এক ফালি প্রণয় পর্ব-১৩+১৪

0
8

#এক_ফালি_প্রণয়|১৩|
#শার্লিন_হাসান

“তাহসিনা খানম রোদেলা রে’প হতে যাচ্ছে। তার প্রেমিক হিসাবে ব্যপারটা তোমার জানা দরকার মেয়র তাহিয়ান শিকদার পূর্ণ। তুমি শুনবে,তোমার সামনে দিয়ে তাকে নিয়ে যাওয়া হবে তুমি চেয়ে,চেয়ে দেখবে কিন্তু কিছুই করতে পারবে না। প্রেমিক হিসাবে এটা তোমার ব্যর্থতা।”

টেক্সট টা দেখে পূর্ণ ব্যাকে ক্লিক করে। এসব কিছুই সে বিশ্বাস করে না। কেউ তাকে দমানোর জন্য রোদকে ব্যবহার করছে এটা পূর্ণর ধারণা। কিন্তু নতুন করে আবার কে যোগ হলো? পূর্ণ র মাথা কাজ করে না। সাথে,সাথে একটা নাম্বারে টেক্সট করে, ” তোমার কথা মতো তো সবই হচ্ছে তাহলে আবার নতুন করে থ্রেট দেওয়ার কী আছে?”

অপরপাশ থেকে রিপ্লাই আসে,
“এখনো কিছুই হয়নি। তাহিয়ান তুমি কোন কাজের না। প্রোপার্টি আমি পেয়ে গেলে মনে করো তুমিও মুক্ত। তোমার ক্যারিয়ারের উপর আর কোন ঝড় আসবে না। মন দিয়ে কাজ চালিয়ে যাও।”

” তাহসিনাকে নিয়ে নতুন করে আবার কোন নাটক সাজানো হচ্ছে?”

“পুরোন টাই শেষ হলো না। আবার নতুন কী সাজাবো?”

পূর্ণ দেখে আর রিপ্লাই করে না। তাহলে নতুন কেউ আবার আসছে। পূর্ণর বেশ বিরক্ত লাগে। ঘড়ির কাটায় নজর দিতে দেখে রাত তিনটা বাজে। বেলকনিতে গিয়ে একটা সিগারেট ধরালো। কয়েক টান দিয়ে অম্বরের দিকে নজর স্থির করলো। পাশের বেলকনিতে কারোর অস্তিত্ব টের পেতে পাশ ফিরে তাকায় পূর্ণ। রোদ এখনো জেগে আছে। একনজরে অম্বরের দিকে তাকিয়ে আছে। আজব! অম্বরে আজ শশীর দেখা নেই। অন্ধকারাচ্ছন্ন অম্বরের দিকে কেউ এভাবে তাকিয়ে থাকতে পারে? অবশ্য আজকের অন্ধকার অম্বরের মতো মেয়েটার জীবনে ও অন্ধকার নেমে আসতে বেশী দেরী নেই। পূর্ণ বেশ টের পাচ্ছে। ফোন হাতে রোদকে মেসেজ দেয়, ” চলো ছাঁদে যাই।”

রোদ মেসেজ পেয়ে পাশের বেলকনিতে তাকায়। পূর্ণর আবদার টা ফেলতে পারেনি। কেনো জানি এই আবদার গ্রহণের তৃষ্ণায় খা খা করছিলে মনটা। রোদ সম্মতি দিতে দু’জনে রুম থেকে বেড়িয়ে পড়ে।

ছাঁদ থেকে নেমে সিঁড়ি বেয়ে রুমে প্রবেশ করে তূর্ণ। তার পেছন দিয়ে পূর্ণ এবং রোদ একসাথে ছাঁদে যায়। দরজা লাগানোর সময় দু’জনকে একসাথে দেখে তূর্ণ।

আজকে রোদের হাত ধরেই পূর্ণ ছাঁদে আসে। শুনশান নিরব নিশিতে শো,শো করে বাতাস বইছে। বাতাসটা বেশ ঠান্ডা এনং হিমশীতল। পূর্ণ রোদের দিকে দৃষ্টি স্থির করে। তখন রোদ শুধায়, ” আমায় নিয়ে ছাঁদে আসলে যে?”

” আসলে মন টা ভালো নেই রোদ। ভাবলাম ছাঁদে আসি! বেলকনিতে যেতে দেখলাম তুমি জেগে আছো। তাই ভাবলাম একা আসার চেয়ে সাথে কেউ আসুক। কথা বললে হয়ত ভালো লাগবে। এর বাইরে কিছু না।”

“ওহ্!”

