এক‌দিন বিকা‌লে সকাল হ‌য়ে‌ছি‌লো পর্ব-৪১+৪২

0
476

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
‌লে‌খিকা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব:৪১

৫১!!
রা‌সেল হাসপাতা‌লে। ওর সা‌থে আজ অদ্ভুত কান্ড ঘ‌টে‌ছে। এমন অদ্ভুত কান্ড সচারাচার কারও সা‌থে ঘ‌টে‌ছে ব‌লে কেউ শো‌নে‌নি। রাত আনুমা‌নিক সা‌ড়ে দশটার দি‌বে কাজ সে‌রে রাস্তা দি‌য়ে হেঁ‌টে হেঁটে বাড়ি ‌ফির‌ছি‌লো রা‌সেল। ওদের বিল্ডিং এ আসার জন্য সরু একটা শটকাট পথ আছে। আজ সা‌থে গা‌ড়ি না থাকায় সে রাস্তা দিয়েই আস‌ছি‌লে‌া। হঠাৎ কোথা থে‌কে যে‌নো দুজন লোক এসে ওর মু‌খের উপর বড় কাপড় ফে‌লে ওর মু‌খো মুখমন্ডল‌কে আবৃত ক‌রে ফে‌লে। তারপর আচ্ছামত ওর পাছায় লা‌ত্থি মা‌রল। তারপর ওকে রাস্তায় ফেলে ওর প্যান্ট খু‌লে নি‌য়ে পা‌লি‌য়ে যায়। যাবার সময় মা‌নিব্যাগটা আর ফোনটা মু‌খে ছু‌ড়ে মে‌রে যায়। ফোনটা এসে ওর চো‌খে লা‌গে ফ‌লে চো‌খে খুব আঘাত লা‌গে। নেহাৎ পর‌নে শর্ট প্যান্ট ছি‌লো ব‌লে ইজ্জত রক্ষা পে‌য়ে‌ছে। রা‌সেল কো‌নোম‌তে নি‌জের ফ্ল্যা‌টে গি‌য়ে সু‌মি‌কে সবটা খু‌লে ব‌লে বলল,
‘হ‌াসপাতা‌লে চ‌লো আমার চো‌খে বড্ড আঘাত লে‌গে‌ছে।’
যাব‌ার প‌থে রা‌সে‌লের মু‌খে সব শু‌নে সু‌মি হাস‌তে হাস‌তে পেট চে‌পে ধ‌রে বলল,
‘এ কেমন চোর যে, টাকা পয়সা, ফোন চু‌রি না ক‌রে প্যান্ট চু‌রি ক‌রে।’
সু‌মির হা‌সি দে‌খে রা‌সে‌লের গা জ্বল‌ছে। রা‌গের মাথ‌ায় বলল,
‘ধূর বা*ল হে‌সো না তো। এদি‌কে পাছায় লা‌থি খে‌য়ে এখন বস‌তেও কষ্ট হ‌চ্ছে।’
সু‌মির হা‌সি থাম‌ছেই না বরং আরও বাড়‌ছে।

এ‌দি‌কে চোর দু’জন নিরাপদ দূর‌ত্বে গি‌য়ে তা‌দের মু‌খোশ খু‌লে বলল,
‘‌কেমন দিলাম জা‌হিদ?’
‘ঝাক্কাস সজল। শালা আর মানু‌ষের বিষ‌য়ে বা*ল পাকনা‌মি কর‌বে না। নে প্যান্টটা ছি‌ড়ে ওর বা‌ড়ির সাম‌নে ফে‌লে আসি বরং।’
জা‌হিদ বলল,
‘না না ওর বা‌ড়ির আসে পা‌শে গে‌লে ক্যা‌মেরায় একবার চেহারা ধরা পড়‌লে সমস্যা হ‌বে।’
‘তা অবশ্য ঠিক বল‌ছিস। নে ত‌বে পু‌রি‌য়ে ফে‌লি।’
প্যান্ট‌তে আগুন লা‌গি‌য়ে কিছুক্ষণ পোড়ার পর দুই বন্ধু প্যা‌ন্টের আগু‌নের উপর প্রস্রাব কর‌তে কর‌তে গান গাইল,
‘জ্ব‌লে আগুন প্যা‌ন্টে‌রে,
‌সে আহুন দে নিভাইয়া দে।’

রা‌সেল প‌রের দিন থানায় গেল কম‌প্লেইন করতে। ইন্সপেক্টর মারুফ বলল,
‘‌কী‌সের কম‌প্লেইন?’
রা‌সেল মারুফ‌কে ঘটনা খু‌লে বলল। মারুফ বহু ক‌ষ্টে হাসি চে‌পে রে‌খেছে। কিন্তু ওর অপর পা‌শে বসা লে‌ডি অফিসার তা পার‌ছে না। তি‌নি মু‌খে হাত দি‌য়ে ক‌ুট ক‌ুট ক‌রে হাস‌ছে। হা‌সি আটকা‌নোর চেষ্টা করার কার‌ণে তার পু‌রো শরীর দুল‌ছে। মারুফ হালকা কেঁ‌শে বলল,
‘এখন কি প্যান্ট চু‌রির কেস লিখব? প্যা‌ন্টের দাম কি খুব বে‌শি ছি‌লো?’
রা‌সেল বলল,
‘না স্যার প্যান্ট চু‌রির না, আমার উপর হামলা করার জন্য।’
‘ওহ আচ্ছা। ঐ রিসা ম্যাডা‌মের কা‌ছে যান। উনি বিস্তা‌রিত লিখ‌বেন।’
‘আচ্ছা।’

৫২!!
আজ প‌নে‌রো দিন যাবত শশী জে‌লে।
শত চেষ্টা ক‌রেও শশী‌কে জেল থে‌কে ছাড়া‌তে পার‌ছে না সাজ্জাদ, শিহাব। ‌শিহাব, সাজ্জাদ‌কে বলল,
‘ভাইয়া তোমার কো‌নো ঘাপলা লাগ‌ছে না বিষয়টায়?’
‘‌যেমন?’
‘এত চেষ্টা করেও শশীর জামিন কেন পা‌চ্ছি না। ম‌নে হচ্ছে কেউ চা‌চ্ছে না, শশীর জা‌মিনটা হোক! কেউ ইচ্ছা ক‌রে শশী‌কে ফাঁসা‌চ্ছে। ইন্সপেক্টর মারুফ বল‌লেন, শশী আর সজ‌লের সম্প‌র্কে তা‌কে অজ্ঞাত কো‌নো ব্য‌ক্তি কল ক‌রে ব‌লে‌ছি‌লে‌া। তারপরেই মারুফ সা‌হেব শশী সজ‌লের সম্প‌র্কে বিস্তা‌রিত খোঁজ নি‌য়ে জান‌তে পা‌রে। কে সেই অজ্ঞাত ব্য‌ক্তি? সে কেন চা‌চ্ছে না শশী ছাড়া পাক? শশী তার কী ক্ষ‌তি ক‌রে‌ছে? ক‌’দিন যাবত আমরা পা‌নির ম‌তো টাকা ঢে‌লেও শশীর জা‌মি‌নের ব্যবস্থা কর‌তে পার‌ছি না।’
‘আ‌মিও সেটাই ভাব‌ছি। আজ শুনল‌াম রাযীন‌কে নি‌য়ে ফ‌রিদপুর চ‌লে যা‌চ্ছে।’
‘হ্যাঁ ভ‌াই। আমরাও তো শশী‌কে ফ‌রিদপুর জে‌লে নেয়ার জন্য কত আবেদন কর‌ছি। সেখা‌নে গে‌লে এট‌লিস্ট প‌রি‌স্থি‌তি আমা‌দের প‌ক্ষে থাক‌বে। এ শহর, এখা‌নের লে‌াক আমা‌দের অচেনা। ফ‌রিদপুর গে‌লে অন্ততপ‌ক্ষে সব‌কিছু করা সহজ হ‌বে। সেখা‌নের লোক, থানা, পু‌লিশ সব আমা‌দের প‌রি‌চিত।’
‘‌সেটাই দেখি আজ ক‌মিশনার সা‌হেব কী ব‌লেন?’

