একঝাঁক জোনাকি পর্ব-০৪

0
130

#একঝাঁক_জোনাকি
#পর্বঃ০৪
#লেখিকাঃইশরাত_জাহান_অধরা

হঠাত একটা অদ্ভত ইচ্ছে জাগ্রত হলো নিহানের মনে।চামচ নিয়ে অনিমার দিকে আগাতেই অনিমার চোখ দুটো বড় হয়ে আসল।উনি হঠাত এগিয়ে আসছেন কেন?

– “আপনি এগিয়ে আসছেন কেন?”

নিহান কিছু না বলে আরেকটু এগিয়ে অনিমার প্লেট থেকে খাবার নিয়ে ২ চামচ খেয়ে নিজের সিটে বসতে বসতে বলল,

– “আসলে আপনার খাওয়া দেখে মনে হলো খাবারটা বুঝি খুব টেস্টি তাই টেস্ট করলাম।”

অনিমা এতক্ষন নিজের আটকে রাখা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,

– “তাহলে আলাদা করে অর্ডার দিতেন।আমার এঁটো করা খাবার খাওয়ার কি দরকার ছিল?”

নিহান বলল,

– “আমার এতে কোন সমস্যা নেই।”

অনিমা নিহানের দিকে একবার তাকিয়ে খাওয়ায় মন দিল।নিহান অনিমাকেই দেখছিল। কিন্তু দেখায় ব্যাঘাত ঘটায় প্যান্টের পকেটে থাকা মোবাইল ফোনটা।তীব্র শব্দে কেঁপে উঠে ফোনটা।নিহান বিরক্ত হলো খুব।এখনই অপরপাশের মানুষটাকে কল দিতে হলো?এরকম ডিস্টার্ব করার মানে কি?

– “আপনার ফোন বাজছে।ধরছেন না কেন?”

– “আপনি খান। আমি একটু কথা বলে আসছি।”

বলেই বসা থেকে সাইডে চলে গেল।অনিমার খাবার প্রায় ততক্ষনে শেষ।হাত ধুয়ার জন্য ওয়েটারকে ওয়াশরুমের কথা জিজ্ঞেস করে সে।ওয়েটার ওয়াশরুম দেখিয়ে দিতেই ওয়াশরুমে চলে যায়।
হাত ধুয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখল সোহান আসছে মোবাইল চালাতে চালাতে।অনিমাকে সে এখনও দেখেনি।অনিমার পা দুটো আটকে গেছে মাটিতে।অনিমা খুব করে চাইলো সোহান দেখার আগেই চলে যেতে। কিন্তু পারছেনা।মাটি যেন তার পা চুম্বকের মতো আটকে ধরে রয়েছে।সোহান ততক্ষনে অনিমাকে দেখে ফেলেছে। সোহনকে তাকাতে দেখে অনিমার অসস্তি লাগছে।এরমধ্যেই নিহান এসে অনিমাকে বলল,

– “অনিমা!কোথায় গিয়েছিলেন আপনি?ওয়াশরুমে আসবেন বললেই পারতেন। কতক্ষন ধরে খুজছি সেটা আপনি জানেন?ভাগ্যিস একটা ওয়েটারের সাথে দেখা হয়ে গেল।উনি বলাতেই আপনাকে পেলাম।আমি তো ভাবলাম আপনি আমাকে না বলেই চলে গিয়েছেন।”

অনিমা নাম শুনে সোহান সামনে তাকাল।সোহান তাকাতেই অনিমার অস্বস্তি আরও দ্বিগুন বেরে গেল।
অনিমাকে কথা বলতে না দেখে নিহান আবার জিজ্ঞেস করল,

– “কি হলো? কথা বলছেন না কেন?”

অনিমাকে সামনে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিহানও তাকালো সামনে।সামনের ব্যাক্তিকে দেখে নিহানের বুঝতে বাকি রইল না অনিমার চুপ করে থাকার কারন।সোহান ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে নিহানের দিকে।ও ঠিক এখনও চিনতে পারে নাই নিহানকে।বিয়ের ১ বছরে নিহানকে কোনদিন দেখেনি।অনিমার সাথে কি করছে এই ছেলে এটাও বুঝতে পারছে না।তবে যাই করুক না কেন ওর তো চিন্তা করার কোন কারন নেই।কারন ও তো ডিভোর্স পাঠিয়ে দিয়েছে আর অনিমাও সাইন করে দিয়েছে।তাহলে এই ছেলে কে এই নিয়ে কেন চিন্তা করছে সে?তার চিন্তা করা কি মানায়?উহু মোটেও না।এসব ভাবতে ভাবতেই নিহান এসে সোহানকে হাত বারিয়ে হেসে বলল,

– “হাই,আমি ড.নিহান শাহরিয়ার।আপনি নিশ্চয়ই সোহান?”

