এক ফালি প্রণয় পর্ব-০৬

0
7

#এক_ফালি_প্রণয়|৬|
#শার্লিন_হাসান

মেহেরদের বাড়ীতে আসতে তার আম্মু সবাইকে সাদরে গ্রহণ করে। বিশেষত পূর্ণ,তূর্ণকে দেখে তিনি একটু বেশী খুশি। কারণ তারা দুই ভাই ব্যস্ত মানুষ সহজে কোথাও যায়না। তূর্ণ গেলেও পূর্ণ একবারেই না। মেহেরদের বাড়ী আসতে,আসতে প্রায় নয়টা বেজে যায়। একঘন্টায় সবাই ফ্রেশ হয়ে দশটায় ডিনার করতে বসে যায়। পূর্ণর স্পেশাল করলা ভাজি। যেটা দেখে বাকীরা নাক মুখ কুঁচকায়। মানুষ কীভাবে সেইলি করলা ভাজি খায় এটাই মাথায় আটে না। সবার খাওয়া দাওয়া হতে আড্ডা দিতে বসে। তবে পূর্ণ রুমে চলে এসেছে। তার দরকারী কাজ আছে। তূর্ণ সহ বাকীরা সোফায় বসা। এটা,ওটা বলে মজা করছে। বিশেষত মাইশার সাথেই। এই কথা,সেই কথার প্রসঙ্গে তূর্ণর বিয়ের কথা উঠায় তিশা। যেহেতু সবার বড় তূর্ণ বিয়ের সিরিয়াল তারই আগে। তখন মেহের বলে, “মাইশার বিয়েটা হলে তূর্ণ ভাইয়ার টার প্রস্তুতি নিবো সবাই।” তখন শূন্য শুধায়, “ভাইয়ার নিশ্চয়ই পছন্দ আছে।”

তিশা,রোদ তূর্ণ র দিকে তাকিয়ে আছে। তূর্ণ বাকীদের দিকে তাকায়। অস্বস্তিতে পড়ে আমতা আমতা করে বলে, ” পছন্দ থাকবে কেন? পরিবারে পছন্দেই বিয়েটা করবো।”

” দেখবো বিয়ের কথা উঠলেই কোথা থেকে তোমার প্রিয়তমা বেড়িয়ে এসেছে।”

পাশ থেকে রোদ কথাটা বলে। তূর্ণ প্রতিত্তোরে বলে, ” প্রিয়তমা আশেপাশেই আছে। তবে বিয়েটা হবে না আমাদের।”

তখন শূন্য জোরেই বলে, ” আমি বুঝেছি। তলে,তলে টেম্পু চালাও। আর ভাব নেও কেউই কিছু জানো না।”

শূন্যর কথায় বাকীরা উঠে পড়ে লাগে তূর্ণর প্রিয়তমা কে জানতে। কিন্তু শূন্য আর মুখ খোলেনি। তূর্ণ তাকে চোখ রাঙানি দিয়েছে বেশ কয়েকবার। তখন আবার তূর্ণর ফোনে মেসেজ আসায় সে ফোন সাইড বাটনে চাপ দিয়ে ওপেন করে। পাশ থেকে শূন্য তাকায়। এতো নোটিফিকেশন ভীড় জমিয়েছে তবে ওয়েল পেপারে দেওয়া পিকটা চিনতে ভুল হয়নি। ফেসটা নোটিফিকেশনের ভীড়ে চাপা পড়লেও। তূর্ণর মেসেজ এসেছে সে টের পেয়েছে তার ফোনের দিকে নজর দিয়ে রেখেছে কেউ। হোম স্ক্রিনে যাওয়ার আর সাহস হলো না। তাই মেসেজটা ইগনোর করলো তূর্ণ। এমনিতে তার প্রিয়তমা নিয়ে খোঁচানো হচ্ছে। তাঁদের আড্ডার পাট এখানে চুকিয়ে নেওয়াটা বেটা মনে হলো তূর্ণর। সে কলের ভণিতা দেখিয়ে চলে এসেছে। বাকীরা তাঁদের মতো এটা, ওটা নিয়ে প্লানিং করে সময় কাটাচ্ছে।

পূর্ণর জন্য আলাদা রুম বরাদ্দ করা হয়েছে। শূন্য,তূর্ণ এক সাথেই। দু’জনেই বসে কথা বলছে। একপর্যায়ে শূন্য বলে উঠে, ” তোমার প্রিয়তমা কী আমি যাকে গেস করেছি সেই?”

“তুই কাকে গেস করলি?”

“নাম বলবো?”

