এলো প্রেমের মৌসুম পর্ব-২৪

0
2

#এলো_প্রেমের_মৌসুম
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ২৪

মেঘ অবাক চোখে চেয়ে দেখছে ছেলেটাকে, যে ছেলেটা বলেছিলো কোনোদিন ভালোবাসবে না আজ সে নিজেই ভালোবাসার কথা প্রকাশ করছে? এ যেনো স্বপ্ন মনে হচ্ছে মেঘের। স্থির দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আরিশ, মেঘের উত্তর শোনার অপেক্ষায়… আরিশের আকস্মিক এই প্রেম নিবেদনের জন্যে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না মেয়েটা, বিধায় জবাব দিতে গিয়ে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে। ওর উত্তর না পেয়ে আরিশ আবারো প্রশ্ন করলো…

‘ ভালোবাসো না আমায়?’

মেঘ এবার আরিশের চোখে চোখ রেখে বললো..

‘ আই লাভ ইউ টু আরিশ!’

মেঘের উত্তর শুনে যেনো ভীষণ স্বস্তি লাগলো আরিশের, লম্বা একটা নিঃশ্বাস ফেলে উঠে সরে আসতে যাচ্ছিলো ও তখনই মেঘ দু হাতে ওর টি শার্টের কলার টেনে ধরে আরিশের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় মেঘ। সম্পর্কটাকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নেওয়ার জন্যে মেয়েটা প্রস্তুত দেখে আরিশ আর নিজেকে আটকালো না। স্বযত্নে, ভালোবাসে মেঘকে আঁকড়ে নিলো নিজের সঙ্গে…
____________________________________

সকলের কড়া রোদ মুখের ওপর পড়তেই বিরক্ত হলো আরিশ, চোখ পিটপিট করে খুলে দেখলো মেঘনা পর্দা সরিয়ে দিচ্ছে। অন্যপাশে ঘুরে ঘুম জড়ানো কণ্ঠে আরিশ বললো…

‘ মেঘনা, এখনই পর্দা সরাচ্ছো কেনো!’

‘ সাড়ে আটটা বেজে গেছে আরিশ, জলদি ওঠো ঘুম থেকে ‘

‘ আমি আজ ভার্সিটি যাবো না ‘

‘ মানে কি! আজকে একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস আছে ভুলে গেলে? দ্রুত ওঠো, এমনিতেই অনেক দেরি হয়ে গেছে ‘

‘ তাতে কি? তুমি যাও, নোট করে নিয়ে এসো ‘

‘ আরিশ! আর আলসেমি করো না তো। ওঠো!’

‘ মেঘনা প্লিজ! রাতে আমার ঘুম হয়নি, মাথা ব্যথা করছে। এখন একটু ঘুমাতে দাও ‘

আরিশের কথা শুনেই গত রাতের কথা মনে পড়তেই মুচকি হাসলো মেঘ, গত রাতটা ছিলো ওর জীবনের সবচেয়ে সুন্দর একটা রাত! মেঘ এসে আরিশের পাশে বসে বললো…

‘ এমনভাবে বলছো যেনো শুধু তোমার একারই ঘুম হয়নি? আমি খুব ঘুমিয়েছি!’

‘ মিথ্যে বলো না মেঘনা, তুমি বেশ শান্তিতে ঘুমাচ্ছিলে ‘

‘ তুমি কিভাবে জানলে?’

‘ নিজের চোখে দেখেছি আমি’

‘ মানে! নিজের ঘুম নষ্ট করে তুমি আমায় দেখছিলে নাকি?’

‘ হুমম, ঘুমন্ত অবস্থায় তোমাকে সুন্দর লাগে ‘

ঘুমন্ত অবস্থায়ও প্রশংসা করছে? মেঘ একগাল হেসে আলতো হাতে আরিশের চুলে বিলি কেটে দিয়ে বললো…

‘ হয়েছে, সকাল সকাল ফ্লার্ট করতে হবেনা। জলদি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাও, ব্রেকফাস্ট বানানো হয়ে গেছে ‘

আরিশ উত্তর দিলো না, আবারো ঘুমে বেঘোর হয়ে গেছে। ওর যে আজ ভার্সিটি যাওয়ার ইচ্ছা নেই তা মেঘ বুঝে গেছে, ও আর আরিশকে বিরক্ত করলো না। খাবার টেবিলে গিয়ে বসতেই আফজাল সাহেব প্রশ্ন করলেন…

‘ কি ব্যাপার, আজ এতো বেলা হয়ে গেলো আরিশকে দেখলাম না। ওঠেনি এখনও?’

