এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-৩২+৩৩

0
420

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-৩২
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
চোখের পাতা প্রচন্ড ভারি মনে হচ্ছে। চাইলেও খোলা যাচ্ছে না।কেউ কি চোখের উপর ভারি কিছু দিয়ে রেখেছে?নাহলে সে চোখ খুলতে পারবে না কেন?
তবুও অনেক কষ্ট করে, যুদ্ধ করে চোখের পাতা আলগা করলো।সময় নিয়ে আস্তে আস্তে চোখ মেলে তাকালো।প্রথমে সবটা ঘোলা লাগলেও পরপর সব পরিষ্কার হয়ে এলো।একটা এসি দেখা যাচ্ছে।চোখ ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকাবে তার আগেই চোখের সামনে একটা অপরিচিত মুখ উঁকি দিলো।তারপর কেউ একজন স্যার স্যার করে চিল্লাতে চিল্লাতে বেড়িয়ে গেলো। ঠিক সাথে সাথেই সায়ন এসে ঢুকলো।রূপন্তী একটু নড়তে চাইলো কিন্তু সাথে সাথে কাঁধের ব্যাথায় কুঁকড়ে উঠলো।সায়ন দৌড়ে এসে ওকে ধরলো,
– নড়িস না। ব্যাথা পাবি।
নার্স এসে সেলাইনের ব্যাগ চেঞ্জ করলো ব্লাড ব্যাগ চেক করলো। উনি বেরিয়ে যাওয়ার পর পূর্ণদৃষ্টিতে রূপন্তী সায়নের দিকে তাকালো।চোখের নিচে কালির স্তর স্পষ্ট।গালে খোচা খোচা দাঁড়ি কেন?শেভ করে না কেন বেয়াদবটা? দেখতে পুরো উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছে।
সায়ন এগিয়ে এসে মুখ ঝুঁকালো।নরম তবে খসখসে গালদুটোতে সময় নিয়ে চুমু খেলো।একই সাথে রূপন্তী নিজের মুখে পানির ছোয়া পেলো।সায়ন কাঁদছে?!
সায়ন ওর কপালে ছোট্ট করে একটা চুমু খেয়ে চলে গেলো।রূপন্তী বেশ কিছুক্ষন বোবার মতো শুয়ে রইলো।মনে পড়লো সেই রাতের কথা। যদি ওই লোকগুলো এসে না বাঁচাতো তবে কি হতো?
কিছুক্ষনের মধ্যেই জয়া বেগম আর সীমন্তী এসে ঢুকলো।টুকটাক কথা বলতে লাগলো তিনজন।রূপন্তীর আজ সারাদিন পার করে সন্ধ্যায় জ্ঞান ফিরেছে।
কিছুক্ষনের মধ্যে ফাহাদও আসলো।এরপর পর এলো আরাদ্ধা আর আরহান।
রূপন্তীকে ততক্ষনে নার্স এসে বালিশে হেলান দিয়ে বসিয়ে দিয়েছে।
এবার সবাই ওকে চেপে ধরলো শুরু থেকে সব ঘটনা বলার জন্য।
রূপন্তী গভীর ভাবে দম নিয়ে শুরু থেকে সব ঘটনা বলতে লাগলো।তারিফ সাহেবকে সব খুলে বলার ঘটনাটা যখন বলছিলো,ঠিক তখন তারিফ চৌধুরী সায়নকে নিয়ে কেবিনে ঢুকলেন। পিছুপিছু একজন নার্সও ঢুকলেন।হাতে খাবার।সায়ন আরাদ্ধাকে ইশারা করতেই সে উঠে এসে খাবারটা নিয়ে রূপন্তীর পাশে বসলো।
তারিফ সাহেব রুমে থাকা সোফাটায় আরাম করে বসলেন।ভরাট গলায় বলে উঠলেন,
– বাকি কাহিনী আমি বলছি। রূপন্তী যে কোনো ভেজালে পড়েছে সেটা আমি আগে থেকেই জানতাম।ও প্রচুর থানা আর কোর্টে আসা যাওয়া করতো। সেদিন আমাকে সব খুলে বলার পর আমি তোমাদের সবার সিকিউরিটি আরো কড়া করি।কারণ রাফিকে দিয়ে সব সম্ভব। গত রাতে আমার এক লোক সারাদিন রূপন্তীকে চোখে চোখে রেখেছে। তবে ও যখন রাতে এই বিপদে পড়লো তখন বাকিদের ডেকে পৌঁছাতে ওর একটু দেরি হয়েছিলো।তবুও আমি বলবো যে ঠিক সময়েই গেছে।
