#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন২)
৫৭.
#WriterঃMousumi_Akter
–রাত নয়টায় বিহান বাসায় আসলে বিভোর ভাই আর ভাইয়া বাইরে গেলো ঘুরতে।বিহান বাসায় এসে কিচেনে বাজারের ব্যাগ রেখে বিভোর ভাই এর রুমে গিয়ে ওয়াশ রুমে গেলো।গায়ের গেঞ্জি খুলে গামছা দিয়ে শরীরের ঘাম মুছে নিয়ে একটা পাতলা গেঞ্জি গায়ে দিলো।কেননা উনি রিয়ার সামনে খালি গায়ে থাকবেন না জিন্দেগীতেও।আমার সামনে তাই খালি গায়ে থাকতে চান না।
আমি পড়া রেখে রিয়া কে বললাম,,
” তুই পড়তে থাক আমি দেখে আসি আমার মিস্টার হাজবেন্ড কি বাজার নিয়ে এসছেন।”
রিয়া বললো,
“বাজার দেখা তো শুধুই বাহানা আমার হট, হ্যান্ডসাম বিহান ভাই কে অনেক সময় দেখো না তাই দেখতে যাচ্ছো সেটা বলো”
রিয়ার কথা শুনে মুখশ্রিতে নিমিষেই লজ্জার এক আবেশ খেলে গেলো।রিয়াকে ফাজিল বলেই বেরিয়ে গেলাম।কিচেনে ব্যাগ দেখে ব্যাগের ভেতরে হাত দিলাম।ব্যাগ এক সাথে দুইটা।একটায় মাছ মাংস রাখা।আরেকটা ব্যাগের মাঝে চানাচুর,আইসক্রিম এর বক্স,পাস্তার বক্স,আরো কিছু বাইরের খাবার।আমি পাস্তা দেখে এদিক ওদিক তাকিয়ে একটা চামচ নিয়ে কিচেনে দাঁড়িয়েই বক্স খুলে পাস্তা খেতে শুরু করলাম।বিকজ রিয়া দেখলে চিজ সব নিয়ে নিবে।অর্ধেক খাওয়া হলে তাকিয়ে দেখি বিহান ভ্রু কুচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।এক নজরে স্হির নয়নে সম্পূর্ণ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে।
বিহান কে দেখে বেশ লজ্জা পেলাম।ভ্রু কুঁচকে কি ভাবছে কে জানে?যা ভাববে ভাবুক আমার কি।খাওয়ার সময় এইভাবে কেউ তাকিয়ে থাকলে কেমন অস্বস্তি ফিল হয়।আমি খেতে খেতে বললাম,,
” কী ডাক্তার ওভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?আমার পেট খারাপ হবে কিন্তু।খেতে মন চাইলে খেতে পারেন।”
উনি এবার হেসে দিলেন।
কি ব্যাপার উনি হাসছেন কেনো?কাহিনী কী?কুচ তো হে।না হলে উনি হাসার ছেলেই না।আমি এবার ভ্রু কুচকে বললাম,
“হাসছেন কেনো?”
উনি মুখে হাত চেপে হাসতে হাসতে বললেন,
“বলবো না পিচ্চি বালিকা।”
“বলবেন না।”
“ভ্রঁ উচিয়ে বললেন, নাহ।”
“না বললে কিন্তু ভাই ডাকবো।”
“বিবাহ করেছি ফুফাতো বোন এই অত্যাচার তো হজম করতেই হবে তাইনা?”
