এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব-২৩+২৪

0
307

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_২৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

নিস্তব্ধ রাত,চারদিকে পিনপিনে নীরবতাময় পরিবেশ।তানহা কম্বল মুড়ি দিয়ে শুয়ে শুয়ে কান্না করছে।সবে মাত্র দু-চোখের পাতা এক করেছিল।কিন্তু ইফাদ এসে,খাবার খেতে নিয়ে চলে গেল।চৈতালির কথাগুলো বারবার মনে পড়ছে,কথাগুলো বুকে এসে আঘাত করছে।দিনের বেলায় নিজেকে শক্ত রাখতে পারলে-ও,রাতের বেলায় দু-চোখের পানি বাধ মানতে চায় না।বৃষ্টির মতো অঝোরে ঝরে পড়ে।ইফাদ এতক্ষণ সহ্য করতে-ও আর সহ্য করতে পারলো না।তানহাকে নিজের দিকে ঘোরালো।একহাতে গাল দিয়ে,তানহার দিকে তাকিয়ে বলল।

–কি হয়েছে কান্না করছো কেনো?তোমাকে কান্না করতে নিষেধ করি নাই।চোখের পানি সব ঝরে ঝরে পড়ছে।কার জন্য এত কষ্ট পাচ্ছো তুমি?

তানহার থেকে কোনো উওর আসলো না।দৃষ্টি অন্যদিকে রেখেছে।দু-চোখ বেয়ে অশ্রুকণা গুলো গড়িয়ে পড়ছে।ইফাদ এক দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকিয়ে আছে।কি অদ্ভুত সেই দৃষ্টি।ইফাদের দৃষ্টি তানহার ভেতরে ঝড় তুলে দিয়েছে।অন্য দিকে ঘুরতে চাইলে ইফাদ শক্ত করে তানহাকে ধরে রাখলো।তানহা একবার ইফাদের দিকে তাকিয়ে দৃষ্টি নত করে নিল।ইফাদ তানহার দু-চোখের পাতায় আলতো করে অধর ছুঁইয়ে দিলো।ইফাদের গরম নিঃশ্বাস তানহার মুখের ওপরে পড়তেই পরম আবেশে দু-চোখ বন্ধ করে নিল তানহা।তানহার অধরযুগল গুলো নিয়ে আয়ত্তে করে নিল ইফাদ।তানহার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো।ইফাদ তা’ অনুভব করতে পারলো।তানহার হাতে ভাজে নিজের হাত এক করে দিল।দু’জনের নিঃশ্বাস ঘন হয়ে আসতে শুরু করলো।দু’জনের মাঝে নেই কিঞ্চিৎ পরিমান দুরত্ব।অবশেষে পূর্ণতার রেশ ঘিরে ধরলো ইফাদ আর তানহাকে।তাদের ভালোবাসা দেখে স্বয়ং চাঁদও লজ্জায়,মুখ লুকিয়ে ফেললো।অতঃপর একটি রাত সাক্ষী হলো তাদের মধুচন্দ্রিমার।

আবির ঘুমোচ্ছিল।হঠাৎ করে কল বেজে উঠলো।ঘুম ঘুম চোখে ফোনটা হাতে নিল।অতিরিক্ত ঘুমের কারনে,ঠিকমতো তাকাতে-ও পারছে না।দু-চোখ পিট পিট করে তাকিয়ে আছে।ফোনটা রিসিভ করলো।সাথে সাথে ভেসে এলো একটা মেয়ের রাগান্বিত কণ্ঠ।

–কু*ত্তা*র বা*চ্চা* তুই কোনোদিন ভালো হবি না।আমি ভেবে ছিলাম।তোর থেকে দূরে গেলে,তুই হয়তো শিক্ষা পেয়ে ঠিক হবি।আমি তো’ ভুলেই গিয়েছিলাম।তুই তো মহান পুরুষ।তোর মনে দয়া মায়া বেশি।তাই এক মনে,একটা নারী রাখতেই পারিস না।তোর মনে হাজারো নারীর ভীড়।একটা কথা কি জানিস।পঁচা জিনিসে মাছি ভনভন করে বেশি।তুই হচ্ছিস সেই পঁচা জিনিস।আমি বুঝি না।এত সুন্দর সুন্দর মেয়ে গুলো,বেছে বেছে পঁচা জিনিসে হাত দেয় কেনো?কালকের মধ্যে তুই যদি আমার সাথে দেখা না করিস।তোর অবস্থা আমি কি করবো।তুই নিজে-ও জানিস না।

মেয়েটির কণ্ঠে শুনে,ধড়ফড়িয়ে উঠে বসলো আবির।দু-চোখ কচলে ভালো করে,নাম্বারটা দেখে নিলো।নাম্বারটা দেখে মুখের কোণে হাসির রেখা ফুটে উঠলো।

