এক ফালি প্রণয় পর্ব-৩২+৩৩

0
7

#এক_ফালি_প্রণয়|৩২|
#শার্লিন_হাসান

পরের দিন সকালে আদ্রিশের সাথেই নিচে যায় রোদ। আলতাফ পারভেজ চৌধুরী নাস্তা করছিলেন মনোযোগ সহকারে। চায়ের কাপে চুমুক দিতে যাবেন রোদকে দেখে আর চুমুক দেওয়া হয়নি। রোদ মুচকি হেঁসে আলতাফ পারভেজ চৌধুরীর সোজা চেয়ারটায় বসে। তার পাশে আদ্রিশ ও বসেছে। ফারিহা চৌধুরী তাঁদের দু’জনকে নাস্তা দেয়। রোদ পরোটা ছিঁড়তে, ছিঁড়তে বলে, “এতো ভয় পাওয়ার কিছু নেই শ্বশুর মশাই। আমি আপনার ছেলের পূত্র বঁধু কোন শত্রু নই।”

আদ্রিশ রোদ এবং তার বাবা দু’জনের দিকে চাওয়াচাওয়ি করছে। রোদকে নিয়ে ইদানিং তার বাবার একটু বেশী মাথা ব্যাথা। রোদের কথাবার্তা আমলে নেয়না আদ্রিশ।
আজকে তাঁদের বউভাত অনুষ্ঠান। চৌধুরী মহলের বিশাল লিভিং রুম শুভ্র রাঙা ফুলে সজ্জিত।
নাস্তা শেষ হতে ফারিহা চৌধুরী রোদকে রুমে পাঠিয়ে
দেয়। রোদ রুমে প্রবেশ করার পেছন দিয়ে আদ্রিশ ও রুমে প্রবেশ করে৷ রোদ হাতে একটা থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়াবে আদ্রিশ তাকে থামিয়ে দেয়। রোদের হাত ধরে টেনে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। রোদ ব্রু জোড়া প্রসারিত করে আদ্রিশের দিকে তাকায়। আদ্রিশ কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে, “গতকাল বাসর গেলো। বউ একটা চুমুও খেতে দিলো না।”

“তো?”

“চুমু খাবো।”

কথাটা বলে আদ্রিশ রোদের কোমড় জড়িয়ে ধরে। রোদ আদ্রিশের গলা জড়িয়ে ধরে নাকের সাথে নাক ঘেঁষে। আদ্রিশ তার ঠোঁটের দিকে কিছু ঝুঁকতে রোদ আদ্রিশকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরাতে যায়। কিন্তু পারে না।
আদ্রিশের শক্ত বাঁধনে আবদ্ধ সে। আদ্রিশ বাক্যব্যায় না করে রোদের ঠোঁটে চুমু খায়।

“আদ্রিশ চৌধুরী এতো প্রেম ভালো না।”

“বউটা কিন্তু আমার!”

“হ্যাঁ! জানি তো?”

“প্রেম করলে বউয়ের সাথেই করবো।”

“ঠিক আছে। এখন আমি তৈরী হবো। আজকে কিন্তু কমপ্লিমেন্ট চাই আমার।”

“আমার বউ যেমনই হোক আমার চোখে সে সেরা সুন্দরী। যতই বলবো কম হয়ে যাবে।”

“থ্যাঙ্কিউ।”

রোদ হেঁসে আদ্রিশকে ছেড়ে দেয়। আদ্রিশ ফোন হাতে বেলকনিতে চলে যায়। তার কিছু গেস্ট আজকে আসার কথা তাঁদেরই খোঁজখবর নিচ্ছে।

★★★

শাওয়ার নিয়ে খাটের এক কোণে বসে আছে সিনথি। কিছুই ভালো লাগছে না তার। তূর্ণকে একা ছেড়ে দিয়েছে। কোন কিছু নিয়ে জিজ্ঞেস ও করেনা কিছু। তূর্ণর মুভ অন করতে হয়ত সময় লাগবে ব্যপারটা সিনথি বুঝেছে। সেজন্য বেশী কিছু বলে না। নিজের মতো করে থাকে। আজকাল তাঁদের মাঝে বেশ দূরত্ব তৈরী হয়েছে। তূর্ণ ফোন হাতে রুমে প্রবেশ করে। সিনথিকে আনমনা হয়ে বসে থাকতে দেখে তূর্ণ কন্ঠস্বর খাদে নামিয়ে শুধায়, “তৈরী হয়ে নেও। একটা বেজে যাবে।”

