একঝাঁক জোনাকি পর্ব-১২

0
107

#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ১২

অনিমা অফিসে বসে কাজ করছিলো।কাজ করতে করতে কখন দুপুর হয়ে গেছে টের পায়নি।অফিসের সবাই খাবার খেতে চলে গেছে।একমাত্র ওই অফিসে রয়ে গেছে।সবাই অবশ্য বলেছিল একসাথে খেতে যাবার কথা।কাজের চাপে অনিমাই বলে দিয়েছে একটু পরে খেতে যাবে।সবাই ওর কথায় সম্মতি জানিয়ে চলে গেলো।আজকে সকালে ঘুম থেকে একটু বেশিই দেরি করে ফেলেছে সে।যার ফলস্বরূপ কোন খাবার বানিয়ে খেয়ে বা নিয়ে আসতে পারেনি।অফিসে আসার পথে একটা বাটার বনরুটি আর পানি বোতল কিনে নিয়ছিলো।বাসে বসে সেটা খেয়েই অফিসে চলে এসেছে। এখন লাঞ্চ করার জন্য ক্যান্টিনে যেতে হবে।তাই ভাবলো কাজ শেষ করেই নাহয় যাওয়া যাক।বেশি ভারি খা্ার খাবে না।হালকা খাবার খেয়েই এসে পরবে।কাজ শেষ হতেই চেয়ার থেকে উঠে খাওয়ার জন্য যেতেই যাবে তখন সামনে তাকাতেই দেখল নিহান দাঁড়িয়ে আছে হাসিমুখে।নিহানকে দেখেই অনিমার ভ্রু জোড়া কুচকে এলো।এই ভরদুপুরে নিহান এখানে কি করছে?জিজ্ঞেস করতেই যাবে নিহান তখনই বলে উঠল,

“চেয়ারে বসুন অনিমা।”

“কিন্তু…. ”

নিহান কথাটা বলে দাঁড়িয়ে রইলো না। সামনে হেঁটে অনিমার টেবিলের উপর হাতে থাকা ব্যাগটা রাখলো।ব্যাগটা খুলে একটা বড় টিফিন বক্স বের করলো।টিফিন বক্সটা দেখেই অনিমা বুঝল নিহানের আসার কারন!নিহান টিফিন বক্স খুলতে খুলতে সামনে তাকাতেই দেখল অনিমা দাঁড়িয়ে আছে।

“কি হলো বসছেন না কেন?বসুন!লাঞ্চ টাইম শেষের দিকে প্রায়!”

অনিমা কিছু না বলে চুপচাপ চেয়ারে বসে পরল।নিহান টিফিন বক্স থেকে ভাত,মুরগীর মাংস,সবজি,দই বের করে অনিমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,

“নিন!খেয়ে নিন।”

অনিমা খাবারের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল,

“এতগুলা খাবার!”

এখন যদি জিজ্ঞেস করে এই খাবারগুলা আমি কোথা থেকে পেয়েছি তখন কি বলব?উনাকে কি করর বলব যে আমার ভাগের খাবারটা আমি উনার জন্য নিয়ে এসেছি!কিন্তু আমি তো ক্যান্টিন থেকে খাবার খেয়ে নিতে পারবো।কোন অসুবিধা হব্র না আমার।উনার তো অসুবিধা হবে।এই অবস্তায় বাইরের খাবার খাওয়াটা তো একদমই ঠিক না!বেশ ভেবে চিনতে বলল,

“আসলে আজকে আম্মু একটু বেশি খাবার দিয়ে ফেলেছে আমাকে।তাই ভাবলাম আপনার জন্যও কিছুটা খাবার নিয়ে আসি।”

“এখানে কিছুটা খাবার?অনেক খাবার এখানে!”

