একগুচ্ছ জারবেরা পর্ব-০৭

0
269

#একগুচ্ছ_জারবেরা
#ইশা_আহমেদ
#পর্ব_৭

আরাদ কোনো কথা না বলে চুপচাপ বের হয়ে গেলো।প্রেয়শীর মা বসে বসে কাঁদতে লাগলেন।সে জানে আরাদ কখনো চুপ থাকবে না কিছু তো করবেই।কেনো হলো তার মেয়েটার জীবন এমন।একজন বাঘ তো আরেকজন সিংহ।কেউ কাউকে ছাড়বে না।

_________

আনফি ফুফির সাথে কিছু সময় কাটালো।ফুফি আমাকে আর আনফিকে জড়িয়ে ধরে বসে ছিলেন।আমি আর আনফি মাত্র বাসা থেকে বের হলাম।আনফি আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবেন।তিনটা বাজে।আনফি ভাইয়া বলেছেন আজকে আমার সব ইচ্ছে পূরন করবেন।আজকে আমার ভী’ষণ খুশি লাগছে।হয়তো ভালোবাসার মানুষকে কাছে পেয়ে।আনফি আর আমি প্রথমে নদীর পাড়ে আসলাম।আমি শাড়ি পরে এসেছি আর আনফি কালো পাঞ্জাবি পরেছে।ফুফি আমায় জো*ড় করেই শাড়ি পরিয়ে দিয়েছে।আমি নদীর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছি।আনফি চা আনতে গেছেন।এখানে দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার মজাই আলাদা।আরও যদি প্রিয় মানুষটা কাছে থাকে।

“প্রিয় এই নে ধর”

আনফির কথায় ঘো’র কাটলো।মৃদু হেসে বললাম,,,
❝হুম জানেন আমার খুব ইচ্ছা ছিলো আপনার সাথে এই খোলা আকাশের নিচে দাঁড়িয়ে চা খাওয়ার গল্প করার।❞

আনফি মৃদু হেসে চা খেতে লাগলেন।আমিও তার দিকে তাকিয়ে চা খাচ্ছি।আমাদের চা খাওয়া শে’ষ হতেই আনফি বিল দিয়ে আমায় নিয়ে বের হলেন মেলা দেখার উদ্দেশ্যে।আমি আর আনফি ভাইয়া আজকে হুডতোলা রিকশা করে সব যায়গায় যাচ্ছি।গাড়িতে ঘুরতে মোটেও ভালো লাগে না!
আমি আনফির কাঁধে মা*থা রেখে বসে আছি। কিছুক্ষণের মাঝেই মেলায় চলে আসলাম।আনফি টাকা দিয়ে আমায় নিয়ে ভেতরে ঢু’কলেন।আমরা দুজন হাতে হাত রেখে মেলায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। আমার চুড়ির দিকে ন’জর গেলো।চুড়িগুলো খুব খুব সুন্দর। কিন্তু আমি আনফিকে কিনে দেওয়ার কথা বললাম না।আনফি আমায় নিয়ে একটা দোকানে ঢুকলেন।চুড়ি দেখতে লাগলেন।আমার হাত টেনে এক ডজন চুড়ি পরিয়ে বলে,,,
“বাহ বেশ লাগছে তো তোর হাতে চুড়িগুলো”

কথাটা বলেই দোকানের একটা ছেলেকে দেকে পনেরো ডজন বিভিন্ন রঙের চুড়ি দিয়ে দিতে বললেন।চুড়িগুলো আমার হাতে দিয়ে বলল,,,
❝আমার কিন্তু চুড়ি খুব পছন্দ তুই কিন্তু আমাদের বিয়ের পর সব সময় চুড়ি পরবি❞

আমি হেসে বললান,,,
“আচ্ছা ঠিক আছে”