–তুমি এতদিন কোথায় ছিলে,তুমি জানো তোমাকে পাগলের মতো কোথায় কোথায় খুঁজেছি।তুমি একবার আমার কাছে ফিরে এসো।আমি একদম তোমার মনের মতো হয়ে চলবো।

–তোর ছলনায় আমি এবার ভুলবো না।আল্লাহর কাছে কি যে,পাপ করে ছিলাম।তোর মতো মানুষের সাথে আমার দেখা হয়েছিল।

–তুমি আমার সাথে এভাবে কথা বলছো কেনো?তুমি আমাকে আগে কতটা সন্মান করতে,আর আজকে তুই তাগারি করে কথা বলছো।

–তুই সন্মান করার মতো কোন কাজটা করেছিস।আমাকে দেখা।তোর সাথে ফালতু কথা বলার আমার সময় নেই।কালকে পার্কে চলে আসবি।আগে যেখানে আমরা দেখা করতাম।

–তুমি যা বলবে,যখন বলবে আমি তোমার সামনে গিয়ে হাজির হব।তুমি শুধু ফিরে এসো।কখন যেতে হবে আমাকে বলো।আমি এক ঘন্টা আগে গিয়ে বসে থাকবো।

ওপাশ থেকে কোনো উওর আসলো না।কলটা কেটে দিয়েছে।আবির দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল।এটা নতুন কিছু না।আবিরের অভ্যাস আছে।এসব দেখার।ভেতরটা খুশিতে ভরে উঠেছে।মানসিক অশান্তিটা কেটে গিয়ে,ভেতরটা শান্তিময় হয়ে উঠেছে।রাতের প্রহরটা যেনো কাটছেই না।আবিরের এখনই ছুটে চলে যেতে ইচ্ছে করছে।বিছানায় শুইয়ে শুইয়ে ছটফট করছে।

ঘড়ির কাটায় চারটা বেজে পার হয়ে গিয়েছে।বিছানায় বসে থরথর করে কাঁপছে তানহা।একটু পর পর হাঁচি দিয়ে উঠছে।মাত্রই ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করার ফলে,এই করুন দশা তানহার।ইফাদ তানহার দিকে তাকিয়ে হাসছে।তানহা বিরবির করে কি জানি বলছে।ইফাদেকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলল।

–ওভাবে থাকিয়ে থেকে কি দেখছেন।

–তোমাকে,,

–আগে কখনো দেখেন নাই।

–অসম্ভব সুন্দর তুমি।

–আল্লাহ তায়ালা তাহলে আপনাকে সুবুদ্ধি দিয়েছে।এতদিনে বউয়ের ওপরে নজর পড়েছে।

–অনেক আগেই পড়েছে।

–সব মিথ্যা কথা।

–সব সত্যি কথা।ভয়ে কিছু বলতে পারি নাই।

–আপনি ভয় পান হাসালেন।ভদ্রলোকের মতো গোসল দিয়ে আসুন।আপনি এখন বেশ সুস্থ আছেন।আজ থেকে আমার সাথে নামাজ পড়বেন।

ইফাদ দ্রুত কম্বলের মধ্যে ঢুকে গেল।তানহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো ইফাদের দিকে।

–আপনি আবার শুইয়ে পড়ছেন কেনো?নামাজ কি আপনার শশুর পড়বে।

–আমার শশুর নাই।থাকলে হয়তো পড়তেন।আল্লাহ তোমাকে ধৈর্যও দিয়েছে।আরো দিক।আমি অসুস্থ কাল থেকে নামাজ পড়বো।

–আজকাল বলে কোনো কথা নেই।নামাজ না পড়লে আপনার সাথে সংসার করবো না।উঠুন বলছি।

–শীতের মধ্যে গোসল করলে আমি মরেই যাব।

–খালি বাজে কথা।উঠুন বলছি।আমি কি মরে গিয়েছি।

ইফাদ কম্বলের মধ্যে থেকে দু-চোখ বের করে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো।যার অর্থ আজকে নামাজ না পড়লে হয় না।কিন্তু তানহা নামাজের বিষয়ে খুব কঠিন।সে,তার স্বামীর সাথে জান্নাতে যেতে চায়।তার স্বামীকে তো আল্লাহর ইবাদত করতেই হবে।যিনি আমাদের রিজিক দান করেন।আমাদের মনের সকল আশা পূর্ণ করে দেন।বিপদে সব সময় সরন করিয়ে দেন।কেউ পাশে না থাকলে উনি সব সময় আমাদের পাশে আছেন।আমরা এত অন্যায় করি।পাপা করি।তবুও উনি আমাদের ক্ষমা করে,আমাদের দোয়া কবুল করে নেন।আমরা তাকে খুশি করার জন্য তার ডাকে সাড়া দিতে পারবো না।তানহা রেগে বলল।