“বিহান ভাই বলুন আগে কি হয়েছে।”
“তুমি না বেবি নিতে চেয়েছো?বেবিকে বলবো ওইযে মহিলাকে দেখছো,ওই মহিলা ভয়ানক অত্যাচারী বংশের মহিলা।তোমার পাপ্পা কে ভাই ভাই অত্যাচারে জর্জরিত করেছে।এর রিভেঞ্জ নিতে তুমিও তাকে ফুপি ডাকবা।আমাকে সে ভাই ডাকলে সোজা হিসাবে তোমার ফুপি হচ্ছে।তাও যেনো তেনো ফুপি নয় ভয়ানক ধুরন্ধর ফুপি।”
ফুপি ডাক টা যেনো কেমন শোনালো আমার কাছে।
“দশ মাস দশ দিন বেবি ক্যারি করে আমি হবো তার ফুপি।আমিও তো আপনার বোন হই তাহলে আপনাকে মামা ডাকবে হিসাব মিটে গেলো।”
“আমি তো আর আপনাকে বোন বোন বলে ডাকি না।জীবনে দেখেছেন আপনাকে কোথাও বোন পরিচয় করাতে।”
“আপনি তো বলেন দিয়া আমার বোন হওয়ার যোগ্য নয়।”
“বউ হওয়ার যোগ্য যে তাকে কি কেউ বোন বলে বোকা মহিলা।”
আপনার সাথে আমি কিছুতেই কথায় পারিনা কেনো?দাঁড়ান আজ খবর আছে আপনার।উনাকে তাড়া দিতেই ছুটে পালালেন।আমি হাতে পাস্তা নিয়েই উনার পিছে ছুটলাম।বিভোর ভাই এর রুমে গিয়ে উনি এদিক ওদিক ছুটছেন আমিও ছুটছি।বালিশ ছুড়ে ছুড়ে উনার দিকে মারতেই উনি একটা বালিশ ধরে আমার কাছে এগিয়ে এলেন। উনি আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন,
“এই নাও ধরা দিলাম মারবে।ভ্রু উঁচিয়ে বললেন।”
“হুম মারবোই তো।”
উনি এক হাত কোমর থেকে ছাড়িয়ে বললেন,
“বাইরের কেউ মারলে বেঁচে ফিরে আসবো সিওর কিন্তু তুমি মারলে বোধ হয় আর বাঁচবো না।বুকের ঠিক যেখানে হার্ট সেখানে হাত রেখে বললেন।”
উনার বুকে কিল দিতে দিতে বললাম,
–এসব কি বলেন হুম আপনি।উনার বুকে মাথা রেখে উনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম,এসব কি বিশ্রি কথা বলছেন আপনি।আপনি মরার কথা বলবেন না আর।মোটেও বলবেন না।আমার বুকের মাঝে অজানা এক ব্যাথার সৃষ্টি হয়।উনি আমাকে আরো শক্ত ভাবে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বললেন,আমার লাভিং বউ।আমি পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ভাগ্যবান পুরুষ জীবনে এমন একজন জীবনসঙ্গী পেয়েছি।এই পৃথিবীর সর্বোশ্রেষ্ঠ নারী ই আমার বউ।পৃথিবীর সর্বোশ্রেষ্ট নারীকে শুভেচ্ছা জানায় প্রতিটা মুহুর্তে মুহুর্তে আমার জীবন টা ভালবাসায় ভরপুর করার জন্য।আমি মাথা গুজে রইলাম উনার বুকে ।শান্তির উত্তম জায়গা উনার বুক,যেখানে মাথা রাখলে সব চিন্তা দূর হয়ে যায় আমার।ভালবাসা মিশ্রিত কন্ঠে বললাম,জানেন আপনার এই বুকটায় কত শান্তি।উনি আরেকটু জড়সড় করে জড়িয়ে ধরে বললেন,এই শান্তির জায়গা টা তোমার নামে লিখে দিয়েছি পারমানেন্ট ভাবে।”
বেশ কিছুক্ষণ মৌনতায় কাটলো আমাদের।
উনি আমায় ড্রেসিন টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে বললেন,
“দেখো কেনো হেসেছিলাম।”
তাকিয়ে দেখি পাস্তা মুখের চারদিকে লেগে আছে।আমি নিজেই হেসে দিলাম দেখে।খাওয়ার সময় এই হুঁশ ই ছিলো না আমার।পিচ্চিদের মতো লেগে আছে চারদিকে।
উনি আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে গালে চুমু দিয়ে কানে ফিসফিস করে বললেন,
“তার এই বাচ্চামোগুলো এতটা সুন্দর না হলেও তো পারতো।সে কি জানে তার এসব দেখে দেখে তার মায়ায় কি ভয়ানক ভাবে আটকে গিয়েছি আমি।প্রেমের মরণফাঁদ সে এভাবেই প্রতিনিয়ত বিছিয়ে চলেছে।তার এই বাচ্চামো গুলো আমি ভালবাসি, ভীষণ ভালবাসি শ্যামাপাখিকে।”
——————————————————–
বিহান পাশের রুমে গিয়ে রিয়াকে বললো,
–রিয়া নার্ভাস ফিল হচ্ছে নাকি।
–হ্যাঁ বিহান ভাই অনেক চিন্তা লাগছে।আমার স্বপ্ন আপনার মতো ডাক্তার হবো।
–তুমি অনেক পরিশ্রম করেছো রিয়া।পরিশ্রম কখনো বিফলে যায় না আপু।
রিয়া বেশ স্বস্তি পেলো বিহানের কথায়।
বিহান রিয়ার দিকে পাস্তা এগিয়ে দিয়ে বললো,
–রিয়া এই নাও পাস্তা খাও।
–থ্যাংক ইউ বিহান ভাই।আমার খুব প্রিয় এটা।বাট দিয়া দেখে নি পাস্তা এনেছেন।চিজ নিয়ে মারামারি করবে।
–দুজনের জন্য আলাদা করে এনেছি।মারামারি আটকাতে।
দুজনে বেশ কিছু সময় হাসাহাসি করলো।
বিহান কাকে যেনো অনবরত ফোন দিয়েই যাচ্ছে।আমি এগিয়ে গিয়ে বললাম,
–কাকে ফোন দিচ্ছেন?
