গল্পঃ #এলোকেশী_বিচিত্রা_ফুল
কলমেঃ #সুকন্যা_ইশা
#মধ্য_পর্ব
৫.
তীব্র গরমের এক মধ্যরাতে ভীষণ জোরে কেউ দরজায় খটখটানির সৃষ্টি করতেই সাম্রাজ্ঞী সহ তার বাবা মায়ের ঘুমটা ভেঙে গেলো মুহূর্তেই। কী ভীষণ আওয়াজ তা যেন দরজাটা এখনই কেউ ভাঙতে চায়। ভ্রু জোড়া কপালের মাঝখানে টেনে সাম্রাজ্ঞীর বাবা কাঠের দরজার আড়াদুটো নামালেন। ছিটকিনিটা খুলে দিতেই হুড়মুড়িয়ে ঘরের মধ্যে ঢুকে পড়লো এক মধ্যবয়স্ক মহিলা। সাম্রাজ্ঞী তাকে চিনে নিলো সহজেই। তাদের পাড়ার বাড়িতে বাড়িতে টুকটাক কাজ করে সংসার টানেন তিনি।
চিন্তারা সব সাম্রাজ্ঞীর চোখে মুখে ভাসমান। জিজ্ঞেস করলো সে,
“কী হয়েছে শর্মি কাকী?”
“শোন্ না মা। ওই যে তালুকদারদের বড় ছেলেটা এসেছে শহর থেকে? আসার পর থেকেই নাকি ভীষণ… জ্বর। আজ তিনদিন। এই একটু আ…গে একজন ডাক্তার দেখে গেলো। কিছু ওষুধ দিয়েছে। আমাকে ওদের বাড়ির কর্তা ডেকে পাঠিয়েছে। এতো রাতে কোনো দোকান খোলা পেলাম না রে মা। কেউ দরজাটাও খুলছে না বিপদে। আমার সাথে একটু আসবি? তোকে আমি আবার দিয়ে যাবো বাড়িতে।”
হাঁপাতে হাঁপাতে মহিলাটি সব বললেন। সাম্রাজ্ঞী মুহূর্তেই প্রস্তুত হলো। পরনের কুঁচকে থাকা শাড়িটা ভালোভাবে সেঁটে নিয়ে দীর্ঘ চুলগুলোকে এলোমেলো খোঁপায় বেঁধে নিলো সে। বিপদে মানুষের পাশে দাঁড়ানোতে কোনো হেলাফেলা করা উচিত নয়। কিন্তু সাম্রাজ্ঞীর বাবা আটকালেন তাদের। বললেন,
“দাঁড়াও,আমিও যাবো। মেয়েকে একা নিও না।”
সাম্রাজ্ঞী কিছু ওষুধপাতি নিয়ে নিলো সাথে। বাড়িতে তার সবসময় এসব থাকে। তাছাড়া কিছুটা হলেও তার ধারনা আছে রোগের চিকিৎসা এবং ওষুধ সম্পর্কে। অতঃপর,সাম্রাজ্ঞীর বাবার কথামতো তিনি চললেন মেয়ের সাথে। বাড়িতে রইলেন সাম্রাজ্ঞীর মা।
কয়েক মিনিটের পথ পেরিয়ে তালুকদারদের বাড়িতে প্রবেশের সাথে সাথে সাম্রাজ্ঞী শুনতে পেলো একজন মহিলার চাপা আর্তনাদ। চোখে পড়লো,ছেলেকে নিয়ে অকারণ বিলাপে মেতেছেন এক মা। সাম্রাজ্ঞী এগিয়ে যায়। গ্রামের প্রভাবশালী সাহুকার এবং তাঁর মেয়েকে দেখে সকলে একটু সমীহ দেখিয়ে জায়গা করে দিলো। সাম্রাজ্ঞীকে বসতে দেওয়া হলো একটা কাঠের চেয়ারে।
অসুস্থ ব্যক্তির বয়স বেশি নয়। হবে সাতাশ আটাশের ঘরে। চোখজোড়া বন্ধ তার। দেহ একেবারেই অনড়। আর সেই পুরুষের পাশেই বসে কাঁদছেন এক মহিলা। তাঁকে সাম্রাজ্ঞী চেনে। তবে তাঁর ছেলেকে নয়। কারণ, তালুকদারদের ছেলে মেয়েরা শহরে বড় হয়েছে বলে শুনে এসেছে সে।