–থাকবো না আমি আপনার সাথে,যে মানুষ নামাজ পড়ে না।তার সাথে আমার কোনো সম্পর্ক নেই।বলেই বিছানা থেকে নেমে,ড্রেসিং টেবিলের কাছে থেকে ছোট ব্যাগটা হাতে নিল।থাকেন আপনি আপনার বাসায় চলে গেলাম।আর আসবো না।

তানহার কথা শুনে,ইফাদ দ্রুত উঠে এসে তানহার হাত ধরে বলল।

–যাচ্ছি যাচ্ছি।এত ভয় দেখানোর কি আছে।ভালো ভাবে বললেই তো’ শুনি।

তানহা চোখ গরম করে তাকালো।

–আপনি যাবেন।ইফাদ অসহায় মুখ করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো।তানহা মুচকি হেসে বিছানা উঠে বসলো।বিছানায় বসে একা একা হেসে উঠেছে।লজ্জা লতা গাছের মতো মিইয়ে যাচ্ছে।দু-হাতে মুখ ঢেকে কিছুক্ষণ বসে থাকলো।তারপরে ফোন হাতে নিয়ে ফেসবুকে ঢুকলো।মনটা কাল থেকে ফোন ফোন করছিল।রাগ করে ফোনটাকে ছুরে ফেলে দিয়েছি।নিজে পড়ে গেলে-ও এতটা কষ্ট হয়।ফোন পড়ে গেলে যতটা কষ্ট হয়।মুয়াজ্জিনের মধুর কণ্ঠে আজানের সুর কানে আসতেই তানহা উঠে দাঁড়াল।

ইফাদ চুলগুলো মুছতে মুছতে রুমের ভেতরে প্রবেশ করলো।থরথর করে কাঁপছে পুরো শরীর।

–এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কি দেখছো।আমার জামাকাপড় এগিয়ে দাও।চুলগুলো মুছিয়ে দাও।স্বামীর সেবা করতে শিখো বউজান।তানহা হেসে ইফাদের জামাকাপড় এগিয়ে দিয়ে,ইফাদের হাত থেকে তোয়ালে নিয়ে চুলগুলো মুছে দিতে লাগলো।

–জামাই যদি আমার মন মতো হয়ে চলে,জামাইকে একদম মাথায় করে রাখবো।কখনো কষ্ট পেতে দিব না।এবার অজু করে ঝটপট মসজিদে যান।

–না,আজকে যেতে পারবো না।পায়ে অনেকটায় ব্যথা আছে।আজকে বাসায় পড়ি।কাল থেকে মসজিদে যাব।

–আপনার মতো চোর আমি দু’টো দেখি নাই।

–তুমি আমাকে চোর বললে,কি চুরি করেছি আমি।

–আপনি একজন নামাজ চোর।নামাজ পড়তে চান না।এতদিন অসুস্থ ছিলেন,তাই কিছু বলি নাই।এখন আপনি বেশ খানিকটা সুস্থ।প্রতিদিন নামাজ পড়বেন।মানুষের ইচ্ছা শক্তিটাই বড়।অসুস্থ অবস্থায় আপনি শুয়ে থেকে নামাজ পড়তে পারবেন।চেয়ারে বসে নামাজ পড়তে পারবেন।আপনার কোনো সমস্যা থাকলে,বিপদ ঘটলে আপনি যে,ভাবে নামাজ পড়বেন।আল্লাহ তায়ালা ঠিক কবুল করে নিবেন।সুস্থ অবস্থায় এসব করার চিন্তা ভাবনা করবেন না।এসব উপায় গুলো যারা অসুস্থ,যাদের অনেক বড় বড় সমস্যা আছে তাদের জন্য।একটা কথাও বলবেন না।অজু করে নামাজ পড়বো দু’জন।

ইফাদ আর তানহা দু’জন অজু করে এসে পাশাপাশি জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।নিজেকে আজ ভাগ্যবতী বলে মনে হচ্ছে তানহার।কোনো এক রাতে স্বপ্ন দেখেছিল।স্বামীর সাথে পাশাপাশি বসে নামাজ পড়বে।আল্লাহ তায়ালা তানহার মনের ইচ্ছা পূর্ণ করে দিল।তানহা আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করল।

দু’জন নামাজ শেষ করে,একে ওপরের দিকে তাকিয়ে হেসে দিল।কি সুন্দর সেই হাসি।দু’টি মানুষের হাসির মধ্যে আল্লাহ তায়ালার রহমত ঝরে পড়েছে।

–আপনি ঘুমিয়ে নিন।আমি রান্নার জোগার করে আসি।সকালে একবারে এত কাজ করা জুলুম হয়ে যায়।

