এক ফালি প্রণয় পর্ব-০৮

0
6

#এক_ফালি_প্রণয়|৮|
#শার্লিন_হাসান

তূর্ণ মুঠোভরা গোলাপ রোদের দিকে এগিয়ে দেয়। রোদ সেগুলো নিয়ে ঘ্রাণ নেয়। তূর্ণকে ধন্যবাদ জানিয়ে তারা দু’জন ঘুমাতে চলে যায়।

“নিজের ব্যক্তিগত ফুলকে তার পছন্দের ফুল উপহার দেওয়াটাও বেশ সুন্দর। প্রেমিক পুরুষের দায়িত্ব এবং প্রেমের একটা অংশ বোধ-হয় এটা।”

কারোর কন্ঠস্বরে পেছন ফিরে তাকায় তূর্ণ। পূর্ণকে দেখে হেঁসে দেয় তূর্ণ। তখন পূর্ণ ব্রু জোড়া প্রসারিত করে বলে, ” ভাই বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে নেও! আমার সিরিয়াল কিন্তু এর পরে।”

“আরে তুই যেটা ভাবছিস এটা না। ও আমাদের বোন তিশার মতো। ”

“হয়েছে!”

“ওকে তুই যা মনে করতে পারিস তাই।”

” ভাই তুমি কিন্তু জিতবা। এমনিতে তীর্থ খানমের একমাত্র কন্যা তাহসিনা খানম এতো সুন্দর একটা মেয়ে,সাথে প্রোপার্টি! ”

“প্রোপার্টির লোভ করি না ভাই। আমাদের আল্লাহ কম কী দিয়েছে?”

“সেটা কেউই লোভ করেনা ভাইয়া। যাই হোক বেস্ট অব লাক।”

কথাটা বলে পূর্ণ প্রস্থান করে। তূর্ণ নিজেও রুমে চলে যায়। ভীষণ টায়ার্ড থাকায় বিছানায় গা এলিয়ে দিতে ঘুমিয়ে যায় তূর্ণ।

**********

পরের দিন সবাই হোয়াইট কালারের ড্রেসআপ পরিধান করে। তারা সবাই আবির (হলি) খেলবে। সকালে নাস্তা করে এগারোটার দিকে ছাঁদে আসে সবাই। মাইশা,মেহের থেকে শুরু করে সবাই সবাইকে আবির মাখিয়ে ভূত বানিয়ে দিয়েছে। রোদ দুই হাত ভর্তি আবির নিয়ে পূর্ণর গালে লাগায়। দু’জনের চোখাচোখি হতে রোদ সরে আসে। শূন্যকেও সে আবির দিয়ে ভূত বানায়।
তাঁদের আবির খেলা হতে যে যার মতো শাওয়ার নিয়ে নেয়। দুপুরের লান্স শেষ করে সবাই একটি রেস্ট নেয়। বিকেলে একটা রুমে মেহেদী দিতে বসেছে রোদ,মেহের,শিশা। তাঁদের মেহেদী দেওয়া বাকী। পূর্ণ, শূন্য দুজনেই উপস্থিত আছে সেখানে। তখন মেহের পূর্ণ কে বলে,
“ভাইয়া চলে তোমায় মেহেদী লাগিয়ে দিই।”

“আরে না! এসব মেয়েরা দেয়। আমি এসব লাগাই না।”

“রোদ হাতের তালুতে ভাইয়ার নামের প্রথম অক্ষর আর তার গফের নামের প্রথম অক্ষর লিখে দাও।”

শূন্যর কথায় সবাই তাকায়। পূর্ণর গার্লফ্রেন্ড আছে? তখন পূর্ণ ঠাস করে থাপ্পড় দেয় শূন্যকে। রাগী স্বরে বলে, “আমি গার্লফ্রেন্ড কী তোর নানী?”

” সেও তোমায় রিজেক্ট করবে তোমার এতো ভাবের জন্য।”

” আমি গেলে তো রে ভাই! এমনিতে পূর্ণর এসবে সময় নেই। এই বাড়ী থেকে কবে যাবো সেটাই আপাতত আমার মূল উদ্দেশ্য।”

কথাটা বলে পূর্ণ প্রস্থান করে। বাকীরা আর কিছুই বলেনি। পূর্ণ বাইরে আসতে তার আম্মু, ছোট আম্মুকে দেখে। পূর্ণ র এই বাড়ীতে আর ভালো লাগছে না।