সিনথি জবাব দেয়না। তূর্ণ ফোনটা খাটে ছুঁড়ে ফেলে সিনথির সামনে ছোট্টো একটা টুল টেনে বসে। তূর্ণকে এভাবে বসতে দেখে সিনথির কেনো জানি খারাপ লাগছে। অভিমান জমেছে বেশ! তবে কান্না পাচ্ছে তার। নিজের জীবনসঙ্গী অন্য কাউকে ভালোবাসে এই কষ্টটা বুঝানোর মতো না। নিজের অর্ধাঙ্গর থেকে ভালোবাসা পাওয়ার হক তার আছে। সব কেমন এলোমেলো লাগছে। কী ভীষণ শূন্যতা,বিষন্নতা জেনো চারদিকে গ্রাস করছে। তূর্ণ কিছুক্ষণ মৌনতা বজায় রেখে বলে, ” তোমাকে ধন্যবাদ সিনথি আমায় বুঝার জন্য। অন্য কেউ হলে হয়ত আমাকে তোমার মতো করে এভাবে ট্রিট করতো না। তুমি মেনে নিয়েছ, আমায় সময় দিচ্ছো আবার সবটার খেয়াল ও রাখছো। আ’ম রিয়েলি লাকি যে তোমার মতো কাউকে লাইফ পার্টনার হিসাবে পেয়েছি। খুব শীঘ্রই অতীত ভুলে আমরা ভবিষ্যতে ফোকাস করবো।”

তূর্ণর কথায় সিনথি জবাব দেয়না। নিজেকে কিছুটা স্বাভাবিক রেখে বলে, “অতীত কখনো ভোলা যায় না। অতীতের বিষাক্ত স্মৃতি মস্তিষ্ক জুড়ে থেকেই যায়।”

তূর্ণ জবাব দেয়না। সিনথি উঠে রেডি হতে চলে যায়। তূর্ণ বেলকনিতে যায়। তাঁদের বিয়ের কয়েক মাস গড়ালো। যখন থেকে সিনথি রোদের ব্যপারটা জেনেছে তখন থেকে তাঁদের অনেকটাই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। কীভাবে জেনেছে? তূর্ণ মনে করতে পারছে না। মেয়েটা বেশ চঞ্চল হলেও আজকাল চঞ্চলতার রেশ তার মাঝে পাওয়া যায় না। কেমন নিশ্চুপ হয়ে গেছে।

“আনাহিতা রাহমান সিনথিকে আমি আবার আগের মতো চঞ্চল দেখতে চাই। এবং সেটা খুব শীঘ্রই!”

★★★

শিকদার পরিবারের সদস্যরা চৌধুরী ভিলায় গিয়েছে। রোদকে আজকে সুন্দর ভাবেই সাজানো হয়েছে। নুড পিংক কালারের শাড়ীতে তাকে বেশ লাগছে। আদ্রিশের বিজন্যাস পার্টনার সবার সাথেই রোদের ইন্ট্রডিউস হচ্ছে। পূর্ণ ও এসেছে চৌধুরী বাড়ীতে। তবে রোদের আশেপাশেও সে ঘেঁষেনি। আজকাল বাড়ীর সবার সাথেই পূর্ণর বেশ দূরত্ব। শূন্যর সাথেও আগের মতো মিশে না। তিশার সাথেও তেমন করে কথা বলেনা।

এক কোণে বসে আছে পূর্ণ। অরিনের সাথে সে কলে কথা বলছে। অরিন সে বিয়ে নিয়ে পরিকল্পনা করছে। পূর্ণ শুধু সেসব শুনেই যাচ্ছে। তার এসবে ইন্টারেস্ট আসছে না। নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকলে কোথাও একটা শূন্যতা এবং খারাপ লাগা কাজ করে। সবকিছুর প্রতি একটা উদাসীন ভাব তৈরী হয়েছে তার।