–কাজের খালা,, উনার ফোন অফ।মাছ কাটতে হবে।মাছ কাটবে কে?
–আমি কাটবো।
–তুমি কাটবে সিরিয়াসলি।পারো তুমি?
–সব পারি আমি।
–না কোথায় হাত কেটে যাবে,এক্সাম একদিন পরেই।
–কাটবে না।
–সমস্যা নেই দিয়া আমি আর বিভোর মিলে ব্যাবস্হা করে নিবো।
ভাইয়া,বিহান, আর বিভোর ভাই মিলে মাছ,মাংস কেটে রান্না করলো তিনজনে।
রাতে সবাই খেয়ে সুয়ে পড়লাম।আমি আর রিয়া এক রুমে।বিহান,ভাইয়া আর বিভোর ভাই এক রুমে।
বিভোর ভাই ভাইয়া আর বিহান কে সুয়ে সুয়ে বলছে,
“আজ যদি একটা বউ থাকতো তাহলে কি আর তোদের মতো মহিশের পাশে ঘুমোনো লাগতো ভাই।জন্মের পরে এখনো বউ নিয়ে ঘুমোতো পারলাম না।আমার মতো পোড়া কপাল আর কার আছে।কি হবে এই জীবন দিয়ে আমার।আর কি বা করলাম জীবনে।”
ভাইয়া লাথি মেরে বিভোর ভাইকে নিচে ফেলে দিয়ে বললো,
“শা*লা আমরা মহিশ আর তুই মহাপুরুষ। ”
“আউচ কোমর ভেঙে গিয়েছে।আমি বউ কোলে করে ঘরে তুলবো কিভাবে?”
“তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে আমি সারাজীবন বউ নিয়ে ঘুমোচ্ছি।আর তুই উপোস আছিস।”
“বেশী তেড়িবেড়ি করলে কিন্তু মেহুর সাথে তোর বিয়েই হতে দিবো না আবির।”
ভাইয়া হেসে বললো,
“তুই যে রিয়ার সাথে লাইন মারিস আমি কি তা জানিনা।বোন আমার মাথায় রাখিস।”
বিহান বললো,
“আর আমার শালিকা।”
আরে ভাই তোরা বিয়েটা তো করিয়ে দে আমার।তার পর অত্যাচার কর।
রিয়া আর আমি দুজেন হাসছি তাদের কথা শুনে।
চলবে,,,,,,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা (সিজন২)
৫৮.
#writer_Mousumi_Akter
–কিছুক্ষণ পরেই এডমিশন রেডি হয়ে চুপচাপ বসে আছি রুমে।হাত পা কাঁপছে চিন্তায়, চোখ বুঝলেই মনে হচ্ছে রেজাল্ট দিলে সেখানে আমার নাম থাকবে তো।অল রেডি শুরু হয়েছে মাথায় পেইন।নিজের ব্যাপারে সব সময় নেগেটিভ চিন্তাটায় আমার বেশী আসে।যদি আমি চান্স না পাই তো কি হবে।আম্মুর স্বপ্ন তার মেয়েকে ডাক্তার হিসাবে দেখা।সকাল থেকে আম্মু বাবা,মামা,মামিরা অনেকবার ফোন দিয়েছে সবাই চিন্তা করতে নিষেধ করেছে ঠান্ডা মাথায় লিখতে বলেছে।সমস্যা আমি তো পরিক্ষার হলে যাওয়ার আগেই ঘাবড়ে বসে আছি।রিয়া চিন্তা করলেও বেশ স্বাভাবিক আছে আমার মতো অত বেশী ভাবে না কোন কিছু নিয়ে।যা হবার তা হবেই এটা ভেবেই চুপচাপ বসে থাকে।ডায়নিং এ রিয়া ভাইয়া আর বিভোর ভাই খাচ্ছে।
বিহান আমার জন্য প্লেটে ভাত মাখিয়ে নিয়ে এসছে।বিছানায় আমার বরাবর বসে আমার দিকে সুক্ষ নয়নে তাকালেন।আমি একটা সিট এর এ পাতা ও পাতা উলটে দেখেই যাচ্ছি।
বিহান আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
“দিয়া হা করো খাবার খেয়ে নাও। এখন এগুলো রাখো।মাথা ঘাবড়ে যাবে এখন আর কিছুই দেখা লাগবে না।”
“আমার মুখ চিন্তায় চুপসে আছে।বিহানের দিকে মলিন মুখে তাকিয়ে বললাম, আমি খাবো না এখন।”
“না খেলে পরীক্ষা দিবে কিভাবে?”
