এলো প্রেমের মৌসুম পর্ব-০২

0
2

#এলো_প্রেমের_মৌসুম
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ০২

ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে গেলো মেঘ কিছু জিনিস নোট করার জন্য, সামনেই পরীক্ষা। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো থাকলেও এখন মানসিকভাবে ভীষণ দুর্বল বোধ করছে মেয়েটা। গতরাতে ঘুমাতে পারেনি মেঘ, সারারাত জেগে ভেবেছে এই মুহূর্তে কি করা উচিত। এতগুলো টাকা ফেরত দেওয়ার কোনো উপায় নেই, এছাড়া অতিরিক্ত চিন্তাভাবনার দরুন বাবার কোনো একটা ক্ষতিও হয়ে যেতে পারে কারণ টাকার চিন্তাকেই বড় চিন্তা বলে। ওর ছোটবোন মাইশা উচ্চ মাধ্যমিকে অধ্যয়নরত, মেঘকে পালক আনার কয়েক বছর পর মাইশার জন্ম হয়। মাইশাই জামাল সাহেবের আপন সন্তান, আজ জামাল সাহেব এই লোনের জন্যে পথে বসে গেলে ওর ভবিষ্যৎ এক প্রকার অন্ধকার হয়ে যাবে। অনেকক্ষণ ধরে বিষয়গুলো নিয়ে ভাবলো মেঘ, শেষে সকল পরিস্থিতি বিবেচনা করে ঠিক করলো বিয়েটা ও করবে। নিজের পালক মা বাবার কাছে এমনিতেই ও ঋণী, এই বিয়েটা করে কিছুটা হলেও যদি ওনাদের সাহায্য করা যায় তাহলে তাই করবে। কয়েকদিন পরে…ক্লাস শেষে লাইব্রেরিতে গেলো মেঘ কিছু জিনিস নোট করার জন্য, সামনেই পরীক্ষা। প্রস্তুতি মোটামুটি ভালো থাকলেও এখন মানসিকভাবে ভীষণ দুর্বল বোধ করছে মেয়েটা। এ সপ্তাহেই সেমিস্টার ফি জমা দেওয়ার লাস্ট ডেট, কিন্তু এবার বাবার কাছে টাকা চাইতে পারেনি মেঘ। পরে ঠিক করলো নিজের কাছে জমানো যে ক্যাশ আছে সেটাই এবারের ফি হিসেবে দিয়ে দেবে। লাইব্রেরীতে এসে প্রয়োজনীয় বইগুলো খুঁজে নিয়ে বসলো মেঘ, এরপর নিজের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। কিছুক্ষন পর একটা বই হাতে নিয়ে আরিশ এসে বসলো ওর সামনে, মেঘ কিছুটা অবাক হলো বটে কারণ এই তিন বছরে টুকটাক প্রয়োজন ব্যতীত আরিশের সঙ্গে ওর কখনও কথা হয়নি আর আরিশও ওকে পাত্তা দেয়নি। আরিশ এদিক ওদিক একবার চোখ বুলিয়ে মেঘকে প্রশ্ন করলো…

‘বিয়ে নিয়ে কি সিদ্ধান্ত নিলে?’

আরিশের এভাবে যেচে কথা বলতে আসার কারণটা এবার বুঝলো মেঘ, ও আবারও বই থেকে বের করে টপিকগুলো খাতায় লিখতে লিখতে উত্তর দিলো…

‘তোমার কি সিদ্ধান্ত? মনে তো হচ্ছে বিয়েতে তোমার বেশ আপত্তি আছে’

‘আপত্তি থাকাটাই কি স্বাভাবিক নয়?শোনো, আমার এখন বিয়ে করার ইচ্ছে নেই আর তুমিও নিশ্চয়ই গ্র্যাজুয়েশন শেষ করার আগে বিয়ে করতে চাইবে না রাইট? তুমি এই বিয়েতে না করে দিও, বাকিটা আমি সামলে নেবো ‘

‘আমি কেনো না করবো?’

