একমুঠো সুপ্ত বাসনা পর্ব-৩৩+৩৪+৩৫

0
536

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৩

–‘ম্যাম আপনি অনুগ্রহপূর্বক ১০৭ নম্বর রুমে যান। রক্ত নেওয়ার আগে আপনার রক্ত একবার পরীক্ষা করতে হবে।’
নার্সের কথায় একশ সাত নম্বর রুমের দিকে পা বাড়ায় আনজানা। আনাজ আদ্রর কাছে রয়েছে। আদ্রর অবস্থা পড়ি কি মরি! হসপিটালের স্টকে এবি পজিটিভ গ্রুপের কোনো রক্ত নেই। তাতে আনজানাকেই দিতে হচ্ছে। আদ্রর অবস্থা নাজেহাল। অবশ্য সেটা অনেক আগেই বুঝতে পেরেছে আনজানা। বারংবার তার মুখে দোয়া-দরুদ আওড়াচ্ছে। আদ্র ছেলেটাও কেমন পাগল আনজানাকে না পেয়ে পই পই করে পাগলামো বাড়িয়ে দিয়েছে। আনাজ ফোনেই বলে দিয়েছিলো তাকে অবশ করে দিতে। তাই করা হয়েছে। নতুবা এতোক্ষণ আরো তুলকালাম কান্ড বাঁধিয়ে ফেলতো বলা যায় না!
আদ্রকে না দেখে আনজানাও কেমন হাসফাস করছে। মনটা ভয়ে কুকড়ে আছে। খানিকবাদেই নার্স আসলো।

–‘ম্যাম আসুন আমার সাথে। আপনার ব্লাড ম্যাচ করেছে।’

মুখে ম্লান হাসি বজায় রেখে রক্ত দিতে যায় আনজানা। ভেতরে ভেতরে ভয় করছে তার। এই প্রথম কাউকে রক্ত দান করছে। ভয় থাকাটাই স্বাভাবিক। তবে আনাজের সামনে একদম স্বাভাবিক থাকার চেষ্টা করেছে।

–‘এই বেডে শুয়ে যান। স্যালাইন লাগানো হবে।’

–‘জ্বি’
–যাকে রক্ত দিচ্ছেন তার কে হন আপনি?
–‘ওই__ওই উনার শুভাকাঙ্ক্ষী! ‘

জ্বিভ কামড়ে ধরে আনজানা। এটা ছাড়া মুখে আর উত্তর আসে নি তখন। ভয়ের কাটা গুলো এখনও তার শরীরে এসে বিঁধছে।

–ভয় লাগছে আপনার?
–‘একটু নার্ভাস ফিল হচ্ছে’
–‘সমস্যা নেই কিছু হবে না’

—————————
আনজানার জ্ঞান ফিরতেই আনাজকে ছুটে আসতে দেখে। আনাজ এসে তার মাথায় হাত রেখে বলছে,

–‘আনজুপাখি! ঠিক আছিস তুই? ‘

–‘ হ্যা ভাইয়া। আমার কথা চিন্তা করিস না। আদ্র! কি অবস্থা তার? ‘

বড় দম ছাড়ে আনাজ। আনজানার চুলে হাত দিতে দিতে বলে,

–‘ হ্যা। তোর রক্তে বেঁচে আছে সে।’

আনজানার হাস্যজ্জ্বল মুখ চিকচিকিয়ে উঠে। মনে মনে শুকরিয়া আদায় করে। আনজানা উঠতে নিলেই আনাজ তার বাহুদ্বয় ধরে সোজাসুজি শুইয়ে দেয়।

–‘উঠে কই যাচ্ছিস? প্রেমিককে দেখতে? তা দেখবি। ও তোকেও দেখবে। এখন একটু বেড রেস্টের প্রয়োজন তোর। শুন বাসায় ঠিকঠাক মতো খাওয়া দাওয়া করবি। এখন বেশি বেশি ফ্রুটস খেতে হবে নয়তো উইক হয়ে পড়বি গট ইট? ‘

