#এসো_রূপকথায় (৫)
ফিরে যাওয়ার সময় হয়েছে। একটা সপ্তাহ হয়ে গেল এই বাড়িতে। রিয়া একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিচে নেমে এল। বাড়ির সকলেই সেখানে উপস্থিত। মেহনূরকে জড়িয়ে ধরল রিয়া।
“আপা, নিজের যত্ন নিবি।”
“তুই ও।”
“হুম। খুব ভালো থাক আপা। তোর কোনো কষ্ট না থাকুক।”
“আচ্ছা। বাসায় ফিরে কল করিস।”
কথাটি বলেই মেহনূর অন্য দিকে চাইল। ওর কান্না পাচ্ছে। রিয়া সেটা বুঝতে পারল তবু কিছু বলল না। তার যেতে হবে। এটাই নিয়ম। বুকের ভেতরের নিশ্বাস টুকু লুকিয়ে জাহিদের সামনে এসে দাঁড়াল। একটু দূরে দাঁড়িয়ে ছিল সে। জাহিদ মৃদু হেসে রিয়ার মাথায় হাত রাখল। দীর্ঘ দিনের অভ্যেস এটা। রিয়া ও হাসল।
“আবার এসো কেমন?”
“হ্যাঁ আসব। আপার খেয়াল রাখবেন। দুঃখ রাখবেন না। ও আপনাকে বড়ো ভালোবাসে।”
জাহিদ উত্তর দিতে পারল না। চাইল মেহনূরের পানে। মেয়েটির অনুভূতি আজ ও নিস্তেজ। কোথায় হারাল সেই প্রেম?
জমেলা দু হাত ভরাট করে ফল মিষ্টি এনেছেন। রিয়াদের বাড়িতে পাঠানোর জন্য। এতে বিস্ময় হলো না রিয়া। এই পরিবারের ঐতিহ্য সম্পর্কে অবগত সে। তবু কিছুটা বিরোধ করে বলল,”এসবের দরকার ছিল না আন্টি।”
“সে কি কথা। এটা হয় নাকি। তুমি খালি হাতে ফিরবে নাকি?আবার এসো কেমন?”
“জি,আসব।”
রিয়া আরেকটু সময় থাকতে চেয়েছিল। তবে রিসান এসে তাগাদা দিল।
“বড়ো মা,গাড়ি রেডি।”
“তুই সাথে গেলেও পারতি রিসান।”
“আমার কাজ আছে। এমনিতেই লেট হয়ে গেল।”
সরাসরি প্রত্যাখ্যান করল রিসান। এতে রিয়া কিছু মনে করল না। বরং ভালো হয়েছে মানুষটাকে এতটা পথ দেখতে হবে না। জমেলার থেকে বিদায় নিয়ে আলিয়ার নিকট এল ও। গত কয়েকদিন বেশ খেয়াল রেখেছেন তিনি।
“আন্টি আসছি। আমাদের বাসায় যাবেন।”
“যাব মা। তুমি ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া কোরো।”
“আচ্ছা।”
রিসান আড়চোখে দেখল সব। মায়ের সাথে রিয়ার সম্পর্কটা আগে থেকেই সুন্দর। তবে এ কদিনে যেন একটু বেশিই মধুর হয়ে ওঠেছে। সকল কে বিদায় জানিয়ে বেরিয়ে পড়ল রিয়া। ওর জিনিস পত্র গাড়িতে ওঠিয়ে দিয়ে ড্রাইভারের কাছে এল রিসান। কঠিন সুরে বলল,”ঠিক মতো পৌছে দিবে।”
“জি স্যার।”
রিয়া অন্যদিক ফিরে আছে। রিসান ভেবেছিল কিছু বলবে। তবে মেয়েটি যেহেতু তাকাচ্ছে না তাই ও নিজেও আগ বাড়িয়ে কিছু বলল না।
ক্লান্ত দেহটা বিছানায় এলিয়ে দিতেই দরজায় নক করলেন ফাহমিদা। ওঠে এসে দরজা খুলে দিল রিয়া। মেয়ের গালে হাত ছোঁয়ালেন তিনি।
“খেতে আয়, তোর বাবা অপেক্ষা করছেন।”
“ক্ষিধে নেই মা।”
“সেই কখন এসেছিস। ক্ষিধে নেই? রাত কটা বাজে দেখেছিস?”
