাইলো,”আমাকে সাহায্য কর সায়ন!ওই পিচ্চি মেয়েটার সুবিচার পেতে আমাকে সাহায্য কর। বাচ্চাটাকে অনেক কষ্ট দিয়ে মেরেছে।ওর পোস্ট মর্টেম রিপোর্ট পড়ে আমার মত শক্ত মানুষ ভেঙে পড়েছে।”
কিন্ত বলতে পারলো না।রিমির পোস্ট মর্টেমের রিপোর্ট পড়ার পর থেকে যেই কান্নাটা গলায় দলা পাকিয়ে ছিলো,সেটাও বের করতে পারলো না।
নিজেকে শক্ত করে মেকি হেসে ঠোঁট দুটো ফুলিয়ে আদুরে ভঙ্গিতে বলল,
– আমার কিছু হয়নি।
সায়নের খুব ইচ্ছে করলো ফুলিয়ে রাখা ঠোঁটগুলো নিজের ঠোঁটের ভাজে নিয়ে নিতে। অধিকার আছে তবে সেই অধিকার খাটানোর অনুমতি নেই। তাই সে চিন্তা মাথা থেকে বের করে বলল,
– তাহলে এত চুপচাপ কেন তুই?ঘুমের ঔষধ খেয়ে কেনো ঘুমাতে হচ্ছে।
– উম! আসলে আমার মাথায় ইদানীং সামনে কি করবো এসব ব্যাপার ঘুরছে অনেক।ভাবছি রিসার্চে ব্যাস্ত হয়ে যাবো।সব কয়টা শয়তান রোগ তাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাবস্তা করবো।
সায়ন এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো বিভ্রান্তিতে ভরা চোখ জোড়ার দিকে। তারপর কণ্ঠ খাটো করে বলল,
– আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করিস না রূপন্তী।
রূপন্তী তখন সায়নের বুকে একটা কিল মেরে নিজেকে ছাড়িয়ে বলল,
– আর ব্রো!এসব ছাড় তো।আমার এমনেও মুড সুয়িং এর সমস্যা আছে।ওসব নিয়ে তোর ভাবতে হবে।যা গোসল কর।লাঞ্চ করে আগামীকাল রাতের প্ল্যান করবো।আচ্ছা দাড়া, আমিই আগে গোসলটা সেড়ে আসি।

আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না।ঝড়ের গতিতে নিজের জামা কাপড় নিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো।গোসল করার জন্য নয়,নিজেকে লুকানোর জন্য এত তাড়া।
.
তারা তিনজন মিলে এসেছে কেনাকাটা করতে।তারা লাঞ্চ করে থার্টি ফার্স্ট নাইটের প্ল্যান করেছে। ঠিক করেছে আগামীকাল রাতে বারবিকিউ করবে।আরাদ্ধা-আরহান, ফাহাদও আসবে।
সেসবের কেনাকাটা করতেই তারা স্বপ্নে এসেছে। রুহিও আছে সাথে আছে। তাই তিনজন না বলে চারজন বলাই শ্রেয়।
পাঁচ কেজি মুরগি,প্রয়োজনীয় মশলা পাতি সহ আরো অনেক কিছু কেনা হলো সব শেষ করে তারপর বসা হলো একটা ক্যাফেতে।তিনজন তিনটা কফি আর ফ্রেঞ্চ ফ্রাই অর্ডার করলো। তারপর আবারো কালকে কিভাবে কি করবে সেসব আলোচনা করতে শুরু করলো।সন্ধ্যা সাতটার দিকে দিকে সবাই ফেরত এলো।সীমন্তী রুহিকে রূপন্তীর কাছে রেখে ওর জন্য খাবার বানাতে গেলো।মিনিট পনেরোর মাঝে ফেরতও চলে এলো।রুহিকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে কিছু ডিজাইনের কাজ করতে হবে। তাই আপাতত বিদায় নয়ে রুমে চলে গেলো।সায়ন আরো আগেই রুমে গেছে।রূপন্তীও এবার উঠে এলো।এসে দেখলো সায়ন ইতিমধ্যে এনাটমির একটা বই নিয়ে বসে গেছে।
তারও এবার পড়তে বসা দরকার।ফ্রেশ হয়ে সেও একটা বই নিয়ে সায়নের পাশে বসে পড়লো।
দুজনের একসাথে পড়াতে লাভ হলো এটাই যে কেউ একজন আটকে গেলে অপরজন বুঝিয়ে দিলো।

সাড়ে আটটার দিকে জয়া আসলেন।নয়টার দিকে তারিফ সাহেব।আর ঠিক সাড়ে নয়টায় রায়ান আসলো।
এবার বাড়ি পরিপূর্ণ হয়ে উঠলো।রাতের খাওয়া দাওয়া শেষে হাতে এক কাপ চা নিয়ে সবাই আড্ডায় বসে পড়লো।প্রথম কিছুক্ষন রুহি সবাইকে বিনোদন দিলো।তারপর শুরু হলো জয়া আর তারিফ সাহেবের বিয়ের আগের গল্প।মনেই হলো না তারা এখানে সিনিয়র। সবাই এমনভাবে মিশে গেলো যে মনে হলো বন্ধু-বান্ধবরা মিলে গল্প করতে বসেছে।
#চলবে।