‘কারণ আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাইনা’

‘ সেটা তোমার সমস্যা, আমার নয়। তুমি গিয়ে নিজের বাবার সঙ্গে কথা বলো। উনি যদি বিয়েটা ভেঙে দেন তাহলে আমার আপত্তি নেই’

‘ তোমার কি মনে হয় আমি বাবার সঙ্গে কথা বলিনি? ওনাকে যদি বোঝাতেই পারতাম তাহলে আর তোমার কাছে কেনো আসতাম? আই ডোন্ট নো ওনার মাথায় হঠাৎ আমাকে বিয়ে করানোর ভুত কিভাবে চাপলো তাও আবার তোমার সঙ্গে!’

উত্তর দিলো না মেঘ, লিখা থামিয়ে চুপচাপ আরিশের কথাগুলো শুনে যাচ্ছে। অবশ্য আরিশের জায়গায় অন্য কেউ থাকলেও হয়তো এমনি করতো, এভাবে হুট করে কেউই বিয়ে করতে চাইবে না!

‘আমাকে বিয়ে করতে যদি এতোই আপত্তি থাকে তবে আরো ভালোভাবে নিজের বাবার সঙ্গে কথা বলো, কারণ আমার বাবাকে বিয়ের প্রস্তাব কিন্তু উনিই দিয়েছিলেন’

‘আই নো, কিন্তু আমার বাবা জেদী। বাবার জায়গায় আম্মু হলে তো কবেই মানিয়ে নিতাম কিন্তু বাবাকে না আমি বোঝাতে পারছি আর না আমার মা। এখন একমাত্র তুমিই অপশন আছো’

মেঘ বুঝলো আরিশকেও ওর বাবা চাপ দিচ্ছে এই বিয়ের জন্যে, মেঘ ভেবেছিলো আরিশ কোনোভাবে বিয়েটা না করার একটা উপায় বের করে ফেলবে উল্টে ও নিজেই বিয়ে ভাঙার জন্যে সাহায্য চাইতে এসেছে দেখে হতাশ হলো মেঘ!

‘ আমি আমার বাবার কথায় কখনও দ্বিমত পোষণ করিনি, আমি এই নিয়ে কিছু বলতে পারবো না’

‘ কাম অন মেঘনা। এটা বাবার বাধ্য মেয়ে হয়ে থাকার সময় না, তার সুযোগ সুযোগ তুমি আরো পাবে কিন্তু এখন তুমি একটু মুখ খুললেই আমরা দুজনেই এই ঝামেলা থেকে বেঁচে যাবো। আমাদের দুজনের অমত দেখলেই বিয়ে ভেঙে যাবে’

‘ ভুল ভাবছো তুমি, এমন কিছুই হবেনা’

‘ ট্রাই না করেই কিভাবে রেজাল্ট কাউন্ট করছো? আগে ট্রাই করে তো দেখি। আমরা মাত্র থার্ড ইয়ারে পড়ি, আমাদের এখনো বিয়ের বয়স হয়নি!’

‘ মেয়েদের জন্যে তেইশ বছর বিয়ের জন্য উপযুক্ত বয়স’

‘ সো হোয়াট! আই অ্যাম জাস্ট টুয়েন্টি ফোর, আমি এখনো একটা বাচ্চা ছেলে!’

আরিশের কথা শুনে যেনো তাজ্জব বনে গেলো মেঘনা, বিস্মিত কন্ঠে প্রশ্ন করলো…

‘ চব্বিশ বছরের ছেলে বাচ্চা হয়?’

‘ তাহলে কি? বুড়ো?’

‘ দেখো আরিশ, আমি যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার নিয়েছি আর এখন এই নিয়ে আমার আর কিছু বলার নেই। এই বিয়েটা আমি করবো’

‘ ওয়ান মিনিট, তারমানে তুমি অলরেডি বিয়ে করবে বলে ঠিক করে ফেলেছো? যার সঙ্গে তোমার বিয়েটা হচ্ছে তার কি মতামত সেটা জানার বা তার সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে হলো না তোমার?’