শরীফ শিকদার এবং আলতাফ পারভেজ চৌধুরী একসাথে বসে আছেন। দু’জনেই বেশ চিন্তিত। আলতাফ পারভেজ চৌধুরী পারছেন না রোদকে মে’রে উপরে পাঠিয়ে দেন। শরীফ শিকদারের পুরো দৃষ্টি পূর্ণর দিকে। ভাইকে মে-রেছে সেটা বড় কথা না। খান ইন্ডাস্ট্রি ও সে পেলো না। মাঝখানে রোদ আদ্রিশের দেখা হয়ে গেলো। বিয়েটাও হয়ে গেলো। তাহাফ খানের দিন শেষ সাথে নিজেদের ও সুদিন ঘনিয়ে এসেছে সেটা বেশ টের পাচ্ছেন তিনি।

খাওয়া-দাওয়া,ফটোশুট এসবের মাঝে সময় কাটে। আলতাফ পারভেজ চৌধুরীকে ডেকে নেওয়া হয় ফ্যামিলি পিকচার তোলার জন্য। রোদের পাশেই তাকে
দাঁড় করানো হয়। আদ্রিশের পাশে ফারিহা চৌধুরী দাঁড়িয়ে আছেন। রোদের আশেপাশে ঘেঁষতে ও আলতাফ পারভেজ চৌধুরীর ভয় হয়।

বিকেলের দিকে শিকদার পরিবার বিদায় জানিয়ে রওনা হয়। রেদ আজকে যাবে না। অন্য কোনদিন সে আদ্রিশকে নিয়ে শিকদার বাড়ীতে যাবে। শারমিন আঞ্জুম এবং সাইখা ইসলাম রোদকে কিছুক্ষণ জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়। নতুন বউ অনেক কিছুই মাথায় রাখতে হয়। সেসব সম্পর্কে ধারণা দিয়ে গেছে রোদের দুই মামী। তবে তূর্ণ বা পূর্ণ কারোর সাথেই দেখা হয়নি রোদের। বলা যায় তিনজন মানুষই তিনজনের থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে কিংবা স্মৃতি মুছতে চাইছে।

বাড়ীতে এসে পূর্ণ নিজের রুমে চলে যায়। কী হবে,কী হচ্ছে সেসব ভেবে মাথা কাজ করে না তার। একটা সময় কতটা নিচে নেমেছিলো সে! আর চারজনের মতো সেও রোদের ক্ষতি করতে চেয়েছে। মা-রতে চেয়েছি! শুধুমাত্র নিজের ক্যারিয়ার বাঁচানোর জন্য। পূর্ণর রাগ হয় শরীফ শিকদারের প্রতি! তার কথা শোনেই সে এসব করেছে। তার বাবার মৃ-ত্যু নিয়ে যে সত্য-মিথ্যে বলেছে তার সত্যতা আজো দেখা হলো না। হয়ত রোদ এর ভালোটা জানে। কিন্তু রোদ জেনেও এতেদিন চুপ ছিলো? সবসময় তাকে দোষারোপ করা হলেও সে প্রতিবাদ করেনি। পূর্ণর খটকা লাগে! কিন্তু কোন মুখে সে রোদের সামনে দাঁড়াবে? সত্য জানা প্রয়োজন তবে বিবেক বাঁধা দেয়। সে যা করেছে রোদের থেকে একশ হাত দূরে থাকাটাই বেটার। তাহলে কী সত্য
জানা হবে না?

★★★

এরই মাঝে কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। আদ্রিশ তৈরী হয়েছে অফিসের জন্য। একটু পর বের হবে। রোদ তখন তড়িঘড়ি রুমে এসে আদ্রিশকে বলে, “খান বাড়ীতে যাওয়া দরকার। তাহাফ খান অনেক তো করলো রাজত্ব এবার বিদায় দেওয়া দরকার।”

“উমম.. বাড়ীটা তো ওইভাবেই পড়ে থাকবে রোদ।”

“তো? আমার বাবার বাড়ী সেটা খালি পড়ে থাকুক বা যাই থাকুক ওটায় আমি অধিকার খাটাতে চাই। অনেক ছাড় দিয়েছি আর না।”

কথাটা শেষ হতে আদ্রিশ রোদের কোমড় জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। রোদকে বলে, “এতোদিন তাঁদের কিছু বলোনি কেন?”