“না থাক! শোন তোকে বলি, এরকম কিছুই না। যেহেতু আমি বড় ছেলে পরিবারের পছন্দেই হয়ত বিয়েটা করবো। আর ওটা জাস্ট আমার দায়িত্ব এবং ভালো লাগা। ব্যপারটা এমন না যে আমি প্রেমে পড়েছি। ”

” আচ্ছা বুঝলাম। ”

“হ্যাঁ।”

“তোমার ওয়েল পেপারে একজনকে দেখলাম। সম্ভবত মেয়েই হবে।”

“ওটা তিশা।”

“দেখতে তো…..

” তোদের আসলে সমস্যাটা কোথায় বলতো? তুই যাকে ভাবছিস তাকে আমি ওয়েল পেপারে রাখতে যাবো কেন বলতো? আমার আদরের বোনকে আমি রাখি এবং সমসময়ই। তুই হয়ত খেয়াল করিস নি।”

শূন্য মাথা চুলকায়। বেশী প্রশ্ন করেনি নাহলে আবার তূর্ণ রেগে যাবে। দু’জনেই শুয়ে,শুয়ে ফেসবুক স্ক্রোল করছে। তখন শূন্য রোদের আইডিতে যায়। দুইদিন আগের পোস্ট, ” জীবনে কারোর ওয়েলপেপারে স্থান পেলাম না।” একই পোস্ট তিশাও করেছে। সেজন্য শূন্য পাত্তা দেয়নি। হয়ত পিকটা তিশারই ছিলো।

মাঝ রাতে ফেসবুক স্ক্রোল করছে পূর্ণ। তার দলের সদস্যদেট আইডি স্ক্রোল করছে। কেউ আবার উল্টাপাল্টা পোস্ট বা কিছু শেয়ার করেছে কীনা। এক জনের আইডি থেকে আরেক-জনের আইডিতে যায় পূর্ণ। তূর্ণ থেকে শুরু করে, শূন্য, তিশা তবে রোদের আইডিটায় কখনো যায়নি সে। ইন্টারেস্ট নেই রোদের আইডি স্ক্রোল করার।

পরের দিন সকালে একটু তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠে পড়ে সবাই। ফজরের নামাজ আদায় করে মেহেরদের বাড়ীর সামনে সুন্দর রাস্তায় হাঁটতে বের হয় তারা। শিশা,মাইশা,তিশা,শূন্য ছাড়া। তারা ঘুমাচ্ছে। পূর্ণ, তূর্ণ, মেহের,রোদ সহ। রাস্তার পায়ে উঁচু দালান সমূহ। তারা একটা টংয়ের দোকানে যায়। সকালে ধোঁয়া উঠা কাপে চা খায়। সময়টা সুন্দর ই কাটছে। দোকানের বাইরে দাঁড়ানো পূর্ণ। তূর্ণ বিল দিচ্ছে পাশে মেহের। রোদ বের হওয়ার সময় দোকানের স্তম্ভের (পিলার) সাথে বারি খেতে যাচ্ছিলো পূর্ণ হাত টান দিয়ে সাইডে সরিয়ে নেয়। নাক মুখ কুঁচকায় পূর্ণ। রোদের দিকে তাকিয়ে বলে, “দেখে শুনে চলতে পারো না?”

তখন তূর্ণ এবং মেহেরের দৃষ্টি এবং মনোযোগ আসে তাঁদের দু’জনের দিকে। তূর্ণ তখন রোদের দিকে তাকিয়ে বলে, “কী হয়েছে রোদ?”

” একটুর জন্য মাথা ফাটায়নি। পিলারের সাথে বা’রি খেতে যাচ্ছিলো।”

“দেখে শুনে চলবে তো রোদ। এর আগে একজন তোমায় পানিতে চুবিয়ে গেলো।”

তূর্ণর কথায় কেউ আর কিছু বলেনা। তারা পুনরায় বাড়ীর দিকে রওনা হয়। পূর্ণ,রোদ পাশাপাশি হাঁটছে। মেহের তূর্ণর সাথে কথা বলতে,বলতে পেছন দিয়ে আসছে। বাড়ীতে আসতে কাজের বুয়া তাঁদের নাস্তা রেডি করে দেয়। বাকীরা এখনো ঘুমাচ্ছে। রোদকে পাঠানো হয় ডেকে আনার জন্য। তূর্ণ শূন্যকে টেনেটুনে ঘুম থেকে তোলে ওয়াশরুমে পাঠিয় দেয়।

শিকদার বাড়ীর পূত্র এবং কন্যারা নাস্তা করছে৷ তূর্ণর পাশের চেয়ারে মাহতাব হোসাইন বসে নাস্তা করছে। একটু পর তারা বাজারে যাবে। বিকেলের দিকে মেহমান এসে ডেট ফিক্সড হবে। সেজন্য বাড়ীতে একটু ব্যস্ততা। নাস্তা শেষে ছেলেরা বাজারে চলে যায়। রোদ,তিশা,মেহের মিলে লিভিং রুমের একটা কোণ ডেকোরেশন করে ছোট্ট করে। মাহতাব হোসাইন এক ভাই এক বোন। সেজন্য তাঁদের পরিবার ছোট। এছাড়া ওনার দু’টোই মেয়ে।

