একটা বসন্ত বিকেলে পর্ব-১২

0
283

#একটা_বসন্ত_বিকেলে
#অরনিশা_সাথী

|১২|

–“আজ অফিস যেতে হবে না তোর, আমি নয়নের সাথে কথা বলেছি, কোনো ইমপোর্টেন্স মিটিং নেই, আজ অফিস নয়ন সামলে নিবে।”

সানিয়া মেহরাবের কথায় শ্রাবণ খেতে খেতেই সম্মতি জানালো। যা দেখে শানের চোখ চড়কগাছ। কেননা এই অব্দি শ্রাবণকে কখনো অফিস কামাই দিতে দেখেনি শান। শান ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“আর ইউ ওকে ভাইয়া? কোনো জ্বর টর আসেনি তো?”

শানের কথায় শ্রাবণ চোখ রাঙিয়ে তাকালো। যা দেখে শান আমতা আমতা করে বললো,
–“না মানে তুমি তো সচারাচর অফিস যাওয়া মিস করো না তাই বললাম আর কি।”

খাবার টেবিলে আর কোনো কথা হলো না। চুপচাপ খেয়ে সকলেই উঠে গেলো। আয়াত হাতে হাতে টেবিল গুছালো। যদিওবা এ বাড়িতে ওর কিছুই করতে হয় না, কেননা সার্ভেন্টরাই সবকিছু গুছিয়ে হাতের কাছে এনে দেয়। তবুও মাঝে মধ্যে জোর করেই টুকটাক কাজ করে আয়াত।

সানিয়া মেহরাবের ঘরে বসে বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো শাশুড়ী বউমা মিলে। এক পর্যায়ে আয়াত বললো,
–“মা আমি রাফিয়া আর শানের সাথে ওদের ভার্সিটি থেকে ঘুরে আসি একটু?”

–“যাবি এতে অনুমতি নেওয়ার কি আছে? আর ভালো কথা মনে করেছিস, তোর ভার্সিটি থেকে ট্রান্সফার সার্টিফিকেট আনানোর ব্যবস্থা কর, এখানকার ভার্সিটিতে ভর্তি হতে হবে তো নাকি? শ্রাবণও বলছিলো তোর ভার্সিটি ভর্তি হওয়ার কথা।”

আয়াত ভীষণ খুশি হয়ে গেলো সানিয়া মেহরাব এর কথা শুনে। সাথে এই ভেবেও খুশি হলো যে শ্রাবণ ওর পড়াশোনা নিয়ে ভেবেছে। সানিয়া মেহরাব বললো,
–“আমার থেকে কোনো অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই, আমার দিক থেকে সবরকম স্বাধীনতা পাবি তুই। শুধু একটা অনুরোধ থাকবে, আমাদের এই স্বাধীনতাকে সুযোগ করে কোনো উল্টাপাল্টা কাজে জড়িয়ে পড়িস না। জানি তুই সেরকম মেয়ে না। তবুও বললাম, কিছু মনে করিস না আবার।”

আয়াত মুচকি হেসে বললো,
–“চিন্তা করো না মা, তোমাদের অসম্মান হয় এমন কোনো কাজ আমি করবো না।”

সানিয়া মেহরাব হেসে বললো,
–“এবার বরং তুই যা, তোর ওই ক্ষ্যাপা, রাগচটা বরের থেকে পারমিশন নিয়ে নে৷ তার আবার কখন কোন কাজ অপছন্দ হয় সেটা তো বলা বেশ মুশকিল।”

আয়াত মুচকি হেসে উঠে পড়লো৷ প্রথমেই গেলো শানের ঘরে৷ শান তখন রেডি হচ্ছিলো ভার্সিটি যাওয়ার জন্য। আয়াত দরজায় নক করে বললো,
–“আসবো?”

–“আয়ু ভাবী, আসো না৷ অনুমতি নেওয়ার দরকার নেই।”

আয়াত ঘরে ঢুকে বিছানায় বসলো। পা দোলাতে দোলাতে বললো,
–“তোমাদের ভার্সিটি নিয়ে যাবে আমাকে?”

শান গায়ে পারফিউম লাগিয়ে আয়াতের পাশে গিয়ে বসে বললো,
–“আমি তো এক পায়ে দাঁড়িয়েও রাজি আছি, তুমি বরং ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে আসো ভাইয়া যেতে দিবে কিনা?”