সন্ধ্যার দিকে বাড়ীতে মানুষের আনাগোনা। পূর্ণ গাড়ী নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে। একটু ঘুরাঘুরি দরকার তার। রোদ তার মামীদের সাথে বসে গল্প করছে। সাথে তূর্ণ ও আছে তারা দু’জন পাশাপাশি বসা। তবে তূর্ণ ধ্যাণ জ্ঞান সব ফোনের দিকে। মাইশা তার ফুফির সাথে গল্পগুজব করছে।

পূর্ণ একটা ক্যাফেতে আসে। কোল্ড কফি হাতে ফোন স্ক্রোল করছে। তার কিছু ইমফরটেন্ট কাজ আছে সেগুলোই করছে পূর্ণ।

********

রাফি আপাতত রোদের খোঁজখবর রাখার চেষ্টা করছে। কিন্তু তেমন কিছু করতে পারছে না। রোদকে পাওয়া এটা চ্যালেন্জ। তারউপর রোদের দিকে তূর্ণ, পূর্ণ দু’জন তো আছেই। রাফি ভেবে নিয়েছে এভাবে রোদকে পাওয়া যাবে না। তার চেয়ে অন্য উপায় বেটার হবে। ল্যাপটপের স্কিনে তাকিয়ে ভাবছে রাফি। একবার যদি পূর্ণ এসবের দায়িত্ব নেয় তো এই বাড়ী টা তে তাঁদের জায়গা হবে না। এমনিতে পূর্ণকে দেখতে পারে না রাফি। এমন কিছু করতে হবে যাতে পূর্ণর কখনোই রোদের উপর ইন্টারেস্ট না আসে। কিন্তু কী? কিন্তু সবার আগে জানা দরকার ওঁদের মাঝে আদৌ কিছু আছে কী? শিকদার ভিলার কোন খবরই বাইরে আসে না। রাফি তখন কল লাগায় পূর্ণর দলের একটা ছেলেকে। মোটামুটি তাঁদের একটা ভালো সম্পর্ক আছে। বার কয়েক রিং হতে ছেলেটা ফোন তোলে। এপাশ থেকে রাফি ভালোমন্দ জিজ্ঞেস করে বলে, “একটা ইনফরমেশন লাগবে।’

” কী? ”

” তাহসিনা খানম….

“হ্যাঁ রোদ আপু।”

“ওহ্ তাহিয়ান শিকদার পূর্ণর কিছু হয় নাকী?”

“তার ফুফির একমাত্র মেয়ে।”

“সে তো জানি রে ভাই। অন্য কিছু।”

“বউ?”

“ইয়েস!”

“না আসলে পূর্ণ ভাইকে কখনো কেন মেয়ের সাথে দেখিনি। তার যে এতো সুন্দর কাজিন মানে তাহসিনা আপু আছে কই কখনো তার কথা বলতে বা তাকে নিয়ে কোথাও যেতেও দেখিনি। ভাইয়া এসব পছন্দ করে না।”

“দেখ তলে,তলে সব করা শেষ।”

“মুখ সামলে! ভাইয়া এরকম না। উনি বর্তমানে ব্যস্ত আছে।”

“হ্যাঁ জানি তো তার কাজিনের বিয়েতে আমার ফিউচারকে নিয়ে।”

“আপনার ফিউচার?”

” তাহসিনাকে আমি বিয়ে করবো।”

“তাহলে হা করে আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকুন।”

“কেনো রে? আমি বুঝি তাহসিনাকে ডিজার্ভ করি না?”

“তাহসিনার মতো মেয়েকে করলেও তাহসিনাকে না। উনি একটা ফুল এবং ফুলকে আগলে রাখার জন্য আছে তূর্ণ ভাই,পূর্ণ ভাই। আর তাহসিনা লয়্যাল কাউকেই ডিজার্ভ করে।”

কথাটা বলে ছেলেটা কল কেটে দেয়। সাথে,সাথেই পূর্ণকে খবরটা দেয়। রাফিকে পূর্ণ ভালো করেই চিনে। তবে কখনো রোদের ব্যপার বা প্রোপার্টি নিয়ে মাথা ঘামায় না। তার এসবে ইন্টারেস্ট নেই। তবে রোদকে হাসিল করে সম্পত্তি নিজের নামে করতে চায় এটা বেশ ভালো বুঝতে পেরেছে। কিন্ত রোদকে তো অন্য কোথাও বিয়ে দেওয়া হবে না। তাঁদের পরিবারে কারোর জন্য রাখা হবে। কয়েক মাস পর যদি তূর্ণ কে বলা হয় বিয়ের কথা সে তো বিয়ে করবে। কিন্তু রোদকে না। কোন এক আংকেলের মেয়েকে। কথাটা এতোদিন মাথা থেকে উড়ে গিয়েছিলো পূর্ণর।

