এক‌দিন বিকালে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-১৩+১৪

0
568

#এক‌দিন_বিকালে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখাঃ শারমিন আক্তার সাথী
পর্বঃ ১৩

জা‌হিদ, সজল‌কে নি‌য়ে পিছ‌নের দরজা দি‌য়ে বের হ‌য়ে গেল। কিছু দূর যাবার পর জা‌হিদ সজল‌কে বলল,
‘সজল তুই প্লিজ বা‌ড়ি যা। আমার যে‌তে দেরী হ‌বে।’
অশ্রু‌সিক্ত নয়‌নে জা‌হি‌দের পা‌নে তা‌কি‌য়ে সজল বলল,
‘‌তোরাও আমা‌কে ভুল বুঝ‌ছিস?’
জা‌হিদ কিছুক্ষণ চুপ থে‌কে বলল,
‘বিগত কিছু মা‌সে শশীর সা‌থে যা ‌কিছু ক‌রে‌ছিস, তা শোনার পরও তো‌কে স‌ঠিক বু‌ঝি কী ক‌রে বল?’
‘‌দেখ জা‌হিদ, আমি কিন্তু ভুল ছিলাম না। আমি কখ‌নও শশী‌কে ব‌লি‌নি, ওকে বি‌য়ে করব না বা ওকে ছে‌ড়ে দিব। আমি ওকে খুব ভা‌লোবা‌সি, আমি শুধু নি‌জে‌কে প্র‌তি‌ষ্ঠিত করার জন্য কিছু সময় চে‌য়ে‌ছিলাম।’
‘কতটা সময়?’
‘‌সেটা কি, স‌ঠিক ভা‌বে বলা যায়?’
‘আচ্ছা ধরলাম শশী তো‌কে বেশ কিছু বছর সময় দি‌য়েছে। তুই প্রতি‌ষ্ঠিত হ‌লি, তত‌দি‌নে তোর বয়সও ত্রিশ, শশীরও ত্রিশ। তখন তুই শশীকে বি‌য়ে কর‌তি?’
‘কেন করতাম না? অবশ্যই করতাম।’

‘মু‌খে ওমন কথা সবাই ব‌লে কিন্তু যখন একটা ছে‌লে প্র‌তি‌ষ্ঠিত হয় তখন সে তার বয়সী মে‌য়ে নয় বরং আঠা‌রোর কি‌শোরী খোঁ‌জে। ত্রিশ বছ‌রের মে‌য়ে‌কে তখন বু‌ড়ি ম‌নে হয় তার চো‌খে। তোর কথা না হয় বাদই দিলাম, তোর প‌রিবার-ই বলত, আমা‌দের এত প্র‌তি‌ষ্ঠিত ছে‌লের জন্য কেন ত্রি‌শ বছ‌রের বু‌ড়ি আনব? তারা তোর বয়স দেখত না কিন্তু শশীর বয়স ঠিকই দেখত। আর শশী কোন ভরসায় তো‌কে সময় দিত বল তো? তুই না নি‌জের প‌রিবা‌রের কা‌ছে ওর কথা বল‌ছিস আর না শশীর প‌রিবা‌রের কা‌ছে গি‌য়ে তো‌দের সম্প‌র্কের কথা বল‌ছিস। শশী বারবার বলার পরও তুই ওর কথায় রাজি হ‌স‌নি। তুই য‌দি স‌ত্যি শশী‌কে ভা‌লোবাস‌তি ত‌বে তোর প‌রিবা‌রে তো‌দের সম্পর্কের কথা বল‌তি। তোর প‌রিবা‌রের সবাই‌কে নি‌য়ে শশীর প‌রিবা‌রে সা‌থে কথা বল‌তি। বি‌য়ে নাহয় না কর‌তি পাকা কথা সে‌রে রাখ‌তি, অথবা এন‌গেজ‌মেন্ট ক‌রে রাখ‌তি। তা ক‌রে‌ছিস?
সম্পর্ক শুরু হবার পর থে‌কেই শশী‌ তো‌কে ব‌লে‌ছি‌লো, কিছু একটা করা শুরু কর। যা‌তে তোর একটা ইনকাম সোর্স থা‌কে। কিন্তু তা তুই ক‌রে‌ছিস? আমার তো ম‌নে হয়, তুই প্র‌তি‌ষ্ঠিত হবার বাহানা দি‌চ্ছিস শুধু। কারণ প্র‌তি‌ষ্ঠিত হ‌তে চাই‌লে তুই যখন শশী ব‌লে‌ছি‌লো, তখন থে‌কেই কিছু একটা কর‌তি। স্কলারশীপ নি‌য়ে বি‌দে‌শে পড়‌তে যা‌বি, তা খুব ভা‌লো কথা! কিন্তু তা ব‌লে কি এত‌দিন দে‌শে কিছু কর‌তে পারতি না? যখন বি‌দেশ যাবার তখন বি‌দেশ চ‌লে যাই‌তি। তা‌তে তো তো‌কে কেউ আটকা‌তো না।
‌শোন ভা‌লোবাসার মানুষ‌কে বি‌য়ে করার ক্ষে‌ত্রে যেসব ছে‌লেরা ব‌লে, ক্যা‌রিয়ার, জব, বয়স, হ্যান, ত্যান এসব বাহানা ছাড়া আর কিছু না! কারণ স‌ত্যি ভা‌লোবাস‌লে তাকে সা‌থে নি‌য়েও সফলতার উঁচু পর্যা‌য়ে যাওয়া যায়। যা হোক তো‌কে আর কী বল‌বো? তোর বর্তমান অবস্থা দে‌খে খুব খারাপ লাগ‌ছে। কী বলব জা‌নি না। ত‌বে প্লিজ ভাই চ‌লে যা এখন। বা‌ড়ি যা। বা‌ড়ি গি‌য়ে রেস্ট নে। ঠান্ডা মাথায় ভাব, জীব‌নের সাম‌নের দি‌কে কী কর‌বি? দেখ আমি তোর যেমন বন্ধু, তেম‌নই শশীরও। তোর বিপ‌দে-আপ‌দে, সুখ-দুঃ‌খে যেমন তোর পা‌শে ছিলাম, তেম‌নি আজ শশীর পা‌শে থাকব। ত‌বে হ্যাঁ বন্ধু হিসা‌বে তুই যখন ডাক‌বি আমরা সবাই তোর ডা‌কে সাড়া দিব। কারণ শশীর সা‌থে তোর যা হ‌য়ে‌ছে তা তো‌দের ব্য‌ক্তিগত বিষয় ‌কিন্তু আমা‌দের বন্ধুত্ব আবার অন্য অধ্যায়। আমরা দু‌টো অধ্যায় মি‌লি‌য়ে তো‌কে কষ্ট দিব না। হ্যাঁ শশীর সা‌থে তোর আচরণ শু‌নে আমরা কষ্ট পে‌য়ে‌ছি। ত‌বে তা ব‌লে আমা‌দের বন্ধুত্ব নষ্ট হ‌বে না। প্লিজ ভাই বা‌ড়ি যা। নি‌জের খেয়াল রা‌খিস।’