সম্মতিসূচক মাথা নাড়ায় আনজানা। আনাজ আবার গাঢ় স্বরে বলে।

–‘তোদের ভালোবাসার কাছে আমরা হার মানতে বাধ্য রে! চিন্তা করিস না। আদ্রর মা বাবার সাথে আমি কথা বলে দেখবো। আর মা বাবাকে আমিই ম্যানেজ করে ফেলবো।তুই তো এবার অনার্স ফাইনাল দিবি। তোর অন্তত রেজিস্ট্রি হয়ে থাকবে’

আনাজের কথায় মাথা ঘুরপাক খাচ্ছে আনজানার। ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে আনাজের দিকে। সিরিয়াসলি? তার ভাইয়া তাকে এসব বলবে?
কথা বলার শক্তিটুকু পাচ্ছে না আনজানা। খালি ভাবছে আদ্র তার হাবি? দুচোখে অন্ধকার দেখে আনজানা।

————————- ❀

ইয়ানা ফোনটা হাতে নিয়ে বারবার আনাজের নম্বরটা ডায়াল করছে। বারবারই বিজি পাচ্ছে। ঘটনাটা এতো জলদি ঘটেছে যে ইয়ানা বুঝে উঠতে পারেনি। মাথায় সেই এক চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে, আনজানা কাকে রক্ত দিতে চাচ্ছিলো?
ইতি মধ্যে আনাজকে বারোটা টেক্সট করে ফেলেছে। আনাজ সিন করছে না।
একবার ভাবছে মা বাবাকে ডাকবে না কি। তো একবার ভাবছে আনাজ যদি নিষেধ করে এসব তাদের না জানাতে? সাহস কুলাতে পারছে না ইয়ানা। ফোনটা হাতে নিয়ে সাগ্রহে বসে রইলো সে।
এক সময় তার কাঙ্খিত সময় এসে যায়। আনাজের নম্বারে চোখ পরতেই রিসিভ করে কানে তুলে নেয় ফোনটি।

–‘হ্যালো! আনাজ কি হয়েছে? কই আপনারা? আর আনজু কাকে রক্ত দিচ্ছে? ‘

–‘কাম ডাউন ইয়ানা। আমি বলছি। ঘাবড়ানোর কিছু নেই। ওই আসলে আনজানা একজনকে ভালোবাসে…….

আনাজের কাহিনী শুনে থ হয়ে যায় ইয়ানা। এই মুহূর্তে চোখের সামনে ভাসছে আনজানার সেদিনের বলা কথাটা। যেদিন একটা ছেলে তাকে টিজ করেছিলো। তবে, চুপ থাকাটাই শ্রেয় মনে হয় তার। এসব বলা এখন নেহাতই বোকামি! আনাজ এখন এমনি অস্থির এসব শুনলে….

–‘আচ্ছা তাই!’

–‘হ্যা, শুনো মা বাবাকে জাগিয়ে দিও না আবার। তাদের ঘুমোতে দাও। বাবা এসব জানলে প্রেসার বেড়ে যাবে।’

–‘আচ্ছা। তোমরা কখন আসবে? রাত একটা বাজতে চললো তো’

–‘হ্যা ফিরবো, ঘন্টাখানেক লাগতে পারে। তুমি শুয়ে পড়ো। ফোনটা কাছে রেখো। আমরা আসলে খুলে দিও।’

আর কিছু না বলেই ফোন রেখ দেয় আনাজ। অগত্যাই শুয়ে পড়তে হয় ইয়ানাকে। নিশুতি রাত। কিন্তু চোখ বুছতে চাইছে না একটুকুও। তাকেও কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। তার উপর এতো রাতে পাশে আনাজ না থাকায় ভয়গুলো এক সাথে হানা দিচ্ছে। আর এই ভয়ই সর্বদা কৌতূহলকে মৃত করে ফেলে! বুকের ভেতরটা দুমড়েমুচড়ে একাংশ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে এসে আছড়ে পড়লো….