ক্যাফে থেকে বেড়িয়ে গাড়ী নিয়ে সোজা শিকদার বাড়ীতে চলে আসে পূর্ণ। তূর্ণকে কল দিয়ে বলেছে সে চলে এসেছে। আগামী কালকে বিয়েতে যাবে প্রয়োজনে। এ নিয়ে আর কেউই কিছু বলেনি। বাড়ীতে এসে পূর্ণ তার পার্সেনাল জিনিসপত্র নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি শুরু করে। বিশেষত রোদের কিছু ইনফরমেশন দরকার। সেই সাথে পাঁচ বছর আগের ঘটনা পরিষ্কার করে জানা দরকার। আদৌ তার বাবার মৃ’ত্যুর পেছনে রোদ দায়ী তো? কিন্তু পূর্ণকে তো এটাই বলা হয়েছিলো। সব কেমন তালগোল পাকানো।

হলুদের অনুষ্ঠান টা সুন্দর ভাবেই কেটে যায়।
পরের দিন সবাই কাজে ব্যস্ত কিছুটা। যেহেতু বিয়ে বাড়ী বলে কথা। শরীফ শিকদার পূর্ণর সাথে বসে কথা বলছে। তারা দুপুরের দিকে যাবে। মূলত পূর্ণ তার বাবার মৃ’ত্যু এবং রোদের এই বাড়ীতে আসা নিয়েই জিজ্ঞেস করে। তবে শরীফ শিকদার সুন্দর, যুক্তি সম্মত কোন উত্তর দিতে পারেনি। পূর্ণর ব্যপারটা একদম পছন্দ হয়নি। সেজন্য আর কথা বাড়ায়নি সে। রুমে এসে শাওয়ারে ঢুকে যায় পূর্ণ।

শরীফ শিকদার লিভিং রুম থেকে উঠে নিজের ঘরে যায়। ফোন হাতে মেসেজের নোটিফিকেশনে চেক করে। কিছু টেক্সট আদান-প্রদান করে রেডি হতে চলে যায়।

গেটে দাঁড়িয়েছে মেহের,তিশা,শিশা। এখনো রোদের দেখা মিলেনি। মাইশার বর পিয়াস এবং তার দেবর পাভেল সাথে তাঁদের কিছু কাজিনরা মিলে কথা-কাটাকাটি করছে। তবে পাভেলের এসবে মন নেই। সে তার সুন্দরী বেয়াইনকে দেখার জন্য এক্সাইটেড। তাঁদের ঝগড়ার মাঝে পূর্ণ এবং শরীফ শিকদার গাড়ী থেকে নেমে আসে। সাদা পান্জাবি পরিহিত পূর্ণ বেশ এট্টিটিউড নিয়েই ভেতরের দিকে আসছে। তাঁদের গেট দিয়ে প্রবেশের আগে টাকা নিয়ে গেট খালি করে দেয় সবাই। পূর্ণ ভেতরে এসে সবার সাথে টুকটাক ইন্ট্রডিউস হয়ে নেয়। পাভেলের সাথেও কথা হয়েছে। তবে পূর্ণ র পাভেলকে পছন্দ হয়নি। ভাবসাব ভালো ঠেকছে না। তূর্ণ অতিথিদের নিয়ে কিছুটা ব্যস্ত। তিশা,শিশা,মেহের তারা বরের সাথে পিকচার তুলছে। পূর্ণ একটা চেয়ার টেনে সামনে বসে আছে। কিছুক্ষণ পর রোদের আগমন হয়। মেয়েটা সাদা গাউন পড়েছে। তেমন সাজেনি তবে বেশ সুন্দর লাগছে তাকে। পূর্ণ রোদের থেকে নজর ফিরিয়ে পাভেলের দিকে তাকায়। ছেলেটা তার পাশাপাশি বসে আছে। পাভেল চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে জেনো। উঠে রোদের দিকে যাবে তখন পূর্ণ আগে গিয়ে রোদের হাত খপ করে ধরে নেয়। রোদ তিশাদের কাছেই যাচ্ছিলো। আচমকা হাত ধরায় কিছু ঘাবড়ে যায়। মেকি হাসি টেনে বলে, ” হাত টা ছাড়ো?”