জা‌হিদ চ‌লে গে‌ল। কিন্তু সজল ওখা‌নেই ঠায় দাঁ‌ড়ি‌য়ে রইল অনেকক্ষণ। তারপর শশী‌দের বা‌ড়ি থে‌কে বেশ কিছু দূর এসে দপ ক‌রে ঘা‌সের উপর ব‌সে পড়ল সজল। অশ্রুসিক্ত নয়‌নে বিড়‌বিড় ক‌রে বল‌ল,
‘এ আমি কী করলাম? এ আমি কী করলাম? নিজের দো‌ষে নি‌জের সব‌চে‌য়ে ভা‌লোবাসার মানুষটা‌কে দূ‌রে ঠে‌লে দিলাম! আর সে এত দূ‌রে চ‌লে গে‌ছে যে, যেখান থে‌কে তা‌কে ফি‌রে পাওয়া অসম্ভব!’

সজ‌লের চো‌খে বারবার ভাস‌ছে শশীর রু‌মে সাজা‌নো বাসর ঘরটা। যে মানুষটা‌কে গত পরশু‌দিনও জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে‌ছে, পরম আবে‌শে চু‌মো খে‌য়ে‌ছে, আজ সে মানুষটা ওর নেই। চাই‌লেও ও তা‌কে স্পর্শ তো দূ‌রের কথা দেখ‌তেও পার‌বে না। শশীর যে, কপা‌লে সজল অজস্র চু‌মো খে‌য়ে‌ছে, সে কপা‌লে আজ হয়‌তো অন্য কেউ স্পর্শ কর‌বে। শুধু কপাল না, শশীর সারা শরী‌রে সে স্পর্শ কর‌বে।

এসব ভাব‌তেই সজ‌লের মাথাটা পাগল পাগল লাগ‌ছে। রা‌গে, ক‌ষ্টে সজল ওখা‌নে লতাপাতা ছিড়‌তে লাগল। নি‌জের হাত দি‌য়ে শক্ত কা‌ঠের গুড়ি‌তে ঘু‌ষি দি‌তে শুরু করল। আর বিড়‌বিড় ক‌রে বল‌তে লাগল,
‘শশী তো বারবার ব‌লে‌ছি‌লো, আমি ছাড়া ওকে কেউ স্পর্শ কর‌তে পার‌বে না। ত‌বে আজ…। শশী কেনো তু‌মি আমার রই‌লে না? কেনো অপেক্ষা কর‌লে না কিছুটা সময়? সজল বুক চে‌পে ধ‌রে কান্না কর‌তে কর‌তে বলল, আমার বুকটা বড্ড ব্যথা কর‌ছে শশী। ম‌নে হ‌চ্ছে ভেতর থে‌কে কেউ আমার দমটা বন্ধ ক‌রে দি‌চ্ছে। ও শশী আমি বোধ হয় মারা যা‌চ্ছি। আমা‌কে বাঁচাও শশী। তোমায় ছাড়া আমি থাক‌তে পারব না! ‌কেন আমি তোমার কথা বিশ্বাস করলাম না? এ আফসুস অপরাধ‌বোধ আমা‌কে সারাজীবন তাড়ি‌য়ে তা‌ড়ি‌য়ে মার‌বে। ও শশী আমা‌কে আর একটা সু‌যোগ দি‌লে না কেন?

