#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা সিজন ২
৬৪.
#WriterরঃMousumi_Akter
ভালবাসার মানুষের জন্য ঘর ছেড়ে এক কাপড়ে বেরিয়ে যাওয়ার মতো রিস্ক আর দুঃসাহস সবাই নিতে পারে না।এটা একটা ভীষণ বড় রকমের চ্যালেঞ্জ।অন্ধকার ফিউচার, সামনে অনেক বাঁধা বিপত্তি, মানুষের কটুকথা সব অতিক্রম করে দুজন ভালবাসার মানুষ সারাজীবন দুজনের পাশে থাকার প্রতিজ্ঞা হলো পৃথিবীর সব থেকে বড় যুদ্ধ ভালবাসার। যে যুদ্ধের ঘোষণা পরিবার দুজন সঠিক ভালবাসার মানুষের বিরুদ্ধে করে থাকে।দুজন মানুষ সঠিক হলে তারা এই যুদ্ধে জয় লাভ করে থাকে।আর বিয়ে হলো সৃষ্টিকর্তার হাতে লেখা এর সংবিধানের দায়িত্ব উপরওয়ালার হাতেই থাকে।কিছু মানুষ বলে পালিয়ে বিয়ে করেছে চরিত্রহীনা অনেক সময় এটা ঠিক নয় চরিত্রহীনা আর কাউকে ভালবেসে বিয়ে করার মাঝে বিস্তার পার্থক্য বিরাজমান।বিয়ে কপালে লেখা থাকলে সৃষ্টিকর্তার ইশারায় পালিয়ে হোক আর পারিবারিক ভাবে হোক হবেই।
বিয়ের আসর ছেড়ে একটা মেয়ে পালিয়ে গেলে আমাদের সমাজে ছিঃছিঃ করার মানুষের অভাব থাকেনা।কানাঘোষার শেষ নেই চারদিকে।বরযাত্রী অল রেডি জেনে গিয়েছে কনে নেই বিয়ের আসরে।সিয়াম এর রিয়াকে ভীষণ পছন্দ হয়েছিলো।রিয়া পালিয়েছে তাও সিয়াম বলছে রিয়াকে খুজে এনে দিতে।সে রিয়াকে এখনো বিয়ে করতে রাজি।সিয়াম রেগে আগুন হয়ে গিয়েছে।সব ভাঙা চোরা শুরু করেছে।পুলিশ কে কল দিয়েছে রিয়াকে তুলে আনার জন্য।সিয়াম আগে থেকেই জানে রিয়ার সাথে আমার সব থেকে ভালো রিলেশন। কেউ হয়তো বলেছে বিহানের প্রশ্রয় আছে রিয়ার ভেগে যাওয়ার জন্য।সিয়াম আমার দিকে আঙুল তুলে বললো,হেই ইউ দিয়া তুমি আর তোমার ডাক্তার হাজবেন্ড কে আমি ছাড়বো না।তোমার মামাতো ভাই বিভোর এর হাড় ও আসতো রাখবো না।মনে মনে ভাবছি মানুষ কি সাংঘাতিক লেভেল এর ছ্যাচড়া হতে পারে যে মেয়ে বিয়ের আসর থেকে পালালো তাকে বিয়ে করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে।তোহা আপু আর মেহু আপু খোঁচা কথা বলেই যাচ্ছে।চারদিকে মানুষ রিয়ার নামে অনেক বাজে কথা বলা শুরু করলো।পাড়ার আন্টিরা বিভিন্ন খারাপ কথা বলছে। অথচ তাদের মেয়েরা পালিয়ে না গেলেও ৫-১০ টা বয়ফ্রেন্ড নিয়ে বিভিন্ন পার্ক এ ঘুরছে রুম ডেট করছে।নিজের ঘরে মেয়ে থাকতে অন্যর মেয়েকে বাজে কথা কিভাবে বলে মানুষ ভেবে অবাক হয়ে যায়।রিয়া পালিয়ে যাওয়ার সম্পূর্ণ দোষ আম্মুসহ আমাকে দেওয়া হলো।রিয়ার মামা মামিরা বলছে রিয়ার বাবাকে তোমার ভাবি নিজের মেয়েকে ঠিক ই ভালো ডাক্তার দেখে বিয়ে দিয়েছে তাও দেশের সেরা ডাক্তার।আর তোমার মেয়ের বেলায় ইচ্ছা করে নিজের অকর্মণ্য ভাতিজার পিছে লেলিয়ে দিয়েছে।দিয়ার আম্মু আর দিয়া এসব জানে।ওরা কি তোমার মেয়ের ভালো চায় নাকি।নিজের মেয়েকে সবার উপরে রাখবে বলে ইচ্ছা করেই এমন করেছে।আম্মুকে যতপ্রকার বাজে কথা আছে কিছুই বলতে বাদ রাখছে না।
ভাইয়া তেড়ে গিয়ে রিয়ার মামা মামিদের বললো,
‘দেখুন মামা-মামি আর কাকু তোমাদের সবাইকে বলছি একবার ও আমার আম্মু আর দিয়া কে নিয়ে বাজে কথা বলবেন না।আমার বোনের যখন বিয়ে হয় বিহান বেকার ছিলো।আমার আম্মু তার মেয়ের মেয়ে একটা বেকার ছেলের সাথে দিয়েছিলো।আর আমার আম্মু আর বোন বা আমরা রিয়া আর দিয়াকে আলাদা করে দেখি না।’