‘ এই বিয়ে ঠিক করার আগে কেউ কিন্তু আমাদের মতামত জানতে চায়নি আর না আমাকে কিছু বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এই বিয়েতে রাজি হওয়া ছাড়া আমার আর কোনো উপায় নেই’

‘কেনো উপায় নেই?’

ওদের বিয়েটা কেনো হচ্ছে তা মেঘ জানলেও আরিশ জানেনা, মেঘ নিজে থেকে কিছু জানাতেও চায়না…

‘ বিয়েটা আমাদের বাড়ি থেকে ঠিক করা হয়েছে আর এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। অবশ্য আমার আপত্তি থাকলেও বা কি, বিয়ে করা ছাড়া উপায়ও নেই’

মেঘের কথায় স্পষ্ট যে বিয়েতে ওর কোনো আপত্তি নেই, বিষয়টা বুঝে ভীষণ বিরক্ত হলো আরিশ!

‘ সত্যিই উপায় নেই নাকি বড়লোক বাড়ির বউ হওয়ার সুযোগটা হাতছাড়া করতে চাইছো না?’

আরিশের কথাটা শোনামাত্রই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো মেঘের!

‘ আরিশ! আমাকে এভাবে অপমান করার অধিকার তোমার নেই’

‘ উপসস! ইনসাল্ট ফিল করলে নাকি? কিন্তু এটাই তো সত্যি, তুমি সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইছো না নাহলে তোমার আর আমার কোনো ম্যাচ নেই জেনেও বিয়েতে রাজি হতে না’

‘ কি জানো তুমি আমার সম্পর্কে? আমার সম্পর্কে কিছু না জেনেই এভাবে আমায় জাজ করছো কেনো?’

‘ আমার আর কিছু জানা বোঝার দরকার নেই, যা বোঝার বুঝেছি। ভেবেছিলাম তোমার সঙ্গে কথা বললে হয়তো এই বিয়ে এড়ানোর একটা উপায় পাওয়া যাবে বাট আই ওয়াজ রং! তুমি নিজেই তো আমার বউ হওয়ার জন্যে রেডি হয়ে আছো। ওয়াও!!’

কথাগুলো আরিশ একটু উঁচু গলাতেই বলেছে, মেঘ লক্ষ্য করলো লাইব্রেরীতে অবস্থানরত সকলে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘ এবার নীচু স্বরে বললো…

‘ এটা লাইব্রেরি, আর এখানে আমি চাইনা কোনো সিনক্রিয়েট হোক।তোমাকে আমার সিদ্ধান্ত জানিয়েছি, এরপরও তোমার কিছু বলার থাকলে পরে বলো নাহলে…’

‘ আই হ্যাভ নাথিং টু সে, কারণ তোমাকে বলেও লাভ নেই। একজন মিডল ক্লাস ফ্যমিলির মেয়ের থেকে এর বেশিকিছু আশাই করি না’

সশব্দে পা দিয়ে চেয়ার পেছন দিতে ধাক্কা দিয়ে উঠে দাঁড়ালো আরিশ, সকলে এবার আরো আগ্রহ নিয়ে ওদের দেখছে। আশেপাশে সবাইকে এভাবে তাকাতে দেখে অস্বস্তি হচ্ছে মেঘের…

‘ আরিশ, স্টপ ইট!’

‘ নো, আই উইল নট! ভালোভাবে তোমাকে বোঝালাম, রিকোয়েস্ট করলাম শুনলেনা। ইউ নো হোয়াট? আমি কখনো কারো সঙ্গে এতোটা সময় নিয়ে কিছু আলোচনা করিনি যতোটা তোমার সঙ্গে করলাম, কিন্তু তুমি দাম দিলে না!’

আরিশের ক্রোধ ও বিরক্তি মিশ্রিত কথাবার্তায় এটা মেঘ স্পষ্ট বুঝলো যে এখানে আরো কিছুক্ষণ অবস্থান করলে আরিশ আরো উল্টোপাল্টা কথা শোনাবে আর তা শোনার ইচ্ছে নেই মেঘের। যেটুকু শুনিয়েছে তা শুনেই কষ্ট হচ্ছে! মেঘ বইখাতা গুছিয়ে উঠে যাওয়ার পথে বাঁধা দিলো আরিশ! মেঘ পাত্তা না দিয়ে অন্য পাশ দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করতেই ওর হাত চেপে ধরলো আরিশ, ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো মেঘ!