অ‌নেকক্ষণ ওখা‌নে ব‌সেই কান্না করল সজল। কতটা সময় ওখা‌নে ব‌সে কেঁ‌দে‌ছে তার ঠিক নেই। সময় সে তো চ‌লে আপন গ‌তি‌তে।
সজল আবার বলল,
‘আমার কা‌ছে য‌দি সময় নিয়ন্ত্রণ করার একটা যন্ত্র থাকত, ত‌বে আমি অনেক দিন পিছ‌নে চলে যেতাম। শশীর সাথে যত খারাপ ব্যবহার ক‌রে‌ছি, সব শুধ‌রে নিতাম। ও যদি বি‌য়ের কথা বলত, সাথে সা‌থে বলতাম চলো বি‌য়ে ক‌রে নি। কিন্তু এখন আমি কী করব? সব তো নি‌জের হা‌তেই শেষ ক‌রে‌ছি। সব শেষ।’

ওখা‌নেই ব‌সে রইল সজল। রাত্রি গভীর হ‌চ্ছে। সজ‌লের কান্না আরও বাড়‌ছে। আজ‌কের রাতটা কা‌লো থে‌কে নিকষ কা‌লো হ‌তে পারত। আজ তো সজ‌লের জীব‌নের অন্যতম কা‌লো অধ্যায় কিন্তু আজ‌কে আকাশ ভরা জোছনা। চাঁ‌দের সাথে সা‌থে লক্ষ তারায় ভ‌রে আছে আকাশটা। আজ রা‌তের আকাশটায় ‌যে‌নো চাঁদ তারার মেলা ব‌সে‌ছে। আলোর এমন মেলা বসে‌ছে ‌যে, রা‌তের গভীর আঁধার‌কে হা‌রি‌য়ে দি‌নের ম‌তো উজ্জ্বল আ‌লোয় ভ‌রে আছে চারপাশ। সজল বিড়‌বিড় কর‌তে কর‌তে বলল,
‘আজ কেন এত চাঁদনী? এরকম চাঁদনী রা‌তে তো শশী আর আমার বি‌য়ে হওয়ার কথা ছি‌লো। কথা ছি‌লো এরকম চাঁদনী রা‌তে, চাঁ‌দের আলো‌তে ভিজব দুজন, গভীর ভা‌লোবাসা হারাব। ও শশী তোমার কী ম‌নে পড়‌ছে না আমার কথা? তু‌মি কিভা‌বে পার‌বে আমার স্থা‌নে অন্য কাউ‌কে বসা‌তে? আমি ছাড়া অন্য কেউ তোমা‌কে স্পর্শ কর‌লে কেমন লাগ‌বে তোমার?

রাত বা‌রোটা,
বি‌য়ে বা‌ড়ি‌ থে‌কে অ‌ধিকাংশ আত্মীয়-স্বজন চ‌লে গে‌ছে। কিছু খুব আত্মীয়রা আছেন, যা‌দের বা‌ড়ি অনেক দূ‌রে। রাযী‌নের বা‌ড়ির প্রায় সবাই-ই খে‌য়ে চলে গে‌ছেন। শুধু রাযীন, রো‌মিসা আর রাযী‌নের চাচা‌তো ভাই রা‌ব্বি যার বয়স নয় বছর, আর রাযী‌নের দুজন বন্ধু র‌য়ে‌ছে। রাযীন ওর বন্ধু আর শিহা‌বের সা‌থে ব‌সে গল্প গুজব কর‌ছে।

রেনু আর লি‌পি মি‌লে শশী‌কে ওর রুমে নি‌য়ে গেল। রু‌মে ঢুক‌তেই শশী বেশ অবাক হলো। রুমটা‌কে কাঁচা ফুল আর জ‌রি দি‌য়ে এত সুন্দর ক‌রে সা‌জিয়ে যে, দেখ‌লেই মুগ্ধতা কাজ ক‌রে। কিন্তু শশীর ম‌নে আজ কো‌নো মুগ্ধতা নেই! আছে শুধু দীর্ঘশ্বাস আর বিষাদ। গোলাপ, রজনীগন্ধা, গাধা ফু‌লের ঘ্রা‌নে ঘরটা মো মো কর‌ছে। কো‌নো প্র‌েমিক যুগল এ রু‌মে প্র‌বেশ করার কিছু মুহূর্ত পর ফু‌লের গ‌ন্ধে নি‌শ্চিত মাতাল হ‌য়ে যা‌বে। মাদকতায় ভ‌রে যা‌বে তা‌দের মন। একে অপ‌রের প্রতি মাদকায় মন হারা‌ত তৎক্ষনাৎ। ভুলে যা‌বে পৃ‌থিবীটা। একে অপ‌রের নেশায় বুঁদ হ‌য়ে থাক‌বে।

