এক ফালি প্রণয় পর্ব-০৪

0
13

#এক_ফালি_প্রণয়|৪|
#শার্লিন_হাসান

“প্রেম ভালোবাসার খেলা খেলছি না যে পস্তাতে হবে একদিন।”

“মানে?”

পূর্ণর কথায় তূর্ণ শুধায়। তখন পূর্ণ হেসে বলে, “সবই ঠিক হবে একদিন। যদি উপরওয়ালা চায়। ওনার ইশারায় হয়ত ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড আমার বউ ও হতে পারে।”

“ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড থাকলে তো তোর বউ হবে।”

“হয়েছে আর সাধু সাজতে হবে না।”

“এই তুই আমার গফের দিকে নজর দিবি কেন?”

“না,না আমি ওরকম নাকী? আমার তো বয়ে গেছে এসব…..”

কথাটা মাঝপথে থামিয়ে রোদেলার দিকে তাকায় পূর্ণ। মেয়েটা চুপচাপ খাচ্ছে। বাকীরা কেউ কোন কথা বলছে না। সবাই যে যার মতো নাস্তা করে নিজেদের গন্তব্য চলে যায়।

রোদলা তার ক্লাসে মনোযোগ দেয়। পাশে তার ফ্রেন্ড স্মৃতি বসে আছে। একই ভার্সিটিতে রোদের চাচ্চুর মেয়েও পড়াশোনা করে। রোদের সাথে মোটামুটি ভালোই সম্পর্ক তার। মাঝেমধ্যে যাওয়ার জন্য বলে। আজকের মতো ক্লাস শেষ করে রোদ বের হয়ে গেটের কাছে আসে। তিশার লাইব্রেরিতে কাজ আছে তাই ফিরতে লেট হবে। রোদকে দেখে তার কাজিন রুশা এগিয়ে আসে। তখন রুশা বলে, “হেই তাহসিনা কেমন আছো?”

নিজের নামটা হুট করে কারোর মুখে শুনে চমকায় রোদ। তাহসিনা বলে তার বাবা-মা ডাকতো। পুরো নাম তাহসিনা খানম রোদেলা। রোদকে আলতো করে ধীে রুশা বলে, “আর ইউ ওকে?”

“হ্যাঁ। আসলে হুট করে এই নামটায় ডাক বুঝে উঠতে পারিনি।”

“তোমায় তো আমি প্রায় এই নামে ডাকি বনু।”

“হ্যাঁ তাও ঠিক।”

“চলো না আজকে আমাদের বাড়ীতে।”

“না বনু যাবো না।”

“বাপি তোমার কথা প্রায় বলে।”

“চাচ্চু কেমন আছে?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো।”

তখন রুশার একমাত্র ভাই রাফি আসে। রোদেলাকে দেখে সে হাসে। সৌজন্যেতার খাতিরে রাফি বলে, “তাহসিনা কেমন আছো?”

“ভালো।”

রোদ জবাব দেয়। তবে ফিরতি জিজ্ঞেস করেনি সে। রাফিকে তার পছন্দ না। সেই তো সম্পত্তির জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। রোদ তাঁদেরকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য তাড়া দিয়ে বলে, “তিশা ওয়েট করছে আমি আসছি।”

“আরে দাঁড়িাও তোমার নাম্বারটা দিয়ে যাও। তাহসিনা!”

রাফির কথায় রোদ দাঁড়ায়। কী করে কথা কাটাবে সে ভেবে পাচ্ছে না। তখন রুশা বলে, “দিয়ে যাও বনু।”

“আসলে বনু আমার সীমে প্রব্লেম। সীমটা তূর্ণ ভাইকে দিয়েছি। সেটা এক্সচেঞ্জ করে নতুন সীম দিবে।”

“তূর্ণ কে সীম দিতে গেলে কেন তাহসিনা?”

রাফির মশকারা মার্কা কথায় রাগ হয় রোদের। তেজ দেখিয়ে বলে, “তোহ কাকে দিবো? আমার সীম আমার দরকারে তাকে দিয়েছি। কেন দিয়েছি সেটা কাউকে বলতে বাধ্য নই আমি।
থেমে,
আসি।”

কথাটা বলে রোদ চলে আসে। তখন রাফি রুশার দিকে তাকিয়ে বলে, “ঠিক কাকীমার মতো তেজ ওর।”

“চুপ থাকবি তুই?”

“এই মেয়েটার এতো ভাব কিসের?”