–কোথাও যেতে হবে না।তুমিও আমার সাথে ঘুমাবে।

–মাথাটা এত ব্যথা করছে।আজকে মনে হয় কোরআন শরীফ-ও পড়তে পারবো না।

–সারারাত ঘুম হয় নাই।তাই এমন হচ্ছে,একটু ঘুমিয়ে নাও।মাথাটা হালকা লাগবে।

–তাই হয়তো।তানহা জায়নামাজ গুছিয়ে তুলে,বিছানায় গিয়ে শুইয়ে পড়ল।বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই সাড়া রাজ্যের ঘুম এসে তানহার চোখে ধরা দিল।ইফাদ আস্তে করে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।অনেকক্ষণ পরে রুমে আসলো।তানহা ঘুৃমে বিভোর।তানহার মাথাটা তুলে নিজের বুকে ওপরে রাখলো ইফাদ।তানহার কপালে অধর ছুঁইয়ে তানহাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে গেল।

ঘড়ির কাটায় আটটা বাজে তানহা চোখে মেলে নিজেকে ইফাদের বুকে আবিষ্কার করে।ঘড়ির দিকে চোখ পড়তেই চোখ কপালে উঠে যায়,দ্রুত উঠে রান্না ঘরে গেল।রোকেয়া বেগম চৈতালি দু’জনের রুমের দরজা বন্ধ।তারমানে কেউ উঠে নাই।তানহা দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্না ঘরে আসলো।রান্না ঘরে এসে অবাক হয়ে গেল।তানহার অর্ধেক কাজই করা আছে।এখন শুধু রান্না করে নামানো।তানহা ভাবতে শুরু করলো কে,করেছে তার কাজগুলো।তার শাশুড়ী।তার শাশুড়ী করলে কখনো অর্ধেক কাজ করে না।এত ভেবে কাজ নেই।রান্নায় মন দিল তানহা।

দশটার দিকে ঘুৃম ভাঙে চৈতালির।ফোন হাতে নিয়ে আবিরকে ফোন দিল।আবির চৈতালির ফোন কেটে দিল।চৈতালি আবার ফোন দিলো।আবির বিরক্ত হয়ে ফোন তুলল।

–তুমি আর আমাকে ফোন দিবে না।তোমার ভাবি আমাকে যা ইচ্ছে খুশি বলেছে।তুমি যদি সবকিছু ছেড়ে আমার কাছে চলে আসতে পারো।তাহলে আমার কাছে আসবে।না হলে আসতে পারবে না।

–কোথায় আসতে হবে বলুন।

–যেখানে আমরা দেখা করি।এগারোটায় দেখা করবে আমার সাথে।বলেই আবির কল কেটে দিল।আবির বিষয়টা সিরিয়াসলি নিল না।আবির জানে চৈতালি কখনো তার পরিবারকে কষ্ট দিয়ে,আবিরের কাছে আসবে না।কিন্তু আবিরের ভাবনাটা আদৌও কি সঠিক।

চলবে…..

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

প্রায় একঘন্টা ধরে পার্কে অপেক্ষা করছে চৈতালি।সকালে না খেয়ে কাউকে কিছু না বলে,বাসা থেকে বেড়িয়েছে।তার ধারনা সে,খালি হাত পায়ে গেলে-ও আবির তাকে ফিরিয়ে দিবে না।বিনাবাক্য গ্রহণ করে নিবে।বাসা থেকে বের হয়ে আসার সময় বলেছিল।
আর কখনো এই বাসায় ফিরবে না।চৈতালি কি জানে না,তাকে আবার এই বাসায় ফিরতে হবে।অবুঝ মনটা যে,বুঝে না।তার বিশ্বাস তার ভালোবাসার মানুষ তাকে কখনো ফিরিয়ে দিবে না।সময়ের সাথে রৌদ্রের তাপ তীব্র হচ্ছে,চৈতালি বিরক্ত হয়ে গাছের আড়ালে গিয়ে বসলো।

বেলা বাজে বারোটা রোকেয়া বেগম এখনো রুম থেকে বের হন নাই।তানহা ডেকেছিল।বলেছেন পরে খাবে।রাগ করে চৈতালিকে ডাকে নাই তানহা।রোকেয়া বেগম আসলে,হয়তো চৈতালিকে ডাকার কথা বলতো।ইফাদ এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে।তানহা দুপুরের রান্নার জোগার করতে গেল।তানহা কাজ করছিল।একজোড়া হাত এসে,তানহাকে দু’হাতে আবদ্ধ করে ফেললো।আচমকা কারো স্পর্শ পেয়ে,চমকে উঠলো তানহা।ইফাদকে দেখে স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়লো তানহা।

–আরে কি হচ্ছে টা কি।ছাড়ুন বলছি।

–আগে বলো তুমি আমাকে রেখে চলে এসেছো কেনো?