রূপন্তীর গত রাতের কথা মনে পড়তেই সারা শরীর শিউরে উঠলো।
সীমন্তী উদ্বিগ্ন গলায় বলে উঠলো,
– কিন্তু বাবা,রূপন্তী তো এখনও সেইফ না।
তারিফ সাহেব কিছু বলার আগেই সায়ন ঠান্ডা গলায় বলে উঠলো,
– সেটা নিয়ে আর কারো চিন্তা করতে হবে না।
পরপর রূপন্তীকে ইশারা করে বলল,
– ওকেও বলে দে এসব নিয়ে যাতে আর ঘাটাঘাটি না করে।আগে নিজের শরীর ঠিক করতে বল।
কণ্ঠ শুনেই বোঝা যাচ্ছে রেগে মেগে এটম বোম্ব হয়ে আছে। এজন্য কেউই কোনো টুশব্দ করলো না।রূপন্তী খালি একটা শুকনো ঢোক গিললো।
আরও কিছুক্ষন সবাই গল্পগুজব করলো।এরপর সায়ন একে একে সকলকে রুম থেকে বের করে দিলো।
দরজা লক করে এসে রূপন্তীকে শোয়ালো। এরপর ওর অনুমতির তোয়াক্কা না করেই গায়ে থাকে হাসপাতালের ড্রেসের উপরের চারটা বোতাম খুলে ফেললো।উন্মুক্ত করলো ডান কাঁধের ব্যান্ডেজ করা অংশটুকু।রূপন্তীর লজ্জায় হাসফাস লাগলো।তবুও টু শব্দটাও করলো না।
সায়ন যখন ড্রেসিং করছে রূপন্তী তখন ক্ষীণ গলায় বলে উঠলো,
– রাগ করেছিস?
কোনো উত্তর এলো না।আবার জিজ্ঞেস করলো,
– এই ছেলে?!
সায়ন মুখটা তুলে পর্যন্ত দেখলো না।রূপন্তীর গলা ধরে এলো।চোখ টলমল করে উঠলো।ধরা গলায় বলে উঠলো,
– কথা বলবি না সায়ন?!
প্রথমবারের মতো সায়ন মুখ তুলে তাকালো।গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলো,
– অধিকার আছে কোনো?
– আমি তো পুরোটাই তোর।
সায়ন তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,
– তাহলে সেদিন থাপ্পড় না মেরে পুরো কাহিনী খুলে বলতি।
রূপন্তী এবার কেঁদে দিলো।সায়নের হাত ধরে বলতে লাগলো,
– সোনা তুই আমাকে ভুল বুঝিস….
পুরো কথা শেষ করার আগেই সায়ন থামিয়ে দিলো।বোতামগুলো আটকে দিয়ে উঠে গেলো।একই স্বরে বলে উঠলো,
– আপু আজকে থাকবে। কাল বাসায় নিয়ে যাবো।
রূপন্তী ডাকলো,
– সায়ন শোন!
সায়ন দাঁড়ালো না।বের হওয়ার আগে একবার পিছনে ফিরে ধীর কণ্ঠে বলল,
– তোকে ভালোবাসলাম কেনো রূপু?তোকে ভালোবেসে আমি কষ্ট ছাড়া কিছুই পেলাম না।
দাঁড়ালো না।বেরিয়ে গেলো।রূপন্তী দুই হাতে মুখ ঢেকে হুহু করে কেঁদে দিলো।সে যেই ভয়টা পেয়েছিলো সেটাই হয়েছে। এখন সায়নের মান কিভাবে ভাঙাবে?!
.
পরেরদিন রূপন্তীকে নিয়ে আসা হলো।কাঁধে গুলি লাগাতে বাঁচা গেছে। তবুও কম্পলিটলি বেড রেস্টে থাকা লাগবে। ওকে আপাতত সাভারের বাড়িতে রাখা হয়েছে। জয়া নিজে উনাত দেখাশোনা করছে। তবুও সাথে একজন নার্স আছে।
টানা দশদিন সায়নের দেখা পেলো না রূপন্তী। কাঁদতে কাঁদতে তার বেহাল দশা।এত রাগ?