‘কাকিমনি বললো,আবির বাবা রাগ করিস না।তোর কাকু একটা বেয়াদপ লোক।বেশী লোভ করলে জিভ তো পুড়বেই।আমার মেয়েটাকে যেভাবে মেরেছে পালাবে নাতো কি করবে।ওর শুধু টাকার দরকার আমার মেয়ের সুখ শান্তির প্রয়োজন নেই।সবাই বুঝিয়েছে কারো কথা শোনে নি।অবশেষে মান সম্মান নষ্ট হলো এখন তো ভালো লাগছে।’
‘কাকু বললো, ফোন দাও আমি বিহানের সাথে কথা বলবো।বিভোর রিয়াকে নিয়ে ঢাকা গেলে যেনো ঘাড় ধরে পাঠিয়ে দেয়।’
‘কাকি বললো,বিহানের কাছে ফোন দিতে যেও না।বিহান ঘাড়ত্যাড়া রাগি ছেলে,মান অপমান হতে না চাইলে বিহান কে ফোন দিও না।বিহান যে তোমাকে এতকরে বুঝালো শুনেছিলে বিহানের কথা। ‘
কাকু ভাইয়া আর আমাকে বললো এক্ষুণি ঢাকা চল।ভাইয়া বললো,ঢাকা গিয়ে।কাকু বললো রিয়াকে নিয়ে আসবো।আমার সাথে ঢাকা না গেলে তোর মামাদের নামে কেস দিবো আমি।ভাইয়া হেসে বললো,কেস দেন বিহান আছে কি করবে ভাবতেও পারবেন না।আম্মু বললো,আবির যাও তোমার কাকুর সাথে।মামাবাড়ি থেকে দুই মামা দুই মামি রিয়ার মা বাবা আমি ভাইয়া সবাই মিলে রওনা দিলাম।অশান্তির চরম পর্যায়ে গেলো সব কিছু।সিয়াম দের চাপে কাকু আরো মরিয়া হয়ে উঠেছে।
————————————————–
ভোর রাতে রিয়া যখন বাড়ির পেছনের বাগান দিয়ে বেরিয়ে গেছিলো সারারাত ছিলো রিয়ার নিদ্রাহীন।কাকু রিয়ার ফোন নিয়ে গেলেও মেহু আপুর ফোন দিয়ে কন্ট্যাক্ট করেছিলো।রিয়া বাইরে বেরিয়ে দেখলো, রাস্তায় বাইকের উপরে শার্টের বোতাম তিনটা খোলা, চোখ ভরা পানি নিয়ে উদাস মনে দাঁড়িয়ে আছে বিভোর ভাই।তৃষ্ণার্ত প্রেমিকের বুক যেনো খা খা করছে প্রেমিকাত বিহনে।রিয়ার চোখ ভরা পানি।এ দু’দিনে মানসিক অশান্তির চরম পর্যায়ে পৌছে গেছিলো রিয়া আর বিভোর ভাই।যেখানে দুজন মানুষকে আলাদা করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলো পরিবার সেখানে তাদের এই দেখা হওয়াটা যেনো গ্রীষ্মের তপ্ত দুপুরে তৃষ্ণার্ত পাখির মতো শুকিয়ে যাওয়া বুকে এক সাগর পানির দেখা।রিয়া ছুটে গিয়ে বিভোর ভাই কে জড়িয়ে ধরলো।এর আগে পরে কখনো তারা কেউ কাউকে জড়িয়ে ধরে নি।রিয়া নিজের সব টা জুড়ে বিভোর ভাই কে জড়িয়ে ধরে ভীষণ কাঁদলো।বিভোর ভাই ও রিয়াকে জড়িয়ে ধরে জোরে জোরে কয়েক টা শ্বাস নিয়ে নিজের কষ্ট কমালো।রিয়ার কপালে চুমু দিয়ে বিভোর ভাই বললেন,আই লাভ ইউ রিয়াপাখি। তুমি না আসলে আমি এখানেই শেষ করে দিতাম নিজেকে।রিয়া বিভোর ভাই এর হাত ধরে বললো,আপনি কি পাগল হাতে এটা কি করেছেন।আর বার বার মরার কথা বলেন কেনো?বিভোর ভাই বললো,আমার মাথা ঠিক ছিলো না কি করবো।বিহান এসে না বুঝালে আমি কি করতাম জানিনা।রিয়া বললো,জানেন আমার চোখে বিহান ভাইসারাজীবন ই সেরা তবে আজ মনে হচ্ছে বিহান ভাই এর মতো ভাই পাওয়া টাও ভাগ্যর ব্যাপার।আমাকে কল দিয়ে বলেছে রিয়া আমার তো বোন নেই মনে করো তুমি আমার বোন।তোমার ভাই এর সামর্থ আছে তার বোন এর লেখাপড়ার খরচ দেওয়ার।কেউ মেনে নেয় নি ফাইন আমি আর দিয়া আছি তো।তুমি বড় ডাক্তার হলে পরিবার নিজে থেকে এসে মেনেনিতে বাধ্য হবে।তারা এই ভুলের জন্য ক্ষমাচাইবে একদিন।বিভোর তোমাকে ভালো রাখবে রিয়া।ভালো রাখার এবেলিটি আছে বিভোর এর।আমি যদি দেখতাম বিভোর এর মাঝে তোমার প্রতি ভালবাসা নেই আমি কখনোই বলতাম না বিভোরের সাথে চলে এসো।
–রিয়া আমি কি সত্যি তোমার যোগ্য না।