আমি আর আনফি পুরোটা মেলা ঘুরলাম।এখনো সন্ধ্যা হতে দেরি আছে।উনি আমায় নিয়ে আবারও নদীর পারে আসলেন।এবার আমরা নৌকায় ঘুরবো।এগুলো আনফি সব ক্যামেরায় বন্ধি করে রাখছেন।আমরা নৌকায় করে ঘুরতে লাগলাম।আমি আর উনি কিছু ছবি তুললাম।ভিডিও করে রাখলাম।স্মৃ’তি হওসাবে থাকবে!নৌকায় ঘুরা শে’ষ করে আমরা ফুটপাত দিয়ে হেটে ফুসকার দোকানে আসলাম।ফুসকা দিতে বলে আনফি আমায় বলল,,,,
“তুই এতো ফুসকা খাস কেনো?”

আমি হেসে বললাম,,,
“ফুসকা জিনিসটা কেনো যেনো আমার প্র’চন্ড ভালো লাগে।আর বাঙালি প্রতিটা মেয়েরই আমার কাছে মনে হয় ফুসকা ভালো লাগে”

আনফি আমার কথায় হেসে বলল,,,
“ঠিক আছে আমার প্রিয় আমি বুঝতে পেরেছি”

আমরা ফুসকা খেলাম।তারপর রাতের শহর দেখতে রিকশা ভাড়া করলাম।তারপর দু’জন রাতের শহর দেখতে দেখতে কথা বলছিলাম।আনফি আমাকে নিয়ে রেস্টুরেন্টে আসলেন।রাতে এখানেই খাবো আমরা।দুজন খেয়ে নিলাম।আনফি আমায় বাসায় পৌছে দিলেন।যাওয়ার আগে আমার হাত ধরে বললেন,,,
“কালকে দেখা হবে প্রিয় আবার আমাদের।তোকে আমি কালকে ভার্সিটি দিয়ে আসবো”

“হুম।”

আনফি ভাইয়া আমার কপালে চুমু দিয়ে বললেন,,,
“বাই প্রিয়”

আনফি ভাইয়া চলে গেলেন।আমিও চলে আসলাম রুমে। আজকের দিনটা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা দিন।এখন নিজেকে সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছে।শাড়ি পাল্টে নিলাম।ফোন চেক করতেই দেখি মানুষটার মেসেজ।মেসেজ দেখে মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠল আমার।মেসেজে লেখা,,,
”আমি বাসায় চলে এসেছি তুই বেশি সময় না জেগে ঘুমিয়ে পর”

আজকে অনেকগুলো দিন পরে আমি ভালোভাবে ঘুমাতে পারবো।শা’ন্তিতে ঘুম দিবো।শুয়ে শুয়ে আজকের সব ঘটনাগুলো ভাবতে লাগলাম।

____________

আরাদ এতো সময় ধরে আনফি আর প্রেয়শীর কান্ড দেখছিলো।আনফি যখন প্রেয়শীকে চুমু দিলো তখন বু’কে চি’নচি’ন ব্যা’থা করছিলো আরাদের।রা!গে নিজের চুল নিজেই টানছিলো।আরাদ ওখান থেকে সোজা বাসায় চলে আসে।বাসায় এসেই ও’য়া’ইনের বোতল নিয়ে বসে।খেয়েই যাচ্ছে!

“আমি আমার প্রিয়কে অন্যকারো সাথে শেয়ার করবো না কারো সাথে কোনো দিনও না।”

আরাদের এই অবস্থা দেখে ওর মা ওর কাছে এসে বলে,,,
“কি হয়েছে বাবা তোর তুই তো এই ছাইপাঁশ খাস না তাহলে খাচ্ছিস কেনো আজকে?”

