#একজোড়া_আগুন_পাখি
#পর্বঃ৩০
#তুশকন্যা
“থাক আমিই বলছি। তোর ছোট্টো বেলার এবং সারাজীবনের একমাত্র বিয়ে করা বর আমিই। ভিভান মানের সেই গাধাটা আর কেউ নয় আমিই। আমিই ভিভান শিকদার কেনীথ।”
কেনীথের কথায় আনায়া চরম বিস্মিত। এসব কি আদোও সত্যি নাকি সে কল্পনা করছে। কেনীথ কি বলছে কিংবা তার সাথে আদতে কি হচ্ছে আনায়ার মাথায় এখন এসব গোলমাল পাকিয়ে দিচ্ছে।
এরই মাঝে কেনীথ আনায়ার দিকে কিছুক্ষণ একনজরে তাকিয়ে রইলো। কিছুক্ষণ পর অদ্ভুত ভাবে হাসলো। অতঃপর নিজের হাতের কালো রংএর মোটা সুতোর মতো ব্রেসলেটকাকে খুলতে লাগলো। একটা সময় ব্রেসলেটের নিচ হতে একটা অবাক করা জিনিস বেড়িয়ে এলো। আনায়া তাকিয়ে দেখলো ঠিক তার লকেটের মতোই একটা স্টার শেইপের লকেট। আনায়া বিস্ময়ে কিছু বলার আগেই কেনীথ আচমকা আনায়ার গলা থেকে ওর চেইনটাকে টানলো। যেখানে একটা চেইনের সাথে সাথে আরো একটা চেইন বেড়িয়ে এলো। যেটা মূলত রেহানের দেওয়া। কেনীথ সেটা দেখে তাচ্ছিল্যের সাথে শব্দহীন করে হাসলো। তবে সেদিকে বেশি একটা সময় নষ্ট না করে আচমকা আনায়ার চেইনের লকেটের সাথে নিজের ব্রেসলেটের সাথে লেগে থাকা লকেটটাকে লাগিয়ে দিলো। নিমিষেই একটা প্যাটার্ন আনলক হয়ে গেলো আর দুটো স্টার শেইপের লকেটের মাঝ হতে দুটো ছবি দৃশ্যমান হলো।
আনায়ার গলায় থাকা লকেটে একটা আট-নয় বছরের বাচ্চার ছবি। বড়বড় চুলগুলো কোঁকড়ানো আর সিল্কি। চোখে কালো একটা গোলগাল চশমা। দেখতে একদম নাদান বাচ্চাদের মতো। যেন অল্পতেই কেঁদে ফেলবে এমন।
অন্যদিকে কেনীথের লকেটের মাঝে একটা আড়াই-তিন বছরের অতন্ত্য চঞ্চল সরূপ একটা মিষ্টি মেয়ে। যার এক গালে বড়সড় টোল দৃশ্যমান। ছবি দুটো আকারে ছোট হলেও সবকিছু একদম স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।
এসব দেখে আরো বেশি অবাক হতে থাকা আনায়ার উদ্দেশ্যে কেনীথ বলতে লাগলো,
“কি অবাক হচ্ছিস? তোর লকেটে যে ছবিটা দেখতে পারছিস তা তোর বিয়ে করা বর, গাধা ভিভানের। আর আমার কাছে যেটা রয়েছে সেটা তোর।”
“কিন্তু এসব…”
“তোরটা হয়তো জীবনে অনেক বারই নিজের কাছ থেকে সরিয়ে ফেলেছিস তবে আমি কখনো আমারটা দূরে সরাইনি। আমারটা সবসময় আমার কাছেই ছিলো। কিন্তু একটা অপরেরটা ছাড়া কখনোই আনলক হতো না। আমিও ভেবে নিয়েছিলাম আমারও হয়তো কখনো খোলার সৌভাগ্য হবে না। কিন্তু শেষপর্যন্ত তুই তোর দুভার্গ্য বানিয়েও হলেও আমাকে এই সৌভাগ্য গড়ে দিয়েছিস।”
আনায়া কিছু বলছে না। তার চোখমুখ এখন অশ্রুজলে সিক্ত। এদিকে কেনীথও একেক সময় একেক রুপে প্রতিক্রিয়া করছে।
“এতোদিনে তো বুঝেই গিয়েছিস যে এটা কোনো সাধারণ লকেট নয়। এই বাড়ির এমন কিছু অংশ রয়েছে যা আমার লকেট দিয়ে না হলেও তোর লকেট দিয়ে আনলক করা যায়।
এটা ছিলো আমার মা কাশফিয়ার বাবা মা অর্থাৎ আমার নানু নানীর। যা আমার বাবা মায়ের বিয়ের পর তারা বাবা মাকে উপহার দিয়েছিলো। আর বাবা মা আমাদের বিয়ের পর নতুন করে এতে আমাদের ছবি লাগিয়ে এটা দু’জনকে দিয়েছিলো। কিন্তু বাবা মা হয়তো জানতো না যে এটা সত্যিই কোনো সাধারণ লকেট নয়। যেটা আমিও জেনেছি অনেক পরে।
এই যে অদ্ভুত বাড়িটা দেখছিস এটাও আমার বানানো নয়। এটা আমার নানুর আর্তেমের বিডিতে থাকা একটা ছোট্ট রাজত্ব। নানু বিডিতে তেমন কোনো কাজ কখনো করেনি তবে সে অনেক বছর আগেই কোনো এক উদ্দেশ্যে গোপনে এই বাড়িটি বানিয়েছিলো। পরবর্তীতে সে উদ্দেশ্য মোতাবেক সে আর এগোয়নি। যে কারণে বাড়িটি কিছুদিন চলার পরও এটা বন্ধ হয়ে পড়ে থাকে। সে হিসেব মোতাবেক আশেপাশের কেউই আজও জানে না যে এই বাড়ির উৎপত্তি কবে আর কিভাবে হয়েছিলো।
আর এই কারণে এই বাড়িতে অনেক কিছু সন্ধানের চাবিকাঠি হয়ে এই লকেট কাজ করে। আদতে নানুর এসবের উদ্দেশ্য কি ছিলো জানা নেই তবে বাড়িতে আলাদা করে মিস্ট্রিয়াস পার্ট বানানোটা মোটেও কোনো ভালো উদ্দেশ্য ছিলো না নিশ্চয়! সে বেঁচে থাকলে অবশ্য জেনে নিতে পারতাম। তবে জান না-জানাতে আমার কিছু আশে যায়না। আমার প্রয়োজনে আমি পুরো বাড়িটাকে আমার মতো করেই সাজিয়ে নিয়েছি।”
এইটুকু বলেই কেনীথ আবারও থামলো। এবার কিঞ্চিৎ দীর্ঘ শ্বাস ফেললো। ছোট বেলা থেকেই সে চুপচাপ স্বভাবের ছিলো। তার সাথে একদিন একবারে এতো কথা বলাটা ঠিক যায় না। তবে কেনীথ পুনোরায় বলতে লাগলো,
“জানতে চাইবি না,তোর বাপ আমায় কেনো মা*রলো না?”