–কিসের যোগ্য অযোগ্য হ্যাঁ। আমি আপনাকে ভালবাসি ব্যাস আর কিছু বুঝি না।
——————————————————–
সন্ধ্যায় ঢাকায় পৌছালাম আমাদের বাসায়।বিহান দরজা খুলে কপালের চামড়া ভাজ ফেলে তাকিয়ে রইলো আমাদের দিকে।বিহান আগে থেকেই জানতো আমরা আসছি আমি জানিয়ে রেখেছিলাম।বিহান একটু অবাক হয়েই বললো,
‘–কি ব্যাপার আপনারা।’
কাকু বললো,
‘–বিহান বিভোর আর রিয়া কোথায়?এক্ষুণি বেরিয়ে আসতে বলো।রিয়াকে আমি নিয়ে যাবো।’
‘–ওরা তো এখানে আসে নি।আসুন ভেতরে এসে দেখুণ।ভেতরে গিয়ে সবাই খোজাখুজি করে কোথাও পেলো না।’
কাকু বললো,
‘–বিভোর আমার মান সম্মান কিছু রাখে নি।আমি বিভোর কে পুলিশে দিবো।আমার মেয়েকে ফাঁশিয়েছে। ‘
বিহান বললো কপালের চামরা ভাজ ফেলে বললো,
‘–বসুন তারপর যা বলার বলুন।আম্মু কাকিমা তোমরা বোসো সবাই।’
বিভোর ভাই এর মা বাবার মুখ খুব ভারী হয়ে আছে।তারা যেনো ভীষণ লজ্জিত।
বিহান বললো,
–আঙ্কেল চলুন পুলিশের কাছে যায়।আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড এনডিসি আছে একজন,ডিআইজি আছে একজন,পুলিশের অনেক বড় বড় পোস্টে আছে।আপনার অভিযোগ আসলে কী?আপনার মেয়ে কি নাবালিকা স্বইচ্ছায় বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে পুলিশ কি অভিযোগ নিবে।অভিযোগ নেওয়ার পর আপনার মেয়ে সাক্ষী তো আপনার বিরুদ্ধে দিবে।।আমার ফ্যামিলির মানুষ যথেষ্ট ভদ্র তাই আপনার বলা সমস্ত বাজে কথা হজম করছে।কেনো জানেন?কারণ মেয়ের বাবা হিসাবে আপনার কষ্ট টা বুঝতে পারছে।বারবার বিভোরের দোষ দিচ্ছেন কেনো?রিয়া ও তো বিভোর কে ভালবাসে। দোষ করলে দুজনের ভাগে ফিফটি ফিফটি পড়ে।আপনার মান সম্মান আপনার জন্যই নষ্ট হয়েছে।মান সম্মান কি আপনাদের আছে আমাদের নেই।তাই বলছি কি এসব বাড়াবাড়ি করে আর কোনো লাভ আছে কি।আপনি কি এখনো বুঝতে পারছেন না যে মেয়ে বাড়ি ছেড়েছে সে কি আর ফিরবে।আর হ্যাঁ আমার ফুপ্পিকে একটা বাজে কথাও বলবেন না কেউ।আমার কানে সব এসছে।আপনাদের বাড়ির মেয়ে আমি বিয়ে করেছি তাই কিছু বলিনি,সব থেকে বড় কথা আপনার মেয়ে ই বিভোর বিয়ে করছে আপনি আমাদের আত্মীয়। ‘
‘–আমি কোনদিন মেনে নিবো না এই বিয়ে।’
বিহান তাচ্ছিল্যের সাথে হেসে বললো,
‘–এটা আপনার চয়েজ।তবে আপনি মেনে নিবেন আর ক্ষমা ও চাইবেন কারণ ভুল আপনার।একদিন বলবেন বিভোর এর মতো জামাই হয় না।’
বেশ কিছুক্ষণ কথাকাটাকাটি হলো।বিহান বিভোর ভাই এর বাবাকে ভীষণ বকাঝকা দিলো।বিহান ভাই এর আম্মু, বাবা সবাই বিভোর এর বাবাকে রাগ করলেন।রিয়ার বাবাকে বিহান আবার বুঝালো,মামা মামিরা সবাই বুঝালো।ঘন্টাখানিক পর কাকু মামা মামিরা সবাই আবার ফিরে গেলো।আমিও আসতে গেছিলাম কিন্তু বিহান আটকে দিলো।
সবাই ফিরে গেলে বিহান কে বললাম,
‘–বিভোর ভাই কোথায়?’
‘–বিভা আপুর বাসা থেকে আসছে এক্ষুণি চলে আসবে।বিভোরের ঘর টা সাজাও তো সুন্দর করে।বিভা আপু আর দুলাভাই বিয়ে দিয়েছে ওদের।আমি জানতাম তোমার লোভী কাকুজান এখানে আসবে ঠিক ই।’
‘ওয়াও আমার ভীষণ ভাল লাগছে বিভোর ভাই আর রিয়ার ফাইনালি বিয়ে হলো।’
উনি চুলের ভাজে হাত চালিয়ে বললেন,
‘দিয়া।’
‘কি?’
‘ভাগ্যিস আমি কায়দা করে আমার বিয়েটা সেরে নিয়েছিলাম।না হলে এই রাজাকারের বংশধররা আমার সাথেও একই কাজ করতো।’
চলবে,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা সিজন ২
৬৫.