‘ না আব্বু, আজ ও ভার্সিটি যাবেনা ‘

‘ আরিশ ভার্সিটি যাবেনা? এ তো অবাক করা ব্যাপার ‘

কথার ফাঁকে আফজাল সাহেব মেয়ের দিকে তাকালেন, মেয়ে তার প্লেটের খাবার খাবার নিয়ে নাড়াচাড়া করছে কিন্তু খাচ্ছে না…

‘ তোর কি হয়েছে আনিশা, খাবার সামনে নিয়ে এভাবে বসে আছিস কেনো?’

বাবার কথা শুনে ধ্যান ভাঙলো আনিশার, সঙ্গে সঙ্গে রেহানা বেগম বললেন…

‘ ওর কথা আর বলো না, কি ভূতে ধরেছে কে জানে। কদিন দেখলাম খুব কাজকর্মের প্রতি ঝোঁক হয়েছে, এখন আবার এরকম উদাসীন হয়ে থাকছে ‘

‘ আমার কিছুই হয়নি আম্মু! আর আমি খাচ্ছি তো ‘

আফজাল সাহেব স্ত্রীকে ইশারা করলেন এখন আর মেয়েকে কিছু না বলতে, খাওয়া শেষে আনিশা ড্রইংরুমে বসেছিলো। মেঘ প্লেট ধুয়ে রেখে ব্যাগ নিয়ে আসলো, ভার্সিটি যাবে। তবে আনিশাকে দেখে ওর পাশে এসে একটু বসলো…

‘ মন খারাপ এখনও?’

‘ হুমম! আচ্ছা আমার মন ভালো করার জন্যে কি করা যায় বলোতো? আমি তো কোনো উপায় পাচ্ছিনা ‘

‘ উম্ম! বাইরে কোথাও গিয়ে বেড়িয়ে আসতে পারো ‘

আনিশা একটু ভেবে বললো…

‘ ভাবী, তাহলে একটু মামাবাড়ি গিয়ে ঘুরে আসলে কেমন হয়?’

‘ বাসার বাইরে কোথাও গিয়ে ঘুরে এলে যদি তোমার মুড ফ্রেশ হয় তাহলে যাও, তোমার জন্যেই ভালো হবে ‘

‘ হ্যাঁ, আমিও তাই ভাবছি। ঘরে বসে থেকে আরো জানান ভাবনায় মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে আমার। এর থেকে একটু গ্রামের খোলামেলা পরিবেশে থেকে আসি, তাহলে যদি একটু ভালো লাগে ‘

ভাবীর পরামর্শ পেয়ে আনিশা ছুটলো ওর মায়ের কাছে, মামাবাড়ি গিয়ে থাকার জন্যে আগে মায়ের অনুমতি তো নিতে হবে। মেঘ ততক্ষণে ভার্সিটির জন্যে বেরিয়ে পড়লো, একটু পরে ক্লাস শুরু হবে। তো আজ আরিশকে না দেখতে পেয়ে তিশা প্রশ্ন করলো…

‘ কীরে, তুই আজ একা কেনো! তোর উনি কোথায়?’

‘ আমার উনির খবর জানার জন্যে তোর এত কিসের আগ্রহ শুনি? তুই তোর জনের চিন্তা কর ‘

‘ আর বলিস না, অয়ন ডিবেট ক্লাবে গেছে প্রাকটিস করতে। সামনে একটা ডিবেট কম্পিটিশন আছে, তাতে অংশগ্রহণ করবে। জানিস, আজ ভার্সিটি এসে আমার সঙ্গে একবার দেখা অব্দি করেনি ‘

‘ ওহ! তো এইজন্যেই সকাল সকাল আজ তোর মুখটা এমন কালো হয়ে আছে? ডিবেট ক্লাবে তিনটে মেয়ে আছে, দুজন বিবাহিত আরেকজনের বয়ফ্রেন্ড আছে। চিন্তা করিস না’

‘ ক..কি যে বলিস না, আমি ওসব নিয়ে কেনো ভাবতে যাবো!’