রাযী‌নের ব্যাগপত্র সব গোচা‌চ্ছে মিতু। আজ ওকে নি‌য়ে ফ‌রিদপুর চ‌লে যা‌বে। রাযীন এখন বিপদমুক্ত। বা‌কি ট্রিট‌মেন্ট ফ‌রিদপুর থে‌কেই করা যা‌বে। সেখা‌নেও বেশ উন্নত হস‌পিটাল আছে। মিতু, রাযীন‌কে বলল,
‘বাবা আজ আমরা বা‌ড়ি যা‌চ্ছি। কত‌দিন পর বা‌ড়ি যা‌চ্ছি বল‌তো। ভা‌লো লাগ‌ছে।’
রাযীন বাম হাত দি‌য়ে‌ ইশারায় ওর মা‌কে কা‌ছে ডাকল। মিতু পা‌শে এসে বসার পর রাযীন ওর বাম পাশের বা‌লি‌শের নিচ থে‌কে শশীর একটা ছ‌বি বের করে মিতুর হা‌তে দি‌লে‌া। ছ‌বিটা রো‌মিসা দি‌য়ে‌ছি‌লো রাযীন‌কে। তারপর হা‌তের ইশারায় বলল,
‘ও শশী‌কে ছাড়া যা‌বে না।’

মিতু প্রচন্ড রাগ ক‌রে বলল,
‘সবসময় শুধু শশী শশী। দু‌নিয়া‌তে মে‌য়ের অভাব পড়‌ছে? কী জাদু ক‌রে‌ছে ও তো‌কে? তোকে বিষ দি‌য়ে মার‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো তারপরও তুই কেন মে‌য়েটার টান টান‌ছিস?’
রাযী‌নের চোখের কোণ বেয়ে পানি পড়‌ছে। রাযীন ম‌নে ম‌নে বলল,
‘মা তুমি কেন আমার শশী‌কে ভুল বুঝ‌লে?
মা তোমা‌দের বারবার ব‌লে‌ছিলাম, শশী আম‌ার প্রাণ, যে আমা‌কে ভা‌লোবাস‌বে, তার শশী‌কেও ভা‌লোবাস‌তে হ‌বে। ত‌বে তু‌মি কেন কথাটা রাখ‌লে না মা? তু‌মি কেন পা‌ল্টে গে‌লে? তু‌মি তো এমন ছি‌লে না মা? ও স‌ত্যি কিছু ক‌রে‌নি। মা একবার ওকে আমার সাম‌নে নি‌য়ে এসো, আমি ওকে একব‌ার দে‌খি। প্লিজ মা। আমার চোখ দু‌টো শান্ত হোক। ম‌নের অস্থিরতা কাটুক। ও কা‌ছে থাক‌লে আমি আরও দ্র‌ুত সুস্থ হবো।’
কিন্তু আফসুস মুখে কিছুই বল‌তে পারল না। ম‌ুখ থে‌কে শুধু গো গো শব্দই হ‌চ্ছে। মিতু চোখ মু‌ছে বলল,
‘ভা‌লো ছে‌লের ম‌তো বা‌ড়ি চল। শশী য‌দি নি‌র্দোষ প্রমা‌ণিত হয়, আমি নি‌জে ওর কা‌ছে ক্ষমা চাই‌বো। ঢাক‌ ঢোল পি‌টি‌য়ে হাজার হাজার লোক খাই‌য়ে ওকে ঘ‌রে তুলব। কিন্তু ও য‌দি দোষী প্রমা‌ণিত হয়, ত‌বে ওর ছ‌াঁয়াটাও তোর উপর পড়‌তে দিব না।’
রাযী‌নের এত রাগ হ‌লো যে, বাম হা‌তের কা‌ছে যা পে‌লো সব ছুড়ে ফে‌লে দি‌লো। বাম পা‌য়ের কা‌ছে যা ছি‌লো, সব লা‌ত্থি মে‌রে ফে‌লে দি‌লো।

অব‌শে‌ষে তারা রাযীন‌কে নি‌য়ে ফ‌রিদপুর চ‌লে গেল। আর শশী কক্সবাজার জেলখানায়। রাযীন যে‌তেই চা‌চ্ছিল না। একরকম জোর ক‌রেই ওকে নি‌য়ে যাওয়া হ‌য়ে‌ছে। তবুও রা‌গের চো‌টে রাযীন ওর বাম হা‌তের কা‌ছে যা পে‌য়েছে সব ছু‌ড়ে ফে‌লে‌ছে।’

‌কে‌টে গেল আরও এক সপ্তাহ।
‌শিহাব, সাজ্জা‌দের অনেক চেষ্টার পর শশী‌কে ফ‌রিদপুর জে‌লে নেওয়ার অনুম‌তি পাওয়া গে‌ল। দুই ভাই, বো‌নের পিছ‌নে পা‌নির ম‌তো টাকা ঢে‌লে‌ছে। নি‌জে‌দের জমানো যে টাকায় ব্যবসা করার কথা ছি‌লো, ত‌া থে‌কেও দি‌চ্ছে। অব‌শেষে ওদের কষ্ট কিছুটা সফল হ‌লো। এত‌দিন শিহাব অফি‌সের যত কাজ সব অনলাই‌নে ক‌রে‌ছে। য‌দিও ব‌সের বহু গালি সে জন্য হজম কর‌তে হ‌য়ে‌ছে। সাজ্জাদও নি‌জের সকল কাজ মোবাই‌লেই ক‌রে‌ছে। এত‌দিন কক্সবাজারে শুধু শিহাব আর সাজ্জাদ ছি‌লো। বা‌কি‌দের দশদিন আগেই ফ‌রিদপুর পা‌ঠি‌য়ে দি‌য়ে‌ছে। এতগু‌লো মানু‌ষের কক্সবাজা‌রের ম‌তো স্থা‌নে থাকা খাওয়ার খরচ অনেক বে‌শি। আর বিপ‌দের এ সময় অযথা এক টাকা খরচ করাও ক‌ঠিন।