সোহান ভ্রুজোড়া কুঁচকে এলো।এই ছেলে ওকে কি করে চিনল?সোহান হ্যান্ডশ্যাক করে বলল,

– “জ্বি।কিন্তু আপনি কে?আপনাকে তো চিনলাম না!”

– “একচুয়ালি আমার সাথে মিস অনিমার বিয়ের কথা চলছে।কয়েক মাসের মধ্যেই আমরা বিয়ে করব।”

সোহান এক পলক অনিমার দিকে তাকালো। এত তাড়াতাড়ি যে অনিমা এই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে পারবে সেটা সে ভাবতে পারেনি।

– “তা আপনি কি জানেন অনিমা একসময় বিবাহিত ছিল?এখন সে ডিভোর্সি?”

নিহান হেসে বলল,

– “জানব না কেন?অবশ্যই জানি।আর এটাও জানি যে আপনিই উনার প্রাক্তন স্বামী ছিলেন।”

– “উনি ডিভোর্সী জেনেও আপনি উনাকে বিয়ে করতে রাজি হচ্ছেন?এতই কি অভাব পরছে দুনিয়াতে মেয়ের যে আপনি বিয়ে করার জন্য মেয়ে খুজে পাচ্ছেন না?”

– “আমার ইচ্ছা করছে আপনাকে উচিত জবাব দেওয়ার কিন্তু আমি আপনার কাছে কৃতজ্ঞ।কারন আপনার কারনেই আমি মিস অনিমাকে নিজের করে পেতে চলেছি।তাই আমার মুখে আপনার জন্য কোন কঠোর কথা মানাবে না।যাইহোক মিস অনিমা চলুন।দেরি হয়ে যাচ্ছে।আমাদের তো আরও অনেক কাজ আছে।ফাও প্যাঁচাল পেরে কোন লাভ নেই।”

সোহান রেগে বলল,

– “আপনি কিন্তু আমাকে অপমান করছেন?”

– “আগে আপনি মিস অনিমাকে অপমান করেছেন।সেটারই জবাব দিলাম আমি জাস্ট।আপনাকে অপমান করার কোন ইনটেনশন আমার নেই।”

বলেই সোহানের দিকে একবার তাকিয়ে অনিমার হাত ধরে বেরিয়ে গেল।সোহানও রাগে ফুসতে ফুসতে চলে গেল।
রেস্টুরেন্ট থেকে বেরুতেই নিহান অনিমার হাত ছেড়ে দিল।মাথা নিচু করে বলল,

– “সরি আপনার পারমিশন ছাড়া আপনার হাত ধরার জন্য। ”

– “ইট’স ওকে।আপনি তো আর ইচ্ছা করে হাত ধরেন নি।”

– “বাই দা ওয়ে,আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিন তো!”

– ” কেন?”

-“কেন মানে?মোবাইল নাম্বার না থাকলে আপনার সাথে কন্টাক্ট করবো কিভাবে?আচ্ছা বাদ দেন!চলুন,শপিং করতে যাই।”

-“আমার কিছু লাগবে না।”

-“বললেই হলো নাকি!আমি আপনার মার কাছে বলেছি যে শপিং করার জন্য আপনাকে এসেছি।এখন শপিং না করলে উনি কি ভাববেন?”

অনিমা মনে মনে ভাবল সত্যিই তো।খোটা দিতে একবারও ভাববে না মা।এমনিই সবসময় ওত পেতে থাকে।

– “আচ্ছা চলুন।তবে বেশি কিছু কিনব না।

– ” হুম।”

.
.
– “কিছু কিনছেন না কেন?সেই কখন থেকে কয়টা মার্কেট ঘুরেছি।একটা জামাও কি আপনার পছন্দ হচ্ছে না?”