“আচ্ছা রোদ একটা কথা জিজ্ঞেস করি?”

“করো?”

“তুমি সবচেয়ে বেশী কী হারানোর ভয় পাও?”

রোদ জবাব দেয়না। রোদকে চুপ থাকতে দেখে পূর্ণ পুনরায় শুধায়, ” জানো না?”

“জানি! তবে উত্তরটা আপাতত মানানসই না তাই দিতে পারছি না।”

পূর্ণ কিছু আন্দাজ করে মুচকি হাসে। রোদ পূর্ণর উপস্থিত খুঁটিয়ে,খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে। অনেক কিছুই তার কাছে নাটকীয় লাগে। কিন্তু নিজেকে কীভাবে কন্ট্রোল করবে?

কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে দু’জনে পুনরায় ছাঁদ থেকে প্রস্থান করে। রুমে যাওয়ার পূর্বে পূর্ণ বলে, ” এখন আর রাত জেগো না। ঘুমিয়ে পড়ো নাহলে আবার অসুস্থ হয়ে পড়বে।”

“আচ্ছা। তুমিও রাত জেগো না।”

মৃদু আলোয় পূর্ণর মুখশ্রী তে দৃষ্টি রেখে কথাটা বলে রোদ। পূর্ণ মুচকি হেসে রুমে চলে যায়। রোদ নিজের রুমে এসে আর দেরী করেনি। চুপচাপ শুয়ে পড়ে।

*********

পরের দিন সকালে যথাসময়ে পূর্ণ উঠে যায়। আজকে অফিস যাবে সে। কিছু ইমফরটেন্ট কাজ আছে। তূর্ণ, শরীফ শিকদারের সাথেই সে রওনা হয়।
শিশা তার এক্সামের প্রিপারেশন নিয়ে ব্যস্ত। তিশার বাইরে কিছু কাজ থাকায় গিয়েছে। রোদ আজকে উঠতে লেট করে ফেলেছে। বাড়ীতে এখন সাইখা ইসলাম এবং শারমিন আঞ্জুম, রোদ ব্যতীত কেউই নেই। তারা দুই জা মিলে ভালো মেয়ের সন্ধান করছে। রোদ ফ্রেশ হয়ে লিভিং রুমে আসে। দুই মামীকে দেখে বলে, ” কী দেখছো তোমরা? আমায় ও একটু দেখাও না?”

তখন সাইখা ইসলাম জবাব দেন, ” আসো তুমি সহ মিলে মেয়ে দেখি। তুমি বলো তূর্ণর জন্য কেমন মেয়ে হলে ভালো হয়?”

” অবশ্যই চঞ্চল মেয়ে চাই ভাইয়ার জন্য। কারণ ভাইয়া অনেক চুপচাপ। ভাইয়াকে জ্বালানোর জন্য বকবক করা একটা মেয়েই চাই।”

“কথাটা ভুল বলোনি রোদ। চঞ্চল মেয়েরা বেশ মিশুক হয়। আমাদের সাথেও জমে যাবে ভালো।”

শারমিন আঞ্জুমের কথায় রোদ হাসে। তখন সাইখা ইসলাম বলেন, ” তোমার জানা শোনায় কেউ আছে রোদ?”

” আরে না। কেউ নেই!”

**********

সন্ধ্যায় তূর্ণ, তিশা,শূন্য,রোদ বসে কফি খাচ্ছে। তখন শূন্য বলে, ” তূর্ণ ভাইয়ার জন্য মেয়ে দেখা জরুরী। অনেকদিন হলো বিয়েতে নাচি না।”

” মেয়ে দেখার কী দরকার আমি আছি না। আমার বিয়ে করার অনেক শখ।”

মুখ ফসকে কথাটা বলে রোদ। শূন্য এসব শোনেও না শোনার ভাণ করে। এসবে আর সে মাথা ঘামাবে না বলে শপথ গ্রহণ করেছে। তখন তিশা রোদকে থাপ্পড় দিয়ে বলে, ” তোকে আমার ছোট ভাইয়ের বউ বানাবো। বড় ভাইয়ের জন্য অন্য কাউকে আনবো।”

“না আমি তোর মতোই ওদের বউদের ননদিনী হবো। এর বাইরে কিছু না।”

