#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন ২)
৫৪.
#WriterঃMousumi_Akter
রাতের গহীন অন্ধকারের চেয়ে মন খারাপের অন্ধকার যেনো গাড় কালো বেশী হয়।মনের মাঝে বিষন্ন, গাড় কালো অন্ধকার জমাট বেঁধেছে।সব কিছুই অন্ধকার মনে হচ্ছে।বিহানের লেখা চিঠিটার প্রতিটা লাইন যেনো ওর মনের চাপা কষ্টের আর্তনাদ ছিলো।চিঠির পাতা চোখের পানিতে ভিজে গিয়েছে জায়গা জায়গায়।চিঠিটা নিয়ে ফ্লোরে বসে হাউ মাউ কাঁন্নায় ভেঙে পড়লাম।চেষ্টা করেও পারছি না ভেতর থেকে কাঁন্না আটকাতে।ভীষণ কষ্ট হচ্ছে,দম বন্ধ কষ্ট কেনো ভুল বুঝলাম আপনাকে।আপনার ফোন চেক করার প্রয়োজন নেই আমার,আপনাকে আর ছোট করতে চাই না আমি।এত বড় ভুল আমি কিভাবে করলাম।একটা মানুষ কিভাবে এত ভালবাসতে পারে।আমি একটা বার ভেবে দেখলাম না, মানুষ টা আমার ফোন রিসিভ না করায়,ছুটে এসেছে কয়েকঘন্টায় সেই ঢাকা থেকে নড়াইল।আমি কষ্ট পাচ্ছি ভেবে জ্বর নিয়ে আমার কষ্ট কমাতে আমার কাছে ছুটে এসেছেন।মানুষ টা কত রাগী তাও আজ আমার উপর রাগ দেখান নি,আমার বলা খারাপ কথা গুলোর মানে উনি ভালবাসা হিসাবে গ্রহন করে সম্মান আর শ্রদ্ধা জানিয়েছেন।আপনি কিভাবে পারেণ এতটা ভালবাসতে। কয়েকদিন আগে তোহা আপুর কাজিন বিহান কে বলেছিলো দিয়া আর আমার রিলেশন আছে।বিহান হেসে বলেছিলো আমার জানার কোনো ইন্টারেস্ট নেই।দিয়া কেমন আমি ভাল জানি,অন্যর কথায় দিয়াকে আমি কখনো বকিনা।আমার বিশ্বাস এতটা ঠুনকো নয়।দিয়ার ব্যপারে খারাপ কিছু বলতে আসলে নেক্সট টাইম ব্যাপার টা ভালো দিকে যাবে নাহ।উনি তো কারো কথায় আমাকে ভুল বুঝেন না আমি কেনো ভুল বুঝলাম।
–কিছুক্ষণের মাঝেই বিভোর ভাই এলেন আমার রুমে।আমাকে ডাকতেই চোখের পানি মুছে বললাম,
–ভেতরে আসুন।
–দিয়া বিহান কোথায়?
–বাইরে গেলো।
–কিছু নিয়ে ঝগড়া হয়েছে।তোর ব্যাগ বারান্দায়।কি হয়েছে।
–কিছু নাতো বিভোর ভাই।
–এইনে বিহানের ওষুধ, আমার কাছেই ছিলো।প্রায় এক সপ্তাহ ওর একটু ঠান্ডা লেগেছে।গতকাল থেকে হালকা জ্বর।
— উনার জ্বর।
–হ্যাঁ। শোন দিয়া বিহান বাসায় ওর কতগুলো ফ্রেন্ড কে দাওয়াত দিয়েছে।আগামি সপ্তাহে তোকে পরিচয় করিয়ে দিবে।এডমিশন দিতে যাবি যখন তখন।প্রায় বিহানের ফ্রেন্ড আসে আর বলে ভাবিকে দেখবো।বিহান তো কাউকেই তোকে দেখাবে না।বলে বেশী দামি জিনিস দেখাতে নেই।এইবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেখাবে।সেই সাথে রিয়াকেও দেখিয়ে দিবো।আমার ফিউচার বউ।
মেঘ করেছে আকাশে, ভীষণ মেঘ।শুরু হলো নিমিষেই ঝুম বৃষ্টি। উনি কোথায় ফোন ও তো রেখে গিয়েছেন রুমে।কিভাবে ফোন দিবো।এই বৃষ্টিতে ভিজলে তো আরো জ্বর হবে।আধাঘন্টা ধরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে।মামির কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলে মামি চিন্তা করবে।মামির পাশে দাঁড়িয়ে বিভোর ভাই গল্প করছে।