পূর্ণ আশেপাশে চোখ ভোলায়। একটু কড়া কন্ঠে বলে,
” আজেবাজে ছেলেদের সাথে মিশলে খবর আছে। আমার চোখে যদি পড়েছে তাহলে সত্যি তোমার খবর আছে মিস তাহসিনা খানম রোদেলা।”

পাশে দাঁড়ানো পাভেল হাত বাড়িয়া ছিলো হায়, হ্যালো করার জন্য। কিন্তু পূর্ণর কথায় হাত গুটিয়ে নেয়। হিংসে হয় বেশ।
“পূর্ণর এতো মাথা ব্যাথা কিসের? সে কী জামাই নাকী? একবার শুধু রোদকে ইমপ্রেস করি তারপর পূর্ণ কে বৃন্দাবন না দেখিয়েছি তাহলে আমার নাম ও পাভেল না।”

মনে,মনে কথাগুলো বলে নিজের সীটে এসে বসে পড়ে পাভেল। পূর্ণ বিয়ে বাড়িতে মনোযোগ দিতে পারেনি। তার সম্পূর্ণ নজর পাভেল আর রোদের উপর ছিলো। কিছুক্ষণ পর তূর্ণ এসে পূর্ণকে নিয়ে যায়। মাইশার বরের সাথে ইন্ট্রডিউস হতে। সেখানে তারা কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে পিকচার তোলে। তখন পাভেল ও আসে। সেও সবার সাথে পিকচার তোলে। রোদের সাথে তোলার প্রস্তুতি নেয় পাভেল। তখন পূর্ণ রোদকে ডেকে ভেতরে পাঠিয়ে দেয়। পাভেল বেশ বিরক্ত হয়। পূর্ণ কাবাব মে হাড্ডি হচ্ছে কেন? প্রতিবার পাভেল কট খাচ্ছে।

খাবার খেতে বসেছে সবাই এক টেবিলেই। খাবার সার্ভের দায়িত্বে আছে তূর্ণ এবং শূন্য। তিশা,শিশা,মেহের,রোদ একসাথে বসেছে। রোদের পাশে দু’টো চেয়ার খালি। পাভেল রোদের পাশের চেয়ারটায় বসতে যাবে কোথা থেকে পূর্ণ এসে সেটা দখল করে নেয়। পাভেলের দিকে তাকিয়ে বলে, “পাশের চেয়ারটায় বসতে পারো।”

পাভেল মেকি হাসু টেনে বসে যায়।
“মানুষ নিজের প্রোপার্টি, জামাকাপড়, ফোনটাকেও এভাবে প্রটেক্ট করে না এই পূর্ণ রোদকে যতটা করছে।”

খাবারে পর্ব শেষ করে তারা উঠে যায়। আজকাল রোদ খেয়াল করছে পূর্ণ তার আশেপাশে ঘেঁষছে বেশী। কাউকে পাত্তা দিচ্ছে না রোদের পাশে। কিন্তু রোদ এসবে বিশ্বাসী না। বেডা এমনই! মুড ভালো হলে দুনিয়ার সব করবে। মনে হবে তার মতো ভালো এবং রেসপন্সিবিলিটি পূর্ণ মানুষ আর দু’টো নেই। যখন মুড নড়চড় হয় তখন রোদ কে? কাউকেই চিনে না। তখন ব্যবহার ঠিক থাকে না।

বিয়ে-শাদির পর্ব শেষ হতে বিদায়ের সময় ঘনিয়ে আসে। শেষ সময়ে পাভেল তিশার সাথে ভাব জমাতে এসেছিলো। সেখানেও পূর্ণ তিশাকে ডেকে নিয়ে যায়। মোট কথা আজকে পাভেল তার কোন বেয়াইনের সাথে ভাব জমাতে পারেনি। এই তূর্ণর নজর চিলের নজরের থেকেও ভয়ংকর। কীভাবে জেনো চলে আসে।

পাভেল তার পরিবারের সাথে বিদায় নেয়। আশা একটাই যদি মাইশার ফুফির বাড়ীতে দাওয়াত দেয় তাহলে রোদের দেখা পাবে। সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করো। মাইশাকে বিদায় দিয়প আর একমুহূর্ত ও অপেক্ষা করেনি পূর্ণ। সে শিকদার বাড়ীতে রওনা হয়। বিকেলে বাকীরা চলে আসবে হয়ত। দু’দিন পর আবার বৌভাত অনুষ্ঠান।

পাভেল গাড়ীতে বসে আজকের পিকচার দেখছে। একটা পিকচার ও রোদের সাথে বা তিশার সাথে তোলতে পারেনি।
” এদের বোনদের কে বিয়ে করবে ভাই? কোন ছেলে চোখ তুলে তাকালেই তো মনে হয় চোখ হাতে ধরিয়ে দিবে। যা হিটলার ভাই! যারা এর বোনদেরকে বিয়ে করবে তাঁদের কপালে দুঃখ আছে।”

পাভেল মনে,মনে কথাগুলো ভাবে। এছাড়াও পূর্ণক বকাঝকা করতে একদম ভুল করেনি সে।

#চলবে