#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২২
দরজায় টোকা পড়তেই নিদ্রা বিদায় নিল। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে সবকিছু ঝাপসা দেখলাম। কিছুক্ষণ সময় লাগল নিজের উপস্থিতি জানান দিতে। বেলা গড়িয়ে গেছে। সূর্যের রশ্মি হালকা হয়েছে। দরজায় টোকা বেড়ে গেল। অবিলম্বে উঠে খুলে দিলাম। মধ্যবয়স্ক এক নারী। আমাকে দেখে হেসে বললেন, “মা-শা-আল্লাহ। আমার মেয়ে দেখতে পরীর মতো।”
কিছুটা বিদ্রুপ করে বললাম, “পরী দেখেছেন কখনো?”
“না।”
“তাহলে বললেন কেন আমি পরীর মতো সুন্দর? সবাই বলে আমি আমার মায়ের মতো সুন্দর। বাচ্চা পারুল।” আমার কথায় হাসলেন তিনি। গালটা টেনে দিলেন। তাড়া দিয়ে বলেন, “তোমার বাবা ডাকছে, সবাই তোমার জন্য অপেক্ষা করছে। খাবে এসো।”
আমি মাথা নেড়ে তার পিছু পিছু গেলাম। তিনি বললেন, “আমি তোমার বড়ো চাচি। আমার নাম নয়না। তোমার বাবা মেঝো। সবাই তাকে মাঝভাই বলে ডাকে। এসো সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।”
ডাইনিং রুমে উপস্থিত হলাম। তিনজন মধ্যবয়স্ক পুরুষকে দেখতে পেলাম। বড়ো চাচা, বাবা, ছোটো চাচা। আর মাঝখানে একজন বৃদ্ধা মহিলা। গায়ের রং ধবধবে সাদা, চুলগুলো আধপাকা, পরনে সাদা শাড়ি, গায়ের চামড়া তুলনামূলক কুঁচকে গেছে, মাথায় ঘোমটা টানা, চোখে পরার উপযোগী মোটা ফ্রেমের চশমা গলায় চেইন টেনে ঝুলিয়ে রাখা, দাঁতগুলো চকচক করছে। হাত বাড়িয়ে দিয়ে আমাকে ইশারা করে বলেন, “দিদি ভাই, আমার কাছে এসো।”
নয়না চাচি ইশারা করে বলেন, “আরু যাও।”
আমি এগিয়ে যেতেই তিনি উঠে দাঁড়ালেন। আমাকে দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বললেন, “আমার সোনার টুকরো নাতনি। কেমন আছো টুনটুনি?”
“ভালো, আপনি?”
“এভাবে বলবে না। বললে, আলহামদুলিল্লাহ, ভালো আছি। তুমি ভালো আছো দাদি মা? আমি তোমার দাদি হই। দাদি কাকে বলে, জানো নিশ্চয়ই?”
