এক ফালি প্রণয় পর্ব-১১+১২

0
8

#এক_ফালি_প্রণয়|১১|
#শার্লিন_হাসান

কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। পূর্ণ আজকাল বেশ ব্যস্ত। তবে রোদের সাথে তার ভাব আজকাল বেশ বেড়েছে। এই নিয়ে অবশ্য এখন কেউ তেমন মাথা ঘামায় না। পূর্ণ কে আবার বিশ্বাস নেই তবে সবার মনেই ডাউট কী এমন হলো যে পূর্ণ আর রোদ সাপে নেউলে এতো ভাব। নিজের কাজকর্ম সামলে এগারোটার দিকে পূর্ণ খেতে বসে। বাকীরা দশটায় খেয়ে নিয়েছে রাতের ডিনার। পূর্ণ একাই খেতে বসেছে। তখন রোদ আসে এদিকটায়। পূর্ণকে লেট করে খেতে দেখে শুধায়, ” একা,একা খাচ্ছো?”

” কেনে তুমি ও আমার সাথে খাবে নাকী?”

” আরে না! আমি ডিনার করে নিয়েছি।”

“তূর্ণ ভাই করেছে ডিনার?”

“হ্যাঁ করেছে।”

পূর্ণ আর কথা বাড়ায়না। রোদ ফ্রিজ থেকে পানির বোতল নিয়ে রুমে চলে আসে। পূর্ণ খাওয়া শেষ করে তার রুমের দিকে হাঁটা ধরে।

পরের দিন সকালে তিশা,রোদ ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। তূর্ণ তখন ঘুম থেকে উঠেছে সবে। গার্ডেন থেকে উপরে নজর দিতে দেখে দু’জন কথা বলছে। রোদের রোদ পড়া মুখশ্রীর দিকে একনজর তাকিয়ে নজর সরিয়ে নেয় তূর্ণ। কিছু একটা ভেবে সে মুচকি হাসে।

রোদ তিশা মিলে প্লানিং করছে সিলেট। সবকিছু ঠিকঠাক হলে আগামী কালকে তারা রওনা হবে। কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে দু’জন নিচে চলে যায়। ভার্সিটি যাওয়ার উদ্দেশ্য রেডি হয়ে নেয়। সকালের নাস্তাটা সেরে দু’জন ভার্সিটিতে চলে আসে।

পূর্ণ পার্টি অফিসের মিটিং শেষ করে বারোটার দিকে রওনা হয় বাড়ীর উদ্দেশ্য। আজকে তার কিছু কাজ বাকী আছে। যেহেতু ঢাকা থেকে সিলেট যাবে তাই আকাশ পথটাই বেছে নিয়েছে সে।
সিলেটের সাদা পাথরে যাবে সেজন্য রিসোর্ট ও বুক করে নিয়েছে। তার দায়িত্ব সে সুন্দর ভাবে পালন করে নিয়েছে।

অফিসে নিজের রুমে বসে আছে তূর্ণ। এসি চলছে তবুও জেনো শরীর ঘামছে। কিছু একটা ভেবে তূর্ণ চুলে হাত ভোলায়। আগামী কালকে তো সিলেটের উদ্দেশ্য রওনা হবে। এই সুন্দর প্লেসে সুন্দর কিছু মূহুর্ত ও ক্যাপচার করা যায়। কিন্তু এটা কোন ভাবে সম্ভব হচ্ছে না। হবে না! তূর্ণ দ্বিধায় পড়ে যায়। কাজকর্ম তার সব উচ্ছনে গেলো। কাজে মন বসে না আজকাল। সামনে বসে আছোন শরীফ শিকদার। এসেছিলেন কিছু প্রেজেক্ট নিয়ে কথা বলতে। এসেই দেখে তূর্ণ ঝিমাচ্ছে।
শরীফ শিকদার ও বিষয়টা কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছেন। তবে কিছু বলেন না তিনি। বেশ বুঝতে পেরেছেন তাঁদের ছেলেরা বড় হয়েছে। বিয়ে শাদী দরকার। এই বয়সটা অবশ্য বউয়ের সাথে রোমান্স করে কাটানোর। অফিসে বসে কাজকর্ম নিয়ে মুরগির মতো ঝিমা’নুর না।
তূর্ণকে খুশি করানোর জন্য তিনি বলেন, ” বাপ মেয়ে দেখবো নাকী?”