#WriterঃMousumi_Akter
‘ভাগ্যিস আমার বিয়েটা আমি আগে সেরে নিয়েছিলাম না হলে রাজাকারের বংশধররা আমার সাথেও এমন করতো।হাউ টালেন্টেড ইওর হাব্বি মিসেস বিহান।’
কথাটা বলেই বাম হাতে বাঁধা কালো ফিতার ঘড়িটা ডান হাত দিয়ে একটু ঘুরিয়ে নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে বসলেন।উনার গায়ে এখনো সাদা এপ্রোণ।মনে হয় কিছুক্ষণ আগেই ডিউটি থেকে ফিরেছেন।নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে আমার দিকে তীক্ষ্ণ নজরে তাকিয়ে আছেন উনি।
আমি উনার দিকে তাকিয়ে চুল হাত খোপা করতে করতে বললাম,
‘আপনি তো বড় রাজাকার ডাক্তার বাবু।’
উনি ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
‘তাই না?কোনদিক থেকে শুনি।’
‘রাজাকারি চাল দিয়ে বাড়িভর্তি মানুষের সামনে আমাকে থাপ্পড় খাইয়ে আম্মুর কানে বিষ ঢেলে একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করেছিলেন।একটা নাবালিকা মেয়ের সাথে কি ভয়ানক অত্যাচার টায় না করেছিলেন।’
বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালেন।ধীর পায়ে আমার দিকে চার ‘পা এগিয়ে এলেন।আমার থেকে এক ফুটের দুরত্ত্বে কপাল কুচকে দাঁড়ালেন।কপালে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম।কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ঠোঁটের কোনে একটু হাসি এনে আমার নাক টেনে দিয়ে বললেন,
‘উপায় ছিলো না পিচ্চি।শ্বশুরের মেয়ে বুঝতো না তাকে কত ভালবাসতাম।তাকে পাওয়ার ইচ্ছা আমাকে প্রবল করে তুলতো।কিন্তু পুচকি তো ভীষণ অবুঝ।বিয়ে না করলে তাকে হারানোর চিন্তায় এক প্রকার পাগল হয়ে যেতাম আমি।’
উনি চেঞ্জ করেন নি দেখে বুঝলাম নিশ্চয়ই এখন চেঞ্জ করে শাওয়ার নিবেন।শার্ট চেঞ্জের প্রয়োজন বুঝতে পারলাম।এই ক্লান্ত শরীরে কেমন ভালবাসার বুলি আউড়াচ্ছেন।ঘামে ভেজা শরীর, ক্লান্ত মুখের বদন এ আমার জন্য ভালবাসামাখা হাসি।ভীষণ মিষ্টি লাগছে দেখতে।এই মুহুর্তে মন চাচ্ছে উনার বুকে মাথা দিয়ে বাকি জীবন পার করে দেই।উনার শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে অভিমানি সুরে গাল চেপে হেসে বললাম,
‘এখন আর প্রবল করে না বুঝি।আমি পূরণো হয়ে গিয়েছি তাইনা ডাক্তার বিহান বাবু।’
উনি গায়ের এপ্রোন আর শার্ট খুলে ফেললেন।খালি গায়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন। শুনেছি কারো বুকে পশম না থাকলে সে নির্দয় হয় কিন্তু এই মানুষ টার উপর এক রকম ভেতর সম্পূর্ণ অন্যরকম।এত মায়া মমতা ভালবাসা উনার বুকে আমি মাঝে মাঝে অবাক হয়ে ভাবি এতটা ভালবাসতে পারে কিভাবে উনি।উনার দিকে তাকাতে বেশ লজ্জা লাগছে আমার।উনি প্যান্ট চেঞ্জ করে টাওয়াল পরে আবার দাঁড়ালেন আমার সামনে।আমার গলা জড়িয়ে ধরে আমার দিকে ঝুঁকে নাকে নাক মিশিয়ে বললেন,
‘উহু অভিমানি বউ। তোমাকে কাছে পাওয়ার প্রবল ইচ্ছা ধীরে ধীরে আমাকে আরো বেশী পাগল করে তুলছে।তুমি কি বোঝো না তুমি ছাড়া আমি কত অসহায়।’
আমিও উনার গলা জড়িয়ে ধরে বললাম,
‘সেতো আমি বললাম বলে। ‘
‘আমাকে জ্বলানো কথা বলে সহ্য করতে পারবে তো মিসেস বিহান।আজ রাতে খবর আছে তোমার।আমি কাছে আসতে চাই নাকি দূরে যেতে চাই বুঝবে তুমি আজ।’
‘কয়টার খবর? খবর টবর আমি দেখি না।’
‘এই খবরে দেখার কিছুই নেই শুধুই অনুভব করার।’
‘এই আপনি এখন কোনদিকে যাচ্ছেন কথা ঘুরিয়ে।’
‘আপাতত গোসল এ যাচ্ছি বাকি কথা রাতে হবে।বাই দ্যা ওয়ে তাকে কিন্তু আজ খুব সুন্দর লাগছে।তুমি কি জানো সে এত সুন্দর কেনো?’
‘আমি জানিনা আপনি গোসলে যান তো আগে।’
ক্ষুদায় জীবন টা যায় যায় অবস্থা। কাকিমনি তো ফোন করে বলে দিয়েছে তার এই বিয়েতে সম্পূর্ণ মত আছে।সে তার মেয়েকে সম্পূর্ণ সাপোর্ট করবে।রিয়া পৌছেছে কিনা সে খোজ নিচ্ছে।মেয়ের বিয়ে নিয়ে কত স্বপ্ন ছিলো কাকিমনির।কাকুর জন্য কিছুই হলো না।শুনেছি কাকু গাড়িতে যাওয়ার সময় আর কিছুই বলেনি। হয়তো এইভাবেই মেনে নিবেন।হঠাত মুখে পানির ছোয়া লাগতেই ভাবনা থেকে বেরিয়ে এলাম।বিহান থ্রি কোয়ার্টার আর সাদা গেঞ্জি পরে চুলের পানি ঝাড়ছে আমার মুখের উপর।বিহানের দিকে এগিয়ে গিয়ে বললাম,শ্যাম্পু করেছেন। ঘ্রাণ টা দারুণ তো।
উনি নিজেও নাক টেনে ঘ্রাণ বোঝার চেষ্টা করলেন।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
‘আসলেই ঘ্রাণ টা মারাত্মক তাইনা?আসলে আমি ছেলেটায় তো মারাত্মক। আজ ই গিফট পেলাম।রেনেটা কোম্পানির ম্যানেজার ভাই জোর করেই দিলেন।’
আমি বিহানের কথার সায় দিলাম হেসে।কিভাবে যে নিজের প্রশংসা করতে পারে।
–এরই মাঝে বিহানের ফোনে ভিডিও কল এলো।বিহান ফোন টা রিসিভ করলো।খুব কম বয়সী একটা মেয়ে সেজে গুজে ক্যামেরার সামনে।মেয়েটা বারবার চুল ঠিক করছে আর কেমন যেনো হাসছে।বিহান বললো,দ্রুত আপনার চোখ দেখান দেখি কি সমস্যা।মেয়েটা চোখ দেখিয়ে কেটে দিলো।খুব ভাব নিয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে কথা বলছিলো।আমার দেখেই।মেজাজ প্রচুর খারাপ হয়ে গেলো।হিংসায় জ্বলে পুড়ে যাচ্ছি।তার উপর মেয়েটা আবার সুন্দরী। বিহানের পিছনে কোমরে হাত বেঁধে রনচন্ডী মুডে দাঁড়ালাম।রাগে ফুঁশতে দেখে বিহান ভড়কে গেলো আমার দিকে তাকিয়ে।ভ্রু কুচকে তাকিয়ে ভাবছে আমার হঠাত কি হলো।বিহান দুই ভ্রু উঁচিয়ে ভাবছে কাহিনী কী? তার বউ এর হঠাত রুপ বদলের কারণ কী?বিহান শান্ত কন্ঠে বললো,
“হঠাত রেগে গেলে যে।”
আমি রাগি মুডেই বললাম,
“মেয়েটা কে?”