সাম্রাজ্ঞী একটু কঠোর হয়। ওষ্ঠাধরে বিরক্তি খেলিয়ে বলে,
“একটু থামুন। বেশি কিছু হয়নি। আমাকে ডাক্তারের প্রেসক্রিপশনটা দিন।”
সঙ্গে সঙ্গে মহিলার কান্না থেমে গেলো। আর কেউ একজন সাম্রাজ্ঞীকে একটা কাগজ এনে ধরিয়ে দিলো। সাম্রাজ্ঞী প্রেসক্রিপশনটা পর্যবেক্ষণ করে দেখলো। ঋতু পরিবর্তনের কারণেই এই জ্বর,সর্দি হয়েছে। কঠিন কিছু নয়।
মেয়েটা নিজের ছোট্ট ব্যাগটা থেকে কিছু ওষুধের পাতা বের করলো। পুরুষের গায়ে হাত দিয়ে তাপমাত্রা দেখে নিয়ে আবারো বললো,
“এখন তো জ্বরটা একটু কম আছে। এখানে কিছু বাড়তি ওষুধের নাম লেখা আছে। এসবের দরকার নেই। আপনারা ওনাকে কিছু একটু খাইয়ে দিন। তারপর এই দুটো ওষুধ খাওয়ান। আশা করছি,একদিনেই অসুখ সেরে যাবে।”
সাম্রাজ্ঞীকে গ্রামের সকলেই চেনে। যার কারণে তাকে অবিশ্বাস করতে পারেনি কেউ। তার কথা মতো অসুস্থ পুরুষকে কোনোভাবে তুলে কিছু খাবার খাওয়ানো হলো। তারপর সাম্রাজ্ঞীর দেওয়া ওষুধ দুটো খেতেই লোকটা আবার ঘুমে আচ্ছন্ন হলো। কোনো দিকে ছিলো না তার নজর। আবার হয়তো ছিলো!
সাম্রাজ্ঞীর বাবার সাথে তালুকদার বাড়ির কর্তা বসে কথা বলছেন বাড়ির দাওয়ায়। অপরদিকে সাম্রাজ্ঞী প্রয়োজনীয় সব ওষুধের সময়সূচি বুঝিয়ে দিচ্ছে কোনো এক যুবককে।
তারপর মেয়েটা সেই অসুস্থ ব্যক্তির মাকে বুঝিয়ে শুনিয়ে বাবার সাথে চলে এলো বাড়িতে। তাকে ভীষণ জোরাজুরি করা হলো একটু কিছু খাওয়ার জন্য। কিন্তু মধ্যরাতে এসবের কোনো দরকার নেই বলে সে ফিরে এসেছে।
৬.
রাত্তির কেটে গিয়ে দিনের সূর্য প্রকাশ্যে হাসলো। আকাশ ভীষণ পরিষ্কার। কিন্তু ভ্যাঁপসা গরমের তাড়নায় অসহনীয় সবকিছু। আবহাওয়া খুব উত্তপ্ত। বাতাসেও যেন আগুনের ছোঁয়া।
সাম্রাজ্ঞী তার নিয়মমতো সকালের সকল কাজ সেরে তৈরি হয়ে নিচ্ছিলো তার ফার্মেসিতে বসার জন্য। কিন্তু তা আর পারলো না তার মায়ের জন্য। মেয়েকে তৈরি হতে দেখে সাম্রাজ্ঞীর মা বললেন,
“ও মা,আজকে একটু আমার সাথে কাজে যেতে হবে। পশ্চিম ক্ষেতের সবজিগুলো তুলতে, বাছতে খুব সময় লাগবে। কালকে বুধবার। হাট বসবে। তোর বাবা বলেছে যেন সব সবজিগুলো তুলে রাখি। তো,তুই পুব ক্ষেতের সবজিগুলো বেছে দিলে আমি পশ্চিম দিকে যেতাম।”
সাম্রাজ্ঞী মায়ের কথায় একটু ভাবলো। তার ফার্মেসিতে অবশ্যই লোক আছে কাজ করার মতো। কিন্তু সে দায়িত্ব নিয়ে সবটা সামলাতে চায়। তাই নিজেই সবসময় নিজের চেয়ারে বসার চেষ্টা করে। কিন্তু আজ বোধহয় তা হবে না।