এগারোতম দিনে সায়ন আসলো।এসে আগে ফ্রেশ হলো,খাওয়া দাওয়া করলো।রাত সাড়ে এগারোটার দিকে নিজের রুমে গেলো।রূপন্তী তখন ঘুমে।ল্যাম্পের ঝাপ্সা আলোয় চেহারায় শুকনো অশ্রুর দাগ স্পষ্ট। সে নিজেও তো এই কতদিন নির্ঘুম কাটিয়েছে।এর উপর হসপিটালে এত প্রেশার যে চাইলেও আস্তে পারেনি।
গালে একটা ছোট্ট চুমু খেতেই রূপন্তী জেগে গেলো।এই মেয়েকে ঘুমের মাঝে ঠোঁটে চুমু খেতে খেতে সে নিজে অস্থির হয়ে যেতো অথচ ওর ঘুম ভাঙতো না।অথচ আজ গালে একতা চুমু খেতেই ঘুম ভেঙে গেলো?!
রূপন্তী পুরোপুরি চোখ মেলে চাইলো সায়নের। এর চোখে চোখ রেখে ভাঙা গলায় বলে উঠলো,
– আজও কথা বলবি না?
সায়ন কিছু বলল। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মায়াবী চেহারাটার দিকে।
রূপন্তী সোজা হয়ে শুলো।এরপর সায়নের দিকে তাকিয়ে বলল,
– কাছে আসবি একটু?
সায়ন উদ্ভ্রান্তের মেয়েটার উপর ঝাপিয়ে পড়লো। খুব সাবধানে মেয়েটা উপর নিজের শরীরের ভর ছেড়ে দিলো।গলায় মুখে গুজে বলে উঠলো,
– এমন করলি কেন রূপু?আমাকে একটাবার বললে কি হতো?কাল যদি গুলিটা কাঁধে না লেগে বুকে লাগতো তবে এতক্ষনে তুই আমি দুজনই মাটির নিচে থাকতাম।তোকে ছাড়া আমার নিশ্বাস নেওয়াও কষ্টকর হয়ে পড়েছে।আমি তো তোকে এত ভালোবাসতে চাইনি। তবুও কিভাবে তোর মায়ায় জড়িয়ে গেলাম?
রূপন্তী বাম হাতে ওর মুখটা তুলে ধরলো।যেই গালটাতে থাপ্পড় মেরেছিলো সেই গালটাতে ছোট ছোট অনেকগুলো আদর দিলো।সায়ন পুরোটা তৃপ্তি নিয়ে অনুভব করলো।রূপন্তী এবার ওর দিকে তাকাতেই বলে উঠল্প,
– অনেক রাগ হয়েছিলো।তার চেয়েও বেশি অভিমান হয়েছিলো।
রূপন্তী গাঢ় কণ্ঠে বলে উঠলো,
– রাগ অভিমান করে জীবন কাটিয়ে দিলে ভালোবাসবি কখন?
