#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ০৯
অনিমা ওদের দৌড় দেখে হেসে সামনে তাকাতেই দেখল ছেলেটা মাটিতে হাঁটু মুড়ে বসে আছে।ভয়ে কাঁপছে।অনিমা কয়েক পা এগিয়ে ছেলেটার দিকে হাত বারিয়ে দিয়ে বলল,
“কোন ভয় নেই!ফাজিলগুলা চলে গেছে।উঠো!”
ছেলেটা মাথা উচু করে অনিমার দিকে তাকালো।চোখে মুখে এখনো ভয়ের ছাপ উপস্তিত।অনিমাকে ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না।অনিমা হেসে হাটু মুড়ে নিচু হয়ে বলল,
“ওরা তোমার কিছু করতে পারবে না।আমি এসে গেছি পিচ্চি।উঠো।যেভাবে বৃষ্টিতে ভিজছো ঠান্ডা লেগে যাবে তো!আর তোমার মুখে রক্ত লেগে আছে কেন?ওরা কি তোমায় মেরেছে?”
ছেলেটি কোন উত্তর দিলো।চুপচাপ তাকিয়ে আছে অনিমার দিকে।অনিমা মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,
“আচ্ছা বলতে হবে না তোমায়। আমার হাত ধরে দাঁড়াও।”
ছেলেটা অনিমার হাত ধরে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল,
“পুলিশ কি সত্যিই আসছে এদিকে?”
অনিমা হেসে বলল,
“এই বৃষ্টির মধ্যে কোন পুলিশ আসবে?মিথ্যা বলেছি যাতে ওরা চলে যায়।নইলে তো ছাড়তোই না।ওহ আরেকটা জিনিস।”
বলেই কাধে থাকা ব্যাগের চেইন খুলে একটা ব্যান্ডেজ খুলে ছেলেটার কপালে লাগিয়ে দিতে দিতে বলল,
“ইশ ছেলেগুলা কিভাবে মেরেছে।এভাবে মারে কেও?রক্ত বের হচ্ছে কপাল থেকে।এতটুকু ছেলেরাও আজকাল মারপিট করে?চলো তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি।”
ছেলেটা মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো।
“তোমার নাম কি?”
“মাহির।”
“বাহ বেশ সুন্দর নাম!আমার নাম অনিমা।তুমি আমাকে আপু বলে ডাকতে পারো। ঠিক আছে?”
“হুম।”
“সরি আমার কাছে ছাতা নেই।নয়তো ছাতা মাথায় করে নিয়ে যেতাম।”
কিছুক্ষন হাঁটার পর মাহির বলে উঠলো,
“এখানে আমার বাসা।”
অনিমা মাথা তুলে তাকাতেই অবাক হয়ে বলল,
“আরেহ!আমার বাসাও তো এখানে।ভাড়া থাকো তোমরা?”
“হুম।”
“আগে তো দেখিনি কোনদিন।”
“নতুন এসেছি।”
“অহ আচ্ছা।এজন্যই দেখিনি বোধহয়।আচ্ছা তাহলে তুমি তোমার বাসায় যাও।আর কোন অসুবিধা বা অই ছেলেগুলা আবার বিরক্ত করলে আমাকে বিচার দিবা বুঝেছো?সহ্য করবা না একদম!”
“আচ্ছা।আসি তাহলে?”
“হুম।অবশ্যই, বাই।”
.
.
সোহান অনিমার মার দেওয়া ঠিকানা অনুযায়ী নিহানের চেম্বারে আসলো।নিহান তখন রুগী দেখছিলো চেয়ারে বসে। হঠাত দরজার নকের শব্দে সামনে তাকাতেই সোহানকে দেখল।সোহানকে দেখা মাত্রই ভ্রু কুচকে এলো নিহানের।এই লোক এখানে কি করছে?সামনে থাকা রুগীটাকে দ্রুত মেডিসিন দিয়ে নার্সকে বলে দিলো ৫ মিনিট ব্রেকের কথা।এই পাঁচমিনিটে অন্য কোন রুগী যেন না আসে সেই কথাও বলে দিয়েছে।অতঃপর নার্স যেতেই দরজার দিকে তাকিয়ে হেসে বলল,
“আরে সোহান যে?আসুন আসুন ভিতরে আসুন।তা কি মনে করে? ”
নিহানের হাসি দেখে সোহানের গা জ্বলে উঠলো।নিজেকে সামলিয়ে বলল,
“অনিমা কোথায়?”
“অনিমার কথা হঠাত জিজ্ঞেস করছেন?”
“যেটা বলেছি সেটার উত্তর দিন।অনিমা কোথায়?”
“কারন না জেনে তো আপনাকে আমি ঠিকানা দিতে পারব না।”
“দরকার আছে আমার ওর সাথে।”
“কি দরকার?”