তিশা একটু লজ্জা পেলো, মেঘ হেসে বললো…

‘ সবই বুঝি রে, আমার থেকে লুকাতে হবেনা। আর অয়ন যে তোর উনি সেটা তুই নিজেই স্বীকার করেছিস ‘

নিজের কথায় নিজেই ফেঁসে গেলো তিশা, এ মুহূর্তে চুপ থাকা উত্তম বুঝে আর কথা বাড়ালো না। একটু পরে ক্লাস শুরু হলো, সব ক্লাস শেষে ভার্সিটি থেকে বেরোনোর সময় দেখলো আরিশ ভার্সিটির মূল ফটকের সামনে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেঘ দৌঁড়ে এসে ওর সামনে দাঁড়ালো…

‘ তুমি না বললে আসবে না?’

‘ তোমাকে পিক করতে এলাম ‘

ভ্যাপসা গরমে আরিশের কপাল ঘেমে গেছে, মেঘ নিজের ওড়না দিয়ে আরিশের কপাল মুছে বললো…

‘এই দুপুরের গরমে তোমার আসার কি প্রয়োজন ছিলো? আমি তো বাসায়ই যাচ্ছিলাম ‘

‘ সো হোয়াট? আমার কি আমার বউকে ক্লাস শেষে পিক করার ইচ্ছে হতে পারে না? রোজ আমরা একসঙ্গে আসি একসঙ্গে যাই, আলাদাভাবে তোমাকে পিক করার সুযোগই তো পাইনা’

‘ কীরে ভাই, সিঙ্গেলদের প্রতি কি তোদের দুজনের একটুও দয়ামায়া হবেনা? তোদের কাহিনী দেখে কতো সিঙ্গেল ছেলেমেয়ে আফসোস করবে জানিস?’

আরিশ মেঘকে দেখে আফসোস করে কথাগুলো বলতে বলতে এগিয়ে এলো অয়ন, ওর হা হুতাশ দেখে আরিশ তৎক্ষণাৎ বলে বসলো…

‘ নজর দিচ্ছিস নাকি?’

‘ আমার এতো বড় অপরাধ করার সাহস নেই রে আরিশ, আমি তো আমাদের মতো সিঙ্গেলদের পক্ষ থেকে একটা কথা বললাম ‘

‘ লোকের কথা বাদ দে, তুই আবার সিঙ্গেল কিভাবে হলি? তুই না প্রপোজ করেছিস তিশাকে?’

অবাক হলো মেঘ…

‘ কি! সত্যিই! এটা কবে হলো? তিশা তো আমায় কিছুই বললো না আর অয়ন তুমিও চুপ রইলে? ‘

‘ আরে না মেঘনা, ঐরকম অফিসিয়ালভাবে কিছু হয়নি’

‘ মনের কথা বলতে আবার আলাদা অনুষ্ঠান করতে হয় নাকি? বলেছিস, সেটাই ফাইনাল ‘

‘ আরিশ! এটা একটা সেনসিটিভ ব্যাপার, তুই বুঝবি না’

‘ আমি বিবাহিত, ভুলে যাস না!’

‘ তো? তুই তো আর বউয়ের আগে ভালোবাসার কথা বলিসনি, প্রেসারটা কেমন বুঝবি না ‘

ওদের কথার মাঝেই তিশা এসে হাজির, অয়নকে দেখেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো ও! মেঘ উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞাসা করলো…

‘ এ আমি কি শুনলাম তিশা? এতকিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানতে পারলাম না?’

‘ তেমন কিছুই হয়নি রে!’

‘ তেমন কিছু না হোক, কিছু তো হয়েছে! তোর আমাকে একটু বলা উচিত ছিলো না?’

আরিশ অয়নকে উদ্দেশ্য করে বললো..

‘তিশাকে বল তোর কপাল মুছিয়ে দেওয়ার জন্যে, এতক্ষণ তো খুব আফসোস করছিলি!’

‘ আমি কেনো দেবো? আমি ওর বউ নাকি!’

