এক প্রহর ভালোবাসার পর্ব-১২

0
349

#এক_প্রহর_ভালোবাসার
#নুসাইবা_রেহমান_আদর
#দ্বাদশ_পর্ব

রান্না শেষ করে সানা নিজের রুম থেকে সব জিনিস পত্র সাফোয়ানের রুমে শিফট করলো। লাল কালো মিশ্রনের একটি শাড়ি পরে নিলো। আজ অনেকদিন পর সানা শাড়ি পরেছে। সেই বিয়েরদিন পরেছিলো আর আজ। জিবন টা মানুষের কখন কোন যায়গায় যায় কেউ বলতে পারেনা। আয়নার দিকে তাকিয়ে একবার দেখে নিলো নিজেকে। নাহ তাকে এখন একদম সিকদার বাড়ির পাক্কা গৃহিনী লাগছে। কেউ বলতে পারবে কি হচ্ছে তাদের সাথে।

গাড়ির মধ্যে নিশ্চুপ আর বাকরুদ্ধ হয়ে বসে আছে রাফিয়া। আজ ও সাইফ তাকে অপমান করতে ভুলে নাই। তার শ্যামবর্ন হওয়া কি অপরাধ যখন তখন সাইফ ভাইয়া তাকে কথা শুনাবে। মনে মনে রাফিয়া বিব্রত। আজ তাকে সাফোয়ান ভাইয়ের সামনেও এভাবে অপমান না করলেও পারতো। সাইফ আয়নার মাধ্যমে আড়চোখে দেখে যাচ্ছে রাফিয়া কি করে। রাফিয়া নিজের মোবাইলে মন দিয়ে কিছু একটা টাইপ করছে। রাফিয়া ঠিক করেছে তার পাশে যে সাইফ নামক এক ব্যাক্তি আছে তা সে কখোনো পাত্তা দিবেনা। এই লোকের থাকা না থাকা সমান।

– কি এমন করছিস মোবাইলের ভিতর ঢুকে যে আশেপাশে বড় দুইজন ভাই বসে আছে দেখতে পাচ্ছিস না?

সাইফের গলার আওয়াজে মাথা তুলে তাদের দিকে অবাক চোখে তাকালো রাফিয়া। সে যাই করুক তা তে কার কি।

– সাইফ আসা থেকে তোকে দেখে যাচ্ছি তুই রাফুর পিছে এভাবে লেগে আছিস কেন?

– আরে ভাইয়া তুমি ওরে চিনো না, তুমি তো ভাবিকেও চিনতে না যে? ভাবি আমাদের ফুপাতো বোন। অথচ ছোট থেকে ভাবিকে আর এই চুন্নিকে আমি দেখে আসছি।

– তা যাইহোক ও এখন তোর ভড় ভাইয়ের শালী। তাই সুন্দর ভাবে কথা বলবি।

– দূর ভাই একেতো ফুপাতো ছোট বোন এখন তো বিয়াইন। ডাবোল রাস্তা পেলাম এরে জ্বালানোর। যাইহোক তুমি কিছু বলবে না।

দুই ভাই ধীরে ধীরে কথা বলছে যা তে তাদের কথোপকথন রাফিয়ার কানে না যায়। রাফিয়া রক ভ্রু কুচকে বুঝার চেষ্টা করছে তারা কি বলছে এতোক্ষন ধরে।

– আমার ফোনে আমি যা ইচ্ছা করি আপনার কি সমস্যা সাইফ ভাই?

– এইটুকু মেয়ে আবার মুখে মুখে তর্ক করে বেয়াদব।

সাইফের ঝাড়ি খেয়ে চুপসে যায় রাফিয়া। মুখ থেকে আর কথা বের করতে পারলো না। দুলাভাইর সামনে এভাবে ধমক দেওয়ায় আরো বেশি কষ্ট লাগছে তার।এইসব কাহিনীর মধ্যে তারা বাড়ি পৌছে যায়। কলিংবেল দিতেই রেহানা এসে দরজা খুলে দেয়। সাইফ ঘরে ঢুকতেই সানাকে ডাকাডাকি শুরু করে দেয়। এভাবে সাইফের ডাক শুনে তারাহুরো করে দৌড়ে আসতে গিয়ে সিড়ি থেকে পা ফসকে পরে যায়। এভাবে পরায় সানার পা মচকে যায়,ও কোমড়ে ব্যাথা পায় অনেকম দাতে দাত চেপে ব্যাথা হজম করার চেষ্টা করছে সে। আকস্মিক এইরকম হওয়ায় সবাই কি রিয়েক্ট করবে ভুলে যায়। সাইফ জলদি দৌড়ে সানার কাছে যায়।

– ব্যাথা পাওনাই তো পিচ্চি ভাবি?

