এই মন তোমাকে দিলাম পর্ব-৩৬

0
420

#এই_মন_তোমাকে_দিলাম
#পর্ব-৩৬ (১৮+)
#আরাদ্ধা_সাদাত_খান
সপ্তাহ ঘুরে শুক্রবার এলো।রূপন্তী এই কয়দিন সাভারেই ছিলো।সায়ন আজ এসেছে আবার।আজ সবাই ঢাকা চলে যাবে। সীমন্তীও চলে যাবে।
রূপন্তী এখন সুস্থ হয়েছে।শরীরটা দূর্বল একটু। রেডি হয়ে রুহিকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলো আর সমানে চুমু খাচ্ছিলো।পারছে না বাচ্চাটাকে চুমু খেতে খেতে খেয়ে ফেলে। এত্ত কিউট!
ঠিক সেই সময় রুহির মামার আগমন ঘটলো।রূপন্তীর কোল থেকে ছো মেরে রুহিকে নিয়ে নিজেও দুটো চুমু খেলো।এরপর মামা ভাগ্নি রুমের বাহিরে গিয়ে গায়েব হয়ে গেলো।রূপন্তী একটু ভ্যাবাচেকা খেলেও পাত্তা দিলো না।গোছগাছ করতে লাগলো।ঠিক তিন মিনিটের মাথায় সায়ন আবার এলো।রূপন্তীর কাছে এসে ওকে ছোট ছোট চোখে দেখতে লাগলো।রূপন্তী আড়চোখে একবার তাকালো।এমন চাহনি দেখে গলা ঝেড়ে জিজ্ঞেস করলো,
– কি হয়েছে?
– আমি এসেছি কখন?
– দুই ঘন্টা হয়েছে?
– এই দুই ঘন্টায়ও একবারও জড়িয়ে ধরলি না।অথচ পিচ্চিটাকে চুমু দিতে দিতে তার দম বন্ধ করে দিলি।
– মোটেও দম বন্ধ করে দেইনি।
– এদিকে ঘোর।
রূপন্তী বাধ্য মেয়ের মতো সায়নের দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। সায়ন নিজের দুই হাত কাকতাড়ুয়ার মতো দুই দিকে ছড়িয়ে দিলো।রূপন্তীর দিকে তাকিয়ে বলল,
– নে, শুরু কর?
রূপন্তী হতবাক কণ্ঠে বলল,কী?
-রুহিকে যেভাবে কোলে তুলে আদর করছিলি,আমাকেও কর।
রূপন্তীর মুখটা অটোমেটিক হা হয়ে গেলো।এই ভর দুপুরে পোলাডা পাগল হয়ে গেছে?!
সায়ন বিরক্ত হলো।এমন রিয়েকশন দেয়ার কি আছে?!
হাত দুটো নামিয়ে সে বিরক্ত হয়ে বলল,
– ধ্যাৎ!আচ্ছা থাক।তোর করা লাগবে না।আমিই করছি।
বলতে দেরি রূপন্তীর হাত টেনে নিজের কাছে আনতে দেরি করলো না।রূপন্তী চোখ খিচে বন্ধ করে ফেললো। সায়ন খুব কাছে থেকে মুখটা গভীর নয়নে দেখলো।কতদিন দেখে না?! দশ দিন!জ্বরের হিংস্রতায় মুখটা একদম মলিন হয়ে গেছে!
কপালে ঠোঁট ডুবিয়ে একটা চুমু খেলো।এরপর গালে শব্দ করে একটা চুমু খেয়ে ছেড়ে দিলো।
– মা ডাকছে অনেক্ষন ধরে।যা!
রূপন্তী অগ্নি চাহনি নিক্ষেপ নিক্ষেপ করতে করতে চলে গেলো।সায়ন ঠোঁট উল্টালো। ক্ষেপছে কেন?!
.
