এক ফালি প্রণয় পর্ব-১৫+১৬

0
7

#এক_ফালি_প্রণয়|১৫|
#শার্লিন_হাসান

অনেক ভাবনা চিন্তার পর সিদ্ধান্ত হয় সিনথিকে শিকদার বাড়ীর বড় পূত্র বঁধু করে আনা হবে। এই নিয়ে সবাই বেয় খুশি। পূর্ণ তূর্ণকে সিনথির পিক দেখাচ্ছে। তূর্ণ দেখে কিছুটা অবাক হয়। এই সেই ইডিয়েট মেয়েটা। তূর্ণ পূর্ণর দিকে তাকিয়ে বলে, ” একে তোরা কোথায় পেয়েছিস?”

“কেন তুমি চেনো একে?”

“এই তোরা মজা নিচ্ছিস না তো?”

পূর্ণর কথার জবাবে তূর্ণ বলে। তখন শূন্য বলে, ” রোদ সহ পিক দেখো না। ওইদিন যে গেলো সিনথি ভাবীকে দেখতে।”

তূর্ণ পিক খেয়াল করে। আর কিছু বলে না। তখন পূর্ণ বলে, ” তাহলে একটা বিয়ে হবে আমাদের বাড়ীতে।”

“হুম!”

তূর্ণ জবাব দেয়। তখন শূন্য বলে, ” ভাইয়া তুমি রাজী?”

“হুম রাজী। কেনো রাজী হবো না বলতো? সনার ভাবী চাই তো! আম্মুর আরেকটা মেয়ে চাই। সমস্যা কোথায়?”

“না সমস্যা নেই।”

তূর্ণ প্রস্থান করে নিজের রুমে চলে যায়। পূর্ণ পায়ের উপর পা তুলে বসে। শূন্যর দিকে তাকিয়ে বলে, ” তা নতুন প্রজেক্টের কাজ সুন্দর ভাবে হচ্ছে তো?”

“হ্যাঁ!”

” ঘরের শত্রু বিভীষণ। বাক্য টা চরম সত্য।”

“এখন আবার শত্রু আসলো কোথা থেকে পূর্ণ ভাই?”

” শত্রুর কী অভাব আছে নাকী? যাই হোক সব খারাে যার শেষ ভালো তার।”

কথাটা বলে পূর্ণ উঠে চলে যায়।

পরের দিন সকালে রান্না শেষ করে সাইখা ইসলাম এবং শারমিন আঞ্জুম সিনথি দের বাড়ী যায়। কল করেই এসেছে। সিনথি শিকদার বাড়ীর বড়দের দেখে গেস করে বিয়েটা হয়ত হবে। রাতে তার মায়ের থেকে শুনেছে ছেলে সম্পর্কে। যতটুকু শুনেছে সিনথির পছন্দই হয়েছে। যদিও পিক দেখেনি। সিনথি প্রেম ভালোবাসা বিশ্বাস করে না। যা হবে বিয়ের পর। হালাল ভাবে! তাই তো বিশটা বছর ধরে নিজের হালাল সম্পর্কের জন্য অপেক্ষায় ছিলো।

শারমিন আঞ্জুম সিনথিকে দেখে বলেন, ” আগামী কালকে তুমি আমাদের বাড়ীতে এসো তোমার গুরুজনদের সাথে।”

” কিন্তু আন্টি এটার তো নিয়ম নেই।”

“নিয়মের কী গেছে মা? তুমি পরিচিত হতে যাবা। আর ভবিষ্যতে ওই মানুষগুলোর সাথেই তো মিলেমিশে থাকবা তাই না? গেলে সমস্যা কোথায়?”

সিনথি তার আম্মুর দিকে তাকায়। আফিয়া ইসলাম হেঁসে বলেন, ” সিনথি শুনেছে আহিয়ান শিকদার তূর্ণ সম্পর্কে। সব ঠিকঠাক হলে নাহয় ওরা মিট করবে। এমনিতে দেখা হবে,পরিচিত হওয়া যাবে। এখন গেলে এটা কেমন বেমানান লাগে।”

তখন সাইখা ইসলাম বলেন, ” আমরা এসব নিয়ে ভাবী না। আর কেউ কিছু বলবে না।”

“ঠিক আছে। গেলে নাহয় যাবে।”