তূর্ণ ওদের সবার কথাবার্তা শুনছে। তবে কোন রিয়েকশন দিচ্ছে না। শূন্য এসব না শোনার মতো করে বসে কফিতে চুমুক দিচ্ছে। তখন তূর্ণ শুধায়, ” তিশার সাথে আমি একমত। রোদকে আমার ভাইয়ের বউ বানাবো।”

শূন্য তূর্ণর দিকে তাকায়। তূর্ণ চোখ দিয়ে ইশারা করে কিছু না বলতে। ওদের এই দুষ্টুমির মাঝে ব্যঘাত ঘটে শরীফ শিকদারের আগমনে। তিনি তাদের কথপকথনের মানেটা আন্দাজ করতে পারেন। রোদের দিকে তাকিয়ে বলেন, ” রোদ মাকে অদূরে পাঠাবো না। শিকদার বাড়ীতেই রেখে দেবো। আমার ভাইয়ের ভীষণ আদরের ছিলো রোদ। ”

শরীফ শিকদারের কথায় সবাই চুপ হয়ে যায়। রোদের মনে হলো কাটা গায়ে লবণের ছিটা দিলো শরীফ শিকদার। সেখানে তখন আবার পূর্ণ উপস্থিত হয়। শরীফ শিকদারের কথাটা তার কাণে আসে। রোদের দিকে নজর দিতে দেখে তার মুখ অন্ধকারে ঢেকে গেছে। পূর্ণর রাগ হয় বেশ। তবে রাগটা যার উপরই হয়েছে প্রকাশ করে না সে।

তিশার রুমে প্রবেশ করে রোদ। এসেই তিশার সামনের চেয়ারটা বসে পড়ে রোদ। মলিন কন্ঠে বলে, ” আচ্ছা তিশা তুমিও কী পূর্ণ ভাইয়ের মতো করে আমায় ঘৃ’ণা করো? অপবাদ দাও? খু’নি ভাবো?”

রোদের এমন কথায় তিশা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। রোদের গালে হাত রেখে বলে, ” তুমিও না রোদ। পুরোনো কথা কেন টানছো? তোমার কী দোষ বলো? বাবার হায়গায় হয়ত তুমি ম’রতে এটাই তো তফাৎ। উপরওয়ালা তোমার হায়াত রেখেছে তাই আছো। আর এটা একটা এক্সিডেন্ট রোদ এতো সিরিয়াস হওয়ার কিছু নেই।”

“কিন্তু আমি পূর্ণ ভাইয়ার চোখে আমার জন্য এক আকাশ সম ঘৃ’ণা দেখতে পাই।”

” তাহলে এই ঘৃ’ণার আকাশে #এক_ফালি_প্রণয় নিয়ে আসো না?”

” এটা ছেলে খেলা নয় তিশা। আমি #এক_ফালি_প্রণয় নিয়ে আসবো কিন্তু হিতে বিপরীত হবে। হয়ত এই #এক_ফালি_প্রণয়ের তৃষ্ণায় আমি আজীবন ধুঁকে মরবো। জানো তিশা? আমি আমার আমিটাকে ভীষণ ভালোবাসি। শান্ত জলের মতো আমি মনে রাখি, আমার নিজের জায়গা টুকু ছাড়া আমার আর কিছুই নেই,কেউ নেই।”

“তোমার কথার অর্থের গভীরতা ভীষণ রোদ। অনেক ভাবলেই হয়ত এর মানে বোঝা যাবে। মেয়ে তুমি এতো ঘরিয়ে পেছিয়ে কথা বলো কেন? এর অর্থ আর গভীরতার মানে বুঝতে হলে আমায় মাথা খাটাতে হবে।”

“তবে তাই করো। আমি আসি।”

রোদ প্রস্থান করে। রোদ যেতে তিশা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। রোদ যা বলেছে তা হয়ত ঠিক তবে তিশা রোদের জন্য অন্য কারোর চোখে এক আকাশ সম ভালোবাসা দেখতে পায়। কিন্তু সে তো তার প্রকাশে ব্যর্থ। হয়ত গোপন জিনিসটা ভয়ংকর সুন্দর। তাই তো না পাওয়ার গল্প গুলো আড়ালে রেখে হাসিমুখে অন্য কারোর সাথে গোটা জীবন পার করে দেওয়া যায়।

