#এক_মুঠো_রোদ্দুর
[সপ্তম পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
আদনানের আম্মু আদনানকে নিয়ে আলাদা একটা রুমে আসে।
— কি বলবে?
— আমি বলিকি। মেয়েটার তো আর কেউ নেই। মেয়েটা এখানে একা কীভাবে থাকবে? তাই বলছিলাম আদিবাকে আমাদের বাসায় নিয়ে গেলে কেমন হবে? মেয়েটা এখানে একা কীভাবে থাকবে? আর মেয়ে টাকে এই সময় একা ছেড়ে দেওয়া টাও বধহয় ঠিক হবে না। তাই বলছি আদিবাকে আমাদের বাসায় নিয়ে যাবো।
আদনান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল — ঠিক আছে।
রানী বেগম খুব খুশি হয়ে যায়।
— আচ্ছা আমি এখন গিয়ে খাবার নিয়ে আসি। তুমি আদিবার কাছে থাকো।
এই কথা বলে আদনান চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে সে খাবার নিয়ে ফিরে আসে। আদিবা তখনও ঘুমিয়ে আছে। আদনান আসতেই রানী বেগম আদিবাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে।
— আদিবা তুমি তো সারাদিন কিছুই খাওনি। এই খাবার গুলো খেয়ে নাও।
— না আন্টি। আমার কিছু খেতে ইচ্ছে করছেনা।
— খাবার না খেলে তো তুমি অসুস্থ হয়ে পড়বে। আমি তোমাকে খাইয়ে দিচ্ছি।
এই কথা বলে রানী বেগম আদিবাকে খাবার খাইয়ে দেয়। খাওয়া দাওয়া শেষ করে রানি বেগম আদিবাকে বলল,
— আদিবা তোমার জামাকাপড় ঘুছিয়ে নাও।
— কেন?
— আজ থেকে তুমি আমাদের সাথে থাকবে আমাদের বাসায়। যদি তোমার কোনো আপত্তি না থাকে।
— কিন্তু আন্টি।
— কোনো কিন্তু না। তোমার একা থাকা ঠিক হবে না। আর তুমি একা একটা মেয়ে এখানে থাকতে পারবেনা। যাও তুমি রেডি হয়ে আসো।
আদিবা আদনানের দিকে এক পলক তাকিয়ে সে তার জামাকাপড় ঘুছিয়ে নেয়। আর সবাই এক সাথে বেরিয়ে পড়ে। আর কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনানের বাসায় পৌছে যায় সবাই। আদিবা বাড়ির সামনে এসে দেখে খুব সুন্দর একটা বাড়ি। বাহিরে থেকেই বাড়িটা খুব সুন্দর। তারপর তারা ভিতরে প্রবেশ করে। বাহির থেকে ভিতরটা আরো বেশি সুন্দর। আদনান নিজের রুমে চলে গেলো। রানী বেগম আদিবাকে একটা রুমে নিয়ে যায়।
— আদিবা আজ থেকে এটা তোমার রুম। কোনো কিছু প্রয়োজন হলে আমাকে বলবে। নিজের বাড়ি মনে করে এখানে থাকবে।
আদিবা কিছু না বলে রানী বেগমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে শুরু করে।
— বোকা মেয়ে আবার কান্না করছ কি জন্য? তুমি একা না আমরা তো আছি তোমার পাশে। যাও ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নাও।
রানী বেগম চলে গেলেন। আদিবা তার জামাকাপড় বের করে আলমারিতে রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। সে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে। আসিবা খাটের উপরে শুইয়ে পড়ে। আবিদার বাবার কথা খুব মনে পড়ছে। আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
দেখতে দেখতে রাত হয়ে যায়। রানী বেগম আদিবাকে খাবার খাওয়ার জন্য ডাকতে আসেন। এসে দেখে আদিবা ঘুমিয়ে আছে। আর আদিবার চোখের কোনে পানি জমে আছে। রানী বেগম এসে আদিবার মাথায় হাত ভুলিয়ে আদিবাকে ঘুম থেকে তুলে।
— আদিবা উঠো মা। খাবার খেতে হবে তো। খেয়ে তারপর ঘুমাবে।
আদিনা রানী বেগমের সাথে খাবার খেতে চলে যায়। টেবিলে খাবার সাজানো আছে। আদিবা গিয়ে একটা চেয়ারে বসে। রানী বেগম আদিবার পাশে বসে।
— আন্টি স্যার খাবার খাবে না?