আনায়ার নির্বিকার চাহনি। যেন এখন হিতাহিতজ্ঞানশূন্য অবস্থা। শুধু অশ্রু সিক্ত চোখে কেনীথের দিকে অপলক তাকিয়ে।
“আমাকেও মে*রে ফেলতো যদি তোর মা আমায় না বাঁচাতো। হাহ…এটাকে মনে হয় আমার সৌভাগ্য বলা চলবে না, এটা তোর বাপের দুর্ভাগ্য।
আমি যখন অনু কাকিমার পাশে শুয়ে ভয়ে কাঁপছি তখন একটা পর্যায়ে গিয়ে অনু কাকিমা জেগে উঠলো। আমার দিকে বিস্ময়ের চোখে তাকালো। হঠাৎ আমার এহেন অবস্থা হয়তো কখনোই কাম্য করেনি তিনি। অবস্থার এতোটাই বারোটা বাজিয়ে ছিলাম যে অল্পতেই ভে করে কাঁদা আমিও আর চোখের জল ফেলতে পারছিলাম না৷
কাকিমা আমার এই অবস্থা নিয়ে জিজ্ঞেস করলে আমি কেঁপে কেঁপে শুধু এইটুকু বলি যে বাবা মাকে কাকা মে*রে ফেলছে। আমার কথা হয়তো কাকিমা ঠিক বুঝতে পারেনি। সে ভেবে ছিলো আমি কি না কি দেখে ফেলেছি তাই এই অবস্থা। তবে সে চিন্তিত ছিলো। মূলত তোর বাপ কাকিমাকে আগে থেকে তার পদক্ষেপ সম্পর্কে কিছুই জানায়নি। শুধু কাকিমা এইটুকু জানতো যে আজ তার গুনধর স্বামী আমার বাবা মায়ের কাছ থেকে ছলেবলে সম্পত্তি লিখে নিবে। আর এতেই হয়তো সে কষ্ট পেয়ে কাঁদছিলো। সে তো কল্পনাও করেনি যে তার গুনধর জামাই একটা শু*** বংশধর, শা//লা জা//র//জের বাচ্চা।”
কেনীথের নিজের আক্রোশ কমিয়ে পুনরায় বলতে লাগলো,
“যাই হোক, কাকিমা খানিকটা ঘাবড়েই আমাকে বললো যেন আমি ঘরেই থাকি। আর সে গিয়ে দেখে আসছে কি হয়েছে। আমি বাঁধা দেওয়ার সাহস পেলাম না, শুধু একটা অবলা গাধার বাচ্চার মতো পড়ে রইলাম বিছানায়।
ওদিকে কাকিমা রুম থেকে বের হতেই উপরের ঘর থেকে নানান শব্দ শুনতে লাগলো। সে তথাকথিত অবাক হলো, কারণ আজ তার জানা মতে আলাদা কিছু তো করার কথা ছিলো না। তবে উপরে হচ্ছেটা কি! তিনি একা-একা সিঁড়ি বেয়ে যত উপরে উঠলো তত বেশি ঘাবড়ালেন। উপরের চারপাশে কালো ঘুটঘুটে অন্ধকার শুধু বাবা মায়ের দরজা ভিতর রুম থেকেই আলোর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রইছে।
এতোক্ষণে অবশ্য আমি গাধাটা আর বিছানায় পড়ে নেই। কাকিমার পরে আমিও রুম থেকে বেড়িয়ে গিয়েছে। কাকিমা উপরে তলায় আর আমি নিচে এক কোণায় থরথর করে কাঁপছি। কাকিমা আর আমার লক্ষ করেনি। সে যথারীতি রুমের সামনে গিয়েই বিস্ময়ে আর হয়তো দাঁড়িয়ে থাকতে পারলেন না। সবকিছু হয়তো তার কাছে সপ্নও লাগছিলো। অবশ্য নিজের গুনধর স্বামীকে নিজ হাতে দু দুটো লা*শ সরানোর কায়দায় টুকরো করতে দেখে অবাক হওয়ারই কথা। তিনিও হয়েছিলেন এরপর…
হাহ…কাকিমাকেও নিজের কাজে সামিল করে নিলো নয়তো নিজের সন্তান আর আমাকেই মে/রে ফেলার হুমকি। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় স্বামীর হাতের কয়েকটা আঘাতও জুটলো কপালে, শুধুমাত্র শুরুতে তার কথা মানতে না চাওয়ায়। সেদিন গিয়ে হয়তো কাকিমা তোর বাপের আসল চেহারা চিনতে পেরেছে। তবে সেদিন সেও ছিলো নিরুপমা। আমার মতো অবলা প্রানী।
যথারীতি সেই শিকদার বাড়ির পেছনের ফুল ফলের বাগানের নিচে মাটিতে বাবা মায়ের দেহের টুকরো টুকরো অংশ গুলো সুন্দর করে দুজনে মিলে পুঁতে ফেললো। তোর বাপের চোখে রাতের আধারে সেদিন একটা আনন্দ দেখেছিলাম। যাকে বলে অন্যরকম পৈশা/চিক আনন্দ। সত্যি বলছি, এখন আমার জীবনে ঠিক আমি এমন আনন্দই পাই। তখন কি জানতাম নাকি, এই আনন্দের সাথে পৃথিবীর কোনো আনন্দের তুলনা হয় না।
কিন্তু আমি সেবার কাঁদলাম। চোখের সামনে সব হতে দেখলাম আর শব্দহীন করে কেঁদে গা ভাসালাম। জোরে কাঁদা নিষেধ ছিলো, তোর বাপ মানা করেছিলো। যে কারণে কাকিমাও কাঁদতে পারেনি। শুধু আমার মতো ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে চোখের পানি ফেলেছে। এরপরেও দিন গুলোই এভাবেই চললো।
তবে তুই ছিলি সবচেয়ে সুখী। দুনিয়ার কোনো ধ্যান জ্ঞানই নেই। খিদে পেলে খাস, ঘুমের সময় ঘুমাস, সারাদিন টইটই করে ঘুরে বেড়াস, বকবক করিস। বিন্দাস জীবন যাপন।
অথচ সেই কালো রাত আজীবনের জন্য অভি*শপ্ত স্মৃতি হয়ে রয়ে গেলো। না, না, অভিশপ্ত নয়… আশীর্বাদ হবে। সেই ঘটনার জন্যই না আমি অবলা গাধা ভিভান শিকদার থেকে র/ক্ত পিপাসু কেনীথ হতে পেরেছি। যত যাই বলিস, এই জীবনের মজাই আলাদা।
তবে তোর সুখ বেশিদিন দেখতে পারিনি। তোর বাপে তো আমায় তখনই শেষ করতে চেয়েছিলো কিন্তু কাকিমা হাতে পায়ে ধরে আমার জান ভিক্ষা চেয়ে বাঁচিয়েছে। সেও শান্ত হয়েছে কিন্তু পরবর্তীতে হয়তো আরো কিছু ভেবেছে। কারণ সম্পত্তি তো আর সে লিখে নিতে পারেনি। আর ভবিষ্যতে গিয়ে সেগুলো আমারই হবে। এইজন্য হয়তো আমার কিছুদিন যত্নআত্তি করলো। তবে বাড়ির বাহিরে যাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কারণ ততক্ষণে তার সবাইকে জানানো হয়ে গিয়েছে যে তাদের বাড়িতে আসা বিদেশী অতিথি আবার বিদেশে ফিরে গিয়েছে। বাহিরের মানুষের কাছে কাহিনি তখনই শেষ। এমনিতেও সবার কাছে তৈমুর শিকদার উত্তম ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত রইলেও তার ছেলে তারেকের স্বভাবসুলভ আচরণ কারোরই কোনো কালেই তেমন পছন্দ ছিলো না। যে কারণে দাদু মা*রা যেতেই শিকদার বাড়িতে বাহিরের সবারই আনাগোনা বন্ধ হয়ে যায়।