বারান্দায় মারুফা খালা দাঁড়িয়ে আছে।খালা নিশ্চয়ই দেখবে বিহান বাইরে গিয়েছে কিনা।খালাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,খালা বিহান বাইরে গিয়েছে দেখেছো।খালা বললো নাতো ছাদের দিকে যেতে দেখেছিলাম।বৃষ্টি হচ্ছে মনে হয় চলে এসছে।রুমে গিয়ে দেখো।উনি তো রুমে নেই তাহলে কি ছাদে রয়েছে।এই ঝুম বৃষ্টিতে উনি ছাদে কেনো?এই জ্বর নিয়ে ভিজলে আরো কষ্ট হবে উনার।মানুষ টা নিজেকে আর কত কষ্ট দিবে।দ্রুত ছাদে উঠতে গিয়ে সেঁচের পানিতে পা পিছলে খুব জোরে পড়ে গেলাম সিঁড়িতে।সেদিকে কোনো হুঁশ নেই আমার।দ্রুত উঠে ছাতা নিয়ে এগিয়ে গেলাম।ছাদে যেতেই বুকের মাঝে ছ্যাত করে উঠলো আমার।উনি এই ভীষণ বৃষ্টিতে ভিজছেন। ছাদের রেলিং ধরে সসম্পূর্ণ বৃষ্টিতে ভিজছে বিহান।চোখের পানি কি তবে বৃষ্টিতে ভিজে লুকাতে চাইছেন।পাশ্চিম দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছেন,মন খারাপের গল্প কি তবে বিশাল আকাশের উদারতায় বিলিয়ে দিচ্ছেন।সিঁড়ি ঘরে দুটো অচেনা অতিথি পাখি কাক ভেজা ভিজে শরীরের পানি ঝেড়ে দুজন দুজনের সাথে ঠোঁট মেলাচ্ছে।আমি কয়েকবার বিহান কে ডাকলাম কিন্তু ডাক শুনলো না।স্টীল হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।আমি দ্রুত গিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে এলাম সিঁড়ি ঘরে,বাধ্য ছেলের মতো চলে এলো আমার সাথে।মনে হচ্ছে এক্ষুণি অচেতন হয়ে যাবেন উনি।এই প্রচন্ড জ্বর নিয়ে মাথায় বৃষ্টি লাগালেন।দ্রুত আমার ওড়না দিয়ে উনার মাথা মুছতে শুরু করলাম।লাল টকটকে করূন অসহায় চোখে তাকিয়ে আছেন উনি আমার দিকে।চোখে নিদারুণ কষ্টের ছাপ।আমি চুলের পানি মুছে যাচ্ছি আর উনি তাকিয়েই আছেন আমার দিকে।উনার এই চাহনি যন্ত্রণা দিচ্ছে আমাকে।এমন স্ট্রং একজন মানুষ এইভাবে ভেঙে পড়েছেন।উনার গায়ের এপ্রোণ আর শার্ট খুলে দিলাম।ঠান্ডায় থর থর করে কাঁপছেন উনি।গায়ের পানি মুছে দিতে দিতেই আমার ওড়না ভিজে গেলো।উনাকে ধরে রুমে নিয়ে এলাম।একটা প্যান্ট দিয়ে বললাম এক্ষুণি চেঞ্জ করে নিন।উনি কেমন যেনো ঢুলছেন।আমি অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালাম,আর উনি চেঞ্জ করে নিলেন।চেঞ্জ করেই উনি পড়ে যেতে গেলেন সাথে সাথেই ধরে ফেললাম উনাকে।আমার কোলে ঢলে পড়লেন উনি।এমন একজন মানুষ কে আমার পক্ষে সামলানো সম্ভব হচ্ছে না।কোনভাবে বিছানায় নিয়ে সুইয়ে দিলাম।যেমন ভীষণ জ্বর তেমন কাঁপছেন।পাশের রুমের বাক্স খুলে কম্বল বের করে উনার গায়ে দিয়ে দিলাম।একটা কম্বলে উনার কাঁপুণি কমছে না।ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে কি হয়ে গেলো উনার।আমার বয়সে উনাকে এতটা অসুস্থ হতে দেখিনি আমি।জ্বরের মাত্র ক্রমশ বেড়ে চলেছে উনার।আমি বার বার উনার মুখে হাত দিয়ে উনাকে ডাকছি।হাতের তালু ঘষে দিচ্ছি কিন্তু উনি কোনো উত্তর ই দিচ্ছেন না।বাইরের তুফান যেনো আরো জোরে বেড়ে চলেছে।মামিকে খুব জোরে ডাকলাম। আমার কাঁন্না শুনে মামি, মারুফা খালা,বিভোর ভাই,মামা দ্রুত উপরে উঠে এলো।উপরে এসে বললো কি হয়েছে দিয়া।আমি কোনো কথা বলতে পারছি না হাউ মাউ করে কেঁদে যাচ্ছি।মামি বুঝতে পারলো বিহানের জন্যই কাঁদছি আমি।
–মামা আমাকে বললো, কি হয়েছে দিয়া।
–আমি আরো জোরে কেঁদে দিলাম।
–বিভোর ভাই আর মামি খাটের উপর গিয়ে দেখলো বিহানের ভীষণ জ্বর।
–মামি বললো,তুমি এক্ষুণি ডাক্তার নিয়ে এসো।
–মামা বললো,বাইরে এত তুফান কিভাবে যাবো।মামার বিহানের কপালে হাত রেখে বললো,ছেলের শরীর তো পুড়ে যাচ্ছে জ্বরে।
— বিভোর ভাই বললেন,কাকু বিহানের ওষুধ আমি নিয়ে এসছি।তোমরা চিন্তা করোনা। এখন ডাক্তারের কাছে যাওয়ার দরকার নেই।
–দিয়া সেই ওষুধ কোথায়?