“আমার ভালোবাসা আমার শক্তি! যে এতোদিন আমার ছিলো না তাই আমার সাহস হয়নি।”

“এই তো আমি আছি! একদম তোমার ছায়া হয়ে তোমার কাছেই, একদম তোমার সাথেই।”

“আচ্ছা ভালোবাসেন সেটা জানি! তবে কিছু সত্য জানলে আমায় দূরে ঠেলে দিবেন না তো?”

“সত্য জানলে দূরে ঠেলে দেবো কেন? এমনিতে পুরোনো অনেক হিসাব বাকী আছে। আংকেল আন্টির মৃ-ত্যু আবার শিকদার সাহেবের মৃ-ত্যু সবই জানা বাকী।”

“আমার বড় মামুকে মেরেছে তারই রক্তের ছোট ভাই মানে আমার ছোট মামু।”

মূহুর্তে আদ্রিশ হাতের বাঁধন আলগা করে দেয়। রোদ সোজা হয়ে দাঁড়ায়। আদ্রিশ তখন বলে, “আর ইউ ওকে রোদ? তুমি কী বলেছ ভেবে বলেছ তো?”

“এটা সত্যি আদ্রিশ। আমি তার সাক্ষী। আমাকে মারার ফাঁদ পাতা হলেও মূল উদ্দেশ্য আমার বড় মামুকে রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া। এই সত্যটা আমি এবং মামুর খু-নি ছাড়া আর কেউ জানে না।”

“পূর্ণ?”

“সে আমায় ভুল বুঝতো এখনো মামুর মৃ-ত্যুর জন্য আমাকেই দায়ী করে।”

#চলবে

#এক_ফালি_প্রণয়|৩৩|
#শার্লিন_হাসান

( প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য উন্মুক্ত)

কেটে যায় বেশ কয়েকদিন। রোদ আদ্রিশের খুনসুটি ও বেশ জমেছে। তবে আলতাফ পারভেজ চৌধুরী রোদের থেকে দূরেই থাকেন।

শিকদার বাড়ীতেও সবার ব্যস্ত সময় কাটছে। পূর্ণ শরীফ শিকদারের এক্টিভিটিস ফলো করে সিদ্ধান্ত নেয় সে এবার বিয়ের পিড়িতে বসবে। রোদের বিয়ের পর তেমন কিছুই হয়নি।

সন্ধ্যায় লিভিং রুমে বসে আছে শিকদার পরিবারের সব সদস্যরা। তূর্ণর পাশের সোফায় বসে আছে পূর্ণ। শরীফ শিকদার বিরক্তি নিয়ে বলেন, ” যা বলার তাড়াতাড়ি বলো। আমার কাজ আছে।”

তখন পূর্ণ তেজী স্বরে জবাব দেয়, “তাহলে আপনি আসতে পারেন। আপনি আপাতত না থাকলেও সমস্যা নেই আমরা তিন ভাই দায়িত্ব নিতে পারবো।”

শরীফ শিকদার কটমট দৃষ্টিতে পূর্ণর দিকে তাকায়। কেউ আর একটা বাক্যও উচ্চারণ করে না। সাইখা ইসলাম পূর্ণর দিকে চেয়ে আছেন। তিনি কখনো শরীফ শিকদারের মুখের উপর কথ বলতে দেখেননি পূর্ণকে। আজকাল কেমন জেনো!

শরীফ শিকদার স্থির হয়ে বসেন। তখন পূর্ণ বলে, “সামনের সপ্তাহলে শিকদার বাড়ীতে বিয়ে হবে।”

“কার বিয়ে?”