“আরে চাচ্চু আমি কিছু বলেছি নাকী?”

“শূন্যকেও বিয়ে দিবো। তুমি বড় তাই তোমার সিরিয়াল আগে। এমনিতে ভাবীর সাথে এই বিষয়ে কথা হয়েছে আমার। তুমি চিন্তা করোনা। ”

তূর্ণ কিছু বলেনা। পরবর্তীতে তারা তাঁদের মেইন টপিকে মনোযোগ দেয়।

*********
পরের দিন সবাই রওনা হয় সিলেটের উদ্দেশ্য। ঢাকা থেকে সিলেট যাবে। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের এসে পৌঁছায় দশটার দিকে। সাড়ে দশটায় তাঁদের প্লাইট। পঞ্চাশ মিনিটের মতো সময়ের ব্যবধানে তারা সবাই ওসমানী বিমানবন্দরে অবতরন করে।

সেখান থেকে বাস ধরে রিসোর্টে পৌঁছায় সবাই।
তূর্ণ, শূন্যর জন্য এক রুম হলেও পূর্ণর জন্য আলাদা রুম। সে সবার সাথে মানিয়ে নিতে পারে না সহজে। তাঁদের সবারই পাশাপাশি রুম। আজকে আসতে,আসতে লান্স টাইম পেড়িয়ে গেছে। তাই সবাই লান্স করে রেস্ট নেয়। আগামী কালকে সাদা পাথরে যাবে।

রোদ রুমের বেলকনিতে যায়। জায়গাটা বেশ সুন্দর। তবে সিলেট আসার কোন ইচ্ছে ছিলো না তার। বারণ করতে পারেনি, পূর্ণ, তূর্ণ তাকে ধমকাধমকি করবে।

রিসোর্টের সামনে আড্ডা দেওয়ার মতো জায়গা আছে সেখানেই সবাই আড্ডা দিতে বসে। তাঁদের মধ্যে শূন্যকে বলা হয় গান গাওয়ার জন্য। তার ভয়েস মোটামুটি ছিলো। শেষমেশ সবাই পূর্ণকে চেপে ধরে গান গাওয়ার জন্য। এর আগে নাকী তূর্ণ শুনেছিলো কোন ভাবে। বেশ ভালো গায় প্রশংসা ও করলো। তবে বাকীরা কেউই শোনেনি বা শোনার মতো সৌভাগ্য হয়নি। সবার মাঝেই বেশ এক্সাইটেড ভাইব চলে এসেছে। পূর্ণ কেনো জেনো না করেনি। আজকাল তার মাঝে এতো পরিবর্তন নিজেকেও ভাবাচ্ছে। অতঃপর কাঙ্ক্ষিত মূহুর্তে পূর্ণ গায়,
হতে পারে কোনো রাস্তায়
কোনো hood তোলা এক রিকশায়
আমি নীল ছাতা নিয়ে দাঁড়িয়ে, তুমি দেখলে না
রোদে পোড়া এ রোমিও চেহারা
তুমি বুঝলে না আমার ইশারা
মন বলে যদি থামতে, তুমি থামলে না

তোমার জুলিয়েট হাসি হেসে
যদি ডাকতে ভালোবেসে
আমি তোমার চোখে তাকানোর সাহস পেতাম না
আমার জড়সড় এই শরীরে
তোমার হাওয়ায় লাগছে ফুরফুরে
প্রেম নাকি পাগলামি, বলতে পারব না