‘ একটা কথা মাথায় রেখো, আমাকে যদি তুমি বিয়ে করো তাহলেও তুমি আমার কাছে ইনভিজিবল হয়ে থাকবে। ইউ আর নট কোয়ালিফাইড টু বি মাই ওয়াইফ, মাইন্ড ইট!’

কথাগুলো বলেই হাত ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো আরিশ, মেঘ দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবারও চেয়ার টেনে বসলো। আরিশকে বিয়ে করলে ভবিষ্যৎ ঠিক কেমন হতে পারে তা ভেবে নিজের জন্যে নিজেরই করুণা হচ্ছে মেঘের!
_________________________________

ক্লাব হাউজে বসে আছে আরিশ, সঙ্গে আছে ওর দুই বন্ধু অয়ন ও সুহানা। ওরা তিনজন সেই স্কুল জীবনের বন্ধু, এখনও একসঙ্গেই আছে। ক্লাব হাউজটা মূলত ওদের আড্ডার জায়গা, ওরা তিনজন মিলে টাকা দিয়ে এই ছোটো মতো এক তলার বিল্ডিংটা কিনেছে। ভেতরে দুটো রুম আছে, আর মাঝে বড় একটা ড্রইং রুম। এটি মূলত ওদের তিনজনের গ্রুপ স্টাডি ও আড্ডা দেওয়ার জায়গা। আরিশ ভার্সিটি থেকে ফিরেই এখানে এসেছে, ওর সঙ্গে ওর বন্ধুরাও এসেছে। রাত হয়ে গেছে কিন্তু আরিশের এখান থেকে বেরোনোর কোনো নামগন্ধ নেই দেখে সুহানা প্রশ্ন করলো…

‘ কীরে আরিশ, রাত আটটা বেজে গেলো এখনো তুই বাড়ি যাওয়ার কথা বলছিস না যে? বাসায় যেতে হবে তো চল!’

‘ আমি বাড়ি যাবো না, তোরা যা’

‘ মানে! রাতে এখানে থাকবি নাকি?’

‘ তো? আমি এখানে থাকলে কার কি সমস্যা?’

‘ কারো সমস্যা নেই, কিন্তু তুই এখানে কেনো থাকবি? বাসায় কিছু হয়েছে? আঙ্কেল কিছু বলেছে আবার?’

দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফ্লোরের উপর সটানে শুয়ে পড়লো আরিশ, এই দুই বন্ধুর কাছে কখনো কোনো কথা গোপন করেনি ও। বিয়ের কথাটাও ওরা দুজনেই জানে

‘ জানিস তো কি ঝামেলায় পড়েছি, বাড়ি ফিরলে বাবা এগুলো নিয়েই কথা তুলবে। আমার শোবার ইচ্ছা নেই’

‘তো এভাবে কয়দিন বাড়ির বাইরে থাকবি?’

‘ আরিশ, আমার মনে হয় তুই ওভার রিয়েক্ট করছিস। বিয়ে তো একদিন না একদিন করতেই হবে, তুই না হয় একটু আগেই করছিস তাতে ক্ষতি কি?’

‘ আমার মত পরিস্থিতিতে পড়লে আর এই কথা বলতে পারতি না তুই, বুঝলি অয়ন? আমার এখন বিয়ের ইচ্ছা নেই, তাছাড়া ওই মেঘনা..ওর সঙ্গে কোনোদিন আমার আন্ডারস্ট্যান্ডিং হবেনা এ বিষয়ে আমি নিশ্চিত। মধ্যে থেকে আমার শান্তিময় জীবনটা শেষ হয়ে যাবে’

‘ আহা, তুই এতো চাপ কেনো নিচ্ছিস? তুই নিজেই বলছিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং হবেনা তাহলে চিন্তার কি আছে? বিয়ের কিছুদিন পর যখন এই নিয়ে তোদের ঝামেলা হবে তখন সুযোগ বুঝে এই কদম দেখিয়ে তুই ডিভোর্স চাইতে পারবি। স্বামী – স্ত্রীর মধ্যে আন্ডারস্ট্যান্ডিং না হলে সংসার করা অসম্ভব!’