প্রশ্ন করেন শরীফ শিকদার। পূর্ণ কিছুটা নড়েচড়ে বসে। প্রতিত্তোরে দেয়, “তাহিয়ান শিকদার পূর্ণর বিয়ে হবে অরিন আয়াতের সাথে।”

“এ তো বেশ ভালো কথা পূর্ণ।”

তূর্ণর কথায় পূর্ণ মলিন হাসে। যেই হাসিতে না আছে প্রাপ্তি বা পরিনতির আনন্দের ছোঁয়া। কেবলই বিষাদ দেখা যায়।

সেদিন রাতে অরিনকে কল দেয় পূর্ণ। সবসময় ব্যস্ততা দেখানো অরিনকে। তেমন করে ফোনালাপ করতো না তারা। অরিন চাইলেও পূর্ণ চাই তো না। হুট করে পূর্ণর থেকে এমন রেসপন্স দেখে অরিন কিছুটা অবাক হয়। কল রিসিভ করে, সালাম দেয়। পূর্ণ সালামের জবাব দিয়ে বলে, “কেমন আছ?”

“ভালো আপনি?”

“ভালো। অবাক হওয়ার কিছু নেই। প্রেম করবো তোমার সাথে।”

“মজা করতে হবে না।”

“মজা না! এতোদিন ঝুলিয়ে রেখেছি তবে একসপ্তাহ প্রেম করবো আমরা।”

“তারপর?”

“তোমায় আমার অর্ধাঙ্গিনী বানাবো। কী হবে তো?”

“আজকে মনে হয় কিছু খেয়েছেন আপনি।”

“অ্যাম সিরিয়াস অরিন। তোমায় আমি ভালোবাসি। প্রকাশ না করলেও ভালোবাসি! প্রেম জিনিসটা আমি বিশ্বাস করি না। তাই এতোদিন এসব পাত্তা দেইনি! এখন আমরা বিয়ে করবো তাই এই কয়টা দিন সময় নিয়ে বুঝবো দু’জন দু’জনকে।”

অরিন জেনো অবাক হচ্ছে। পূর্ণর কথায় সে জেনো আডরেকবার প্রেমে পড়লো। মানুষটা যেমনই হোক তার ভালোবাসা। এই অনুভূতিটা সবচেয়ে সুন্দর! নিজের ভালোবাসার মানুষটার মুখ থেকে ভালোবাসির প্রতিত্তোরে ভালোবাসা প্রকাশ! অরিনকে চুপ থাকতে দেখে পূর্ণ শুধায়, “তুমি খুশি হওনি?”

“হয়েছি!”

“আগামী কালকে তোমার বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠাবো।”

“আচ্ছা।”

“চিন্তা করো না ছেড়ে যাচ্ছি না এতো সহজে।”

★★★

রোদ ল্যাপটপে নিজের অফিসের কিছু কাজ করছিলো। আজকাল টুকটাক কাজ করে সে। আদ্রিশ তাকে হেল্প করে। খুব শীঘ্রই নিজের ইন্ডাস্ট্রির দায়িত্ব নিজে বুঝে নিবে। ডিনার শেষ করে আদ্রিশ রুমে প্রবেশ করতে দেখে রুম অন্ধকার। দরজা ভিজিয়ে কিছুটা এগিয়ে আসতে বুকের উপর কারোর হামলে পড়া অনুভব করে। আদ্রিশ বুঝে এটা রোদ। মাঝেমধ্যে এমন পাগলামি দেখা যায়। তবে সেটা বড়জোর তার কপালে দু’টো চুমু দিতে হবে। এই আবদারে! তবে আজকের ব্যপারটা অন্যরকম। আদ্রিশ একহাতে রোদকে জড়িয়ে ধরে আরেকহাত দিয়ে দরজা লক করে আদ্রিশ। রোদের কী হলো বুঝলো না। আদ্রিশের ঠোঁটে গাঢ় করে চু’মু খেলো সে। গলা জড়িয়ে ধরে বলে, “আই নিড ইউ জান! এ্যান্ড রাইট নাউ।”

আদ্রিশ কিছু বলতে যাবে তার আগে রোদ তার ডান গালে চু’মু খায়। পুনরায় বলে, ” আই নিড ইউ জান!”

