এক ফালি প্রণয় পর্ব-০৭

0
7

#এক_ফালি_প্রণয়|৭|
#শার্লিন_হাসান

কেটে যায় দুইদিন। এই দু’দিন ব্যস্ততায় সময় কাটে সবার। আজকে মাইশার মেহেদী নাইটের প্রস্তুতি চলছে। আজকে সকালে বাড়ী ডেকোরেশন করা হয়েছে। মেহের রোদ মেহেদীর ঢালা সাজাচ্ছে ফুল দিয়ে। পাশেই পূর্ণ বসা। সে নিরিবিলি ঢালা সাজানো দেখছে। যদিও এসবে ইন্টারেস্টে নেই তবুও কেনো জানি দেখছে পূর্ণ নিজেও জানে না। তখন তিশা আসতে পূর্ণ উঠে দাঁড়ায়। মেহের তিশার সাথে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পূর্ণ দাঁড়িয়ে আছে তখন রোদ ঢালা হাতে উঠতে পূর্ণর কাঁধের সাথে মাথায় বারি খায়। পূর্ণ নিজেও বোকা বনে যায়। রোদ বোকা চোখে তাকিয়ে আছে। তখন কী মনে হতে রোদ শব্দবিহীন ঢালা পূর্ণর দিকে এগিয়ে দেয় । পূর্ণ সেটা হাতে নিতে রোদ নিজের মাথা ঢলতে থাকে। তখন পূর্ণ কঠোর গলায় বলে, ” তোমার চোখে সমস্যা আছে রোদ। নাহলে জলজ্যান্ত মানুষটাকে তুমি দেখতে পাওনি?”

“তোমাকে কে বলেছে আমার পেছনে এসে দাঁড়াতে? ”

“আজব! আমার ইচ্ছে আমি কোথায় দাঁড়াবো না দাঁড়াবো। তোমাকে কে বলেছে আমার সাথে এসে বা’রি খেতে।”

কথাটা বলে পূর্ণ রোদের হাতে ঢালাটা দিয়ে শুধায়, ” একদম ঠিক হয়েছে বা’রি খেয়েছো। ইডিয়ট!”

পূর্ণ প্রস্থান করতে রোদ ও রাগ দেখিয়ে মেহেরের হাতে ঢালা ধরিয়ে দিয়ে রুমের দিকে অগ্রসর হয়। তখন আবার শূন্য আসে হাসিমুখে। হাতে তার শপিং ব্যাগ। রোদকে দেখে একগাল হেঁসে ব্যাগটা এগিয়ে দিয়ে বলে, “এটায় একটা শাড়ী আছে রোদ। মেহেদী নাইটে পড়ার জন্য। অবশ্যই শাড়ীটা তোমার জন্য।”

“কে দিয়েছে এটা?”

“জানি না। আননোন পার্সন! হ্যাঁ শাড়ীটার পার্সেল এসেছে তোমার নামেই।”

“আজব! আননেন পার্সনের দেওয়া শাড়ী আমি পড়বো?”

“আরে নেও তো!”

শূন্য শপিং ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে প্রস্থান করে। রোদ রুমে এসে ব্যাগ খোলে। তাতে গাঢ় সবুজ রঙের শাড়ী সোনালী পাড়ের। মেচিং কয়েক মুঠো চুড়ী, সিম্পল জুয়েলারিও আছে। সাথে একটা চিরকুট ও আছে। রোদ আগে চিরকুট খোলে তাতে লেখা, “রোদেলা খানম”, আমার প্রিয়তমা তোমায় শাড়ী পরিহিতা রমনী সাজে দেখার শখ হয়েছে, তোমার এই স্বল্পভাষী প্রেমিকের।”

রোদের হিসাব মিলছে না। শাড়ী নাকী মেহেদী নাইটের জন্য। তাহলে এই স্বল্পভাষী প্রেমিক কীভাবে তাকে দেখবে? সে কী এখানে আছে নাকী? উঁহু! নেই তাহলে কীভাবে সব পসিবল? মাইশা রুমে আসাতে রোদ চিরকুটটা সরিয়ে নেয়। মাইশা এসেই শাড়ীটার দিকে তাকিয়ে বলে, “ওয়াও! শাড়ীটা সেই সুন্দর। তোমায় বেশ মানাবে রোদ। আজকে পড়ার জন্য আনিয়েছ বুঝি?”