চলবে,

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৪

আনজানার বাহুদ্বয় চেপে ধরে আদ্রর কাছে নিয়ে যাচ্ছে আনাজ। আদ্রকে দেখাতে। এতো রাত হয়ে গেছে তাও আদ্রর কোনো গার্ডিয়ান আসেনি। শুধু মাত্র কয়েকটা বন্ধু তার পাশে আছে। বিষয়টা ভাবতেই খটকা লাগে আনাজের। আদ্র ছেলেটা কেমন যেনো রহস্যময়।
আনজানা আনাজের কাছে পৌছুতেই আনজানা ইশারায় তাকে ছেড়ে দিতে বলে। আনাজ প্রথমে অসম্মতি দিলেও তার জোরাজুরিতে ছাড়তে বাধ্য হয়। আদ্রর মুখে অপার বিষ্ময়! এসব সে স্বপ্ন দেখছে কিনা বুঝতে পারছে না একদমই।

–‘ভাইয়া! ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, একটু বাহিরে যাবি? প্রাইভেটলি কিছু আলাপ করতে চাই’

কথা না বাড়িয়ে ইতস্তত বোধ করে আনাজ বাকি নার্স দের নিয়ে বের হয়ে যায়। আদ্রর গালে হাত রাখে আনজানা।

–‘খারাপ লাগছে?’
–‘পরোয়া করছো?’
–‘উপায় আছে এছাড়া?’
–‘নাহ খারাপ লাগছে না।’
–‘আচ্ছা, স্যালাইনটা খুলে পাগলামো করার মানে কি? ‘
–‘প্রেয়সীকে দেখার সুপ্ত বাসনা! ‘
–‘পাগল লোক!’ (হেসে ওঠে আনজানা)
–‘রক্ত দিয়েছো? ‘
–‘তো? কি করতাম? আপনি এভাবে মরে…
কথা শেষ না করতেই চুপ হয়ে যায় আনজানা। কি থেকে কি বলছিলো সে।

–‘মরে গেলে খুব কষ্ট হতো বুঝি? ‘ (আদ্র)
–‘উহু মোটেও না’
–‘তোমার চোখ বলছে তুমি মিথ্যে বলছো!’
–‘ধেত! শুনেন আমি এখন চলে যাবো। হোপ দ্যাট পাগলামো করবেন না। ‘
–‘আমার শরীরে যখন প্রেয়সীর রক্ত তখন কি আর পাগলামো করা যায়? ‘
–‘কথা তো যেভাবে বলছেন যেনো কতটাই না সুস্থ হুহ!’
হেসে ওঠে আদ্র। কি অমায়িক হাসি। পাশে থাকা গজ দাঁতটা বেরিয়ে আসে৷ সেখানে চেয়ে থাকে আনজানা। নাহ, আজ মানতে হবে শুধু মেয়েদের নয় ছেলেদেরও গজ দাঁতে অন্যরকম সুদর্শন লাগে।

আনাজ ডোর-নক করে। আনজানাকে ডাক দিতেই চলে যায় সে। আদ্রর থেকে হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে। এতোক্ষণ আদ্র তার হাতটা ধরে ছিলো। আপত্তি করে নি আনজানা। সে চায়নি আদ্র আর কষ্ট পাক। তাই কোনো রুড বিহেভ করে নি।
আনাজের কাছে যেতেই আনাজ তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে।
-‘নিজেরও একটু খেয়াল রাখতে শেখ! তুই রক্তদাত্রী। শরীর প্রচুর উইক থাকবে। এখন একটুতেই পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। বাসায় যেয়ে বেড থেকে তিনদিন নড়বি না, গট ইট? ‘

–‘হু’

আনজানাকে ধরে ধরে নিচে গাড়িতে এসে বসায় আনাজ। ভালো মতো সিটবেল্টটা পড়ে ড্রাইভিং স্টার্ট করে। আনজানা তার হাতে থাকা ঘড়িটার দিকে পরখ করতেই দেখে দুটো বাজতে চলেছে।
আনাজের দিকে তাকায় সে। তার ভাইটা কতো কষ্ট করছে তার জন্য। খারাপ লাগে আনজানার।

–‘ভাইয়া তুই আপসেট? ‘

–‘হঠাৎ এমন প্রশ্ন করলি যে?’ (ড্রাইভিং করতে করতে)

–‘উহু বলোই না!’