#চলবে

#এক_ফালি_প্রণয়|১৪|
#শার্লিন_হাসান

সময়ের সাথে সূর্য পূর্ব দিগন্তে হেলান দিয়েছে। পৃথিবী সেই আলোয় আলোকিত হয়ে, একটি দিনের সূচনা করেছে। গাছে পাখি ডাকছে। সকালের স্নিগ্ধ বাতাস বইছে। নিমিশেই এই নগরীতে ব্যস্ততা বেড়ে গিয়ে ব্যস্ত নগরীতে রুপ নিবে। আজকে সব ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়েছে রোদ। তার দুই মামীর সাথে মেয়ে দেখতে যাবে। তার ছোট মামু একটা মেয়ের সন্ধান দিয়েছে। তাকেই দেখতে যাবে তারা। রোদের ইচ্ছে নেই কিন্তু তার দুই মামীর জন্য না করতে পারেনি। দু’জনই রোদকে চেপে ধরেছে।
শরীফ শিকদার, তূর্ণ সহ তারা নাস্তা করতে বসেছে। তূর্ণ শুনেছে আজকে তার জন্য মেয়ে দেখতে যাওয়া হবে। ব্যপারটা খুব তাড়াতাড়ি হবে ভাবতে পারেনি তূর্ণ। তবে নতুন কেউ তার জীবনে আসবে এই ধারণা জ্ঞাপন করেছে মনে, মস্তিষ্কে। চুপিসারে নাস্তা সেরে গাড়ীতে গিয়ে বসে তূর্ণ। শরীফ শিকদার আর শূন্য আসতে ড্রাইভার গাড়ী স্টার্ট দেয়। তূর্ণ বাইরে তাকিয়ে আছে। পাশে শূন্য তার বাবার সাথে নতুন প্রজেক্ট নিয়ে কথা বলছে।
তূর্ণর এসবে মনে নেই। পুরোনো দিনের স্মৃতি আর সময়টাকে তূর্ণ ভীষণ মিস করছে। খুব করে ফেলে আসা দিনে ফিরে যেতে মন চাচ্ছে। সে যদি মেয়ে তো?তাহলে এখন কী করতো? না তো! সে তো মেয়ে না। মেয়ে হলে নাহয় কেঁদে কেটে ভালোবাসি বলতে পারতো। সে যে ছেলে! পাথর বুকে পুষে রেখে অনিচ্ছাসত্ত্বেও থাকা সত্ত্বেও বিপরীত কারোর সাথে গোটা জীবনে নিঃশব্দে পার করে দিবে।

দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে ফোর্থ ফ্লোরে যায় তূর্ণ। নিজের ডেস্কে বসে আছে আনমনা হয়ে।

এগারোটার দিকে রওনা হয় সাইখা ইসলাম, রোদ,শারমিন আঞ্জুম। বাড়ীতে প্রবেশ করে মেয়ের মায়ের সাথে কুশলাদি বিনিময়ের মাধ্যমে সোফায় বসেন তারা। কিছুক্ষণ পর মেয়েকে আনা হয়। শারমিন আঞ্জুম ‘সিমথি’ কে পাশে বসান। এটা ওটা জিজ্ঞেস করে। রোদ সিনথির দিকে পলকহীনভাবে তাকায়। মেয়েটা মাশাল্লাহ। রোদ ভাবছে তূর্ণর সাথে বেশ মানাবে। তার মামীদের ও হয়ত পছন্দ হবে।

টুকটাক কথা বলার মাধ্যমে বিদায় দিয়ে গাড়ীতে বসে তারা তিনজন। তখন সাইখা ইসলাম বলেন, “সিনথি কে বেশ লাগছে। তোমার কেমন লাগলো রোদ?”

“আমার ও ভালো লেগেছে। কিন্তু আমাদের ভালো লাগা না লাগায় কিছু না। তূর্ণ ভাইয়ের পছন্দ হলেই সব ঠিক হবে।”

“তূর্ণর কেমন মেয়ে পছন্দ?”

শারমিন আঞ্জুমের কথায় রোদ শুধায়, ” আজকে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করবো।”

“ঠিক আছে। তবে আমি ছোট ভাইয়ার সাথে কথা বলবো। আমাদের সবার মত থাকলে তূর্ণ না করবে না আশা করি।”

রোদ আর কিছু বলেনা। সাইখা ইসলাম এনং শারমিন আঞ্জুম কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলেন বাড়ী ফেরার রাস্তাতেই।

*******

“আরে ভাই চোখে কী সমস্যা? এতো বড়লোক ভাইব নিয়ে গাড়ী চালান তো রাস্তা টাও কিনে ফেলুন না? তাহলে মানুষ গাড়ী চাপা দিয়ে মে’রে ফেললে জেলের যেতে হবে না। বলতে পারবেন আমার রাস্তা দিয়ে আমি গাড়র চালিয়েছি। কাউকে বলিনি আমার রাস্তা দিয়ে হাঁটতে। কীসব মানুষরে বাবা! আমার মতো ইনোসেন্ট মেয়েটাকে মে’রে ফেললে কী হবে বলুন তো? এমন মেয়ে খুঁজে পাবেন জীবনে?”