আদ্রিশ তার প্রিয়তমার উন্মাদনায় সায় দেয়। রোদকে কোলে করে বিছানায় নিয়ে যায়। রোদের মুখশ্রীতে অসংখ্য চুমু এবং কামড়ের দাগ পড়ে। নরম, কোমল উদরেও অসংখ্য চুমু পড়ে। মূহুর্তে দুই হাত চার হয়ে যায়। দু’টো তনুর মিলন ঝংকার তুলছে রুম জুড়ে। রোদের ছোট্ট তনুটাকে নিজের দখলে নিয়ে নেয় আদ্রিশ। দু’টো তনু ব্যস্ত তাঁদের ভালোবাসার উন্মাদনার ঢেউ থামাতে।

রোদ আদ্রিশের কপালে চুমু খেয়ে বলে, “থ্যাংকস জান।”

★★★

পরের দিন পূর্ণ অফিসে বসেই, রোদকে নিজে থেকে কল দেয়। বার কয়েক রিং হতে রোদ রিসিভ করে। আদ্রিশ অফিসে আছে সেজন্যই কলটা দিয়েছে পূর্ণ। রোদ ‘হ্যালো’ বলতে পূর্ণ বলে, “কেমন আছো রোদ?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভীষণ ভালো আছি।”

“রাগ করে আছো?”

“কিসের জন্য?”

“আমি জানি তুমি সব জেনেছ।”

“হয়ত!”

“সেদিন ছাঁদে তুমি ছিলে তাই না?”

“বাহ্! তোমার ব্রেইন খুবই এক্টিভ পূর্ণ ভাই।”

“আচ্ছা একদিন হলেও সত্যিটা জানতে সেজন্য আমার আক্ষেপ নেই তবে বুক ভরা আফসোস আছে রোদ।”

“গুড!”

“একটু মিট করতে পারবে।”

“স্যরি সময় নেই।”

“শোন না?”

“বলো?”

“কখনো কিছু চাইনি, চাইবো ও না। পূর্ণ সহজে কারোর থেকে কিছু আশা করেনা। তবে আজকে এই মূহুর্তে আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই রোদ। আমার কিছু জানার আছে।”

রোদ কিছুক্ষণ চুপ থাকে। সে এতোদিন ভেবেছে পূর্ণকে সত্যটা বলে দিবে। সত্যটা জানা অতি আবশ্যক। ভাবনা চিন্তা সাইডে রেখে রোদ জবাব দেয়, “কোথায় আসব?”

” ভার্সিটির পাশের ক্যাফেতে।”

“আচ্ছা।”

পূর্ণ কল রেখে বেড়িয়ে পড়ে ক্যাফের উদ্দেশ্যে। হাত কেমন কাঁপছে তার। ড্রাইভ করার শক্তি হারিয়ে যাচ্ছে। সে জানে না কত বড় সত্যি তার জন্য অপেক্ষা করছে।

রোদ ড্রাইভারকে নিয়ে বের হয়। ক্যাফের সামনে এসে সে ভেতরে চলে যায়। তার পেছন দিয়ে পূর্ণ ক্যাফেতে প্রবেশ করে। দু’জন মুখোমুখি বসা। নিরবতা ভে’ঙে রোদ বলে, “কিছু জিজ্ঞেস করবে?”

“আমি তোমায় ভুল বুঝেছি আমার বাবার মৃত্যু নিয়ে। আমি ভেবে দেখেছি হিসাব গড়মিল! তোমাকে বাঁচাতে গিয়ে বাবা মরেছে। তার মানে এই না যে তুমি বাবার মৃ-ত্যুর জন্য দায়ী। এমনও হতে পারে বাবাকে অন্য কেউ মে-রেছে।”

“আচ্ছা বুঝলাম।”

“আমি তোমায় মার-তে চাইনি রোদ। আমার ক্যারিয়ারের জন্য বাধ্য হয়েছি। শরীফ শিকদার আমাদের ইন্ডাস্ট্রি থেকে গোপনে ড্রাগস পাচার করতো। ওইটার ভিডিও রাখে তার কাছে। যেহেতু ইন্ডাস্ট্রির মেইন ওনার আমি এবং তূর্ণ সেক্ষেত্রে আমাদের উপরই আঙুল উঠতো। শুধু তাইনা আমার বাবার গড়ে তোলা ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ হয়ে যেতো। তোমার ইন্ডাস্ট্রির প্রতি ওনার লোভ। উনি চেয়েছেন তোমায় আমি প্রেমের ফাঁদে ফেলে ইন্ডাস্ট্রি ওনার নামে করে দিই। নাহলে ওই ভিডিও সাথে অরিনকেও দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিবেন। অরিন মেয়েটা চঞ্চল, পাগলাটে আমার জন্য। আমি নিশ্চয়ই তার মৃ’ত্যু চাইবো না…..