–‘নাহ, তা হতে যাবে কেন? ‘

–‘ওইযে রক্ত দিলাম!’

রেসপন্স করলো না আনাজ। আনজানাও কথা বাড়ায়নি আর।
একসময় বাসায় পৌছে যায় তারা। কিছু বাদেই ইয়ানা দরজাটা খুলে দেয়। আনজানার রুম পর্যন্ত পৌছে দেয় আনাজ। তারপর নিজের রুমে চলে যায়। ইয়ানা কিছু জিজ্ঞেস করতে চাইলেও আনাজের জন্য তা পরেনি।
আনাজ ফ্রেশ হতে যায়। শুয়ে পড়ে ইয়ানা। আনাজ কিছু বাদে এসেই তার পাশে শুয়ে পড়ে। সেদিকে পাশ ফিরে ইয়ানা।

–‘এতো রাত হলো যে? ‘

–‘হুম, ওই কথা টথা বললো তো তাই’

–‘আনজু আদ্রকে সত্যি ভালোবাসে? ‘

–‘তাই তো দেখছি। একবার তো আমাদের অন্তত আমাকে বলা দরকার ছিলো তার।’

–‘কি করবেন এখন? ‘

আনাজের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে। চশমাটা খুলে রেখে সটান হয়ে শোয়। গালে থাকা চাপ দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে বলে,

-‘ভাবছি বিয়ে করিয়ে দেই।’

–‘হোয়াট? জানা নেই শুনা নেই একটা অচেনা ছেলে হুট করে এমন পাগলামি শুরু করলো আর আপনারও টনক নড়লো?’

–‘আনজানাও ওকে ভালোবাসে, এটা বুঝতে হবে তোমাকে’

–‘রাখেন আপনার বুঝাবুঝি। তা ছেলেটা আবার সাইকো টাইকো নাকি? ‘

–‘দেখতে শুনতে কথা বার্তায় তো ভালোই। কিন্তু ছেলেটার ড্রিংক করা দেখে থার্ড ক্লাস মনে হলো’

–‘সে কি! ছেলেটার আবার নেশাও আছে? ‘

–‘ধরতে পারছি না। তার গায়ে দীর্ঘদিন ড্রাগস নিলে যে সিমটম পাওয়া যায়, তা পাওয়া যায় নি৷ আমার মনে হয় আনজুর জন্যই ও ড্রাগস নিয়েছে ‘

–‘আপনার কথা শুনে তো মনে হচ্ছে ছেলেটা একটা ফেরেশতা! যাকগে আনজানা ঠিক ছিলো তো? ‘

–‘হ্যা ঠিক ছিলো। তুমি ঘুমিয়ে যেতে পারো। অলরেডি আড়াইটা বেজে গেছে। ‘

ল্যাম্পটা অফ করে দেয় আনাজ। সেলফোনটা ভাইব্রেট করে দেয়। ইয়ানার দিকে তাকাতেই দেখে সে ঘুমে তলিয়ে! তার এলোমেলো চুল ওয়ালা কপালটায় একটা চুমু একে দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।