অচেনা মেয়েটার কথায় ভ্যাবাছ্যাকা খেয়ে যায় তূর্ণ। এক দমে এতো গুলো কথা কেউ বলতে পারে? তাও এমন অগোছালো ভাবে? তূর্ণকে চুপ থাকতে দেখে সিনথি আবারো বলে, ” স্যরি বলুন এক্ষুণি।”

“স্যরি বলবো কেনো?”

তূর্ণর ত্যাড়া কথায় সিনথি পুনরায় শুধায়, ” একটু আগে আমায় মে’রে ফেলতে যাচ্ছিলেন। দেখুন আমার হাতে ব্যাথা পেয়েছি।”

“আপনি রাস্তায় দেখে শুনে চলতে পারেন না সেটা কী আমার দোষ? হর্ণ দিলেও সরেন না। ত্যাড়াদের মতো হাঁটতে থাকেন।”

“এই আপনায় আমি জ্ঞান দিতে বলিনি।”

“আপনাকেও আমি বলিনি নিজের ঢাক ঢোল পেটাতে। তাও অচেনা একজন মানুষের কাছে। ”

“আমার লেট হয়ে যাচ্ছে বলে ছেড়ে দিলাম আপনায়।নাহলে বুঝিয়ে দিতাম আমি কী জিনিস।”

“আমার ও তাড়া আছে দেখে ছেড়ে দিলাম আপনায়। নাহলে গাড়ী চাপা দিয়েই বুঝিয়ে দিতাম আমি কী জিনিস।”

কথাটা বলে তূর্ণ গাড়ীতে উঠে যায়। আপাতত তূর্ণর মেজাজ গরম। হর্ণ বাজিয়েছিলো মেয়েটা সরতে লেট করেছে তাই গাড়ী লাগিয়ে দিয়েছে। দোষটা আসলে তূর্ণর তবে এসবে ইন্টারেস্ট আসছে না তূর্ণর। মেয়েটাও দেখো এক নাম্বারের ঝগড়ুটে। একবারে নোবেল প্রাপ্ত ও বলা যায়।

সন্ধ্যার পর,পরে বাড়ী ফিরে তূর্ণ। তখন তিশা তাকে কোল্ড ড্রিং এগিয়ে দেয়। তূর্ণ নেয়না সেটা। সোজা রুমে চলে যায়। এই নিয়ে তিশা খানিলটা রাগ করেছে। তার ভাই গুলো ও না। আজকাল কেমন জেনো রাগ চটা হয়ে গেছে। তিশা বোঝেনা কার রাগ তারা কার উপর দিয়ে ঝাড়ছে।

মাথা ঠান্ডা করে তূর্ণ লিভিং রুমে আসে। কেউই নেই আপাতত এখানে। তূর্ণ ভালোই লাগলো। এটলিস্ট একা থাকতে পারবে কিছুক্ষণের জন্য। তখন আবার কোথা থেকে রোদ ছুটে আসে। তূর্ণর কাছে এসেই রোদ স্থির হয়ে বলে, ” তূর্ণ ভাইয়া একটা কথা বলার ছিলো।”

“টাকা লাগবে?”

” আরে না। টাকা পূর্ণ ভাইয়াও দেয়। আর এতো টাকা দিয়ে আমি কী করবো?”

“কিছু না। এবার বলো কী বলবে?”

” বলছিলাম ভাইয়া বিয়ে করবে তো। আচ্ছা বলো তো তোমার কেমন মেয়ে পছন্দ?”

“এই কথা বলার জন্য এভাবে ছুটে আসা লাগে?”