কিন্তু তোর বাপের মনের মধ্যে শয়তানি তো আর কমেনি। কি থেকে কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। শেষমেশ আমাকেই সরানোর পথ আবার বেছে নেয়। এমনিতেও তখন কিংবা এখন, তোর বাপের কাছে আমি সবসময় একটা আ*তংকই ছিলাম।আমাকে আর কয়দিন ঘরে আটকে রাখবে। বাহিরের মানুষ দেখলেও নানান প্রশ্ন তুলবে। এছাড়া আমি বড় হলে তখন নিশ্চয় তাকে জেলের ভাত খাওয়াতে উঠেপড়ে লাগবো। আহা… কত শত চিন্তা তার। যদিও সে জানতো না যে আমার মায়ের আসল পরিচয় কি! জানলে হয়তো কলিজায় ওতো সাহস হতো না।
কিন্তু এসব হয়তো কাকিমা আগেই বুঝে গিয়েছিলো। আমার জীবন নিয়ে তার ঘোর সংশয়। শেষে অনেক কলাকৌশল আর সাহস নিয়ে আমাকে রাশিয়ায় ফেরানোর উপায় খুঁজতে লাগলো। আর এজন্য নিশ্চয় নানু দের সাথে যোগাযোগের প্রয়োজন! সে যথারীতি আমাকে দিয়ে নানুদের সাথে গোপনে কথা বলতে বললো। আমি শুধু বলেছিলাম আমি ফিরতে চাই। তারা অনেক প্রশ্ন করেছিলো কিন্তু আমার কাছে আর তখন কোনো কথা ছিলো না। সেবার এক রাতের আঁধারে আমি ঐ শিকদার বাড়ি নামক নরক থেকে মুক্তি পাই। নানুর কিছু লোক এসে আমায় রাশিয়ায় নিয়ে চলে যায়। এরপর যা হয় সব আমার ইচ্ছেয়।
আমি তো রাশিয়ায় চলে যাই কিন্তু তোর বাপ তোর মাকে আর শান্তিতে থাকতে দিলো না। পরবর্তীতে খবর পেয়েছিলাম তোর বাপ নাকি কাকিমার সাথে অনেক ট/র্চার করে শুধু মাত্র আমাকে পালাতে সাহায্য করেছিলো বিধায়। অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় এতো অত্যাচার করে যে শেষে গিয়ে কাকিমার পেটের অনাগত সন্তানই নষ্ট হয়ে যায়।
কাকিমা আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরবর্তীতে আবার ইনায়ার জন্মের কথা শুনে খুশি হয়েছিলাম। তবে আবার কয়েকবছর পরেই শুনলাম কাকিমা আর নেই। অনেকবছর পর খারাপ অনুভূতি অনুভব করেছিলাম। এরপর অবশ্য আর কারো কষ্টেই কখনো কষ্ট লাগেনি।হয়তো আর লাগবেও না। খারাপ হয়ে গিয়েছি তো। তোর বাপের মতোই পি/শাচ,শয়/তান, জানো/য়ার আমি”
কেনীথ মুচকি হেসে এবার বসা থেকে শুয়ে পড়লো আনায়ার কোলে মাথা রেখে। অতঃপর এক শান্তির নিশ্বাস ফেলে চোখ বুজলো। চোখের মুখে এক অজানা শান্তির আভাস বিচরণ করছে। চোখ বুজে থাকা অবস্থাতেই আনায়াকে বললো,
“মাথা ব্যাথা করছে, একটু চুলে হাত বুলিয়ে দে।”
আনায়া নির্বিকারে কেনীথের মুখের দিকে চেয়ে। আচমকা এহেন আবদারে আনায়া খানিকটা ঘাবড়ালো।তবে তার মাঝে তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। খানিকটা অনিশ্চয়তা নিয়েই আনায়া কেনীথের একগোছা চুলে পূর্ণ মাথায় হাত রাখলো। খানিকটা বিলিয়ে দিতেই মাথার অর্ধ মেসি বানের জন্য বিষয়টা ঠিকঠাক তেমন সুবিধাজনক মনে হলো না। কেনীথ চোখ বুজে থাকা অবস্থাতেই কিঞ্চিৎ কপাল কুঁচকে বললো,
“ওটা খুলে ফেল!”
আনায়া প্রথমে কেনীথের কথা না বুঝলেও, বোঝা মাত্রই মেসি বান টা খুলে ফেলে। নিমিষেই মেয়েদের মতো একগোছা সিল্কি কার্লি চুল ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায়। আনায়ার আফসোস হতো একসময় এই চুল নিয়ে। তার চেয়ে অত্যাধিক সুন্দর মনে হতো এই চুলগুলো। অথচ আফসোস ছিলো কেনীথের এই চুলের যত্ন না নেওয়ার বিষয়ে। আর আজ প্রথম হয়তো সে ঠিকঠাক ভাবে এই চুলগুলো ছোঁয়ার সুযোগ পেয়েছে। কেনীথকেও এতো কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু এসবে নির্বিকার। তার মাঝে কোনো নতুন অনুভূতি আর সৃষ্টি হচ্ছে না। শুধু যথারীতি আনমনা হয়ে কেনীথের আদেশ পালন করছে। এরই মাঝে কেনীথ আবারও বলতে শুরু করলো,
“তোর বাপটা না গাধা ছিলো। আমার বাপ মায়ে কি কোনদিনও ওই শিকদার বাড়ির প্রোপার্টি নিয়ে মা*রামা*রি করতো? দাদু মা*রা যাওয়ার আগেই বাবাকে বলে গিয়েছিলো যেন বাড়িটার একভাগ তারেক আর একভাগ বাবা নেয়। বাবা এইসব কাগজপত্র নিয়ে কাজও করেছিলো কিন্তু সবকিছু গোছানোর আগেই দাদু চলে গেলো।
বাবা পরবর্তীতে এসব নিয়ে ভাবেনি। সে ভেবেছিলো আমরা যেহেতু রাশিয়াতেই থাকবো তবে শিকদার বাড়ির এতদ্রুত ভাগাভাগি নিয়ে না ভাবলেও হবে। সে তো কোনোদিন এখানে ভাগ বসাতে আসছে না। আর তারেকও যেহেতু এই নিয়ে কিছু বলেনি সেও বিষয়টি সহজও ভেবেছিলো।