– না ভাইয়া আমি একদম ঠিক আছি।

সাফোয়ান,রেহানা,রাফিয়া ও চলে আসে তাদের কাছে।

– ব্যাথা যদি নাই পাও তাহলে উঠে দাড়াচ্ছো না কেনো তুমি?

সাফোয়ানের কথায় সানা নিজেকে ঠিক প্রমান করতে উঠে দাড়াতে চায়।দাড়ানোর চেষ্টা করতে গিয়ে উল্টো আরো ব্যাথা পায় সে। সানার দিকে রাগি চোখে তাকিয়ে সাফোয়ান তাকে কোলে তুলে নেয়। একেতো সানা কোমড়ে অনেকটা চোট পেয়েছে সেখানে শক্ত করে ধরায় আরো বেশি ব্যাথা পায় সে। ব্যাথায় চেচিয়ে উঠে সে।

– আমাকে নামাই দেন তোলা লাগবে না আপনার।

সানার চোখ দিয়ে পানি গরিয়ে পরছে। সাফোয়ান সেদিকে তাকায়। একটা মানুষ নিজে এতোটা ব্যাথা পাওয়া সত্যেও তা কেনো লুকাচ্ছে।

– তুমি নাকি ঠিক আছো ব্যাথা পাও নাই। এখন এইভাবে চিল্লাচ্ছো কেন বা কান্নাই করছো কেন?
– ভাই তুমি বোকার মতো এখানে দাঁড়িয়ে কথাই বলবে না কি ভাবিকে রুমে নিয়ে যাবে। তার পা দেখছো ফুলে কি হয়েছে জলদি ডক্টর নিয়ে আসতে হবে তো।

রাফিয়া কি বলবে সে আসা মাত্রই বোনের আবার ও এক্সিডেন্ট হয়ে গেলো। বোনের কষ্ট দেখে রাফিয়ার চোখেও পানি চলে আসলো।সানাও এতোক্ষন ব্যাথার জন্য খেয়াল করে নাই যে রাফিয়া আছে এখানে। সে তো ব্যাথায় ছটফট করছে। সাফোয়ান দ্রুত তাকে নিয়ে নিজেদের রুমে গেলো তার পিছন পিছন বাকি সবাই। সানাকে খাটে শুইয়ে দিলো।

– রেহানা আপা দুটো হট ব্যাগে গরম পানি ভরে জলদি নিয়ে আসো। রেহান তুমি দেখো সাইডের ড্রয়ারে মুভ আছে অইটা দেও। সাইফ আমার ফোনে দেখ ডক্টর নামে নাম্বার সেভ আছে তাকে ফোন দে।

– আরে ভাইয়া এই ডাক্টার কল দিয়েছে কিছু হবে না। দাড়াও আমার ফ্রেন্ড কে কল দেই সে অর্থপেডিক।

সানা সাফোয়ানের মুখে রাফিয়ার নাম শুনে অবাক হয়ে যায়। সাইডে দেখে তার বোন। এতোগুলা দিন পর নিজের বড় বোন কে দেখতে পায় সে।

– আপু।

সানার ডাক শুনে রাফিয়া তাড়াতাড়ি বোনের কাছে আসে। সাফোয়ান কে অয়েন্টমেন্ট দিয়ে, সানার অন্যপাশে গিয়ে বসে৷ বোন কে দেখা মাত্রই জরিয়ে ধরে কেদে দেয় সানা। এতোক্ষন ধরে নিজেকে সামলে রাখলেও তার বড় বোন কে কাছে পাওয়া মাত্রই আর নিজেকে সামলাতে পারে না। বাচ্চাদের মতো ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদছে আর বলছে সে অনেক ব্যাথা পেয়েছে। হয়তো বড় বোনের সামনে সবাই পিচ্ছি হয়ে যায়। সাফোয়ান সানার পায়ে মলম লাগাতে গেলে সানা বলে।

– খবরদার আমার পায়ে হাত দিবেন না৷ আমি মলম লাগাবো না ব্যাথা করছে৷

– এই মেয়ে তখন না বললে ব্যাথা করছে না এখন আবার এসব বলো কেন?