–আমি ওষুধ গুলো বের করে দিলাম।বিভোর ভাই থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপছেন।জ্বর ১০৫ এর বেশী।
–মামির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।আমি বুঝি মামির এই একটায় ছেলে।তার কিছু হলে মামির পক্ষে সহ্য করা খুব কঠিন ব্যাপার।
মামি মারুফা খালা হাতে পায়ের তালুতে সরিষার তেল ঘষে দিচ্ছে।বিভোর ভাই মাথায় জলপট্টি দিচ্ছেন।আমি নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে কেঁদে যাচ্ছি।কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।সব কিছুর জন্য আমি দায়ী।আমার জন্য অসুস্থ মানুষ টা নিজেকে কষ্ট দিয়েছে।ভালবাসার মানুষের অসুস্থতা এত বেশী যন্ত্রণা দেয় যা সহ্য ক্ষমতার বাইরে।মামা মামিকে একটা ধমক দিয়ে বললো,কি কাঁদছো কেনো?ছেলে অসুস্থ দোয়া পড়ে ফু দাও।মায়ের দোয়ার থেকে বড় দোয়া নেই।কোথায় একটু জ্বর হয়েছে আমার ছেলের আর তুমি মরা কাঁন্না জুড়ে দিয়েছো।তোমাকে কাঁদতে থেকে দিয়া ভাবছে বিহানের কি না কি হয়েছে।দিয়া ছোট মানুষ ওর সামনে তুমি কাঁদছো।
আমি বুঝতে পারছি মামা ও দুঃচিন্তায় মামিকে বকছে।একটা মাত্র ছেলে।মামার প্রাণের অধিক প্রিয় বিহান।ঘন্টা খানিক কেটে যাওয়ার পরে বৃষ্টি বেশ কমে গেলো।বিভোর ভাই এর আম্মু বিভোর ভাই কে খুজতে এসে বিহান এর জ্বর দেখে আটকে গেলো।মামি জলপট্টি দিতে শুরু করলো,বিভোর ভাই উঠে গেলেন।রাত এগারোটা দিকে বিহানের জ্বর বেশ কম হলো।বিভোর ভাই ভীষণ ক্লান্ত ঢাকা থেকে বাইক ড্রাইভ করে এসেছে।বিভোর ভাই আর মামি চলে গেলেন আর বলে গেলেন সমস্যা হলে ফোন দিতে।রাত সাড়ে এগারোটার দিকে মামা বললো,বিহানের জ্বর তো একটু কমেছে চলো আমরা যায়, রাতে তো কেউ খাও নি।খেয়ে নাও সবাই।আমার ছেলে সুস্থ হয়ে গিয়েছে ইনশাআল্লাহ। দিয়া মা তুই ও খেয়ে না।মামাকে বললাম,আপনারা যান মামা খেয়ে নিন কোনো সমস্যা হলে আমি ডাকবো।আর আমি পরে খেয়ে নিবো। মামি যাওয়ার আগে বললো,দিয়া খাবার রেখে যাবো বিহান কে খাইয়ে দিবি কিন্তু।সবাই চলে গেলে আমি বিহানের মাথায় জলপট্টি দিয়েই যাচ্ছি।সারারাত বিহান চোখ খোলে নি।আমি একভাবে কেঁদে যাচ্ছি আর জলপট্টি দিয়ে যাচ্ছি।
রাত সাড়ে তিনটার দিকে উনি চোখ খুললেন,চোখ অফ করেই ডাকলেন দিয়া।
মনে হলো এই ডাকটা শোনার জন্য চাতক পাখির মতো চেয়ে ছিলাম আমি।আমার চোখের পানি উনার কপালে কয়েক ফোঁটা পড়েছে।উনার জ্ঞান ফিরতে দেখেই আমার যেনো আরো বেশী কাঁন্না পেলো।মানুষ টাকে কত কষ্ট দিয়েছি আমি।উনার দুইগালে দুই হাত দিয়ে ধরে উনার কপালে চুমু দিয়ে বললাম,আপনার কেমন লাগছে এখন।
–উনি চোখ খুলে কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে ওয়ালের ঘড়িতে টাইম দেখে নিয়ে বললেন,তুমি সারারাত ঘুমোও নি দিয়া।
–আপনার কেমন লাগছে বলুন।একটু ভাল লাগছে এখন।
–উনার হাত আমার দুই হাতে পাকড়ে ধরে রেখেছি আমি।উনার কপালে আবার ও চুমু দিলাম আমি।
–উনি ক্লান্ত কন্ঠে বললেন,আমার জ্বর হয়েছে বলে আমায় ছুয়েছো তুমি তাইনা।না হলে আমায় ছেড়ে চলে যেতে।
–সরি!আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।বলেই আবার ও বেশ জোরে কেঁদে দিলাম।
–উনি আমার চোখের পানি মুছে আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন,তুমি কাঁদলে আমার খুব কষ্ট হয় দিয়া।শরীরের এই অসুস্থতার থেকে ভারী, পাহাড় সমান যন্ত্রনা তোমার চোখের পানি দিয়া।
–আমাকে ক্ষমা করে দিন আপনি।কেনো এত কষ্ট দিলেন নিজেকে।
–উনি আমার হাত ধরে বললেন,জ্বর কত লাকি তাইনা।এই জ্বর না হলে কি তুমি আমার স্পর্শ করতে।এই জরের বাহানায় আমাকে তুমি নিজ থেকে ছুইয়ে দিলে।অসুস্থতার মেডিসিন হিসাবে তুমি দিলে ভালবাসার চুম্বন। কত সহযেই ভয়ানক রাগী দিয়ে ইমোশনাল কাঁন্না জড়ানো কন্ঠের একটা মেয়ে হয়ে গেলে।এই জ্বর থেকে যাক আজন্ম।তোমার স্পর্শ পেতে আজন্মকাল জ্বরের এমন তাপ সহ্য করতে পারবো আমি।
–কেনো এমন হয় আপনি ছাড়া সব কিছু ছন্নছাড়া।কেনো এমন হয় আপনি ছাড়া আমার জীবনের সব এলোমেলো।একদিন আফসোস করে বলতাম কেনো আমায় ভালবাসলেন না বিহান ভাই।আজ আবার সেই আফসোস টায় হচ্ছে কেনো আমায় এত গভীর ভাবে ভালবাসলেন বিহান ভাই।কেনো কেনো কেনো?আমি তো সত্যি আপনার যোগ্য না।কি দিয়েছি আমি আপনাকে, আপনি আমাকে দিয়েছেন এক সমুদ্র সমান ভালবাসার রাজ্য তবুও আমি আপনাকেই ভুল বুঝি বারবার।কেনো এমন করি আমি।আমি কেমন পাগল পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম,খুব ভয় হচ্ছিলো আমি কি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো।আমার মনে হয় আমার এই জীবনে বেঁচে থাকার একমাত্র কারণ আপনি।ওই প্রেয়সীর কথা শুনে ভীষণ কষ্ট হচ্ছিলো আমার। আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো।আমি এটা সহ্য করতে পারিনা আপনি আমি ছাড়া কাউকে সময় দেন।আপনাকে হারানোর ভয় আমাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছিলো।নিজের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে যা তা বলেছি,কষ্ট দিয়েছি আপনাকে।এমন কেনো হয় বলতে পারেন আমার।কেনো আপনাকে কষ্ট দিয়ে ফেললে আমি হাজার গুন কষ্ট বেশী অনুভব করি বিহান ভাই।সরি আমি বুঝে গিয়েছি আপনার ভালবাসার গভীরতা।আমি আপনার মতো করে কখনোই ভালবাসতে পারবো না।
–আবার ভাই ডাকলে।দিয়া আমি জানি আমার শ্যামাপাখিটা আমায় কত ভালবাসে।রাগলে যা মনে আসে বলে,আবার কাঁদে।আমি বেশীক্ষণ তাকিয়ে থাকতে পারছিনা।একটা কথা রাখবে?