” হ্যাঁ!”

“ঠিক আছে তাহলে পড়িও।”

রোদ মাথা নাড়ায়। এখন স্বীকার না গেলে একশ একটা প্রশ্ন করা হবে তাকে। শাড়ীটা এক সাইডে রেখে ফোন হাতে নেয় রোদ। ফেসবুক স্ক্রোল করছে সে। বর্তমানে পূর্ণের দায়িত্ব নিয়ে করা এলাকার রাস্তা ঘাটের কাজ,উন্নতি সেসব পোস্ট তার সামনে আসছে৷ রোদ বিরক্ত হয়! পূর্ণ যা খুশি করুক তা জানার আগ্রহ বিন্দু মাত্র রোদের নেই। কিন্তু এই ঘুরেফিরে সব তার সামনেই চলে আসে।

কিছুক্ষণ পর তারা সবাই রেডি হতে বসে। রোদ সাজগোছে আবার পাক্কা। শাড়ী পড়া থেকে শুরু করে হেয়ারস্টাইল, মেকআপ,মেহেদী দেওয়া,আলতা পড়া। নারী হিসাবে এই কয়টা গুণ তার বেশ ভালোই আছে। শিশা,তিশাকে রেডি হতে সাহায্য করে রোদ। সেই সাথে মাইশার হেয়ার স্টাইল,মেকআপ রোদই কমপ্লিট করে দেয়। মেহের আর রোদ শেষে সাজবে। তাঁদের তিনজনের সাজা কমপ্লিট হতে তূর্ণ আসে রুমে। তার আদরের বোন তিশাকে দেখার জন্য। তিশাকে মাশাল্লাহ সুন্দর লাগছে। তূর্ণ এসেই তিশাকে আগলে নেয়। কপালে চুমু খেয়ে বলে, “মাশাল্লাহ আমার বোনটাকে পরী লাগছে।”

কথাটা বলতে,বলতে রোদের দিকে দৃষ্টি স্থির করে তূর্ণ। তখন শিশা শুধায়, “আজকে সব ক্রেডিট কিন্তু রোদ আপুর।”

“হ্যাঁ রোদ এসবে বেশ পারদর্শী। সবাইকে সুন্দর করেই সাজায়।”
তূর্ণর কথার প্রতিত্তোরে মাইশা বলে, ” রোদ এভাবেই নিজের হবু বরের জীবনটাকেও সুন্দর করে সাজিয়ে দিও। ইশশ! তোমার বরটা কত লাকি হবে এতো শান্তশিষ্ট, গুণবতী বউ পাবে।”

” আসলে রোদ মানুষটাই সুন্দর সেজন্য তার সাজানো গোছানো সব কিছুই সুন্দর। এবং আমাদের জিজু,রোদের বর আসলেই লাকী হবে।”

তূর্ণর দেওয়া কমপ্লিমেন্ট ছিলো এটা রোদের জন্য। রেদ নিজেও ভেবে পায়না তার মাঝে কী এমন আছে যে এতো বাড়াবাড়ি করছে সবাই। তবে প্রশংসা শুনতে ভালো লাগে তার। কিন্তু নিজেকে ভীষণ সাধারণই ভাবে রোদ। নিজের মাঝে তেমন কোন আহামরি কিছুই দেখেনি সে। তূর্ণ প্রস্থান করতে মেহের,রোদ রেডি হতে বসে যায়। তিশা,শিশা ‘মাইশা’ কে নিয়ে স্টেজে যায়। বাড়ীতে অনেক গেস্ট আছে।

মেহেরের শাড়ী পড়া হতে রোদ আননোন পারসনের দেওয়া শাড়ী নিজের গায়ে জড়িয়ে নেয়। মাশাল্লাহ শাড়ীটা খুব সুন্দর ভাবেই তার গায়ে ফুটে উঠেছে। তেমন সাজেনি রোদ। সবসময় ন্যাচারাল থাকতেই পছন্দ করে। শুধু চুলগুলো সামনে স্টাইল করে বেঁধে খোঁপা করে তাতে গাজরা সাথে টাটকা গোলাপ গুঁজে দিয়েছে। মেহের বাকীদের মতোই ভারী মেকআপ লুক নিয়েছে। রোদের রেডি হওয়া কমপ্লিট হয়নি। মেহেরের হতে সে চলে যায় স্টেজের কাছে।