– আপু তুই তাকে বল আমার পায়ে হাত না দিতে।

– শান্ত হ সানা কিচ্ছু হবে না। অয়েন্টমেন্ট না লাগালে আরো বেশি ব্যাথা করবে। ডক্তার আসতে আসতে অনেক সময় লাগবে তো। ততোক্ষন একটু ভাইয়া মলম লাগাক।

– সাইফ তুই যা তোর রুমে ফ্রেশ হয়ে আয় তোর ফ্রেন্ড আসা অব্দি। এখন তো রাফিয়া আছে এখাবে সমস্যা নাই।

সাইফ ভাইয়ের কথা মতো চলে যায়। অনেকসময় জার্নি করে আসায় তার ও অবস্থা টাইট। সানা একটু শান্ত হয়ে রাফিয়া কে শক্ত করে জরিয়ে ধরে বসে৷ মনে হয় ছেড়ে দিলে রাফিয়া পালিয়ে যাবে। সাফোয়ান ধীরে ধীরে পায়ে মলম লাগাচ্ছে। খেয়াল রাখছে যাতে সানা বেশি ব্যাথা না পায়৷ সানার মাথায় রাফিয়া হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তখন রেহানা ও ওয়াটার ব্যাগ নিয়ে আসে। এক টা রাফিয়াকে দেয় আরেকটা সাফোয়ান কে। রাফিয়ে র কাধে সানার মাথা। রাফিয়া সানার কোমড়ে ছ্যাকা দিয়ে দিচ্ছে। গরম পানির ছ্যাকা দিলে নাকি ব্যাথা অনেক টা কমে। আর সাফোয়ান সানার পায়ে দিচ্ছে। সানার অনেক কষ্ট হচ্ছে। প্রায় ঘন্টাখানিক পর ডাক্তার আদিল এসে সানার চেকাপ করে।

– মনে হচ্ছে পা ফ্র‍্যাকচার হইছে এক্সরে করানো লাগবে ভাইয়া। এমনিতেও অনেক রাত হয়ে গেছে আজ তো পারবেন না। কাল সকালে হসপিটালে নিয়ে আসুন ওনাকে।

– কিন্তু এতো ব্যাথা নিয়ে সারারাত ও কিভাবে কাটাবে?

– চিন্তা কইরেন না আমি পেইন কিলার দিচ্ছি এটা খাইয়ে দিন আর ঘুমের ইঞ্জেকশন ও ফিয়ে দিচ্ছি। বাকিটা আল্লাহ ভরসা।

সাফোয়ান খুব টেনশনে আছে সানাকে নিয়ে। আদিল কে আজ আর যেতে দিলো না সে৷

– আদিল আজ বরং আমার বাসায় থেকে যাও কাল একসাথে হসপিটাল যাবো। এই সাইফ ওকে নিয়ে যা ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়। তোর ভাবি আজ সব খাবার নিজের হাতে রান্না করেছে তোর জন্য।

– জ্বী আচ্ছা ভাইয়া।

সাইফরা চলে যায়। সাফোয়ান সানার পাশে গিয়ে বসে। গভির ঘুমে আছে সানা। রাফিয়া তখন ও তার পাশে বসা।

– রাফিয়া তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসো। সাইফার রুম তো চিনোই সেখানে গিয়ে বিশ্রাম নেও যাও।

– সমস্যা নাই ভাইয়া। আমি ঠিক আছি।

– যাও তুমি আমি আছি সানার পাশে এখন৷

রাফিয়া ও উঠে চলে যায় সে জানে সাফোয়ান সানার সম্পূর্ণ খেয়াল রাখবে৷

খাবার টেবিলে সবাই বসে আছে। রাফিয়া আর সাইফাও চলে আসলো টেবিলে। সাইফা বাসায় ছিলো না তাই জানেনা যে সানার কথা।কিন্তু মিসেস লিমা আর শিহাব শুনেও যায় নি দেখতে।

– আজ আমার ছেলে এতোদিন পর আসলো আর আজ ই পা ভেঙ্গে বিছানায় পরতে হলো মহারানীর।

মায়ের কথায় তিন ভাই বোন বিরক্ত হয়ে যায়। তার মুখে সানার জন্য ভালো কথা তারা কখোনো শুনতেই পারে নাই।

.#চলবে..?