–রান্না কি আপনার বউ করবে।

–না আমি করে দিব।আমি কিন্তু বেশ ভালো রান্না করতে পারি।তুমি যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।আজকে আমি রান্না করবো।

–এই ভরদুপুর বেলা আমি কেনো ঘুমোতে যাব।আমি এখন ঘুমাবো না।

–তুমি এখন না ঘুমালে,আমি’ও রাতে ঘুমোতে দিব না।

–অসভ্য।

–ছেলে মানুষ বউয়ের কাছে অসভ্য হবে না।তাহলে কার কাছে হবে।

–আপনি যাবেন।আমাকে কাজ করতে দিন।টেবিলে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিন।সবাই না খেয়ে আছে।

–আম্মু বাহিরে আসে নাই।

–না,ডেকে ছিলাম।বললেন পরে খাবেন।

–আর চৈতালি।

–তার খবর আমি জানি না।

–তুমি সব সময় এত রেগে রেগে কথা বলো কেনো?ভালোবেসে মিষ্টি করে কথা বলতে পারো না।

–ও গো’ প্রাণের স্বামী এই যে,গরম তেল দেখছেন।এখন যদি এখান থেকে না যান,তাহলে পুরোটাই আপনার মাথায় ঢেলে দিব।কি রোমান্টিক তাই না।

–না একদম রোমান্টিক না।আমি দেখিয়ে দিচ্ছি।কোনটা রোমান্টিক।বলেই গভীর ভাবে তানহার গালে অধর ছুঁইয়ে দিলো।তানহা ধাক্কা দিয়ে ইফাদকে সরিয়ে দিল।

–লজ্জা-শরম ভাত দিয়ে খেয়ে ফেলছেন।আম্মা বা চৈতালি আসলে কি মনে করবে।

–কিছু মনে করবে না।আমার আব্বুও আমার আম্মুকে অনেক ভালোবাসতো’।

–আপনি এখানে থেকে যাবেন।একদম বিরক্ত করবে না।

রোকেয়া বেগম রান্না ঘরের দিকে আসছিলেন।তানহার শেষের কথাটা শুনতে পেলেন।ইফাদ কিছু বলতে যাবে।তার আগেই রোকেয়া বেগম বলল।

–কি ইফাদ।মায়ের গলা শুনে মায়ের দিকে তাকালো ইফাদ।নরম সুরে বলল।

–জ্বী আম্মু।

–মেয়েটাকে বিরক্ত করছিস কেনো?

–বিরক্ত করছি না আম্মু।আমার ঔষধ খুঁজে পাচ্ছি না।তাই তানহাকে খুঁজে দিতে বললাম।কিন্তু তানহা খুঁজে দিচ্ছে না।

–তোর ঔষধ প্রতিদিন হারিয়ে যায় তাই না রে।আমার সাথে আয়।আমি তোর ঔষধ খুঁজে দিচ্ছি।তোর বাবাও ঔষধ খুঁজে পেত না।তাই বারবার আমার কাছে আসতো।আর বলত আমি যেনো তার ঔষধ খুঁজে দেই।ইফাদ অসহায় দৃষ্টিতে তানহার দিকে তাকালো।ইফাদের অসহায় মুখখানা দেখে,মুখে হাত দিয়ে হাসছে তানহা।

–চোখের সামনে ঔষধ রেখে ঔষধ খুঁজে পাস না।তাড়াতাড়ি চল খাবার খেয়ে নিবি।চৈতালি উঠেছিল।

–জানিনা আম্মু আমি তো মাত্রই উঠলাম।

–আচ্ছা বাহিরে আয়।আমি দেখছি।রোকেয়া বেগম চৈতালির রুমে উঁকি দিয়ে দেখলেন।চৈতালি তার রুমে নেই।মেয়ে কলেজে গিয়েছে ভেবে ড্রয়িং রুমে ফিরে আসলেন।

দীর্ঘ দুই ঘন্টা অপেক্ষা করার পরে আবির আসলো।চোখ-মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট।চৈতালির চোখ-মুখে বিষন্নতার ছাপ।চেহারায় মলিনতা বিদ্যমান।করুন দৃষ্টিতে আবিরের দিকে চেয়ে আছে।কি অসহায় সেই চাহনি।দেখলে যে,কারো দয়া হবে।নিরবতা ভেঙে চৈতালি বলল।

–স্যার আমি সবকিছু ছেড়ে আপনার কাছে চলে এসেছি।আমার আর কিছু চাই না।আমার শুধু আপনাকে চাই।প্লিজ আমাকে আপনার সাথে নিয়ে চলুন।সারাজীবন আপনার সাথে থাকতে চাই।

চৈতালির কথা শুনে,আবির চোখ বড় বড় করে তাকালো।অবাক কণ্ঠে বলল।

–কিহ তুমি তোমার পরিবার ছেড়ে,নিজের বাড়িঘর ছেড়ে আমার কাছে চলে এসেছো।তোমাকে না একটা কাগজ দিয়েছিলাম।ওটা কই?