বিহান কপাল টান টান করে বললো,
“কে আবার?পেশেন্ট। ”
“আপনি কি চোখের ডাক্তার মেয়েটা তো চোখ দেখাচ্ছিলো কেনো?”
“মেয়েটার হার্ট সার্জারী করাতে হবে।আমি যে ওষুধ দিয়েছিলাম খেয়ে নাকি চোখে সমস্যা হয়েছে।এখন তো তার বাসায় গিয়ে দেখা সম্ভব নয় হসপিটালে যাওয়া ও সম্ভব নয়।তাই মেয়েটি বললো ভিডিও কলে দেখাবে।”
“কেউ অসুস্থ হলে এইভাবে লিপিস্টিক পরে। এত সাজুগুজু করার মুড থাকে।এই মেয়ে নিশ্চয়ই আপনাকে দেখানোর জন্য ভিডিও কল দিয়েছে।”
উনি এবার একটু হেসে বললেন,
“কি জেলাস ফিল হচ্ছে পিচ্চি।আমি তো ওই মেয়ের দিকে তাকিয়েই দেখিনি।”
“এই শুনুন দিনকাল ভালো না।আপনি ৫০ বছরের নিচে কোনো মহিলা রুগি দেখতে পারবেন না।না মানে না।লিখে দিবেন মা কাকিদের ছাড়া সেবা দেওয়া নিষিদ্ধ। একান্ত কোনো মেয়ে যদি আসতেই চান কালো বোরকা পরে হাত মোজা পা মোজা পরে আসতে হবে।এখন যা বুঝলাম এইভাবে কম বয়সী সুন্দরী মেয়েরা সাজুগুজু করে আপনার কাছে আসে।”
বিহান আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“কত্ত ভালোবাসো তুমি আমায় দিয়া।তোমার এই রাগে সারপ্রাইজড আমি। ”
এরই মাঝে কলিং বেলা বাজছে।বিহান কে বললাম,
“দেখুন না কলিং বেলা বাজছে কেউ এসছে মনে হয়।”
“হুম মনে হয় ফুল নিয়ে এসছে।”
দরজা খুলতেই দুজন লোক ফুল নিয়ে এলো।তারা বাসর ঘর সাজানোর অর্ডার নিয়ে থাকে।বিহানের দিকে আমি তাকাতেই বিহান বললো উনারা বিভোরের ঘর সাজাতে এসছে।বিহান কে বললাম,
” উনারা কিভাবে সাজাবেন আমি দেখিয়ে দেই উনাদের।উনাদের সাথে আমিও সাজাবো।”
বিহান মুহুর্তের মাঝে মুড চেঞ্জ করে বললো,
“নো। ”
মুখ ভার করে বললাম,
“হুয়াই।
“বিকজ ওরা আমার বউ এর দিকে তাকিয়ে থাকবে।তাই ওখানে যেতে হবে না তোমার ক্লিয়ার।”
শুধু নাকি আমি জেলাস আর উনি জেলাস না।আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,
“চোখ মুখ এমন শুকিয়ে গিয়েছে খাওয়া হয়েছে কিছু নিশ্চয়ই না।”
“না”
” আমি নিজ হাতে খাইয়ে দিচ্ছি এসো।”
বিহানের হাতে খাবার খেয়ে বেশ রিলাক্সড লাগছে আমার।ঘর সাজানো হয়ে গেলে বিভোর ভাই এর রুমে গাল ফুলিয়ে বসে রইলাম আমি।বিহান আমার দিকে ভাল ভাবে তাকিয়ে দেখে নিয়ে বললো,
“কি ব্যাপার এভাবে গাল ফুলিয়ে বসে আছো কেনো?”
বিহানের দিকে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে বললাম,
“ভাবছি আমি একটা বিয়ে করবো আপনাকে বাদ দিয়ে।”
বিহান যেনো আমার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো।অবাক হয়ে বললো,
“এই লাড়কি বলে কি?শ্বশুরের এই নিষ্পাপ জামাই কে স্যাকা দিতে চাও।শ্বশুরের জামাই তো তার মেয়েকে ছাড়া বাঁচবে না।শ্বশুরের মেয়ে কি জানাবে না তার বাবার একমাত্র জামাই এর অন্যায় টা কি?”
“আমার কপাল খুব খারাপ।”
“কেনো?মিস অভিনেত্রী।”
“আমি অভিনেত্রী”
“এই মুহুর্তে তাই মনে হচ্ছে।এবার বলা হোক এত অভিনয়ের কারণ কারণ কী?”