“আমাদের ডিভোর্স সম্পর্কে কথা আছে আমার।”
“তাহলে তো বিষয়টা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে হচ্ছে।”
নিহানের খাপছাড়া কথাগুলা শুনে সোহানের রাগ তড়তড় করে বারছে।দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
“হেয়ালি না করে ঠিকানাটা বলুন।”
নিহান ঠিকানা কাগজে লিখে সোহানকে দিতে দিতে বলল,
“আমি যদি দেখি আপনি অনিমার ক্ষতি করার চেষ্টা করেছেন তাহলে আমি মেনে নিব না সেটা।কথাটা মাথায় রাখবেন।”
.
.
অনিমা পুরো ফ্ল্যাটটা পরিষ্কার করছিলো।ধুলো বালি সবগুলো রুমের মধ্যে পরে আছে।সেগুলাই ঝাড়ু দিচ্ছিলো।হঠাত কলিং বেলের আওয়াজ শুনে সোজা হয়ে দাঁড়ালো।এই দুপুরের দিকে কে আসলো?কেও তো এখানে আসার কথা না!ভেবেই ভ্রু কুঁচকে এলো।ঝাড়ুটা ফ্লোরে ফেলে দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলতেই সোহানকে দেখে আত্মা কেঁপে উঠলো অনিমার।সোহান ততক্ষনে দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে গিয়েছে।
“আমাকে আমার বাচ্চার কথা বলোনি কেন?”
বাচ্চার কথা সোহানকে কে বলল?ও তো বলেনি!নিহান বলেছে?কিন্তু উনি কেন বলবেন?
“কি হলো এন্সার দিচ্ছোনা কেন?”
অনিমা মনে মনে নিজেকে শক্ত করে নিলো।
“বাচ্চার কথা বলাটা কি খুব বেশি প্রয়োজন ছিল?”
“অবশ্যই ছিল।বাবা হিসেবে আমার অধিকার আছে জানার।”
অনিমা হাসল।হাসতে হাসতেই বলল,
“অধিকার?কোন অধিকারের কথা বলছো?তোমার অধিকার কি আছে?তুমি নিজেই সেই অধিকার থেকে বেরিয়ে গিয়েছো!এখন কোন মুখে অধিকারের কথা বলো?”
“তোমার কি মনে হচ্ছে না তুমি একটু বেশিই রুড বিহেভ করে ফেলছো?”
“আসলে তোমার সাথে কথা বলার জন্য এর থেকে ভালো শব্দ আমার মুখ থেকে বের হচ্ছে না।কিসের জন্য এসেছো?”
“দেখো!তুমি বাচ্চাটাকে এব্রোশন করিয়ে ফেলো।”
“কিহ?এসব কি বলছো?আমি কেন বাচ্চাকে মেরে ফেলব?”
“এই বাচ্চার জন্য আমি এনাকে বিয়ে করতে পারছিনা।আর তুমি একা ওকে কিভাবে পালবে?তোমারই অসুবিধা হবে।তাই বলছি।”
“একজন বাবা হয়ে তোমার মুখে এসব কথা আসে কি করে?”
“বাধ্য হয়েই বলছি!তোমার আর আমার ভালোর জন্য। ”
“তুমিকি যাবে এখান থেকে নাকি আমি পুলিশ ডাকবো?”
“বাচ্চাটা….”
“আমার বাচ্চাকে আমি লালন পালন করবো।কোনদিন তোমার ছায়াও ফেলতে দিবনা ওর উপর।”
“তোমার মা যে বললেন তোমাকে মেনে নিতে বাচ্চার জন্য! নাহলে নাকি উনি কেস করবেন আমাকে নিয়ে।”
অনিমা মার কথা শুনে অবাক হলো।মা এসব কথা কেন বলেছেন সোহানকে? এটাই ওর মাথায় আসছে না।
“তেমন কোন কিছুই হবে না।”
“ভবিষ্যতে তুমি তোমার বাচ্চাকে আমার সম্পত্তির ভাগাভাগির জন্য উসকে দিবেনা এর প্রমান কি?যেহেতু ও আমার বাচ্চা সেহেতু ওর সম্পূর্ণ অধিকার আছে আমার সম্পত্তির উপর।”
একটা মানুষ কি করে এত খারাপ হয় সেটাই অনিমা বুঝতে পারছে না।সোহানকে না দেখলে হয়তবা জানতোই না!এই মানুষটার সাথে সে কি করে ঘর করেছিলো?সংসার করেছিলো?ভালোবেসেছিলো?
“কি হলো কথা বলছো না কেন?কি দেখছো?”