সেখানে কথা বার্তা বলে শারমিন আঞ্জুম তার বালা জোড়া সিনথিকে পড়িয়ে দেন। সিনথি বালা জোড়ার দিকে তাকায়। সম্ভবত গোল্ডের সাথে অন্য কোন দামী পাথরের সংমিশ্রণ করা। তবে বালা জোড়া সিনথির বেশ পছন্দ হয়।

হালকা মুখরোচক খাবার খেয়ে তারা দু’জন বিদায় নেয় সিনথিদের বাড়ী থেকে। আগামী কালকে যেহেতু মেয়ে পক্ষরা আসবে তাই একটু ব্যস্ততা।

বাড়ীতে এসে পূর্ণর হাতে লিস্ট ধরিয়ে দেন সাইখা ইসলাম। যেহেতু বড় ভাইয়ের বিয়ে ছোট ভাই হিসাবে দায়িত্ব আছে। পূর্ণ তার দলের মিরাজ এবং নিসাধকে ডেকে নেয়। লিস্ট জিনিসপত্র ওদের দিয়েই আনায়।

রোদ,তিশা বসে,বসে প্লান করছে তাঁদের পরিবারের নতুন সদস্যর আগমন নিয়ে।

তূর্ণ তার পেন ড্রাইভে সংরক্ষণ করা কিছু পিকচার দেখছে। মনটা ভারী হয়ে আছে তার। সব মানতে কষ্ট হচ্ছে তবুও মেনে নিতে হচ্ছে। পরিবারের বড় ছেলে সে। বাবা নেই! তার উপর মা,বোনেদের আশায় কীভাবে জল ঢালে? পূর্ণর কথা ভাবলে তূর্ণ আর আগাতে পারে না। পূর্ণ রোদকে ভালোবাসে আর রোদ পূর্ণকে এটাই বিশ্বাস করে তূর্ণ। অবশ্য তাদের মেলামেশায় এটাই প্রমাণিত হয়। আর বেশী ভাবে না তূর্ণ।

*********

পরের দিন শিকদার বাড়ীতে আসেন আফিয়া ইসলাম এবং তার বোন আতিয়া এবং সিনথির বাবা সোহানুর রহমান। তাঁদেরকে বেশ সুন্দর ভাবে বরণ করে নেওয়া হয়। পূর্ণ সব কিছু দেখছে। সিনথিকে আনা হয়নি এই নিয়ে সাইখা ইসলাম বেশ রাগ করেছেন।

তূর্ণ সোফায় বসে,বসে সবাইকে পর্যবেক্ষণ করছে। আজকে নিজেকে লজ্জাবতী নারী মনে হচ্ছে। নাহলে চুপচাপ বসে থেকে সবার কথা শোনা লাগে? রোদ, পূর্ণ তারা মজা নিচ্ছে তূর্ণর সাথে। তিশা,শূন্য ও বাদ যায়নি। পেয়েছে সুযোগ।

তাদের খাওয়া-দাওয়া কথা বার্তার পর্ব শেষ হতে সিদ্ধান্ত হয় দুইদিন পর গিয়ে এন্গেজ মেন্ট হবে। সবাই বেশ হাসিখুশি ভাবেই দিনটা পার করে।

পরের দিন ভার্সিটিতে যায় রোদ। আজকে তিশা আসেনি। রোদ ও আসতো না কিন্তু তার এসাইনমেন্ট ছিলো সেগুলো জমা দিতে হবে। রোজকার মতোই কাজ সেরে গেটের সামনে আসে রোদ। রিকশার জন্য কিছুটা সামনে আসতে পূর্ণর গাড়ীর দেখা পায়। পূর্ণ ভার্সিটিতে আসবে রোদকে তো বলেনি। গাড়ীর আসেপাশে কাউকেই পায়নি রোদ। কাঠখোট্টা রোদের মধ্যে রিকশার জন্য দাঁড়িয়ে আছে রোদেলা।

গাড়ীর পেছনে বসে আছে পূর্ণ। রোদেকে যেতে দেখেছি এদিক দিয়েই। কিন্তু সেসবে তার ইন্টারেস্ট নেই। সে যে কাজে এসেছে তা হলেই চলে যাবে এই প্রাঙ্গণ ছেড়ে।

রোদের সামনে হুট করে একটা কালো মাইক্রো এসে দাঁড়ায়। রোদ কিছু বুঝে উঠার আগেই তাকে ক্লোরোফোম দিয়ে অজ্ঞান করা হয়। গাড়ীতে বসে থাকা একজন কলে বলে, ” কাজ হয়ে গেছে। এবার তুই চলে আয়। তোকে দিয়েই শুভ কাজটা করাবো।”