চলবে,

#একমুঠো_সুপ্ত_বাসনা
#সুপ্তি_আনাম
পর্বঃ ৩৫

চোখের পলকে নিমিষেই কেটে গিয়েছে সাত সাতটি দিন। আনজানাকে সারাদিন ব্যাপক প্রাইভেসির ভেতরে থাকতে হয়। তার ব্যাপারটা বাসার শিল্পীবানু পর্যন্ত জেনে গিয়েছে। কথাটা শোনার পর আনাজের বাবা আনুজ (নাম চেঞ্জড্) ঠিক থাকতে পারেননি। একই কথা আয়নারও। তাদের মতে এতো কিছু হয়ে গেলো তারা একবার জানানোর প্রয়োজনও বোধ করলো না? আনুজ তিন দিন কথাই বলতে পারেননি আনাজের সাথে। পরে সবার জোড়াজুড়িতে অভিমান কেটেছে। এখন আনজানাকে পদে পদে দেখে রাখা হচ্ছে। সিকিউরিটি গার্ড চেঞ্জ করা হয়েছে। আদ্রর ব্যাপারে এখনো কিছু বলতে পারেনি আনাজ। নতুবা আনুজ নিশ্চিত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলবেন। এই কয়দিন ভার্সিটিতেও ক্লাসগুলো মিস্ করেছে আনজানা। রক্ত দেওয়ার পর ভীষণ রকমের দূর্বল হয়ে পড়েছিলো। তাই মা আর যেতে দেননি। আদ্ররও কোনো খবর নেই কেনো জানি। ছেলেটা আর পাগলামো করে না? নাকি আনজানা তার খোঁজ নিচ্ছেনা বলেই জানতে পারছে না? বুঝতে পরছে না আনজানা। বিকালের সূর্যটা ডুবডুব। একটু একটু আলোর বিকিরণ চারপাশে। সময়টা বেশ লাগছে আনজানার কাছে। ব্যালকোনির ডিভানের পাশে বসে কফি এনজয় করছে। কানে হেডফোনে চালিয়ে দিয়েছে সফ্ট একটা গান। মাঝে মাঝে গুনগুন করে সুর মিলাচ্ছে। হুট করে কাউকে পেছনে উপলব্ধি করতেই পিছে তাকায়। দেখলো তার মা একবার পরখ করে চলে গিয়েছে। ‘স্ট্রেঞ্জ! আমাকে নিয়ে এতো মাতামাতি করার কি আছে? এতো সিকিউর করে রাখলে মুভ অন করবো কিভাবে? ’ মনে মনে বলে আনজানা। মনে মনে ভাবছে, ভাবিকে নিয়ে কোথাও বেড়াতে গেলে কেমন হয়?
কথাটা মনে আসতেই হেডফোনটা খুলে চট করে উঠে পড়ে। ইয়ানাকে বলা দরকার। ইয়ানার রুমের কাছে যেয়ে দাড়িয়ে যায়। গেটটা ভিড়ানো। মনে হলো ইয়ানা কারো সাথে কথা বলছে। আর ডিস্টার্ব না করে ব্যালকোনিতে চলে যায় আনজানা।

———————-

এতোদিন পর সুহানা ফোন দেয়ায় জমিয়ে আড্ডা দিচ্ছে ইয়ানা। হাসাহাসি হচ্ছে তাদের মাঝে। ইতোমধ্যে বাসার সবার সাথে কথা বলে ফেলেছে ইয়ানা। বেশ প্রফুল্লচিত্তে হাত নাড়িয়ে নাড়িয়ে কথা বলছে।

–‘ তা ভালোই তো দিনকাল কাটছে তোর হুম?’
–‘হ্যা তা কাটছে। কিছুদিন আগে একটু ঝামেলা হয়েছিলো..’ (ইয়ানা)
–‘তাই নাকি। কি নিয়ে রে? ‘ (সুহানা)
–‘ওই আনজুকে নিয়ে। তেমন কিছু না বাদদে’
বিষয়টিতে আর যেতে চাইলো না ইয়ানা।

–‘তা সুসংবাদ কবে পাচ্ছি? ‘ (সুহানা)

–‘সুসংবাদ মানে? কিসের সুসংবাদ? (অবাকের সুরে)

–‘ এইযে নটাঙ্কি কা পাঠশালা আবার শুরু হয়ে গেলো। বলি আমাদের ইচ্ছাগুলোও তো একটু দেখবি নাকি? ‘

–‘শুন একদম ফাও কথা বলবি না। কি বোঝাতে চাচ্ছিস ঠিক করে বল না!’

