এক মুঠো কাঁচের চুরি পর্ব-৩৩+৩৪

0
293

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৩৩
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

ঘড়ির কাটায় রাত বারোটা ছুঁই ছুঁই।হঠাৎ করে কলিং বেল বেজে উঠলো।রিয়াদ সবে মাত্র ঘুমোনোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল।এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো।রিয়াদের ভ্রু কুঁচকে গেল।তার স্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে বলল।

–এতরাতে আমাদের বাসায় কে আসলো?

–ইফাদ ভাইয়া এসেছো হয়তো।

–তোমার মাথা খারাপ,ইফাদ কেনো এত রাতে আমাদের বাসায় আসতে যাবে।

–ইফাদ ভাইয়া সব পারে।ভাইয়ার একবার অনেক কষ্ট হয়েছিল।তোমার মনে আছে।রাত তিনটার সময় আমাদের বাসায় চলে আসছিল।কথা না বলে গিয়ে দেখো,ইফাদ ভাইয়া না-ও হতে পারে।

–কিন্তু ইফাদের তখন বউ ছিল না।এখন ইফাদের বউ আছে।এখন আবার ইফাদের কিসের কষ্ট।আর বউ মানেই তো’ প্যারা।দেখি আমার আমার কলিজার কি হলো।রিয়াদের কথা শুনে,রিয়াদের বউ রিয়াদের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো।রিয়াল হেসে মানে মানে কেটে পড়ল।দরজা খুলে দিতেই ইফাদ রিয়াদের বুকে ধা*ক্কা* দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ভেতরে আসলো।সামনের রুমের দিকে তালা ঝুলানো দেখে বলল।

–এই রুমে তালা দেওয়া কেনো?চাবি নিয়ে এসে তাড়াতাড়ি রুমটা খুলে দে’।

–ঐ’ শা*লা* আমার বাসায় এসে,আমাকে-ই ধা*ক্কা* দিয়ে বাসার মধ্যে প্রবেশ করলি।এখন আবার আমার ওপরেই হুকুম চালাচ্ছিস।

ইফাদ শান্ত দৃষ্টিতে রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।ইফাদের তাকিয়ে থাকা দেখে রিয়াদ বলল।

–ওভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো?যাচ্ছি,যাচ্ছি।এই রুমটা আমি তোর জন্য বানিয়েছি।আমার কত কষ্টের টাকা।তুই ছাড়া এই রুমে কারো প্রবেশ নিষিদ্ধ।তাই তালা বন্ধ করে রেখেছি।বলেই রিয়াদ নিজের রুমে গেল।ইফাদ গম্ভীর মুখ করে,দাঁড়িয়ে রইল।

–শা*লা* আমার বাড়ি আমার ঘর আমাকেই সন্মান করে না।রাত করে এসে মহারাজ আমাকেই হুকুম করছে।বউয়ের রাগ আমার ওপরে ঝাড়ছে।সকাল হতে দে,তোর সব রাগের প্রতিশোধ নিব।আমার বউয়ের রাগ তোর ওপরে গিয়ে ঝাড়বো।

–কে এসেছে?

–তুমি ঠিকি বলেছো।ইফাদ এসেছে।খুব রেখে আছে।মনে হয় অনেক কষ্ট পেয়েছে।আজকে আমি ওর সাথে ঘুমাবো।তুমি কষ্ট পেয়ো না।এই অল্প বয়সে বড্ড ক্লান্ত ছেলেটা।সবার কথা ভাবতে গিয়ে,নিজের পুরো জীবন টাই শেষ করে ফেলছে।আমি চাই না ও’ আমার থেকে কোনো রকম কষ্ট পাক।শুনো রুপা ইফাদ আমার শুধু বেস্ট ফ্রেন্ড না।ইফাদ আমার ভাই।তোমার কাছে আমার একটাই চাওয়া।ইফাদ আমাদের বাসায় আসলে,কখনো তার সাথে খাবার ব্যবহার করবে না।ইফাদ কষ্ট পায়।এমন কোনো কথা বলবে না।এটা তোমার কাছে আমার অনুরোধ বলতে পারো।ছেলেটা খুব বেশি কষ্ট পেলে,আমার কাছে আসে।নিজের কষ্ট গুলোকে হালকা করতে।তাই আমি চাই না আমার পরিবারের কেউ ইফাদের কষ্ট কমিয়ে দেওয়ার বদলে বাড়িয়ে দিক।আব্বু-আম্মুকে-ও বলে রাখছি।ওনার-ও ইফাদকে অনেক ভালোবাসে,ইফাদের মতো ছেলে হতে হলে,ভাগ্য নিয়ে জন্মাতে হবে।

–তুমি চিন্তা করো না।আমাকে তোমার এতটা খারাপ বউ মনে হয়।তোমাদের বন্ধুত্ব দেখে আমার আফসোস হয়।আমার জীবনে কেনো?তোমাদের মতো বন্ধু নেই।যাকে সবকিছু খুলে বলতে হবে না।চোখ দেখেই বুঝে যাবে।

–তোমার জন্য আমি আছি।তোমার আর কাউকে লাগবে না।ইফাদ অনেকক্ষন ধরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি রুমটা খুলে দিয়ে আসি।বলেই বেড়িয়ে আসলো।

রিয়াদ রুমটা খুলে দিতেই ইফাদ রুমে ডুকে দরজা লাগিয়ে দিতে যাবে।তখনই রিয়াদ বাঁধা হয়ে দাঁড়াল।