“আপনার লাঞ্চটাইম শেষ হয়ে যাচ্ছে। তাড়াতাড়ি খেয়ে নিন।পরে খেতে পারবেন না।”

অনিমা ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল সত্যিই সময় প্রায় শেষের দিকে।মাত্র ১৫ মিনিট বাকি আছে।১০ মিনিটের মধ্যেই মানুষজন আসা শুরু করবে।তখন যদি নিহানকে দেখে তাহলে অনেক কথা বলবে।নাহ তাড়াতাড়ি খেতে হবে।আর কেও আসার আগেই নিহানকে অফিস থেকে তাড়াতে হবে।ভেবেই নিহানের দিকে তাকালো। নিহান ততক্ষনে সামনের চেয়ারে বসে পরেছে।অনিমা আর কিছু না ভেবে তাড়াতাড়ি করে খেতে লাগলো।তিন চার লোকমা অলরেডি খেয়ে ফেলেছে সে।অনিমাকে এত তাড়াতাড়ি খেতে দেখে নিহান বলল,

“আরে আস্তে খান!গলায় আটকে যাবে তো খাবার!”

কে শুনে কার কথা। অনিমা বারবার ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছে আর এক লোকমা মুখে দিচ্ছে। নিহান কথাটা বলার পর দুই লোকমা মুখো খাবার দিতেই খাবার গলায় আটকে গেলো।অনিমাকে কাশতে দেখে নিহান তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি ঢেলে অনিমার দিকে এগিয়ে দিলো।

“বললাম আপনাকে আস্তে আস্তে খাবার খেতে!গলায় আটকে যাবে।শুনলেন না তো আমার কথা।এখন দেখুন কি অবস্তা!”

অনিমার কাশি কমছে না। বরং বেরেই যাচ্ছে।নিহান বসা থেকে উঠে অনিমার পিঠে হালকা বারি দিতে লাগলো।সাথে মাথাতেও।
কিছুক্ষনের মধ্যেই অনিমার কাশি কমে এলো।অনিমার কাশি কমাতে পেয়ে নিহান শান্তির নিঃশ্বাস ফেলল।ভয় পেয়ে গিয়েছিল সে।অনিমা কয়েকটা জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করলো।কিন্তু ততক্ষনে অফিসের সবাই চলে এসেছে অফিসে।অনিমা আর নিহানকে এভাবে একসাথে দেখে সবাই অবাক হলো।অনিমা নিজেকে সামলিয়ে সামনে তাকাতেই অফিসের সবাইকে দেখে ভড়কে গেলো।যেটা নিয়ে ভয় পাচ্ছিলো সেটাই হলো।এখন যদি নিহানের কথা জিজ্ঞেস করে তখন সে কি উত্তর দিবে।

“ঠিক আছেন আপনি?কোন সমস্যা হচ্ছে না তো!হাসপাতালে নিয়ে যাই?তাহলে বুঝা যাবে কোন সমস্যা হয়েছে কিনা!চলুন।”

অনিমা সামনে তাকাতেই দেখলো সবাই মুচকি মুচকি হাসছে।অনিমা লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেলল।এই নিহানটাও না!এভাবে বলার কি আছে?সামান্য গলায় খাবার আটকে যাবার জন্য কিনা হাসপাতালে নিয়ে যেতে চাইছে?অনিমার হঠাত এরকম অদ্ভদ আচরনের কারন বুঝতে পারছেনা নিহান।ভ্রু কুচকে পেছনে তাকাতেই সবাইকে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেল।অনিমা উঠে সবাইকে বলল,

“দেখুন!আপনারা যেমন ভাবছেন তেমন কোন কিছুই না।”

এর মধ্যেই একজন স্টাফ বলে উঠল,

“আরে আপনি দাঁড়িয়ে গেলেন কেন?বসুন!অনিমার হাজবেন্ড বলে কথা।ফাস্ট টাইম এসেছেন আমাদের অফিসে৷ এভাবে তাঁড়িয়ে থাকলে হবে?”

কথাটা শুনে নিহান অনিমার দিকে তাকালো।অনিমাও ভাবে নি ওরা নিহানকে ওর হাজবেন্ড ভাববে।আরেক জন বলল,

“তোমার হাজবেন্ড যে আসবে সেটা আগে বলোনি কেন?এইজন্যই বুঝি তোমার হাজবেন্ডকে কোনদিন দেখাও নি আনাদের!এত হ্যান্ডসাম একজন হাজবেন্ডকে কেই বা দেখাতে চায়!”

“তুমি তো আগে বলোনি তোমার হাজবেন্ড ডাক্তার!”