“আরে বলো।”

” খুব একটা চঞ্চল না। একটু নিরব টাইপের। তবে তার পার্সোনালিটি স্ট্রং হতে হবে। মেয়েটা দেখতে যেমনই হোক তার মন মানসীকতা ভালো হলেই হবে। সর্বোপরি রোদ পাখির মতো কেউ হলে মন্দ হয়না।”

” রোদ বা’জে মেয়ে। রোদের থেকে বেটার মেয়ের অভাব নেই। আই উইশ তাদের মধ্যে কোন তিনজন আমার তিন ভাইয়ের বউ হবে।”

“গুড।”

রোদ আর কথা বাড়ায়না। রুমে এসে সোজা দরজা বন্ধ করে দেয়।

********

“রাফি খান যাতে আরো ছয়মাস জেলে পড়ে থাকে। তার ব্যবস্থা করো। কিছুতেই একে জেল থেকে বের করা যাবে না।”

কলে কথাটা বলে পূর্ণ। অপরপাশ থেকে একজন শুধায়, ” কিন্তু স্যার খামোখা একে জেলে রেখে কী হবে? এমনিতে তার বাবা রাজিব খান এসেছে। কয়েকদিনের মধ্যপ তার জামিনের ব্যবস্থা করবে।”

” টাকা যাক। আমি টাকা দিতে রাজী তবুও একে আমি জেলে দেখতে চাই।”

” রাজিব খান ও টাকা দিয়ে তার ছেলের জাবিন করাতে রাজী। কিন্তু স্যার একে ছয়মাস জেলে রেখে কী হবে?”

” কিছু না আমি একটু বিয়ে করবো।”

কাঠকাঠ গলায় উত্তর দেয় পূর্ণ। ওপর পাশের ব্যক্তি পূর্ণর রাগ বুঝতে পেরে বলে, ” বিষয়টা ক্লিয়ার করে বলুন স্যার।”

“আমার কাজটা হয়ে গেলে রাফি বাইরে আসলে সমস্যা নেই। এখন আসলে নতুন জামেলা। খুব ছলে বলে কৌশলে একে ফাঁসিয়েছি। এর পেছনে অবশ্য কারণ আছে।”

“আপনি!”

“দেখো আমার কিছু করার নেই। আমি আমার ক্যারিয়ার, সাজানো সম্রাজ্য শেষ হতে দিতে পারবো না। আমার বাবার পরিশ্রমের ফসল টিকিয়ে রাখার যখন আমায় যত নিচে নামতে হয় আমি নামবো। তবে হ্যাঁ, এই গেমের খেলোয়াড়কে আমি নিজ হাতে খু’ন করবো আমার প্রতিজ্ঞা এটা।”

” আচ্ছা স্যার চেষ্টা করে দেখি কী করা যায়।”

“দেখো।”

পূর্ণ কল কেটে দেয়। ফেসবুক স্ক্রোল করতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে পূর্ণ। আবারো সেই আইডিটাতে যায় পূর্ণ। যেই আইডির পোস্ট গুলো তার পছন্দের। কিন্তু আইডির মালিককে সে পাত্তা দেয়না। কিছুক্ষণ আইডি স্টক করে অফলাইন হয়ে যায় পূর্ণ।

রাতের ডিনার শেষ করে সিনথি তার ফ্রেন্ড রুশাকে আজকের ঘটনা বলে। বিকেলে বাইরে বের হয়েছিলো সিনথি। কোথা থেকে গাড়ীটা এসে তাকে ধাক্কা মারে। হাতে ব্যথা পেয়েছে তবে লোকটাকে এক নাম্বারের অভদ্র মনে হয়েছে তার। ম্যানার্স শিখেনি মনে হয়। একটা বার স্যরি বলার প্রয়োজন মনে করেনি। তাড়া থাকায় এবারের মতো ছেড়ে দিয়েছে। নাহলে বুঝিয়ে দিতো সিনথি কী জিনিস। মনে,মনে চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে দিয়েছে। এই জন্য বেশী একটা ক্ষোভ নেই মনে।

সিনথির থেকে সব কথা শুনে রুশা হাসে। বেচারি সিনথি বান্ধুবীর হাসি দেখে গা জ্বলছে তার। তেজ দেখিয়ে বলে, ” সব রা’জাকারের সাথেই কী আমার পরিচয় হয়?”

“এ্যাই এখানে রা’জাকার আসলো কোথা থেকে?”

” আকাশ থেকে টপকে এসেছে।”

“শোনলাম তোর বিয়ে হতে যাচ্ছে।”

” আরে ভাই দেখলেই কী বিয়ে হয়ে যায়?”

” তাও ঠিক।”

” দোয়া কর যাতে বিয়েটা হয়ে যায়। আমার পড়ালেখা ভালো লাগে না।”

” হয়ে যাবে দেখিস।”

“তাই জেনো হয়।” তিন বার আমিন!”

#চলবে