–ওটা আমি বাসায় রেখে আসছি।ভাবির সাথে আমার ঝগড়া হয়েছে।আমি ভাবির সাথে কথা বলছি না।আমরা আজকেই বিয়ে করবো চলুন।

–এই চৈতালি তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।যে,মেয়ে দু-দিনের একটা ছেলের জন্য তার পরিবার,তার সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছে।আমার থেকে ভালো কিছু পেলে আমাকে ছেড়ে দিবে না।তার কোনো নিশ্চয়তা আছে।স্যরি চৈতালী।আমি তোমাকে গ্রহণ করতে পারলাম না।ভদ্র মেয়ের মতো যে,বাসা থেকে এসেছো।আবার ভদ্র মেয়ের মতো নিজের বাসায় ফিরে যাও।সারাজীবন তপস্যা করলে-ও তুমি আমাকে পাবে না।ভালো থাকবে আসছি।

আবিরের কথা শুনে,চৈতালির মনে হলো বিশাল আকাশটা তার মাথায় ভেঙে পড়েছে।চৈতালি কান্না করতে করতে বলল।

–এই স্যার আপনি এসব কি বলছেন।আপনি তো’ বলেছিলেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন।আপনি এসব কি বলছেন।আমি এখন কোথায় যাব।প্লিজ আমার সাথে এমন করবেন না।আপনি যা বলবেন।আমি তাই করবো।আপনার পায়ের নিচে পড়ে থাকবো।আমার সাথে এমন করবেন না।

–তুমি এসব নাটক করে,নিজের পরিবারের মন গলাও।তারা যদি দয়া করে তোমাকে তাদের বাসায় থাকতে দেয়।

প্রিয়া আবিরের বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছিল।আবিরের বাবা-মায়ের জন্য খাবার কেনার জন্য নিচে নামলো।হঠাৎ চোখ যায়।পার্কের ফাঁকা মাঠের বিশাল গাছের নিচে।একটা মেয়ে আবিরের হাত ধরে কিছু একটা বলছে।প্রিয়ার ফুরফুরে মনটা নিমিষেই বিষাক্ত হয়ে উঠলো।হিতাহিতজ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় মাঝখানে দিয়ে হাঁটা শুরু করলো।উদ্দেশ্য ছেলে মেয়ে দুটোর কাছে পৌছানো।এক প্রকার দৌড়ে রাস্তা পার হলো।দ্রুত গতিতে হাঁটতে প্রিয়া।

আবির চৈতালির হাত থেকে নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছিল।ঠিক সেই সময়ে কষে থাপ্পড় বসে আবিরের গালে,হঠাৎ করে থাপ্পড় পড়ায়।আমি রেগে যায়।আবির মনে করেছে।চৈতালি আবিরকে থাপ্পড় মেরেছে।আবির রাগান্বিত চোখে সামনের দিকে তাকালো।নিমিষেই সব রাগ উবে গেলো।মনে এসে ধরা দিল একরাশ ভয়।চৈতালি বোকার মতো মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে।প্রিয়া আবিরের কলার চেপে ধরে বলল।

–জা*নো*য়া*রে*র বা*চ্চা* তুই নাকি ভালো হয়ে গেছিস।আমি আসলে নাকি তুই আমার মনের মতো হয়ে চলবি।এটা তোর হবার নমুনা।তোকে ভালো হবার সুযোগ দিতে চেয়েছিলাম।আর দিব না।বলেই আবিরের গলা চেপে ধরলো।আবির নিজেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা-ও করছো না।চৈতালি রেগে প্রিয়াকে ধাক্কা দিল।

–আপনার তো’ সাহস কম না।আপনি আমার-ই সামনে আমার প্রিয় মানুষের শরীরের আঘাত করছে।

চৈতালির কোথায় তিক্ষ্ণ দৃষ্টিতে চৈতালির দিকে তাকালো প্রিয়া।আবিরকে উদ্দেশ্য করে বলল।

–এই মেয়েটা কে রে?আমার সাহস নিয়ে কথা বলছে।ও কি জানে না।প্রিয়া যখন কথা বলে,প্রিয়া ওপরে কেউ কথা বললে,পরিনাম কি হয়।

–চৈতালি তুমি চলে যাও।তুমি একদম প্রিয়ার সাথে বাজে ব্যবহার করবে না।তা-না হলে তোমার জিভ আমি টেনে ছিঁড়ে ফেলবো।

–আপনি আমার সাথে এমন করছেন কেনো?এই মেয়েটা কে?আপনি এই মেয়েটাকে কিছু বলছেন না কেনো?