বর্তমানে পূর্ণর আয়ত্ত্বে করা কাজ গুলোতে বাঁধা দিচ্ছে তারই বিপরীত দলের লোক। ভুলভাল স্ক্যান্ডাল রটাতে চাইছে। এই নিয়ে গতকাল জামেলা হয়েছে। পূর্ণ সেখানে নেই তবুও সব খবর এসেছে। এই নিয়ে কথা-কাটাকাটি এক পর্যায়ে মেজাজ হারায় পূর্ণ। লোকের সমাগম ছাঁদ থেকে ভেতরে আসে পূর্ণ। লিভিং রুমের ডান পাশের রুমটায় প্রবেশ করে সে। কলে কাউকে ধমকাধমকি করছে।

আচমকা পূর্ণ রুমে প্রবেশ করার সময় কথার আওয়াজ পেতে রোদ কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। হাত থেকে দু’টো কাঁচের চুড়ি ফ্লোরে পড়ে ভে’ঙে ও যায়। পূর্ণ কল মিউটে রেখে তাকায় পড়ে যাওয়া চুড়ি গুলোর দিকে। অতঃপর তাকায় রোদের দিকে। একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। রোদ খেয়াল করে পূর্ণর দিকে। সাদা পান্জাবি পরিহিত শ্যাম পুরুষ। তবে তার হেয়ার কাটটায় চোখ আটকায় রোদের। নিজের দৃষ্টি সংযত রেখে রুম থেকে নিঃশব্দে বেড়িয়ে আসে রোদ। তখন পূর্ণ গোলাপ ফুল হাতে ছাঁদের দিকেই যাচ্ছিলো। রোদের সাথে দেখা হতে একগাল হাসে তূর্ণ। টোল পড়া হাসি রোদের নজরে আসে সবচেয়ে বেশী নজরে আসে হাতে তাকা টাটকা গোলাপ গুলো। অবশ্য ফুল চাইলে তূর্ণ বারণ করবে না। তবে চায়না রোদ। তূর্ণ তখন শুধায়, “পূর্ণকে দেখেছ রোদ?”

“হ্যাঁ ওই রুমে কারোর সাথে কলে ধমকাধমকি করছে।”

“তোমাকে শাড়ীটায় দারুণ মানিয়েছে।”

“থ্যাংকিউ ভাইয়া।”

“ওয়েলকাম।”

দু’জনে আগে পিছে ছাঁদে যায়। মাইশার সাথে কয়েকটা পিকচার তুলে রোদ এক সাইডে চেয়ার টেনে বসে। রেদ এদিকটায় একাই বসা। সবাই সবার সাথে পিকচার তুলে বেশ সময় কাটে। তূর্ণ নিজেও সময়টা ইনজয় করে তবে পূর্ণর পাত্তা নেই। সে এসব তেমন পছন্দ করে না।

কিছুক্ষণ পর থমথমে মুখে ছাঁদে আসে পূর্ণ। কী মনে হতে রোদের পাশেই চেয়ার টেনে বসে। চুপচাপ ফোন স্ক্রোল করছে পূর্ণ। তখন আবার তিশা এসে পূর্ণ কে টানাটানি শুরু করে দেয়। তাঁদের সাথে পিকচার তুলতে। পূর্ণর সাথে পিকচার তুলেনি তিশা। তূর্ণ ও আসে পূর্ণর কাছে। সেও তেল মাখছে তাদের সাথে পিকচার তোলার জন্য। কী মনে হতে তূর্ণ ক্যামরা অন করে রোদের সাথে কয়েকটা পিকচার নেয়। পূর্ণকে টেনেটুনে রাজী করিয়ে স্টেজে আনে। তবে গ্রুপ পিকে সবার সাইডে দাঁড়ায় পূর্ণ। মুখে নেই কোন হাসি। তাঁদের গ্রুপ পিকচার টা অর্ধেক খারাপ হয়েছে পূর্ণ না হাসার জন্য। এই নিয়ে তিশা বকবক করেছে। শূন্য ক্যামরাম্যান হয়েছে রোদ এনং তূর্ণর। শুধু রোদ তূর্ণ না মেহের,তিশা,শিশা সবার সাথেি আলাদা,আলাদা পিক তোলে পূর্ণ। সবার দেখাদেখি নিজপর বোনের সাথেও আলাদা পিক তোলে পূর্ণ। কী মনে হতে তূর্ণর দিকে নিজের ফোন এগিয়ে দিয়ে বলে, “রোদের সাথে পিক তুলে দাও তো!”