অপর পাশ থেকে উত্তর আসে, ” এই কাজ ছাড়া অন্য কাজ থাকলে দে। এটা আমি করতে পারবো না।”

“তাহলে ঠিক আছে তোর ক্যারিয়ার শেষ ধরে নে। তোর বাবার তিলে,তিলে গড়া সম্রাজ্য ও শেষ।”

“যা খুশি কর। আমি কারোর হুকুমে চলতে পারবো না। আর ওর গায়ে একটা আঁচড় লাগলে তোদের সব কয়টাকে আমি ক’বরস্থানে পাঠাবো।”

“তোর ক্যারিয়ার!”

অপর পাশের ব্যক্তি কল কেটে দেয়। এপাশের ব্যক্তি গাড়ীতে থাকা রোদের দিকে তাকায়। ঘুমন্ত রোদের চুল টেনে নিজের মুখোমুখি এনে বলে, ” তোর প্রেমিক তোকে আমার হাতে তুলে দিয়েছে। আপাতত তুই ভোগের সামগ্রী।”

*********

সন্ধ্যা গড়িয়ে যায় রোদের ফোন সুইচড অফ। এই নিয়ে সবার দুশ্চিন্তার শেষ নেই। পূর্ণ শুনেছে ব্যপারটা তবে কোন রকমের রিয়েক্ট করেনি। তিশা বুঝলো পূর্ণ বোধহয় খুশি হয়েছে রোদ নেই। শরীফ শিকদার থানায় ইনফর্ম করেছেন। তূর্ণ অফিসে থাকা কালীন খবর পায়। সে আর বাড়ী আসেনি। ভার্সিটির প্রাঙ্গণ থেকে যতগুলো সিসিটিভি আছে সবগুলোর ফুটেজ চেক দেয়।

থানায় কল দিয়ে জানতে পারে রাফি খান কয়েকদিন আগে ছাড়া পেয়েছেন। তূর্ণর মনে ভয় ঢুকে যায়। রোদের কিছু হয়ে যাবে না তো? কল দিয়ে কয়েক জনকে ধমকাধমকি করে তূর্ণ। থ্রেট দিয়ে বলে, ” এক ঘন্টার মধ্যে শিকদার বাড়ীতে রোদকে চাই আমি। নাহলে সব কয়টার খবর আছে।”

কথাটা বলে তূর্ণ কল কেটে দেয়। তূর্ণ শিকদার বাড়ীতে আসে। তার আম্মু চিন্তা করছে বেশ। তূর্ণ পূর্ণর খোঁজ করতে জানতে পারে সে বাইরে গেছে কোন দরকারে। তূর্ণর রাগ হয়। পূর্ণ এতো ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে কেন? তার কী দায়িত্ব জ্ঞান কিছু নেই। এতো ত্যাড়া কেন পূর্ণ। রোদের সাথে তার কী শত্রুতা আজকে তূর্ণ জেনে ছাড়বে। অনেক দিন হয়েছে,অনেক দেখেছে আর না। পূর্ণকে বার কয়েক কল দিলেও রিসিভ হয়না। মেজাজ মূহুর্তে খারাপ হয়ে যায় তূর্ণর। আজকে পূর্ণর সাথে তার অনেক বোঝা পড়া আছে। ক্রোধ নিয়ে লিভিং রুমে আসতে দেখে রোদ আর পূর্ণ একসাথে প্রবেশ করছে। রোদের কাধে পূর্ণর হাত৷ পূর্ণ তূর্ণ কে দেখে বলে, ” আরে ভাইয়া তুমি এসে পড়েছো?”

“দেখতেই পারছিস।”

” রেগে যাচ্ছো কেন?”

“তোর সাথে আমার কথা আছে।”

“আপাতত না। একবারে তোমার বিয়ের পর বলিও।”

“পূর্ণ…….”

” রোদ ভেতরে যাও।”

পূর্ণ কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে বলে। রোদ আর দেরী করেনি ভেতরে চলে যায়। তখন পূর্ণ বলে, ” তোমাকে আমার কিছু বকার ছিলো।”

” তার আগে আমায় কথা শেষ করতে দে।”

” তুমি রেগে আছো?”

” রোদ এতোক্ষণ কোথায় ছিলো?”

