একমুঠো রোদ্দুর পর্ব-১৪

0
18

#একমুঠো_রোদ্দুর
#পর্বঃ১৪
#আদওয়া_ইবশার

অতীতের নির্মম বিভীষিকাময় সেই দিনগুলো। যে দিনগুলোতে মেজর রক্তিম শিকদারের পরিচয় বদলে গিয়েছিল পুরো সাভারবাসীর কাছে। শুধু সাভারবাসীর কাছেই নয়, গোটা দেশজুড়েই সামাজিক মিডিয়ার বদৌলতে একজন নিষ্ঠাবান দেশপ্রেমিক সৈনিক রক্তিম শিকদার পরিচিতি পেয়েছিল খুনি রক্তিম শিকদার হিসেবে। যে পরিচয় এক লহমায় বদলে দিয়েছিল তার পুরো জীবন। অতীতের সেই একই কাহিনীর পুনরাবৃত্তি আবারও ঘটে গেল তার জীবনে। তবে কি তার জীবনটা পুনরায় ঘুটঘুটে কালো অন্ধকারে বিলীন হয়ে যাবে? ছন্নছাড়া বেপরোয়া সেই রক্তিম শিকদার আবারও ফিরে আসবে? আর কিছুই ভাবতে পারছে না দৃষ্টি। মাথাটা তার অসহ্য যন্ত্রণায় ফেটে যাচ্ছে। কাঁদবে না সে, নিজ মনে বারবার এমন প্রতিজ্ঞা করার পরও বেহায়া চোখ দুটো কেঁদে বুক ভাসাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তা তাকে এ কোন পরীক্ষায় ফেলল আবার? ভালোবাসায় এত যন্ত্রণা, এত কষ্ট, এত হাহাকার, এত হারিয়ে ফেলার ভয়! আগে জানলে এই সর্বনাশা ভালোবাসার জোয়ারে নিজেকে কখনো ভাসাতো না দৃষ্টি।

“ভাবি!”
শান্তর ডাকে ধ্যানভঙ্গ হয় দৃষ্টির। সাভার মডেল থানার বারান্দায় পাতানো একটা বেঞ্চে বসে আছে সে। প্রাণপুরুষের এত বড় সর্বনাশের সংবাদ জেনে নিজেকে আর চার দেয়ালে আটকে রাখতে পারেনি। ছটফট করেছে রক্তিমকে এক নজর দেখার জন্য। মেহেদীর কাছে তার সে কী আকুতি! শুধু একবার তাকে যেন রক্তিমের সাথে দেখা করার ব্যবস্থা করিয়ে দেয়। তার এই অসহায় আকুতি আর পাগলামির কাছে হার মানতে বাধ্য হয় মেহেদী। তবে থানায় এসেও কোনো লাভ হচ্ছে না। সংবিধান এবং ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী রক্তিমকে আগামীকাল আদালতে হাজির করা হবে। এর আগে কারো সাথেই দেখা করার অনুমতি তারা দেবে না। দীর্ঘ এক ঘণ্টা যাবৎ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের সাথে কথা বলেও কোনো কিনারা করতে পারছে না কেউ। মেহেদী এখনো ভিতরে আছে। রাকিব কোথাও একটা বেরিয়েছে। দৃষ্টি চোখ তুলে তাকাতেই শান্ত ব্যর্থ নিঃশ্বাস ছেড়ে রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বলে ওঠে,

“শালা সবগুলো ভূঁইয়ার দালাল। কিছুতেই দেখা করার অনুমতি দেবে না।”

মুক্ত দানার মতো কিছু অশ্রুকণা ঝরঝরিয়ে দৃষ্টির গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ে। দুহাত জড়ো করে কপালে ঠেকিয়ে ডুকরে বলে,

“কিছু একটা করুন ভাইয়া। দয়া করে কিছু একটা করুন। শুধু একবার, শুধু একবার দেখা করতে চাই আমি। একটা নজর দেখতে চাই।”

হঠাৎ কী যেন ভেবে কান্না থামিয়ে তড়িৎ দুহাতে চোখ মুছে উঠে দাঁড়ায় দৃষ্টি। তাড়াহুড়ো ভঙ্গিতে বলে ওঠে,

“আচ্ছা, ওদের ঘুষ দিলে মানবে তো? কত টাকা লাগবে বলুন? আমি দেব, প্রয়োজনে সব দিয়ে দেব। তবুও একবার দেখার করার অনুমতি নিয়ে আসুন ওদের থেকে প্লিজ!”

