#একঝাঁক_জোনাকি
#ইশরাত_জাহান_অধরা
#পর্বঃ২৮
অনিমা কিছু না বলে বিছানায় খাবারের ট্রে বিছানার উপর রেখে বলল,
“খেয়ে নিন।দুপুর থেকে তো মনে হয় না কিছু খেয়েছেন!”
কথাটা শুনে নিহানের মনে হলো আসলেই দুপুর থেকে কফি ছাড়া আর কিছু খাওয়া হয়নি।আর তাছাড়া খাবারের কথা শুনতেই নিহানের পেটে ইঁদুর দৌড়াদৌড়ি করা শুরু করে দিয়েছে তাই আর না ভেবে নিহান খাবার খেতে বসে পরল।এক লোকমা ভাত মুখে দিতে গিয়েও কিছু একটা মনে করে বলল,
“আপনি খেয়েছেন?”
নিহানের কথাটা শুনে অনিমা নিহানের দিকে তাকালো।মনে পরে গেল কয়েক মাস আগের কথা।রাত তখন একটা বিশ মিনিট।টেবিলে খাবার নিয়ে অনিমা বসে আছে চেয়ারে।সোহানের জন্যই মূলত অপেক্ষা করা।কিছুক্ষন বাদে বাদেই ঘুমে ঢলে পরছে টেবিলে।খুব করে চেষ্টা করছে সে চোখ গুলোকে খোলা রাখার।কিছুক্ষন বাদেই কলিং বেলের আওয়াজ শুনে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়িয়ে দরজার সামনে গিয়ে দরজা খুলে দিতেই সোহান ভিতরে ঢুকল।সোফায় বসল জুতা খুলতে।অনিমা সামনে দাঁড়িয়ে বলল,
“খাবার টেবিলে দেওয়া আছে৷ খেয়ে নাও।”
সোহান জুতা খুলতে খুলতে বলল,
“ক্ষিধে নেই।বাইরে থেকে খেয়ে এসেছি।”
বলেই রুমের দিকে চলে গেলো। অনিমা সোহানের যাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল।টেবিলের সামনে এগিয়ে খাবারগুলো ঢেকে ফ্রিজে রেখে দিলো। ভেবেছিলো একসাথে খাবে।কিছুক্ষন আগেও পেটে ক্ষিধে ছিলো কিন্তু এখন কোন ক্ষিধে অনুভব করছে না সে। মন শুধু বলছে সোহান একবারও জিজ্ঞেস করলো না সে খেয়েছে কিনা?ফোন করে বলে দিলেও তো পারতো!তাহলেই তো খেয়ে নিতো সে!একরাশ অভিমান নিয়ে রুমে গেলো।বিছানায় ওপাশ ফিরে শুয়ে পরল।একবার পিছন ফিরে তাকালো।সোহান ঘুমিয়্র আছে।মুখ ফিরিয়ে নিলো সে।কান্না পাচ্ছে ওর।রাগে নাকি কষ্টে কে জানে?
“কি হলো?খেয়েছেন কিছু?”
নিহানের ডাকে হুশ ফিরে আসল।মুখে হাসি ফুটিয়ে বলল,
“হ্যা।আপনি খেয়ে নিন।”
নিহান ভালো করে অনিমার দিকে তাকালো।নাহ খেয়েছে মনে হয়!নয়তো শুকনা থাকতো।তবুও বলল,
“আমি বুঝব কিভাবে আপনি খেয়েছেন?”
“মানে?”
“আমার প্লেটে ভাত অনেক বেশি দিয়েছেন।এত ভাত আমি খেতে পারব না!”
বলেই প্লেটের ভাত মাঝ বরাবর ভাগ করল।
“বাপাশেরটা আমার আর ডানপাশেরটা আপনার!”
অনিমা অবাক হয়ে বলল,
“আমি খেয়েছি তো! আপনি পুরো খাবার খান।আমার পেটে জায়গা নেই।”
নিহান ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“কয়টায় খেয়েছেন?”
“৯ টার দিকে!”
নিহান এবার পাশ ফিরে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
“এখন একটা বাজে।চার ঘন্টা হয়ে গেছে।আপনার পেটের ভাত হজম হয়ে গেছে। খেলে কোন অসুবিধা হবেনা!জাস্ট অর্ধেক ভাতই তো!তিন চার লোকমাতেই শেষ হয়ে যাবে।নিন হা করুন!”
“কিন্তু আমি…”
“হা করতে বলেছি!তিন চার লোকমা খেলে আপনার পেট ফেটে যাবে না!নিন হা করুন।আমার হাত ব্যথা করছে।”
অনিমা না চাইতেও হা করলো।নিহান হেসে লোকমা এগিয়ে দিল অনিমার দিকে।অনিমা মুখে ভাত নিয়ে মনে মনে বলল এই লোক ওকে কয়দিনেই খাইয়ে মোটা বানিয়ে দিবে সিউর!নিহান অনিমাকে অর্ধেক ভাত খাইয়ে বলল,
“এইবার আমার কাছে মনে হচ্ছে কিছু খেয়েছেন আপনি!”