সুহানার কথা শুনে কিছুক্ষণ ভাবলো আরিশ, বুদ্ধিটা মন্দ না! এরকম হলে বাবার কথার অবাধ্যও হওয়া হবেনা আর কিছুদিন গেলে মেঘনাকে ছেড়েও দিতে পারবে। বিষয়টা নিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে একটু আলাপ করলো আরিশ, সুহানা যদিও এই বুদ্ধিটা দিয়েছে কিন্তু অয়ন কিছুটা দ্বিমত পোষন করেছিলো। আরিশ এক বিয়ে না করার জন্যে জেদ করে বাবার সঙ্গে এমনিতেই সম্পর্ক অনেক খারাপ করে ফেলেছে, সেটা আর বাড়াতে চায়না আবার নিজের লাইফ স্টাইল চেঞ্জ করারও ইচ্ছে নেই ওর। শেষমেশ অনেক ভেবে ও ঠিক করলো বিয়েটা করবে, কিন্তু মেঘনাকে এই বাড়িতে বেশিদিন টিকতে দেবে না! কিছুক্ষণ পর বন্ধুদের বিদায় দিয়ে ক্লাব হাউজ থেকে বাড়ি ফিরতেই আনিশা এসে দরজা খুললো, আনিশা আরিশের ছোটো বোন। কয়েকদিনের জন্যে মামাবাড়ি গেছিলো, আজকেই ফিরেছে। বোনকে দেখে জুতা খুলতে খুলতে আরিশ প্রশ্ন করলো…

‘ মামাবাড়ির ট্যুর শেষ হয়ে গেছে?’

‘ হু ! তোকে বললাম গেলি না! জানিস ওখানে কতো মজা হয়েছে? অনেককিছু মিস করেছিস তুই ভাইয়া’

‘ হ্যাঁ, আমি তো তোর মতো ফাঁকিবাজ নই যে পড়া থেকে বাঁচতে আম্মুর আঁচল ধরে মামা বাড়ি চলে যাবো’

‘ মানুষ এতো প্রশংসা করে তাতে তোর পেট ভরেনা? এখন আবার নিজেই নিজের প্রশংসা করতে শুরু করেছিস? যাই হোক, তোকে কতগুলো ফোন করেছি দেখেছিস?’

আরিশ ফোন বের করে দেখলো ৬ টা মিসড কল, ফোন সাইলেন্ট থাকায় টের পায়নি…

‘ এতো ফোন করার কারণ কি?’

শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে আনিশা বললো..

‘ বাবার ঘরে গেলেই বুঝবি, তোর উড়নচণ্ডী জীবনের কুরবানী করার ঝাক্কাস প্ল্যানিং চলছে’

‘কী ফা’লতু বকছিস?’

‘ উফফ! তুই না কিছুই বুঝিস না। দুদিন পর তোর বিয়ে না? আর বিয়ের পর তো ছেলেদের স্বাধীনতা এমনিতেই শেষ হয়ে যায়। সেটাই বললাম!’

সঙ্গে সঙ্গে আনিশার কান মলে ধরলো আরিশ!

‘ শ’য়তা’ন মেয়ে, তোকে আগে বিয়ে দিয়ে এখান থেকে বিদায় করা উচিত’

‘ আম্মুউউ! দেখো তোমার গুণধর ছেলে কিভাবে আমাকে মা’রছে! বাঁচাও আমাকে’

মেয়ের চিৎকার শুনে এগিয়ে এলেন আরিশের মা রেহানা বেগম! বয়সে সাত বছর পার্থক্য হওয়া সত্বেও তার ছেলেমেয়ে দুটো এখনো ইদুর বেড়ালের মতো ঝগড়া করে! মাকে দেখে আনিশার কান ছেড়ে দেয় আরিশ, আনিশা ততক্ষণে দৌঁড়ে পালিয়েছে। এসব কান্ড দেখে রেহানা বেগম ছেলের কাছে এসে বললেন…

‘ আচ্ছা তোরা কি করিস এসব? এখন কি তোদের এসব করার বয়স আছে? আরিশ তুই কি এখনো ছেলেমানুষ হ্যাঁ?’

