#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[তৃতীয় পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
আদিবা বাসায় যেতেই হতবাক হয়ে গেলো। আদিবা কিছুতেই নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। কারণ রুমের মধ্যে বসে আছে আদনান।
— স্যার আপনি আমার বাসায়? তাও এত রাতে? কথা বলছেন না কেন? আপনি না আপনার বাসায় চলে গেছিলেন?
আদনান নিশ্চুপ,,,,
— কথা বলছেন না কেন? এই-যে স্যার!
আদনান কোনো কথা না বলে আদিবার কাছে চলে আসে। আর আদিবার কোমরে একটা হাত দিয়ে আদিবাকে একটা টান মেরে নিজের কাছে চলে নিয়ে আসে। আদিবা হতবাক হয়ে আদনানের দিকে তাকিয়ে আছে। আদনান আদিবার ঠোঁট স্পর্শ করতে যাবে তখনই,
— আদিবা!
আচমকা আদিবার বাবার ডাকে আদিবার ঘুম ভেঙে যায়। আদিবা ঘুম ভেঙে যেতেই সে চমকে উঠে। আদিবা বুঝতে পারে এতক্ষণ যে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছে। আদিবা ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে রাত ১০ টা বাজে।
— কিরে মা কি হইছে তোর?
— কি সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম তুমি দিলে মাটি করে আরেকটু হলে তো ইশ।
— মানে?
— কিছুনা। কি হইছে বলো।
— আমি ওয়াশরুমে যাবো।
আদিবা এবার ওনাকে নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তারপর সে আবার বাবাকে নিয়ে কেবিনে শুইয়ে দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আবার ঘুমিয়ে পড়ে আদিবার বাবা। আদিবা এবার উঠে আদনানের চেম্বারে যায়। সেখানে গিয়ে দেখে চেম্বার খালি। আদিবা বুঝতে পারে আদনান চলে গিয়েছে।
এদিকে আদনান বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেতে যায়। খাবার টেবিলে দিকে চোখ পড়তেই দেখে আরিয়ান চৌধুরী বসে আছে। আদনান তার বাবাকে দেখে আবার নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরতেই রানী বেগম বলল,
— কিরে খাবার না খেয়ে কোথায় যাচ্ছিস তুই?
— আমার খাবার উপরে পাঠিয়ে দিবে।
— তোকে এখানে আসতে বলছি। আমি আর তোর বাবা তোর জন্য অপেক্ষা করে বসে আছি।
— আমি কাওকে অপেক্ষা করতে বলিনি। আর আমার জন্য কারোর অপেক্ষা করার প্রয়োজন নেই।
— এখানে আসতে বলছি তোকে।
আদনান আর কোনো কথা না বলে খাবার টেবিলে এসে বসে। আরিয়ান চৌধুরী বলল — আদনান তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
— আমি শুনছি বলুন আপনি।
— আমি কাল সকালে লন্ডন যাচ্ছি। ওখানে হয়তো কয়েক মাস থাকব। এদিক টা দেখো তুমি।
আদনান কোনো কথা বলল না। খাবার খেয়ে উঠে নিজের রুমে চলে গেল। আদনান রুমে বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল তখন রানী বেগম আদনানের রুমে আসে।
— কি করছিস বাবা?
— একটা কাজ করছি। কিছু বলবে?
— হ্যাঁ।
— বলো।
— অনেক তো হয়েছে আর কতো কষ্ট দিবি?
— আমি আবার কাকে কষ্ট দিলাম?
— কতো বছর হয়েছে তোর বাবার সাথে ঠিক করে কথা বলিস না। উনি তো তোর ভালোর জন্যই সব করছে।
— অন্য কোনো কথা থাকলে বলতে পারো। এটা নিয়ে আমি কথা বলতে চাইনা।
— কি আর বলব। ঘুমিয়ে পড়।
— হুম। তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো তাড়াতাড়ি।
রানী বেগম আদনানের রুম থেকে বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যে আদনান ও ঘুমিয়ে পড়ে। অন্যদিকে হাসপাতালে আদিবা বসে আছে। তার চোখের ঘুম যেনো হারিয়ে গিয়েছে। কিছুতেই ঘুম আসছেনা।
দেখতে দেখতে কয়েকদিন পার হয়ে গেলো। আদিবার বাবা অনেকটা সুস্থ এখন। তাই আদিবা তার বাবাকে বাসায় নিয়ে চলে যায়।
— আদিবা মারে আমার তো চাকরি টা চলে গেছে। এখন কীভাবে চলবে আমাদের সংসার?
— বাবা তুমি চিন্তা করোনা আমি আছিনা?
— কিন্তু তুই বা কি করবি? তোর তো বিয়ের বয়স হচ্ছে তোকে তো ভালো একটা ছেলে দেখে বিয়ে দিতে হবে।
— বাবা তোমাকে আমার বিয়ে নিয়ে ভাবতে হবে না। আর তুমি চিন্তা করোনা আমি কিছু একটা খুজে নেব। তারপর তোমার আর আমার ঠিক হয়ে যাবে।
— তুই কি করবি।
— আমি চাকরি করব।
— তোর তো এখনও পড়াশোনা ও শেষ হয়নি তুই চাকরি করবি কীভাবে? আচ্ছা তোকে কিছু করতে হবেনা। আমি দেখি অফিসে গিয়ে চাকরি টা ফিরে পাই কিনা।
— তোমাকে আর চাকরি করতে হবেনা। কাজ করতে করতে তোমার কি হাল হইছে দেখতে পাচ্ছো না? এখন থেকে তুমি রেস্ট করবে। তোমাকে কোনো কাজ করতে হবেনা।
— তুই মেয়ে মানুষ। কখন কি হয়ে যায় বলা মুশকিল। আর রাস্তা ঘাটের অবস্থা ও খুব একটা ভালো না।
— বাবা তুমি একটু বেশি চিন্তা করছ। আমার কিছুই হবেনা। আমি যে ভাবেই হোক একটা চাকরি ম্যানেজ করব।
তারা নিজেদের মধ্যে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে দুজন দুজনের রুমে চলে যায়। আদিবা চিন্তা করল সে আদনানের কাছে একটা চাকরির কথা বলবে। এসব ভাবতে ভাবতেই আদিবা ঘুমিয়ে পড়ে।
পরের দিন আদনান চেম্বারে বসে আছে। তখন আদিবা আসে।
— স্যার আসবো?