রাযী‌নের দূর্ঘটনার পর রায়হান রহমান সবাই‌কে তা‌দের বা‌ড়ি যে‌তে বল‌লেও মিতু কিছু ব‌লে‌নি। ফ‌লে চক্ষুলজ্জার কারণে কেউ রাযী‌নের ফ্ল্যা‌টে যায়‌নি। একটা হো‌টে‌লে বড় বড় দু‌ই বেড ওয়ালা দু‌টো রুম ব‌ুক ক‌রে থে‌কে‌ছে। একটা‌তে রেনু, লি‌পি, হা‌সি বেগম আর সা‌হির। আরেকটা‌তে সাজ্জাদ, শিহাব, আর নূর ইসল‌াম। সবাই‌কে বা‌ড়ি পা‌ঠা‌নোর পর শিহাব সাজ্জাদ মোটামু‌টি লে‌ভেলের একটা হো‌টেলে এক রুম ভাড়া ক‌রে ক‌দিন যাবত থাক‌ছে।

এখন যে‌হেতু শশী‌কে ফ‌রিদপুর পাঠা‌বে এখন শশী‌কে ছাড়া‌নো সহজ হ‌বে সা‌থে বাড়‌তি খরচটাও কম হ‌বে। শশী‌কে নি‌য়ে পু‌লিশরা যা‌বে। তা‌দের পিছু পিছু শিহাব আর সাজ্জাত যা‌বে। ওরাও একটা প্রাই‌ভেট কার ভাড়া ক‌রে‌ছে। যাবার পূ‌র্বে ভাবল, ইন্স‌পেক্টর মারু‌ফের সা‌থে দেখা ক‌রে যা‌বে। লোকটা ওদের অনেক সহায়তা ক‌রেছে। মারু‌ফের কা‌ছে গি‌য়ে সাজ্জাদ বলল,
‘ধন্যবাদ আম‌া‌দের সহায়তা করার জন্য।’
‘ওটা আমার ডিউ‌টি ছি‌লে‌া। আপনা‌দের বো‌নের কেস কক্সবাজার ব‌সে এখনও আমিই দেখব কিন্তু ফ‌রিদপুর ব‌সে দেখ‌বে ইন্স‌পেক্টর রানা। সো সাবধান। শু‌নে‌ছি তি‌নি নাম্বার ওয়ান ঘুষ‌খোর। এম‌নি কেউ একজন উপর মহ‌লে চাপ দি‌চ্ছে আপনার বোন‌কে যা‌তে না ছাড়া‌তে পা‌রেন। এমন‌কি মি‌সেস শশী কেসটা কো‌র্টে পর্যন্ত ওঠা‌তে দি‌চ্ছে ন‌া। কারণ কো‌র্টে গে‌লে জল‌দি কেস সলভ হয়ে যা‌বে। সেটা সে চা‌চ্ছে না। সে রানা‌কে য‌দি টাকা খাই‌য়ে রা‌খে ত‌বে আপনার বো‌নের কেস সলভ হতে আরও বহু সময় লাগ‌বে। সে শা‌স্তিও পে‌তে পা‌রে।’

‌শিহাব অসহায় চো‌খে তা‌কিয়ে বলল,
‘আমরা এখন কী ক‌রতে পা‌রি?’
‘‌সেই লোক‌কে কো‌নোভা‌বে খুঁ‌জে বের ক‌রুন। আই থিংক না‌টের গুরু তি‌নিই। রাযীন‌কে মারার চেষ্টাও তি‌নি ক‌রে‌ছেন। সে বের হ‌য়ে গে‌লে কেস অটো‌মে‌টিক সলভ হ‌য়ে যা‌বে।’
শিহাব তার কথায় সম্মতি জা‌নি‌য়ে বলল,
‘ধন্যবাদ। আপ‌নি প্লিজ কো‌নো প্রম‌াণ পে‌লে তার একটা ক‌পি আমাকেও পাঠা‌বেন।’
‘‌চেষ্টা করব। য‌দিও সেটা আইন বি‌রোধী, ত‌বে চেষ্টা করব।’
সাজ্জাত মারু‌ফের হাত ধ‌রে বলল,
‘ধন্যবাদ। অসংখ্য ধন্যবাদ।
অব‌শে‌ষে আজ ওরা রওনা হ‌লো ফ‌রিদপু‌রের উদ্দে‌শ্যে।’

৫৩!!
‌দেখ‌তে দেখ‌তে দুই মাস কে‌টে গে‌ল।
শশী এখনও জে‌লে। শিহাব, সাজ্জা‌দের সকল চেষ্টা একের পর এক ব্যর্থ হ‌চ্ছে। দুই মাস জে‌লে কা‌টি‌য়ে সেই ফর্সা, সুন্দর, স্নিগ্ধ মে‌য়েটা এখন অ‌নেকটা শ্যামলা ব‌র্ণের হ‌য়ে গেছে। শু‌কি‌য়ে চোখ দু‌টো বড় বড় হ‌য়ে গে‌ছে। চুল উসকো খুস‌কো। চো‌খের নিচটা ভয়াবহ কালো হ‌য়ে গে‌ছে। দেখ‌লে কান্না পে‌য়ে যায়। আগে শশী‌কে প্রথম দেখায় যে কারও ঘোর লেগে যেত, কিন্তু এখন সে সৌন্দর্য ম‌লিন হয়ে গেছে।

বিগত দুই মাস যাবত শশী জে‌লে। শত চেষ্টা ক‌রেও ওকে ছাড়া‌তে পারছে না। শিহাব, সাজ্জাদ ড্র‌য়িং রু‌মে ব‌সে রইল মুখ ভার ক‌রে। ওদের মুখ ভার দে‌খে হা‌সি বলল,
‘‌কী হ‌য়েছে সাজ্জাদ?’
‘মা এত চেষ্টা ক‌রেও শশী‌কে ছাড়া‌তে পার‌ছি না। টাকা ঢাল‌ছি পা‌নির ম‌তো। এখন তো আমা‌দের জমা‌নো টাকাও শে‌ষে‌র পথে।’
হা‌সি বেগম কী বল‌বেন ভে‌বে পা‌চ্ছেন না। ম‌নে ম‌নে বল‌লেন,
‘স‌ত্যি ছে‌লেদু‌টো মে‌য়েটার জন্য জান দি‌য়ে দি‌চ্ছে। এমন ভাই লা‌খে একটাও পাওয়া যায় না। সেখা‌নে আমার মে‌য়েটা দু‌টো ভাই পে‌য়ে‌ছে।’