–আমি’ও ঘুমাবো তোর সাথে,তুই একা একা ভয় পাবি।

–এই আমাকে তোর ছোট বাচ্চা মনে হয়।বিরক্ত করা বন্ধ কর।নিজের রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়।

–এটা আমার বাসা আমি যেখানে খুশি ঘুমোতে পারি।রিয়াদের কথা শুনে,ইফাদ আশেপাশে চোখ বুলিয়ে নিল।তারপরে গম্ভীর মুখ করে রিয়াদের দিকে তাকালো।

–আশেপাশে তাকিয়ে কি দেখছিস।

–আশেপাশে তাকিয়ে দেখলাম কোথাও তোর নাম লিখা আছে কি না।খুঁজে পেলাম না।কালকে বাসার দললি নিয়ে দেখা করবি।বলেই রিয়াদের মুখের ওপরে দরজা লাগিয়ে দিল।রিয়াদ বোকার মতো দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রইল।

–ইফাদ তুই ভালো করেই জানিস।তুই দরজা না খুললে,আমি সারারাত এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো।তাই অযথা চোখের পানি লুকানোর চেষ্টা করিস না।রক্তে মিশে আছিস তুই আমার,তোর মুখ দেখে এতটুকু বুঝতে পারবো না।

ইফাদ ভালো করেই জানে,আজকে ইফাদকে ছেড়ে এক মুহুর্ত রিয়াদ সরবে না।যত রকমে অদ্ভুত কথা আছে।সব ইফাদের ওপরে প্রয়োগ হবে।জীবন এমন বন্ধু পেতে হলে-ও ভাগ্য লাগে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দরজা খুলে দিল।রিয়াদ রুমে প্রবেশ করে,ইফাদের উদ্দেশ্যে বলল।

–কি তুই একা একটা ছেলে হয়ে,আমাকে রুমের মধ্যে ঢুকিয়ে নিলি।তোর ভয় লাগছে না।তোর সাথে যদি উল্টা পাল্টা কিছু হয়ে যায়।

রিয়াদের কথায় ইফাদ মলিন হাসলো।ইফাদের দু-চোখ টলটল করছে।এখনই বুঝি বৃষ্টিতে রুপান্তরিত হবে।ইফাদের দিকে তাকিয়ে,রিয়াদের বুকটা কেঁপে উঠলো।ইফাদ আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলো না।রিয়াদকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।ছেলে মানুষের চোখে পানি,বিষয়টা বড্ড বেমানান।খুব বেশি আঘাত না পেলে,তারা খুব সহজে কাঁদে না।ইফাদের ভাই মারা যাওয়ার পরে,ইফাদ কখনো কান্না করেছে,বলে মনে হয় না।আজকে ইফাদের হলোটা কি’।তবে আঘাতটা কি একটু বেশিই লেগেছে।কে করলো আঘাত।কার এত সাহস।তাকে আমি ভেঙে গুড়িয়ে ফেলবো।

ইফাদের অসহায়ত্ব রিয়াদের বুকে হাহাকার পড়ে গেছে।পৃথিবীতে এই মানুষটাকে একটু বেশি ভালোবাসে রিয়াদ।মানুষটার কষ্ট যে,সহ্য করতে পারছে না।ইফাদ রিয়াদকে ছেড়ে দিয়ে,দু-চোখের পানি মুছে নিল।কান্না মিশ্রিত কণ্ঠে বলল।

–রিয়াদ প্লিজ যা।আমার ভালো লাগছে না।আমাকে একা থাকতে দে।

–তোকে কে কষ্ট দিয়েছে।আমাকে একবার তার নাম বল।তাকে ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব আমার।

–তাকে ভেঙে দিলে,আমি নিজেই শেষ হয়ে যাব।প্লিজ তুই এখানে থেকে যা।আমাকে একা থাকতে দে।

–খুব বেশি কষ্ট পেয়েছিস।

–জানিস রিয়াদ।যারা শান্ত ভাবে সহ্য করে।তারা গভীর ভাবে আহত হয়।

–ভাবির সাথে কিছু হয়েছে।আরে বাবা সংসার থাকলে,এমন টুকটাক ঝামেলা হবে।তাই বলে এভাবে কষ্ট পেতে হবে।আমার আর তোর ভাবির কত ঝামেলা হয়।আমাকে কখনো দেখেছিস।তোর মতো এভাবে কষ্ট পেয়েছি।

–তার মুখে অন্য ছেলের নাম।আমার বুকে পাহাড় সমান ব্যথা।

ইফাদের কথা শুনে,রিয়াদ নিস্তব্ধ হয়ে গেল।কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলছে।হয়তো কোনোদিন একদিন সে-ও ইফাদের মতো ব্যথা অনুভব করেছে।রিয়াদ ইফাদ কাঁধে হাত রাখলো।