— হ্যাঁ। হঠাৎ কি মনে করে? তোমার বাবার শরীর ঠিক আছে তো?
— জ্বি আলহামদুলিল্লাহ উনি ঠিক আছে। আসলে আমি আপনার কাছে একটা দরকারে আসছি।
— বলো।
— আসলে স্যার। আমার পরিবারে আমি আর বাবা ছাড়া কেউ নেই। বাবার ঔষধ আর সংসার খরচ আমাকে বহন করতে হচ্ছে। আমি কয়েকটি টিউশনি করি। কিন্তু এ দিয়ে হয়না।
— ওহ আচ্ছা! টাকা লাগবে?
— না।
— তাহলে?
— স্যার আমাকে যদি একটা কাজ দিতেন আপনাদের এখানে তাহলে উপকার হতো।
— তোমার পড়াশোনা কদ্দূর?
— আমি এখন ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে পড়ছি।
— ওহ আচ্ছা।
— আমি সব কাজ পারি।
— কি কি কাজ?
— রান্নাবান্না, থেকে শুরু করে সব।
— এখানে তো রান্না কাজ নেই।
— যে কোনো কাজ দিলেই হবে স্যার।
আদনান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল — ঠিক আছে। কাল তুমি ঠিক ৯ টায় এখানে উপস্থিত থাকবে। আর কাল তোমাকে সব কিছু বুঝিয়ে দেওয়া হবে।
— ধন্যবাদ স্যার।
— এখন যাও।
আদিবা আদনানের কেবিন থেকে বেরিয়ে হুররেএ বলে একটা চিৎকার দিয়ে।এক দৌড়ে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যায়। আর সে খুশি মনে বাসায় চলে গেলো। আদিবাকে খুশি দেখে আদিবার বাবা বলল,
— কিরে আদিবা তোকে খুব খুশি খুশি দেখাচ্ছে?
— বাবা আমার তো চাকরি হয়ে গিয়েছে।
— কোথায়?
— হাসপাতালে। ঐযে ডাক্তার আদনানের কথা মনে আছে? উনার হাসপাতালে।
— আচ্ছা। সাবধানে কাজ করবি। আর উনি যে কাজ দিবে সেটাই করবি।
— হ্যাঁ বাবা। আচ্ছা আমি যাই রান্না করে নিয়ে আসি।
— তোকে আর কষ্ট করতে হবেনা। আমি রান্না করে ফেলছি।
— তুমি আবার রান্না করতে গেলে কেন?
— তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।
আদিবা ফ্রেশ হতে চলে গেলো। পরের দিন সকালে আদিবা হাসপাতালে আসে। কিন্তু অনেক লেট হয়ে গিয়েছে। রান্নাবান্না করে আসে আর রাস্তায় জ্যামজট ছিল। আদিবা তড়িঘড়ি করে আদনানের চেম্বারে সামনে এসে হাফাতে থাকে।
— স্যার আসব?
আদিবার কথা শুনে আদনান ঘড়িতে তাকিয়ে দেখে ত্রিশ মিনিট লেট।
— প্রথম দিনেই ত্রিশ মিনিট লেট?
— সরি স্যার রাস্তায় জ্যাম ছিল।
— আমার সাথে কাজ করতে হলে সময়কে গুরুত্ব দিতে হবে। খামখেয়ালি আমার পছন্দ না।
— স্যার আর লেট হবে না।
— ঠিক আছে।
— স্যার আমার কাজ?
— ওহ হ্যাঁ, আজ থেকে তুমি আমার এসিস্ট্যান্ট। আমার কখন কি লাগবে সেটা এগিয়ে দিবে।
— ঠিক আছে স্যার।
— গুড। এখন এক কাপ চা করে নিয়ে আসুন।
আদিবা আদনানের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে আসে। আদনান চা মুখে দিতেই আবার বের করে আদিবার দিকে তাকিয়ে থাকে।
— কি হলো স্যার? চা ভালো হয়নি?
— চায়ে কেউ এতো চিনি দেয়?
— সরি স্যার আর হবে না এমন।
তাদের কথা বলার মাঝে একটা নার্স দৌড়ে আসে আদনানের কাছে।
— স্যার একটা রোগী আসছে। অবস্থা খুব খারাপ। এক্সিডেন্টের রোগী।
— চলুন তো দেখি।
আদনান তাড়াতাড়ি করে রোগির কেবিনে চলে যায়। আদনানের পিছনে আদিবাও আসে। আদনান রোগীর কাছে এসে দেখে মারাত্মক ভাবে জখম হয়েছে। মাথা মধ্যে গ্লাস ঢুকে গিয়েছে। আদনান একটা টান মেরে মাথা থেকে গাড়ির গ্লাস বের করতেই রক্ত বের হতে শুরু করে। এটা দেখে আদিবা সাথে সাথে অজ্ঞান হয়ে যায়।
চলবে?