শশী দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘ভা‌বি তোমরা এত কেন সা‌জি‌য়ে‌ছো?’
‌রেনু মি‌ষ্টি হে‌সে বলল,
‘একটাই তো মি‌ষ্টি বোন আমা‌দের। তার জন্য করব না তো কার জন্য করব?’
‘তবুও ভা‌বি এটা অনেক গ‌র্জিয়াস সাজ হ‌য়ে গে‌ছে।’
‌রেনু শশীর গাল ধ‌রে বলল,
‘আ‌রে বাসর রাত কি মানু‌ষের জীব‌নে বারবার আসে? এ রাতটার জন্য যত রকম সাজ-সজ্জা হোক না কেন তাও কম লাগ‌বে!’
লি‌পি, রেনু‌কে টিটকা‌রি ক‌রে বলল,
‘রেনু কিছু মানু‌ষের জীব‌নে বাসর রাত ক‌য়েকবারই আসে।’
রেনু মুখটা ম‌লিন ক‌রে ফেলল। তা দে‌খে শশী বলল,
‘রেনু ভা‌বি মন খারাপ ক‌রো না, লি‌পি ভা‌বি মজা কর‌ছে। কার কপা‌লে কী লেখা তা কেবল মহান সৃ‌ষ্টিকর্তাই জা‌নেন! সবাই সুখী হ‌তে চায়। নি‌জের পছন্দ ম‌তো জীবন চায় কিন্তু কয়জন পায় ব‌লো‌ তো? ঐ যে উপ‌রে যি‌নি ব‌সে আছেন, তি‌নি উপ‌রে ব‌সে লিখ‌ছেন এসব নাটক। তি‌নি রচনা কর‌ছেন এমন খেলা। এ খেলায় আমরা শুধু সাধারণ চ‌রিত্র মাত্র। ম‌নে ম‌নে শশী বলল, আমি চাই না, আজ আমি ব্য‌তিত কেউ কষ্ট পাক! আমার কষ্টই আজ পু‌রো পৃ‌থিবীর সমান। আজ আর কেউ কষ্ট না পাক।’

‌রেনু বলল,
‘আ‌রে না না। আমি কিছু ম‌নে ক‌রি‌নি। শশী শো‌নো তোমা‌কে কিছু কথা ব‌লি। আমা‌দের এইজ ডিফা‌রেন্স খুব কম। সে কার‌ণে তোমা‌কে আমি বড় ভা‌বির ম‌তো নয় বরং বন্ধুর ম‌তো কিছু কথা ব‌লি? এখন তোমার জীবনের খাতাটা সাদা কাগ‌জের ম‌তো, একদম খা‌লি। এখন তোমার উপর নির্ভর ক‌রে তু‌মি সেখা‌নে সুখময় কা‌হিনী লিখ‌বে না‌কি দুঃ‌খের কথা লিখ‌বে! তু‌মি চাই‌লে সাদা খাতায় রং তুলিতে রা‌ঙি‌য়ে জীবন র‌ঙিন কর‌তে পা‌রো। আবার অতী‌তের বিষাদ ছাঁয়ায় জীবন বিষময় কর‌তে পা‌রো। এখন তোমার খু‌শি নির্ভর ক‌রে তোমার সিদ্ধা‌ন্তের উপর।’
শশী বলল,
‘ভা‌বি তু‌মি আমার অতীত সম্প‌র্কে কিছু জা‌নো?’
‘না। তু‌মি তো কখনও ব‌লো‌নি, ত‌বে ক’দিন যাবত তোমার চোখ মুখ দে‌খে এতটু‌কু বুঝ‌তে পে‌রে‌ছি তু‌মি অন্য কাউ‌কে ভা‌লোবাস‌তে। হয়‌তো তু‌মি ব্যর্থ।’

শশীর চোখ‌জোড়া পা‌নি‌তে টলমল কর‌ছে। ম‌নে হ‌চ্ছে এখ‌নি বাঁধ‌ভে‌ঙে নোনা নদীর ধারা বই‌বে। কিন্তু লি‌পি ধমক দি‌য়ে বলল,
‘খবরদার শশী ঐ কুলাঙ্গারটার জন্য য‌দি তুই আর এক‌ফোঁটা চো‌খের জল ফে‌লে‌ছিস তো আমার থে‌কে খারাপ কেউ হ‌বে না! থাপ‌ড়ে তোর সাম‌নের দাঁত ফে‌লে দিব। তখন তোর বর এসে দেখ‌বে ফোঁকলা দা‌ঁতের বউ।’
শশী হে‌সে ফেলল। লি‌পি, শশীর মাথায় হাত দি‌য়ে বলল,
‘‌শোন আমার জান বাচ্চাটা, জীবনটা দুঃখ‌বিলাস করার জন্য খুব ছোট। ছোট জীবনটা য‌দি দুঃখ‌বিলা‌সে কাটাস ত‌বে প্রিয় মানুষটার সা‌থে চন্দ্র‌বিলাস, রৌদ্রবিলাস, বৃ‌ষ্টিবিলাস কর‌বি ক‌বে? এখন অতীত ভু‌লে জীব‌নে এগি‌য়ে যা। খুব সুখী হ।’

রেনু বলল,
‘‌লি‌পি ভা‌বি একদম ঠিক বল‌ছে শশী। এখন পিছ‌নে ফেরা‌র সময় নয়। নি‌জে‌কে গু‌ছি‌য়ে, জীবনটা‌কে ভা‌লোবা‌সো। তোমার ভাইয়া বল‌লেন রাযীন সা‌হেব খুব ভা‌লো মানুষ। আর তোমার ভাইয়া তো মিথ্যা কথা বলার লোক না। আমার ম‌নে হ‌চ্ছে, এই ভা‌লো মানুষটা, তোমার কা‌ছে নি‌জে‌কে স্বামী নয় বরং ভা‌লো প্রে‌মিক হ‌য়ে দেখা‌বে।’
লি‌পি বলল,
‘‌ঠিক বল‌ছো রেনু।’
লি‌পি আরও কিছু বল‌তে নি‌বে তখনই রাযীন কা‌শি দি‌য়ে সবার খেয়াল নি‌জের দি‌কে নি‌লো।

চল‌বে…..