“কোনভাবেই খাবার আমার পেটে যাবে না।”
“হা করো বলছি আগে।তোমার থেকে খারাপ প্রিপারেশন আমার ছিলো।কিন্তু এত বেশী চিন্তা করিনি আমি।আমার থেকেও বেশী মার্ক পাবে তুমি।”
“কোথায় আপনি আর কোথায় আমি কি বলছেন আপনি।কার সাথে কার তুলনা করছেন আপনি।”
“তোমার সাথে আমার।কেউ কারো থেকে কম নয় বুঝেছো?তুমি আমার থেকে বেটার কিছু ডিজার্ভ করো।আর রেজাল্ট দিলেই বুঝবে। লেখাপড়া কখনো ভালো ব্রেইনে হয় না, হয় নিজের চেষ্টায়।তুমি এমনিতেও ভালো স্টুডেন্ট তার উপর প্রচুর হার্ড ওয়ার্ক করেছো।শ্বশুর বাড়ি থেকে লেখাপড়া করেছো,সংসার সামলেছো,স্বামির সেবাযত্ন করেছো,শ্বশুর শ্বাশুড়ির সেবাযত্ন করেছো এত কিছু করেও লেখাপড়ায় মনোযোগ দিয়েছো।বিলিভ মি দিয়া তোমার জায়গা আমি হলে এতসব পারতাম ই না।ভেঙে চুরে গুড়িয়ে যেতাম।”
“আমার শ্বশুর বাড়ি আবার হলো কবে।মামা বাড়ি তাদের আদরের ভাগনি থেকেছে।আমি তো কোনদিন বুঝলাম না যে আমি শ্বশুর বাড়ি ছিলাম।তাও এত ভালো ভালো সার্টিফিকেট কিভাবে দিলেন।”
“তবুও দিয়া আমি হলে পারতাম না।আমি শক্ত ঠিক আছে বাট তোমার মতো এত কিছু সামলে কিছুই করতে পারতাম না।তোমার মতো এত স্ট্রং না আমি।সিরিয়াসলি বলছি।”
“আমিও কিছুই পারতাম না যদি আমার বিপরিত পাশে আপনি না থাকতেন।স্বামি হিসাবে এমন একজন মানুষ কে পেয়েছি যে আমার জীবনে এসেছে ঢাল হয়ে।আর আমার নামে কতগুলা মিথ্যা সার্টিফিকেট দিয়ে দিলেন।আপনি যে সত্যি সত্যি অনেক কিছু করেছেন আমার জন্য সেটা কি মুখে বলে শেষ করা যাবে।দিয়া থেকে মিসেস বিহান বানিয়েছেন, আমাকে একটা পারফেক্ট মানুষ তৈরি করেছেন,আমার জীবনের যাবতীয় প্রয়োজনীয় কাজ গুলো আমার আগেই রেডি রেখেছেন, আমার কি প্রয়োজন সেটা আমার থেকে আপনি বেশী ভেবেছেন।এই আগোছালো আমিটাকে গোছানো জীবন দিয়েছেন,এইযে সাজানো সংসার দিয়েছেন আর বলবো।”
“না আর বলতে হবে না।আর আনবো ভাত।”
“আর আনবেন মানে? আমি তো খাবো না ভাত।”
“প্লেটের খাবার তো শেষ দিয়া।”
“আপনি কি যাদু টাদু জানেন হ্যাঁ।গল্পে মনোযোগ দিয়ে খাবার খাইয়ে দিলেন।”
“হাহাহাহা যাদু টাদু কিচ্ছু না।আমার বউ আমাকে অনেক ভালবাসে তাই আমি সামনে থাকলে সব দুঃচিন্তা ভুলে যায়।”
–আসলেই মানুষ টা থাকলে সম্পূর্ণ নিশ্চিন্ত থাকি আমি।পৃথিবীর সব দুঃচিন্ত ভুলে থাকতে পারি।এটাই বুঝি ভালবাসা।
,
,