“নাহ কিছুনা।আমার বাচ্চা জানতেই পারবে না তুমি ওর বাবা।আমি ওকে সেই পরিচয়ই দিবো না।তুমি জানো তোমার সম্পত্তির উপর আমার এক ফোটাও লোভ নেই!ছিলনা আর ভবিষ্যতে থাকবেও না। আমি এখন আর তোমার সাথে কথা বলতে চাচ্ছি না।একটা শব্দও না।বের হয়ে যাও।”
“যাচ্ছি!কিন্তু তোমার দেওয়া কথাটা মাথায় রেখো।আমি কোন অশান্তি চাচ্ছি না।”
অনিমা বসে পরল ফ্লোরে হাটু মুড়ে।একটা মানুষ নিজের স্বাথের জন্য কি করে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলবার কথা বলতে পারে?আচ্ছা এই একবছরের সংসারে সোহানের কি একবার ও ওর উপর মায়া হয়নি?একদিনের জন্যও কি অনিমাকে ভালোবাসেনি?কথাগুলা বলার আগে ওর কি একবারও বিবেকে বাধলো না নিজ সন্তানকে মেরে ফেলবার পরামর্শ দেওয়ার জন্য?
.
.
নিহান আজকে তাড়াতাড়ি হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পরেছে।অনিমাকে দেখতে যাবাটা জরুরি। সোহান কেন অনিমার সাথে দেখা করতে চাইলো?ক্ষতি করে ফেলেনি তো অনিমার?ভেবেই গাড়ির স্পিড দ্বিগুন বাড়িয়ে দিলো।গাড়ি পার্ক করে সিড়ি বেয়ে দরজার কাছে এসে দরজায় নক করবার জন্য হাত রাখতে দরজা খুলে গেলো।ভ্রু কুচকে এলো নিহানের।দরজা খোলা কেন?দরজা ঠেলে বাসার ভিতর ঢুকতেই আরও অবাক হলো।সারা রুম অন্ধকার।একটাও লাইট জ্বালানো নেই।পকেট থেকে মোবাইল বের করে টর্চ লাইট অন করে সুইচের কাছে গিয়ে লাইট জ্বালাতেই দেখল অনিমা ফ্লোরে নিচু হয়ে হাটু মুড়ে বসে আছে।ধক করে উঠলো নিহানের বুক।অনিমা এভাবে বসে আছে কেন?লাইট অফ করে, দরজা খুলে! এক পা এক পা করে এগিয়ে গেলো অনিমার দিকে।নিচু হয়ে বসল অনিমার সামনে।
“মিস অনিমা?কি হয়েছে? এভাবে বসে আছেন কেন?”
অনিমা কোন উত্তর দিলো না।
“কিছু তো বলুন অনিমা?এভাবে চুপ করে থাকবেন না।”
এবারও কোন উত্তর দেয় নি অনিমা।
“সোহান কি কিছু বলেছে আপনাকে?কি বলেছে?উনি আপনার সাথে দেখা করতে চেয়েছিলো কেন?”
অনিমা এবার মাথা তুলে নিহানের দিকে তাকালো।পুরো চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।মাথার চুল এলোমেলো।
“সোহান যে এসেছিল আপনি জানলেন কিভাবে?আপনিই কি তাহলে উনাকে ঠিকানা দিয়েছেন?”
“সোহান আজকে আমার চেম্বারে এসেছিলো। বলল আপনার সাথে নাকি জরুরী কথা আছে।দেখা করতে চায়। উনি যেহেতু আপনার হাজবেন্ড ছিলেন তাই মানা করতে পারি নি।ঠিকানা দিয়ে দিয়েছিলাম।”
“আপনি জানেন ও কেন এসেছিলো?কি জরুরি কথা বলার জন্য এসেছিলো?”
“নাহ!কেন এসেছিলো।”
অনিমা হেসে বলল,
“আমার বাচ্চাটাকে এব্রোশন করাতে।এতে নাকি আমাদের দুজনের ভালো হবে!আচ্ছা আপনিই বলুন কোন মা তার সন্তানকে মেরে কিভাবে ভালো থাকতে পারে?আর কোন বাবাও কি করে নিজের সন্তানকে মেরে ফেলবার কথা বলবার পারে?যতোই ডিভোর্স হোক। বাচ্চাটা তো এখনো ওরই আছে। তাহলে কি করে একটা মানুষ এতো জঘন্য হতে পারে?”
নিহান সবগুলা কথা শুনে কিছু না বলে চলে গেল।এক গ্লাস পানি এনে অনিমার সামনে দিয়ে বলল,
“পানিটা খান।ভালো লাগবে।”
গ্লাসের পানি খেতেই খালি গ্লাসটা নিয়ে পাশে রেখে কিছুক্ষন চুপ থেকে নিহান বলল…..
#চলবে….