#এক‌দিন_বিকালে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লেখাঃ শারমিন আক্তার সাথী
পর্বঃ১৪

রাযী‌নের কা‌শি‌তে, রেনু আর লি‌পি পিছন ফি‌রে তাকাল। রাযী‌নের পা‌শে শিহাব দাঁ‌ড়ি‌য়ে ছি‌লো। শিহাব রেনু‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে বলল,
‘‌কী ব্যাপার রেনু? রাত একটার বে‌শি বা‌জে। তোমরা আজ ঘুমা‌বে না না‌কি? সকালে আমার অফিস আছে তো। রাযীন আর শশী‌কেও বিশ্রাম নি‌তে দাও। আজ সারা‌দিন সবার উপর দি‌য়ে বেশ ধকল গে‌ছে।’
‌রেনু বলল,
‘হ্যাঁ আস‌ছি।’
‌শিহাব লি‌পি‌কে উদ্দেশ্য ক‌রে বলল,
‘ভা‌বি কী অবস্থা? ঘুমা‌বেন না? সা‌হির (লি‌পির ছে‌লে) সে তো সোফায় ঘু‌মি‌য়ে আছে।’
‘ও‌কে তো আপনার ভাইয়াকে সা‌থে ক‌রে ঘুমা‌তে বল‌ছিলাম।’
‘ভাইয়া? সে নাক ডে‌কে ঘুমা‌চ্ছে। তার কো‌নো হুশ আছে?’
‘আচ্ছা আমি দেখ‌ছি। আপ‌নি গি‌য়ে আপনার ভাইয়ার কা‌ছে ঘুমান। আমি, রেনু, রো‌মিসা একসা‌থে ঘুমা‌বো। সা‌হির‌কে ওর বাবার কা‌ছে দি‌য়ে আস‌ছি। রাযী‌নের বন্ধুরা কোথায়?’
‘তাদের গেস্ট রু‌মে ঘুমা‌তে দি‌য়ে‌ছি। ঘ‌রের বা‌কি সবাইও প্রায় ঘু‌মি‌য়ে পড়‌ছে। আপনারাও আসেন ঘুমা‌বেন। রেনু তু‌মি একটু রুমে আসো তো, একটু দরকার আছে ‘
‘আচ্ছা।’
রাযী‌নের দি‌কে তা‌কি‌য়ে রেনু আর লি‌পি মৃদু হে‌সে রুম থে‌কে বের হ‌য়ে গেল।

রাযীন ভিত‌রে ঢু‌কে এক পল‌কে পু‌রো রুমটা দে‌খে নিলো। তারপর দরজাটা বন্ধ ক‌রে ছিট‌কি‌নি আট‌কে দি‌লো। শশীর অস্বস্তি লাগছে ভীষণ। ভিত‌রে একটা চাপা ভয়ও কাজ ক‌রে‌ছে। য‌দিও গত দু‌দিন রাযী‌নের সাথে কথা ব‌লে ভ‌য়ের কিছু ম‌নে হয়‌নি। তবুও এখন আর শশী মানুষ‌কে ভরসা কর‌তে পার‌ছে না সহ‌জে। যাকে বিগত চার বছর যাবত চিনত, সেই হুট ক‌রে অচেনা রূপ ধারণ করল সেখা‌নে রাযীন‌কে তো ঠিকভা‌বে চার ঘন্টাও চেনা হয়‌নি।

রাযীন শশীর দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘রুমটা স‌ত্যি চমৎকার ক‌রে সা‌জি‌য়ে‌ছে।’
নীল র‌ঙের বিছানার চাদ‌রের উপর হলুদ গাদা ফুলের পাপ‌ড়ি আর লাল র‌ঙের গোলা‌পের পাপ‌ড়ি দি‌য়ে ভা‌লোবাসার চিহ্ন বানা‌নো। রু‌মের দেয়ালে প্রচুর গোলাপ লাগা‌নো। গাদা ফু‌লের মালা গে‌ঁথে তা টানা‌নো সারা রুম জ‌ুরে। মা‌ঝে মা‌ঝে আবার রজনীগন্ধার স্টিক দেয়া। একটা রু‌মে শ‌’য়ে শ’‌য়ে ফুল দেখ‌লে মনটা এম‌নি ভা‌লো হ‌য়ে যায়। রাযীন শশীর সাম‌নে দাঁড়া‌ল। শশী ভেত‌রে ভেত‌রে থরথর ক‌রে কাঁপ‌ছে। রাযীন মৃদু হে‌সে শশীর কপা‌লে ঠোঁট ছোঁয়াল।