–আজকে আমি তানহার চোখে আক্ষেপ দেখেছি রিয়াদ।ওর উচ্চ বিলাসিতার জীবন চাই।যা আমি ওকে দিতে পারছি না।আজকে আমি অর্থের কাছে হেরে গিয়েছি।আবির ভাইয়ের অনেক টাকা-পয়সা।সে,তার বউকে নিয়ে বিলাসবহুল জীবন-যাপন করছে।বউকে নিয়ে নামি দামি জায়গায় ঘুরতে যাচ্ছে।বউকে দামি উপহার দিচ্ছে,ফেসবুক ছবি আপলোড দিচ্ছে।বউকে স্বাধীনতা দিয়েছে।তাতে আমার কোনো আক্ষেপ নেই।কিন্তু আজকে আমি আমার বউয়ের চোখে আমার জন্য আক্ষেপ দেখেছি।আমি হয়তো তার সকল চাহিদা পূর্ণ করতে পারি না।কিন্তু বিশ্বাস কর।আমি আমার সর্বোচ্চ দিয়ে তাকে ভালো রাখার চেষ্টা করি।কি সে ভালো থাকবে।কি সে খারাপ থাকবে।সবদিকে খেয়াল রাখি।রাগ হলে ওর সাথে কথা বলি না।রাগের মাথা যদি বাজে কথা বলে ফেলি।ও কষ্ট পাবে বলে,দাঁতের ওপরে দাঁত চেপে রাগ নিয়ন্ত্রণ করি।আজকে আমাকে কি কথা শোনালো জানিস,আমাকে বিয়ে না করে,ওর আবির ভাইকে বিয়ে করলেই ভালো হতো।নিজেস্ব স্বাধীনতা পেত।নিজের সকল ইচ্ছে পূর্ণ হতো।আমি আর ওকে কোনো কিছুতেই নিষেধ করবো না রে’।সে,তার মতো ভালো থাকুক।কথা গুলো বলছিল।আর এক হাতে দু-চোখের পানি মুছছিল।

–পাগল ভাবি বুঝতে পারে নাই।হয়তো ভাবি কথাটা বলতে চায় নাই।রাগে বশীভূত হয়ে,বলে ফেলছে।ভাবি ছোট মানুষ।তুই বড় মানুষ হয়ে,এমন পাগলামি করছিস।তুই একটু বুঝিয়ে মানিয়ে নিবি।দেখবি ভাবি তোর কাছে ঠিক ক্ষমা চাইবে।

–তাকে কষ্ট দিব না জন্যই তোর কাছে চলে আসলাম।এখন আমাকে একা থাকতে দিবি।

তানহা চৈতালিকে ডেকেই যাচ্ছে।চৈতালি ঘুম ঘুম চোখে এসে দরজা খুলে দিলো।তানহাকে দেখে বলল।

–কি হয়েছে ভাবি।এতরাতে ডাকছো কেনো?কোনো সমস্যা হয়েছে।

–তোমার ফোনটা একটু দিবে।

–ভেতরে এসো।কি হয়েছে তোমার এভাবে কান্না করছো কেনো?বলতে বলতে চৈতালির ফোনটা তানহার হাতে দিল।তানহা বারবারের মতো এবার-ও ইফাদের ফোন বন্ধ পেল।তানহা চৈতালির বিছানায় বসে কান্না করছে।চৈতালি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

–ভাবি তোমার কি হয়েছে।এভাবে কান্না করছো কেনো?ভাইয়া কি তোমাকে কিছু বলেছে।

–আমি ওনাকে কষ্ট দিয়ে ফেলছি চৈতালি।উনি রাগ করে বাসা থেকে বের হয়ে গেছে।ফোন বন্ধ করে ফেলছে।প্লিজ ওনাকে এনে দাও।আমি আর কখনো ওনাকে কষ্ট দিয়ে কথা বলবো না।বলেই হাউমাউ করে কান্না করে দিল তানহা।চৈতালি হতাশ হয়ে তানহার মাথায় হাত রেখে বলল।

–চিন্তা করো না ভাবি।ভাইয়া রিয়াদ ভাইয়ার বাসায় গিয়েছে।রাগ কমে গেলে আবার বাসায় চলে আসবে।দাঁড়াও আমি রিয়াদ ভাইয়াকে ফোন দিচ্ছি।বলেই রিয়াদের নাম্বারে ফোন দিল।রিয়াদের বউ সরে মাত্র দু-চোখ এক করেছে।তখনই রিয়াদের ফোনটা বেজে উঠলো।চৈতালির নাম্বার দেখে রিসিভ করল।চৈতালি সালাম দিয়ে বলল।

–রিয়াদ ভাইয়া।ইফাদ ভাইয়া কি তোমার কাছে গিয়েছে।

–আমি তোমার ভাইয়া না।তোমার ভাবি বলছি।

–ভাবি ভাইয়া কি আপনাদের ওখানে গিয়েছে।

–হ্যাঁ তোমার ভাইয়া আসছে।

–আচ্ছা ভাবি এটা জানার জন্যই এতরাতে বিরক্ত করলাম।আরো কয়টা কথা বলে,রেখে দিল।

–হয়েছে আর কান্না করতে হবে না।শুনেছো ভাইয়া রিয়াদ ভাইয়ার বাসায় গিয়েছে।তানহা কোনো উওর দিল না।সব হয়েছে ফোনের জন্য বলেই ফোনটা ছুরে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে, চৈতালির রুম থেকে চলে গেল।

ইফাদের গায়ের ওপরে পা তুলে দিয়ে শুইয়ে আছে’ রিয়াদ।

–আমি যদি মেয়ে হতাম।তাহলে তোকেই বিয়ে করতাম রে ইফাদ।তোর মতো সুন্দর ছেলে আমার স্বামী হতো।তোর ওপরে শুধু আমার অধিকার থাকতো।রিয়াদের দুঃখী দুঃখী মুখ দেখে ইফাদ মলিন হাসলো।ইফাদকে হাসানোর জন্যই রিয়াদ এমন করছে।ইফাদ রিয়াদকে সরিয়ে দিয়ে,অন্য পাশ ফিরে শুইয়ে পড়ল।