“খাব না। বাবা কে বলে দাও।”
“এ কথা বললে নানান প্রশ্ন তুলবে। অল্প একটু খা মা।”
অনিচ্ছা নিয়েই এগোল রিয়া। খাবার টেবিলে কোনো কথাই হলো না। তবে খাওয়া শেষে ইব্রাহিম বললেন,”ও বাড়িতে কেমন গেল সময়?”
“ভালো।”
“শুধু ভালো?”
“হুম।”
“কেন? ওরা কি তোর যত্ন করে নি?”
“করেছে।”
“তবে?”
“বাদ দাও।”
টেবিলে মাথা ঠেকিয়ে রইল রিয়া। কিছু সময় যেতেই বলল,”বাবা,একটা কথা বলবে প্লিজ।”
“কি কথা?”
“আপা পালিয়ে যাওয়ার পর ও তোমরা এত শান্ত কেন?”
“তোমার বোনের মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিল। নতুবা পালাবে কেন? নিজেই তো পছন্দ করেছে। তাছাড়া ঝামেলা বাড়ানোর ইচ্ছেটি নেই। যা হয়েছে ভালোই হয়েছে।”
রিয়া নিজেও বুঝল না। সমস্যাটা যেন ধরা ছোঁয়ার বাইরে। ইব্রাহিম কন্যার মাথায় হাত রাখলেন। যেন আশ্বাস দেওয়া চেষ্টা।
“এসব নিয়ে ভেবো না। তুমি পড়াশোনায় মনোযোগ দাও।”
“হুম।”
দশ দিন পরের ঘটনা। বেলা করেই ঘুম ভাঙল রিয়ার। কাল থেকে আবার ভার্সিটি যাওয়া আসা করবে। প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস আনা প্রয়োজন। সকালের নাস্তা খেয়েই বেরিয়ে পড়ল। সাথে নিল বান্ধবীকেও। দুজনে রিকশায় ওঠে বকবক শুরু করল। এক পর্যায়ে প্রমি শুধাল,”দোস্ত, এই জীবনে প্রেম না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিস?”
“তেমনই।”
“ধুর, তাহলে বিয়ে করে ফেল। চারপাশে এত সিঙ্গেল আর ভালো লাগে না।”
“তুই বিয়ে কর।”
“আমি আর বিয়ে। এ কথা বললে বাসায় ঢুকতেই দিবে না।”
“তাহলে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা কর।”
“সেটাও ভালো লাগছে না।”
দুই বান্ধবীর গসিপের মাঝেই রিকশা থেমে গেল। সামনে একটা গাড়ি এসে দাঁড়িয়েছে। ওরা দুজনেই বিস্মিত। তবে বিস্ময় ভাঙল পুরুষটিকে দেখতে পেয়ে। রিয়া ভ্রু কুঁচকে রইল।
“নেমে আসো, কিছু কথা আছে।”
“আপনি এখানে কেন?”
“দরকারে এসেছি।”
“মামা রিকশা ঘুরান।”
“ঘুরাবেন না মামা। তাহলে ফল ভালো হবে না।”
“মাস্তানি করবেন নাকি?”
“প্রয়োজন পড়লে করব।”
কথা শেষ করেই প্রমির দিকে তাকার রিসান। একটু হেসে বলল,”হাই আপু।”
“হ্যালো।”
“তোমার বান্ধবীকে নিয়ে যাচ্ছি। তোমাকে আমার লোক বাসায় পৌছে দিবে।”
“প্রমি তুই যাবি না।”
হাত ধরে আটকে দিল রিয়া। রিসান দাঁত কিড়মিড় করে বলল,”বেবি গার্ল আমাকে রাগিয়ে ও না।”
প্রমিকে যেতে হলো। রিসান ভাড়া মিটিয়ে দিয়ে এক প্রকার টেনে নামাল রিয়াকে।
“কোন সাহসে এমন করছেন?”
