একমুঠো রোদ্দুর পর্ব-০৩

0
25

#একমুঠো_রোদ্দুর
#আদওয়া_ইবশার
#পর্ব_৩

সকাল সকাল দিহান তুলকালাম বাঁধিয়ে দিয়েছে চলে যাবার জন্য। রেহানা বেগম, দৃষ্টি বারবার অনুরোধ করছে, অন্তত নাস্তাটা যেন করে যায়। কিন্তু তার এইটুকু সময়ও না কী হবেনা। ভীষণ তাড়া। গত রাতেই উপরমহল থেকে অর্ডার এসেছে, দশটার আগে তাকে কার্যালয়ে পৌঁছাতে হবে। এরপর আবার স্পেশাল ফোর্স নিয়ে দৌড়াতে হবে গাজীপুরের উদ্দেশ্যে।এবারের কেস জটিল। স’ন্ত্রা’স বিরোধী আইন, খু’ন, ধ’র্ষ’ণ সহ মোট নয়টি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত আসামী দীর্ঘ তিন বছর যাবৎ পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। এই রাঘববোয়ালকে এবার জালে আটকানোর দায়িত্ব এসেছে এন্টি টেররিজম ইউনিটের হাতে।দিহানের মন-মেজাজ ঘেটে আছে উপরমহল থেকে কল আসার পর থেকেই। বহুদিন পর মাত্র সাতদিনের ছুটি জুটেছিল কপালে। দুদিন পাড় হতে না হতেই ছুটির মাঝেই কাজ এসে হাজির।ভোতা মুখে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে শার্টের বোতাম লাগাচ্ছে আর বিরবির করে ক্রিমিনালের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করছে,

“শা’লার বাচ্চা শা’লা গুলোর কারণে জীবনটা ত্যানা ত্যানা। বা’লের একটা চাকরি জুটছে কপালে। না পাই ঘুমিয়ে শান্তি আর পাই জেগে শান্তি।”

ভাইকে অল্প কিছু হলেও খাইয়ে বিদায় দেবার নিমিত্তে দৃষ্টি ঝটপট হাতে নুডলস রান্না করে বাটিতে করে নিয়ে আসছিল। রুমে ঢুকতে ঢুকতে আয়নায় দিহানের প্রতিবিম্বের দিকে তাকিয়ে তাকে বিরবির করতে দেখে জানতে চায়,

“পাগল হয়ে গেছিস না কী? একা একা কী বিরবির করছিস?”

এমনিতেই ছুটি কাটাতে না পারায় মনটা ভীষণ বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। ঘেটে যাওয়া মেজাজটা দৃষ্টির ঐটুকু কথায় যেন চট করে বারুদের মতো গরম হয়ে ওঠে। তড়িৎ পিছন ফিরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে ওঠে,

“ঐ মাস্টারনির কাছে রোদ্রিকের পাশাপাশি আজ থেকে তুমিও বেসিক ক্লাস করবে।গুন্ডার বউ হবার পর থেকে দিন দিন তোমার আক্কেল-জ্ঞান সব হাঁটুর নিচে নামছে।”

হতবাক হয়ে দৃষ্টি তাকিয়ে থাকে দিহানের ভোতা মুখের দিকে। আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলে,

“কী আজব! সরল মনে মাত্র একটা সহজ-সরল প্রশ্ন করেছি, আর তুই বিপরীতে উত্তর না দিয়ে এতো গুলো কথা শুনিয়ে দিলি? ভুলে গেলি আমি তোর বড়ো বোন হই? সম্মান কবে দিতে শিখবি?”

“তো কী করব? সবসময় আক্কেল-জ্ঞানহীন কথাবার্তা বলে আবার উত্তর খুঁজতে আসো?কোনোদিন শুনেছো, পাগল নিজেকে পাগল হিসেবে পরিচয় দিয়েছে?”

“তারমানে তুই পাগল, তাই নিজেকে পাগল বলতে চাচ্ছিস না।তাই তো?”