আয়াত মুখ বাঁকিয়ে বললো,
–“যেতে না দেওয়ার কি আছে? যেখানে উনি বিয়ের সম্পর্কে বিশ্বাসই করেন না সেখানে আমার উপর অধিকার দেখানোটা কেমন অদ্ভুত লাগবে না?”

শান হাসলো আয়াতের কথায়। তারপর বললো,
–“তুমি এসে পড়েছো তো, এখন ভাইয়া বিশ্বাস করতে বাধ্য। তুমি তোমার ভালোবাসা দিয়ে ভাইয়াকে এসবে বিশ্বাসী করে তুলবে।”

আয়াত অন্যমনস্ক ভাবে বললো,
–“ভালোবাসা?”

শান বিছানা থেকে নেমে আয়াতের সামনে হাটু গেড়ে বসলো। আয়াতের হাতদুটো হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
–“আয়ু ভাবী আমি জানি তুমি একজনকে ভালোবাসতে, কিন্তু কোনো কারণে এক হতে পারোনি, এখন সেও বিবাহিত আর তুমিও। আয়ু ভাবী তোমার কাছে আমার একটা রিকুয়েষ্ট, তার কথা ভেবে আমার ভাইয়াকে কষ্ট দিও না প্লিজ। ভাইয়া এমনিতেই এসবে বিশ্বাস করে না। কিন্তু এখন যদি তুমি তার কথা ভেবে ভাইয়ার সাথে দূরত্ব বাড়াও তাহলে ভাইয়া কোনোকালেই এসবে বিশ্বাস করবে না। চিরতরে সব বিশ্বাস ভরশা উঠে যাবে ভাইয়ার।”

আয়াত মুচকি হাসলো। শানকে উঠে বিছানায় বসতে বললো। শান উঠে বসতেই আয়াত বললো,
–“চিন্তা করো না, অতীতকে বর্তমানে টেনে আনবো না আমি। আমি জানি আমার অতীত কখনো ভুলতে পারবো না আমি, ওই মানুষটাকে কখনো ভুলতে পারবো না আমি। কিন্তু অতীতকে টেনে বর্তমানকে নষ্ট করবো না আমি। আমার দিক থেকে আমি সব ভুলে স্বাভাবিক হতে চাই। কিন্তু তোমার ভাইয়া-ই আমাদের মাঝে অদৃশ্য দেয়াল তুলে দিয়েছে। দুজন মানুষ যে স্বাভাবিক কথাবার্তা বলে, তোমার ভাইয়া সেরকম কথাও বলে না আমার সাথে৷ আমি একা চাইলে তো কিছু হবে না শান। আমি শুধু চেষ্টা করে যেতে পারি, কিন্তু কতদিন একা একা চেষ্টা করবো বলো? তার দিক থেকেও তো রেসপন্স করা দরকার।”

–“দোয়া করি, খুব শীঘ্রই সব স্বাভাবিক হবে।”

আয়াত প্রত্যুত্তরে মৃদু হাসলো। শান বললো,
–“এবার যাও তো, ভাইয়াকে বলে রেডি হও। যেতে হবে তো নাকি?”

আয়াত সম্মতি জানিয়ে বেরিয়ে এলো ঘর থেকে৷ অন্যমনস্ক ভাবে হাঁটতে হাঁটতেই ঘরে ঢুকছিলো আয়াত। এমন সময় শক্তপোক্ত বুকের সাথে ধাক্কা খেয়ে ক্ষানিকটা পিছিয়ে যায় আয়াত। মাথা তুলে তাকিয়ে সামনে শ্রাবণকে দেখতে পেলো। শ্রাবণ বললো,
–“ব্যথা পেয়েছো খুব?”

আয়াত মাথা নাড়লো। শ্রাবণ আবারো বললো,
–“অন্যমনস্ক দেখাচ্ছে? কিছু হয়েছে?”

–“ন্ নাহ।”

–“আচ্ছা, রেডি হয়ে নাও, বের হবো।”

–“কো্ কোথায়?”