আজকে সাতদিন হয়ে গেল।ইফাদ বাসায় আসছে না।এই কয়দিনে তানহা অনেক চেষ্টা করেছে,ইফাদের সাথে যোগাযোগ করার।রোকেয়া বেগম অনেক বার বাসায় আসতে বলছে।কিন্তু আসে নাই ইফাদ।তানহার ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে।আজকে যতই যাই হয়ে যাক না কেনো?আজকে সে রিয়াদের বাসায় যাবে।বোরকা পরে তৈরি হয়ে রিয়াদের বাসার উদ্দেশ্যে বেড়িয়ে পড়ল।চৈতালির থেকে রিয়াদের বাসার ঠিকানা জেনে নিয়েছে।ঠিকানা মতো পৌঁছে গেল তানহা।বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।পাঁচ তলার উঁচু বিল্ডিংয়ের দিকে একবার তাকিয়ে নিল।এতবড় বাসায় কি করে খুঁজবে তাদের।নিচ তলার দরজার সামনে গিয়ে কলিং বেলে চাপ দিল।একজন মহিলা এসে,দরজা খুলে দিল।তানহা সালাম দিয়ে রিয়াদের কথা জানতে চাইলে,মহিলাটি বলল তারা দ্বিতীয় তলায় থাকে।তানহা দ্বিতীয় তলায় এসে,কলিং বেলে চাপ দিল।এবার রিয়াদ এসে,দরজা খুলে দিল।রিয়াদকে হসপিটালে দেখেছিল।তাই চিনতে খুব একটা অসুবিধা হলো না।কিন্তু তানহা বোরকা পড়ে থাকায় রিয়াদ তানহাকে চিনতে পারলো না।তানহা সালাম দিয়ে বলল।

–ভাইয়া আমি তানহা।ইফাদ আছে।

–আরে ভাবি আপনি।ভেতরে আসুন।ইফাদ আমার কাছেই আছে খুব যত্ন করেই রেখেছি।

তানহা ভেতরে এসে সবার সাথে কুশল বিনিময় করল।মনটা ইফাদকে দেখার জন্য ছটফট করছে।কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে।সবার সাথে কিছুক্ষণ গল্প করল।

–ভাবি আসেন ইফাদের রুমে নিয়ে যাই।বলেই তানহাকে ইফাদের রুমে সামনে দিয়ে রিয়াদ চলে গেল।

ইফাদ বাহিরে আসছিল।তানহাকে রুমের মধ্যে প্রবেশ করতে দেখে উল্টো দিকে ঘুরলো।তানহা ইফাদের পেছনে দাঁড়িয়ে থেকেই বলল।

–কথা বলবে না আমার সাথে।ইফাদরে থেকে কোনো উওর আসলো না।তানহা ইফাদকে পেছনে থেকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিল।

–প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও।আমি তোমাকে আঘাত করতে চাই নাই।আমার বিলাসবহুল জীবন লাগবে না।আমার তোমাকে লাগবে।তুমি আর কষ্ট পেয়ো না।তোমার কষ্ট আমি সহ্য করতে পারছি না।তোমার যা শাস্তি দেওয়ার।আমাকে বাসায় থেকে দিও।এভাবে দূরে দূর থেকেো না।তোমাকে ছাড়া থাকতে আমার অনেক কষ্ট হয়।দম বন্ধ হয়ে আসে।আমি তোমাকে ছাড়া ভালো থাকতে পারছি না।প্লিজ ফিরে চলো।আর রাগ করে থেকো না।

ইফাদ নিজের থেকে তানহাকে ছাড়িয়ে দিল।তানহা ইফাদকে সামনে থেকে জড়িয়ে ধরলো।দু’জন ধস্তাধস্তি করতে করতে এক পর্যায়ে তানহা নিস্তেজ হয়ে নিজেই,ইফাকে ছেড়ে দিল।ইফাদ কোনো কথা না বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেল।ইফাদকে দেখে রিয়াদ কিছু বলতে যাবে।তার আগেই ইফাদ রিয়াদের বাসা থেকে বেড়িয়ে গেল।রিয়াদ দৌড়ে ইফাদের রুমে আসলো।তানহা ফ্লোরে বসে কান্না করছে।

–ভাবি প্লিজ আপনি এভাবে কান্না করবেন না।ইফাদ রাগ করে আছে।তাই এমন করছে।রাগ কমলে ঠিক হয়ে যাবে।স্বামীর সামনে অন্য ছেলের কথা বলবেন না।স্ত্রীরর মুখে অন্য ছেলের নাম পুরুষ জাতিকে বড্ড পোড়ায় ভাবি।আর কখনো কোনো ছেলের নাম ইফাদের সামনে নিবেন না।উঠুন আমি ইফাদকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।তানহা উঠে দু-চোখের পানি মুছে নিল।সবার থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় চলে আসলো।নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হচ্ছে,আজকে তার জন্য ইফাদ কতটা কষ্ট পাচ্ছে।কোনদিকে কমতি রেখেছিল ইফাদ তাকে,সে ইফাদকে এত বড় কথা শুনিয়ে দিল।রান্না করছে আর চোখের পানি ফেলছে।হটাৎ করে কলিং বেলে বেজে উঠলো।তানহা দু-চোখের পানি মুছে দরজা খুলতে চলে গেল।

চলবে…..