দুজনই দুজনের দিকে গাঢ় দৃষ্টিতে তাকিয়ে পড়লো।অতঃপর আর দেরি করলো না সেই মাহেন্দ্রক্ষণটার জন্য। ওষ্ঠদ্বয় এর দীর্ঘ আলিঙ্গন শেষে সায়ন পাশের বালিশে শুয়ে পড়লো।রূপন্তীকে সাবধানে বুকে টেনে কপালে গভীর ভাবে একটা চুমু খেলো।কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিস করে বলল,
– একবার সুস্থ হ।সব হিসাব সুদে আসলে নিবো।
#চলবে।

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-৩৩
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ চলে।এর মাঝে বেশ কয়েকটা ঘটনা ঘটেছে। প্রথমত রূপন্তী এখন মোটামুটি সুস্থ।তারা ঢাকায় চলে এসেছে। দ্বিতীয়ত মুগ্ধ-সায়রার দেখা পাওয়া গেছে। এটা আপাতত ফাহাদ, আরহান,সায়ন আর রূপন্তী জানে। কারণ টা তৃতীয় ঘটনার সাথে জড়িত। তৃতীয় ঘটনাটা হচ্ছে ফাহাদ বিয়ে করছে। কাকে বিয়ে করেছে সেটা শুধু উপরোক্ত চারজন মানুষ জানে। এই কারণেই ফাহাদের সাথে আরাদ্ধার সম্পর্ক নষ্ট করেছে। কেননা ফাহাদ আরহাকে চিট করেছে। কিন্তু ফাহাদ আরহাকেই বিয়ে করছে। এই ব্যাপারে আরহা, আরাদ্ধা কিছুই জানে না।
চতুর্থ ঘটনা হচ্ছে সায়ন আর রূপন্তী তুমুল ঝগড়া করে একদিন ধরে একজন আরেকজনের চেহারা দেখছে না।
ঝগড়ার মূল বিষয়- ফাহাদের বিয়ে। ফাহাদের বিয়েতে বর পক্ষ হিসেবে যাওয়ার কথা ফাহাদের ছোট বোনের,সায়রা-মুগ্ধর এবং সায়ন রূপন্তীর। কিন্তু সায়ন রূপন্তীকে নিয়ে যাবে না।যাবে না মানে যাবেই না।কারন রূপন্তী অসুস্থ। রূপন্তী হাজার চেষ্টা করেও মানাতে পারেনি। এজন্য গতকাল দুজনেই ঝগড়া করে দুই রুমে চলে গিয়েছে।
গতকাল বিয়ে ছিলো,আজ সবাই কক্সবাজার গিয়েছে অথচ রূপন্তী বাসায়। রাগে দুঃখে ও আপাতত শুয়ে শুয়ে নিজের আঙুল কামড়াচ্ছে। ঘুমানোর উদ্দ্যেশ্যে শুলেও সে ঘুমাতে পারছে না।প্রথমত মনের দুঃখে,দ্বিতীয়ত সায়নের কোলের ভেতর না ঢুকে সে ঘুমাতে পারে না।গত রাতেও ঘুম।হয়নি। আজও হবে না।
শুয়ে শুয়ে সায়নের গুষ্টি উদ্ধার করছিলো,ঠিক তখন রুমের দরজাটা আস্তে আস্তে খুলে গেলো।রূপন্তী চোর ধরার জন্য তাড়াতাড়ি চোখ বন্ধ করে ফেললো।সায়ন পা টিপে টিপে রূপন্তীর কাছে এলো।মুখ নামিয়ে গালে চুমু খাবে তার আগেই রূপন্তী ওর গলা জড়িয়ে নিজের উপর ফেললো।একহাতে ওকে ধরে অপর হাত বাড়িয়ে টেবিল ল্যাম্প জ্বালালো।এরপর সায়নের দিকে পিটপিট করে তাকাতে তাকাতে বলল,
– হাতে নাতে চোর ধরেছি।
সায়ন মেকি হেসে কিছু বলবে তার আগেই নরম ঠোঁটের আঘাতে চুপ করে গেলো।নিজেও বুদ হলো সেই ওষ্ঠদ্বয়ের মাঝে। রূপন্তী কিছুক্ষন পর ছেড়ে দিলো ঠোঁটজোড়া, সায়নের সেটা পছন্দ হলো না।কারণ সে তৃপ্ত নয়।আবারও মুখ নামিয়ে ডুব দিলো সেই নরম ঠোঁটজোড়ার মাঝে। রূপন্তীও আবার খুব সুন্দরভাবে সাড়া দিলো।
কিয়ৎক্ষন বাদে ঠোঁট ছেড়ে সায়ন ঘন ঘন নিশ্বাস ছাড়তে ছাড়তে বলল,
– হঠাৎ করে এত আদর?কেমনে কী?
রূপন্তী কোনো উত্তর দিলো না।বরং সায়নের সারা মুখে ছোট্ট ছোট্ট চুমু খেতে লাগলো।
সায়ন এবার আসল কাহিনী বুঝে গেলো। রূপন্তীর উপর থেকে সরতে সরতে বলল,
– এসব করে কিছু হবে না।আমি মানা করেছি মানে না।
রূপন্তী সেসবের ধার ধারলো না।এগিয়ে এসে সায়নের বুকে মাথা রেখে বুকে হাত দিয়ে আঁকিবুঁকি করতে করতে আহ্লাদ করে বলল,
– এমন করো কেন জান? তুমি না আমাকে ভালোবাসো?তাহলে কষ্ট দিচ্ছো কেন?