লোকে পাগল বলুক, মাতাল বলুক
আমি তোমার পিছু ছাড়ব না। (২)
তোমার পিছু ছাড়ব না

সবাই বেশ মুগ্ধ হয় গান শোনে। পরবর্তীতে পূর্ণ নিজেই আরেকটা গান গায়,

ভালোবাসবো বাসবো রে বন্ধু তোমায় যতনে
আমার মনের ঘরে চাঁদের আলো চুইয়া চুইয়া পড়ে
পুষে রাখবো রাখবো রে বন্ধু তোমায় যতনে

দুধে আলতা গায়ের বরণ রূপ যে কাঁঞ্চা সোনা
আচল দিয়া ঢাইকা রাইখো চোখ যেন পড়ে না
আমি প্রথম দেখে পাগল হইলাম
মন যে আর মানে না
কাছে আইসো বন্ধু প্রেমের কারণে
ভালোবাইসো রে বন্ধু আমায় যতনে

তাঁদের গানের আড্ডা শেষ হতে রুমে যাওয়ার তাড়া দেখায় রোদ। কেউই আর তেমন কিছু বলেনি।

রাতের ডিনার টা শেষ করে বেলকনিতে যায় পূর্ণ। আজকাল তার মাঝে পরিবর্তন এসেছে। পূর্ণ তো এমন ছিলো না! এতটা পরিবর্তন আশা করেনি পূর্ণ।

পরেরদিন,
রিসোর্ট থেকে ভোলাগঞ্জ বাজারের উদ্দশ্যে রওনা হয়।
মাথার ওপরে তুলোর মতো মেঘ। সীমান্তের দিকে ক্যানভাসে আঁকা ছবির মতো সবুজ পাহাড়। নিচে পানি-পাথরের সংমিশ্রণ। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলেছে ঠান্ডা পানির স্রোত। যদিও সিলেট জুড়েই সবুজের হাতছানি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর সিলেট। যেই প্রকৃতির দৃশ্য দেখার জন্য ছুটেছে এক ঝাক তরুণ,তরুণীরা। পাহাড় গুলোকে মুড়িয়ে রাখা চা-বাগান,আকাশ,সবুজ ক্ষেত,ছোট বড় নদী।
চায়ের রাজ্য, বুনো বন, পাথুরে নদী, পাহাড়ের বুক চিরে নেমে আসা ঝরনা, বিস্তৃত নীল জলধারা, হাওরসহ আছে দৃষ্টিনন্দন আরও পর্যটনকেন্দ্র। এর মধ্যে অনেকের প্রিয় ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর।

এ পাথরের উৎস ধলাই নদ। ভারতের খাসিয়া জৈন্তিয়া পাহাড় থেকে প্রচুর পরিমাণে পাথর ঝরনার পানিতে নেমে আসে।
ভোলাগঞ্জ বাজার থেকে এক কিলোমিটারের ভেতরেই সাদা পাথরে যাওয়ার ঘাট। রোদ,তূর্ণ, পূর্ণ সহা তারা সবাই ঘাটে এসে নামে। সাদা পাথরের মনোরম দৃশ্যে যেনো চোখ জুড়িয়ে গেলো। সাদা পাথরের স্বর্গরাজ্য পাথর বিছানার উপর দিয়ে ধেয়ে যাচ্ছে ঝরনার পানি।

দু’দিকে পাথর, মাঝখান দিয়ে বয়ে যাচ্ছে স্বচ্ছ জলধারা। রোদ,তিশা আর দেরী করেনি। ঠান্ডা স্বচ্ছ পানিতে পা ভিজিয়ে বসে রয়। বাকীরাও প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে। এছাড়াও সুন্দর, সুন্দর মূহুর্ত গুলো তারা ক্যামরা বন্দী করে নিচ্ছে।