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি
#পর্ব_৩৪
#লেখিকা_Fabiha_bushra_nimu

তানহা দরজা খুলে দিতেই ইফাদ হনহন করে বাসার মধ্যে প্রবেশ করল।তানহার সাথে কোনো কথা না বলে,নিজের রুমে চলে গেল।তানহা দরজার সামনে দাঁড়িয়ে ইফাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তানহা দরজা বন্ধ করে,রান্না ঘরের দিকে গেল।

ইফাদ ফ্রেশ হয়ে এসে ড্রয়িং রুমে বসলো।

–তানহা এই তানহা।

ইফাদের ডাক শুনে তানহা কাজ ফেলে দৌড়ে আসলো।ইফাদের সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছে।তানহাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইফাদ বলল।

–এভাবে সংয়ের মতো দাঁড়িয়ে আছো কেনো?আমার খুব ক্ষুদা লেগেছে।তাড়াতাড়ি খাবার নিয়ে আসো।তানহা ইফাদের কথা মতো তড়িঘড়ি করে রান্না ঘরে গেল।খাবার নিয়ে এসে,ইফাদের সামনে হাজির হলো।ইফাদ খাচ্ছে,তানহা গালে হাত দিয়ে,ইফাদের সামনে বসে আছে।ইফাদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।

–ওভাবে গালে হাত দিয়ে বসে আছো কেনো?খেয়েছো কিছু।শুনলাম দু’দিন ধরে নাকি না খেয়ে আছো।

–তোমাকে কে বলছে?

–আমি তোমার থেকে জানতে চেয়েছি।প্রশ্ন করতে বলি নাই।কথা কম বলো।চুপ খেয়ে নাও।বলেই এক লোকমা ভাত তানহার মুখের সামনে ধরলো।

–আমার ক্ষুদা নেই।আমার খেতে ইচ্ছে করছে না।তোমার ক্ষুদা লেগেছে।তুমি খাও।

ইফাদ তানহার কথার কোনো উওর দিল না।আগের ন্যায় বসে আছে।ইফাদের দিকে তাকিয়ে ভয়ে,তড়িঘড়ি করে এক লোকমা ভাত মুখে পুরে নিল তানহা।ইফাদ নিজেও খেল।তানহাকে-ও খাইয়ে দিল।খাওয়া শেষ করে কোনো কথা না বলে ইফাদ উঠে চলে গেল।

চৌধুরী অফিসে আজকে খুশির মেলা লেগেছে।সবার অধরের কোণে হাসির রেখা বিদ্যমান।ফাইয়াজ সবার কথা শুনছে।নিজের সাধ্য মতো সবার মনের ইচ্ছে পূর্ণ করে দেওয়ার চেষ্টা করছে।ফাইয়াজ আর অভি এবার চৈতালির কাছে আসলো।

–আপনার কি চাই চৈতালি।বলল ফাইয়াজ।

#এক_মুঠো_কাঁচের_চুরি চাই।

–শুধু এক মুঠো কাঁচের চুড়ি আর কিছু লাগবে না।ভেবে দেখেন এমন সুযোগ আর আসবে না।আপনি চাইলে আমাকে চেয়ে নিতে পারেন।আমাকে বিয়ে করে-ও নিতে পারেন।আমি কিন্তু কিছু মনে করবো না।

চৈতালি ভ্রু কুঁচকে তাকালো।অভি মুখ চেপে হাসছে।ফাইয়াজ গম্ভীর হয়ে চৈতালির দিকে তাকিয়ে আছে।এমন ভাব করছে,বিশাল বড় সিরিয়াস কথা বলেছে সে।

–আমার জীবন নষ্ট করার শখ হয়েছে।এই বয়সে বিয়ে করে নিজের জীবন নষ্ট করবো।আগে নিজে সফল হব।পরিবার যদি বিয়ে দিতে চায়।তাহলে করবো।না হলে করবো না।ছেলে মানুষকে আমার একদম বিশ্বাস নেই।এরা এক একটা বিশ্বাসঘাতক।

–কাঁচের চুড়ি নিতে হলে,আমার সাথে বাহিরে যেতে হবে।আমি তো’ চুড়ি সাথে করে নিয়ে আসি নাই।

–তো কাউকে পাঠিয়ে দিন।সামান্য চুড়ি নিয়ে আসার জন্য,আমাকে কেনো বাহিরে যেতে হবে।

–চুড়ি কি আমি পড়ব।চুড়ি কিনতে হলে,হাতের মাপের প্রয়োজন হয়।

–তো’ আমার হাতের মাপ নিয়ে যান।

–কি দিয়ে নিয়ে যাব।আপনি মাপটা দিয়ে দেন।

চৈতালি আশেপাশে তাকিয়ে কিছু পেল না।অসহায় দৃষ্টিতে ফাইয়াজের দিকে তাকালো।ফাইয়াজ এখনো আগের মতো গম্ভীর মুখ করে আছে।

–আমি কালকে আপনাকে হাতের মাপ এনে দেই।

–জ্বী না ম্যাডাম অফারটা শুধু আজকের জন্য প্রযোজ্য।নিতে হলে আজকেই নিতে হবে।কালকে পাবেন না।

চৈতালি কিছু একটা ভাবলো।তারপরে ধীর কণ্ঠে বলল।

–আমার কিছু লাগবে না স্যার।আপনি অন্যদের দেখুন।ফাইয়াজ কোনো কথা না বলে সামনের দিকে এগিয়ে গেল।কি ডোন্ট কেয়ার ভাব তার।চৈতালি মন খারাপ করে ফেলল।কেনো মন খারাপ করল সে,নিজে-ও জানে না।বাহিরের চিন্তা বাদ দিয়ে নিজের কাজে মনযোগ দিল।সবাইকে সবার মন মতো উপহার দিয়ে,নিজের কেবিনে চলে ফাইয়াজ।একটু পরে একগাদা ফাইল এসে পড়ল চৈতালি কেবিনে,চৈতালি চোখ বড় বড় করে তাকালো।অভিকে দেখে প্রশ্ন করল।

–স্যার এত গুলো কাজ একদিনে কিভাবে করবো।

–আমি কি করে বলবো বলো।ফাইয়াজের কথা অমান্য করেছো।শাস্তি তো’ তোমাকে পেতেই হবে।

–এটা কেমন কথা স্যার।উনি এভাবে আমার সাথে অন্যায় করতে পারেন না।উনাকে গিয়ে বলুন।আমি ওনার অফিসে আর কাজ করবো না।কিছু হলেই নিজের ইচ্ছে মতো কাজ বাড়িয়ে দেয়।এতে মাথার ওপরে কি পরিমান চাপ পরে উনি কি তা জানেন না?