–“সেটা গেলেই দেখতে পাবে।”

এই বলে শ্রাবণ ঘরে চলে গেলো। শান এসে দাঁড়ালো আয়াতের পাশে। শান একগাল হেসে বললো,
–“তুমি ভাইয়ার সাথে যাও আয়ু ভাবী। ভার্সিটিতে না হয় অন্যদিন নিয়ে যাবো তোমায়।”

আয়াত হাসলো। শান চলে গেলো নিজের ভার্সিটির উদ্দেশ্যে। আয়াত ঘরে যেতেই দেখল শ্রাবণ টাই বাঁধছে গলায়। একপলক আয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“রেডি হও।”

আয়াত সম্মতি জানিয়ে আলমারি থেকে একটা শাড়ি বের করে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো। কিছু একটা মনে হতেই আবার ফিরে এসে শ্রাবণকে শাড়িটা দেখিয়ে বললো,
–“এটা পড়বো?”

শ্রাবণ তাকালো শাড়ির দিকে। তারপর আবার আয়াতের দিকেও তাকালো। মেয়েটার মুখ ভয়ে চুপসে আছে। হয়তো শাড়ি পুড়িয়ে ফেলার ঘটনায় ভয় পাচ্ছে। ভাবছে আবারো যদি শ্রাবণ এমন কিছু করে? তাই আগেভাগেই জিজ্ঞেস করে নিলো। শ্রাবণ বললো,
–“পড়ো সমস্যা নেই। এন্ড আ’ম স্যরি আয়ু, সেই ঘটনার জন্য।”

আয়াত সামান্য হাসলো। তারপর ওয়াশরুমে চলে গেলো রেডি হতে। মিনিট পনেরো বাদে শাড়ি পড়ে বেরিয়ে আসলো আয়াত। কিছু সময় আয়াতের দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো শ্রাবণ। ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসে আয়াত রেডি হয়ে নিলো দ্রুত। অতঃপর সানিয়া মেহরাবের থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে গেলো বাসা থেকে।

সারা দিন এদিক সেদিক ঘুরাঘুরি করলো। বাইরে থেকেই লাঞ্চ করলো দুজনে। অতঃপর বিকেলের দিকে গুলশান লেক পার্কের সামনে এসে গাড়ি থামালো শ্রাবণ। গাড়ি থেকে নেমে ভিতরে গিয়ে একটা নিরবিলি জায়গা দেখে বেঞ্চিতে বসে পড়লো। আয়াতের অস্বস্তি হচ্ছে। লোকটা হঠাৎ ওকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়েছে কেন ভেবে পাচ্ছে না আয়াত। এই অস্বস্তিটা সারাদিন তাড়া করে বেরিয়েছে। অবশ্য ভালোও লেগেছে শ্রাবণের এমন ব্যবহারে৷ বেশ কিছুক্ষণ নিরব থেকে শ্রাবণ বললো,
–“আমাদের এই সম্পর্কটা নিয়ে কিছু বলতে চাই তোমাকে।”

আয়াত সম্মতি জানাতেই শ্রাবণ বললো,
–“কাল আম্মু বেশ কিছু কথা বলেছে আমায়, সেসব কথাগুলো আমার মাথায় সারাক্ষণ ঘুরপাক খেয়েছে। সত্যিই আমি তোমার সাথে ঠিক করিনি। রুঢ় ব্যবহার করেছি, অকারণেই কষ্ট দিয়েছি। বিয়ে মানিনা বলেও সেদিন অধিকার দেখিয়েছি, নিজের রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে তোমার গায়ের শাড়ির টেনে খুলে সেটা পুড়িয়ে ফেলেছি তোমারই সামনে। আমার এ’কদিনের সকল ব্যবহারের জন্য আমি সত্যিই দুঃখিত।”

আয়াত সামনের পুকুরের পানির দিকে দৃষ্টি রেখেই মনোযোগ সহকারে শ্রাবণের কথাগুলো শুনলো। শ্রাবণ আবারো বললো,
–“ভালোবাসাটা কিন্তু হুট করেই হয়ে যায় না। আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে হুট করেই হয়ে যায়। আমাদের বিয়েটা যেভাবে হয়েছে তাতে হুট করেই একে অপরকে ভালোবাসা, কাছে আসা সম্ভব না। সময় লাগবে। তাই আমি চাই সবার আগে আমরা বন্ধু হই? একসাথে সংসার করতে হলে, সারাজীবন একসাথে কাটাতে হলে সবার আগে দুটো মানুষকে বন্ধুর মতো হতে হয়। বন্ধুর মতো বুঝতে হয়। বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে হয়।”

আয়াত এবারেও চুপচাপ শ্রাবণের কথাগুলো শুনে গেলো৷ শ্রাবণ আয়াতের দিকে তাকিয়ে বললো,
–“আই হোপ, আমি কি বলতে চাচ্ছি তুমি সেটা বুঝতে পেরেছো?”