মিচকি মিচকি হেসে জানতে চায় দৃষ্টি। দিহান সবেই হাতে চিরুনি নিয়েছিল চুল গুলো সেট করার জন্য। দৃষ্টির কথা শ্রবণ হবার সাথে সাথেই চিরুনিটা ঢিল মেরে ফেলে খ্যাঁকিয়ে বলে ওঠে,

“বাপ পাগল,মা পাগল, বোন পাগল, চারপাশে সব পাগলের কারখানা। এতো এতো পাগলের ভীড়ে থেকেও আমি সুস্থ থাকব এটা আশা করো কীভাবে?”

তড়িৎ চোখ দুটো বড়ো বড়ো হয়ে যায় দৃষ্টির। অবাক চিত্তে কতক্ষণ ভাইয়ের বিরস মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে অল্প ঝগড়া করার ইচ্ছেটা দমিয়ে নেয়। বড্ড মায়া হয় ভাইটার জন্য। বেচারা কত শখ করে ছুটিতে বাড়ি ফিরেছিল। এরপর শখ করে গিয়েছিল বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে। মনে মনে হয়তো ভেবেও রেখেছিল, এই ছুটিতেই শুভকাজ সেড়ে ফেলবে। কিন্তু প্রথম পাত্রীই তার অপছন্দের লিস্টে চলে গেল। এই নিয়ে মন খারাপ তো আছেই, এখন আবার ছুটির মাঝেই ছুটতে হচ্ছে কাজের চাপে। সব মিলিয়ে বোধহয় মনটা তার একটু বেশিই খারাপ। ইচ্ছে করছেনা ভাইয়ের বিষন্ন মুখটা দেখে ঝগড়া করতে। যাচ্ছে আবার রিস্কি কাজে।কবে আসবে না আসবে তারও কোনো ঠিক-ঠিকানা নেই। এসব ভেবেই চড়া গলায় তার কথার প্রতিবাদ করতে গিয়েও দমে যায় দৃষ্টি। কন্ঠে আদর মিশিয়ে দিহানের হৃত টেনে বিছানার দিকে টেনে নিতে নিতে বলে,

“আমার সাথে ঝগড়া করতে গেলে বুঝি তোর সময় চলে যায় না? কতদিন পর দেখা হলো! কই একটু ভাইবোন মিলে সুখ-দুঃখের কথা বলব। তা না করে দেখা হতেই তুই আমার সাথে ঝগড়া করতে উঠেপরে লাগিস। এবার অন্তত একটু মিষ্টি করে কথা বলতে না পারলেও ঝগড়া বাদ দে। হা কর, খাইয়ে দিচ্ছি আমি।”

বিছানায় বসে ভ্রু কুঁচকে বোনের দিকে তাকায় দিহান। ঝগড়ার সূচনাটা এখন কে করেছিল?নিজেই ঝগড়া করার জন্য আগ বাড়িয়ে দিহানকে খুচিয়েছে।এখন আবার সেই উল্টো সুরে গান ধরেছে! মেয়ে মানুষকে কী আর সাধে পল্টিবাজ বলে? আকাশের মতো ক্ষণে ক্ষণে রং বদলাবে। তারা নিজেরাই আগ বাড়িয়ে ঝগড়া করবে, রাগ দেখাবে, গাল ফুলাবে, আবার নিজেরাই অভিমানী হয়ে কেঁদেকুটে অভিযোগ করবে। এ এক আজব কিসিমের ধুরন্ধর মেয়ে জাতি। শরীর জ্বলে ওঠে এদের ন্যাকামি দেখে। অসহ্য, অসহ্য,অসহ্য। আগাগোড়া পুরোটাই আসহ্য নামক চুলকানি পাউডার দিয়ে মোড়ানো। তিতিবিরক্ত হয়ে দিহান মুখে নুডলস নিয়েই বলে ওঠে,

“আগে খুঁচিয়েছিল কে শুনি?”