–বলুন না কি কথা।
–আমাকে জড়িয়ে ধরবে একটু,আমার পাশে সুয়ে?দীর্ঘকাল মনে হয় তোমাকে কাছে পাই নি আমি।
এইটুকু মাত্র চাওয়া উনার।
–আমি উনার পাশে সুয়ে উনার বুকে মাথা রেখে নিজের সবটা দিয়ে আলিঙ্গন করলাম।উনি এই ভীষণ জ্বর ক্লান্তি নিয়ে আমার মাথায় চুমু দিয়ে বললেন আই লাভ ইউ দিয়া।দুটো মানুষের মান অভিমানের পরেই বুঝি ভালবাসা আরো বেশী গভীর হয়।মেঘ কেটে গেলেই যেনো আকাশ টা পরিষ্কার হয়ে যায়।যে ভালবাসা মন থেকে হয় সেটা প্রমান করার জন্য হৃদয়ের অনুভব ই যথেষ্ট।
চলবে,,
(রি-চেক নেই।কি লিখলাম তাও জানিনা।ভুল ত্রুটি মার্জনীয়)
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন২)
৫৫.
#WriterঃMousumi_Akter
সারারাত ঘুম হলোনা আমার।যদি আমি ঘুমোলে উনার কিছু হয় তাহলে কি করবো। একদম বুকের সাথে মনের কাছাকাছি মিশে রইলাম উনার সাথে।উনি আমাকে এমন ভাবে ধরে রেখেছেন যেনো আমি কোথাও হারিয়ে যাবো।ফজর এর আজান শেষে আমি উঠে পড়লাম।নামাজ পড়ে উনার সুস্হতার জন্য প্রার্থনা করে কিচেনে গিয়ে গরম ভাত রান্না করলাম,ফ্রিজ থেকে মাছ বের করে ঝোল করলাম।কাল সারাদিন কিছুই খান নি উনি।আমার রান্না শেষ হলে তখন ও কেউ ওঠে নি।ঘরে খাবার নিয়ে রেখে দেখলাম ফ্লোরে উনার প্যান্ট পড়ে আছে,সিঁড়ি ঘরে তো কাল রাতে শার্ট আর এপ্রোণ খুলে রেখে এসছিলাম,দ্রুত পায়ে গিয়ে এপ্রোণ আর শার্ট নিয়ে এসে প্যান্ট সহ সব ধুয়ে ছাদে শুকাতে দিয়ে এলাম।রুমে এসে উনার কপালে হাত দিয়ে দেখলাম জ্বর একটু কম হয়েছে।আস্তে করে ডাকলাম উনাকে।কয়েকবার ডাকতেই উনি চোখ খুললেন।
“আমাকে দেখে বললেন,তুমি এত সকালে উঠেছো কেনো?কাল তো সারারাত ঘুমোও নি।”
“আপনি না আমি বেশী ঘুমোয় বলে বকেন।আজ এত ঘুমোতে বলছেন কেনো?”
“কারণ ঘুমোও নি একটুও তাই।”
“পরে ঘুমোবো আগে উঠুন।আপনার জ্বর মাপতে হবে।”
“বিহান নিষ্পলক চাহনিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে।কি ভাবছে সেটা তো বুঝতে পারছি না।”
আস্তে করে উঠিয়ে বালিস হেলান দিয়ে বসিয়ে দিলাম।একটা শার্ট নিয়ে উনার গায়ে পরিয়ে দিলাম।শার্টের বোতাম লাগানোর সময় উনি বললেন,
“তুমি এত্ত কেয়ারিং একটা মেয়ে আগে তো জানতাম না।এইটুকু পুচকু মেয়ে স্বামির সেবাযত্ন করছে।আমি তো আগে জানতাম এই পুচকু মেয়েকে সারাজীবন ই আমার দেখেশুনে বেড়াতে হবে।কিন্তু নাহ মেয়েটা আমাকে সামলাতে শিখে গিয়েছে।”
“আমি শার্টের বোতাম লাগাতে লাগাতে বললাম,যার স্বামি এতট কেয়ারিং তাকেও তো কেয়ারিং হতে হবে তাইনা।আর বলছি একটা বেবি নিলে কেমন হয়।”
উনি খুব জোরে কেশে উঠলেন।যেনো গলায় কিছু বেঁধেছে।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললেন,
“কিছু বললে দিয়া।আর আমি কি ঠিক শুনলাম,নাকি কানে সমস্যা হলো আমার।জ্বর হওয়াতে কান ই নষ্ট হয়ে গিয়েছে আমার।”
“আপনার কানের কিছুই হয় নি। আমি বেবির কথা ই বলেছি।”
“বেবি।তুমি বেবির কিছু বুঝো।বেবি পালন করতে পারবে।”
“যখন মেয়েরা মা হয়না,তখন সব পারে।দায়িত্ব আপনা আপনি চলে আসে।”
“তুমি কি সিরিয়াস বেবি নিতে চাইছো?ভ্রু উঁচিয়ে বললেন।”
“হ্যাঁ। সত্যি চাইছি।”
উনি এক গাল হেসে বললেন,
“হঠাত এই বুদ্ধি কে দিলো।”
“শার্টের বোতাম লাগানো শেষ হলে পানির পট এগিয়ে বললাম,পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে নিন।খাবার খেতে হবে ওষুধ খেতে হবে।”
“ব্রাশ ছাড়া আমি খাবার খাবো।”
এমন ভাবে বললেন যেনো আমি কোনো অখাদ্য খেতে বলেছি।
“জ্বর হলে কি ব্রাশ করা লাগে।”
“ব্রাশ ছাড়া চুমু খাওয়া যায় বালিকা কিন্তু ভাত খাওয়া যায় না।ব্রাশ এগিয়ে দাও, বাড়িতে তো ব্রাশ রেখে গেছিলাম।”