সবাই তাকিয়ে আছে পূর্ণর দিকে। তাতে পূর্ণর কিছুই যায় আসেনা। রোদের সাথে পিক তুলেছে পূর্ণ এটা অষ্টম আশ্চর্যের বিষয়। একটু সাইডে আসতে তিশা রেদের গাল টেনে বলে, ” বনু আমার ভাই ইমপ্রেস হচ্ছে। প্লিজ পুরোপুরি ইমপ্রেস করে আমার ভাবী হয়ে থেকে যা।”

“ধুর! অন্য কথা থাকলে বলতো। তোর এই গ’রুর মতো ভাইয়ের বউ হবো না আমি। এমনকি তোর ভাই রাজী থাকলেও না।”

“যোগ্য ছেলে হারালে কাঁদতে হবে আাড়ালে।”

কথাটা বলতে,বলতে পাশ কাটিয়ে যায় পূর্ণ। রোদ,তিশা পেছন ফিরে পূর্ণর যাওয়া দেখছে। এগারোটার মধ্যে পিকচার তোলা শেষ হতে মেহেদী দিতে বসে যায় সবাই। সামনে মাহতাব হোসাইন তার স্ত্রী, তূর্ণ, শূন্য, পূর্ণ বসে আছে। তবে সবাই যে যার মতো ফোনে ব্যস্ত। শিকদার পরিবার আগামী কালকে আসবে। রোদ বাকীদের মেহেদী দিতে,দিতে হাত ব্যাথা করে ফেলে। কোনরকম কনের মেহেদী আর তিশার এক হাত দেওয়া হতে উঠে যায় সে। ভীষণ টায়ার্ড সাথে হাত,মাথা ব্যাথা করছে তার। মেহের ও মেহেদী দেওয়ায় ব্যস্ত। তিশা তখন মেহেদী হাতে তূর্ণর কাছে আসে। পাশের চেয়ার টেনে বসতে,বসতে তূর্ণর হাত টেনে নেয়। হাতপর তালুতে T♡︎T লিখে দেয়। তূর্ণ তার বোনের কান্ড দেখছে।

“দেখ তিশা,তূর্ণ ভাই বোনের বন্ধন।”

“সুন্দর।”

সেদিনের মতো মেহেদী অনুষ্ঠান শেষ করে সবাই চলে আসে। ফ্রেশ হয়ে, চেন্জ করে রাতের ডিনার করে নেয় কোন রকম। রোদের একটু লেট হয়ে যায়। বাকীরা কেউ খেয়েছে কেউ না খেয়ে শুয়ে পড়েছে। রোদের আবার খাওয়ায় সবসময় লেট হয়। তার উপর তিশাকে আজকে খাইয়ে দিয়েছে। খুব আস্তে ধীরে খাবার খায় সে। তিশার মামী তারাও শুতে চলে গেছে। রোদ ডিনারটা শেষ করে বেচিংয়ে যায়। তার সাথে তিশাও আছে সে মেহেদী শুকাচ্ছে। তূর্ণ আসে তখন গোলাপ হাতে। যদিও অনেকটা নেতিয়ে পড়েছে গোলাপ গুলো। তিশাকে জিজ্ঞেস করে, “তোমার গোলাপ লাগবে?”

“আমার আপাতত দরকার নেই।”

“রোদের লাগবে?”

“হ্যাঁ! আমার গোলাপ প্রিয়।”

তূর্ণ মুঠোভরা গোলাপ রোদের দিকে এগিয়ে দেয়। রোদ সেগুলো নিয়ে ঘ্রাণ নেয়। তূর্ণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা দু’জন ঘুমাতে চলে যায়।

“নিজের ব্যক্তিগত ফুলকে তার পছন্দের ফুল উপহার দেওয়াটাও বেশ সুন্দর। প্রেমিক পুরুষের দায়িত্ব এবং প্রেমের একটা অংশ বোধ-হয় এটা।”

কারোর কন্ঠস্বরে পেছন ফিরে তাকায় তূর্ণ।

#চলবে