এত ছুটি নেওয়া পড়েছে যে এই এক সপ্তাহ পেশেন্টের ভীড়ে রূপন্তী আর দম ফেলতে পারলো না।অবশেষে কালকে শুক্রবার ভাবতেই রূপন্তী একটা দম ফেললো।আজকের মতো রোগী দেখা শেষ।এখন বাসায় চলে যাবে।
বাসার নিচে যেতেই দারোয়ান রূপন্তীর কাছে একটা পার্সেল দিলো।প্রি পেইড ছিলো এজন্য ডেলিভারি ম্যানকে দারোয়ানের কাছে রেখে যেতে বলেছিলো।
উপরে উঠে সব কিছু রেখে আগে পার্সেলটা খুললো।একটা পাতলা জর্জেটের শাড়ি। ব্লাউজটা দেখে সে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলো।হাতা কাটা, পিঠ-গলা দুটোই অনেক বড়।পড়া না পড়া একই কথা।
এসবকিছুই সে কিনেছে। উদ্দ্যেশ্য- সায়নের কাছে নিজেকে তুলে দেওয়া। ছেলেটাকে বারবার করে নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে।গত কয়েকদিনে নিজের কাছে টেনে নিতে গিয়েও কোনো একটা কারণে নেয়নি সায়ন।হয়তবা রূপন্তীর স্পষ্ট সম্মতি চেয়েছিলো।রূপন্তী এজন্য নিজেই ধরা দিবে ঠিক করলো।এখন তো একে অপরের প্রতি ভালোবাসাটা স্বচ্ছ, স্পষ্ট!তবে মিলেমিশে একাকার হতে সমস্যা কী?
রেডি হওয়ার আগে এক কাপ কফি খেয়ে নিলো।নাহলে দেখা যাবে রেডিটেডি হয়ে সে বেঘোরে ঘুমাচ্ছে।সায়নের জামাকাপড় অন্য রুমে রেখে আসলো।খাবারও টেবিলে রেখে আসলো।সাজগোজ এর মাঝে ছেলেটা চলে আসলে ভেজাল হয়ে যাবে।
হলোও তাই।সবেমাত্র শাড়িটা পড়বে ঠিক তখনই সায়ন আসলো। কিছুক্ষন ঘ্যানঘ্যান করলো।রূপন্তী অনেক কষ্টে মানালো।
দ্রুত শাড়ি পড়লো।সায়নকে জ্বালানোর জন্য যেখানে দরকার নেই সেখানেও পিন মারলো।গলায়,হাতের নিচে নিজের প্রিয় একটা মিস্ট মারলো।তুলাতে নিয়ে সেটা আবার বুকের ভাজে মাখালো।নিজেই সব করছে, নিজেই লজ্জায় মরে যাচ্ছে!
ঠোঁটে লিপ্সটিক লাগাতে গিয়েও লাগালো না।মুখে কোনো প্রসাধনীও মাখালো না।কৃত্তিম জিনিসের স্বাদ নিতে কেউই পছন্দ করবে না।
রুমে একটা এয়ার ফ্রেশনার মেরে দিলো।এরপর দরজার লকটা আস্তে করে খুলে ওয়াশরুমে চলে গেলো।সেখানে কিছু কাজ করে এরপর বারান্দায় গিয়ে লুকালো।এত লজ্জা কেন লাগছে সে নিজেও বুঝতে পারছে না।
.
সায়নের মেজাজ তুঙ্গে উঠেছে। কতক্ষন ধরে মেয়েটা দরজা লক করে বসে আছে।খাবারও খায়নি।আজকে কয়েকটা থাপ্পড় মেরেই ছাড়বে। আহ্লাদ দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলেছে।
আবার দরজার কাছে গেলো সে। তবে এবার নব ঘুরাতেই দরজা খুলে গেলো।ঢুকে দেখলো রুম ফাঁকা। ওয়াশরুমের লাইটও অফ।তাহলে বারান্দায়।
বারান্দায় গিয়ে উঁকি দিতেই সে টাশকি খেলো।নিজের অজান্তেই মুখ থেকে বেরিয়ে এলো,”লাল পরী!”
রূপন্তী এবার আরো লাল হয়ে গেলো।শাড়ি দিয়ে নিজের শরীর আরো ঢাকতে চাইলো। পারলো না।তার আগেই সায়ন এসে হামলে পড়েছে। হাত দুটে পিছে নিয়ে আটকে চোখ ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করলো,
– বারান্দায় এসে কাকে নিজের হটনেস দেখাচ্ছিস।
রূপন্তী দাঁত কিড়মিড় করতে করতে বলল,
– পাশের বাসায় আমার বয়সী একটা মেয়ে থাকে। তাকে।
সায়ন থতমত খেলো।চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করলো,
– নাউজুবিল্লাহ! তোর কি হরমোনাল সমস্যা আছে?!এজন্যই আমার কাছে ধরা দিতে চাসনি?
রূপন্তী কিছুই বলল না।তবে সায়ন খেয়াল করলো সামনে থাকা আদুরে নারীটার অক্ষিকোটর মুহুর্তের মাঝেই পানিতে টইটম্বুর হয়ে গেলো।সায়ন দেরি করলো না।তাড়াতাড়ি সেই আদুরে মুখটা নিজের বুকে লুকালো।মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,
– আল্লাহ!সরি আমি মজা করছিলাম।কাঁদিস না প্লিজ!