নিহান নিজের দিকে তাকাতেই শরীরে এপ্রোন দেখতে পেলো।হাসপাতাল থেকে সরাসরি এখানে এসে পরেছে সে।গা থেকে এপ্রোনটা খুলতে মনেই ছিলো না।অনিমা হেসে বলল,

“আসলে বলার সময় পাইনি।”

নিহানকে উদ্দেশ্য করে বলল,

“আরে নিহান!আপনার না ওটি আছে?যান যান দেরি হয়ে যাচ্ছে।”

নিহানের জানামতে এখন তো ওর কোন ওটি নেই।অনিমার দিকে ভ্রু কুচকে তাকাতেই অনিমা চোখের ইশারায় যেতে বলল।ইশারা বুঝতে পেলে নিহান মনে পরার ভান করে বলল,

“অহ!একদম ভুলে গিয়েছিলাম।ধন্যবাদ বউ মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য নইলে কি অসুবিধা হতো!”

নিহানের মুখে বউ ডাক শুনে চমকে নিহানের দিকে তাকালো।নিহান অনিমার মুখ দেখে হেসে সবার উদ্দেশ্যে বলল,

“সরি!আজক আপনাদের সাথে পরিচিত হতে পারলাম না।হাতে একদমই টাইম নাই।যাইহোক আপনাদের সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।আর আমার বউটাকে সবাই হেল্প করবেন প্লিজ!আমি আসছি।”

বলেই টিফিন বক্স গুছিয়ে ব্যাগে ভরে সামনে ফিরতেই সবাইকে টিফিন বক্সের দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নিহান বলল,

“আর বলবেন না অনিমা আজ সকালে আমার সাথে ঝগড়া করে কিছু না নিয়েই অফিসে এসে পরেছে।একজন ডাক্তার হয়্র আমি তো আমার বউকে বাইরের খাবার খেতে দিতে পারিনা।পরে যদি আবার শরীর খারাপ হয়।তাই বাসা থেকে নিয়ে এসেছি খাবার।”

বলেই ব্যাগটা নিয়ে অফিস থেকে বেরিয়ে পরল।নিহান যেতেই সবাই অনিমার কাছে আসল।অনিমা এতক্ষন নিহানের বলা কথাগুলা শুনে একপ্রকার ঘোরের মধ্যে ছিল।জুই নামের একজন কলিগ বলল,

“ইশ কি কেয়ারিং হাজবেন্ড!এমন একটা হাজবেন্ড যদি আমার হতো ড্রেসিংটেবিলে সাজিয়ে রাখতাম।আচ্ছা তোমাদের বিয়াটাকি প্রেমের বিয়ে ছিল?”

জুই মেয়েটার উপর অনেক রাগ লাগছে অনিমা।শুনেছে সেও নাকি ম্যারিড।একজন ম্যারিড হয়ে অন্য ছেলের দিকে একটা মেয়ে কিভাবে নজর দেয়?অনিমার কোন এন্সার না পেয়ে জুই আবারও বলল,

“কি হলো?বললে না তো!”

অনিমা নিজের রাগটাকে কমিয়ে হেসে বলল,

“নাহ!এরেন্জ ম্যারেজ আমাদের।”

জুই অবাক হয়ে বলল,

“এরেন্জ ম্যারেজ হয়ে এত্ত কেয়ারিং?অথচ আমার হাজবেন্ডকে দেখো ৫ বছর প্রেম করে বিয়ে করেছি রাগ করে কিছু না খেয়ে আসলে কোন দিন এভাবে অফিসে এসে খাইয়ে দিয়ে যায়নি!রাগ ভাংগায়নি।”

অনিমা কোন উত্তর দিলো না।হেসে নিজের কাজে মনযোগ দিলো।কাজের মাঝেই আরেকজন বলল,

“আচ্ছা তোমার থেকে তোমার হাজবেন্ডকে কম বয়স লাগে না?মনে হয় যেন তোমার থেকে কয়েক বছরের ছোট।”

জুই নামের মেয়েটা আবার বলল,

“আরেহ!হ্যান্ডসাম ছেলেদের এমনেই দেখতে বয়স কম লাগে।অনিমার হাজবেন্ডেরও সেইম অবস্তা।”

অনিমা একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল জুইয়ের কথা শুনে।ভাগ্যিস জুই এই কথা বলেছিলো।নয়তো সে কি বলতো কে জানে!
ভেবে নিজের চেয়ারে বসে টেবিলের দিকে তাকাতেই দেখল…..

চলবে…..