বাবা ভেবেওছিলো যে পুরো বাড়িটাও তারেকের নামে করে দিবে। মাঝেমধ্যে ভাইয়ের বাড়িতে বেড়াতে আসবে… এই তো সব সুন্দরই কাটবে। তুই জানিস! তোর বাপ যদি সেদিন এসব বিষয়ে বাবার সাথে রাগারাগি না করে ভালোভাবে বলতো তবে বাবাও এতো রিয়েক্ট করতো না। তোর বাপের কথায় রাজিও হয়ে যেতো নিশ্চিত।
আর রিয়েক্ট করলেও কিছুদিন গেলেই আবার ঠান্ডা হয়ে যেত। রাশিয়াতে সেবার যাওয়ার আগে বাবা মাকে একটা বিষয়ে আলোচনা করতেও শুনেছিলাম। তারা বলছিলো সব সম্পত্তি খুব তাড়াতাড়িই তারেকের নামে দিয়ে দিবে।কিন্তু তোর বাপ…শা/লা বা/স্টা/র্ড টা তো আর এই সুযোগই দিলো না। কত সহজে বাবা মা কে দুনিয়া থেকে সরিয়ে দিলো।
আমি রাশিয়াতে যাওয়ার পর বাবা মায়ের ব্যাপারে নানু নানী সব জানতে পারে। তারা তো তখনই তোদের পুরো পরিবার শেষ করতে মরিয়া। কিন্তু আমি বাঁধা দিয়েছিলাম৷। তাদের কাছে হাত পা ধরে সময় চেয়েছিলাম। তখন এসব কেন করেছি, কি ভেবে করেছি জানি না। তবে তাদের সম্পূর্ণ নিষেধ করেছিলাম যদি তোদের কিছু করা হয় তবে আমি নিজেও নিজেকে কিছু করে ফেলবো।
এসব পাগলামি ছিলো আমার। পাগল হওয়ার লক্ষণ। আগে থেকেই একা থাকতাম। তখন আরো বেশি নিজেকে একা রেখেছি। সারাদিন অদ্ভুত সব জিনিস ভেবেছি। বাকি সবাই ভাবতো আমি এমনই, বাবা মাকে হারিয়ে হয়তো কিছুটা শক্ এ রয়েছি। কিন্তু ততদিনে আমার সবকিছু চেঞ্জ হতে শুরু করে। স্বাভাবিকের চেয়ে অস্বাভাবিক কাজকর্ম করতে ইচ্ছে করে। প্রথম প্রথম কাউকে মা*রার খুব ইচ্ছে হতো। কিছু না যেতেই বাড়ির দু’জন গার্ডকে মে*রে ফেলি। হুদাই, কোনো কারণ ছাড়া। ইচ্ছে হয়েছিলো, প্রথম বার হাতে গান নিয়েই দুজনকে শেষ করে ফেলি। সবকিছু প্রথম ছিলো তবে আমি ঠিক ছিলাম।
এরপর সব আরোও ঠিক হতে শুরু করে। আমি স্বাভাবিক মানুষের মতো চলতে ফিরতে শুরু করি। গাছপালা বাগানের প্রতি নতুন শখ জাগতে লাগে। দিনের বেশিরভাগ সময় বাগানেই গাছপালার সাথে পার করতাম। তবে সবসময় চুপচাপ আর গম্ভীর। দিনদিন আমারও পরিবর্তন হয় সাথে সকলেরও। একটা বিষয় লক্ষ করতে থাকি যে সবাই আমাকে দেখে ভয় পাচ্ছে। আমার চালচলনে সবার মাঝে আ*তংক জেগে থাকতো। এই বিষয়টি অদ্ভুত হলেও আমার বেশ ভালো লাগতে শুরু করে। একসময় আমি সবাইকে ভয় পেতাম আর তখন সবাই আমাকে ভয় পাচ্ছে।
তবে একজন ছিলো যে আমার পাগলামিতে নিজেও পাগলামি করতো।আমি সারাদিন বাড়িতে যা যা করতাম ও তাই তাই করতো।রোজ! মেয়েটা সত্যিই পাগল। আর এখনোও পাগলামিই করে যাচ্ছে।”
কেনীথ তাচ্ছিল্যের সাথে হাসলো।
“তারপর… তারপর আর কি! বছর পেরোতে থাকলো, আমারও পরিবর্তন হতে লাগলো। আরো বেশি গম্ভীর হলাম। চুপচাপ থাকতাম আর নিজের কাজ করতাম। সারাদিন বাগান, জীম, গান এসব নিয়েই দিন কাটতো। তবে আমার মাথায় চলছিলো ভিন্ন কিছু। একটা সময় রাশিয়াতে একই ভাবে থাকতে থাকতে বোর হলাম। আর ভালো লাগছিলো না কিছু। শেষে বিডিতে আসার সিন্ধান্ত নিলাম। বয়স তখন খুব একটা বেশি না। কেবল যৌবনে পা দিয়েছি। অথচ মাথার মধ্যে চলছে অনবরত অগ্নিগিরি। সবসময় মেজাজ বিগড়ানো।তবুও বাংলাদেশে এলাম। খোঁজ নিয়ে পেয়েছিলাম নানুর এই বাড়ির সন্ধান। বাকি সবটা দীর্ঘ সময়ে নিজের মতো সাজিয়ে নিলাম। যা ইচ্ছে হলো তাই করতে লাগলাম। পাগল! এক অদ্ভুত পাগল আমি।
ভেবেছিলাম একদম ভালো হয়ে যাবো। একদম সোনার ছেলে! কিন্তু হতে পারিনি। মানুষকে মে/রে কষ্ট দিতে ভালো লাগতো। শান্তি পাই, অনেক শান্তি। এরপর চারপাশে যেমন রকস্টার হয়ে নিজের নাম ছড়ালাম তেমনি ভেতরে ভেতরে এক পি*শাচের পরিণত হলাম। বিডিতে এসে অসংখ্য প্রাণের ইতি ঘটিয়েছি৷ তবে হ্যাঁ, এদের মধ্যে কেউ ভালো ছিলো না। সবারই কোনো না কোনো একটা দোষ ছিলো। আমি অবশ্য পুরোপুরি ভালো হতে না পারলেও খুব একটা খারাপ না। একদম শুদ্ধ মানবের প্রাণ আমি কখনোই নেয়নি।
যেমন ধর তোর রেহান! ও শা/লা ভালো মানুষ। এইজন্য শুধু এক্সিডেন্ট করিয়েছিলাম। জানে মা*রিনি কিন্তু! আবার সেই পুলিশ ইন্সপেক্টর! কি যেনো নাম ছিলো… যাই হোক, মনে পড়ছে না। ওই শা/লাও হয়তো এখন হাসপাতালে পড়ে আছে। রুহির কেস নিয়ে খুব লাফাচ্ছিলো। আমি ট্রিটমেন্ট দিয়েছি।
আরেহ… রুহির কথা বলতে তো ভুলেও গিয়েছি। ও কে নিশ্চয় মনে আছে তোর। সবাই জানে ও হারিয়ে গিয়েছে। আরে নাহ…ওর আমার কাছেই আছে। এই বাড়িতেই আছে।”
আচমকা রুহির কথা মাথায় আসতেই আনায়া খানিকটা অবাক হলো। রুহি নামের মেয়েটা কি সত্যিই কেনীথের কাছেই আছে! আনায়া নিজে থেকে কিছু ভাববে তার আগেই কেনীথ বলতে লাগলো,
“অবাক হচ্ছিস! এতো অবাক হয়ে লাভ নেই। ও এই বাড়িতেই আছে। ওর কিছু মাংস হয়তো কিচেনের দু নম্বর ফ্রিজে। যেটা তোকে খুলতে দেইনি । ওই ফ্রিজের সব মাংসই আমার বাড়িতে আসা নানান শিকারদের। ওসব মাংসই ক্লারা আর কেনেল খায়।