পূর্ণ তাঁদের থেকে কিছুটা দূরে বসা। এক পলকে সে রোদ,তিশার কান্ড দেখছে। সিলেটের সাদা পাথরের সৌন্দর্য উপভোগ করবে কী! সামনে বসে থাকা অপরুপ কন্যার প্রকৃতি বিলাস দেখেই জেনো চোখ জুড়াচ্ছে।

সবাই মিলে গ্রুপ পিকচার তুলে। পূর্ণ, তূর্ণ তাঁদের একমাত্র বোন তিশাকে পিক তুলে দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। পূর্ণর তো মাথা থেকে উড়ে গিয়েছিলো তার যে একটা বোন আছে। মনে,মনে রোদকেই দোষারোপ করলো সে। তূর্ণ বেচারায় নিজের বিয়ের চিন্তায় তিশা,রোদ,পূর্ণ সবার কথাই ভুলে গেছে। তবু তিশার আবদার গুলো আপাতত সে মাথা পেতে নিচ্ছে।

সবাই মিলে বেশ কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে সময় কাটিয়ে পুনরায় রওনা হয় রিসোর্টের উদ্দেশ্য।
( লোকেশন গুগল থেকে কালেক্ট করা। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)

#চলবে

#এক_ফালি_প্রণয়|১২|
#শার্লিন_হাসান

এর মাঝে বেশ কয়েক দিন কেটে যায়। সিলেট ভ্রমণ শেষ হয়েছে তাঁদের। রোজকার মতো ব্যস্ত সময় কাটে। তবে রোদের সাথে আজকাল পূর্ণর ভাব চোখের পড়ার মতো। তূর্ণর সাথে ও আজকাল ওতো ভাব নেই। পূর্ণ ও আজকাল রোদ,রোদ করে। বিষয়টা আস্তে ধীরে সবার হজম হচ্ছে। সকাল বলে নাস্তার টেবিলে বসে নাস্তা খাচ্ছে সবাই। পূর্ণ রোদ পাশাপাশি বসা। তারা দু’জন কিছু নিয়ে কথা বলছিলো আর হাসছিল। শরীফ শিকদার চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছেন আর সবার সক্রিয়তা লক্ষ করছেন।

“তূর্ণ ভাইয়ার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”

এরই মাঝে কথাটা বলে পূর্ণ। তখন রোদ উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করে, ” কী সারপ্রাইজ?”

“ওটা তূর্ণ ভাইয়ার জন্য। তোমায় বলবো কেন রোদ?”

“আরে বলো না। ভাইয়া না জানলেই তো হলো।”

“কী সারপ্রাইজ পূর্ণ? ”

ব্রু জোড়া প্রসারিত করে বলে তূর্ণ। তখন পূর্ণ বেশ দাম্ভিকতার সাথে জবাব দেয়, ” নতুন সদস্য আসবে পরিবারে। কী বলো চাচ্চু?”

“হুম তাই। আমি আর ভাবী তো মেয়ে দেখা শুরুও করে দিয়েছি। ”

শরীফ শিকদার জবাব দেয়। তখন তিশা বলে, ” আমার নতুন ভাবী আসবে তাহলে। ”

“হুম আসবে।”

পূর্ণ জবাব দেয়। তখন শারমিন আঞ্জুম বলেন, ” তূর্ণ কে রাজী করাও তাহলেই হবে।”

“ভাইয়া তো রাজীই তাই না ভাইয়া?”