–জানি বলেই একটা সহজ কথা বললাম।তুমি সহজে রাজি হলে না।তাই আমি’ও কঠিন পথ অবলম্বন করলাম।

–অফিসে এত স্টাফ থাকতে,আপনি সব সময় আমার সাথে কেনো লাগেন বলেন তো’।

–কারন তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।তুমি আমার প্রশ্নের উত্তর দিলেই,আমি আর তোমাকে বিরক্ত করবো না।

–আচ্ছা বেশ চলুন।আজকে যা যা প্রশ্ন আছে।সব করবেন।আপনার সব প্রশ্নের উত্তর দিব।আজকের পরে থেকে আপনি আর আমাকে বিরক্ত করতে পারবেন না।আপনি আপনার মতো আমি আমার মতো।বলেই দু’জন বাহিরে হাঁটা শুরু করলো।

রোদের মধ্যে ফুটপাতের রাস্তা ধরে হাঁটছে চৈতালি আর ফাইয়াজ।ফাইয়াজের ফর্সা মুখখানা রোদে লাল হয়ে আসছে।কোথায় থেকে শুরু করবে ভেবে অর্ধেক রাস্তা হেঁটে ফেলছে।

–চৈতালি ইফাদ ভাইয়ার সাথে আমাকে দেখা করিয়ে দিবে।

–এই বুইড়া কাকু আপনি আবির স্যারের ফ্রেন্ড হয়ে,আমার ভাইয়াকে ভাইয়া বলে ডাকেন কেনো?আমার ভাইয়া আপনার ছোট নাম ধরে ডাকবেন।আমার ভাইয়া মোটেও আপনার মতো বুড়ো না।চৈতালির কথা শুনে,ফাইয়াজ ভ্রু কুঁচকে ফেলে।

–কে কাকু?এই তোমাকে কে বলেছে,একসাথে পড়লেই তার বয়সী হয়ে যায়।আবির আর আমি একসাথে পড়াশোনা করেছি ঠিকি।কিন্তু আবির আমার চার বছরের বড়।তোমার আবির স্যার তো’ জাতির বুড়ো।আমাদের সময় শিশু শ্রেণী ছিল।বাম হাত মাথার ওপরে দিয়ে ডান কান ধরতে হবে।যে,ধরতে পারবে না।তাকে স্কুলে নেওয়া হবে না।আমার তখন চার বছর বয়স ছিল।কান হাতে পাই নাই বলে,আমাকে স্কুল থেকে বের করে দিয়েছিল।বাসায় এসে খুব কান্না করে ছিলাম।পরে আব্বু আমাকে কেজি স্কুলে নিয়ে গিয়ে ছিল ভর্তি করার জন্য।আমি ছোট থেকেই অনেক লম্বা ছিলাম।আমার বয়স তখন চার ছিল।আমাকে দেখে বোঝার উপায় ছিল না।দেখে মন হতো ছয় কি সাত বছর বয়স।ছোট বেলা থেকেই আমি অনেক বকবক করতাম।প্রশ্ন করে আম্মুর মাথা খেতাম।তাই আম্মু বলেছিল কত বকবক করতে পারিস স্কুলে গিয়ে বকবক কর।আম্মু আমাকে বাসায় পড়াতো।না পারলে কি মার টাই না দিত ভাই।আমাকে ওয়ানে ভর্তি করে দিল।তখন থেকেই আবিরকে আমি পেয়েছি।তার থেকেই জানা সে,শিশু শ্রেণিতে পড়েছে,কেজি স্কুলে এসে প্লে,নার্সারি পড়েছে তারপরে ওয়ানে এসেছে।কেজিতে পড়লে বাচ্চারা এমনিতেই দুই বছর পিছিয়ে যায়।সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের গুলো আছে না।ওখানে সোজা ওয়ান থেকে পড়তে হতো।সেটা আমাদের সময় হতো।এখন হয় কি না জানি না।এখন যুগ বদলেছে।সবকিছু পরিবর্তন হয়েছে।এসবের প্রচলন আমাদের সময় ছিল।আবির আমার মতো ওয়ান থেকে পড়াশোনা করলে অনেক আগেই তার পড়াশোনা শেষ করে ফেলতো।আর ইফাদ ভাইয়ার কথা বলছো।ইফাদ ভাইয়া আর আমি কয়েক মাসের ছোট বড় হব।তোমার ভাইয়াকে আমি ইফাদ বলেই ডাকতাম।কিন্তু ভাইয়া আমার থেকে কয়েক মাসের বড়।ইফাদ বলার কারনে পুতুল আপু আমাকে বকেছিল।তাই ভাইয়া বলি।আমাকে তোমার ভাইয়ার বয়সী ধরতে পারো।

–ছোট একটা কথা জানতে চাইলাম।পুরো ইতিহাস শুনিয়ে দিলেন।মনে হচ্ছে বহুদিন পরে,মন খুলে কারো সাথে কথা বলছেন।পুতুল আপুটা কে?