পুনরায় হাত জোড় করে কান্নায় ভেঙে পড়ে দৃষ্টি। শান্ত শুধু অসহায়ের মতো দেখে যায় এক পতি ভক্ত স্ত্রীর পাগলামি।

“মিসেস শিকদার! এভাবে ভেঙে পড়লে চলবে আপনার? ভুলে যাবেন না আপনার স্বামীর পরিচয় কী, আপনি কার স্ত্রী। নিজেকে শক্ত করুন। যদি আপনার স্বামীর প্রতি বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস থাকে, তবে এভাবে পাগলামি না করে নিজেকে ইস্পাতের মতো শক্ত রেখে বুক ফুলিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যান। দেখি কে আটকায় আপনাকে।”

পিছন থেকে হঠাৎ এহেন বাক্য শুনে নিমিষে দৃষ্টির পাগলামি বন্ধ হয়ে যায়। কান্নাভেজা চোখ দুটোই খেলে যায় বিস্ময়। বিস্মিত নজরে ঘুরে দাঁড়াতেই দেখতে পায় ফর্মাল ড্রেসআপে তার পিছনে দিহানের সাথে মধ্যবয়সী একজন মহিলা দাঁড়িয়ে আছে। ভাইকে চোখের সামনে দেখে যেন দৃষ্টির কষ্টটা আবারও মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। পুনরায় ঠোঁট ভেঙে কেঁদে করুন আর্তনাদে ভাইয়ের বুকে লুটিয়ে পড়ে,

“এই ভাই, ভাইরে! আল্লাহ কেন আমার সাথেই এমন করে? আমি কী এমন পাপ করেছি? ভাই, তুই বিশ্বাস কর, উনি ঐ খুন করেননি। কিছুতেই উনি খুন করতে পারেন না। ঐদিন তো বলল আমাকে নিয়ে ঘুরতে যাবে। রাত দশটার পরও কথা হয়েছে আমার সাথে। বলেছিল একটু পরেই চলে আসবে। কিন্তু আসল না। আমি কী করব? বলে দে তুই আমি কী করব? কিসের জন্য আল্লাহ আমাকে এতো বড় পরীক্ষায় ফেলল?”

বোনের এমন করুন আহাজারি শুনে পৃথিবীর কোনো ভাইয়ের পক্ষেই স্বাভাবিক থাকা সম্ভব নয়। দিহানও পারেনি বোনকে এমন মৃত্যুসম যন্ত্রণায় ছটফট করতে দেখে স্বাভাবিক থাকতে। তবুও দুহাতে দৃষ্টিকে আগলে ধরে ধরা গলায় সান্ত্বনার বাণী আওরায়,

“তুমি, আমি, আমরা সবাই জানি আপু, ভাইয়া খুন করেনি। তবে কেন ভেঙে পড়ছো এভাবে? শক্ত করো নিজেকে। আমি কথা দিচ্ছি তোমাকে, ভাইয়া যদি সত্যিই নির্দোষ হয়ে থাকে তবে পৃথিবীতে এমন কোনো আইন নেই যে আইন ভাইয়াকে দোষী সাব্যস্ত করবে।”

“আমি একবার দেখা করব ওনার সাথে। কিন্তু অনুমতি দিচ্ছে না। তুই একটু দেখ না কিছু করতে পারিস কী না! তুই নিজেও তো আইনের লোক তাই না! ওরা নিশ্চয়ই তোর কথা মানবে। একটু দেখ না ভাই, প্লিজ! আমি কথা দিচ্ছি, একবার দেখা করতে পারলে আর কাঁদব না। কোনো পাগলামি করব না।”

“দেখা করার অনুমতি দেবে না মানে কী? চলো তো আমার সাথে দেখি কে আটকায়।”

দৃষ্টির কথার বিপরীতে দিহানের সাথে আসা ভদ্র মহিলার কাঠকাঠ কথার ভঙ্গিমায় আবারও সকলের নজর ঘুরে যায় ওনার দিকে। ভাইয়ের দিকে জিজ্ঞাসু নজরে তাকায় দৃষ্টি। চোখের চাহনিতেই জানতে চায় ভদ্র মহিলার পরিচয়। দিহান বোনের মাথায় হাত রেখে বলে,