আর হাড় হাড্ডি কিছু বাড়ির পেইন্টিং গুলোতে পেয়ে যাবি। ওগুলো সব আমার আঁকা। আঁকাআকিতে তেমন ইন্টারেস্ট ছিলো না তবে মানুষের হাড়ের গুঁড়ো দিয়ে এমন পেইন্টিং করার মজাই আলাদা। আর শরীরের বাকি কিছু অংশ হয়তো বাগানে গাছপালার নিচে মাটিতে মেশানো আছে। গাছপালার সার হিসেবে ব্যবহার করি। একদম জৈব স্যার এইজন্য তো আমার বাগান সবার থেকে আলাদা।”
কেনীথ চোখ বুঁজে থাকা অবস্থাতেই দীর্ঘ শান্তির নিশ্বাস ফেললো। আজ যেন সম্পূর্ণ ভিন্ন দুনিয়ায় চলে গিয়েছে। নয়তো ওর কথাবার্তা কখনো এতো হাস্যরসের সন্ধান মেলে না।
“জানিস, ভেবেছিলাম তোর বাবাকে আমি কিছু করবো না। ওকে ধীরে ধীরে শেষ করবো। কিংবা সৃষ্টিকর্তা ওর কপালে যা রেখেছে তাই হবে। আমি দেশে ফিরে মাঝেমধ্যে ওর খোঁজ খবর নিতাম। শা/লারা দিনকাল কেমন কাটে এসব জানতে। ধীরে ধীরে শুনি ওর নাকি জু/য়ার খেলায় মেতেছে। আমিও এসব শুনে হাসলাম। আমার জানা ছিলো ওকে দিয়ে এরচেয়ে বেশি কিছু করা সম্ভব নয়। এবার সবকিছু বেঁচে খেয়ে শেষ করবে।
কিছুদিন যেতেই শুনলাম ও নাকি অসুস্থ। এরপর আর তেমন খোঁজ খবর নেওয়া হয়নি। এর অবশ্য একটা কারণও আছে, বাবুশকা আমাকে নিষেধ করেছিলো যা হওয়ার হয়েছে এরপর আমি যেন নতুন করে কিছু না করি। তারেকের সাথে বাকি যা হবে তা সৃষ্টিকর্তাই করবে। আমি যেন আর তোদের ধারেকাছেও না ঘেঁষি। হাহ…আমি তার এই কথায় রাজি হয়েছিলাম তবে একটা শর্ত নিয়ে।
বলেছিলাম যদি কখনো তুই কিংবা তোর পরিবার স্বয়ং আমার কাছে ফিরে আসে তবে সেদিন আমি আর কাউকে রেহায় দেবো না। কিন্তু এমনটা না হলে আমি তোদের খোঁজখবরও কখনো নেবো। তোরা ম*রলি নাকি বাঁচলি তাও দেখতে যাবো না।
কথা মতো এভাবেই আরো কয়েকটা বছর কেটে গেলো। আর একদিন তুই স্বয়ং নিজে আমার কাছে এলি, নিজের বাপের হায়াত কমাতে। সাথে তোর পরিবার সহ সকল কাছের মানুষের সুন্দর জীবনগুলোকে বিষাদে পরিণত করতে।
আমি জীবনে চ/ড়-থাপ্প/ড় শুধু দুজন মানুষের কাছ থেকে পেয়েছি। একজন হলো তোর বাপ, আরেকজন হলো তুই! যখন বাবা মা হারিয়ে আমি কাঁদতাম তখন তোর বাপ আমাকে থামানোর জন্য কয়েকবার মে*রে ছিলো। এরপর বহু বছর কেটে যাওয়ার পর তোর হাতে থা*প্পড়টা খেয়েছিলাম।
তোর বাপ যখন মেরেছিলো তখন আমি না হয় অবলা প্রাণী ভিভান শিকদার। কিন্তু ভিভান শিকদার থেকে কেনীথ হওয়ার পর এতো বড় সাহস কারো হয়নি। আমার পাগলামিতেই ছিলো সবার আনন্দ। সেখানে এক দুঃসাহসিক মেয়ে কিনা ভরা কনসার্টে ভিকে কে চ/ড় মে/রে দিলো! সবার মতো আমিও অবাক ছিলাম। তবে তোর ঢেকে রাখা মুখের শুধুমাত্র উন্মুক্ত চোখ দুটো চিনতে আমার একটুও দেরী হয়নি৷ আমি অবাক হয়েছিলাম মূলত এই ভেবেই যে তুই এবার নিজেই ফিরে এসেছিস।
তবুও পরবর্তীতে নিজেকে সময় দিয়েছি। ভেবেছি কিছু করবো না। কারণ আমার একটা পদক্ষেপ অনেককে কাঁদাবে, অনেককে শেষ করে দিবে। নিমিষেই একবার সহজ হয়েছি তো একবার কঠিন। কিন্তু তুই শেষমেশ যখন আমার পি এ হয়ে এলি তখন আর নতুন করে নিজেকে থামানোর কথা ভাবিনি। নিমিষেই নিজের সব পরিকল্পনা উল্টে নিয়েছি। তুই যত যাই বলিস, আমি সবসময় বললো আজ আমার কিংবা আমার জন্য যত জনের প্রাণ গিয়েছে সবকিছুর জন্য তুই দায়ী। তুই না এলে এতো কিছু কখনোই হতো না। ভাগ্য হোক আর যাই হোক, সবকিছুর মূলে তুই। তুই-ই তোর আশপাশের সবার কষ্টের কারণ
তোর ঐ বারের কনসার্টের ছেলেগুলোর কথা মনে আছে? ইচ্ছে মতো পিটিয়েছিলাম যে! ওরা পাঁচ জন ছিলো হয়তো। বাকিগুলোকে পেটাতে পারলেও একটা হয়তো পালিয়েছিলো। আমিও ছেড়ে দিয়েছিলাম। ভেবেছিলাম কিছু করবো না। কিন্তু পরে দেখি শা/লা আসলেই একটা শয়/তান। কোন যেন এমপির পোলা। দুইটা মাইয়াকে ধ/র্ষ/ণ করেও দিব্বি ঘুরে বেড়াচ্ছিলো। এদিকে আমার হাত তখন ফাঁকা। এমনি এমনি তো কাউকে মারতে পার/ছি না। কিন্তু মা/রার খুব শখ জেগেছিলো।পরে আর ওত ভাবিনি, ওটাকে ধরেও শেষ করে দিয়েছি।”
আনায়া খানিকটা কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
“রুহি আপু কেনো…?”
“আপু? হাহ…তুইও না! ওটার বেশি তিড়িংবিড়িং সহ্য হচ্ছিলো না। এমনিতেও ছোঁয়াকে মে*রে ফেলেও ও দিব্বি তিড়িংবিড়িং করে বেড়াচ্ছিলো। আমার সহ্য হয়নি তাই শেষ করে দিয়েছি। আমি যত খারাপই হই না কেনো, বউ ছাড়া আর মাইয়া মানুষ সারাদিন আমার গায়ের কাছে ঘেঁষে তিড়িংবিড়িং করবে তা আমার একটুও সহ্য হয় না।
এই তুই জানিস, এই দেশের পুলিশ গুলোও হুদাই। দুই একটা বাদে সবগুলোই হুদাই। দেশে আসার পর ভালো মানুষের মতো বেছে বেছে কতগুলো শয়তান নেতা-ফেতা, ব্যবসায়ীরে ধরলাম-মা*রলাম। আবার কষ্ট করে ওদের কুকীর্তি গুলো পুলিশের হাতেও সুট কেস ভরে দিয়ে এলাম। কত কিছু করলাম অথচ ওরা কেউ ধরতেই পারলো না আমারে?