” কারণ সে তোমার ভালোবাসা।”

রোদের কথায় পূর্ণ মাথা নাড়ায়। রোদ বিগলিত হেসে বলে, “প্রেমিক পুরুষ হিসাবে ভালোই তুমি।”

“শুধুই ভালো!”

“সেটা অরিন ভালো বলতে পারবে।”

“আচ্ছা ছাড়ো সেসব কথা।”

“আচ্ছা!”

“তূর্ণ ভাই তার ভালোবাসা হারিয়েছে আমার জন্য।”

“কাকে?”

“তোমাকে!”

“আমি রোদ অবশ্য কখনো তার হতাম না। আমার ভালোবাসার জন্য আমি অপেক্ষায় ছিলাম তবে কখনো প্রকাশ করিনি। আমি জানতাম তুমি মিথ্যে প্রেমের জাল বুনেছে। আমিও সায় দিয়েছিলাম কিছুটা তবে সেটার পেছনে অবশ্য কারণ আছে।”

পূর্ণ কিছুটা অবাক হয়। ব্রু কুঁচকে তাকায়। রোদ পুনরায় বলে, ” যদি আমি সায় না দিতাম তাহলে নিশ্চয়ই তূর্ণ ভাই আমায় বিয়ে করতে চাইতো। না করার কারণ থাকতো না। আমি তার ভালোবাসাকে সন্মান করি। নিসন্দেহে সে ভীষণ ভালো একজন মানুষ। আমায় নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবেসেছে এটাও আমার অবগত আছে। শুধু স্বার্থের স্রোতে চললে তুমি পূর্ণ ভাই।”

“আমার বাবা-র খু’নি কে রোদ?”

“আমি জানি না।”

“তুমি সব জানো।”

“সম্পর্কে ফাটল আমি চাই না। অতীত টানতে হবে না।”

“তাহলে তুমি অকৃতজ্ঞ এবং স্বার্থপর রোদ।”

“তুমি সত্যিটা নিতে পারবে না পূর্ণ ভাই।”

“বলো?”

“আমার বাবা মায়ের খু’নি আমার বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু বর্তমানে আমার শ্বশুর আলতাফ পারভেজ চৌধুরী এবং তার সাথে আমারই মায়ের রক্তের আপন ছোট ভাই শরীফ শিকদার। শুধু তাই নয়! আমাকেও মারতে চেয়েছেন ওই দু’জন লোক।”

“তোমাকে টার্গেট করলেও আসল উদ্দেশ্যে আমার বাবাকে মা-রা।”

“জানি!”

“ধন্যবাদ তোমায়। আমার বাবার খু’নিকে আমি পেয়ে গেছি।”

কথাটা বলে পূর্ণ উঠে দাঁড়ায়। রোদ হতভম্ব হয়ে যায়। পূর্ণর চোখ মুখ রাগে কঠিন হয়ে আছে। এই মূহুর্তে যেকোন দুর্ঘটনা ঘটিয়ে ফেলতে পারে। রোদ পূর্ণর হাত খামচে ধরে। পূর্ণর দিকে তাকিয়ে না বোধকে মাথা নাড়ায় রোদ। পূর্ণ রোদকে বলে, “হাত ছাড়ো! ওই টাকলা শরীফের টাক আজকে আমি ব্লাস্ট করবো।”

রোদ হাসবে নাকী কাঁদবে বুঝতে পারছে না। হাসি আসলেও নিজেকে ধাতস্থ করে পূর্ণকে বলে, “তুমি থামো পূর্ণ ভাই। এখন উল্টাপাল্টা কিছু করলে জেল হতে পারে। সামনে তোমার জীবনের সুন্দর একটা অধ্যায় শুরু হতে চলেছে। তোমার কিছু হলে অরিন কষ্ট পাবে। আই হোপ তুমি অরিনকে কষ্ট দিতে পারবে না।”

#চলবে