“আমার বিয়ে কি কোনো বিয়ে ছিলো।এমন সুন্দর বাসর ঘর এ বউ সেজে বসে থাকার সৌভ্যাগ্য কি আমার কপালে ছিলো।আমার বিশ্বআনরোমান্টিক খিটমিট জামাই আমার বাসর ঘরের দফারফা করে ছেড়েছিলো।”
“আমি যদি আনরোমান্টিক ই হবো বউ কে ভূতের ভয় দেখিয়ে সারারাত জড়িয়ে ধরে ঘুমোলো কে।”
“মুখ শিটকিয়ে বললাম, আহহহহহহ”
“আহহহহহহ না হ্যাঁ। ”
“আমার বাসর ঘর কি বিশ্রি ভাবে সাজানো হয়েছিলো আর এটা কত সুন্দর।”
“সুন্দর তো হবেই বিকজ এটা তোমার গ্রেট হাজবেন্ড এর পছন্দে সাজানো।আর আমাদের টা তো আমার প্লান সাজানো ছিলো না।”
“নিজেকে নিজেই গ্রেট দাবি করছেন।”
“গ্রেট না হলে নিজের বউ এর কাছে আই এ্যম দ্যা ওয়ান পারসোন হতে পারতাম না।আমি আগে সব সময় এটাই ভেবেছি।
I don’t need a perfect one, I just need someone who can make me feel that i am the only one🖤🖤
আর আমি সেটাই পেয়েছি।ব্যাক্তিগত জীবনে আমি অনেক হ্যাপি।”
চলবে,,
#এক_বৃষ্টিস্নাত_সন্ধ্যা(সিজন২)
৬৬.
#WriterঃMousumi_Akter
–বেশ অনেক্ষণ যাবত অপেক্ষা করছি রিয়া আর বিভোর ভাই এর জন্য।মন খুব ছটফট করছে ওদের দেখার জন্য।কেননা এতদিনের দেখা আর আজকের দেখার মাঝে অনেক বেশী ব্যাবধান।ভাবা যায় আমাদের রিয়া আর বিভোর ভাই কিনা এখন বিবাহিত।বিভোর ভাই কে কি এখন দুলাভাই ডাকা উচিত নাকি রিয়াকে ভাবি ডাকা উচিত।এতদিন ভেবে রেখেছিলাম বিভোর ভাই এর বিয়ের সময় কত টাকা আদায় করবো কিন্ত কই আর তা হলো।কপাল টায় খারাপ।হাত ধোয়ানো, কনে সাজানো,বাসর ঘর সাজানো কিছুই আর হলো না।আমাকে দুই ফ্ল্যাটের গলি দিয়ে বার বার পায়চারী করতে দেখে বিহান হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।বিহান কে তাকিয়ে দেখেই বুঝতে পারলাম এই ছেলে আমাকে সিওর কিছু বলবেই বলবে।উনি নিশ্চয়ই ভাবছেন দিয়া কেনো এত পায়চারী করছে।
বিহান কে দেখে বেহুদা হেসে দিয়ে বললাম,
” ওগো শুনছেন।”
উনি বোধহয় মারাত্মক আকারের কারেন্ট শর্ট খেলেন।হটাত এই ওগো ডাকের রহস্য খুজে পেলেন না।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে সিওর হয়ে নিলেন আমি উনাকেই বললাম কিনা।কথাটা যে উনাকেই বলেছি বুঝতে পেরে বললেন,
“আমাকে বলছো?খানিক টা সন্দিহান ভাবেই বললেন।চোখে মুখে জিজ্ঞেসা প্রশ্ন।”
আমিও দুষ্টুমি করেই বললাম,
“হ্যাঁ গো আপনাকেই বলছি।”
উনি নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ভাবছেন আমার এমন মতিভ্রমের কারণ টা কি হতে পারে। এক মিনিট সময় নিয়ে চট করে কিছু একটা ভেবে বললেন,
“কিছু বলবেন আপা শাবানা।”
সাথে সাথে হেকুর উঠলো আমার উনার এই আশ্চর্যজনক আধ্যাত্মিক কথা শুনে।হঠাত কি ভেবে আমাকে শাবানা আপা বলে সম্মোধন করলেন।আমি গায়ের জামা টেনে টুনে ঠিক করলাম, ঠিক করা ওড়না আবার ঠিক করে নিয়ে একটু শব্দ করে গলা ঝেড়ে মাথা এদিক ওদিক ঝাঁকিয়ে স্ট্রং হয়ে দাঁড়িয়ে বললাম,
“কি!ওভাবে কি দেখছেন।আর শাবানা কাকে বলছেন।”
উনি শার্টের হাতা গোটাতে গোটাতে আমার দিকে এগোতে এগোতে বললেন,
“উত্তর পরে দিচ্ছি।আগে বলো কি বলার জন্য এত মিষ্টি মধুর সুরে আমাকে ডাকলে সুইটহার্ট। ”
কথাটা বলেই ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসি নিয়ে আমার নাকে আঙুল স্লাইড করলেন।আহা! কি সুন্দর বলার ধরণ উনার।উনার সুইটহার্ট ডাক যেনো আমার হার্টে এসে তীরের মতো বিঁধলো।এই ছেলেটা অসাধারণ ভঙ্গিমায় কথা বলে বলে আমাকে বার বার ভয়ানক ভাবে তার প্রেমে ফেলছে।তার দিকে তাকিয়ে হুদাই হাসলাম।মানে ব্যাপার টা এমন আমার হাসি আসে নি তবুও হাসলাম।উনাকে শাবানার মতো লক্ষী বউ হওয়ার মতো অভিনয় করে বললাম,
“আমার দীর্ঘকালের বাসনা আপনাকে লুঙ্গি পরা অবস্থায় দেখবো।আপনি কি একদিন লুঙ্গি পরতে পারেন না আমার জন্য।”
উনি বাম ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,
“আচ্ছা! এই ব্যাপার।আমি তো ভাবলাম বলবা ওগো আমাকে একটা সেলাই মেশিন কিনে দাও।তোমার এই দিন রাত ডিউটি তোমার এত কষ্ট আমার আর সহ্য হচ্ছে না।সেলাই মেশিন এর কাজ করে একজন পারফেক্ট ট্রেইলার হয়ে কোটিপতি হয়ে যাবো।তাহলে তুমিও সারাদিন বাসায় থাকতে পারবে আমিও তোমায় কাছে পাবো।কাজের ফাঁকে ফাঁকে রোমান্স ও করা যাবে।”
“আপনার কি এখন রোমাঞ্চকর অনুভূতি হচ্ছে আম্মুর একমাত্র জামাই।”
উনি আস্তে আস্তে আমার আরেক টু কাছে এসে বললেন,
“আহা!তুমি মেয়েই এমন সুন্দর যাকে দেখলেই রোমাঞ্চ এর মুড চলে আসে।আই নিড প্রচুর রোমাঞ্চ। ”
“শুধু ফাউ কথা আপনার তাইনা?আগে বলুন কবে লুঙ্গিতে দেখবো।আর লুঙ্গি ডান্স দিবো।”
“আমাকে কোনদিন দেখোনি তুমি লুঙ্গিতে।?”