রোদের কথায় তূর্ণ তার চোখের দিকে দৃষ্টি স্থির করে। রোদ চোখাচোখি হতে দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। তখন তূর্ণ শুধায়, ‘তোমরা যা ভালো মনে করো। আমি আর না করবো না।”

তূর্ণের মতে সবাই বেশ খুশি হয়। তবে সবার তাড়া থাকায় যে যার স্থানে ছুটে যায়।

পূর্ণ তার দলের লোকদের সাথে এসেছে তাঁদের আওতাধীন থাকা বিল্ডিংয়ের কাজ দেখতে। যেটার জমি নিয়ে নিসাধের সাথে সমস্য হয়েছিলো। সেটা পূর্ণ ঠিক করে দেয়। সেখানেই দোকান হচ্ছে। পূর্ণ গাড়ীর সাথো হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। আশেপাশে তার লোকজনই। পূর্ণ একজনের আইডি স্টক করে তার দেওয়া পোস্ট গুলো পড়ছে আর হাসছে। মেয়েটা বেশ চঞ্চল যেটা পূর্ণর ভীষণ পছন্দের। তবে পূর্ণ প্রকাশ করে না বিষয়টা। এই বয়সে এসব করে বেড়ালে সমস্যা আছে। আইডি স্টক করে মুচকি হেসে নিজের কাজে মনোযোগ দেয় পূর্ণ।

রুশা তার আম্মুর সাথে বসে রাফিকে নিয়ে আলোচনা করছে। রুশা তার মা-ভাই, বাবা তিনজনের প্রতিই বিরক্ত। কী দরকার এসব সম্পত্তি নিয়ে জামেলা করার কী দরকার? রুশার আম্মু রুকমিনি ছেলেকে নিয়ো হায় হুতাশ করছে। রুশার এতে মাথা ব্যথা নেই। তার মতে একবারে ঠিক করেছে পূর্ণ। সে নিজে মেয়ে হয়ে কীভাবে আরেকটা মেয়ের সাথে এমন ব্যবহার সহ্য করবে? ভাই দেখে তেমন কিছু বলতে পারে না। সবচেয়ে বড় কথা রাফি তাঁদের বড্ড আদরের। সেই হিসাবে রুশা কিছুই না তাঁদের কাছে। রুকমিনি মেয়ের ভাবসাব দেখে মেজাজ হারায়। চোখ রাঙিয়ে বলে, ” ভাই জেলে আর তুমি এমন ভাব নিয়ে বসে আছো জেনো জেলে যায়নি আমার ছেলে পৃথিবী ভ্রমণে গিয়েছে। ওই তাহসিনার জন্যই সব হয়েছে।”

” যা হয়েছে খারাপ হয়নি।’

“রুশা!”

“আল্লাহ যা করে আমাদের ভালোর জন্যই করে মাম্মা। তুমি ভুলে গেলে বাক্যটা?”

রুকমিনি আর জবাব দেয়না। রুশাকে এসব বলে লাভ নেই। তিনি উঠে তার ভাইকে কল লাগায়। রাফিকে কীভাবে জামিন দেওয়া যায়। তার ছেলে বাড়ী নেই জেনো কিছুই ভালো লাগছে না রুকমিনির।

********

অফিস শেষে বাড়ী ফিরছে তূর্ণ। আজকে আনমনা হয়ে রিকশায় করেই বাড়ী ফিরছে। সময় সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসা। তূর্ণ ইচ্ছে করেই লেট করে বাড়ী ফিরছে। এই সন্ধ্যায় রাস্তার পাশে কিছু দম্পতি দেখতে পেলো তূর্ণ। আকাশের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয় সে। এখনআর কিছু তেই আগ্রহ কাজ করে না তার।

বাড়ী আসতে নিজেই ফ্রিজ থেকে পানির বোতল নিয়ে রুমে চলে যায় তূর্ণ। লিভিং রুমে তার ভাই,বোনের বসে কথা বলছে।

রোদ সবার জন্য চা বানিয়েছে। নিজ হাতে সবাইকে সার্ভ করছে। শূন্য তূর্ণ কে ডেকে আনে লিভিং রুমে। রোদ তূর্ণর কাপটা এগিয়ে দিতে তূর্ণ কিছুটা ব্যস্ততা দেখিয়ে বলে, ” এখন চা খাবো না রোদ। আমার কাজ আছে।”

“আরে ভাইয়া আমি বানিয়েছি চা।”

“হ্যাঁ জানি রোদ ভালো চা বানায়।”

মুখ ফসকে বলে কথাটা। তখন রোদ শুধায়, “তুমি এর আগে কখনো আমার হাতে বানানো চা খেয়েছ?”