বেশ কিছুক্ষণ পরে বিহান আবার রুমে এলো।নিজের পোশাক আয়রণ করে গায়ে পরে নিয়ে রেডি হচ্ছে।সবার থেকেই দোয়া নিয়েছি বিহানের থেকে নেই নি।মানুষ টাকে সালাম করতে ইচ্ছা করছে খুব।ভীষণ ইচ্ছ করছে।আমার জন্য জীবনে এত কিছু করেছেন উনি, তাই উনার দোয়া সব থেকে বেশী গুরুত্বপূর্ণ আমার কাছে।আমি জানি বিহান আমাকে ওর পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে দিবে না।এই কাজ টা আমি ভীষণ ভালবেসে আর মনের গহীন থেকে বিহানের প্রতি শ্রদ্ধার জন্য করতে চাই।বাট ও শুধু এটা সেটা করছে স্হীর হয়ে তো দাঁড়াচ্ছেই না।
বিহানের দিকে তাকিয়ে বললাম,
“বলছি একটু স্হির হয়ে দাঁড়ান না।শুধু নড়ে বেড়াচ্ছেন কেনো?”
“রেডি হচ্ছিতো দিয়া।”
“আপনি দাঁড়ান না একটু সোজা হয়ে।”
“কেনো?”
“সালাম করবো আপনাকে।”
বিহান দুই চোখ মেলে মায়াভরা চাহনি তে আমার দিকে তাকিয়ে ঠোঁটের কোনে মিষ্টি হাসি নিয়ে বললো,
“পায়ে হাত দিতে হবে না তোমার।”
“দিলে কি হবে। আমার খুব ইচ্ছা করছে আপনাকে সালাম করতে।বাঁধা দিবেন না প্লিজ।আপনি আমার স্বামি আপনার পায়ে হাত দিলে আপনি বা আমি কারোর ই পাপ হবেনা।”
উনার দুই ঠোঁটের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁকা।মাথা নাড়িয়ে বললেন,
“এই পিচ্চির জিদের সাথে পারা যায় না।”
“আমি নিচু হয়ে উনাকে সালাম করলাম।”
উনি আমার দুই বাহু ধরে দাঁড় করিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললেন,
“ভালবাসা শ্যামাপাখি।এক আকাশ ভালবাসার অধিকারীনী পিচ্চি। ”
পকেট থেকে মানিব্যাগ বের করে দিয়ে দিলেন আমার হাতে।
আমি সন্দিহান দৃষ্টি নিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
“আমি কি করবো এটা দিয়ে।”
“সালাম করলে তার সম্মানী দিলাম।”
“সম্মানী দিবেন ভালো কথা তাই বলে ব্যাগ ধরে দিয়ে দিবেন।”
“হ্যাঁ রোজ তোমার থেকে টাকা চেয়ে নিবো। আর তুমি আমায় টাকা দিবে।”
“না না আমার এসব বড় সড় দায়িত্ব নিতে পারবো না।ছোট মানুষ হারিয়ে ফেলবো আমি। আমি আমার স্বামির চেয়ে বেশী বুঝতে চাই না কখনো,বেশী জানতেও চাই না।এই বোকা সোকা জীবনে ভুল করে আপনার বকুনি খেয়ে সুন্দর জীবন যপণ করতে চাই।টাকা লাগে চেয়ে নিবো আমি।নিন তো আমার এসব ভারী জিনিস।”
উনি অনেকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললেন,
“সত্যি তুমি অসাধারন দিয়া।কেনো অসাধারণ নিজেও জানোনা।এখনের যুগে এমন মেয়েও আছে।”
“ওসব আমি জানিনা,আমাকে একশ টাকা দিলেই হবে এখন।”
“এখনো সেই ছোট আছো একশ টাকা লাগবে।”
“হুম বড় হতে চাই না আপনার কাছে।”
“চলো এবার বের হই তাহলে।”
“শুনুন না আমার খুব ভয় করছে।আমি কি চান্স পাবো?”