“উনি ডিফেন্স লইয়ার মিতালী সাহা।”

মিতালী সাহা আলতো হেসে এগিয়ে এসে দৃষ্টির হাত ধরে বললেন,

“এসো মা। ভয় পেও না। যা হবে, ভালোর জন্যই হবে। মনে রেখো, রাত যত গভীর হয় অন্ধকার তত কাটে। দুঃখের পরই প্রকৃত সুখের দেখা মিলে আমাদের মানবজীবনে। তাই কখনোই কোনো পরিস্থিতিতে আমাদের থেমে থাকলে চলবে না।”

মিতালী সাহার কথাগুলো দৃষ্টি অবাক চোখে তাকিয়ে শুনে। এগিয়ে যায় ওনার সাথে পায়ে পা মিলিয়ে। সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার কামরুল হাসানের সাথে কথা বলতে প্রথম দিহান এগিয়ে যায়। নিজের পেশাটা লুকিয়ে রেখেই সুন্দরভাবে বুঝিয়ে চেষ্টা করে অনুমতি নেওয়ার।

“আমরা আসামীর বাড়ির লোক। উনি রক্তিম শিকদারের স্ত্রী। দেখা করতে চায় উনার স্বামীর সাথে। কিন্তু শুনলাম, আপনি না কী অনুমতি দিচ্ছেন না? অনুমতি না দেওয়ার কারণটা কী জানতে পারি, অফিসার?”

কামরুল হাসান ভীষণ রুষ্ট ভঙ্গিতে জবাব দেয়,

“আপনারা কী অবুঝ, না বাংলা বুঝেন না? আসামীকে আগামীকাল কোর্টে হাজির করা হবে, এর আগে কারো সাথেই দেখা করানো যাবে না। অনুমতি নেই উপর থেকে। এবার দয়া করে থানা ছাড়ুন আপনারা, নইলে আমরা যে কোনো স্টেপ নিতে বাধ্য হব।”

তৎক্ষণাৎ দিহানের চোয়াল শক্ত হয়ে ওঠে। এমন ভিত্তিহীন যুক্তি শুনে রাগে কপালের শিরা দুটো ফুলে ফেপে ওঠে। কড়া দৃষ্টিতে অফিসারের দিকে তাকিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে ওঠে,

“কখন কোন পরিস্থিতিতে কী স্টেপ নিতে হয় সেটা আপনার থেকেও ভালো আমার জানা আছে। এসব আউকাউ বুঝিয়ে সাধারণ পাবলিককে দমিয়ে দিতে পারলেও একজন এন্টি টেরোরিজম ইউনিটের এডিশনাল এসপিকে নিশ্চয়ই দমাতে পারবেন না! সোজা কথায় কাজ করবেন না, কী আঙুল বাঁকা করতে হবে?”

কামরুল হাসান দিহানের পরিচয় জানার পর কিছুটা অপ্রস্তুত হলেও তৎক্ষণাৎ নিজেকে সামলে নিয়ে বলে ওঠে,

“দেখুন স্যার, আপনি যত বড়োই উর্ধ্বতন অফিসার হোন না কেন কেসটা যতক্ষণ আমাদের হাতে আছে ততক্ষণ আমাদের নিয়মেই চলতে হবে। নিয়মের বিরুদ্ধে আমি-আপনি কেউ কিছু করতে পারবনা।”

“কোন নিয়মের কথা বলছেন আপনি? আমার জানামতে ফৌজদারী মামলার আসামীকে পুলিশ গ্রেফতার করার পর কিছু নির্দিষ্ট নিয়মকানুন মেনে চলতে হয়। তবে সেই নিয়ম গুলোর কোনোটাতেই কিন্তু আসামীকে তার পরিবারের সাথে বা ডিফেন্স লইয়ারের সাথে দেখা করার অনুমতি নেই এমন কিছু উল্লেখ নেই। তবে দেখা করার অনুমতি নির্ভর করে কিছু শর্তের উপর সেটাও আমার জানা আছে। প্রথম শর্ত হলো, পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদের সময় দেখা করার অনুমতি পাওয়া যায় না। দ্বিতীয় শর্ত, যদি কেসটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয় তবুও পুলিশ একটা নির্ধারিত সময়ে দেখা করার অনুমতি দিতে পারবে। তৃতীয় অর্থাৎ সর্বশেষ শর্ত, গ্রেফতারের পর অর্থাৎ প্রথম চব্বিশ ঘন্টায় আসামীকে আলাদতে হাজির করার আগ পযর্ন্ত পরিবারের সাথে দেখা করার সময় সীমিত হতে পারে। উক্ত তিনটা শর্তের মধ্যে কিন্তু কোথাও এটা উল্লেখ নেই যে কোনো ক্রমেই পরিবারের সাথে দেখা করার অনুমতি দিতে পারবেনা। তবে কেন অনুমতি দিচ্ছেননা আপনারা?”