– কিন্তু তোর শরীর খা…
তার আগেই রূপন্তী থামিয়ে দিয়ে বলল,
– আমি এখন সুস্থ। আচ্ছা বেশি লাফালাফি করবো না।তবুও নিয়ে চল না। প্লিজজজ!!
বলে বুকের মাঝে টুপ করে একটা চুমু খেলো।
সায়ন হার মানলো।হার মানতে বাধ্য হলো।এত আহ্লাদ করলে, আদর করলে কিভাবে শক্ত রূপে থাকবে?
পকেট থেকে নিজের ফোন বের করলো। রূপন্তী তা দেখে আরো ঘনিষ্ট হলো।সায়ন আড়চোখে ওর দিকে একবার তাকিয়ে এয়ারলাইনসের টিকিট বুক করতে অনলাইনে ঢুকলো।আগামীকাল সকাল নয়টা পনেরোর একটা ফ্লাইটে চারটা সিট খালি আছে। সেখান থেকেই দুটো সিট বুক করে ফেললো।অনলাইন পেমেন্ট শেষ করে রূপন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– খুশি!
রূপন্তী একটা প্রাণবন্ত হাসি দিয়ে বলল, ‘অন্নেক!’
সায়ন মুচকি হেসে মেয়েটাকে ভালোমতো বুকের মধ্যে ঢুকাবে তার আগেই রূপন্তী “ওকে গুড নাইট” বলে সরে এসে উলটো ফিরে কোলবালিশ জড়িয়ে ধরলো।
সায়ন কিছুক্ষন তব্দা খেয়ে শুয়ে রইলো।তারপর ঘোর ভাঙতেই রূপন্তীকে টেনে এনে নিজের মাঝে আবদ্ধ করতে করতে বলল,
– তুই আগের মতো বেয়াদবই আছিস। এক রাত ঘুমাতে পারিনি। এখন আরাম করে ঘুমুতে দিবি। নাইলে কামড় খাবি।
.
ছয়জন তব্দা মেরে হা করে তাকিয়ে আছে। তারা আপাতত হোটেলের লবিতে দাঁড়িয়ে আছে। ছয়জনের ছয়জনই আজ দেরি করে উঠার ফলে হোটেলের নাস্তা মিস করেছে। কেননা এই তিন জোড়া দম্পত্তিই রাতে মত্ত ছিলো একে অপরের মাঝে। আরাদ্ধা আর আরহান রাতে ছাদ থেকেও এসেছে দেরি করে।গতকাল ওদের বিয়ের এক বছর হয়েছে।
ওদের তব্দা মেরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণ হচ্ছে সামনে সায়ন আর রূপন্তী দাঁড়ানো। ওরা মাত্রই ঢুকে চেকইন করছিলো।আর এরা বের হচ্ছিলো নাস্তা করার জন্য।
রূপন্তী এগিয়ে এসে মুগ্ধকে জড়িয়ে ধরলো,
– কেমন আছিস দোস্ত?
মুগ্ধ অবাকতা থেকে বেরিয়ে নিজেও বান্ধবীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আলহামদুলিল্লাহ দোস্ত! কিন্তু তোরা হঠাৎ?
এবার সায়ন এসে রূপন্তীকে টেনে সরিয়ে আনলো।ওর কাঁধ জড়িয়ে বলল,
– আর বলিস না,এখানে আসা নিয়ে আমার সাথে মুখ-টুখ ফুলিয়ে একাকার।পরে রাত একটায় টিকিট কেটেছি।
ফাহাদ তখন চোখ পাকিয়ে বলল,
– তোমার আবার বউয়ের জন্য এত পিরীতি হইলো কবে থেকে?ওয়ে না তোমার দুই চোখের বিষ?!