— আদনান চলে আসবে এক্ষনি।
— আন্টি এ বাড়িতে আপনারা দুজন মাত্র? আংকেল আপনাদের সাথে থাকেনা?
— তোমার আংকেল দেশের বাহিরে গিয়েছে। দু একদিনের মমধ্যেই ফিরে আসবে।
তাদের কথা বলার মাঝে আদনান চলে আসে। এবার সবাই খাওয়া দাওয়া শুরু করে। খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে আদনান আদিবার রুমে আসে।
— আদিবা!
আদনানের কণ্ঠ শুনে আদিবা সাথে সাথে উঠে বসে যায়।
— স্যার আপনি এখানে?
— তোমার এখানে থাকতে কোনো অসুবিধে হচ্ছে না তো?
— না স্যার।
— ঠিক আছে।
— ধন্যবাদ স্যার।
— ধধন্যবাদ কেন?
— আপনার বাসায় আমাকে থাকতে দেওয়ার জন্য।
— যাইহোক। কাল বিকেলে রেডি থেকো। তোমাকে নিয়ে বের হবো।
— কোথায় যাবেন?
— কাল দেখতে পাবে। ঘুমিয়ে পড়ো এখন। গুড নাইট।
এই কথা বলে আদনান চলে যায়। আদিবা ঘুমিয়ে পড়ে। খুব সকালে আদিবার ঘুম ভেঙে যায়। আদিবা ফ্রেশ হয়ে আদনানের রান্না ঘর খুঁজতে থাকে। খুজতে খুজতে অবশেষে পেয়ে যায়। আদিবা রান্না করার মতো কোনো কিছুই পাচ্ছে না। হঠাৎ করে আদিবার চোখ পড়ে নুডলস এর উপরে। আর আদিবা সেটাই রান্না করে ফেলে। আর সেটা খাবার টেবিলে গিয়ে রেখে দেয়। একটু পরে রানী বেগম আসে। রানী বেগম রান্না ঘরের দিকে আসতেই দেখে আদিবা টেবিল পরিষ্কার করছে।
— আদিবা তুমি এতো তাড়াতাড়ি উঠে গেলে?
— ঘুম আসছিল না। আর অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। তাই ভোর হলে আর ঘুম আসেনা।
— আচ্ছা আমি গিয়ে নাস্তা তৈরি করে নিয়ে আসি।
— আন্টি রান্না করার মতো কিছু পেলাম না। তাই আমি সবার জন্য নুডলস রান্না করছি।
— তুমি আবার কেন রান্না করতে গেলে?
— বারে, আপনি তো বলছেন নিজের বাসা মনে করে থাকতে? তাহলে আমি কি আনার বাসায় রান্না করতে পারবোনা?
— তোমার সাথে কথা বলে পারবোনা। খেতে আসো।
— আদনান স্যার ঘুম থেকে উঠবে কখন?
— কিছুক্ষণের মধ্যেই।
— আচ্ছা আমি গিয়ে ডেকে তুলে দিয়ে আসি।
— আচ্ছা যাও।
আদিবা এবার আদনানের রুমে চলে যায়। রুমের দরজা খোলা থাকায় আদিবা রুমের ভিতরে প্রবেশ করে। আদিবা রুমের ভিতরে ডুকে দেখে আদনানের রুম টা অগোছালো।
— স্যার! উঠুন। অনেক বেলা হয়ে গিতেছে।
আদিবা কন্ঠ শুনে আদনান চোখ খুলে তাকায়। তারপর সে উঠে ওয়াশরুমের ভিতরে চলে যায়। আর এদিকে আদিবা রুম ঠিক করতে শুরু করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান বেরিয়ে এসে দেখে তার রুমের চেহারা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে।
— আপনি এমন কেন? কতো সুন্দর একটা রুমের কি হাল করে রেখেছেন। জামাকাপড় গুলো আলমারিতে রেখে দিলেই হয়।
— তোমাকে জ্ঞান দিতে হবে না। তোমাকে আমি বলছি আমার রুম ঠিক করতে?
— কোথায় খুশি হবে তা না করে শুধু রাগ দেখায়। হনুমান একটা।
— কি বললে?