রেনু তা‌দের কথা শু‌নে ভিত‌রে গেল। তারপর কাবাট খু‌লে নি‌জের সব স্ব‌র্ণে গয়না‌ এনে সাজ্জা‌দের সাম‌নে টে‌বি‌লে রে‌খে বলল,
‘ভাইয়া এগু‌লো বি‌ক্রি ক‌রে দিন। এগু‌লো আপনা‌দেরই দেওয়া। আজ আমার এগু‌লো তেমন প্র‌য়োজন নেই তবে শশীর প্র‌য়োজন আছে।’
‌রেনুর দেখা‌দে‌খি লি‌পিও বলল,
‘আমার গু‌লোও এনে দি‌চ্ছি। রেনুর থে‌কে আমার আরও বে‌শি আছে। সব বি‌ক্রি ক‌রে দাও কিন্তু আমার প্রথম সন্তান‌কে আমি আমার ঘ‌রে দেখ‌তে চাই।’
হা‌সি বেগম তা‌দের পুত্রবধূ‌দের কান্ড দে‌খে হতবাক। লি‌পির কথা তো জা‌নেন। কারণ লি‌পি শশী‌কে ছো‌টো বেলা থে‌কে ভা‌লোবা‌সে কিন্তু রেনু…! শশী তো কম কষ্ট দেয়‌নি রেনু‌কে। সা‌থে হা‌সি বেগমও। তি‌নি কী বল‌বেন ভে‌বে পা‌চ্ছে না! চুপ ক‌রে ব‌সে রই‌লেন।’

‌রেনুর, মা তান‌জিলা রেনুর এমন কান্ড দেখে চূড়ান্ত অবাক। হ্যাঁ রেনুর সা‌থে ওর প‌রিবা‌রের সম্পর্ক ধী‌রে ধী‌রে স্বাভা‌বিক হ‌চ্ছে। য‌দিও মুখ ফু‌টে কেউ কারও কা‌ছে মাফ চায়‌নি, তবুও শশীর ঘটনার পর বারবার আসা যাওয়ার কার‌ণে তা‌দের সা‌থে রেনুর সম্পর্ক ভা‌লো হ‌চ্ছে। তান‌জিলা গতকাল ওদের বাসায় বেড়া‌তে এসে‌ছি‌লো। আজ সক‌ালে যে‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লেন কিন্তু রেনু যে‌তে দেয়‌নি। ব‌লে‌ছি‌লে‌া,
‘মা থা‌কো আর এক‌দিন।’
‌রেনুর কথা তি‌নি ফেল‌তে পা‌রে‌নি। ‌রেনু রান্না কর‌ছে তখন তান‌জিলা ওর পা‌শে গি‌য়ে বলল,
‘‌রেনু!’
‘হ্যাঁ মা ব‌লো?’
‘এতগু‌লো গয়না কিছু না ভে‌বেই দি‌য়ে দি‌লি?’
‌রেনু হাসল। তারপর তরকা‌রি নাড়‌তে নাড়‌তে বলল,
‘মা, এই প‌রিবারটা আমায় এত ভ‌া‌লোবাসা দি‌য়ে‌ছে যে, তার সাম‌নে এ গয়ন‌া তুচ্ছ। আর সব‌চে‌য়ে বে‌শি ভালোবাসা পে‌য়ে‌ছি শিহাবের। ওর জন্য য‌দি নি‌জের কিডনী বি‌ক্রি কর‌তে হয়, তা-ও দুই বার ভাবব না। আর আমার শাশু‌ড়ি মানুষটা অনেকটা নার‌কেলের ম‌তো। উপ‌রে শক্ত কিন্তু ভিতরটা মি‌ষ্টি, ঠান্ডা, নরম, মসৃন, মধুময়। খুব ভা‌লো মানুষ তি‌নি।’
তান‌জিলা রেনুর মাথায় হাত বু‌লি‌য়ে বল‌লেন,
‘দোয়া ক‌রি, খুব সুখী হ ‘
হা‌সি বেগম আড়া‌লে দাঁ‌ড়ি‌য়ে সব-ই শুন‌লেন।

চল‌বে…

#এক‌দিন_বিকা‌লে_সকাল_হ‌য়ে‌ছি‌লো
লে‌খিকা: শার‌মিন আক্তার সাথী
পর্ব:৪২

৫৪!!
শশী ক‌’দিন যাবত রাযীন‌কে দেখার জন্য পাগ‌লের ম‌তো ব্যবহার কর‌ছে। যেই ওর সাথে দেখা কর‌তে যায়, তা‌কেই হাত জোড় ক‌রে অনু‌রোধ ক‌রে রাযী‌নের সা‌থে দেখা ক‌রিয়ে দেওয়ার জন্য। সেদিন‌ তো শিহা‌বের পা পর্যন্ত ধর‌তে নি‌ছি‌লো যা‌তে ও‌কে একবার রাযীন‌কে দেখার ব্যবস্থা ক‌রে দেয়। শশীর পাগলা‌মি দে‌খে, অনেক ক‌ষ্টে কোর্ট থে‌কে শশীর জন্য অনুম‌তি পত্র আনল শিহাব। যাতে র‌য‌ী‌নের সাথে শশী‌কে দেখা কর‌তে দেওয়া হয়।
অব‌শে‌ষে দীর্ঘ দ‌ুই মাস পর, রাযীন-শশী, একে অপর‌কে দেখ‌বে। সময় তো মো‌টে মাত্র দুইটা মাস। কিন্তু ওদের কা‌ছে ম‌নে হ‌চ্ছে দুই যুগ পে‌রি‌য়ে গে‌ছে। কত‌দিন পর…। শশীর সাথে একজন ম‌হিলা অফিসার দেওয়া হ‌লো। ওর একহা‌তে হ্যান্ডকাপ পরা‌নো। সেই হাতটা অফিসা‌রে হা‌তে।

রাযী‌নের কে‌বি‌নের সাম‌নে এসে শশী একটু থম‌কে গে‌ল। শরী‌রে আসামী‌দের সাদা সু‌তির শা‌ড়ি জরা‌নো। তা‌তে ওকে দেখ‌তে মো‌টেও সুন্দর দেখা‌চ্ছে না। তবুও শা‌ড়িটা ঠিক করল, চুলটা হাত দি‌য়ে ঠিক করল। শশী রু‌মে ঢুকল, ওর সারা শরীর কেমন যে‌নো কাঁপছে। কত‌দিন পর নি‌জের মানুষটা‌কে দেখ‌বে। সেই দুই মাস আগে দে‌খে‌ছি‌লো। তারপর আর না।

শশী, রাযী‌নের বে‌ডের সাম‌নে গেল। রাযীন তখন চোখ বন্ধ ক‌রে আছে। হয়‌তো ঘুমা‌চ্ছে। শশী পা‌শে রাখা চেয়ারটায় ব‌সে, কিছুক্ষণ অপলক চো‌খে তা‌কি‌য়ে রইল রাযী‌নের দি‌কে। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘‌ছে‌লেটা আরও ফর্সা হ‌য়েছে। হয়‌তো সারা‌দিন ঘরের ম‌ধ্যে থা‌কে ব‌লে। খোঁচা খোঁচা দাঁ‌ড়ি‌তে ইশ কি সুন্দর লাগ‌ছে! ঠিক যেনো রূপকথার রাজপুত্র। ঠোট দু‌টো আরও গোলা‌পি হ‌য়ে‌ছে। চো‌খের নিচটা এত কা‌লো কেন? ও কী ঠিকম‌তো ঘুমায় না না‌কি!’
শশী নি‌জের হাতটা রাযী‌নের হা‌তের উপর রাখল। তারপর ডাক‌তে নি‌লো রাযীন কিন্তু গলা দি‌য়ে স্বর যে‌নো বের হচ্ছে না। তবুও কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে ডাকল,
‘রা…রাযীন!’