মিলাতী সাহার আইনি যুক্তির সম্মুখে কিছুটা ঘাবড়ে যায় কামরুল হাসান। তবুও নিজের দাপট জাহির করার জন্যই বোধহয় একঘুয়ে ভাবে বলে ওঠেন,

“একজন আইনের লোককেই আইন শিখাতে আসছেন? আপনার স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি। আমি নিশ্চয়ই এই চেয়ারটাই শুধু অ আ ক খ শিখেই বসে পরিনি। কঠোর পরিশ্রম আর আইনবিদ্যা শিখেই এই চেয়ার পেয়েছি।”

“কী জানি কঠোর পরিশ্রম করে ডিগ্রী অর্জন করে চেয়ারটা পেয়েছেন না কী মোটা অংকের ঘুষ কিংবা দাদা নানার কোটাতে পেয়েছেন। আপনার ব্যাপার আপনিই ভালো জানেন। তবে আপনার এই বাচ্চা ভুলানো কাজকর্ম দেখে আমার কিন্তু এটা ভাবতে একটুও আপত্তি হচ্ছেনা যে আপনি নিজের মেধা দিয়ে নই বরং দাদা নানার শক্তি অথবা টাকার গরমেই গদিটা পেয়েছেন।”

দিহানের শ্লেষাত্মক কথায় এবার কামরুল হাসানের কন্ঠস্বর উঁচু হয়।

” মাইন্ড ইয়্যোর ল্যাঙ্গুয়েজ মিস্টার দিহান। আমার থানায় দাঁড়িয়ে আপনি আমাকেই এভাবে অপমান করতে পারেননা। আপনি নিজেও বোধহয় আমার পরিচয়টা ভুলে যাচ্ছেন। আপনি যেমন আইনের লোক আমিও তেমন আইনের লোক। আপনার যেমন একটা পদ আছে আমারও তেমন একটা পদ আছে। কিন্তু হ্যাঁ, একটা জিনিস মিসিং। সেটা হলো আপনার পরিবারে একটা খুনি আছে যেটা আমার পরিবারে নেই। আইনের লোক হয়েও একটা খুনিকে সাপোর্ট করতে গিয়ে আপনি আপনার প্রফেশনেরই অন্য একটা অফিসারকে এভাবে অপমান করছেন? শেইম অন ইউ মিস্টার দিহান, শেইম অন ইউ।”

এমনিতেই একটুতেই মেজাজ গরম হয়ে যাওয়ার খুব বাজে একটা রেকর্ড আছে দিহানের। যে রেকর্ডের জন্য এটিইউ এর কার্যালয়ের সকলের কাছেই আড়ালে সে পরিচিত খ্যাপা স্যার হিসেবে। ওসি কামরুল হাসানের এমন ব্যাঙ্গাত্ব কথার পর নিজেকে আর স্থির রাখতে পারেনা দিহান। একেতো স্নেহের একমাত্র বোনটা সেই কখন থেকে কেঁদে যাচ্ছে, যা মোটেও সহ্য হচ্ছেনা দিহানের। দ্বিতীয়ত এই ওসির এমন আচরণ, বোধ জ্ঞান একদম উলট পালট হয়ে গেছে দিহানের। দৃষ্টিকে ছেড়ে তেড়ে কামরুল হাসানের সামনে গিয়ে কলার চেপে ধরে। থানার পরিবেশ হঠাৎ করেই থমথমে হয়ে ওঠে। উপস্থিত সবাই দিহানের এমন আচরণে হতবাক হয়ে যায়। কিছু পুলিশ সদস্য পরিস্থিতি সামলাতে এগিয়ে আসে, কিন্তু দিহানের উগ্র মেজাজে তাদের সাহস কমে যায়। দুজন কনস্টেবল সহ উপস্থিত সকলেই ছাড়িয়ে আনার চেষ্টা করে তাকে। কিন্তু পাগলা ষাঁড় একবার খ্যাপে গেলে তাকে কী আর এতো সহজে দমানো সম্ভব হয়? নাক ফুলিয়ে, চোখ-মুখ লাল করে শরীরের সর্বশক্তি দিয়ে কামরুল হাসানের কলার টেনে ধরে দিহান বারবার একটা কথায় বলে যাচ্ছে,