এগুলো কি ঘাস খায় নাকি? অবশ্য ওদের দোষ নেই। দুনিয়াটাই এমন, একটা খবরের উপর আরেকটা খবর চলে আসে। ওদের কাছেও দিন শেষে কোনো ক্লু জোগাড় হওয়ার আগেই আরেকটা ক্লু লেস কেস এসে হাজির। তাহলে হবেই তো এমন। একটা কেস ফেলে আরেকটা, আরেকটা রেখে নতুন আরেকটা। দিনশেষে কোনোটাই আর শেষ হয় না। একসময় আইনের চামচা গুলোও নিউজ চ্যালেনের নতুন ভাষণ বানাতে বানাতে সব ভুলে যায়। আরে যেগুলো ম*রে ওগুলোর আত্মীয়স্বজনরাই বা আর কদিন ওদের মনে রাখে। দুদিন কেঁদে, তিনদিনে চল্লিশার পার্টি তারপর সব… আচ্ছা আমি এসব কি বাজে বকছি। আমার তো এসব বলার কথা না। তুই পাগল বানিয়ে দিচ্ছিস আমায়।
হ্যাঁ,হ্যাঁ, সব সমস্যা তোর মধ্যে। তুই আমার জীবনে না এলে এতো কিছু হতোই না। আমি তো ভালোই ছিলাম। সব দোষ তোর আর তোর বাপের। চিন্তা করিস না, আমি তোকে ভালো থাকতে দেবো না। অনেক কষ্ট দেবো তোকে। কিন্তু চিন্তা নেই, আমি জানে মার*বো না। একমাত্র বউ তুই আমার। ভবিষ্যতে আমি আর বিয়ে-শাদি করবো না। তোকে দিয়েই চালিয়ে নিতে হবে। অনেকদিন বাঁচতে হবে তোকে, অনেকদিন! আপাতত পতি সেবা কর। ভালো করে মাথা টিপে দে আমার, প্রচুর মাথা ধরেছে।”
কেনীথ শেষের দিকে আবোলতাবোল বলতে বলতেই ঘুমিয়ে পড়লো। আজকের বিষয়টা নতুন। তার সাথে এমন কখনো হয়নি। তবে আজ হঠাৎ কেনো হলো তা কেনীথের অজানা। কিন্তু শেষমেশ এর জন্য আনায়াকেই দোষী করে ঘুমিয়ে পড়লো। এদিকে আনার নির্বিকার। তার বলা কিংবা ভাবার কিছু নেই। মস্তিষ্ক যেন এখন সম্পূর্ণ অকেজো নয়তো এখন তার মস্তিষ্কে নতুন করে ভাবার মতো আর সক্ষমতা নেই। এক অদ্ভুত পাগলে পরিণত হচ্ছে সে।চোখের মধ্যে পানি টলমল করলেও মুখের হাবভাব স্বাভাবিক। আচমকা কেনীথের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতেই তার চোখে পড়লো দূরে ঘরের এক কোণায়। সেখানে পুনোরায় তারেককে উপলব্ধি করলো। তারেক মুচকি হাসি, আর তাকে নতুন করে আবারও কিছু বলতে শুধু করেছে। তবে তারেকের কথা আর আনায়ার শুনতে ইচ্ছে হলো না। বিরক্ত লাগছে তার, সবকিছু বিরক্ত লাগছে। সে ঘুরে-ফিরে আবার কেনীথের সব কথাগুলো নিজের মস্তিষ্কের ভাগ বিভাজন করতে ব্যস্থ হয়ে পড়লো। আগামীতে কি হতে চলেছে তা তারও অজানা।
_______________
তারেকের চলে যাওয়ার আজ একমাস হতে চললো। এই একমাত্র একটানা আনায়া কেনীথের বদ্ধ বাড়িতে পার করেছে। সেদিন কেনীথ আনায়াকে ওতো সহজ ভাবে সবকিছু বলার পর দুদিনের মতো ঠিকঠাক ছিলো। তবে দুদিন কাটতে না কাটতে আনায়া যখন নিজেকে খানিকটা স্বাভাবিক করতে ব্যস্থ তখন কেনীথ আবারও আনায়াকে নিজের পৈশা/চিক রুপটা দেখিয়েছে।
শুধু শারিরীক ভাবেই আনায়াকে ক্ষত-বিক্ষত করেনি বরং মানসিক ভাবেও যতটা পেরেছে আনায়ার বি*ধ্বস্ত করে তুলেছে। এই একমাস ধরে এমন কোনো দিন যায়নি যে কেনীথ আনায়ার সংস্পর্শে গিয়ে ওকে শারিরীক-মানসিক বি/ধ্বস্ত করার চেষ্টা করেনি।
যখনই ইচ্ছে হয়েছে আনায়াকে নিজের করে নিয়েছে। যেটা সহজ করেই হোক কিংবা নিজেকে পৈশা/চিক সত্ত্বার বহিঃপ্রকাশ করে। আনায়াও প্রথমের দিকে কাঁদতো,কষ্টে কাতরাতে থাকতো, অসুস্থ হয়ে পড়তো কেনীথ হয়তো তখন আবার নরম হতো। আবারও নিজের সবটা দিয়ে ওকে সুস্থ করে তোলার প্রচেষ্টা চালাতো। আনায়া সুস্থও হয়তো তবে যখনই খানিকটা স্বাভাবিক রুপে ফিরতে চাইতো তখনই কেনীথের শিকার হতো। এ যেন সব পাগলের মেলা।
একটা সময় গিয়ে আনায়া চুপ হয়ে যায়। কেনীথের সব কাজকর্মে আনায়া এখন নির্বিকার। কেনীথ শারিরীক হোক কিংবা মানসিক যেভাবেই আনায়াকে কষ্ট দেওয়ার চেষ্টা করুক না কেনো আমি তাতে আর এখন কোনো প্রতিক্রিয়া করে না।মূলত সেসব প্রতিক্রিয়ার জন্য যে নূন্যতম সক্ষমতা থাকার প্রয়োজন সেটুকুও আর এখন আনায়ার মাঝে অবশিষ্ট নেই।
তবে এতে দিনদিন কেনীথ ভারী অস্থির হয়ে পড়েছে। কথায় বলে না, মানুষ তাকেই কষ্ট দেয় যে কষ্ট পায়। আর যে কষ্ট পায় না তাকে কষ্ট দিয়ে কি লাভ। মানুষ কাউকে কষ্ট দেয় তো বিপরীত পক্ষের কষ্টকে অনুভব করে শান্তি পাওয়ার জন্য। যখন কেউ শতকষ্টেও নির্বিকার রয় তাকে কষ্ট দেওয়া বৃথা। এতে খেলায় কোনো মজা থাকে না। সবকিছুই ফেকাসে মনে হয়। যেমনটা কেনীথের মনে হচ্ছে।
কেনীথ যে একটা সাইকোপ্যাথ তা তো মিথ্যা নয়। তার রোগের ধরণ অদ্ভুত। সে নিজেকে যতটুকু পাগল হিসেবে জানে তার চেয়েও শতগুণ বেশি পাগল সে। আর ধীরে ধীরে নিজ ইচ্ছে পূরণ করতে গিয়ে আনায়াকে নীরব পাগলে পরিণত করে ফেলেছে। একের পর এক ট্রমায় সে সত্যিই পাগলের রুপে রুপান্তরিত হচ্ছে।
কিছুদিন আগের ঘটনা। কেনীথ আনায়ার উপর শারিরীক পৈশাচিকতা চালিয়েছে। এতে ও আবারও অসুস্থ হয়ে গিয়েছে। আবার কেনীথ নিজেই ওকে সুস্থ করতে যা করার সব করেছে। কেনীথ আনায়া সাথে যা করছে তাকে স্বামীর অধিকার ফলানো বলে না। এটাকে সরাসরি পাপই হবে। কারণ প্রতিবারই তার গভীর স্পর্শে শুধু হিং*স্রতা আর আনায়ার প্রতি প্রগাঢ় বিদ্বেষ ফুটে উঠেছে।
যথারীতি আনায়া শারিরীক ভাবে সুস্থ হতে না হতেই কেনীথ আনায়াকে একটা কাজ দিলো। কেনেল আর ক্লারার জন্য নিজ হাতে স্টেক বানাতে বললো। আনায়াও কোনো কথা না বলে কেনীথের আদেশ পালন করতে লাগলো। অবশ্য এখন আর আনায়া একটা কথাও বলে না। সারারাত যায় দিন যায়, কেনীথ জোড়াজুড়িতে সেই হু হা ছাড়া মুখে তার কোনো কথা নেই। ব্যাথা পেলেও এখন আর নূন্যতম শব্দটুকু মুখ থেকে বের করে না। ওকে দেখতে এখন সম্পূর্ণ প্রাণহীন পুতুলের মতোই লাগে।
আনায়া যখন কয়েকটা বড় বড় মাংসের টুকরো স্টেক করছে ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে বুকে হাত গুঁজে থাকা কেনীথ মুচকি হেসে আনায়ার উদ্দেশ্য বললো,
“এটা কার মাংস জানিস?”
আনায়া কিছু বললো না। বরং নির্বিকারে নিচের দিকে চেয়ে নিজের কাজ করে যাচ্ছে। চোখেমুখে বিধ্ব*স্ততা, একদম গা ছাড়া হাভভাব। চুলগুলো উষ্কখুষ্ক। জামায় ঢাকা ছাড়া শরীরের বাকি উন্মুক্ত অংশে শুধু ছোট-বড় ক্ষত আর কালচে দাগ।
আনায়া কিছু বললো না বিধায় কেনীথ নিজেই হেসে বললো,
“এগুলো তোর বাপের মাংস! অসুস্থ ছিলো দেখে ভালো মাংস একটা বেশি নিতে পারিনি। বেঁচে থাকতে ঠিকমতো খাওয়াসনি নাকি?”