“কিভাবে দেখবো।বাড়ি থাকলেন কবে আপনি।”
“আগে পরতাম বাসায় রাতে ঘুমোনোর সময় মাঝে মধ্য।”
“এই সাত আট মাসে তো একদিন ও দেখলাম না।”
“বিকজ তুমি আমার পাশে ঘুমোও তাই।ঘুমোলে লুঙ্গি যদি খুলে যায়।”
“তা সমস্যা কি খুললে।”
“এই মেয়ে কি পাগল হয়ে গিয়েছে।বউ সামলানো যায় তবুও লুঙ্গি সামলানো যায় না বুঝেছো।তোমার সামনে লুঙ্গি খুললে ইজ্জত যাবে আমার।”
“এমন ভাব করছেন যেনো আমি আর আগের দিয়া আছি।বউ আপনার ভুলে যাবেন না।”
“আসলেই কি তুমি আমার বউ।আই মিন আমি বিবাহিত।”
“দুইদিন পর বাচ্চার বাপ হবে এখনো জিজ্ঞেস করে বিবাহিত কিনা।”
উনি আমার কোমর জড়িয়ে ধরে বললেন,
“একটু দুষ্টুমি করলাম তোমার সাথে।শুনেছি বিয়ের পরে মানুষ বদলে যায়।কিন্তু আমাদের প্রেম, খুনসুটি কখনো কমবে না বুঝেছো শ্যামাপাখি।আই লাভ ইউ।”
–এর ই মাঝে অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে রাত আট টায় রিয়া আর বিভোর ভাই বাসায় পৌছালো।সারাদিনে দুজন ই বেশ ক্লান্ত,কত ঝড় ঝাপ্টা অতিক্রম করে দুজনে এ পর্যন্ত এসছে।দুজনের মুখের স্বস্তির হাসি।আজ দুজন আলাদা হলে চিরদিনের জন্য বিলীন হয়ে যেতো এ হাসি।রিয়াকে দেখেই ভীষণ উত্তেজিত হয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম,খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরে বললাম,কনগ্রাচুলেশন রিয়া ইউশ ইউ ভেরি হ্যাপি ম্যারেড লাইফ।রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরে কতক্ষণ যেনো শান্তির নিঃশ্বাস নিলো।বিভোর ভাই আর বিহান কথা বলছে।বিহান বিভোর ভাই কে বুঝাচ্ছে আর শান্ত্বণা দিচ্ছে। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে খুব শিঘ্রই।
বিহান রিয়াকে বললো,
“রিয়া কনগ্রাচুলেশন আপু।”
রিয়া অত্যান্ত খুশি মনে বললো,
“ধন্যবাদ বিহান ভাই।আপনি না থাকলে হয়তো কিছুই হতো না।”
“ডোন্ট ওরি আমি যতক্ষণ আছি সব হবে।আমার চাচা শ্বশুর ও মেনে নিবে বুঝলে।”
উনার মুখে প্রথম চাচাশ্বশুর শুনলাম।হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে আমার।
বিহান ভাই এর কথা শুনে রিয়া আমি বিভোর ভাই সবাই হাসলাম।বিহান আমাকে ইশারা করলো রিয়াকে সাজানোর জন্য।আমি রিয়াকে নিয়ে গেলাম।বিহান যেনো কিছুই ভোলে না,সব কিছু কিভাবে খেয়াল রাখে।।রিয়ার জন্য লেহেঙ্গা, শাড়ি গহনা সব এনে রেখেছে।তাও খুব সুন্দর সুন্দর শাড়ি গহনা এনেছে।রিয়াকে লেহেঙ্গা পরিয়ে রাণীর মতো সাজিয়ে দিলাম।রিয়া এমনিতেই দেখতে অনেক সুন্দর তার উপর বিয়ের সাজে আরো বেশী সুন্দর লাগছে।রিয়াকে বললাম চুপ করে এই খাটের উপর বসে থাকবি কিন্তু।আর কাল আমাকে বলবি কি কি হয়েছিলো ওকে।রিয়া যেনো লজ্জা পেলো আমার কথা শুনে।রিয়াকে রেডি করে খাটে বসিয়ে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম।বিহান বিভোর ভাই কে সেরোয়ানি পরিয়ে দিলো।দুজনকেই অনেক সুন্দর লাগছে দেখতে।রাত ৯ঃ৫০ এ বিভোর ভাইকে রিয়ার ঘরে দিয়ে এলাম।
বিহান বললো,।
“বিভোর তুই না বলতি রাত দশ টার আগে যেনো তোকে বাসর ঘরে এগিয়ে দিয়ে আসি।দশ মিনিট আগে দিলাম।”
বিভোর ভাই হেসে বললো,
“আমি তো মজা করতাম,আর তুই মনে রেখেছিস।সত্যি গ্রেট তুই ভাই।”
এরই মাঝে বিভোর ভাই বললেন,