চম‌কে উঠল রাযীন।‌ কত‌দিন পর প‌রি‌চিত সে আওয়াজটা শুনল। চোখ মে‌লে ওর ডান দি‌কে তাকা‌তেই দেখল শশী বসা। রাযীন জান‌তো না আজ শশী আস‌বে। শশী‌কে দে‌খে রযীন যতটা খু‌শি হ‌লো, ঠিক ততট‌াই চমকালো। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘আমার শশীর এ কী অবস্থা? কোথাই সেই চাঁদপানা মু‌খের চাঁ‌দের ম‌তো সে‌ৗন্দর্য? চুল গু‌লো উস্ক খু‌ষ্কো। ‌গোলা‌পি ঠোঁট দু‌টো রুক্ষতায় কা‌লছে হ‌য়ে গে‌ছে। শশীর গায়ের রঙও অনেকটা কাল‌চে হ‌য়ে‌ গে‌ছে। শু‌কি‌য়ে কাঁঠ হ‌য়ে গে‌ছে। মুখ শু‌কি‌য়ে একটুখা‌নি হ‌য়ে গে‌ছে। চোখ দু‌টে‌া বড় বড় লাগ‌ছে। আর চো‌খের নিচটা ভয়াবহ কা‌লো। রাযীন বাম হাত বা‌ড়ি‌য়ে শশী‌কে স্পর্শ কর‌তে চাইল কিন্তু পার‌ছে না। তা দে‌খে শশী চেয়ার থে‌কে উঠে রাযী‌নের পা‌শে বসে ওর বু‌কে মাথা রাখল। রাযীন শক্ত ক‌রে শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে রাখল। রাযীন ম‌নে ম‌নে বলল,
‘আহ্ শা‌ন্তি! পরম শা‌ন্তি!’
রাযীন বাম হাত দিয়ে শক্ত আরও শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল শশী‌কে।

শশী বলল,
‘এত শক্ত করে কেন ধর‌ছো? বু‌কের ভিতর ঢু‌কি‌য়ে ফেল‌বে না‌কি? তাহ‌লে প্লিজ তাই ক‌রো। তোমার থে‌কে দূ‌রে থাকা আমার জন্য আর সম্ভব না। আর আমি তো মর‌তেও পারব না। তো‌মাকে যে বড্ড বে‌শি ভা‌লোবে‌সে ফে‌লে‌ছি। তোমা‌কে ছে‌ড়ে যাবার কথা চিন্তাও কর‌তে পা‌রি না। তোমার সা‌থে থাক‌তে চাই জীব‌নের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত!’
রাযীন শশীর মাথায় পি‌ঠে হাত বুলা‌চ্ছি‌লো। কাঁদ‌ছে শশী, রাযী‌নের চোঁ‌খের কোণ বে‌য়েও পড়‌ছে অনবরত জলধারা। শশী বলল,
‘জা‌নো রাযীন, চার‌দিন আগে জে‌লে ব‌সে আমি অজ্ঞান হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছিলাম। আমা‌কে তারপর জেলখানার‌ ম‌হিলা ডাক্তার দে‌খেন। তি‌নি আমা‌কে কিছু প্রশ্ন জি‌জ্ঞেস কর‌লেন, তারপর জি‌জ্ঞেস কর‌লেন, আমার লাস্ট পি‌রিয়ড ক‌বে হ‌য়ে‌ছি‌লো? আমি ডেট বললাম। কারণ তোমার দূর্ঘটনার পর আর আমার পি‌রিয়ড হয়নি। ডাক্তার আমা‌কে ইউরিন টেস্ট দি‌লেন। প্রেগ‌নে‌ন্সি টেস্ট যেটা‌কে ব‌লে। আর টেস্ট রেজাল্ট প‌জে‌টিভ আস‌ছে। আর তার প‌রের‌দির আল্ট্রা‌সনোগ্রাফী ক‌রে জান‌তে পারলাম আমার প্রায় এইট উইক চল‌ছে।’

রাযীন বাম হাত দি‌য়ে শশীকে তু‌লে উৎসুক চো‌খে ওর দি‌কে তাকাল। শশী রাযী‌নের হাতটা নি‌জের পে‌টে ধ‌রে বলল,
‘এখা‌নে বর্তমা‌নে ছোট্ট একটা রাযী‌নের বসবাস শুরু হ‌য়ে‌ছে। তোমার সেই বিকা‌লের কা‌ছে আসটা একটা প্রা‌ণে রূপ নি‌চ্ছে। তোমার সেই দিন বিকা‌লের কা‌ছে আসায়, সৃ‌ষ্টিকর্তা আমার ভিত‌রে ছোট্ট একটা প্রা‌ণের প্র‌তিস্থাপন ক‌রেছেন।’

রাযীন খু‌শি হ‌বে, না‌কি বি‌স্মিত হ‌বে বু্ঝ‌তে পারছে না। শশীর মাথা টে‌নে নি‌চে না‌মি‌য়ে ওর কপা‌লে গভীর চু‌মো আঁকল। শশী মুখ তু‌লে বলল,
‘জল‌দি সুস্থ হও রাযীন। আমি চাইনা আমা‌দের সন্তা‌নের জন্ম জে‌লে হোক। আমাকে ওখান থে‌কে মুক্ত ক‌রো। ওখা‌নে কো‌নো ভদ্র মানু্ষ থা‌কে না।‌ আর কিছু‌দিন ওখা‌নে থাক‌লে আমি বোধ হয় ম‌রে যা‌বো।’
রাযীন, শশীর ঠো‌ঁটে আঙুল চে‌পে আবার ওকে জ‌ড়িয়ে ধরল।’

ওরা অ‌নেকক্ষণ একে অপর‌কে জ‌ড়ি‌য়েই ছি‌লো। সম‌য়ের কো‌নো খেয়াল ছি‌লো না। শশী‌কে নি‌য়ে আসা লে‌ডি অফিসারের কথায় ধ্যান ভাঙল। তি‌নি বল‌লেন,
‘শশী, তোমার সময় শেষ।’
শশী কান্না‌ভেজা চো‌খে রাযী‌নের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘আ‌মার যা‌ওয়ার সময় হয়ে‌ছে রাযীন।’
রাযীন আরও শক্ত ক‌রে শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। শশী নি‌জে‌কে ছাড়া‌নোর চেষ্টা ক‌রে বলল,
‘‌প্লিজ রাযীন ছা‌ড়ো। পাগলামী ক‌রো না।’
রাযীন, শশী‌কে আরও শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। নি‌জের বাম হা‌তে যতটা শ‌ক্তি ছি‌লো সবটা দি‌য়ে জ‌ড়ি‌য়ে ধরল শশী‌কে। শশী কান্না করতে করতে বলল,
‘এভা‌বে চাই‌লেই কি আমা‌কে আট‌কে রাখ‌তে পার‌বে? আমা‌কে নি‌জের কা‌ছে রাখ‌তে হ‌লে, তু‌মি দ্রুত সুস্থ হও। তুমি সুস্থ হয়ে, নাহয় আমা‌কে তোমার কা‌ছে নি‌য়ে এসো।’