“তোর সমস্যা টা কী বল?”

“আরে সমস্যা নেই। তবে তাহসিনা যথেষ্ট সুন্দরী। নজর কারা মতো। কে জানে একে কে নিয়ে যায়। পূর্ণ তো আছেই একটা। নিশ্চয়ই ওই হা’রামি ওকে বিয়ে করে সম্পত্তি নিয়ে যাবে।”

“তাহলে তুই লাইন লাগা।”

“ও ইমপ্রেস হবে না রে বোইন।”

“চাইলে হেল্প করতে পারি।”

“তাহলে তাই হোক। এমনিতে পূর্ণ এলাকার মেয়র এটাই আমার পছন্দ না। খুব বেশী ভাব নিয়ে চলাফেরা। মানুষকে মানুষই মনে করে না।”

“আমি গেলাম। তুই গেলে আয় তো!”

রুশা রাফিকে পাত্তা না দিয়ে তাঁদের বাড়ীতে চলে যায়। খান বাড়ী তাদের।রুশার বাবার তেমন প্রোপার্টি ছিলো না। বলতে তার দাদুর ওতো প্রোপার্টি ছিলো না। কিন্তু তাহসিনার বাবা নিজের বিজন্যাস দিয়ে প্রচুর প্রোপার্টি অর্জন করে। যেটায় নজর পরে তারই আপন ভাইয়ার। তাহসিনার বাবাকে দুনিয়া থেকে সরানোর পরিকল্পনা আগে থেকে করলেও তার বাস্তব হতে,হতে প্রোপার্টির উত্তরাধিকারী চলেই আসে। পারলে রোদলাকে মে”রে ফেলা যেতো কিন্তু প্রোপার্টি যদি গভার্মেন্টের কাছে চলে যায়।

খানম মহলের বিশাল সুইমিং পুলের পাশের সোফায় বসে স্মোক করছে রাফি। উন্মুক্ত, জিম করা ফর্সা বডি সূর্যের আলোয় চিকচিক করছে।
নজর তার ফোনে সীমাবদ্ধ। অনেকদিন পর তাহসিনা খানমের সাথে তার দেখা। মেয়েটাকে সেই কবে দেখেছিলো মনেও পড়ছে না। ছোট্ট তাহসিনার একটা ছবি রাফি দেখছে। তখন তা আম্মু সুজানা আসতে ফোনটা অফ করে স্মোকিংয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে রাফি। ছেলের পাশে বসতে,বসতে সুজানা বলেন, “বাড়ীর মালিকানা ও তাহসিনার। দুইদিন পর বিয়ে করবে। ধরো বিয়েটা কোন এমপি বা ক্ষমতাবান লোককে করলো তখন তো আমাদের কপালে জেলের ভাত ছাড়া কিছুই জুটবে না। সবচেয়ে বড় কথা এতো সুন্দর সাজানো গোছানো বাড়ীটা থেকেও গাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া হবে।”

“তোহ?”

রাফি ব্রু কুঁচকায়। তখন সুজানা কপাট রাগ দেখিয়ে বলে, “রাফি তুমি দেখতে মাশাল্লাহ। এক কাজ করো।”

“কী কাজ?”

“তাহসিনাকে বিয়ে করো।”

“প্রোপার্টির লোভে?”

“ওটা পেলে একে ছেড়ে দিলেই হবে।”

“কিন্তু মম আমার অলরেডি একটা গফ আছে।”

“সেটাকে ছেড়ে দাও।”

“দেখা যাক।”

*********

তূর্ণ বিকেলে বাড়ী ফেরার পথে রাস্তায় ফুলের দেখা পায়। কী মনে হতে ফুলের মালা,চুড়ি,কয়েকটা ফুলের সমন্বয়ে একটা তোড়া নেয়। সেই সাথে কিছু চকলেটস নিয়ে গিফ্ট আকারে সাজায়। সেটা গাড়ীর সীটে রেখে ড্রাইভিং করে শিকদার বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয় তূর্ণ। গাড়ী থেকে নেমে ভেতরে আসতে দেখে লিভিং রুম পুরো ফাঁকা। পূর্ণ হয়ত আসেনি এখনো। তূর্ণ দ্রুত পায়ে উপরে যায়। সোজা রোদলার রুমে গিয়ে নক করে। তখন রোদেলা ঘুম,ঘুম চোখে দরজা খোলে। তূর্ণ তার হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে বলে, “এগুলো তোমার জন্য।”

“কী এটা?”