–‘মানে ওই বলছিলাম আর কি এ জনমে আমি খালামণি টালামণি হতে পারবো নাকি….’

–‘বড্ড পেকে গেছিস না তুই? চুপচাপ পড়াশোনায় কনসেনট্রেশান কর!’

–‘শুরু হয়ে গেলো আফার সাতই মার্চের ভাষণ! বলি তুই গিনেস বুকে যেয়ে স্বর্ণাক্ষরে নাম লিখালেই তো পারিস! আচ্ছা বাদদে, রাখছি। আর জামাই পায়ে তো ভুলেই গেছিস। আমাদের ছায়াও মাড়াস না। মাঝে মাঝে একটু দেখা করতে আসলে কি হয়?’

সুহানার কথায় মনটা কেমন করে উঠে ইয়ানার।

–‘তোদের আবার ভোলা যায় পাগল! মিসড্ ইউ অল। যাবো কয়েকদিনের মধ্যেই যাবো।’

–‘হু ঘটা করে যেনো ডাকতে না হয়। জিজুকে নিয়ো আসবি। জিজুর সাথে মজা করাটাও বাকি আছে ধুর! আচ্ছা ভালো থাকিস।’

–‘তোরাও খেয়াল রাখবি’
হাসতে হাসতে ফোন কেটে দেয় ইয়ানা। সুহানার সাথে কথা বললে মনটা ভালো হয়ে যায়। রসিকতার দিক থেকে মেয়েটা পাক্কা শেয়ানা!

ফোনটা চার্জে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ইয়ানা। ইয়ানাকে দেখা মাত্রই ছুটে আসে আনজানা।

—‘ভাবিইইইই! বলছিলাম যে চলো না কোথাও ঘরতে যাই?’

–‘এখন বলছো? বেলাই তো ফুরিয়ে গেলো!’

–‘তাহলে যাবা না? ‘
–‘তোমার কিছু নিডি নিতে আছে? ‘
–‘ওই ধরে নাও’ (আনজানা)

দুজনেই আয়নার দিকে তাকায় আয়নাও তাদের মুখের দিকে চেয়ে আছে। মুখে গম্ভীর গম্ভীর একটা ভাব বিদ্যমান।

–‘সপ্তাহ না যেতেই আবার বেড়িয়ে পরবি? ‘
আনজানার দিকে তাকাতেই মুড অফ হয়ে যায় তার।

–‘মা সেদিনের জন্য তুমি কি আর কোথাও যেতে দিবে না? আর আমার সাথে তো ভাবিও আছে তাই না? ‘

আনজানার প্রচন্ড জোড়াজুড়িতে যেতে বলে আয়না। উৎফুল্লতায় ঘিরে ধরে আনজানাকে। ফটাফট যেয়ে রেডি হতে নেয় সে। ইয়ানাও বাধ্য হয়ে রেডি হতে যায়। রেডি হয়ে আনজানার রুমে যেতে দেখে মুখে লিপস্টিক পাউট করছে। ইয়ানাকে দেখা মাত্র ছুটে চলে যায় আর দেরি না করে। খানিক বাদেই একটা সিএনজি নিয়ে বেড় হয়ে পরে তারা। গাড়ি নেয়নি আর। কিছুক্ষণ পরেই একটা মলের সামনে সিএনজি এসে দাড়ায়। আনজানা আর ইয়ানা নেমে পড়ে। সামনে এগোনোর উদ্দেশ্যে ইয়ানা পা বাড়াতেই এক ভদ্রমহিলার সাথে চোখাচোখি হয়। মহিলাটা হালকা মুখ ভ্যাঙচানোর মতো ভঙ্গি করে চলে যায়। মুখটা কেমন চেনাচেনা লাগে ইয়ানার কাছে। যেনো অনেকদিন আগে তা দেখেছে। কিন্তু মুখ ভাঙানোর কারণটি ঠিক বোধগম্য হলো না তার। মনে মনে ভাবতে ভাবতে সামনে পা বাড়ায়।

চলবে,