বলেই নিজের প্লেটের ভাত শেষ করে উঠে কিছু দুর এগিয়ে আবার পিছনে ফিরে বলল,
“অনিমা আপনি কি জানেন আপনি ধীরে ধীরে আমার প্রেমে পরে যাচ্ছেন?”
অনিমা অবাক হয়ে বলল,
“কি?”
নিহান হেসে বলল,
“সময় হলেই বুঝবেন!”
বলেই কিচেনে চলে গেল হাত ধুতে অনিমা এখনো সেভাবেই বসে আছে।নিহান হাত ধুইয়ে এসে অনিমাকে বসে থাকতে দেখে বলল,
“কি হলো?মুখ ধুবেন না?”
“হুম?”
“মুখ ধুতে বললাম!”
“অহ হ্যা যাচ্ছি!”
বলেই কিচেনের দিকে চলে গেলো।কিচেনে গিয়ে কল ছেড়ে দিলো।আচ্ছা ও কি সত্যিই নিহানের প্রেমে পরে যাচ্ছে?নাকি জাস্ট নিহানের ব্যবহার গুলো ভালো লাগছে?দুর কিছুই বুঝতে পারছেনা!কোনমতে মুখ ধুয়ে রুমে ঢুকতেই দেখল নিহান অলরেডি নিচে বিছানা পাতার জন্য চাদর বের করে ফেলেছে। অনিমা একবার নিহানের দিকে তাকিয়ে বিছানায় বসে বলল,
“আচ্ছা আপনার নিচে শুতে অসুবিধা হয় না?”
নিহান চাদরের ভাজ খুলছিলো।অনিমার কথা শুনে বলল,
“নাহ তো!কেন?”
কিছু একটা ভেবে বলল,
“আপনি কি বাই এনি চান্স আমাকে বেডে শুতে বলছেন?”
অনিমা এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল,
“আপনার বেড আপনি চাইলে শুতেই পারেন!”
নিহান খুশি হয়ে বলল,
“তাহলে কি আমি এখন বেডে শুবো?আপনার কোন অসুবিধা হবে না তো?”
“আমার কিসের অসুবিধা হবে?এই বেড যথেষ্ট বড় আছে।শুধু ৩ জন না পাঁচজনের জায়গা হয়ে যাবে।”
নিহান চাদরটা ভাজ করে আলমারিতে রেখে দিলো।অনিমা অন্যপাশ ফিরে শুয়ে আছে।মাঝে অরিন আর তার পাশে নিহান।নিহান অরিনের দিকে ফিরে আছে।কিছুক্ষন অনিমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,
“গুড নাইট!”
.
.
অনিম অরিনকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছে।হাসপাতালের ভিতর ঢুকতেই অরিন কান্না করে দিলো।আশেপাশের সবাই একবার তাকিয়ে যে যার যার মতো চলে গেলো।অনিমা অরিনকে কান্না করতে বারন করলো।অরিনের কান্না থামাতে থামাতে এগিয়ে যাচ্ছিলো সামনের দিকে।হঠাত কেও একজন হাত ধরে টেনে পাশে নিয়ে আসলো।অনিমা অবাক হয়ে পাশ ফিরে তাকাতেই নিহানকে দেখল।নিহানও অবাক হয়েছে অনিমাকে দেখে।অনিমা সামনে তাকিয়ে দেখল হুইল চেয়ারে করে একজন রোগীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।অনিমার বুঝতে বাকি রইলো না তার হাত ধরে টান দেওয়ার কারন।
“দেখেশুনে হাঁটবেন তো!আমি না দেখলে কি হতো!”
কিছুক্ষন থেমে আবার জিজ্ঞেস করলো,
“এখানে কেন এসেছেন?কোন সমস্যা হয়েছে?”
“না না!আসলে আপনার মা জিজ্ঞেস করেছিলেন অরিনকে কোন টিকা দেওয়া হয়েছে কিনা!পরে আমারও মনে পরল আসলেই অরিনকে টিকা দেওয়া হয়নি কোন।বলার পর উনি বললেন এই হাসপাতালে আসতে অরিনকে টিকা দেওয়ার জন্য! তাই…”
“শিট!আমারও তো মনে ছিলো না!”
“সমস্যা নেই।সময় আছে এখনো!”
“অরিন কানা করছে কেন?”
“জানি না!হুট করে কান্না করা শুরু করলো।থামাতেই পারছিনা।”
“আমার কাছে দিন ওকে।আর আমার সাথে আসুন!”