আমি ব্রাশে পেষ্ট মাখিয়ে এনি দিলাম।উনি আস্তে উঠে ওয়াশ রুমে গিয়ে ব্রাশ শেষ করে বেরিয়ে এলেন।আবার এসে বালিশ হেলান দিয়ে বসলেন।
আমি ভাত মেখে উনার গালে তুলে দিতে দিতে বললাম,
“বেবি নেওয়ার ব্যাপার টার কি হলো। কিছু তো বললেন না।”
“হঠাত এই বুদ্ধি উদয় হলো যে। ”
“কাল ইউটিউবে সার্চ করে দেখেছি স্বামি স্ত্রীর ঝগড়ার সমাধান নিয়ে।সেখানে ভিডিও তে বলেছে একটা বাচ্চার অভাবে দাম্পত্য জীবনে সৃষ্টি হয় অশান্তি।আমিও ভেবে দেখলাম আমাদের একটা বাচ্চা প্রয়োজন।তাহলে আমাদের আর ঝগড়া হবে না।”
“আমি তো ঝগড়া করিনা,তুমি মানুষের কথা শুনে ঝগড়া করো।”
“বললাম তো সরি আর হবেনা।কিন্তু আমার বেবি চাই।”
“তোমার বেবি ক্যারি করার বয়স হয়নি এখনো।আরো পাঁচ বছর পরে বেবি নিবো আমরা।তোমার লেখাপড়া শেষ হোক আগে।”
“দেখুন শুনেছি,বিয়ের অনেক দিন হয়ে গেলে নাকি আর বেবি হয় না।পাশের বাসার আন্টিরা রোজ বলে এতদিন বিয়ে হয়েছে এখনো বেবি নিলে না।বাচ্চা কাচ্চা হয়না, কোনো সমস্যা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে নাও।”
“তুমিও বলবা জাস্ট বিয়েই হয়েছে চাচীআম্মারা ইয়ে হয়নি।”
“ইয়ে টা কী।”
“ইয়ে ইয়ে ইয়ে আসলেই ইয়ে মানে কিয়ে।”
“ইয়ে ফিয়ে বুঝিনা।আমার খুব চিন্তা হচ্ছে।আসলেই যদি আর বেবি না হয় আমার।”
“আউচ!এইসব মাথায় ঢুকালো কে তোমার।আল্লাহ যখন দিবে তখন হবে।আর তুমি কি দুনিয়ার যাবতীয় সমস্যার সমাধানের হেল্প গুগল আর ইউটিউব থেকে নাও।”
আমি হেসে দিলাম।উনার খাওয়া শেষে ওষুধ খাইয়ে বললাম এবার সুয়ে পড়ুন।আমি বাইরে যাচ্ছি।
চলে আসতেই শাড়ির আঁচল টেনে ধরলেন।
“পেছনে তাকিয়ে বললাম,কি হলো আবার।”
“কি ভেবেছো আমি খেয়াল করবো না।শাড়ি পরলে কখন।”
“সকালেই”
“কেনো?আমার মাথা খারাপ করতে।”
আমার বেশ লজ্জা লাগছে উনার কথা শুনে।নিচের ঠোঁট কামড়ে দুই হাত কচলাচ্ছি।
উনি বললেন,
“বলেছি না আমার সামনে এসে এইভাবে ঠোঁট কামড়ে ধরবে না,আর ঠোঁট ও ভেজাবে না বার বার।আমার মাথা ঠিক থাকে না এইভাবে দেখলে।”
“জ্বরে কি মাথা পুরাই গেছে আপনার।ভুলভাল কথা বলছেন।”
“বালিকা তুমি শাড়ি পরিয়া মসৃণ পেট বের করিয়া ঘুরঘুর করিতেছো।মাথা তো পুরাই যাবে।উনার ঠোঁটে দুষ্টু হাসি।”
আমি তাকিয়ে দেখি পেট বের হয়ে আছে, এইজন্য শাড়ি পরতে ইচ্ছা করেনা।ম্যানেজ ই করতে পারিনা।দ্রুত শাড়ি টেনে ঠিক করে নিলাম।উনি আমার আঁচল সহ আমায় কাছে টেনে নিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললেন,যাও এবার।
আমি চলে আসতেই বললেন,
“আরে সত্যি চলে যাচ্ছো মেডিসিন দিয়ে যাবে না।”
“দিলাম না।”
“উহু!অন্য মেডিসিন।ভালবাসার মেডিসিন।”
কপালে একটা চুমু দিয়েই দৌড় দিলাম।দিন দিন কি হয়ে যাচ্ছে এই মানুষ টা।
মারুফা খালা উঠান,ঘর বারান্দা সব ঝাড়ু দিচ্ছে।কাল বৃষ্টিতে ধুলাবালিতে ভরে গিয়েছে।মামি রান্নাঘরে গিয়ে বেশ অবাক এত সকালে রান্না করলো কে এটা ভেবে।আমাকে দেখে বললো,
“দিয়া এত সকালে কে রান্না করলো তুই।”
“হ্যাঁ মামি।তোমার ছেলেকে খেতে দিলাম।”
“আমাকে ডাকলি না কেনো?”
“তুমি আর কত করবে যাও তোমার ছেলের কাছে।দেখে এসো যাও।”
দিয়া কত বড় হয়ে গিয়েছিস তুই।সত্যি আমার খুব ভাল লাগছে দেখে।তুই আর বিহান ভাল থাকলেই আমার শান্তি লাগে মনে।
“তুমি তো আমার বেষ্ট শ্বাশুড়ি মা।”
“পাগলি মেয়ে।বিহান কে দেখে আসি আমি দিয়া।”
“আচ্ছা যাও।”
——————————————————–
আমার বাবা যে এতটা অসুস্থ আর আমি জানতেই পারলাম না।আমার জীবনের প্রথম পুরুষ মানুষ ই হলো বাবা।যে না চাইতেই অনেক বেশী ভালবাসা দিয়েছে।বাবাকে ফোন দিলাম দুইবার কিন্তু ফোন তুললো না।ফোন রেখে ভেবে যাচ্ছি কি করবো।কিছুক্ষণের মাঝেই বাবা কল ব্যাক করলো।
–আসসালামু আলাইকুম বাবা।
–ওয়ালাইকুম আসসালাম মা।
কেমন আছো বাবা তুমি?