‘ আমাকে কেনো বলছো আম্মু? তোমার মেয়ে আগে ঝামেলা শুরু করেছে’

‘ আচ্ছা, এসব ছাড় এখন। ফ্রেশ হয়ে আমাদের ঘরে আসিস, তোর বাবা কিছু কথা বলবে’

‘ বিয়ে নিয়ে তাইতো’

‘ হ্যা, আমি তোর বাবাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করেছি আরিশ কিন্তু তুই তো জানিস উনি কেমন জেদী মানুষ। যা বলবেন সেটা না করা অব্দি শান্ত হবেন না’

‘ ইটস ওকে আম্মু, তোমার আর আব্বুকে কিছু বলতে হবে না। উনি যেটা বলছেন সেটাই হবে’
_____________________________________

বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক করা হয়ে গেছে, জামাল সাহেবের কাছে কিছু ক্যাশ আছে। সেগুলো দিয়ে মেয়ের জন্যে হালকা কিছু গয়নার ব্যবস্থা করতে চাইছেন, স্ত্রীর সঙ্গে এই বিষয়ে আলাপ করছিলেন। মেঘ ওনাদের সামনেই বসা, তাদের আলোচনার এক ফাঁকে মেঘ বললো…

‘ আব্বু, আরেকবার ভেবে দেখলে হয় না? কোনোভাবে যদি এই বিয়েটা…’

পুরো কথা শেষ করতে পারলো না মেঘ, তার আগেই ওর মা ইশারায় চুপ করতে বললো। জামাল সাহেব এ মুহূর্তে খোশমেজাজে আছেন, এ মুহূর্তে মেঘ বিয়ে ভাঙ্গা সম্পর্কে কিছু বললে আবারো অশান্তি হবে! মায়ের ইশারা বুঝে মেঘ আর কিছু বলতে পারলো না, ওদিকে ছেলের সঙ্গে কথা বলতে বসেছিলেন আফজাল সাহেব কিন্তু ছেলে তার বিয়ের জন্যে নতুন শর্ত জুড়ে দেয়…

‘ এসব কি বলছিস তুই আরিশ, অনুষ্ঠান ছাড়া বিয়ে করবি? এটা হয় নাকি? আমাদের এতো আত্মীয় স্বজন আছে’

‘ বাবা, তুমি আমাকে বিয়ে করতে বলেছো আমি করবো কিন্তু ঢাক ঢোল পি’টি’য়ে বিয়ে করার ইচ্ছে আমার নেই। অনুষ্ঠান ব্যতীত ঘরোয়াভাবে যদি বিয়ের আয়োজন করতে পারো তাহলে আমি বিয়েটা করবো নাহলে নয়’

‘ এটা আবার কেমন হবে? ওনারা কি না কি মনে করবেন! একটা অনুষ্ঠান তো করা দরকার’

‘ সরি বাবা, কে কি মনে করলো সেটা আমার ভাবার বিষয় না। বিয়ে আমি অনুষ্ঠান ব্যতীত করবো, এতে যদি তোমার আপত্তি না থাকে আমার বিয়ে করতে সমস্যা নেই’

কোথায় ছেলের সঙ্গে বিয়ের ভ্যেনু নিয়ে আলাপ করার কথা ভাবছিলেন আফজাল সাহেব, এদিকে ছেলে তার অনুষ্ঠান ছাড়া বিয়ে করতে চাইছে। আফজাল সাহেব বিষয়টা নিয়ে ভাবলেন। আরিশ বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এটাই অনেক, অনুষ্ঠান চাইলে পরে সুযোগ বুঝে করা যাবে। পরবর্তীতে ঘরোয়াভাবেই বিয়ের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো!

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]