কিন্তু রাযীন, শশীর কো‌নো কথা শুন‌ছে না। ও শশী‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রেই আছে। ম‌নে ম‌নে বলল,
‘একদম ছাড়‌ব না তোমাকে। তু‌মি আমার বু‌কে থা‌কো। আমার কত‌দি‌নের তৃষ্ণার্ত বু‌কে আজ একটু ভা‌লোবাসার বৃ‌ষ্টি হ‌লো। তু‌মি এত তাড়াতা‌ড়ি আমা‌কে ছে‌ড়ে যে‌তে পা‌রো না। আমা‌র অনাগত সন্তান‌কে নি‌য়ে তু‌মি একদম ঐ নর‌কে যা‌বে না। তোমা‌কে যে‌তে দিব না আমি।’
‘‌প্লিজ রাযীন, ছাড়ো। এমন কর‌লে ওখা‌নে আমি কীভা‌বে থাকব?’

শশী অনেক ক‌ষ্টে নি‌জে‌কে ছাড়া‌লো। রাযীনের মুখ দি‌য়ে হালকা হালকা শব্দ বের হ‌চ্ছে শ শ। শশী আবার রাযীন‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে বলল,
‘আ‌মিও তোমা‌কে ছে‌ড়ে যে‌তে চাই না রাযীন। কিন্তু আমি নিরুপায়।’
শশী যে‌তে নি‌লে রাযীন অনেক চেষ্টার পর ডান হাত দি‌য়েই শশীর একটা আঙুল টে‌নে ধ‌রল। কিন্তু বে‌শিক্ষণ ধ‌রে রাখ‌তে পারল না। হা‌তে সে শ‌ক্তি নেই। রাযীন মুখ দি‌য়ে শ শ শব্দ ক‌রে কাঁদ‌ছে। শশী আর ওর কান্নাটা সহ্য কর‌তে পারল না। রাযী‌নের কপা‌লে গা‌লে অসংখ্য চু‌মো এঁকে বলল,
‘যাই।’

রাযীন, শশী দুজ‌নেই কান্না ক‌রে যা‌চ্ছে। শশী যখন কে‌বিন থে‌কে বের হ‌বে তখন মিতুর সা‌থে দেখা। মিতু বলল,
‘স‌ত্যি কি তোমার গ‌র্ভে রাযী‌নের সন্তান?’
শশী একরাশ অভিমান নি‌য়ে তার দি‌কে তাকা‌লো। কিছু বলল না তা‌কে। শশীর চো‌খের ভাষা মিতুর ভিতরটা যে‌ন না‌ড়ি‌য়ে দিলো। শশী অফিসা‌রে সাথে চ‌লে গেল। মিতু র‌যী‌নের কা‌ছে আস‌তেই। রাযীন অনেক রাগ ক‌রে ওর মা‌য়ের দি‌কে তাকাল। মিতু ম‌নে ম‌নে বলল,
‘আ‌মি কি স‌ত্যি ছে‌লে মে‌য়ে দু‌টোর সা‌থে অনেক বেশি অন্যায় ক‌রে ফেললাম?’

‌যে‌তে যেতে অফিসার শশী‌কে বলল,
‘তু‌মি স‌ত্যি তোমার স্বামী‌কে অনেক ভা‌লোবা‌সো?’
‘আমার স্বামী আমা‌কে তার চে‌য়েও বেশি ভা‌লোবা‌সে।’
‘‌তোমার স্বামী‌কে স‌ত্যি তুমি মার‌তে চাও‌নি?’
‘না।’
‘ত‌বে কে মার‌তে চে‌য়ে‌ছে?’
‘জা‌নি না। ত‌বে যে রাজীনের ম‌তো মানুষ‌কে খুন কর‌ার চেষ্টা পা‌রে, সে পু‌রো পৃ‌থিবী‌কে খুন করার ম‌তো সাহস রা‌খে। কারণ সে একটা রাক্ষস। রাক্ষস যেমন নিজ সন্তান খে‌তেই দ্বিধা ক‌রে না, এ ধর‌নের মানুষ তেমন অন্য‌কে মার‌তে দ্ব‌িধা ক‌রে না। রাযী‌নের ম‌তো ভা‌লো মানুষ‌কে যে মার‌তে পা‌রে, তার জন্য হাজার হাজার মানুষ মারা কো‌নো ব্যাপার না!’

৫৫!!
‌কে‌টে গেল আরও আঠা‌রো দিন। শশীর অবস্থা দিন‌কে দিন খারাপ হ‌চ্ছে। কিছু মু‌খে দি‌তে পার‌ছে না, কো‌নো গন্ধ সহ্য কর‌তে পার‌ছে না। শুধু বমি করে বার বার। গত‌ তিন‌দিন যাবত ওর শরীরটা এতটাই খ‌ারাপ যে চে‌য়েও বিছ‌ানা থে‌কেও উঠ‌তে পার‌ছে না। পার‌বে কী ক‌রে খাওয়া নেই, ঘুম নেই, যত্ন নেই।
শশী‌কে খুব য‌ত্নে মানুষ ক‌রে‌ছে ওর প‌রিবার। শিহা‌বের চে‌য়ে শশী প্রায়ই চৌদ্দ বছ‌রের ছো‌টো। আর সাজ্জা‌দের চে‌য়ে স‌তে‌রো বছ‌রের ছো‌টো শশী। বাবা-মা যতটা না আদর দি‌য়ে‌ছে, তার চে‌য়ে বে‌শি আদর দি‌য়ে‌ছে দ‌ুই ভাই। দুই ভাই পার‌লে বোন‌কে মাথ‌ায় ক‌রে রে‌খে‌ছে। শশী স‌ত্যিই ভাগ্যবতী ছি‌লো যে, নি‌জের প‌রিবার থে‌কে এসে রাযী‌নের ম‌তো একটা মানুষ পে‌য়ে‌ছি‌লো, যে ওর খেয়াল ঠিক ওর প‌রিবা‌রের ম‌তোই রাখ‌তো, খুব যত্ন করত। জন্ম থে‌কে অসম্ভব যত্ন পাওয়া গাছ যখন হঠাৎ যখন যত্নের ছি‌টেফোটাও পায় ন‌া, তখন সে গাছ ধী‌রে ধীরে ম‌রে যায়। শশীর অবস্থাও তেমন হ‌চ্ছে।