–ভাল আছি বাবা শুনেছি তুমি অসুস্থ আমাকে তো বলোনি।
–তুমি কাঁদছো কেনো মা?আমার কিছুই হবেনা।বয়স হচ্ছে শরীর তো দিন যাবে আর খারাপ ই হবে।
–আমি কাঁদবো না কেনো?আমার বাবা অসুস্থ আর আমি জানিইনা।তোমার কি অনেক খারাপ লাগে বাবা।
–আরে মা না।বিহান তো দেখছে আমাকে।সুস্থ হয়ে যাবো।আমার জামাই এত বড় একজন ডাক্তার আমি কি সুস্থ না হয়ে যাবো।
–তোমার জামাই ও অসুস্থ তার অনেক জ্বর।
জ্বর নিয়ে কাল বাড়িতে এসছে।
–একটু পরে গিয়ে দেখে আসবো।
কেটে গেলো চারদিন, চারদিন পরে বিহান সুস্থ হলো।দুইদিন পরে আমার আর রিয়ার এডমিশন।ভাইয়া, আমি, রিয়া,বিহান আর বিভোর ভাই মিলে ঢাকায় রওনা হলাম।বুক দুরুদুরু করে কাঁপছে চিন্তায়।জীবনের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা মনে হয় এডমিশন।মুখ শুকিয়ে গিয়েছে রিয়া আর আমার।আম্মু বার বার বলে দিয়েছে ঠান্ডা মাথায় লিখতে,কেননা পারা জিনিস ঘাবড়ে গিয়ে ভুল করি আমি।সবার দোয়া নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম।পথে একজন মহিলা রিয়াকে বললো,দিয়ার কত আগে বিয়ে হয়ে গিয়েছে তোমার তো বেশ বয়স হলো বিয়ে হবে না।কিছু মহিলা আছে মেয়েদের ষোলো পেরোনোর সাথে মনে করে যেনো আহামরী বয়স হয়েছে।মা বাবার সাথে যেনো তাদের চিন্তা বেশী।এমনিতে রিয়া চিন্তায় পাগল হয়ে যাচ্ছে তার উপর এমন বিশ্রি কথা শুনে বিহান এর চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো রাগে।কিছু বলতে যাবে বিভোর ভাই আটকে দিলেন।বিভোর ভাই বললেন,
–আন্টি আপনার বয়সী,এমনকি আপনার থেকে কম বয়সী অনেকেই মারা গিয়েছে।আপনি এখনো বেঁচে আছেন কিভাবে?কবে ম*রবেন।
মহিলাটি যেনো বেকুব বনে গেলো।আমি আর ভাইয়া ফিক করে হেসে দিলাম।
মামাদের প্রাইভেট কারে চড়ে রওনা হলাম আমরা।
চলবে,,,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন ২)
৫৬.
#WriterঃMousumi_Akter
ঢাকা শহরে এর আগে খুব একটা আসা হয় নি আমার।রিয়ার খালামনির বাসায় এসেছিলাম একবার আর একবার একটা পারিবারিক অনুষ্টানে এসেছিলাম।তবে খুব একটা ঘুরে দেখা হয় নি।এই শহরের সব কিছুই অচেনা অজানা আমার।আমাদের গাড়িটা গ্রাম পেরিয়ে প্রবেশ করলো ঢাকা শহরে।প্রাইভেট কারে জার্নি করতে খুব একটা ভাল পারিনা আমি।সারা রাস্তা বমি করে ভীষণ ক্লান্ত আমি।বিহানের কাঁধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে এসেছি সারা রাস্তা।বিহান আমাকে যত্নের সাথে আগলে নিয়ে এসছে সারা রাস্তা।কখনো পানি ছিটিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করেছে, কখনো পানি খাইয়েছে,কখনো ওষুধ।অবশেষে আমরা পৌছালাম ঢাকায় বিহানের বাসায়।গাড়ি থেকে ক্লান্ত চোখে আস্তে করে চোখ খুলে তাকিয়ে দেখলাম বিশাল বিলাসবহুল একটা বাড়ি দশ তলা বিশিষ্ট। এ বিল্ডিং এর আট তলার একটা ফ্ল্যাটে বিহান আর বিভোর ভাই থাকেন।বিভোর ভাই ড্রাইভার কে গাড়ি পার্কিং এ রাখতে বললেন।ড্রাইভার কে সাথে নিয়ে লিফটে উঠলাম আমরা।চোখের পলক পড়তেই উঠে গেলাম আট তলায়।এটা ছিলো জীবনের প্রথম লিফটে ওঠা আমার।
–লিফট থেকে নামতেই শ্যামবর্ণের একটা ছেলে বিহান কে বললো আসসালামু আলাইকুম স্যার।
–বিহান সালামের উত্তর দিলো।
–ছেলেটি বললো,স্যার ছুটি কাটিয়ে এলেন।আপনাদের দুই ভাই কে খুব মিস করছিলাম।ব্যাড মিন্টন খেলা খুব মিস করছিলাম।
–বিহান বিনয়ের সাথে উত্তর দিয়ে বললো হ্যাঁ ভাই গ্রাম থেকে এলাম।
–স্যার সাথে কারা, উনি কি অসুস্থ আমার দিকে তাকিয়ে বললো।
–অসুস্থ মহিলা বাদে বাকি সবাই ভাই আর বোন।
–আমাকে দেখিয়ে বললো উনি তাহলে কে?