“শুধুমাত্র তোর মতো কয়েকটা জানোয়ারের বাচ্চার জন্যই আজ পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট জনগণের কাছে ঘৃণিত। কোন পাগলের নীতি বুঝাতে আসছিস তুই আমাকে? কোন সাহসে আমার বোন জামাইকে খুনি বলিস? কত টাকা খেয়েছিস বল? বল কত টাকা খেয়ে বিক্রি করে দিয়েছিস আইনের সকল নীতি?”

কামরুল হাসানের শ্বাস বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়। তার চোখে ভীতি ফুটে ওঠে, তবে দিহানের হাতের দৃঢ়তা তাকে মুক্তি দেয় না। পূণরায় সে কামরুলের মুখের সামনে গর্জন করে ওঠে,

“তোর মতো জানোয়াররা পুলিশের নাম বদনাম করে দিয়েছে। তুই কি মনে করিস, তুই আইনের ঊর্ধ্বে? আমার বোনের জীবন নিয়ে খেলবি আর আমি চুপ করে থাকব?”

দিহানের হাতের শক্তি আরও বাড়তে থাকে। হুট করেই যেন কোনো এক অশুরের শক্তি ভর করেছে তার মাঝে। সকলেই যখন তাকে থামাতে অপরাগ
মিতালী সাহা তখন দ্রুত দিহানের দিকে এগিয়ে যান। গম্ভীর কণ্ঠে বলেন,

“মি. দিহান, এটা সমাধানের পথ নয়। আপনি যদি এমন করেন, তবে আমরাও আইনের শাসনের অধিকারী হতে পারব না। দয়া করে নিজেকে সংযত করুন।”

মিতালীর কথা শুনে দিহান খানিকটা শান্ত হয়, তবে তার রাগ এখনও চোয়ালে স্পষ্ট। সে কামরুলের কলার ছেড়ে দিয়ে পেছনে সরে আসে। মিতালী সাহা ওসি কামরুলের দিকে ফিরে বলেন,

“আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে বলছি, আপনি যদি অনুমতি না দেন, তবে আমরাও আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। তবে সেই পথে গেলে হয়তো সবাইকেই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে। আমি আশা করি, আপনি আমাদের সাহায্য করবেন।”

কামরুল হাসান কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায়। কিছুক্ষণ ভেবে তিনি বলেন,

“আপনারা দশ মিনিটের জন্য দেখা করতে পারেন, তবে কোনো ঝামেলা হলে আমি কোনো দায়ভার নেব না।”

অনুমতির কথা শুনে দৃষ্টি যেন দেহে প্রাণ ফিরে পায়। তার চোখে কৃতজ্ঞতার ছাপ ফুটে ওঠে। মিতালী সাহা তাকে বলেন,

“এসো, দৃষ্টি, এখন তোমার সাহসের পরীক্ষা। যা বলার, শান্তভাবে বলবে কেমন! ওর সামনে একদম কাঁদবেনা। কাঁদলে কিন্তু সে আরও দূর্বল হয়ে যাবে। মনে রেখো স্বামী- স্ত্রী একে অপরের শক্তি।”

দৃষ্টি মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। রক্তিমের সাথে দেখা করার জন্য সে কামরুল হাসানের সাথে থানার ভিতরে ঢোকে। এই কয় মিনিটের সাক্ষাৎ কি তার জীবনের অন্ধকার ঘোচাবে, নাকি আরও গভীরে টেনে নেবে?সে চিন্তায় ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়েই ভারী পদক্ষেপে একটু একটু করে এগিয়ে যায় কাঙ্ক্ষিত সেলের দিকে।

চলবে….