“সিওর পাবে।আমি দেখেছি কত হার্ডওয়ার্ক করেছো তুমি।ডোন্ট ওরি। ”
ফাইনালি পরীক্ষা শেষ হলো আমাদের।আলহামদুলিল্লাহ অনেক ভালো এক্সাম দিয়েছি রিয়া আর আমি।মন বলছে নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে।তবুও দুঃচিন্তা নামক জিনিস টা যাচ্ছে না।পরীক্ষা শেষ হবার দুইদিন পর বিহান আমায় একটা শাড়ি এনে দিয়ে বললো,দিয়া শাড়িটা পড়ে নাও আমরা একটা জায়গা ঘুরতে যাবো।
“আমি বললাম, ভাইয়া, বিভোর ভাই,রিয়া আলাদা ঘুরতে গেলো কেনো?”
“আমি বলেছিলাম তোমাকে নিয়ে আমি বের হবো।ওরা ঘুরতে চাইলে যেতে পারে।”
“একসাথে গেলে কি হতো।”
“অন্য একটা জায়গা যেতে হবে ওদের নেওয়া যাবে না।”
“কোথায় সেটা।”
“গেলেই দেখবে,জীবনে তো ইবলিস দেখো নি।তোমাকে নিজ চোখে দেখাবো চলো।আর আমার কিছু কলিগ দের সাথে পরিচয় করাবো।”
“বাট আমি তো হাই হিল আনিনি স্লিপার নিয়ে এসছি।”
“হাই হিল লাগবে কেনো?”
“বারে আপনার কলিগরা কি বলবে।আপনার বউ কত শর্ট।”
উনি নিমিষেই মুড চেঞ্জ করে ফেললেন।হঠাত রেগে গেলেন।ভয়ানক চোখে তাকালেন আমার দিকে।হাতের ফোন বিছানায় ছুড়ে মারলেন।রাগে চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছেন।হঠাত এত রাগ দেখে বললাম,
“কি হলো।”
উনি রেগে আমার দুইবাহু শক্তভাবে চেপে ধরে ওয়ালের সাথে চেপে ধরলেন।চোখ দিয়ে রাগের অগ্নি ঝরছে উনার।রাগে কাঁপছেন উনি।
ভয়ে ভয়ে বললাম,
“রেগে গেলেন কেনো?আমি কি কিছু করেছি।”
চোয়াল শক্তকরে বললেন,
“তুই জানিস না আমি তোকে কত ভালবাসি দিয়া।কেউ তোকে নিয়ে বাজে কথা বললে তাকে খু*ন করতে ইচ্ছা হয় আমার।সেখানে তুই কিনা নিজেই নিজেকে শর্ট বলছিস।কি সমস্যা তোর।যেখানে আমার সমস্যা নেই সেখানে তোর কেনো উঁচু হিল পরে লম্বা হতে হবে।মাইন্ড ইট দিয়া তুই যেমন তেমন ভাবেই ভালবেসেছি আমি।নিজেকে চেঞ্জ করার চেষ্টা করবি না,ভুলেও না।না তোকে ধবধবে ফর্সা হতে হবে না তোকে কষ্ট করে উঁচু স্যান্ডেল পরে লম্বা হতে হবে।ইউ নো হোয়াট দিয়া সৃষ্টিকর্তা তোকে আপণমনে আমার জন্য পারফেক্ট ভাবেই সৃষ্টি করেছেন।তাই নিজেকে চেঞ্জ করার চেষ্টা করো না।আমার হার্টবিট মাপার জন্য তুমি যথেষ্ট।”
“স,,সরি।ব্যাথা পাচ্ছি তো।”
উনি হাত টা ছেড়ে দিয়ে বিছানায় বসলেন।চিন্তা রেখা চোখে মুখে স্পষ্ট ক্লিয়ার।কপালে হাত চালালেন চিন্তায়।চুলের মধ্য একবার হাত চালিয়ে বললেন,,
“সরি দিয়া।রুড বিহ্যাভ করে ফেলেছি।তোমাকে নিয়ে খারাপ কথা সহ্য হয় না আমার।কেউ তোমাকে নিয়ে বাজে কথা বললে তোমার হাজবেন্ড সেটা সহ্য করবে এমন মেরুদণ্ড হীন আমি নই দিয়া।”
চলবে,,