–আবির তোমার কে হয়?বলল প্রিয়া।

–চৈতালি আমার স্টুডেন্ট হয় প্রিয়া।আমার থেকে কিছু সাজেশন নিতে এসেছিল।কথা শেষ হবার সাথে সাথে আবার আবিরের গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো প্রিয়া।

–তোর থেকে জানতে চেয়েছি।তুই এত কৈফিয়ত দিচ্ছিস কেনো?এই মেয়ে বলো আবির তোমার কে হয়।

–আবির স্যারের সাথে আমি রিলেশনে আছি।আজকে আমি আমার বাসা থেকে বের হয়ে আসছি।আবির স্যারের জন্য।এই যে,আমার শরীরে আঘাত চিহ্ন দেখতে পাচ্ছেন।আবির স্যারের জন্য পরিবারের হাতে মার খেয়েছি।এই মানুষটাকে ভালোবেসে যতটা ছোট হয়েছি।দ্বিতীয় কোথায়ও এতটা ছোট হয় নাই।আপনি আমাদের বিষয় আমাদের বুঝে নিতে দিন।

চৈতালির কথায় শব্দ করে হেসে দিল প্রিয়া।

–তোর নতুন প্রেমিকা’কে আমার কথা জানাস নাই।এই মেয়ে,দেখতে শুনতে তুমি মাশাল্লাহ।এত সুন্দর রুপ দিয়েছে আল্লাহ তোমাকে।তা বেছে বেছে পঁচা জিনিসে হাত দাও কেনো?আমি বুঝি না।সুন্দরী মেয়েগুলো ভালো জিনিস রেখে পঁচা জিনিস গুলো কেনো পছন্দ করে।তুমি দু’দিনের একটা বাচ্চা মেয়ে।তোমার কলেজের শিক্ষক উনি।লজ্জা করে না এত বড় মানুষের সাথে রিলেশন করো।আবিরের মাথার চুল টেনে ধরে বলল।

–তুমি একটা বাচ্চা মেয়ে।তুমি কেনো এই বুইড়া বেটার লগে প্রেম করো।এই যে, মাথায় দেখতে পাচ্ছো।চুল গুলো পড়তে শুরু করেছো।কয়টাদিন গেলেই টাক পড়বে মাথায়।এত রেখে টাকলা মাথা পছন্দ হলো।দেশে ছেলের অভাব পড়েছে।

–আবির স্যারকে নিয়ে একদম বাজে কথা বলবেন না।আপনি আগে নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে দেখুন।আয়নায় কখনো নিজের চেহারা দেখেছেন।বলতে বলতে প্রিয়ার হাত আবিরের মাথা থেকে সরিয়ে দিতে লাগলো।আবির চৈতালিকে ধাক্কা দিয়ে বলল।

–তোর সাহসের আমি তারিফ করছি।তুই কোন অধিকারে আমার আর প্রিয়ার মধ্যে আসিস।প্রিয়াকে নিয়ে আর একটা বাজে কথা বললে,তোর মুখ আমি ভেঙে দিব।

আবিরের সাথে শুনে,চৈতালি একদম থ হয়ে গেল।এটাই কি সেই আবির,যাকে সে পাগলের মতো ভালোবাসতো।যে,আবির তার সব পাগলামি গুলো সহ্য করে নিত।ছোট ছোট আবদার গুলো পূরণ করে দিত।সারাদিন বিয়ে বিয়ে করে মাথা খেত।আজ যখন বিয়ের সময় আসলো।তাহলে এভাবে সরে যাচ্ছে কেনো।পুরো মাথাটা কেমনে ঘুরতে শুরু করলো।প্রিয়া আবার আবিরের গালে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো।

–তুমি ঐ মেয়েটার জন্য আমাকে মারলে।

–তুই মেয়েমানুষের শরীর হাত দিবি কেনো?তোর হাত আমি ভেঙে ফেলি নাই।এটাই তোর ভাগ্য ভালো।

চৈতালি আবিরের হাত ধরে বলল।

–আপনার জন্য আমি সবকিছু ছেড়ে চলে এসেছি।আপনাকে আমাকে গ্রহন করতেই হবে।চলুল আপনি আজকেই আমাকে বিয়ে করবেন।বলেই আবিরকে টানতে লাগলো।প্রিয়া ঝারি দিয়ে চৈতালির হাত সরিয়ে দিল।চৈতালি রেগে বলল।

–আপনি এসে থেকে বাড়াবাড়ি করে যাচ্ছেন।কে হন আপনি আবির স্যারের।কিসের এত ক্ষমতা দেখাচ্ছেন আপনি।

–কেনো তোমার প্রাণের আবির স্যার তোমাকে বলে নাই।আমি তোমার আবির স্যারের কে হই।বউ হই আমি আবিরের।

–প্রমাণ কি?