সে তার ফার্মেসির এক সহকর্মীকে মুঠোফোনে জানিয়ে দিলো যেন আজ সবটা তিনি সামলে নেন। অপর ব্যক্তিও সাম্রাজ্ঞীকে আশ্বস্ত করলে মেয়েটা তার মায়ের সাথে তাদের ক্ষেতের দিকে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলো।
কিন্তু বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় তাদের চোখে পড়লো এক ঘটনা। পাশের বাড়ির এক বৃদ্ধ তাঁর পুত্রবধূকে লাঠিসোঁটা দিয়ে মারছেন ইচ্ছে মতো। আর অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ তো করছেনই। বাড়ির দাওয়ায় একটা ছোট্ট ফুটফুটে ছেলে শিশু অবিরত কান্না করছে। অনেক লোক জড়ো হয়েছে সেখানে। কিন্তু সকলেই যেন কোনো এক দুঃখীনির সিনেমা দেখে দুঃখ বিলাসে ব্যস্ত।
সাম্রাজ্ঞী ও সাম্রাজ্ঞীর মা এগিয়ে যায় ভীড় ঠেলে। বাড়িটার উঠোনে আধমরা হয়ে পড়ে থাকা বাড়ির বউটাকে সাম্রাজ্ঞীর মা আগলে নিলেই সাম্রাজ্ঞী গিয়ে দাঁড়ায় সেই বৃদ্ধর সামনে। তীক্ষ্ণ নজর ফেলে জিজ্ঞেস করলো,
“কী কারণে পরের মেয়ের গায়ে হাত তুলেছো?”
“আমার পান্তা ভাত রাখেনি কেন? আমি বলেছিলাম রাতে ভাতে যেন পানি দিয়ে রাখে। সকালে দিলো কেন ছেমড়ি?”
সাম্রাজ্ঞী বৃদ্ধর হাতে থাকা লাঠিটা কেড়ে নিয়ে নিলো। এতে থতমত খেয়ে কয়েক পা পেছালো বৃদ্ধ। সাম্রাজ্ঞী লাঠি উঁচিয়ে বললো,
“গতরে মাংস তো দেখছি না। হাড় যা আছে ভেঙে টুকরো টুকরো করে কুকুরকে চিবোতে দেবো। কোন অধিকারে পরের মেয়ের গায়ে হাত তুলেছো তুমি?”
মেয়েলি গর্জনে মুহূর্তেই পরিবেশটা নীরব হয়ে গেলো। বৃদ্ধ রাগ দেখালো। দাঁত কিড়মিড় করে বললো,
“এই বেটি! তোর সাহুকার বাপকে আমি ভয় করি না। বড় বড় কথা বলবি না আমার উঠোনে দাঁড়িয়ে। সর্।”
সাম্রাজ্ঞী রাগ নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলো এবার। সজোরে বৃদ্ধর পায়ে দিলো এক আঘাত। আর্তনাদে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো বৃদ্ধ। বাড়ির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা বৃদ্ধর মেয়েটা দৌড়ে আসতেই সাম্রাজ্ঞী মেয়েটার চুলের মুঠি আঁকড়ে ধরে বললো,
“এই মেয়েটাকে বলতে পারোনি তোমার পান্তা তৈরি করে রাখতে? বলো নি কেন? তোমার মেয়ের গায়ে হাত তুলেছি আমি। এখন কেমন লাগছে তোমার?”
অদূর থেকে এক বৃদ্ধার কান্নার আওয়াজ আসতেই সাম্রাজ্ঞী চিৎকার করে বললো,
“একদম চুপ! বুড়ো বুড়ি দুটোকে এখানে শুইয়ে রেখে যাবো একদম। কত্ত বড় সাহস এদের,পরের মেয়ের গায়ে হাত দেয়! তাও আবার পান্তার জন্য? এই,একদিন ভাত না গিললে মরে যায় মানুষ?”