“আমি তোর বড়ো বোন না! ঐ একটু আধটু খুচানো আমার জন্মগত অধিকার। কিন্তু আমার সাথে ঝগড়া করার তোর কোনো অধিকার নেই। বড়ো বোন হিসেবে তোর কাছ থেকে শুধু সম্মান প্রাপ্য আমার। সো, অলয়েজ স্পিক টু মি উইথ রেসপেক্ট। রিমেম্বার ইট।”

মেয়েদের মতো মুখ ভেংচায় দিহান। শ্লেষোক্তি করে বলে,

“সম্মানী ব্যক্তি কখনো এভাবে ভিক্ষুকের মতো হাত পেতে সম্মান চেয়ে বেড়ায়না। তাদের জন্য মন থেকে অটোমেটিক সম্মান চলে আসে। সুতরাং ছেঁড়া খেতায় শুয়ে চাঁদ ধরার স্বপ্ন দেখা বাদ দাও।”

ভাইকে বোঝাতে অক্ষম হয়ে দৃষ্টি হতাশ নজরে তাকিয়ে থাকে দিহানের দিকে। পরপর মুখভঙ্গি গম্ভীর করে একটু খোঁচানোর উদ্দেশ্যে বলে,

” মুখ ভেংচাবিনা। এটা মেয়েদের কাজ। তোকে মুখ ভেংচালে একদম হিজড়াদের মতো লাগে।”

চোখ গরম করে দিহান কিছু বলতে যাবে, তার আগেই রক্তিম রুমে ঢুকে গভীর ভারিক্কি সুরে বলে,

“ঠুকাঠুকি শেষ হলে এবার বিদায় হও। নিচে গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে।”

দৃষ্টি ভাইয়ের থেকে নজর সরিয়ে দরজার দিকে তাকায় রক্তিমের আওয়াজ পেয়ে। দেখতে পায় পাষাণ সাহেব জগিং স্যুট গায়ে জড়িয়ে ঘামে একাকার হয়ে দাঁড়িয়ে আছে দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে। শেষ রাতে বাড়ি ফিরে বিছানায় পিঠ ঠেকালেও ছেলের যন্ত্রণায় ঘুম হয়নি বিধায় চেহারাটা বিধ্বস্ত দেখাচ্ছে। বড্ডা মায়া হয় দৃষ্টির ঐ ক্লান্ত মুখটা দেখে। রক্তিমকে উদ্দেশ্য করে কিছু বলতে যাবে, ঠিক সেই মুহূর্তেই দিহানের ফোনটা বেজে ওঠে। ড্রাইভার ফোন করেছে। কলটা রিসিভ করে ফাজলামি সুর ঝেড়ে প্রফেশনাল ভাবে “আসছি” বলেই কল কেটে দেয় দিহান। আড় চোখে রক্তিমের গুরুগম্ভীর মুখের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে,

“তোমার শাশুড়িকে জিজ্ঞেস করে দেখো তো, জন্মের পর মুখে মধু দিয়েছিল কী না! আমার হাতে সময় থাকলে আমিই জিজ্ঞেস করে যেতাম।বাপরে বাপ! কথা তো নই,যেন করলা আর নিম পাতার মিক্স জুস। আমি যে একটা আইনের লোক, এরপরও তো আমার মুখ থেকে এতো তিতা তিতা কথা বের হয় না।”

প্রত্যুত্তরে বাকা হাসে রক্তিম। শরীর ঝাড়া দিয়ে দুপা এগিয়ে কাছাকাছি দাঁড়িয়ে দিহানের পিঠ চাপড়ে বলে ওঠে,

“তিতা কথা বলার মতো পটেনশিয়ালিটি সবার থাকেনা শালাবাবু। বিশেষ করে পুলিশ ডিপার্টমেন্টের লোকদের তো একদমই না। মুখে মিষ্টি মধুর বুলি না থেকে তিতা তিতা ভাব থাকলে এদের পকেট গরম হয়না।”

দিহানের মাঝে রাগ বা অপমানের লেশমাত্র দেখা যায়না। বরং শরীর কাঁপিয়ে হেসে নিজেও রক্তিমের কাধ চাপড়ে অবজ্ঞা সুরে বলে ওঠে,