“ভেতরে নিয়ে দেখো। অন্য কিছু ভেবো না ভাই হিসাবে দিলাম।”

মাথা নাড়ায় রোদ। তূর্ণর দেওয়া ব্যাগটা নিয়ে ভেতরে আসে। গিফ্ট পেপারে মোড়ানো বক্সটা খোলতে দেখতে পায় চকলেটের সমাহার সাথে ফুলগুলো। রোদের ভালো লাগে ফুলগুলো। এমনিতেও তার ফুল অনেক পছন্দের। তারউপর হুট করে এভাবে কেউ দিলো।

রোদ ফুলগুলো নিয়ে পিকচার তোলে। স্মেল নেয়, খুব যত্ন সহকারে সেগুলো রেখে দেয়।

সন্ধ্যায় তারা সবাই নিচে আসে। তূর্ণ,শূন্য সবাই আছে। নেই শুধু পূর্ণ। সে তার রুমে কাজে ব্যস্ত নয়ত বা ঘুমাচ্ছে। তখন সাইখা ইসলাম এসে রোদের কাছে কফির মগটা দিয়ে বলে, “পূর্ণর কফিটা দিয়ে আসো।”

রোদ তার মামীর কথার উপর কথা বলার সাহস পায়নি। তবে তার যাওয়ার একটুও ইচ্ছে নেই। তূ্রণর দিকে নজর যেতে দেখে সে বসে,বসে হাসছে। রোদ বুঝতে পারেনা। তার অবস্থা দেখে হেঁসে মজা নিচ্ছে নাকী অন্য কিছু? বিরক্তি নিয়ে পূর্ণর রুমে প্রবেশ করে রোদ। তখন সবে শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছে পূর্ণ। রোদকে দেখে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে পূর্ণ। রোদ ঘুরে বলে, “চিন্তা করবেন না আমি কিছু দেখিনি।”

রোদের কথায় পূর্ণ চোয়াল শক্ত করে নিয়ে বলে, “তুমি এখন এখানে কেন?”

“কফি দিতে এসেছি।”

“আমি নিজে গিয়ে খেতে পারতাম। তোমায় ওতো মাথা ঘামাতে বলা হয়নি।”

“মামী পাঠিয়েছে।”

“তুমি পারমিশন নিয়ে রুমে এসেছো তো?”

“কিসের পারমিশন? আমার দরকারে আসলো নাহয় পারমিশন নিতাম। আপনাকে হেল্প করার জন্যই এসেছি।”

“আসছে আমার হেল্প করতে।”

“লজ্জা করেনা এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঝগড়া করছেন?”

“আমি মেয়ে নাকী যে লজ্জা করবে?”

“ছিঃ!”

“এই তুমি কিসের ছিঃ, ছিঃ করছো? এখানে ছিঃ এর কিছুই হয়নি।”

“আপনি সরুন আমি মগ রাখবো।”

“রেখে যাও আমার দিকে তাকাতে হবে না।”

রোদ কোনরকম মগটা রাখে। না চাইতেও পূর্ণর দিকে দৃষ্টি যায় তার। তবে খেয়াল করেনা। পূর্ণ তখন টিশার্ট পড়ে তেরী। সে তো শুধু উন্মুক্ত গায়ে রুমে এসেছে তাতেই রোদেলা সে কী লজ্জা। ভাগ্যিস তোয়াল পড়ে আসেনি। পূর্ণ রোদেলার দিকে একনজর তাকিয়ে কফির মগ নিয়ে নেয়।

রোদ প্রস্থান করতে পূর্ণ কফিটা শেষ করে বেলকনিতে যায়। তার পাশের বেলকনি টা রোদের। আজকাল কেন জানি রোদ তার সব ভাবনায়,কাজেকর্মে চলে আসছে। রোদ নামটাই চলে আসছে তার কাছে। কিন্তু সে তো জানে রেদ তূর্ণর ভবিষ্যত বউ। আর কিছু মিস্টেক গেলেও এটা পূর্ণ পুরো শিওর। তাদের মিল,কথা বলা,আচার আচরণে বুঝা যায় তারা দু’জন প্রেম করে।। পূর্ণ সিদ্ধান্ত নেয় ভাইয়ের বউ রোদের সাথে আর মিস বিহেভ করবে না। একটু ভ্দ্র সভ্যদের মতো আচরণ করবে।

#চলবে