আয়াত মাথা নাড়ালো। যার অর্থ ও বুঝতে পেরেছে। শ্রাবণ মুচকি হাসলো। যা আয়াতের কল্পনার বাইরে ছিলো। এই প্রথম শ্রাবণকে হাসতে দেখলো ও। লোকটার হাসিতে অদ্ভুত কিছু একটা আছে। লোকটার হাসি এত সুন্দর, তাহলে হাসে না কেন? আচমকাই আয়াত বললো,
–“আচ্ছা আপনার হাসিটা এত সুন্দর, অথচ আপনি হাসেন না কেন? সবসময় মুখটাকে ওরকম গোমড়ামুখো করে রাখেন কেন? হাসলে দেখতে ভালো লাগে তো আপনাকে।”

শ্রাবণ এক ভ্রু উঁচু করে কিছুটা বাঁকা চোখে তাকালো আয়াতের দিকে। এদিকে আয়াতও অপ্রস্তুত হয়ে গেলো। দুহাতে মুখ আটকে ধরলো। শ্রাবণের সামনে বসেই শ্রাবণকে গোমড়ামুখো বলছে। এই ছেলে এবার নিশ্চিত ধমকে উঠবে ওকে। কি বলেছে বুঝে আসতেই সামনের ওই পুকুরে ডুবে মরতে ইচ্ছে করছে। বেশ কিছুক্ষণ ওভাবে তাকিয়ে থেকে হঠাৎই উচ্চস্বরে হেসে উঠে শ্রাবণ। আয়াত এবারেও মুগ্ধ চোখে শ্রাবণের হাসি দেখছে। শ্রাবণ হাসি থামিয়ে বললো,
–“রিল্যাক্স, ভয়ের কিছু নেই।”

আয়াত এবার আরো জড়োসড়ো হয়ে বসলো। লোকটা বুঝলো কি করে ও ভয় পাচ্ছে? ওর চেহারায় কি ভীতু ভাবটা ফুঁটে উঠেছে স্পষ্ট? হয়তো, আবার হয়তো বা না। শ্রাবণ আরো টুকটাক কথা বললো। তারপর সন্ধ্যার আগে আগেই উঠে পড়লো সেখান থেকে৷ শ্রাবণ গাড়ি একটা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড় করালে আয়াত বলে,
–“রেস্তোরাঁর কিছু খাবো না।”

শ্রাবণ আয়াতের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–“কি খাবে তাহলে?”

আয়াত বিড়বিড় করে বললো,
–“স্ট্রিড ফুড__আমার ভীষণ পছন্দের।”

শ্রাবণ গাড়ি ঘুড়িয়ে অন্য রোডে চলে গেলো। গন্তব্যস্থলে পৌঁছে একসাইডে গাড়ি পার্ক করে নেমে পড়লো আয়াতকে নিয়ে। বেশ কয়েক ধরনের স্ট্রিড ফুড টেস্ট করলো আয়াত। সবথেকে বেশি ভালো লেগেছে বোম্বাই মরিচের ঝালমুড়ি আর ডিম টোস্ট৷ আয়াত অবশ্য শ্রাবণকে টেস্ট করতে বলেছিলো। কিন্তু শ্রাবণ নাক সিটকিয়ে বলে,
–“আই ডোন্ট লাইক দিস আনহেলদি ফুড’স।”

আয়াতও আর জোর করেনি। লোকটা যে ওর সাথে সহজ হওয়ার চেষ্টা করছে। সবকিছু স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছে এই তো অনেক। এরপর শ্রাবণ জিজ্ঞেস করলো আরো কিছু খাবে কিনা? আয়াত মিনমিন করে বললো,
–“টং দোকানের মালাই চা খুব ভালো লাগে আমার।”