অনিমা মাথা নিচু করে ফেলল।আসলে পছন্দ তো হচ্ছে তবে যেই জামাই পছন্দ হচ্ছে সবগুলাই ২০০০ টাকার উপরে।এত দামি জামা সে কি করে কিনবে?আর সবচেয়ে বড় কথা অন্যের টাকায় এত দামি জামা কিনাও তো মানায় না।জীবনে এত দামি জামাও পরেও নি সে কোনদিন।একটা কমদামী জামাও পাচ্ছে না।যে সে কিনবে।নিহান নিয়েই এসেছে দামি মার্কেটে।ও তো সবসময় নিউ মার্কেট থেকে জামা কিনেছে।

– “বলছিলাম কি আমার কোন জামা লাগবে না।আমি আম্মুকে কিছু একটা বলে ম্যানেজ করতে পারব।চলুন আমরা চলে যাই।”

নিহান ভ্রু কুচকে বলল,

-“ভেবে বলছেন তো?”

-“জ্বি।”

-“তবে চলুন।”

বলেই রাস্তায় রাখা পার্কের গাড়ির সামনে এসে নিহান গাড়ির দরজা খুলে দিল।অনিমা মাথা নিচু করে গাড়ির ভিতর বসতেই নিহান বলল,

– “আমার কিছু জরুরি কাজ ছিল।আমি কি কাজটা সেরে আসতে পারি?ততক্ষন আপনি ওয়েট করবেন?বেশি সময় লাগবে না।জাস্ট ১৫-২০ মিনিট লাগবে।”

– “আচ্ছা।আপনি কাজ সেরেই আসুন।আমি ওয়েট করছি।”

– “থ্যাংক ইউ ভেরি মাচ।”

বলেই গাড়ির দরজাটা আটকিয়ে দিয়ে চলে গেলো। ১৫মিনিট পর গাড়িতে এসে সিটে বসে সিট বেল্ট বাঁধতে বাঁধতে বলল,

– “বেশি দেরি করে ফেলেছি?”

– “নাহ। ”

.
.
অনিমার বাসার সামনে এসে পরেছে নিহান। নিহানের থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে সামনে হাঁটা দিল অনিমা।হঠাত নিহানের ডাকে পিছনে ফিরল।নিহান অনিমাকে ওয়েট করতে বলে গাড়ির পিছনের সিট থেকে কয়েকটা ব্যাগ এনে অনিমার হাতে দিলো।ব্যাগ গুলোর দিকে তাকাতেই দেখলো শপিং ব্যাগ এগুলো।অবাক হয়ে বলল,

– “এগুলো আমাকে দিচ্ছেন কেন?”

– “আপনার জন্য কিনেছি।আপনাকে না দিয়ে কাকে দিব?”

– “কিন্তু আমি তো বলেছিলাম আমার কিছু লাগবে না।”

– “আমিও তো আপনাকে শপিংয়ের নাম করে বাইরে নিয়ে এসে খালি হাতে ফেরত যেতে দিতে পারিনা!”

– “কিন্তু….”

– “কোন কিন্তু না।আপনি দরকার হলে এগুলো ইউজ করবেন না!আমি জাস্ট আপনার ফ্যামিলিকে যে কথা বলে আপনাকে বাইরে নিয়ে এসেছি সেটাই পালন করলাম।এমনেতেই ওরা আপনার উপর রেগে আছে।কথা শুনাতে একবারও ভাববেনা। আর আপনি তো আমার জন্য কথা শুনতে পারেন না তাই না?এখন নেওয়া না নেওয়াটা আপনার ব্যাপার!সে যাইহোক,আমি আসছি।”

অনিমার কোন কথা না শুনে গাড়িতে উঠে গাড়ি ঘুরিয়ে নিলো।নিহানের যাবার দিকে তাকিয়ে একটা শ্বাস ফেলল।সে তো চায়নি কারোর কাছ থেকে হেল্প নিতে!তবে উনি কেন আমাকে হেল্প করছে?এতকিছু করে উনার লাভটা কি?আদৌও কি উনি নিস্বার্থ ভাবে সাহায্য করছেন নাকি এতে উনার কোন স্বার্থ আছে?স্বার্থ থাকলেও সেটা কি?নাহ,আর ভাবতে পারছে না সে।বাসায় যাওয়ার দরকার এখন।এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে।ভেবেই হাতে থাকা ব্যাগগুলোর দিকে তাকিয়ে গেটের ভিতর ঢুকলো। দরজা নক করতেই তিথি এসে দরজা খুলে অনিমার দিকে তাকিয়ে একটা ভেংচি কেটে বাবার পিছনে দাঁড়িয়ে গেলো।অনিমার বাবা সোফায় বসে চা খাচ্ছিলো।
অনিমা একবার সেদিকে তাকিয়ে নিজের রুমের দিকে যাবার জন্য পা বারাতেই পিছন থেকে অনিমার বাবা বলল,

– “সারাদিন কোথায় ছিলে?”

চলবে…..