আরাদ মায়ের কোলে মুখ লুকিয়ে বলে,,,,
“আমার কাছে প্রেয়শীকে এনে দাও আম্মু ওকে ছা’ড়া বাঁ’চতে পারছি না আমি ওই আনফি কে*ড়ে নিচ্ছে আমার প্রিয়কে”

কথাটা বলতে বলতেই আরাদ ঘুমিয়ে পরলো।কেউ না জানলেও বরাদের মা জানে সেই ছোটবেলা থেকে আরাদ প্রেয়শীকে ভালোবাসে।তাই ওর আশেপাশে কাউকে স*য্য করতে পারে না।ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বুক কেঁপে উঠলো আরাদের মায়ের।একদিনে কি হা’ল করেছে ছেলেটা নিজের।আরাদের মা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েই নিলো কালকে উনি যাবেন প্রেয়শীর কাছে।

___________

“মামিমনি প্রিয় কোথায়”

আমি নামতে নামতে আনফিকে বললাম,,,
”এইতো আমি”

”চল তোর ভার্সিটির দেরি হয়ে যাচ্ছে তে”

আমাদের কথার মাঝেই আরাদ ভাইয়া আসলেন।বললেন,,,
”প্রিয় তাড়াতাড়ি চল”

আনফি ভ্রু কুচকে আরাদের দিকে তাকালো।আমি বললাম,,,
”আরে আরাদ ভাইয়া কেমন আছো?কালকে থেকে তোমার আর আমায় নিয়ে যেতে হবে না আমার প্রিয় মানুষটা চলে এসেছে এই যে আনফি আহসান আমার ফুফির ছেলে আমি উনাকে ভালোবাসি খুব”

আরাদের চো’খ লা*ল হয়ে গেলো।প্রেয়শীর আম্মু পেছন থেকে আরাদকে ই’শা’রা দিয়ে বললেন,,,,
”তুই এখন কিছুই বলবি না”

আরাদ জো’ড় পূ’র্বক হাসার চে’ষ্টা করে বলল,,,
“ওহ তাই নাকি প্রিয়!হ্যালো আনফি আমি আরাদ খান প্রিয়র মামাতো ভাই”

আনফিও জো*ড় পূ’র্বক হাসার চে*ষ্টা করে বলল,,,
“হ্যালো!প্রিয় চল তাড়াতাড়ি দেরি হচ্ছে”

কথাটা বলেই আনফি আমার হাত ধরে বলল।আমি আর আনফি বের হলাম বাড়ি থেকে।

________

“খালামনি আমি কিন্তু এবার কিছু একটা করে ফেলবো ওই আনফির”

“নাহ আরাদ তুই কিছুই করবি না আমার মেয়েটা ৩টা বছর পর এমন হাসছে।আনফিকে ও অনেক ভালোবাসে তাই বলছি ওদের আ’লা’দা করার কথা মা*থায় আনিস না”

“আমিও বলছি তোমায় খালামনি আজকে থেকে প্রেয়শীও আমার ভ’য়ং’ক’র রূ’প দেখবে আর কি বললে ওদের আ’লা’দা করার কথা মা*থায় আনবো না হা হা হা ওদের আ’লা’দা তো আমি করবোই তাই সে যাই হোক না কেনো!”

কথাটা বলেই আরাদ বাসা থেকে বের হয়ে গেলো।মিসেস প্রিয়তা বলল,,,
“আমিও কখনো আমার মেয়ের থেকে আনফিকে আ’লা’দা হতে দিবো না”

মিসেস প্রিয়তার ভাবনার মা’ঝেই প্রিয়ম বাসায় ঢু’কলো।আম্মুককে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে নিজের আম্মুর কাছে গিয়ে বলল,,,
“কি হয়েছে আম্মু এভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেনো!”

“প্রিয়ম!”

“কি হয়েছে আম্মু”

“আনফি আর আরাদ দুজনই ফিরে এসেছে”

“কিহ কবে আসলো দু’জন”

”এখন কি হবে বাবা প্রেয়শী ভালোবাসে আনফিকে আনফিও আবার আরাদও প্রেয়শীকে ভালোবাসে”

“তুমি চি’ন্তা করো না আম্মু আমি থাকতে আমার বোনের কিছুই হবে না আর আনফি আর প্রিয়কেও কেউ আ’লা’দা করতে পারবে না”

চলবে,,,,,,,?