“এক চোর আরেক চোরকে গালি দিচ্ছে , “তুই চোর” বলে! হা হা..জোকস অফ দ্যা ইয়ার। হেব্বি মজা পাইলাম দুলাভাই। থ্যাং ইউ সো মাচ, এতো ভালো একটা জোকস বলে বিনোদন দেওয়ার জন্য। এমন বিনোদন পাবার জন্যই তো বারবার আপনার অপমান ভুলে ছুটে আসি।”

বলতে বলতে এক চোখ টিপে ঠোঁট গোল করে শিস বাজাতে বাজাতে অগ্রসর হয় রক্তিম-দৃষ্টির রুমের দিকে। বিছানার কাছে গিয়ে ঘুমন্ত রোদ্রিকের দিকে ঝুকে দুই গালে, কপালে স্নেহের পরশ বুলিয়ে আদুরে সুরে ডাকতে থাকে,

“মামা, এই মামা! ওঠো ওঠো। আরে ওঠ না রে বাপ! চলে যাচ্ছি আমি।”

পিছন থেকে তৎক্ষণাৎ রক্তিম ঝাঝালো সুরে নিষেধ জারি করে,

“একদম ডাকবেনা ওকে। একটু আগেই ঘুমিয়েছে।’

“কেনা? সারারাত কী বাপ-ছেলে মিলে সরকারি গোডাউনের মাল চুরি করে সকালে ঘুমিয়েছেন?”

নিষেধাজ্ঞা শুনে কিঞ্চিৎ ভ্রু কুঁচকে বিরক্তমুখে জানতে চায় দিহান। ওয়াশরুমের দিকে যেতে যেতে রক্তিম ভাবলেশহীন সুরে জবাব দেয়,

“আগে বিয়ে করে বাপ হও। পরে বুঝবে কোন গোডাউনের মাল চুরি করতে যাই।”

রক্তিমকেও দ্রুত বেরুতে হবে পার্টি অফিসের উদ্দেশ্যে। সেখানে একটা দলীয় মিটিং শেষে আবার ছুটতে হবে উকিলের কাছে। কিছুদিন আগে কলেজ মাঠে একটা ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করেছিল রক্তিমের দলের ছেলেরা। সেখানে বিরোধী দলের কয়েকটা ছেলে এসে দর্শক সারিতে থাকা কিছু মেয়ের সাথে উগ্র আচরণ শুরু করেছিল। যেটা দেখে খ্যাপাটে হয়ে ওঠে রক্তিমের ছেলেরা। মূলত বিরোধী দলের লক্ষ্যই ছিল একটা হাঙ্গামা বাঁধানোর জন্য তার ছেলেদের উস্কে দেওয়া। হয়েছিলও তা। খেলার মাঝেই দুই দলের ছোটখাট একটা গন্ডগোল বেঁধে যায়। পরবর্তীতে সেটার সূত্র ধরে বিরোধী দল সরষন্ত্র করে ভিত্তিহীন কেস ঠুকে দেয় দলের সাতজন ছেলের নামে। এটা নিয়েই কিছুদিন যাবৎ একটু দৌড়াদৌড়ি করতে হচ্ছে রক্তিমকে। ভার্সিটি পড়ুয়া উঠতি বয়সী ছেলে গুলোর টগবগে গরম রক্তের দাপটে অযথা একটা ঝামেলা পোহাতে হচ্ছে তাকে। আহাম্মক গুলোকে বারবার করে সতর্ক করে সে, একটুতেই যেন মাথা গরম না করে। কিন্তু কে শুনে কার কথা! সবসময় ফালতু ঝামেলায় জড়িয়ে দৌড়ের উপর রাখবে তাকে।