রূপন্তীর কান্নার গতি উলটো বেড়ে গেলো।সায়ন তাড়াতাড়ি ওকে কোলে তুলে নিলো।রুমে ঢুকে বারান্দার পর্দা টেনে দিলো।এরপর রূপন্তীকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিতেই সে দুই হাতে মুখ ঢেকে কাঁদতে লাগলো।সায়ন স্তম্ভিত গলায় বলল,
– তোর সাথে কি আমার ফর্মালিটি করে কথা বলতে হবে রূপু?সামান্য মজাও করতে পারবো না?
বলেই জোর করে রূপন্তীর মুখ থেকে হাত সরালো।কান্নার দমকে ইতিমধ্যে নাকটা লাল হয়ে গেছে। সায়ন আর কিছুই বলল না।চুপচাপ বসে রইলো।মিনিটখানিক পরে মেয়েটা ওর গেঞ্জি ধরে টানতে লাগলো।বুঝতে পেরে সায়ন নিজেই ঝুঁকলো।রূপন্তী ওর মুখটা কাছে নিয়ে সারা মুখে ছোট্ট ছোট্ট চুমু খেলো।ধরা কণ্ঠে বলল,
– আমি সরি।তোকে এতদিন দূরে সরিয়ে রাখার জন্য।এভাবে যে বার বার অসুস্থ হয়ে পড়বো সেটা আমি নিজেও জানতাম না।ইচ্ছে ছিলো যেদিন তোর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দিবো,একদম নিজেকে সাজিয়েগুছিয়ে তোর কাছে আসবো।অনুষ্ঠানের রাতেই এভাবে সাজতে চেয়েছিলাম।পারলাম না।তাই আজ সেজেছি।
– এজন্য তুই কাঁদছিলি।
রূপন্তী আর কিছু না বলে চোখ নামিয়ে নিলো।সায়ন এবার ভালোমতো মেয়েটাকে খেয়াল করলো।ঘোর লেগে গেলো।উঠে গিয়ে লাইট বন্ধ করে এলো।টেবিল লাইট জ্বালিয়ে দিলো।রূপন্তী লজ্জায় অন্য দিকে ফিরে গেলো।সায়ন ঠোঁট কামড়ে হাসলো।নিজের টিশার্ট টা খুলে ছুড়ে মারলো।মেয়েটার ব্লাউজের হুক খুলে পিঠের খালি জায়গায় কয়েকটা চুমু খেলো।এরপর নিজের দিকে ঘুরিয়ে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবালো।রূপন্তীও লাজলজ্জা ভেঙে সাড়া দিতে শুরু করলো।
নিশ্বাস ভারি হলো।নিজেদের শীৎকারে নিজেরাই শিউরে উঠলো।সারা শরীরে ছেয়ে গেলো একে অপরের পবিত্র স্পর্শ। অবশেষে এক হলো তারা! জীবনেও ভেবছিলো এমন শত্রু থেকে উন্মাদ প্রেমিক-প্রেমিকায় পরিণত হবে।একজন আরেকজনকে ছাড়া নিশ্বাস নিতে কষ্ট হবে?!
পরিশেষে সায়ন রূপন্তীর বুকে তৃপ্তিভরা একটা চুমু খেলো।মুখ উঠিয়ে মেয়েটার চোখের কোণের পানি মুছে দিলো।অস্থির কণ্ঠে বলে উঠলো,
-এত আদুরে কেন তুই? তোর আদুরে ভাবটাই আমার সর্বনাশের কারণ।
রূপন্তী কিছু বলল না।সায়ন ওর কপালে একটা চুমু খেয়ে উঠে গেলো।
– আমি এসে খাবার রেডি করবো।ততক্ষনে তুই গোসল সেড়ে নিস।
সায়ন বাথরুমে গিয়ে চমকালো।গোল বাথটাবটাতে ফুলের পাপড়ি ভাসছে।মুচকি হাসলো।ফিরে গিয়ে ঠাশ করে রূপন্তীর গা থেকে কম্ফোর্টার সরিয়ে কোলে তুলে নিলো।লজ্জার ঠেলায় বেচারি কিচ্ছু বলতে পারলো না।গায়ে একটা সুতোও নেই। এই অবস্থায় এই ছেলে আবার কোলে নিয়েছে কেন?!
সায়ন রূপন্তীর কানের কাছে এসে ফিসফিসালো,
– যা দেখার দেখে নিয়েছি।এখন অযথা লজ্জা পেয়ে লাভ নেই। আর এত সুন্দর আয়োজনে কি আমি একা গোসল করতে পারবো?আসো আমরা মিলেমিশে গোসল করি।
#চলবে