অনিমা অরিনকে নিহানের কোলে দেওয়ার কিছুক্ষন বাদেই অরিনের কান্না থেমে গেলো।আশ্চর্য! ও এত করে চেষ্টা করল থামাতেই পারলোনা! অথচ নিহানের কোলে যেতেই কান্না বন্ধ করে দিলো!
নিহান অরিনকে নিয়ে কিছুদুর এগিয়ে পিছু ফিরে দেখলো অনিমা এখনো দাঁড়িয়ে আছে আগের জায়গাতেই!
“কি হলো দাঁড়িয়ে আছেন কেন?কি ভাবছেন?চলুন!”
নিহানের কথাত হুশ আসতেই অনিমা নিহানের পিছু পিছু হাঁটা শুরু করলো।লিফটে করে ৪ তলা গিয়ে সাইডে রাখা একটা চেয়ারে অনিমাকে বসালো।অরিনকে অনিমার কোলে দিয়ে বলল,
“আপনি এখানে বসুন।আমি নাম লিখিয়ে আসছি।”
অনিমা সম্মতি জানালো।একটু ঝুঁকে অরিনকে বলল,
“কান্না করবে না কেমন?আমার লক্ষী মামনি!”
.
.
অনিমা অরিনকে নিয়ে বসেছিলো।নিহান যেতেই পাশে থাকা একটা মেয়ে বলল,
“আপনার হাজবেন্ড বুঝি?”
অনিমা প্রথমে থমকে গেলো মেয়েটার প্রশ্ন শুনে।পরমুহূর্তেই হেসে বলল,
“জ্বি!”
“প্রেম করে বিয়ে করেছেন?”
অনিমা এখন কি উত্তর দিবে?ওর বিয়েটা তো না ছিল ছিলো প্রেমের,না ছিলো এরেঞ্জ মেরেজ!কোনোটার মধ্যেই পরে না।
“না!”
“অহ তাহলে এরেন্জ ম্যারেজ!”
অনিমা চুপ করে রইলো।
“আমার বিয়েটা লাভ ম্যারেজ ছিলো।প্রথম ভালো আপনার হাজবেন্ডের মতোই কেয়ারশীল ছিল অনেক।বছর ঘুরতেই লোকটার ব্যবহার একদম পালটে গেলো।এইযে আমি হাসপাতালে বসে আছি।আর আমার হাজবেন্ড ঘরে! অথচ উনার আমার সাথে আসার কথা ছিলো!ভাইয়া মনে হয় আপনাকে অনেক ভালোবাসে!এরকম মানুষ আজকারকাল যুগে পাওয়াই যাওয়া না।আচলে বেধে রাখবেন।কোনদিন ছুটে যেতে দিবেন না!নয়তো পরে আফসোস করবেন!অনেক লাকি আপনি!দোয়া রইলো আপনার জন্য! আর কথাগুলো আপনাকে বড় হিসেবে বললাম!কিছু মনে করবেন না!”
“আরেহ না না!কি মনে করব?ধন্যবাদ! ”
মেয়েটার কথাগুলো কানে বাজছে। আচ্ছা নিহান ও যদি হুট করে পাল্টে যায়?হয়তো প্রথম প্রথম দেখে যত্ন নিচ্ছে!পরমুহুর্তেই নিজের উপর রাগ হলো!কি ভাবছে সে?মানুষটাকে নিয়ে এতো খারাপ ধারনা কি করে মাথায় এলো?
.
.
অরিনের নাম বলতেই সামনে থাকা ছেলেটা চমকে নিহানের দিকে তাকালো।নিহানকে দেখেই বলল,
“একি স্যার আপনি লাইনে কেন দাঁড়িয়েছিলেন?আমাকে বললেই তো হতো!আমি সাথে সাথে আপনাকে চেম্বারের ভিতরে যেতে দিতাম!”
“তার কোন দরকার নেই!আমি পেসেন্টের গার্জিয়ান হিসেবে এসেছি অন্যান্যদের মতো!ফিস নাও!”
“কিন্তু স্যার যদি বকে আপনার কাছ থেকে টাকা নিলে!”
“তোমার যে দায়িত্ব তা পালন করো।আমি তোমার স্যারের সাথে কথা বলব!”
“কিন্তু….”
নিহান কিছু না বলে টাকা হাতে ধরিয়ে দিলো।
অনিমার কাছে গিয়ে বলল,
“চলুন!”
অনিমা অরিনকে নিয়ে উঠে দাঁড়ালো।নিহানের পিছু পিছু ঢুকলো চেম্বারের ভিতর।
ডাক্তার শ্রেয়া নিহানকে দেখেই বলল,
“আরে নিহান আপনি এখানে?”
“হ্যা বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি।টিকার জন্য! ”
শ্রেয়া অবাক হয়ে বলল,
“বাচ্চা!কার বাচ্চা?’
নিহান মুচকি হেসে বলল,
” আমার!আর উনি হচ্ছে আমার ওয়াইফ মিসেস অনিমা শাহরিয়ার!”
চলবে….