সাম্রাজ্ঞী শেষ কথা বলার সাথে সাথে লাঠি ফেলে দেয়। ছেড়ে দেয় বৃদ্ধর মেয়েকে। মুখে কুলুপ এঁটে বসে রইলো বৃদ্ধা। সাম্রাজ্ঞীর ভয়ে ভীষণ কাঁপছেন তিনি।
সাম্রাজ্ঞী তার মায়ের কাছে যায়, যে মা অতি বিষ্ময় নিয়ে নিজের মেয়ের নতুন রূপকে দেখছিলেন। সাম্রাজ্ঞী ওই বাড়ির পুত্রবধূকে দাঁড় করিয়ে বাড়ির দাওয়ায় বসালো। জিজ্ঞেস করলো তার স্বামী কোথায়। জবাবে শুনলো,বাড়ির ছেলে শহরে কাজ করে। মাসে একবার আসে গ্রামে।
মেয়েটা সবাইকে বাড়ির আঙিনা থেকে চলে যাওয়ার আদেশ দিলো। হ্যাঁ,আদেশই দিয়েছে সে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তামাশা দেখছিলো কি-না সবাই!
সাম্রাজ্ঞী সেই বৃদ্ধ,বৃদ্ধা আর তাঁদের মেয়েটাকে বলে সতর্ক করে,
“আমি যদি শুনেছি আর একবার তোমরা এই মেয়ের গায়ে হাত তুলেছো কারণে অকারণে,এই বাড়িতে পুলিশ আসবে। তোমাদের গায়ে আমি জেলের হাওয়া লাগাবো। আমাকে নিশ্চয় চেনো? আমি মহানপুরের প্রভাবশালী সাহুকারের মতো অন্যের কথায় পিছপা হবো না। সরাসরি কাজ করে দেখাবো।”
সাম্রাজ্ঞীর হুমকিতে সত্যিই ভয় পেয়েছে সেই বৃদ্ধর পরিবার। একবিংশ শতাব্দীতেও এসে যদি কেউ রুখে দাঁড়াতে না পারে,তবে সমাজের বিকৃত মানসিকতার মানুষগুলো বারে বারে জন্ম নেবে।
সাম্রাজ্ঞী সেখান থেকে তার মাকে নিয়ে চলে যায় তারপর। পরিকল্পনা অনুযায়ী,তার মা যায় পশ্চিম ক্ষেতের দিকে। আর সে কাজ করতে থাকে পুর্ব দিকের ক্ষেতে।
৭.
বিকেলের সোনা রোদ গায়ে মেখে সবে একটু জিরোতে বসলো মেয়েটা। খানিক আগেই দুপুরের ভাত খাইয়ে দিয়েছে তার মা। তারপর তিনি এক ঝুড়ি সবজি নিয়ে বাড়িতে গেছেন সেগুলো রাখতে। সাম্রাজ্ঞী বাকিগুলো নিয়ে ফিরবে। বিকেলের দিকটায় আবহাওয়ায় কেন যেন একটু শীতল বোধ হচ্ছে। বেশ মৃদু বাতাসে আরাম লাগছে মেয়েটার। তাই সে তার শাড়ির আঁচলখানা ছড়িয়ে দিয়ে, দীর্ঘ চুলগুলো মেলে দিয়ে বসেছে। হাতে আছে কিছু মাধবীলতা। একটা মুকুট বানাবে বলে ফুলগুলো তুলে নিয়েছে সে।
“একটু বসতে পারি কি?”
পুরুষালী কোনো কন্ঠে সাম্রাজ্ঞী মাথা উঁচিয়ে তাকায়। রাতের দেখা সেই অসুস্থ পুরুষকে পুরোপুরি সুস্থ রূপে স্বয়ং দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনেকটা অবাকই হলো বটে! মুহূর্তের ব্যবধানে মেয়েটা শুকনো কন্ঠে জবাব দেয়,
“হ্যাঁ বসুন।”
ছেলেটা তার ট্রাওজার টেনে বসলো। ধন্যবাদ জানালো সাম্রাজ্ঞীকে। সুমিষ্ট গন্ধ নাকে ঠেকলো সাম্রাজ্ঞীর। কিছুক্ষণ মৌনতা পালন করে তারপর সেই মানুষটা বললো,
“আমাকে এক রাতেই সুস্থ করার কোনো বিশেষ পথ অবলম্বন করেছেন নাকি?”
“বিশেষ পথ বলতে বিদ্যাকেই কাজে লাগিয়েছি। এর বাইরে আর কী!”