‌জেলখানার ঐ নর‌কের ম‌ধ্যে শশীর প্রাণটা শরীর থে‌কে বে‌রি‌য়ে যাবার জন্য ছটফট কর‌ছে। হাসি বেগম ক‌দিন যাবত শশী‌কে দেখ‌তে আসেন ন‌া। পুতুলের ম‌তো তার মে‌য়েটা‌কে দেখ‌লে আজকাল ক‌ষ্টে বুক কেঁ‌পে ওঠে তার। শশীর ঐ চেহারা দেখার ম‌তো সাহস তার নেই। সে কার‌ণে শশীর সাম‌নে যায় না। রেনু, লি‌পি ‌নিয়ম ক‌রে প্রায়‌দিন যায়। শশীর জন্য ভা‌লো মন্দ রান্না ক‌রে নি‌য়ে যায়। নিজ হা‌তে খাওয়া‌নোর চেষ্টা ক‌রে। ত‌বে ইদা‌নিং শশী কিছু খে‌তে পা‌রে না। যা খায় ব‌মি ক‌রে ফে‌লে দেয়। ত‌বে ও আগে ফল খে‌তে পছন্দ করত না। ইদা‌নিং নাকি ফল একটু আধটু খে‌তে পা‌রে। সে কার‌ণে দু-তিন দিন পর পর সবাই কে‌জি‌তে কে‌জি‌তে ফল কি‌নে ‌দি‌য়ে আসে শশী‌কে। শশীর খে‌তে ইচ্ছা করে ন‌া, তবুও জোর ক‌রে খায় আর ম‌নে ম‌নে বলে, রাযী‌নের এ অংশটার কো‌নো ক্ষ‌তি আমি হ‌তে দিব না। ওর জন্য হ‌লেও আমা‌কে বাঁচ‌তে হ‌বে, সুস্থ থাক‌তে হ‌বে।

ইন্স‌পেক্টর মারুফ শিহাবকে কল করে হতাসাজনক খবর দিলেন। শশীর প‌ক্ষে কো‌নো প্রমাণই ‌তি‌নি পা‌চ্ছেন না। তি‌নি এত‌দিন খুঁজ‌ছি‌লেন, বিষটা কোথা থে‌কে সংগ্রহ করা হ‌য়েছে তার ঠিকানা। কিন্তু ত‌ারও কো‌নো খবর পায়‌নি। পা‌বে কী কি‌রে এদে‌শে চোরাচালানীর তো অভাব নেই!’

৫৬!!
‌রো‌মিসা ক‌লেজ ক্যা‌ন্টি‌নে বসা। রো‌মিসার বান্ধবী হেনা বল‌ছে,
‘‌রো‌মিসা দেখ, সাম‌নে কো‌নো হিরো আস‌ছে না‌কি? মাই গড এত সুন্দর ছে‌লেরা হয়? যেমন দেখ‌তে, তেমন লম্বা, তেমন ফর্সা সুন্দর। হোয়াট এ হ্যান্ডসাম গায়!’
‌রো‌মিসা লোকটার দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘অর্ক।’
নামটা ব‌লেই রো‌মিসা ছু‌টে গি‌য়ে তা‌কে একরকম জ‌ড়ি‌য়ে ধরল। ক্যা‌ন্টি‌নের সবাই মোটামু‌টি অবাক। ‌হেনা, ওর আরেক বান্ধবী‌ ম‌লি‌কে বলল,
‘‌রো‌মিসার সা‌থে ছে‌লেটা কে রে? দেখ‌লেই তো কে‌জি‌তে কে‌জি‌তে ক্রাশ খে‌তে মন চায়।’

‌ছে‌লেটা রো‌মিসার গা‌লে হাত দি‌য়ে বলল,
‘আমার ছোট্ট পা‌খিটা কেমন আছে?’
রো‌মিসা দীর্ঘশ্বাস ছে‌ড়ে বলল,
‘তু‌মি ভা‌লো ক‌রে জা‌নো আমি কেমন আছি?’
‘হুঁ। রাযীন ভাইয়ার জন্য চিন্তা হ‌চ্ছে?’
‘শুধ‌ু কি ভা‌বির জন্য? ভা‌বির জন্যও খুব চিন্তা হ‌চ্ছে। জা‌নো ভা‌বি প্রেগ‌নেন্ট।’
‘ওয়াও! হোয়াট এ গ্রেট নিউজ!’
‌রো‌মিসা মন খারাপ ক‌রে বলল,
‘ভা‌বি জে‌লে ত‌বে গ্রেট কীভা‌বে?’
‘হুম বুঝ‌তে পার‌ছি। চ‌লো তোমার বন্ধু‌দের সা‌থে প‌রিচয় করাও তারপর একসাথে বা‌ড়ি যাব।’

রো‌মিসা অর্ক‌কে নি‌য়ে বান্ধবী‌দের সাম‌নে নি‌য়ে গে‌ল। রো‌মিসা, অর্কের হাত জ‌ড়ি‌য়ে বলল,
‘‌দোস্ত, এই তো‌দের উড‌বি দুলাভাই। আমার ফিও‌ন্সি অর্ক।’
হেনা বু‌কে হাত দি‌য়ে বলল,
‘‌দি‌লি তো ছ্যাকা। মাত্র ক্রাশ খেলাম ওম‌নি ছ্যাকা দি‌লি।’
অর্ক হে‌সে বলল,
‘আহা শালীকা আমার প্রথম দেখায় দুলাভাইর উপর ক্রাশ খে‌য়ে ফেল‌ছে?’
‌হেনা বলল,
‘এমন হ্যান্ডসাম দুলাভাইর উপর ক্রাশ না খে‌লে যে অন্যায় হ‌বে।’
‌রো‌মিসা বলল,
‘অ‌নেক মজা হ‌য়ে‌ছে। অর্ক এবার চ‌লো।’
অর্ক সবার থে‌কে বিদায় নি‌য়ে রো‌মিসা‌কে বলল,
‘‌রো‌মিসা‌ আগে রাযীন ভাই‌কে দেখ‌তে যা‌বো তারপর তোমা‌দের বা‌ড়ি যা‌বো।’
‌’সে না হয় বুঝলাম কিন্তু তু‌মি হঠাৎ চ‌লে আস‌লে?’
‘ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হলে‌া। ভাবলাম রাযীন ভাইয়া‌কে দে‌খে আসি। তাছাড়া আমার ছো‌টো পা‌খিটা‌কেও তো দেখ‌তে ইচ্ছা ক‌রে।’
‘‌তোমার পড়া-‌লেখা ক‌বে শেষ হ‌বে?’
‘আমার তো মাত্র দুই বছর আছে।’
‌রো‌মিসা একটু হে‌সে বলল,
‘তাহ‌লে আমরা দুই বছর পর বি‌য়ে কর‌ছি?’
অর্ক রো‌মিসার গাল টে‌নে বলল,
‘‌জি না। আমরা আপনার গ্রাজু‌য়েশন শেষ করার পর বি‌য়ে করব।’
‘তত‌দিন অপেক্ষা করতে পার‌বে?’
‘‌বিগত দুই বছর যাবত যেমন পার‌ছি, আরও পাঁচ-ছয় বছরও পারব। তাছাড়া ছোট বাচ্চাটা আগে বড় হোক।’
রো‌মিসা গাল ফু‌লি‌য়ে বলল,
‘আ‌মি মো‌টেও ছো‌টো না। তাছাড়া আমি এত‌দিন অপেক্ষা কর‌তে পারব না।’