“না খাইনি। কারণ তুমি এর আগে চা বানাওনি কারোর জন্য।”

“বানাই না কারণ আমি বাজে চা বানাই। চাই না সেগুলো কেউ খেয়ে আজীবন আমায় বকা দিক।”

“তো আজকে বানালে যে?”

রোদ হাসে কিছুই বলেনা। তূর্ণ আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসে। রোদ নিজের কাপটা নিয়ে সোফায় বসে৷ তিশা, শূন্য রোদ,তূর্ণর কথার মানে বুঝা ট্রাই করছে। তবে শূনঢ় কিছু আন্দাজ করেছে। পূর্ণর এসবে মনোযোগ নেই। সে তার মতো করে রোদের বানানো চা টেস্ট করছে। তখন রোদ পূর্ণকে উদ্দেশ্য করে বলে, “পূর্ণ ভাইয়া আমার বানানো চা কেমন হয়েছে?”

“মুখে তোলার মতো। তবে আর কাউকে এই চা বানিয়ে খাওয়াতে যেও না।”

” আরে যেমনই হোক একটু তো প্রশংসা করো।”

“করবো একদিন অপেক্ষা করো।”

কথাটা বলে পূর্ণ উঠে চলে যায়। তিশা রোদের দিকে তাকিয়ে বলে, “কী ব্যপার রোদ আমার ভাবী হওয়ার প্রিপারেশন নিচ্ছো বুঝি?”

“কোন ভাইয়ের বউ?”

“কী জানি!”

“এই তিশা তুমি বেশী বুঝো না তো!”

“হুহ্! বুঝাই যায় না বুঝে কই যাবো?”

তাদের কথার মাঝে শূন্য বা হাত ঢুকিয়ে বলে, “আসলে রোদ তুমি কার? একজন মানুষ ভাব সাব অনুযায়ী তিনটি মানুষ তার দাবিদার।”

তখন রোদ শূন্যর মাতায় গাট্টি মেরে বলে, “শূন্য ভাই আমি আসলে কারোর না। আমি তো তোমার তাই না ভাইয়া?”

“মজা করো না রোদ। এটা অনেক মারাত্মক লেভেলের সিরিয়াস বিষয়।”

“সি আইডি গিরি বন্ধ করে অফিসের কাজে মনোযোগ দাও। সামনে নতুন প্রজেক্ট আছে।”

“হ্যাঁ অনেকগুলো প্রজেক্ট আছে। কারোর বিয়ের প্রজেক্ট, কারোর প্রেম-ভালোবাসার সম্পর্ক উদঘাটনের প্রজেক্ট, বিজন্যাসের প্রজেক্ট। সব মিলিয়ে ওয়াও,ওয়াও টাইপের ব্যস্ততা আর সারপ্রাইজ।”

“তিশা শূন্য আসলে কার মতো হয়েছে? এতো খোঁচা মা-রা কথা শিখলো কবে থেকে?”

তখন শূন্য রোদের দিকে তাকিয়ে বলে, ” মন দিলে একজনকে দিও। বুঝে শুনে দিও কিন্তু।”

রোদ উঠে চলে আসে নিজের রুমে। না তার ভাই বোনের যেভাবে পিছু পড়েছে। সত্যি কথা পূর্ণর সাথে রোদের সম্পর্ক নেই তাও সবাই কেন সন্দেহ করে?