” আরে রাফি ওকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিলো। ওটাকে মেরে তোমার ভালোবাসাকে উদ্ধার করে আনলাম। এবার আমায় পুরষ্কিত করো ভাইয়া।”

লাস্ট কথাটা আস্তেই বলে পূর্ণ। তখন তূর্ণ বলে, ” বাজে কথা ছাড় পূর্ণ। আমি নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি।”

” মজা করছি রে ভাই।”

#চলবে

#এক_ফালি_প্রণয়|১৬|
#শার্লিন_হাসান

” আরে রাফি ওকে কিডন্যাপ করতে চেয়েছিলো। ওটাকে মেরে তোমার ভালোবাসাকে উদ্ধার করে আনলাম। এবার আমায় পুরষ্কিত করো ভাইয়া।”

লাস্ট কথাটা আস্তেই বলে পূর্ণ। তখন তূর্ণ বলে, ” বাজে কথা ছাড় পূর্ণ। আমি নতুন অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছি।”

” মজা করছি রে ভাই।”
থেমে,
“তোমায় কিছু বলার ছিলো।”

আগামী কালকে বলিস। এখন আমার কাজ আছে।
“ঠিক আছে।”

কথাটা বলে তূর্ণ প্রস্থান করে। পূর্ণ কপাল স্লাইড করতে,করতে বসে পড়ে। সে তো জানতো আজকে রোদ কিডন্যাপ হবে। এটাতে পুরো দমে পূর্ণ নিজেই সাহায্য করেছে। পূর্ণ বুঝতে পারছে না কী করবে। রোদ কখনো জানতে পারলে হয়ত ঘৃ’ণা করবে তাকে। কিন্তু তাতে পূর্ণর কিছু যায় আসে না। সে নিজেই তো রোদকে সহ্য করতে পারে না। শুধু নিজের ক্যারিয়ারের জন্য বাধ্য হয়ে নাটক করছে নাহলে রোদ কে পাত্তা দেওয়ার জন্য পূর্ণর বয়ে গেছে। কিন্তু রোদ তো সিরিয়াস হয়ে গেছে পুরো দমে। পূর্ণ চায় না তাকে ভালোবেসে কষ্ট পাক। দুই মেরুর দু’জন মানুষ কখনো এক হতে পারবে না। এটা কখনোই সম্ভব নয়। তূর্ণ রোদকে ভালোবাসে এটা পূর্ণ বিশ্বাস করে। কিন্তু চাইলে এখন রোদকে তূর্ণর হতে দিবে না পূর্ণ। কিছুতেই না। গেমটা তাঁদের মধ্যে আসল গুটি হাত ছাড়া হয়ে গেলে গেম ওভার। সেজন্য গেমটা চালিয়ে নিতে হলে গুটি তো নিজের করেই রাখতে হবে। পূর্ণ হাসে! ডেভিল হাসি দেয়।

” মিস তাহসিনা খানম রোদেলা কী এক প্রোপার্টি তোমার বাপ তোমায় দিয়ে গেলো। কী আফসোস এই প্রোপার্টির প্রতি এতো মানুষের লোভ জানো তো? তোমায় মে’রে প্রোপার্টি নিজেদের করতে দু’বার ও ভাববে না। তবে পূর্ণ এমন না। তার এসবে ইন্টারেস্ট নেই।”

পূর্ণ উঠে দাঁড়ায়। তখন আবার শরীফ শিকদার এসে তাকে পুনরায় বসিয়ে দেয়। পূর্ণর বিরক্ত লাগছে শরীফ শিকদারকে। চোয়াল শক্ত করে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে নেয় সে। তখন শরীফ শিকদার বলেন, ” পূর্ণ বাবা রেগে যাচ্ছো কেন?”

” এখন কথা বলার মুড নেই আমার। আপনি আসুন! পরে আলোচনা হবে।”

“ঠিক আছে তাহলে তুমি রুমে যাও।”

********

রোদ রুমে বসে আজকের কথা ভাবছে। ভাগ্যিস পূর্ণ ঠিক সময়ে তাকে বাঁচিয়ে নিয়েছে। নাহলে কী অঘটন ঘটতো। ওই৷ লোকগুলো বোধহয় পূর্ণর পাঠানো ছিলো যারা তাকে ওই গোডাউন থেকে সরিয়ে এনেছে। রোদ তেমন কাউকেই দেখেনি গোডাউনে। সে যে কিডন্যাপ হয়েছে না কেউ থ্রেট দিলো, না কেউ কোন ক্ষতি করার জন্য আসলো। কিন্তু এটা করে লাভ কী হলো?
‘ যাই হোক পূর্ণ ভাইয়া আসলেই এক কাঠি উপরে। সব দিক খেয়াল রাখে। রোদের ব্যপার গুলো ভালোই লাগে।’