“ওহ্।”
পুরুষালী কন্ঠ থেমে রইলো তারপর। সে সাম্রাজ্ঞীর চেয়ে একটু পিছিয়ে বসেছে। নজর বরাবর আঁটকে তার সাম্রাজ্ঞীর দীর্ঘ চুলে।
সাম্রাজ্ঞী তার কাজ থামায়নি। সে মাধবীলতার মুকুট তৈরি করছে নিপুণ হাতে। তবে মাঝে বলে উঠলো,
“শুনেছি,আপনি শহরে বড় হয়েছেন?”
“হুম। মামার বাসায় থেকে পড়াশোনা করেছি। কখনো গ্রামে দেখেননি আমাকে?”
অজানা পুরুষের আকষ্মিক আপনি সম্বোধন কেন যেন সাম্রাজ্ঞীর মনে ধরে গেলো। সে শৈশব থেকেই ভেবে এসেছে, শহুরে মানুষ মানেই অত্যাধুনিক। তাদের কথাবার্তায় একধরনের অহং ভাব থাকে।
“না তো। কখনোই দেখিনি।”
“বারকয়েক এসেছিলাম গ্রামে। তবে খুব কম।”
“হুম।”
সাম্রাজ্ঞীর শেষ জবাবের পরে আরো কিছু সময় মৌনতায় ভেসে গেলো। সাম্রাজ্ঞীর মুকুট তৈরি শেষ। এবার মাথায় পরার পালা। তবে সে পরলো না। মুকুটটা এক পাশে রেখে পাশ ফিরে চেয়ে দেখলো সেই পুরুষটার দিকে যার কোমল নজর এখনো নিবদ্ধ সাম্রাজ্ঞীর চুলে। হঠাৎই সে বললো,
“আপনার গরম লাগছে না?”
“কেন?”
চটপটে জবাব দিলো মেয়েটা। ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো ছেলেটার দিকে।
“এতো গরমে এই লম্বা চুলগুলো এভাবে ছড়িয়ে দিয়ে বসে আছেন যে?”
সাম্রাজ্ঞী হাসলো মৃদু স্বরে। বললো,
“না। আমার অভ্যাস আছে।”
পুরুষ মানুষটা হঠাৎ সোজা হয়ে বসলো। সাম্রাজ্ঞীর মুখের দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলো সে। এতে খুব অস্বস্তি বোধ হলো মেয়েটার। সে সরাসরি বললো,
“এমন আচরণ আশা করিনি।”
“সরি। খারাপ আচরণ দেখানো আমার উদ্দেশ্য ছিলো না।”
সাম্রাজ্ঞী উঠে যেতে চাইলো। কিন্তু পারলো না।
“শুনুন। বসুন একটু। আমার আচরণের জন্য ক্ষমা চাইছি তো।”
“তেমনটা নয়। আমাকে বাড়ি ফিরতে হবে। সন্ধ্যা নামবে একটু পরেই।”
“জানি। তবুও যদি অনুরোধটা রাখতেন! একটু বসুন।”
সাম্রাজ্ঞী পুরুষালী অনুরোধী সুরের অবাধ্য হলো না। জোরাজুরি করলো না আর। বসলো শান্ত মেয়ের মতো। লম্বা চুলগুলোকে হাত খোঁপায় বাঁধতে গেলেই শুনলো,
“উহুম, বাঁধবেন না। থাকুক না তারা স্বাধীন। ভালো লাগছে।”
সাম্রাজ্ঞীর হাত কেন যেন থামলো। সে বাঁধলো না চুলগুলো। গায়ের তোতা রঙের শাড়িটায় অস্তগামী সূর্যের আভা পড়ে কী ভীষণ সুন্দর দেখাচ্ছে! সাথে দীঘল কালো তার চুল আর মলিন হলুদাভ আনন। আর এই সৌন্দর্য উপভোগ করছে সেই অজানা ব্যক্তি। আর কেউ নয়!
“একাকীত্ব কেমন লাগে আপনার?”
নাম না জানা পুরুষের হঠাৎ এমন প্রশ্নে যেন একটু বেশিই অবাক হলো সাম্রাজ্ঞী। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
“হঠাৎ এই প্রশ্ন?”
#চলবে…