ফাইয়াজ কথা ঘুরিয়ে বলল।

–ঐ দেখো চুড়ির দোকান।তোমার পছন্দ মতো চুড়ি কিনে নাও।দু’জন মিলে চুড়ির দোকানে গেল।চৈতালি পছন্দ মতো কয়েকটা চুড়ি নিল।ফাইয়াজ চুড়ি আলাকে বলল।

–আপনি আপনার চুড়ির ডালা টাই ওর হাতে ধরিয়ে দিন।আমি আপনাকে আপনার মূল্য বুঝিয়ে দিচ্ছি।চৈতালি অবাক হয়ে ফাইয়াজের দিকে তাকালো।এই প্রথম কেউ তাকে এত গুলো চুড়ি কিনে দিল।মেয়েরা ছোট ছোট উপহার পেতে খুব বেশিই ভালোবাসে।চৈতালির খুশি দেখার মতো।তড়িঘড়ি করে চুড়ির ডালাটা হাতে তুলে নিল।খুশিতে দু-চোখ চকচক করছে।চৈতালির দিকে তাকিয়ে ফাইয়াজ মলিন হাসলো।

–চৈতালি ফুচকা খাবে।

–আমাকে এসব কথা বলে লাভ নেই।এসব কথায় আর গলি না।

–আমি জানি তুমি অন্য কাউকে ভালোবাসো।একজনকে ভালোবাসলে আর কাউকে ভালো লাগবে না।এটাই স্বাভাবিক।

–পৃথিবীতে আমার পরিবার ছাড়া আমি আর কাউকে ভালোবাসি না।

–ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে পারি।

–না।

–আচ্ছা চলো ফুচকা খাই।বলেই রাস্তা পার হতে লাগলো।খুব সুন্দর করে রাস্তা পার হলো ফাইয়াজ।ফাইয়াজের এত সুন্দর করে রাস্তা পার করে দেওয়ার ব্যাপারটা দেখে চৈতালি মুগ্ধ হলো।বিষয়টা তার বেশ ভালো লেগেছে।আরো একটা জিনিস চৈতালি খেয়াল করেছে।ফাইয়াজ তার থেকে যথেষ্ট দূরত্ব মেন্টেন করে।চৈতালির এসব ভাবনা দেখে,নিজের ওপরেই রাগ হলো।নিজেই নিজের ধিক্কার জানালো।এসব সে,কি ভাবছে।ফাইয়াজ ফুচকা বানাতে বলল।চৈতালি দুষ্টু হেসে বলল।

–মামা আপনার দোকানে যত ঝাল আছে।সব ঝাল আজকে ফুচকার মধ্যে দিবেন।চৈতালির কথা শুনে,ফাইয়াজ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।চৈতালি অন্য দিকে তাকিয়ে আছে।

–তুমি খুব বেশি ঝাল খাও।

–জ্বী না আজকে ফুচকা আপনি খাবেন।আর বিলটা আমি দিব।বুঝছেন সাদা বিড়াল।বলেই জিভে কামড় দিল।ফুচকা খেয়ে ফাইয়াজের মুখটা দেখার মতো ছিল।বেচারা ঝাল খেয়ে চোখ-মুখ দেখার মতো লাল হয়ে গেছে।চেয়ারে বসে আছে ফাইয়াজ।ঝাল নিয়ন্ত্রণ হবার অপেক্ষা করছে।ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে চৈতালির মায়া হলো।দৌড়ে গিয়ে আইসক্রিম নিয়ে এসে দিল।

–আইসক্রিমটা খান ঝাল কিছুটা কমে যাবে।ফাইয়াজ কোনো কথা না বলে সামনে দিকে হাঁটা দিল।চৈতালি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।সাথে করে নিয়ে আসলো।এখন সাদা বিড়ালটা আমাকে রেখেই চলে গেল।চৈতালি-ও অফিসের দিকে গেল।

ফজরের আজান কানে আসতেই তানহা উঠে বসলো।ইফাদ আগেই উঠে অজু করে এসে,মাথায় টুপি পড়ছে।তানহা সেদিকে তাকিয়ে আছে।একটু অবাক হয়েছে বটে।মানুষটা প্রয়োজন ছাড়া তার সাথে কথা বলছে না।অন্য দিন আগে উঠলে-ও শুইয়ে থাকে,তানহা কখন তাকে ডেকে তুলবে।তানহার সাথে একটু দুষ্টুৃৃমি করবে।তানহা ভালোবাসে বুঝিয়ে দিবে।উঠে লক্ষি ছেলের মতো নামাজ পড়তে যাবে।আগের দিনের মতো আজকের দিনটা অন্য রকম।তানহা মনে মনে খুব কষ্ট পেল।তবুও ইফাদকে বুঝতে দিল না।উঠে এসে বলল।

–তুমি আগেই উঠে পড়েছো।

–হ্যাঁ জাগা পেয়েছি।তাই উঠে পড়েছি।

–অন্যদিন জাগা পেলে-ও শুইয়ে থাকতে।

–আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে,আমি আসছি।বলেই ইফাদ চলে গেল।তানহা ইফাদের দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে নিজেও অজু করে নামাজে দাঁড়িয়ে গেল।