কেনীথের তাচ্ছিল্য আর হাস্যরস মেশানো কথা শুনে আনায়া নির্বিকারে একবার মুখ তুলে কেনীথের দিকে তাকালো। চোখেমুখে হাসির জলুস। আনায়া বরাবরের মতো কিছু না বলেই পুনোরায় মাথা নিচু করলো। নিমিষেই কোথা থেকে একফোঁটা জল চোখ থেকে গড়িয়ে সোজা নিচে পড়লো।
____
আবার তখন আনায়াকে দিয়েই তারেকের মাংসগুলো কেনেল আর ক্লারাকে খাইয়েছে কেনীথ। কেনীথ বারবারের মতো তখন চেয়ারে গা ছেড়ে বসে ছিলো আর আনায়া তার পাশে দাঁড়িয়ে। কেনীথের মতো সেদিন আনায়াও নির্বিকারে তাকিয়ে কেনেল আর ক্লারার খাবার খাওয়া দেখেছে। নিজের জন্মদাতার শরীরের মাংস কুকুররা খেয়েছে আর সেটাই মেয়ে হয়ে আনায়া নির্বিকারে তাকিয়ে দেখেছে। এরচেয়ে করুন ইতিহাস আর কি হতে পারে। আনায়া নিজেও হয়তো এখন সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করে। আপাতত আর তার জীবনের বেঁচে থাকার কি উদ্দেশ্য আনায়া তা ঠিক জানে না। তবে ম*রে যেতে তার কোনো আক্ষেপ নেই। সে মনে করে এটাই হয়তো তার জন্য সবচেয়ে সহজ পথ হবে। তবে যদি তাকে ম*রতেই হয় তবে মৃ/ত্যুর আগে শেষবারের মতো সে কিছু একটা করতে চায়। জীবনের শেষ চেষ্টা, যাস্ট শেষ বার!
_______________
এই এক মাসে শুধু আনায়ার জীবনে নয় বরং তার সাথে যুক্ত থাকা আরো বহু লোকের জীবন হয়েছে আজ বি*ধ্বস্ত। রেহানের যেমন আজ শুধু তার বউ পাখি নেই তেমনি নেই তার বাবাও।
রেহান তার বউ পাখি হারিয়ে যখন দিশেহারা তখনই তার বাবা ছেলের এহেন অবস্থা দেখে স্ট্রোক করলেন। কিছুদিন অসুস্থ থাকতে থাকতেই পরপারে পাড়ি জমালেন হাসিখুশি থাকা নির্দোষ মানবটা। এদিকে স্বামী হারিয়ে রেহানের পরিবার আর স্বামী ভক্ত মা হঠাৎ প্যারালাইসড হয়ে গেলো। পুরো আহমেদ বাড়িতেই যেন কালো অন্ধকার নেমে এলো।
রেহান তার বউ পাখির শোক কাটিয়ে নিয়ে নিজেকে সামলে নেওয়ারও আর সুযোগ পেলো না। বরং তার আগেই এখন সে পরিবারকে সামলাতে ব্যস্থ হয়ে পড়েছে। বিদেশ পড়ুয়া ছেলেটার আর বিদেশ যাওয়া হয়নি। বিদেশ চলে গেলে এই অসুস্থ মা আর ছোট ভাইকে কে দেখবে! আপাতত ছোট একটা চাকরি জোগাড় করেছে আর বাকি পড়াশোনা দেশেই করবে ভেবেছে।
এমন নয় যে রেহান আনায়াকে খোঁজার চেষ্টা করেনি। সে সবকিছু করতে চেয়েছিলো তবে সে সুযোগটা আর পায়নি। রেহানের বাড়ির আশেপাশে আজও কিছু ছদ্মবেশী মানুষের দেখা মেলে। তারা দেখতে আর পাঁচটা স্বাভাবিক মানুষের মতোই হাভভাব নিয়ে চললেও রেহান জানে এরা কারা। শুধুমাত্র আনায়াকে খুঁজতে যেন রেহান কোনো আইনি সহায়তার কাছে না যেতে পারে তার জন্যই কেনীথ এসবের ব্যবস্থা করে রেখেছে। রেহান আর তাই ভাই রোহান, যে খানেই যায় না কেনো সবসময় কিছু না কিছু লোক তাদের আশেপাশে থাকবেই।
এছাড়া আলাদা করে লোকেদের কাছ থেকে কঢ়া হুমকিও এসেছে তার কাছে। রেহান নিজের জীবনের পরোয়া না করলেও তার ভাই আর মায়ের জীবন নিয়ে যেন ভাবে। পুলিশ কিংবা অন্যকাউকে জানানোর চেষ্টা করলে ভাই আর মাকে হারাতে হবে। রেহান এখন নির্বিকারে জীবন যাপন করে। পরিবারের প্রতি নিজের সকল দায়িত্ব যথাযথ পালন করেও আর নিজের জীবনকে শুধুমাত্র তাচ্ছিল্য করে। তার যেন কিছুই করার নেই। সবসময় চোখেমুখে এক অদ্ভুত বিষাদের তাচ্ছিল্যের হাসি ঝুলতে থাকে। এই হাসির গভীরতাও অনেক বেশি তবে তা বোঝার মানুষজন রেহানের কাছে এখন খুবই কম।
রেহান গভীর রাতে বসে নিজের বউ পাখির স্মৃতিচারণ করে। কোথায় আছে, কিভাবে আছে তা রেহান জানে না। কষ্ট হয়, অনেক বেশিই কষ্ট হয়। কষ্টে ছেলে মানুষের না কাঁদার নিময়টাও ভেঙ্গে ফেলে। সর্বশেষে শুধু নিজেকে তাচ্ছিল্য করে। আবার কখনো কখনো বিয়েতে দেওয়া কেনীথের সেই গিফট বক্সটা খুলে নাড়াচাড়া করে। রেহান সেই বক্সটা খুলে শব্দহীন ভাবে তাচ্ছিল্যের সাথে হাসে। এই বক্সের কথা সে ভুলেই গিয়েছিলো। কিছুদিন আগে হঠাৎ মনে হওয়ায় খুলেছিলো। একটা ছোট চিরকুট ছাড়া আর কিছুই পায়নি। সেখানে শুধু লেখা ছিলো,
“যার যেটা প্রাপ্য! সবার জন্য সবকিছু নয়। যেটা আমার সেটা শুধুই আমার। আমার প্রাপ্যটা আমি পেয়ে যদি ধ্বং*সও করে ফেলি তবুও সেটা আমার। কেনীথ কখনো নিজের প্রাপ্য ভাগাভাগি করে নিতে জানে না। হয়তো ফেলে দেয় নয়তো ছিনিয়ে দেয়।
~কেনীথ ”
আজও রেহান রাতের আধারে চিরকুটটা পুনোরায় পড়ে হেসে বললো,
“আপনি জিতে গিয়েছেন মিস্টার কেনীথ! তবে একটাই অনুরোধ, আমার বউ পাখিকে ভালো রাখবেন।”
কথা শেষ করতেই আচমকা লাল হয়ে যাওয়া চোখ হতে এক ফোঁটা পানি এসে কাগজের উপর পড়লো। রেহান তা দেখে পুনোরায় তাচ্ছিল্যের সঙ্গে হেসে ফেললো।
______
শুধু যে রেহানদের জীবনে পরিবর্তন এসেছে বিষয়টা তেমন নয়। আনায়ার ছয় জন বন্ধু ছিলো, তারাও আজ কেনীথের শি*কার হয়েছে। বিয়ে বাড়ির পর থেকে সবার মধ্যে আজ আতংক। কেউ আর তেমন আড্ডা দেয় না আর না ঠিকঠাক কথাবার্তা বলে। ভার্সিটি হোক কিংবা বাড়ি, সব জায়গাতেই কিছু লোককে তাদের আশেপাশে দেখেছে। মাঝেমধ্যে নিয়মের বাহিরে গেলে তাদের কাছ থেকে হুমকিও চলে আসে। তারা জানে না এভাবে আর কদিন কাটাতে হবে। এদিকে সাবা,তাজিম আর সায়েম তিনজনেই দেশ ছেড়েছে। বাবা মায়ের সাথে জোড়াজুড়ি করেই হোক কিংবা ভিন্ন ভাবে বুঝিয়ে। তাদের এভাবে চলা আর সম্ভব হয়নি। তাই দেশ ছেড়েছে। কিন্তু তা করেও লাভ হয়নি। পৃথিবীর যেই প্রান্তেই যায় না কেনো দিনশেষে তাদের কাছে কখনো চিরকুট কিংবা অজ্ঞাত ফোন কল, সব জায়গা থেকেই সতর্কতা মূলক হুমকি এসেছে। এভাবেই নর*কের মতো দিনকাল যাচ্ছে তাদের।