অর্ক আবার রো‌মিসার গাল টে‌নে বলল,
‘এট‌লিস্ট আপনার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার পর্যন্ত তো অপেক্ষা কর‌তেই হ‌বে। তোমার গা‌ড়ি আস‌বে না‌কি ক্যাব ডাকব? আমি বা‌ড়ি থে‌কে গা‌ড়ি নি‌য়ে আসি‌নি।’
‘ক্যাব ডা‌কো। তু‌মি আস‌লে কখন?’
‘সিঙ্গাপুর সময় রাত দু‌টোয় ফ্ল্যাইট ছি‌লো, তোমা‌দের এখা‌নে তখন বা‌রোটা বা‌জে। বাংলা‌দে‌শে ল্যান্ড করলাম বাংলা‌দেশ সময় রাত চারটায়। সব‌কিছু গুছি‌য়ে বের হ‌তে হ‌তে পাঁচটা বে‌জে গে‌ছি‌লো। বাবা এয়ার‌পোর্ট গে‌ছি‌লেন। অনেক বছর পর ঢাকায় ‌ফেরার প‌থে কো‌নো জ্যাম পেলাম না। মাওয়া এসেও ঠিক সম‌য়ে ফে‌রী পেলাম। ফ‌রিদপুর ফি‌রলাম তখন প্রায় আটটার বে‌শি বা‌জে। তারপর খে‌য়ে ফ্রেশ হ‌য়ে সবার সা‌থে একটু গল্প ক‌রে, সোজা আমার ছো‌টো পা‌খি‌কে দেখ‌তে আসলাম।’

রো‌মিসা গাল ফু‌লি‌য়ে বলল,
‘আমা‌কে আগে কেন জানাও‌নি?’
‘তাহ‌লে সারপ্রাইজ কী ক‌রে হ‌তো? তোমার জন্য অনেক গিফ্ট আর চক‌লেট এনে‌ছি। বিকা‌লে বাসায় পৌঁ‌ছে দিব।’
ওরা ক্যা‌বে বস‌তেই রো‌মিসা অর্কের কাঁ‌ধে মাথা রে‌খে বলল,
‘‌ভাই-ভা‌বির জন্য চিন্ত‌া হ‌চ্ছে খুব।’
‘‌কিছু হ‌বে না তা‌দের। আল্লাহর উপর ভরসা রা‌খো।’

ক্যাব ড্রাইভার ফন্ট মিরর দি‌য়ে বার বার অর্কের দি‌কে তাক‌াচ্ছে। অর্ক সেটা খেয়াল ক‌রে বলল,
‘কী হ‌য়ে‌ছে? সমস্যা কী? বার বার আমা‌দের দি‌কে তাকা‌চ্ছেন কেন?’
ড্রাইভার বল‌লেন,
‘স্যার কিছু ম‌নে করবেন না, আপনার ম‌তো সুন্দর ছে‌লে আমি কখনও দে‌খে‌ছি ব‌লে ম‌নে হয় না। ছে‌লেরা এত সুন্দর হ‌তে পা‌রে ব‌লে আমার ধারণা ছি‌লো না।‌ আপনার বিড়ালের ম‌তো চোখ দু‌টো আপনার পার‌সোনা‌লি‌টির সা‌থে ম্যাচ খে‌য়ে গে‌ছে।’
‌রো‌মিসা হে‌সে অর্কের দি‌কে তা‌কি‌য়ে বলল,
‘‌দেখ‌লে তোমার বিলাই চো‌খের প্রশংসা শুধু আমি একাই ক‌রি না।’
অর্ক হাসল। হাস‌লে অর্কের দুই গালে সুন্দর দু‌টো টোল প‌ড়ে। দেখ‌তে অভাবনীয় সুন্দর লা‌গে।

হাস‌পাতালে এসে অর্ক, রা‌যী‌নের কে‌বি‌নে গেল। অর্ক‌কে দে‌খে মিতু বলল,
‘অর্ক! কেমন আছিস? কখন এলি?’
‘ভা‌লো‌ আছি। তু‌মি কেমন আ‌ছো, ছো‌টো মা?’
‘বুঝ‌তেই পার‌ছিস কেমন আছি।’
অর্ক খা‌নিক মন খারাপ ক‌রে বলল,
‘হ্যাঁ বুঝ‌তে পার‌ছি।’
অর্ক, রাযী‌নের কা‌ছে গি‌য়ে বলল,
‘ভাই, কী খবর তোর? কত‌দিন এভা‌বে বিছানায় প‌ড়ে থা‌ক‌বি? ওঠ শালা। ওপস সরি তুই তো আবার আমার উড‌বি ওয়াই‌ফের বিগ ব্রো। সো তুই আমার সুম‌ন্দি লা‌গিস। বাট ভাই, আমরা ছো‌টো বেলা থে‌কে‌ একসা‌থে বড় হ‌য়ে‌ছি। তো‌কে আপ‌নি করে বলা, আমার দ্বারা সম্ভব হ‌বে না।’

রাযীন হাসার চেষ্টা করল একটু। তারপর বাম হা‌তের ইশারায় অর্ক‌কে বস‌তে বলল। অর্ক টে‌বিল থে‌কে একটা আপেল নি‌য়ে তা‌তে কামড় ব‌সিয়ে রাযীন‌কে বলল,
‘ভাই, জল‌দি ওঠ। তো‌কে‌ এভাবে দেখ‌তে‌ আমরা অভ্যস্ত না। তোর কার‌ণে সবাই ক‌ষ্টে আছি। রো‌মিসা‌কে দেখ, রোজ যখনই কল ক‌রি, কেঁ‌দে কে‌টে তারপর কল কে‌টে দেয়।’
রাযীন এব‌ারও হাসল। অর্ক মিতু‌কে বলল,
‘‌ছো‌টো মা, ডাক্তার কী বল‌লেন? সুস্থ হ‌তে কত‌দিন লাগ‌বে?’
‘ওর অবস্থার উন্নতি হ‌চ্ছে বেশি সময় লাগ‌বে না।’
‘‌গ্রেট।’

৫৭!!
রা‌সেল কাউ‌কে কল ক‌রে বলল,
‘ব্রো, রাযীন তো খুব দ্রুত সুস্থ হ‌য়ে যাচ্ছে, আমাদের সব প্ল্যান তো ভে‌স্তে গেল।’
‘প্ল্যা‌নে গড়বড় অবশ্যই হ‌য়ে‌ছে, ত‌বে ভে‌স্তে যায়‌নি। রাযীন কখনও প্যারা‌লি‌সিস থে‌কে ঠিক হ‌বে না। তার ব্যবস্থা আমি জল‌দি ক‌রে ফে‌লব। আপ‌নি জাস্ট জে‌লে ব‌সে শশীর গ‌র্ভের সন্তান‌কে মে‌রে ফেলার ব্যবস্থা করুন। র‌াযীনের কো‌নো ওয়া‌রিশ যেন পৃ‌থিবী‌তে না আসে। এতদিন ব‌সে করা প্ল্যান আমি কিছু‌তেই নষ্ট হ‌তে দিব না!

চলবে….