শশীর ভেত‌রের কাপু‌নী ক্রমাগত বে‌ড়ে সারা শরীরে ছ‌ড়ি‌য়ে যা‌চ্ছে। শশীর মনে হ‌চ্ছে ও এখ‌নি প‌ড়ে যা‌বে। রাযীন বলল,
‘‌তোমা‌কে অপূর্ব লাগ‌ছে শশী। লাল শা‌ড়ি‌তে তোমা‌কে দে‌খে ম‌নে হ‌চ্ছে, একটা সাদা গোলাপ মধ্যখা‌নে ব‌সে আর তার চারপা‌শে লাল গোলা‌পেরা তা‌কে ঘি‌রে বৃত্ত বা‌নি‌য়ে‌ছে। স্ব‌প্নের মতো সুন্দর তু‌মি। শশী ‌তোমায় একটু জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রি?’
কাঁপা কাঁপা ক‌ন্ঠে শশী বলল,
‘চু‌মো খাবার সময় তো অনুম‌তি নেন‌নি। তাহ‌লে এখন কেন বল‌ছেন?’
রাযীন হাসল। পরম ভা‌লোবাসায় শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘‌ভা‌লোবা‌সি ভীষণ।’

শশী থরথর ক‌রে কাঁপ‌ছে। রাযীন বুঝ‌তে পে‌রে শশীর কাঁ‌ধে হাত দি‌য়ে বলল,
‘তু‌মি এত কাঁপ‌ছো কেন?’
শশী আর নি‌জে‌কে ধ‌রে রাখ‌তে পারল না। রাযী‌নের বু‌কে এলি‌য়ে পড়ল। রাযীন বেশ চি‌ন্তিত হ‌য়ে বলল,
‘কী হ‌য়ে‌ছে শশী? এমন কর‌ছো কেন?’
‘আমার শরীরটা খ‌ুব খারাপ লাগ‌ছে। মাথা ঘোরা‌চ্ছে। প্লিজ আমা‌কে বিছানায় ব‌সি‌য়ে দিন।’
রাযীন শশী‌কে কো‌লে ক‌রে বিছানায় শুই‌য়ে দি‌লো। তারপর শশীর একটা হাত নিজের হা‌তের মু‌ঠোয় নি‌য়ে বলল,
‘তোমা‌কে এত ভয় পে‌তে হ‌বে না। ভয় পাবার ম‌তো কিছুই করব না আমি। আজ শুধু আমি তোমা‌কে দেখব। তোমা‌কে এতটা কাছ থে‌কে দেখার জন্য কত মাস যাবত অ‌পেক্ষা ক‌রে‌ছি। তোমাকে কাছ থে‌কে দেখার নেশায় আমার চোখদু‌টো বড্ড তৃষ্ণার্ত। আজ তোমা‌কে মন ভ‌রে দেখব, তোমার কথা শুনব। তারপর তোমা‌কে পটা‌নোর চেষ্টা করব। যখন তু‌মি আমার প্রে‌মে পড়‌বে, আর আমি তোমার ভালোবাসা অর্জন করতে পারব, তখনই কেবল আমা‌দের মাঝে ভয় পাওয়ার ম‌তো কিছু হ‌বে। তত‌দিন তু‌মি র্নিভ‌য়ে রাত কাটা‌তে পা‌রো। আমি বাঘ, ভাল্লুক কিংবা জা‌নোয়ার নই যে তোমা‌কে খেয়ে ফেলব। যত‌দিন তু‌মি আমার প্রে‌মে না পড়‌ছো তত‌দিন তোমা‌কে দে‌খেই আমার প্র‌তিটা রাত কাট‌বে।’

শশী এতক্ষণ রাযী‌নের চো‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে কথাগু‌লো শুন‌ছি‌লো। আর ম‌নে ম‌নে বল‌ছি‌লো,
‘এ ছে‌লেটার চোখ এমন কেন? শান্ত দী‌ঘির ম‌তো, নির্মল, কোমল, যার পা‌নি স্বচ্ছ, যেখা‌নে নেই কো‌নো অপ‌বিত্রতা, ম‌নে হয় যে‌নো শুদ্ধতার প্র‌তিক। ছে‌লেটা মু‌খে যা বল‌ছে, চোখ যে‌নো তার সচ্ছতার সাক্ষী দি‌চ্ছে। চোখ দু‌টো যে‌নো নরম, মোলা‌য়েম ক‌ন্ঠে বল‌ছে, রাযীন মু‌খে যা বল‌ছে সব স‌ত্যি। সব স‌ত্যি। বে‌খেয়ালী হ‌য়ে শশী রাযী‌নের চো‌খে হাত বুলাল। রাযীন চোখ বন্ধ ক‌রে ফেলল। শশী বলল,
‘আপনার চোখ দু‌টো এত সুন্দর কেন? শান্ত দী‌ঘির ম‌তো স্বচ্ছ। নরম আপনার চাহনী। চো‌খের আলোটা অনেকটা শী‌তের সকা‌লের নরম রো‌দের ম‌তো মোলা‌য়েম। এমন চোখ সচারাচার দেখা যায় না।’
রাযীন বাঁকা হে‌সে বলল,
‘বাহ্ আমার চোখ নি‌য়ে এমন কথা তো ক‌বি লেখকরাও লিখ‌তে পার‌বে ন‌া।’
‘হয়‌তো।’