এসব থেকে শিকদার বাড়ির আশেপাশের মানুষজনও মুক্তি পায়নি। অনেকেই এক অজানা ভয়ে বাড়ি ছেড়েছে আবার অনেকে একদম স্বাভাবিক আর চুপচাপ থেকেই নিজেদের জীবনযাপন করছে। তাদের দেখে মনে হয়ে যে এইখানে এর আগে কখনো কিছুই হয়নি।
একে একে ফরিদা, রেহান সহ সকলেই এই নরক জীবনের শিকার হয়েছে। তবে এদের মাঝে একজনের সন্ধান আজ কেনীথ নিজেও করে বেড়াচ্ছে। ইনায়া! তার খোঁজ-খবর এখন কেনীথও জানে না অথচ শুরুতেই কেনীথ তার আলাদা ব্যবস্থা করেছিলো। কিন্তু সেখানে থেকে হঠাৎ ইনায়া উধাও। ওকে এখন পর্যন্ত কেউ খুঁজে পায়নি। আদোও ও বেঁচে রয়েছে কিনা তাও কেনীথের অজানা।
_______
আজ মাস খানেক পর কেনীথ প্রচন্ড বিরক্তি অনুভব করছে। হয়তো আনায়া উপর আবার হয়তো নিজের উপরেও। আনায়ার কোনো কিছুতেই আর সেই সাড়া পায়না। সবকিছু কেমন যেন বোরিং হয়ে গিয়েছে তার। আগে তাও স্টুডিও অফিস যেত এখন আনায়ার জন্য বাড়িতেই পড়ে থাকে। দুদিন হলো আবার আনায়ার আশেপাশেও তেমন যায় না। যে কারণে আজ কেনীথ পাভেলকে ফোন করে আসতে বলেছে। এমনিতে পাভেল এই কয়েকদিনে বেশি একটা আসতে পারেনি। আনায়াকে নিয়ে বেশি কিছু বললে কেনীথ বিরক্ত হতো তাই ওকে প্রয়োজন ছাড়া আসতে নিষেধ করেছিলো।
কালো হুডির টুপিটা সরাতেই কোঁকড়ানো একঝাঁক চুল উন্মুক্ত হলো। আজ পাভেলের হাতে বড় একটা চিপসের প্যাকেট। সোফার উপর আধশোয়া হয়ে এক পা ঝুলিয়ে ঝুলিয়ে নির্বিকারে চিপস খেয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে কেনীথ ওর সমানের চিন্তিত মুখে হাটাহাটি করছে। পাভেলকে এমন গা ছাড়া হাভভাবে দেখে কেনীথ আরো বেশি বিরক্ত হলো,
“কি তোর সমস্যা কি? এখানে এসব করার জন্য আসতে বলেছি?”
পাভেল নির্বিকারে চিপস খেতে খেতে বললো,
“কিসের জন্য আসতে বলেছেন তাও কিন্তু বলেননি। চিপস খাবেন?”
“রাখ তোর চিপস। কথা শোন, আমার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙ্গে গিয়েছে। ওকে আর দেখতে ইচ্ছে করে না। আর ওর গা ছাড়া হাভভাবও আর সহ্য হয় না। একদম বিরক্তিকর লাগে ওকে। তুই ওকে এই বাড়ি থেকে নিয়ে যা।”
—“বাদ দেন আপনার কাহিনি। সব জানি আমি। ফ্রিতে বউ পেয়ে জামাই গিরি দেখান তখন কিছু না। রাত হলেই বউ বউ আর দিন হলে আর বউ ভালো লাগে না। আরে আমি খালি রাতের কথা কেনো বলছি। আপনি দিনেও তো মনে হয় ছাড়েন না। যত কাহিনি শুধু আমার সামনে। বউ ভালো লাগে না, বাড়ি থেকে সরা! দেখা যাবে দুদিন পর বাচ্চা কাচ্চা হওয়ার পরও বলবে ওকে আমার ভালো লাগে না। সরা বাড়ি থেকে।”
কেনীথ ওর কথা শেষ হতে না হতেই চরম বিরক্তি নিয়ে ওর পায়ের কাছে লাথি মারতে চাইলে পাভেল দ্রুত এবার আধশোয়া থেকে বসলো। তড়িঘড়ি করে কেনীথের উদ্দেশ্য বললো,
“আরে বস সাবধানে। দেখে শুনে মারবেন না। আপনার বউ আর সিস্টেম সবই ঠিকঠাক। তও কদর করেন না। কিন্তু আমি বিয়ে করিনি এখনো। উল্টোপাল্টা জায়গায় মে*রে যদি আমার সিস্টেমই নষ্ট হয়ে যায় তখন বিয়ে করে কি করবো। বাচ্চাকাচ্চাই যদি পয়দা না করতে পারি।”
কেনীথ প্রথমে ওর কথার অর্থ ঠিক বুঝতে পারেনি। কিন্তু শেষে বোঝা মাত্রই রাগটা আর তিরতির করে বাড়লো। পাশ থেকে একটা ফুলদানি উঠিয়ে মারতে এলে পাভেল চিপসের প্যাকেটের তোয়াক্কা না করে উল্টেপাল্টে কোনমতে কেনীথের নিশানা থেকে দূরে সরে বাঁচলো।
“আরে বস পাগল হলেন নাকি!”
“সর আমার সামনে থেকে। তুই রাশিয়া চলে যা, ওকেও ফেলে দিয়ে যা নয়তো সাথে করে নিয়ে যায়। তোদের আর আমার প্রয়োজন নেই।”
“আরে বস রেগে যাচ্ছেন কেনো! আপনার কি লাগবে বলুন আমি ব্যবস্থা করছি।”
কেনীথ পাভেলের দিকে কঢ়া দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকার পর নিজেকে স্বাভাবিক করলো। সোফায় বসে হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা তুলে বললো,
“ওকে শিকদার বাড়িতে রেখে আয়। আপাতত ওকে আর চোখের সামনে দেখতে চাই না।”
পাভেল খানিকটা কেনীথের দিকে এগিয়ে এলো,”রেখে আসার পর আবার বউ বউ বলে গড়াগড়ি করে কাঁদবেন না তো! ”
কেনীথ পুনোরায় কঢ়া চোখে তাকাতেই পাভেল ঢোক গিয়ে বললো,
“ঠিক আছে, ঠিক আছে। যা বলবেন,তাই হবে।”
“আর হ্যাঁ,ওই বাড়ির চারপাশে গার্ডের ব্যবস্থা কর। কেউ যেন জানতে না পারে ও ওই বাড়িতে রয়েছে কিংবা ওর সাথে যেন কেউ দেখা না করতে পারে। একা একা পঁচে মরুক- বাঁচুক আমার কিছু আসে যায় না।”
এইটুকু বলেই কেনীথ উপরে চলে গেলো। এদিকে পাভেল কেনীথের যাওয়ার পানে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললো,
“এতোটা পাষাণ না হলেও পারতেন বস। একটু বেশিই পাগলামি করছেন আপনি।”
চলবে…..