ফ্রেশ হয়ে তার বড় মামীর রুমে যায় রোদ। রোদকে দেখে শারমিন আঞ্জুম এলবামটা সরিয়ে রাখে। রোদ গিয়ে সেটা আবার হাতে নেয়। এলবামে রোদের বড় মামু অর্থাৎ পূর্ণর বাবার সাথে রোদের একটা ছবি। রোদ তাতে হাত ভোলায়। প্রসঙ্গ এড়িয়ে যেতে রোদ বলে, “মামী সিনথি আওুকে কেমন লাগলো?”

“মেয়ে তো মাশাল্লাহ। তূর্ণ ও রাজী রোদ।”

রোদ হাসে। তূর্ণ রাজী এটা ভাবতে পারেনি রোদ। শারমিন আঞ্জুমের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে রোদ রুম থেকে বেড়িয়ে করিডোরে আসতে অপজিটের রুম থেকে কেউ রোদের হাত টান দিয়ে রুমে ঢুকিয়ে নেয়। আচমকা হওয়ায় রোদ ভয় পেয়ে যায়। পরক্ষনে পূর্ণকে দেখে বলে, ” এগুলো কেমন কাজ? ”

“আরে রোদ রেগে যাচ্ছে। তোমায় এনেছি আমায় একটু হেল্প করার জন্য।।””

“কী হেল্প?”

ব্রু কুঁচকে বলে রোদ। তখন পূর্ণ শুধায়, ” আমার সাথে কাজ খুঁজবে। কাজ খুঁজে বের করতে পারলে সেটাই করবে।”

” শয়তান সব মনে হয় তোমার সাথে।”

“আচ্ছা রোদেলা তুমি আমায় স্বপ্নে দেখো?”

” আসলে আমি দোয়া পড়ে ঘুমাই তো! তাই কোন শয়তা’নকে স্বপ্নে দেখি না।”

“আমাকে এভাবে বললে?”

“আমার বয়ে গেছে তোমায় স্বপ্নে দেখতে।”

“এভাবে বলো কেন? আমায় একটু সন্মান করো। আমি তোমার বড় ভাই রোদেলা।”

” যারা সন্মান খুঁজে নেয় তাঁদের আমি সন্মান দেই না।”

“আচ্ছা যাও আমার রুম থেকে।”

রোদ মুখ বাকিয়ে প্রস্থান করে। পূর্ণর মত সে বুঝে না।

রাতে সবাই মিলে ডিনার করতে বসে। রোদ কোথায় গেছে এই প্রশ্নটা সবাই করে। পূর্ণর দিকে তাকায় রোদ। পূর্ণ চোখের ইশারা দিতে রোদ বলে, ” আসলে কাজ একটু বেশী ছিলো তাই। আর পূর্ণ ভাইয়ার সাথে একটু লেকের কাছে গিয়েছিলাম।”

” এখানে দেখি আই কন্টাক্ট হচ্ছে।”

মাঝখানে বা হাত ঢুকায় শূন্য। তখন আবার রোদ চিৎকার করে উঠে। সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। পূর্ণ নিজের পা সরিয়ে নেয়। সে শূন্যকে লা’ থি দিতে গিয়েছিলো বেশী কথা বলার জন্য। কে জানতো সেটা রোদের পায়ে লাগবে। পূর্ণ কোনরকম খেয়ে সবার আগে চেয়ার ছেড়ে দেয়। শূন্য আস্তে ধীরে খাচ্ছে। তার মনে হলো এখানে খাবার টেবিলে বসেও রোদ,পূর্ণ প্রেম করছে। সে পুরো দমে এবার শিওর ওদের মাঝে কিছু একটা আছে। শূন্যর নিজেকে নিয়ে প্রাউড ফিল হচ্ছে। ফাইনালী সে সাকসেস তার ভাবনায়।

পরের দিন সকালে সূর্য উদয়ের সাথে,সাথে ঘুম ভাঙে পূর্ণর। উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নেয় সে। আজকে পার্টি অফিসে কাজ আছে তার।

তূর্ণ আজকে অফিস যাবে না। আজকের সময়টা বাড়ীতেই কাটাবে। কাজের প্রেসার বেশী পড়ায় এখন একটু রেস্ট নেয়। বাকীটা পূর্ণ দেখে নিবে।

সকালের নাস্তাটা সেরে তূর্ণ নিজের রুমের সোফায় বসে ফোন স্ক্রোল করার জন্য ফোনটা হাতে নেয়। ওয়েলপেপারের দিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ছাড়ে। কখন আবার শূন্য রুমে আসে। তূর্ণ টের পায়নি শূন্যর উপস্থিতি। শূন্য গলা খাকারি দিতে তূর্ণ চমকে তাকায়।

“কিছু বলবি?”