রোদ ভেবে পায়না। তবে ডায়েরি হাতে বেলকনিতে যায় রোদ। দোলনায় বসে ছোট্, ছোট বাক্য সাজায়।

❝তোমাকে পারিনি আপন করতে,পারিনি হৃদয় সায়রে জমে থাকা ভীষণ কঠিন একটা বাক্য শোনাতে। তবে তোমায় আমি রেখেছি, খুব যতনে আমার এক ফালি প্রণয়ের রঙে।❞
লেখা:#শার্লিন_হাসান (কপি করা নিষেধ)

‘অপ্রিয় পুরুষ’
❝প্রণয়ের স্বপ্নে তোমায় সাজাই, পরিনয়ের রঙে তোমায় রাঙাই, তবে বিচ্ছেদের ভয়ে তোমায় হারাই।❞
লেখা:#শার্লিন_হাসান (কপি করা নিষেধ)

রোদ আকাশের দিকে তাকিয়ে ভানে পূর্ণর সাথে তার মেলামেশা, কথাবলার শুরুটা নিয়ে। রোদ ডুবে যেতে,যেতে বেঁচে যাওয়ার দুইদিন পর ছাঁদে দাঁড়িয়েছিলো। তখন কী মনে করে পূর্ণ আসে ছাঁদে। দেখে মনে হয়েছিলো রোদকেই খুঁজছে। রোদ নিজেকে যথেষ্ট ঠান্ডা রাখে। পূর্ণর উল্টাপাল্টা কথায় মেজাজ হারালে আবার ঝগড়া হবে তাঁদের। তখন পূর্ণ বলেছিলো, ” এখন কেমন ফিল করছো?”

তখন রোদ শুধায়, ” দুইদিন পর তো সুস্থতাই অনুভব করবো। আর আমায় দেখলেও বুঝা যায় সুস্থ হয়ে গেছি। যখন খোঁজ নেওয়ার তখন নেওনি এখন আলগা দরদ দেখাতে হবেনা।”

রোদের ত্যাড়া কথায় পূর্ণর মেজাজ বিগড়ে যায়। রাগী স্বরে বলে, ” এই জন্যই তোকে আমি এভয়েড করি। তোর সাথে আমার একটুও যায় না। এক মূহুর্ত ও না। তুই আমার বিপরীত একদম বিপরীত। যাই হোক ভুল হয়েছে আমার তোকে কথাটা জিজ্ঞেস করা।”

” গুড। আমি মরে যাচ্ছি। হায় আল্লাহ তাহিয়ান শিকদার পূর্ণ আমায় পাত্তা দিচ্ছে না। তার ইগোর আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছি। তার থেকে এটেনশন পাওয়ার আশায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছি। প্লিজ কেউ এটেনশন এনে দাও।”

“এই চুপ থাকবি?”

” তোমার সাথে আসলেই আমার যায় না।”

পূর্ণ তেজ দেখিয়েই প্রস্থান করে সেদিন। রোদ বিরক্তি নিয়ে তার যাওয়া দেখছে। এরপর ও বেশ কয়েকবার তাঁদের ঝগড়া হয়। তবে হুট করেই পূর্ণ চেঞ্জ হয়ে যায়। রোদের ত্যাড়া কথায় ও সে সুন্দর ভাবে উত্তর দিতো। পূর্ণর ব্যবহার,কেয়ার রোদ আর ত্যাড়ামী করতো না। গলে যায় পূর্ণ প্রতি। এখনো গলা অবস্থাই আছে। তবে রোদের ভীষণ ভয় হয়। সে নিজের সত্তাকে হারাতে চায় না। ছোট হতে চায় না কারোর কাছে। নিজের অবস্থানের জায়গা ব্যতীত আর কিছুই নেই তার কাছে তবে সেই অবস্থানের জায়গাটা কেড়ে নেওয়ার জন্য মানুষের অভাব নেই। সবাই ভালো কিন্তু মানুষ জাতিকে বিশ্বাস করা বড্ড দায়। কে কখন আপন সেজে পেছন থেকে ছুরির আঘাত করে বলা যায় না।

#চলবে