চৈতালি অফিসে আসলো।অন্য দিনের তুলনায় মনে হচ্ছে,আজকে কিছু একটা হচ্ছে না তার সাথে।ফাইয়াজ কথা রেখেছে।সে,সত্যি আর চৈতালিকে বিরক্ত করছে না।চৈতালির আগেই অফিসে এসেছে।নিজের রুম থেকে একবারো বের হয় নাই।চৈতালি মনে মনে হাসলো।আগে যদি জানতাম ফুচকার ঝাল এতটা কাজে দিবে।তাহলে আগেই সাদা বিড়ালটাকে ঝাল খাইয়ে দিতাম।সারাদিন পেরিয়ে বিকেল হয়ে গেল।ফাইয়াজের দেখা মিলল না।চৈতালি অবশ্য শান্তিতে আছে।

দরজায় কলিং বেলে বেজে উঠলো।তানহা দরজা খুলে দিল।রিয়াদ এসেছে।দুই বন্ধু মিলে,ঐ যে,রুমে প্রবেশ করেছে।বাহিরে বের হবার নাম নেই।সন্ধ্যা হয়ে গেছে।চৈতালি-ও বাসায় চলে আসছে।তানহাকে মুখ গোমড়া করে বসে থাকতে দেখে বলল।

–ভাবি তোমার কি হয়েছে।

–কিছু হয় নাই।তোমার ভাইয়ার বন্ধু এসেছে,বিকেলে এসে রুমে দরজা দিয়েছে।এখনো রুম থেকে বের হবার নাম নাই।

–ও দু’টো এমনই।তুমি আমার রুমে আসো।দু’জন একসাথে নামাজ পড়ে নেই।দু’জন মিলে চলে গেল।নামাজ পড়ে এসে তানহার চোখ কপালে উঠে গেল।

ইফাদ আর রিয়াদ মিলে,চারটা ব্যাগ বের করে,একদম তৈরি হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।রোকেয়া বেগম আর চৈতালি ভ্রু কুঁচকে ইফাদ আর রিয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে।তানহা ইফাদের দিকে এগিয়ে গেল।তখনই রিয়াদ বলে উঠলো।

–ইফাদ সবাই চলে এসেছে।সবাইকে বলে বেড়িয়ে পড়।সময় হয়ে এসেছে।আমাদের তাড়াতাড়ি যেতে হবে।

–যেতে হবে মানে,আপনারা কোথায় যাবেন?

–কেনো ভাবি ইফাদ আপনাকে কিছু বলে নাই।রিয়াদের কথা শুনে তানহা ইফাদের দিকে তাকালো।

–কোথায় যাবে তুমি?

–ইফাদ কোথায় যাচ্ছিস।আমাদের তো’ কিছু বলিস নাই।

–আসলে আম্মু আমি আবার বিদেশে চলে যাচ্ছি।তোমাদের বলবো বলা হয়ে উঠে নাই।আজকে আমাকে যেতে হবে।তোমারা সবাই আমার জন্য দোয়া করো।আমি যেনো ভালোভাবে পৌঁছাতে পারি।ইফাদের কথা শুনে,তানহার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।চৈতালি আর রোকেয়া বেগম যথেষ্ট অবাক হয়েছে।তাদের মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

–ইফাদ তুই আমাদের সাথে ফাজলামি করছিস।তুই আবার বিদেশে যাবি।আমাদের মতামত নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেছিলি।আমরা আদৌও রাজি কি না।তুই এভাবে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারিস না।

–ভাইয়া নিশ্চয়ই তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।ভাবি দু’দিন ধরে না খেয়ে আছে।শুনে ঝড়ের গতিতে বাসায় চলে আসলে,আর তুমি ভাবিকে ছাড়া মাসের পর মাস বছরের পর বছর কিভাবে থাকবে।

–আমাকে যেতে হবে।আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।ইফাদ ব্যাগ হাতে নিয়ে এগোতে যাবে।তানহা আশেপাশের সবকিছু ভুলে ইফাদকে জড়িয়ে ধরলো।কান্না করতে করতে বলল।

–আমি তোমাকে যেতে দিব না।তুমি এভাবে চলে যেতে পারো না।আমি কি ভুল করেছি।আমাকে বলো।আমি শুধরে নিব।তবুও তুমি আমাকে একা রেখে চলে যেও না।তোমাকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না।আমার দম বন্ধ হয়ে আসবে।তুমি থেকে যাও।না হলে আমাকে তোমার সাথে নিয়ে যাও।

–তানহা কি হচ্ছে,এখানে আম্মু আছে।ছাড়ো আমাকে।

–আমি তোমাকে যেতে দিব না।আমাকে ছেড়ে এভাবে চলে যেও না।তুমি না বলেছিলে,আর কখনো বিদেশে চলে যাবে না।তাহলে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নিলে কেনো?ইফাদ তানহাকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে।তানহা আরো আষ্ঠেপৃষ্ঠে ইফাদকে আঁকড়ে ধরছে।ইফাদ এবার ধমকে উঠলো।

–তানহা তুমি কি ছোট বাচ্চা।এভাবে বাচ্চাদের মতো করছো কেনো?আমি যাওয়ার দরকার মনে করছি।তাই যাচ্ছি।পাগলামি বাদ দিয়ে নিজরে রুমে যাও।ইফাদের ধমকে কেঁপে উঠলো তানহা।রোকেয়া বেগম ছেলেকে চোখের গরম দেখালেন।ইফাদ দৃষ্টি নত করে রিয়াদকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল।তানহা অসহায় দৃষ্টিতে ইফাদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।এক মুহূর্ত ড্রয়িং রুমে দাঁড়াল না।নিজের রুমে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে,হাউমাউ করে কান্না করে দিল।

চলবে…..