“সেটা তোমার না জানলেও চলবে।”
“আমি পুলিশে যাব।”
“যাও। চলো আমিই নিয়ে যাচ্ছি।”
কথাটি বলেই হাতে ইষৎ চাপ দিল রিসান। ব্যথায় চোখ টলমল করে ওঠল রিয়ার।
“তোমার সাহস বেড়েছে তাই না? রিলেশনে যাচ্ছ!”
“রিসান লাগছে আমার।”
“লাগুক। শ য় তা ন মেয়ে। জানে মে রে দিব।”
“সে অধিকার আপনাকে দেই নি রিসান।”
“তবে কাকে দিয়েছ? ঐ ছেলেটাকে। কি যেন নাম, রিপন?”
“হ্যাঁ দিয়েছি। আরো দিব। তাতে আপনার কী?”
“আমার অনেক কিছু।”
“অসহ্য লাগছে। ছাড়েন, এসব নোংরামি ভালো লাগছে না। ভদ্রলোকেরা এমনটা করে না।”
হাতের বাঁধন আলগা করল রিসান। রিয়া চলে যেতে নিলে পুনরায় আটকে দিল।
“তুমি কখনোই বুঝলে না আমায়।”
“কী বুঝব?”
“কিছু না। যাও, আই প্রমিস আর কখনো আসব না। তুমি স্বাধীন।”
রিসান এগিয়ে গেল তবে থেমে রইল রিয়া। এই মানুষটার কোনো অধিকার নেই তাকে স্বাধীন করার কিংবা আটকে রাখার।
রিপনকে কল করল রিয়া। মেয়েটি কঠোর কণ্ঠে শুধাল,”তুমি মানুষের কাছে বলে বেড়াচ্ছ আমরা রিলেশনে আছি?”
“রিয়া তেমনটি নয়।”
“তবে কেমন রিপন? আমরা ভালো বন্ধু। এটাই তো কথা হয়েছিল তাই না?”
“আসলে আমার বন্ধুরা মজা করে তোমাকে আমার গার্লফ্রেন্ড বলে।”
“আর এর খেসারত আমায় দিতে হয়। সরি রিপন আমি তোমার সাথে বন্ধুত্বটা কন্টিনিউ করতে পারব না।”
“রিয়া, শোনো আমার কথা।”
“আর কোনো কথা নয়। আশা রাখছি, নিজের সীমা অতিক্রম করবে না। যদি তেমনটি করো তাহলে তোমার বিরুদ্ধে অ্যা কশ ন নিতে বাধ্য হব।”
কল কেটেই দম ফেলল রিয়া। ওর ক্লাসমেট রিপন। বেশ অনেকদিন ধরেই প্রেমের প্রস্তাব দিচ্ছিল। ও নাকোচ করে রেখেছিল। আগের সপ্তাহে ডিসিশন হয় দুজনে ভালো বন্ধু হয়ে থাকবে। সেভাবেই নিয়মিত কথা বার্তা, দেখা হচ্ছিল। তবে এর উল্টো মানে দাঁড়াবে সেটা কে জানত?
পুরো দিনটিই নষ্ট হলো রিয়ার। প্রমি কে কল করলে প্রমি জানাল ও বাসায় ফিরে এসেছে। ঠিক ভাবেই পৌছে দেওয়া হয়েছে ওকে। এবার রিসানের ওপর রাগ হলো। পুরুষটি সবসময় কষ্ট দেয়। প্রমি ওপাশ থেকে শুধাল,”এই রিয়া। ছেলেটা কে?”
“হুম। কি বললি?”
“ছেলেটা কে? তোর কি হয়?”
“মেহনূর আপুর দেবর ওনি।”
“জাহিদ ভাইয়ার ভাই আছে? আগে তো বলিস নি।”
“কাজিন ব্রাদার।”
“ও। তোর সাথে ওমন কেন করল? কোনো ভাবে তোরা কি রিলেশনে আছিস?”
“আরে ধুর। এমনটা নয়।”
“তাহলে? তোর এক্স নাকি?”
চলবে….
কলমে~ফাতেমা তুজ নৌশি