” ফাইলটা তোমার কাছে। ”

তূর্ণ টেবিলের উপর থেকে ফাইলটা শূন্যকে দেয়। শূন্য সেটা হাতে প্রস্থান করে।

শেষ বিকেলের দিকে কাজ সেরে পূর্ণ বাড়ী ফিরে। একরাশ ক্লান্তি নিয়ে পানির বোতল হাতে সোফায় বসে।
তখন তূর্ণ আসে সেখানে। পূর্ণ তাড়া দেখিয়ে বলে, ” কথা আছে তোমার সাথে।”

“আগে ফ্রেশ হয়ে নে।”

“ঠিক আছে।”

**********

সিনথি তূর্ণর ছবি দেখে কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রয়। আফিয়া ইসলাম মেয়ের দিকে তাকায়। এমন চুপচাপ দেখে সিনথিকে ধাক্কা দিয়ে বলে, ” কী হয়েছে সিনথি? বিয়েতে তুমি রাজী না?”

“এই ম্যানার্সলেস লোককে কোথা থেকে তুলে এনেছো তোমরা?”

” তুলে আনবো কেন?”

” এই লোককে আমার বাড়ীর ঠিকানা কে দিয়েছে।,”

“কীসব উল্টাপাল্টা বলছো তুমি?”

“আরে আম্মু এই লোকটা আস্ত ব’জ্জাত।”

” সিনথি! এসব আর কাউকে বলো না। শিকদার পরিবারের সামনে তো ভুলেও না। তাদের আদরের বড় দুলালের নামে এসব শোনলে বিয়ে ভে’ঙে দিবে।”

“তাতে কী? ছেলের অভাব পড়েছে নাকী?”

“ছেলের অভাব পড়েনি তবে ভালো ছেলের অভাব পড়েছে।”

“একে কোন দিক দিয়ে তোমার ভালো মনে হয় আম্মু?”

” তুমি কী আহিয়ানের সাথে পূর্বপরিচিত?”

” এই লোকটার নাম আহিয়ান?”

” আহিয়ান শিকদার তূর্ণ।”

“দুইদিন আগে আমায় গাড়ী দিয়ে ধাক্কা মেরেছিলো এনি। হাতে ব্যথা পেয়েছি। জানো আম্মু গাড়ী থেকে নেমে উল্টো রাগ দেখিয়েছে আমার সাথে। একবার ও স্যরু বলেনি। এমনকি জিজ্ঞেস ও করেনি ব্যথা পেয়েছি কীনা। এমনকি হসপিটালে নিয়ে যাওয়ার কথাও মুখ দিয়ে বের করপনি। এমনকি টাকা ও দেয়নি ঔষধ কিনে খাওয়ার। দেখো কী লেভেলের কিপ্টা।”

“হয়ত তাড়া ছিলো।”

“ভদ্রতার অভাব বটে।”

★★★★★

রাতের ডিনার করে পূর্ণকে নিয়ে তূর্ণ ছাঁদের দিকে রওনা হয়। ততক্ষণে পূর্ণ একটা সিগারেট ধরায়। ধোঁয়া শূন্যে উড়িয়ে দিতে,দিতে পূর্ণ শুধায়, ” আসলে ওইদিন রোদকে আমি মা-রতে চেয়েছিলাম নদীতে চুবিয়ে। ছেলেটা আমারই পাঠানো লোক ছিলো। কিন্তু সেদিন তুমি বাঁচিয়ে নিয়েছে ওকে। আমি সব জানি ভাইয়া। এমনকি গতকালকের লোক গুলো তোমার পাঠানো যারা রোদকে রাফির গোডাউন থেকে উদ্ধার করে এনেছে। কিন্তু রোদ জানে ওকে আমি বাঁচিয়েছি গতকাল।”

#চলবে