“দিয়া হাত দে তো বোন।”
বিভোর ভাই কে বললাম,
“কি বিভোর ভাই।”
বিভোর ভাই হাতের মধ্য পাঁচ হাজার টাকা গুজে বললো,এই নে বউ আর খাট সাজানোর জন্য দিলাম।’বিভোর ভাই কে বললাম,টাকা লাগবে না বিভোর ভাই।বিভোর ভাই বললেন,আমার বিয়ে এভাবে হচ্ছে বলে কি আমি কোনো নিয়ম পালন করবো না।বিহান বললো,আরে দিচ্ছে রাখো।তোমার কিপটা ভাই জীবনে প্রথম দিচ্ছে।এই সুযোগ হাত ছাড়া করোনা।আমি বিহান কে বললাম চুপ করুন তো।বিভোর ভাই দুষ্টুমি করে বললেন,’টাটা গাইস দেরি হয়ে যাচ্ছে।’বিভোর ভাই ঘরে প্রবেশ করলে বিহান বললো,চলো দিয়া যায়।বিহান কে বললাম যান আসছি।বিহান চলে গেলে আমি বুঝার চেষ্টা করলাম ভেতরে কি হচ্ছে।
————————————————–
ফুলে ফুলে সাজানো বাসর ঘরে রিয়া বসে আছে ঘোমটা টেনে বউ সেজে।বিভোর ভাই আর রিয়ার জীবনে সব থেকে উত্তম দিন আর খুশির দিন আজ।বিভোর ভাই খাটের এক কোণায় চুপ করে বসে রিয়ার দিকে একভাবে তাকিয়ে আছে।অনেকক্ষণ বেশ চুপচাপ আছেন।
রিয়া বলে উঠলো,
“কি ব্যাপার মিষ্টার পারফেক্ট আপনি চুপচাপ কেনো?বিয়ে করে কি মনে হচ্ছে ভুল করেছেন।চুপচাপ থেকে কি ভুলের অনুশোচনা করা হচ্ছে।”
বিভোর ভাই একটা হাই তুলে বললেন,
“যার জন্য চুরি করলাম সেই এখন চোর বলছে।আমি যে বিবাহিত সত্যি কিনা সেটাই ভাবছিলাম।”
“ভেবে কি পেলেন।”
“এত সুন্দর একটা মেয়েকে বউ হিসাবে পাবো সেটা কি ভেবেছিলাম।”
“বাট আমি জানতাম আপনি আমার উনি হবেন।এই কিউট ছেলেটা কে সব সময় আমার পছন্দ ছিলো।”
রিয়ার মুখে হাত বুলিয়ে বললেন,
“বাবা কি অনেক মেরেছে তোমাকে?”
“একটু একটু।”
“তোমার বাবার জায়গা অন্য কেউ হলে কি করতাম জানিনা।”
“সব কষ্ট ভুলে গিয়েছি কারণ আমি আপনাকে পেয়েছি।এর থেকে হাজার গুন বেশী মার খেলেও আমি আপনাকেই চাইতাম।”
“বাবার জন্য কষ্ট পাচ্ছো রিয়া।”
“না বিভোর।বাবার উপর অনেক রাগ করেছি আমি।আমি ভাবতে পারিনি বাবা লোভে অন্ধ হয়ে যাবে।আপনাকে এতটা অপমান মূলক কথা বলবে।”
“তুমি ভেবো না রিয়া।আমি তোমাকে পড়াবোই।তোমার মাথা সারাজীবন উঁচু করে রাখবো আমি।”
“আমি জানি বিভোর।আমি ভুল মানুষ কে ভালবাসিনি।”
বিভোর ভাই রিয়ার হাতে রিং পরিয়ে হাতে একটা চুমু দিয়ে বললেন,আই রিয়েলি লাভ ইউ রিয়াপাখি।
রিয়ার মাঝে মৌনতা।
বিভোর ভাই থেমে গিয়ে আবার বললেন,
“রিয়া তোমার দিক থেকে চোখ সরানো যাচ্ছে না।”
“আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে।।”
এর ই মাঝে দেখলাম বিহান আসছে এদিকে।বিহানের হাতে পানির পট।
বিহান পানির পটের মুখ খুলে পানি খেতে খেতে আমার দিকে নজর দিলেন।বেশ অবাক হয়ে তাকালেন কপালের চামড়া কয়েকগুন ভাজ পড়েছে। চোখে মুখে বিরক্তির ছাপ নিয়ে কপাল কুচকে বললেন,
“কি ব্যাপার তুমি এখানে। এ ঘরে কান পেতে আছো ক্যানো?..”
মুখে আঙুল চেপে বুঝালাম চুপ।
উনি দাঁতে দাঁত চেপে বললেন,” ডিজগাস্টিং। কি করছো তুমি।”
“প্রেম শুনছি।”
এক্ষুণি আসো ওখান থেকে বলেই উনি পাজা কোলে তুলে আমায় নিয়ে এলেন।সোজা রুমে এনে সিটকিনি লাগালেন।আমাকে আবার ও সারপ্রাইজড করে দিলেন উনি।কারণ আমাদের ঘরটাও ফুলে ফুলে ফুলসজ্জার মতো করে সাজিয়েছেন উনি।
চলবে,,
(পাঠক -পাঠিকার ভালবাসার পাছে চিরকৃতজ্ঞ আমি।ভালবাসা সবার জন্য।)