একেবারে গোসল সেড়ে তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে রক্তিম ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখতে পায় রোদ্রিক হাত-পা ছুড়ে কাঁদছে। পশেই দিহান বসে বিভিন্ন কথায় তাকে মানানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু রোদ্রিক কথায় ভোলার পাত্র না। প্রতিবারই ঘুম থেকে ওঠার পর তার মেজাজের ঠিক থাকেনা। ঘন্টা নাগাদ অযথা কান্না করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে এরপর আস্তে-ধীরে শান্ত হবে। রোদ্রিকের কান্না থামাতে ব্যর্থ হয়ে দিহান অসহায় কন্ঠে বলে ওঠে,

“আমার ভুল হয়েছে বাপ। আর জীবনেও তোর মতো গুন্ডার পুতের ঘুম ভাঙ্গানোর চেষ্টা করবনা। এবার অন্তত থাম বাজান!”

দ্রুত পায়ে রক্তিম এগিয়ে এসে ছেলেকে কোলে নিয়ে কাধে মাথা রেখে পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে দিহানের দিকে গরম চোখে তাকিয়ে বলে,

“বলেছিলাম না ডাকতে! একটা বাচ্চা সামলানোর মোরদ নেই, আবার সে ছুটে জঙ্গি, সন্ত্রাসদের দমন করতে।”

বাবার কোলে ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে পূণরায় ঘুমের দেশে তলিয়ে যায় রোদ্রিক। সেদিকে তাকিয়ে দিহান ঠেস দিয়ে বলে,

” তারা জঙ্গি, সন্ত্রাস হলেও শিকদার বংশের ছেলে জাতের মতো হিটলার না। এজন্য তাদের সামলাতেও কষ্ট হয়না আমার। আসছি ভালো থাকবেন।”

কথায় বিদায়ী সুর টেনে পা বাড়াই দিহান। পিছন পিছন রক্তিমও আসে উদোম গায়ে ঘুমন্ত ছেলেকে কোলে নিয়ে। সিঁড়ির কাছে পৌঁছে নিচে তাকিয়ে শশুর-শাশুড়ির উপস্থিতি লক্ষ্য করে খালি গায়ে আর এগোয়না। সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়েই সাবধানি বার্তা ছুড়ে,

“সাবধানে যাবে। মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করবে। হেয়ালি স্বভাবটা যেন পরিবারেই সীমাবদ্ধ থাকে। কাজের ক্ষেত্রে হেয়ালিপনা করে নিজের জীবন ঝুকিতে ফেলোনা। এমনিতেই কম ঝুকিপূর্ণ কাজ বেছে নাওনি।”

দিহান তৎক্ষণাৎ দাঁড়িয়ে একটু ঝুঁকে কুর্নিশ করার ভঙ্গিতে বলে,

“যথা আজ্ঞা যাহাপনা।”

দিহানের অভিব্যক্তি দেখে স্মিত হাসে রক্তিম। প্রলম্বিত একটা নিঃশ্বাস ফেলে ভাবে সংগ্রামের কথা। সে যদি তার সাথে এতো বড়ো বিশ্বাঘাতকতা না করতো, তবে হয়তো আজ তার সাথেও এমন একটা টক-মিষ্টি সম্পর্ক থাকতো। ছোট বেলা থেকেই রক্তিম ছিল গম্ভীর আর সংগ্রাম ছিল ডানপিটে স্বভাবের। দিহানের মতো সেও সবসময় এভাবে কারণে- অকারণে লেগে থাকত তার পিছনে। দুই ভাইয়ের কতশত খুনসুটি স্মৃতির পাতায় জমা! কে জানতো, বড়ো হয়ে এক সময় সেই আদরের ভাইটাই তার সাথে এতো বড়ো বিশ্বাস ঘাতকতা করে গোটা জীবনটাই তার এলোমেলো করে দিবে? শুধুমাত্র তার একটা ভুলের কারণে এতো গুলো জীবন হয়েছে ছন্নছাড়া। এতো গুলো বছর পেরিয়ে যাবার পরও বেঈমানটার কথা ভুলতে পারেনা রক্তিম। যখনই দিহান সামনে আসে, তখনই মনে পরে তার কথা। একেই বুঝি বলে রক্তের টান?

চলবে….