সায়ন রূপন্তীর দিকে তাকালো।তাকিয়ে থেকেই বলল,
– আগে ছিলো।এখন চোখের সামনে না থাকলে বুক পুড়ে।
বলেই মাথায় একটা চুমু খেলো।
বাকিরা সবাই হইহই করে উঠলো।আরহান তখন এগিয়ে এসে সায়নের মাথায় একটা গাট্টা মেরে বলল,
– যাহ ব্যাটা! এটা পাব্লিক প্লেস। রংলীলা সব রুমে গিয়ে কইরো।এখন বউরে বান্ধবীদের কাছে হস্তান্তর করে তুমি আমাদের সাথে আসো।
সায়ন রূপন্তীর কাঁধ ছেড়ে দিতেই আরাদ্ধা এসে ওকে নিজের পাশে নিয়ে এলো। ছেলেগুলো আগে বের হচ্ছে অটো খোঁজার জন্য। আরহানের সাথে তাল মিলিয়ে যেতে যেতে সায়ন পিছে ফিরে আরাদ্ধার দিকে তাকিয়ে বলল,
– ও কিন্তু অসুস্থ।দেখে শুনে রাখিস। এই তুই সাবধানে হাটিস রূপু।
আবার একটা গাট্টা খেলো মাথায়। এবারেরটা মুগ্ধ দিয়েছে।সায়ন চোখ রাঙিয়ে ওর দিকে তাকাতেই সে ঠোঁট বাকিয়ে বলল,
– এখানে আমরা সবাই নতুন নতুন বিয়ে করেছি। আমাদের সবারই বউ আছে।এরকম বউ পাগলা হয়ে যাস না।
সায়ন আর কোনো উত্তর না দিয়ে বিড়বিড় করে বলল,”তোদের তো বউ, আমার তো হৃদপিন্ড।আর হৃদপিন্ড বুকে না থাকলে আমি বাঁঁচবো কি নিয়ে?

আরাদ্ধারা এতক্ষন সায়নকে নিয়ে মজা নিচ্ছিলো।এবার আরাদ্ধা এগিয়ে গিয়ে রূপন্তীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
– আই এম সো হ্যাপি ফর ইউ দোস্ত।আমি বলেছিলাম না আমার ভাই একবার ভালোবাসতে পারলে নিজের সবটা দিয়ে আগলে রাখবে। দেখেছিস এবার?
রূপন্তী ধরা কণ্ঠে বলল,
– আলহামদুলিল্লাহ দোস্ত!
এরপর সায়রাকে দেখে আরাদ্ধাকে ছেড়ে ওর দিকে এগিয়ে এলো।সায়রা হাত দুটো ধরে বলল,
– তুমি সায়রা?মুগ্ধর ওয়াইফ।
-হুম।
রূপন্তী ওকেও জড়িয়ে ধরে বলল,
– নাইস টু মিট ইউ ডিয়ার।
– মি টু!
সায়রাকে ছেড়ে রূপন্তী এবার মিটিমিটি হাসতে হাসতে আরহার দিকে আগালো।কাছে গিয়ে টপসের গলা উপরে উঠাতে উঠাতে বলল,
– বুঝলাম আমার বন্ধু তোমাকে রাতে অনেক ভালোবাসা দিয়েছে।তাই বলে কি সবাইকে সেটা দেখাতে হবে?
আরহা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো।তা দেখে বাকি তিনজনই হেসে দিলো।রূপন্তী এবার আরহার কপালে একটা চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
– কেমন আছিস প্রিন্সেস?আমার বন্ধুটাতো তোকে অনেক কষ্ট দিয়েছে।।
– অন্নেক!
– তাহলে ধরা দিয়েছিস কেন?আরো কিছুদিন ঘুরাতি।
আরহা আবারো লজ্জা পেয়ে কিছু বলতে পারলো না।তখনই মুগ্ধ এসে ডাক দিলো ওদের।
এক অটোতে ছয়জন বসতে পারবে।দুজনের সামনে ড্রাইভারের পাশে বসতে হবে। সায়ন আর ফাহাদ লাফ দিয়ে উঠে নিজেদের বউদের পাশে বসে পড়লো।আরহান আর মুগ্ধ নিজেদের বউদের দিকে হতাশাজনক একটা চাহনি দিলো।সায়রা আর আরাদ্ধা ঠোঁট টিপে হাসছে খালি।
ছেলে দুটো বউ পাগলা হয়ে গেছে। একজন বাচ্চা বউ পালতে গিয়ে হয়েছে, আরেকজন সদ্য প্রেমে পড়ে হয়েছে!
#চলবে।