–আমার বাড়িওয়ালা।
–ওহ আচ্ছা আমাদের ভাবি।ভাবি তো অনেক পিচ্চি দেখতে।মনে হচ্ছে সেভেন এইটে পড়ে।
–উনি আবার ও বিনয়ের সাথে হাসলেন।
–ছেলেটি বললো,আমি রিমা কে পাঠাচ্ছি ভাবির জন্য লেবুর পানি দিতে।
–না থাক ভাই সমস্যা নেই।ভাবিকে কষ্ট দিতে হবে না।করে নিতে পারবো।
মনে হচ্ছে বিহান এত বড় ডাক্তার বলে একটু বেশী ই কেয়ার করছে।
বিভোর ভাই চাবি দিয়ে দরজা খুললেন।এই ফ্ল্যাটে এসে চোখ মেলে দেখেই যেনো আমার অসুস্থতা সব হাওয়ায় উড়ে গেলো।দুটো ব্যাচেলর ছেলে থাকে এখানে।একজন বিবাহিত আরেকজন অবিবাহিত কেউ কি দেখে বলবে এটা কোনো ছেলেদের ফ্ল্যাট।এত সুন্দর পরিপাটিভাবে সাজানো ঘর আমার জীবনে আগে দেখিনি।ঠিক যেনো সিনেমার কোনো ঘর দেখছি আমি।বিহান যে পরিপাটি ছেলে আগেই জানতাম বাট এতবেশী সেটা জানতাম না।বিশাল বড় ডায়নিং এ ঢুকতেই চোখে পড়লো আমার আর বিহানের বড় একটা ছবি টাঙানো।এটা তো সেই দিনের ছবি যেদিন আমি লাল শাড়ি আর ও লাল পাঞ্জাবী পরেছিলো।আমার সামনে হাঁটু গেড়ে অবুঝ একটা বালকের মতো বসে ছিলো।আমার কাধে বিহানের হাত খুব ই সুন্দর এই ছবিটা দেখতে।ইয়া বড় একটা অ্যাকুরিয়াম রাখা যার মধ্য লাল,নীল,হলুদ বিভিন্ন রকমের মাছ খেলা করছে,তার পাশে বিশাল একটা সাদা গোলাপের গাছে।যদিও গাছ টা কৃত্তিম কিন্তু বোঝার উপায় নেই।
পাশেই মনে হচ্ছে ড্রয়িং রুম সোফা, টিভি দেখা যাচ্ছে।বিভোর ভাই রিয়া আর ভাইয়াকে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলো।ভাইয়া গা এলিয়ে দিয়ে সোফায় বসলো।রিয়া ও বেশ ক্লান্ত।এর ই মাঝে পাশের ফ্ল্যাটের ভাবি সরবত আর পানি নিয়ে এলো।ভাইয়া আর রিয়া সরবত খেয়ে রেস্ট নিচ্ছে।বিভোর ভাই বললেন ধন্যবাদ ভাবি। মহিলাটি কে আমরা অবশ্য কেউ ই চিনলাম না তবে এই বোধহয় রিমা যার কথা একটু আগে বললো।বিভোর ভাই রিয়াকে বললেন,রিয়া উনি রিমা ভাবি পাশের ফ্ল্যাটেই থাকেন।রিয়া বিনয়ের সাথে হেসে বললো, ভাবির সাথে পরিচিত হয়ে নিবো সমস্যা নেই।মাত্রই এসেছি বলে বেশী কথা বলছি না।রিমা ভাবি রিয়ার দিকে তাকিয়ে বললেন,আপনাকে দেখতে হিন্দি সিরিয়াল এর নায়কাদের মতো আপু।রিয়া মনে হয় বেশ লজ্জা পেলো তবে বিভোর ভাই এর মুখে সাথে সাথেই হাসি ফুটলো।প্রেমিকার রুপের বর্ণণা শুনতে কার না ভাল লাগে।রিয়া ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল করে নিলো।রিয়ার পরে ভাইয়া ও গিয়ে গোসল করে নিলো।বিহান আমাকে ওর রুমে নিয়ে গেলো।বিহানের রুমে এসে চোখ জুড়িয়ে গেলো আমার।বিহানের মতোই মুগ্ধতায় ভরপুর বিহানের রুম।বিছানায় রাখা কতগুলো ছোট কুশণ।বিছানার পাশেই রাখা আর্টিফিশিয়াল গেন্দা ফুলের ঝাড়।রুম ময় বিভিন্ন শৌখিন জিনিসে ভরপুর।আমি বিছানায় গিয়েই সুয়ে পড়লাম।এক নজরে এটুকুই চোখে পড়েছে আমার।এ রুমের টেবিলে আমার আর বিহানের আরেক টা ছবি।আমার মুখে সাবানের ফেনা বিহানের মুখেও।দেখতে কি সুন্দর লাগছে।বিহান এসি অন করে দিয়ে বললো আমি গোসল করে আসি।বিহান ওয়াশ রুমে গিয়ে গোসল শেষ করে বেরিয়ে এলো।
ওর পরণে টাওয়াল,খালি গায়ে সমস্ত শরীরে পানির ফোয়ারা।ড্রেসিন টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে আরেক টা টাওয়াল দিয়ে গায়ের পানি মুছছে।কোট স্ট্যান্ড থেকে একটা গ্রে কালারের গেঞ্জি নিয়ে আয়রণ করে নিয়ে গায়ে দিলো সাথে একটা ব্লু জিন্স পরলেন।গেঞ্জি তো আয়রণ ছিলোই একটু কম ছিলো এই আরকি।তবে তো বোঝা যাচ্ছিলো না আয়রণ নেই।মেয়ে মানুষ হলে কি করতেন উনি তাই ভাবছি।ছেলে মানুষ হয়ে এত পরিপাটি থাকেন।গায়ে পারফিউম লাগিয়ে আমার কাছে এসে বললেন,
“দিয়া ওঠো,গোসল করলে সুস্থ লাগবে।”
“মাথা ঘুরাচ্ছে খুব।”
“গোসল করলে ঠিক হয়ে যাবে এসো।”
আমি ওঠার চেষ্টা করতেই, উনি নিজেই ধরে আমাকে নিয়ে গেলেন ওয়াশ রুমে।ওয়াশ রুমে গিয়ে দাঁড়িয়ে আছি আমি।আমাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললেন, কি হলো গোসল করে নাও, আমি এখানেই আছি।কোথাও যাচ্ছি না।কোথায় পড়ে যাবে তার ঠিক নেই দুই দিন পরে এক্সাম তোমার।
উনার দিকে একবার তাকিয়ে দেখে নিলাম।
ওনার সামনেই গোসল করলাম,যদি পড়ে যায় তাই উনি আর বাইরে যান নি।গোসল শেষে আমাকে চেঞ্জ করতে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলেন।
চেঞ্জ করে একটা কালো গাউন পরলাম।
বিভোর ভাই বাড়ি থেকে আম্মুর পাঠানো খাবার গুলো সবাইকে খেতে দিলেন।খাবার খেয়ে নিলাম সবাই।খাওয়া শেষে রিয়া আমি বসে সবাই গল্প করছি।এ বাসায় বেড দুইটা রিয়ার খুব ঘুম পাচ্ছে।বিহান বললো আমার রুমে যাও ঘুমিয়ে থাকো।রিয়ার সাথে আমিও গেলাম।দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম।ভাইয়ারা বসে গল্প করছে সবাই।
ঘুমোনোর আধাঘন্টা পরেই ঘুম ভেঙে গেলো আমার।তাকিয়ে দেখি বিহানের হাতে বালতি।জিজ্ঞেস করলাম বালতিতে কি?