সপাটে জবাব দিয়ে হাঁটা শুরু করলো তিশা, অয়ন বুঝলো সকাল থেকে একবারও দেখা না করায় মেয়েটা হয়তো অভিমান করেছে। অয়নও তিশার পেছনে ছুটলো… এদিকে আরিশ মেঘকে নিয়ে বাইরে লাঞ্চ করবে বলে ঠিক করেছে, রেস্টুরেন্টে টেবিল আগে থেকেই বুক করে রেখেছিলো। ভার্সিটি থেকে বেরিয়ে ওরা সোজা ওখানে যায়, লাঞ্চ শেষে বিকেলে মেঘ লং ড্রাইভে যাওয়ার আবদার করলো। বউয়ের আবদার কি আরিশ ফেলতে পারে? মেঘকে নিয়ে গেলো লং ড্রাইভে, পড়ন্ত বিকেলের ফুরফুরে হাওয়ায় বাইকে ঘোরার মজাই আলাদা! একটা ব্রিজের ওপর এসে থামলো ওরা, নিচে বহমান নদী! ব্রিজের ওপর দাঁড়িয়ে স্বচ্ছ আকাশ পানে চেয়ে প্রাণভরে নিঃশ্বাস নিলো মেঘ, আরিশ এক ঝালমুড়ি কিনে এনে মেঘের হাতে দিলো…

‘ থ্যাংক ইউ! তুমি খাবে না?’

‘ তুমিই খাও, আমার এগুলো তেমন পছন্দ না ‘

‘ ওকে! আমাকে এখানে নিয়ে আসার জন্যে ধন্যবাদ, এখানে এসে শান্তি লাগলো অনেক ‘

আরিশ পকেট থেকে কিটক্যাটের কয়েকটা প্যাকেট বের করে মেঘের হাতে দিলো…

‘ ঝালমুড়ি তো কিনেই দিলে, আবার চকলেট কেনো!’

‘ হ্যাপি থ্রি মানস অ্যানিভার্সারি ‘

চকলেটগুলো হাতে নিয়ে অবাক চোখে তাকালো মেঘ…

‘ তোমার মনে আছে?’

‘ অফ কোর্স! আমার জীবনের এতো ইম্পর্ট্যান্ট একটা ডেট মনে থাকবে না?’

মেঘ মুচকি হেসে আরিশের বাহু জড়িয়ে ধরে বললো…

‘ বাব্বাহ! তোমার থেকে এতোটা সুইটনেস আশা করিনি! কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে আমার কিটক্যাট ভালো লাগে?’

‘ উম্ম! তোমাকে সবসময় এই চকলেটই কিনতে দেখেছি, অন্য কোনো চকলেট কেনো না। তারমানে এটাই তোমার সবচেয়ে পছন্দের ‘

আরিশের কথা শুনে মেঘ একটু বেশিই খুশি হলো, ছেলেটা তার মানে মুখে যাই বলুক কিন্তু লুকিয়ে লুকিয়ে মেঘকে পর্যবেক্ষণ করতো? কৌতুহল নিয়ে মেঘ জিজ্ঞাসা করলো…

‘ ওয়াও! এতকিছু লক্ষ্য করেছো তুমি! আই অ্যাম ফিলিং সো লাকি! আচ্ছা, আর কি কি জানো তুমি আমার ব্যাপারে একটু শুনি ‘

আরিশ বলতে চাইছিলো না কিন্তু মেঘের জোরাজুরিতে কিছু জিনিস প্রকাশ করলো, কিছু ছোটো ছোটো বিষয়ও আছে যা আরিশ লক্ষ্য করেছে শুনে মেঘ অবাক হলো বটে তবে আনন্দে আত্মহারা হয়ে গেছে। হাসবেন্ড তার ওয়াইফের ছোটোখাটো সব বিষয় লক্ষ্য করুক, জানুক এটা প্রায় সকল মেয়েরই চাওয়া থাকে। কয়েকমাস আগেও যে আরিশের সঙ্গে বিয়ে হওয়া নিয়ে মেঘ আফসোস করতো আজ তার জন্যেই নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে মেঘের!
__________________________________

কয়েক মাস পর….সকালে ধুয়ে দেওয়া কাপড় গুলো রোদে শুকিয়ে একেবারে কড়কড়ে হয়ে গেছে। বিকেলে সেগুলোই ছাদ থেকে এনে গোছাচ্ছে মেঘ, এর মাঝে হন্তদন্ত হয়ে এর রুমে এলো আনিশা…

‘ আরে আনিশা, এক্সাম কেমন হলো তোমার?’

‘ এক্সামের কথা বাদ দাও ভাবী! একটা কাহিনী হয়ে গেছে ‘

‘ কি হয়েছে?’

‘ ভাবী, একটা বড় ঝামেলা হয়ে গেছে ‘

‘ কি হয়েছে সেটা বলবে তো!’

‘আমাকে একটু আগে আমার মামাতো ভাই ফোন করেছিলো, ফোনে আমাকে প্রোপোজ করেছে!’

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]