শ্রাবণ আয়াতকে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। শ্রাবণ গাড়ি স্টার্ট দিতেই আয়াতের মন খারাপ হয়ে গেলো। ভাবলো হয়তো বা ওর মালাই চা খাওয়া হবে না। কিন্তু আয়াতকে অবাক করে দিয়ে কিছুটা দূরে একটা সুনসান নিরিবিলি জায়গা দেখে গাড়ি থামালো শ্রাবণ। সামনে একটা টং দোকান। এখানেও মানুষের ভীর আছে তবে অতটাও কোলাহল নেই। আয়াত বললো,
–“দুইটা মালাই চা অর্ডার দিবেন প্লিজ।”

শ্রাবণ আয়াতের কথামতো দুইটা মালাই চা অর্ডার দেয়। দুজনে একটা বেঞ্চিতে বসে পড়লো। অবশ্যই যথেষ্ট পরিমান দূরত্ব রেখে। কিছুক্ষণ বাদেই একটা বারো তেরো বছর বয়সী ছেলে এসে চা দিয়ে গেলো। মাটির ভারে করে চা দিয়েছে। শ্রাবণ টিস্যু এগিয়ে দিলো আয়াতকে। আয়াত টিস্যু দিয়ে পেচিয়ে একটা মাটির ভার তুলে নিয়ে চায়ে চুমুকু দিলো। অসাধারণ স্বাদ। আয়াতের বেশ ভালো লেগেছে। মনে মনে ঠিক করলো সময় সুযোগ থাকলে মাঝে মধ্যেই এখানে আসবে ও চা খেতে৷ আয়াত এবার অনুরোধের স্বরে বললো,
–“এই চা টা অন্তত টেস্ট করে দেখুন, প্লিজ?”

এবার আবার কেন জানি আয়াতের অনুরোধ ফেলতে পারলো না শ্রাবণ। তাই চা এর পাত্র হাতে তুলে নিয়ে এক চুমুক দিলো। ওর কাছেও এই চায়ের টেস্ট ভালোই লাগলো। আয়াত জিজ্ঞেস করলো,
–“ভালো লেগেছে না?”

–“হুম।”

–“না খেলে এই চায়ের স্বাদটাও মিস করতেন আপনি। যেরকম ভাবে স্ট্রিড ফুড’স এর স্বাদ মিস করেছেন।”

শ্রাবণ আয়াতের চোখের আড়ালেই নিঃশব্দে হাসলো। অতঃপর চা শেষ করে উঠে দাঁড়ালো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে আবারো একটা রেস্তোরাঁর সামনে দাঁড় করালো। অতঃপর সবার জন্য খাবার কিনে বাসার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিলো। গাড়িতে বসে জানালার উপর হাত রেখে থুতনি রাখলো আয়াত। ভাবতে লাগলো আজকের দিনটার কথা। আজকের দিনটা আয়াতের খুব ভালো কাটলো। বিশেষ করে শ্রাবণের সাথে কাটানো সময়গুলোর মধ্যে আজকের দিনটা স্পেশাল। কেননা শ্রাবণ আজ ওর সাথে স্বাভাবিক ভাবেই আচরণ করেছে। বন্ধুত্বপূর্ণ আচরন করার চেষ্টা করছে। যদিওবা স্ট্রিড ফুড খাওয়ার সময় ফারাবীর কথা বেশ মনে পড়েছিলো আয়াতের। কিন্তু ও সেটাকে বেশি পাত্তা দেয়নি। আগে ফারাবীর সাথে যখন দেখা করতো, প্রায় সময়ই স্টিড ফুড খাওয়ার বায়না ধরতো। ফারাবী বেশ রাগও করতে এই বিষয়ে। কিন্তু সেটা আয়াত গায়ে মাখাতো না। ফারাবীকে সাথে করে নিয়েই স্টিড ফুড খেতো। ফারাবীকেও খাওয়াতো। একে অপরকে খাইয়ে দিতো। কি সুন্দর ছিলো দিনগুলো তাই না? অথচ আজ অন্য স্থানে অন্যকারো সাথে। পরিস্থিতি, সময়-সুযোগ আর ভাগ্য আজ দুজনকে দুজনের থেকে অনেকটা দূরে নিয়ে এসেছে। এসব ভেবেই তপ্ত শ্বাস ফেললো আয়াত। মাথায় আনতে চায় না সেসব। সেসব স্মৃতি গুলো ভুলে যাওয়া-ই শ্রেয়। ফারাবীর জন্যও আর আয়াতের জন্যও।

চলবে~