–বিহান উত্তর দিলো গোসল করে যে কাপড় রেখেছিলে সেটাই ধুয়ে দিলাম।বেলকনিতে নেড়ে দিয়ে আসি।
–ওহ গড বলেই কপালে হাত দিলাম আমি।তখন আর কাপর ধোয়ার কথা খেয়াল ই ছিলো না।উনাকে বললাম,
–তাই বলে আপনি আমার কাপড় ধুবেন।আমি একটু পরেই ধুয়ে দিতাম।
–ইস রে!এইটুকু কাজ করে দিলাম তোমার।খুব বেশী তো কিছুনা।সারাজীবন এর দায়িত্ব নিয়েছি তোমার এই কাপড় ধোয়া তো সিম্পল একটা কাজ।
আমি ড্যাব ড্যাব চোখে তাকিয়ে রইলাম উনার দিকে।আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললেন,
“ঘুম ভাঙলো।”
“হ্যাঁ। ”
“মাথা পেইন কি কম লাগছে এখন।”
“হুম কম হয়েছে।”
“তাহলে পড়তে বসো।আমি বাজারে যাচ্ছি।”
“আমিও যাবো বাজারে।”
“মাছের বাজারে বিশ্রি অবস্থা। তুমি গেলে বমি করবে।যেতে হবে না।”
“আমি দূরে দাঁড়িয়ে থাকবো।”
“ছোট মানুষ কোথায় হারিয়ে যাবে।”
“আমি অতটাও ছোট না যে হারিয়ে যাবো।”
“তুমি অতটাও বড় না বুঝেছো।এটা নড়াইল না পিচ্চি,ঢাকা শহর।”
“আপনি নিবেন কিনা বলুন।”
“সব জায়গা ঘুরাবো তোমাকে।আগে পরীক্ষা টা হয়ে যাক। এখন তুমি দেখো পছন্দ হয়েছে তোমার সংসার।”
“আমার সংসার।”
“তোমার ই তো।ইন্টার পাশ করলে এমনিতেই তোমাকে ঢাকা চলে আসতে তাইনা?তোমার আসার আগেই আমি সাজিয়ে রেখেছি।”
“খুব খুব খুব সুন্দর হয়েছে। একদম আপনার মতোই।”
সন্ধ্যার পরেই রিয়া আর আমি দুজনে পড়তে বসলাম।বিহান বাজারে গিয়েছে।বিহান ফিরে এলে ভাইয়া আর বিভোর ভাই ঘুরতে যাবে বাইরে।বিভোর ভাই আমাদের দুজনকে কফি বানিয়ে দিয়ে আমাদের পাশে বসে বললেন,
“রিয়া ডাক্তার হওয়ার পর কি আমাকে স্যাঁকা দিবে তুমি।”
“রিয়া রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে বললো শুনো না বিভোর বেবি।”
“বিভোর ভাই যেনো বেশ অবাক।বুকে হাত দিয়ে বললেন,আউচ বুকে লাগলো।জীবনে প্রথম এমন মিষ্টি ডাক।বুকে ব্যাথা করছে।”
এরই মাঝে বিভোর ভাই চিৎকার দিয়ে উঠলো।
“রিয়া বললো স্যাঁকা খেয়ে ফিলিং কেমন বিভোর বেবিটা।”
“তাই বলে গরম কফিতে আঙুল ডুবাবে।যেভাবে আঙুল টা ধরেছিলে ভাবলাম কিসমিস কিছু দিবা।তা না রিয়েল স্যাঁকা দিলে।”
“কিসমিস জীবনে খান নি তাইনা?আমি তো শুনেছি সেমাই তে দেওয়ার আগে আপনি সব খেয়ে ফেলতেন।”
“আরে এই কিসমিস সেই কিসমিস না।আই মিন চুমুর কথা বলেছি।”
“দিয়া তোর ভাই আমাকে বিশ্বাস করে না।আমি নাকি ডাক্তারি তে চান্স পেয়ে স্যাকা দিবো।আমাকে রিতীমতো অপমান করলো।প্লে গার্ল ভাবে সে আমাকে।”
“সরি আপু।আর এসব বলবো না। দিয়া কান বন্ধ কর।”
“আমি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে বললাম কেনো?”
“ভাই ভাবির প্রেমালাপ শুনতে নেই।”
“আমি কানে কাগজ টুকে দিয়ে বসে হাসছি।’
“বিভোর ভাই বললেন,আই লাভ ইউ রিয়াপাখি।”
অথচ আমি তাদের প্রেমালাপ সব ই শুনছি।কি ফাজিল আমি।রাতে আমার উনাকে সুয়ে সুয়ে এসব ই বলে দিবো।
চলবে,,