–তোমার মত অনেক মেয়ে প্রমাণ চাইতে এসেছে।কিন্তু আমি তাদের কাছে নিজেকে প্রমাণ করাটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করিনি।তাই তোমার কাছেও করছি না।বাচ্চা একটা মেয়ে বড় বিপদ হবার আগেই জীবনটা বেঁচে গেছে।লক্ষি মেয়ের মতো বাসায় ফিরে যাও।বলেই আবিরের কলার ধরল।

–সাতদিনের মধ্যে বাংলাদেশে তুই আমাদের বিয়ের আয়োজন করবি।বাংলাদেশের সবাই জানবে আমাদের বিয়ের কথা।তোর বাবা-মাকে জানাবি।এখন এই মুহুর্তে তোর বাসায় নিয়ে গিয়ে সবার সাথে পরিচয় করাবি।বলেই আবিরের কলার ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলো।

চৈতালি মাটিতে ধপ করে বসে পড়লো।মস্তিষ্কের সবকিছু ফাঁকা ফাঁকা লাগছে।মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে।যার জন্য সবকিছু ছেড়ে দিলাম।আজকে সে,আমাকে ছেড়ে দিল।মাঠের মাঝখানে বসে,চিৎকার করছে চৈতালি।সবাই আড়চোখে তাকিয়ে আছে চৈতালির দিকে।কেউ কেউ এগিয়ে আসলো।কিন্তু ফলাফল শূন্য।

দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো।হাসনা বেগম এসে দরজা খুলে দিলো।আবিরের পাশে একটা মেয়েকে দেখে অবাক হলেন।আবিরকে প্রশ্ন করল।

–বাবা মেয়েটা কে?

–মা ওর নাম প্রিয়া।বিদেশে থাকতে আমরা বিয়ে করেছি।তোমাদের জানানো হয় নাই।প্রিয়া এতদিন বিদেশে ছিল।আজকে দেশে এসেছে।তাই আমরা আমাদের বিয়েটা পারিবারিক ভাবে অনুষ্ঠান করে আবার করতে চাই।প্রিয়া সাথে করে হরেক রকমের খাবার নিয়ে এসেছে।হাসনা বেগমকে সালাম দিয়ে,সেগুলো তার হাতে ধরিয়ে দিল।মেয়ে বেশ পছন্দ হয়েছে হাসনা বেগমের।আবির আর প্রিয়াকে বাসার মধ্যে নিয়ে আসলো।মাহতাব সাহেব,টিভিতে খবর দেখছিলেন।বাহিরের কথা গুলো সবকিছুই শুনতে পাচ্ছিলেন।তবু্ও চুপ রইলেন।আবির এসে বাবাকে-ও একই কথা বললেন।

–মেয়ে যখন তোমার পছন্দ।তখন আমরা কি বলবো।তুমি তো’ আর আমাদের পছন্দ মতো বিয়ে করবে না।

–বাবা বিয়েটা সাতদিনের মধ্যে করতে চাই।আমি চাই না।প্রিয়া আমার জন্য কারো কাছে,কোনো কথা শুনুক।

–তানহাদের বিয়েতে আমন্ত্রণ করতে পারি।নাকি তা-ও পারবো না।মেয়েটার বিয়ে হয়েছে দুই বছরের বেশি।একদিন আসছিল।মুখে কিছু তুলে দিতে পারি নাই।তোমার বিয়ে উপলক্ষে মেয়েটাকে কয়টাদিন এই বাসায় এনে রাখবো।

–আমার কোনো সমস্যা নেই।তুমি তানহার পুরো শশুর বাড়ির লোকজনকে নিমন্ত্রণ করতে পারো।

–আচ্ছা সন্ধ্যার সময় তানহাকে নিয়ে আসতে যাব।আবির সন্মতি জানালো।প্রিয়া মাহতাব সাহেবকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করল।একটু থেকে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলো।

বিধস্ত অবস্থায় রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে চৈতালি।সবাই আড়চোখে চৈতালিকে পরখ করছে।সেদিকে বিন্দু মাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই চৈতালি।শূন্য মাথায় একটা কথা ভেসে আসলো।বাসায় কাউকে কিছু না বলে আসছে।তারমানে ঐ বাসার ফেরার সুযোগ একটা আছে।কোনোকিছু না ভেবে।বাসার উদ্দেশ্য হেঁটে যাচ্ছে চৈতালি।

বাসায় এসে কারো সাথে কোনো কথা না বলে,দৌড়ে নিজের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

রোকেয়া বেগম তানহার দিকে তাকালো।তানহা-ও রোকেয়া বেগমের দিকে তাকালো।

চলবে…..