রাযীন, শশীর দি‌তে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘শশী তু‌মি বড্ড ঘে‌মে গে‌ছো। তোমার শা‌ড়িটা পা‌ল্টে নাও। নয়তো ঘাম থে‌কে ঠান্ডা লে‌গে যা‌বে। বেটার হয় এই ভারী শা‌ড়িটা খু‌লে সুতির ‌কো‌নো থ্রি‌-পিচ পর‌লে। তু‌মি কম‌র্ফো‌টেবল ফিল কর‌বে।’
‘‌বিশ্বাস করুন উঠে দাঁড়াবার ম‌তো এক বিন্দু শ‌ক্তিও‌ আমার শরী‌রে নেই।’
‘আ‌মি পা‌ল্টে দিব?’
‌বেশ তাড়াহু‌রো ক‌রে শশী বলল,
‘না।’
‘তাহলে কী কর‌বে?’
‘জা‌নি না।’
‘তু‌মি যেভা‌বে ঘে‌মে‌ছো তা‌তে চেইঞ্জ না কর‌লে ঠান্ডা লে‌ঘে র্নিঘাত জ্বর হ‌বে। তখন কিন্তু মানুষ অন্য কিছু বুঝ‌বে। তু‌মিই ভে‌বে দে‌খো কী কর‌বে?’
‘আ‌মি পাল্টা‌চ্ছি।’

শশী উঠে দাঁড়া‌তে নি‌য়ে মাথা ঘু‌রে প‌ড়ে গে‌ল।‌ আর এবার একেবা‌রে বেহুশ-ই হয়ে গেল। রাযীন প্রথ‌মে বেশ বিচ‌লিত হ‌লেও প‌রে ব‌ুঝতে পারল, এত টেনশন, বি‌য়ের ধকল, সজ‌লের টেনশন এসব শশীর ব্রেন নি‌তে পার‌লেও শরীর নি‌তে পা‌রে‌নি। এত টেনশ‌নে হয়‌তো ঠিকভাবে খাওয়া-দাওয়াও ক‌রে‌নি। এ কার‌ণেই হয়ত এ অবস্থা!
রাযীন শশীর রু‌মে ভা‌লো ক‌রে চোখ বুলা‌লো। বিছানার পা‌শেই তোয়া‌লে রাখা। রাযীন সেটা দি‌য়ে শশীর গলার ঘামগু‌লো মু‌ছে দি‌লো। কে‌বি‌নেট ‌থে‌কে শশীর সু‌তির থ্রি-পিচ বের ক‌রে ম‌নে ম‌নে বলল,
‘স‌রি শশী এটা আমি কর‌তে চাই‌নি। তা-ও কর‌তে হ‌লো।’

‌কিছুক্ষণ পর শশীর জ্ঞান ফিরল। রাযীন তখন ও পা‌শে ব‌সে ঘু‌মে ঝিমু‌চ্ছে। ওর গা‌য়ে চাদর দেয়া। চাদ‌রের নিচ থে‌কে নি‌জের শরী‌রে হাত পড়‌তেই চম‌কে উঠে বলল,
‘আপ‌নি আমার কাপড় খু‌লে‌ছেন?’
রাযীন তাড়াহু‌ড়ো ক‌রে বলল,
‘এই খবরদার, একদম ভুল বুঝ‌বে না! আমি শুধু শা‌ড়িটা খু‌লে‌ছি। বা‌কি তোমার শরী‌রে ব্লাউজ পে‌টিকোড সব ঠিক আছে। ঠিকভা‌বে দেখ‌তে পা‌রো। আমি কিছু দে‌খিও‌নি। তোমার কা‌মিজ পরা‌তে গি‌য়ে মহা গ্যাঞ্জা‌মে পর‌ছিলাম। তাই শুধু তোমার মাথায় ঢু‌কি‌য়ে শরীর ঢেকে দি‌য়ে‌ছি। হাতা ঢুকা‌তে পা‌রি‌নি। আমা‌দের ছে‌লে‌দের শার্ট, টি-শার্ট, পাঞ্জা‌বি পরা বা পরা‌নো কত সহজ। আর তোমা‌দের মে‌য়ের যেমন ড্রেস তেমন শরীর? আমা‌দের ছে‌লে‌দের শরীর দেখে‌ছো কেমন সমান আর তোমরা? পেপ‌সির বোতল।’
শশী রাগী চো‌খে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘আপনা‌কে আমি মার্ডার ক‌রে ফেলব?’
‘তা নাহয় ক‌রো, আগে ব‌লো তো তু‌মি শা‌ড়ির নি‌চে পে‌টি‌কোট না প‌রে স্যা‌লোয়ার পর‌ছো কেন?’
রাযী‌নের অস‌ভ্যের ম‌তো হা‌সি দে‌খে রা‌গে শশীর শরীর জ্ব‌লে যা‌চ্ছে। রা‌গে ফুস‌তে ফুস‌তে বলল,
‘তা‌তে আপনার কি? আমি শা‌ড়ির নি‌চে পে‌টি‌কোট প‌রি, না‌কি সে‌লোয়ার প‌র, না‌কি অন্যকিছু? আপ‌নি অন্য‌দি‌কে তাকান আমি কামিজটা ঠিকভা‌বে প‌রি।’
রাযীন অন্য দি‌তে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘শশী তে‌ামার কোম‌রে ওটা কি বার্থমার্ক না‌কি পু‌ড়ে গে‌ছি‌লে‌া।’