— হনুমান।
এই কথা বলে আদিবা একটা দৌড় দিয়ে বেরিয়ে যায়। আদনান নাস্তা করার জন্য খাবার টেবিলে গিয়ে বসে। তারপর সবাই খাওয়া দাওয়া শুরু করে। আদনান খাবার মুখে নিয়েই বলল — আজকে দেখি খাবারের টেস্ট অন্য রকম লাগছে।
রানী বেগম বলল — আজ নুডলস রান্না করছে আদিবা।
— তাই তো বলি খাবার এতো খারাপ কী করে হতে পারে?
আদনানের এই কথা শুনে আদিবার রাগ উঠে যায়। সে দাড়িয়ে সাপের মতো ফোঁসফোঁস করছে।
— আদনান কি বলিস এসব? খাবার তো খুব ভালো হইছে।
— তোমার রুচিতে সমস্যা আছে। নাহলে এই খাবার কে কেউ ভালো বলে? যাইহোক আমি উঠি অফিসে যেতে হবে।
এই কথা বলে আদনান বের হবে এমন সময় আদিবা বলল — স্যার আমি যাবো।
— তোমাকে যেতে হবে না আজ। তুমি বাসায় থেকো। আর হ্যাঁ মাঝেমধ্যে এমন বাজে রান্না করবে।
এই কথা বলে আদনান চলে গেলো। আদিবা প্রথমে রাগ হলেও পরের কথা শুনে আদিবার মুখে হাসি ফুটে উঠে। আদিবা এবার রানী বেগমের কাছে চলে যায়।
— আন্টি আপনার ছেলেটা এমন কেন?
— কি হয়েছে?
— কেমন যেনো অদ্ভুত। কখনও রাগী কখনও আবার নরমাল। আর খুব গম্ভীর। উনি মনে হয় হাসতে পারেনা।
— তেমন কিছু না মা। আসলে,,,,,
হঠাৎ করে দরজার কলিং বেল বেজে ওঠে। রানী বেগম উঠতে যাবে তখনই রানী বেগমকে থামিয়ে দিয়ে আদিবা দরজা খুলতে চলে যায়। আদিবা দরজা খুলে দিয়। সামনে থাকা লোকটাকে খুব পরিচিত মনে হচ্ছে কোথায় যেনো দেখেছে। ঠিক মনে করতে পারছেনা আদিবা।
— তোমার নাম আদিবা?
লোকটার কথা শুনে আদিবা হতবাক হয়ে যায়।
— আপনি আমার নাম কীভাবে জানেন? আর কে আপনি?
— আদিবা কে এসেছে?
এই কথা বলতে বলতে রানী বেগম এগিয়ে এসে দেখে আরিয়ান চৌধুরী এসেছে। রানী বেগমের স্বামী।
— তুমি হঠাৎ কিছু না জানিয়ে চলে আসলে যে?
— ওখানে কাজ শেষ হয়ে গিয়েছে। তাই চলে এলাম। আদনান অফিসে গিয়েছে নাকি?
— হ্যাঁ। যাও তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও।
আরিয়ান চৌধুরী চলে গেলো। আদিবা এসে বলল,
— আন্টি আংকেল নাকি উনি?
— হুম।
— আমার নাম কীভাবে জানেন?
— তোমার কথা বলছিলাম সেই জন্য।
— ওহ আচ্ছা। আংকেল তো এখনও অনেক স্মার্ট আর ইয়াং আছে।
— আমি কি বুড়ি হয়ে গেছি নাকি?
— তা বলিনি। আপনিও অনেক কিউট। আর খুব ভালো।
— হইছে আর বলতে হবেনা। তুমি রুমে যাও আমি রান্না করব এখন।
— আপনাকে রান্না করতে হবেনা। আপনি আংকেল কে সময় দিন। আমি রান্না করছি। কোথায় কি আছে সেটা বলে দিন।
— তোমাকে এতো কষ্ট করতে হবে না। তুমি রেস্ট নাও।
— আমি আজ সবার জন্য রান্না করব। প্লিজ আন্টি।
— ঠিক আছে।
তারপর আদিবা রান্না করতে চলে যায়। রান্না ঘরে গিয়ে সব রেডি করতে থাকে। আচমকা কেউ আদিবার চোখ চেপে ধরে।
চলবে?