বিকেলের দিকে সবাই রেডি হয়। রোদ নুড কালারের থ্রিপিস পড়েছে। কীভাবে জেনো তার আর পূর্ণর ড্রেসের কালার মিলে যায়। অবশ্য এটা নিয়ে কেউ তেমন ট্রোল করতে পারেনি। কিন্তু ব্যপারটা তূর্ণর হলে আর কেউ কিছু না বললেও শূন্য ঠিকই বলতো। এমনিতে কত কথা তার পেটে জমা হয়ে আছে। এগুলো বাইরে বের হলে খবর আছে তার৷ সেজন্য মুখ চুপচাপ। যথাসময়ে পাত্র পক্ষের কয়েকজন আসে। মাইশার হাবি এবং দেবর,শ্বশুর, চাচা শ্বশুর একজন ননদ ও আসে। মেয়েটা রোদ,তিশার সমবয়সী। তবে দেবরটা পূর্ণর বয়সী হবে। তাঁদের ডেট ফিক্সড হতে এখানে আবার আরেকটা সম্মন্ধ করার আবদার জানায় মাইশার শ্বশুর। তাও রোদের জন্য তাঁদের ছোট ছেলে পাভেলের জন্য। ব্যপারটা পূর্ণ র মোটেও পছন্দ হয়নি। সোফায় বসে থেকেই গর্জন দিয়ে বলে, ” ডেট ফিক্সড করেছেন ভালো কথা। বড় ছেলের বিয়ে দিতে এসেছেন বড় ছেলের বিয়ে দেন অযথা অন্যের বউ নিয়ে টানাটানির কী আছে? আর আপনারা জানেন মেয়েটা আনম্যারিড নাকী ম্যারিড?”
ভরা লিভিং রুমে এক পৃরকার বোম পড়লো। কেউই এটা কল্পনা করতে পারেনি।
তখন মাইশার শ্বশুর বলে, ” আসলে ওকে দেখে মনে হলো আন ম্যারিড। যেহেতু আমার ছেলে পাভেলকে সামনে বিয়ে করাবো পাত্রি দরকার। আর এখানে এসে পেয়েও গেলাম তাই হাত ছাড়া করতে চাইনি।”

” মনে হয় ওকে বিয়ে দেওয়ার জন্য বসে আছি। ওর বিয়ে ঠিক,এন্গেজ ও হয়ে গেছে।”

পূর্ণ কঠোর গলায় জবাব দেয়। বাকীদের বিষয়টা হজম করতে কষ্ট হয়। রোদ নিজেও অবাক হয়েছে। পূর্ণ এতো রিয়েক্ট করলো কেন? অন্যদিকে শূন্য নিজের ভাবনায় জল ঢালছে। সে ভেবেছিলো তূর্ণ রিয়েক্ট করবে কিন্তু এসবের কিছুই হলো না। হিসাব মেলাতে পারছে না শূন্য। সে তো ভাবছে রোদ তূর্ণর কিছু চলছে। কিন্তু এসব ভুল ধারনা। পূর্ণ রোদের মাঝেই কিছু চলছে।

রাতের ডিনার করে মাইশার শ্বশুর বাড়ীর লোকজন বিদায় হতে তারা ডেকোরেশন করা সোফায় বসে কেক কাটে। কিছুক্ষণ আড্ডা মাস্তি করে। তখন শূন্য এসে পূর্ণ কে বলে, ” কী ভাই বিয়েটা কবে তাহলে?”

“তূর্ণ নাকী?”

“না তোমার। ভাবীকে তো চিনলাম।”

“কে সে?”

ব্রু কুঁচকে বলে পূর্ণ। তখন শূন্য হাসতে,হাসতে বলে, “তাহসিনা খানম রোদেলা।”

“ধুর গাধা! ওটা তো তূর্ণর। কিছু তো চলছে ওদের মাঝে। জানি তূর্ণ ভাই চুপচাপ ওর বউকে পাভেল ভাগিয়ে নিয়ে যাবে। তাই ভাই হিসাবে দায়িত্ব পালন করলাম।”

কথাটা বলে পূর্ণ প্রস্থান করে। তখন শূন্য মাথায় হাত দিয়ে বলে, “প্রতিবারই কী আমি রং? যাহ এরা প্রেম করুক নাহয় যা খুশি করুক আর সিআইডি গিরি করতে যাবো না। ভাব ভঙ্গিতে একরকম কথার ধরন আরেক রকম। মানুষ ধন সম্পত্তি ও এতো লুকায় না ওরা রোদের সাথে প্রেম ভালোবাসার সম্পর্ক টা যত লুকাচ্ছে। ঢাকার চেষ্টা করছে।”

#চলবে