শশীর, রাযীন‌কে মারার জন্য কিছু খুঁ‌জ‌ছে কিন্তু হা‌তের কাছে ‌কিছু না পে‌য়ে বিছ‌ানার বা‌লিশটা রাযী‌নের গা‌য়ে মে‌রে বলল,
‘ফা‌জিল লোক আপ‌নি না‌কি কিছুই দে‌খেন‌নি?’
রাযীন আমতা আমতা ক‌রে বলল,
‘ই‌য়ে মা‌নে ধ‌রো, ‌তোমার সাম‌নে পৃ‌থিবীর অন্যতম সুন্দর কিছ‌ু আস‌ল। তু‌মি কি তখন দুই একবার না তা‌কি‌য়ে পার‌বে?’
শশী বেশ রাগ ক‌রেই বলল,
‘আ‌মি আজ স‌ত্যি আপনাকে মার্ডার করব। অসভ্য লোক।’
রাযীন মৃদু হে‌সে বলল,
‘তোমার সা‌থে একটু অসভ্যতা‌মি না কর‌লে কার সা‌থে করব ব‌লো?’
শশী ধমক দি‌য়ে বলল,
‘চুপ।’
ধমক খে‌য়ে রাযীন বলল,
‘আমার ঘুম পে‌য়ে‌ছে?’
‘‌তো ঘুমান। না‌কি আপনা‌কে কো‌লে নি‌য়ে ঘুম পাড়া‌নির গান শোনাব?’
‘তা শোনা‌তে হ‌বে না। তু‌মি লাইটা বন্ধ ক‌রার অনুম‌তি দি‌লেই হ‌বে।’
‘হ্যাঁ, আমি লাইটটা বন্ধ করার অনুম‌তি দি, আর আপনি অন্ধকা‌রে তার সু‌যোগ নেন। বদ লোক।’
রাযীন হেসে বলল,
‘সু‌যোগ‌ তো আমি আলো‌তেও নি‌তে পা‌রি। তাতে তোমার পাঁচ ফুট এক ই‌ঞ্চির, চিকন, ছোট্ট শরীরটা আমার সা‌থে পে‌রে উঠ‌বে না।’
শশী অসহায় চো‌খে তাকাল রাযী‌নের দি‌কে।

কিছুটা সময় কে‌টে য‌ায় নীরবতায়। তারপর শশী উঠে হাঁটা ধর‌লে রাযীন বলল,
‘‌কোথায় যা‌চ্ছো?’
‘ওয়াশরু‌মে।’
রাযীন বিছানায় ব‌সে রইল। কিছুক্ষণ পর শশী ‌ডে‌কে বলল,
‘শুন‌ছেন?’
‘হ্যাঁ ব‌লো?’
‘আমার ড্রে‌সিং টে‌বি‌লের ড্রয়া‌রে একটা কাঁ‌চি আছে, সেটা দিন তো?’
‘ওয়াশরু‌মে কাঁচি‌ দি‌য়ে কী কর‌বে?’
‘সে‌লোয়া‌রের ফি‌তেটা খ‌ুব বা‌জে ভা‌বে গিট্টু প‌রে গে‌ছে। খোলা সম্ভব না। কাট‌তে হ‌বে।’
দুষ্টু হে‌সে রাযীন বলল,
‘আ‌মি চেষ্টা ক‌রে দেখব?’
শশী রাগ দে‌খি‌য়ে বলল,
‘‌কো‌নো দরকার নেই। কাঁ‌চিটা দিন।’

‌কিছুক্ষণ পর।
শশী, রাযীন শু‌য়ে আছে পাশাপা‌শি। শশী বলল,
‘রাযীন?’
‘হ্যাঁ।’
‘‌সব জে‌নে শু‌নে আমা‌কে কেন বি‌য়ে কর‌লেন?যেখা‌নে আপ‌নি কো‌নো দিন ভা‌লোবাসাই পা‌বেন কিনা স‌ন্দেহ, সেখা‌নে অপা‌ত্রে কেন নি‌জের মূল্যবান ভা‌লোবাসা দি‌চ্ছেন?’
‘ভা‌লোবাসা তো অত হিসাব ক‌রে হয় না শশী। শুধু হ‌য়ে‌ যায়। তোমার প্র‌তি আমার ভা‌লোবাসা ঠিক ততটা গভীর, যতটা গভীর হ‌লে মানুষটা কা‌ছে না থাক‌লে, চায়ের শেষ চু‌মো‌কেও তার স্মৃ‌তি ভে‌সে বেড়ায়। আমার কা‌ছে তু‌মি যে কী তু‌মি হয়‌তো এখন বুঝ‌তে পার‌বে না। ত‌বে সম‌য়ের প‌রিক্রমায় ঠিক বুঝ‌বে।’
শশী দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল শুধু।

চল‌বে…..