“হম।” তিনি আমাকে তার চেয়ারে টেনে বসালেন। হাত দিয়ে ইশারা করতে আরও একটা চেয়ার হাজির হলো সেখানে। দাদিমা পাশে বসলেন। সোনার প্লেটে খোদাই করা ‘আরশি মৃধা’। প্লেটে পোলাই, মাংশ নিলেন। মেখে আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন, “খাও। দাদিমা তোমাকে প্রথমবার নিজের হাতে খাইয়ে দিল। খেয়ে নাও। আজ থেকে তুমি এই প্লেটে খাবে, এই চেয়ারে বসবে। মনে থাকবে? (নয়না চাচিকে উদ্দেশ্য করে বললেন) তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন? এই বাড়ির রীতি ভুলে গেছো? খেতে বসো।”
কাজের মেয়েকে বললেন মেয়েদের ডেকে আনতে। ছুটে গেল ডাকতে। চারজন মেয়ে দুইজন ছেলে এলো। তাদের ভেতরে দুজনকে আমি চিনি। মিহির ও মিহি। শহরে দেখা হয়েছিল। আমার ফুফুতো বোন। খাওয়া শেষ হতেই পায়েস মুখে তুলে দিল। আমি নাক ছিচকে বললাম, “আর খাবো না, দাদি মা।”
“শরীরের দিকে নজর দাও। কী চিকন দেখেছো? এই বাড়িতে তোমার দু’টো কাজ। পড়ালেখা আর খাওয়া।” বলেই দাদিমা নিজের গলা থেকে লকেট তুলে আমার গলায় পরিয়ে দিলেন। অতঃপর বললেন, “প্রথমবার নাতনির মুখ দেখে আশির্বাদ করলাম। বাকিরা ওর যত্ন নিও। (ছেলেদের উদ্দেশ্য করে) তোমরা তিনজনে আমার ঘরে এসো।”
বলেই চলে গেলেন। বাবা চাচারা উঠে চলে গেলেন দাদির পিছুপিছু। বাড়িতে প্রাণ ফিরে এলো। সবাই হেসে হেসে কথা বলছে। সবার সাথে পরিচিত হলাম। দাদি মাকে সবাই প্রচণ্ড ভয় পায়। সিঁথি, সাথি, সাবিত বড়ো চাচার ছেলেমেয়ে। মেঘলা ছোটো চাচার মেয়ে। মিহির ও মিহি ফুফাতো ভাইবোন।
__
আমাদের বাড়িটার কাছে শহরে অট্টালিকা হার মানবে। ইট পাথরের তৈরি, মামাদের বাড়িটা টিনের। আমাদের বাড়ির সামনে বালুর মাঠ। মেয়েরা সেখানে খেলতে আসে। পাশে বড়ো একটা দিঘি। এই বাড়িতে গরু নেই। গরুর গোবরের দুর্গন্ধ দাদিমার অপছন্দ। তবে হাঁস মুরগির পাশাপাশি কবুতর আছে। দিঘির পাড়ে জোড়ায় জোড়ায় উড়ছে। সিঁথির পোশাক পরে বালুর মাঠে খেলতে গেলাম। গাছের পাশে বসে রইলাম। সবাই কানামাছি খেলছে। সিঁথির চোখে কাপড় বাঁধা। সাথি আমাকে জোর করে খেলতে নিল। উঠতে না উঠতেই আমাকে চেপে ধরল সিঁথি। কাঁচুমাচু করে রইলাম। মেঘলা বলে, “কাকে ধরেছিস?”
সিঁথি আমাকে আরেকটু চেপে ধরে বলে, “আমাদের ভেতরে এত তুলতুলে শরীর কারো নেই। একজনের হতে পারে। আমাদের আরুর।”
বলেই কাপড় খুলে ফেলল। আমার কাঁচুমাচু মুখ দেখে হেসে ফেলল। পুনরায় আমার চোখে কাপড় বেঁধে দিল।
হালকা ঘুড়িয়ে দিয়ে বলে, “কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যাকে পাবি তাকে ছোঁ।”
অন্ধকারে কাউকে দেখতে পেলাম। চোখটা একটু ফাক করে দেখার চেষ্টা করলাম। কিন্তু সম্ভব হলো না। মোটা কাপড়ে শক্ত গিঁট দেওয়া। কিছুক্ষণ এভাবে হাত দিয়ে ছোঁয়ার চেষ্টা করলাম। সম্ভব হলো না। একপর্যায়ে একজনকে জড়িয়ে ধরলাম। হুট করেই শরীরটা অবস হয়ে এলো। সরে দাঁড়ালাম । চোখের বাঁধন খুলে ফেললাম। অপূর্ব ভাই দাঁড়িয়ে আছেন সামনে। আমার ঠোঁটে হাসি ফুটে উঠল। হুট করে জড়িয়ে ধরলাম অপূর্ব ভাইকে। তিনিও জড়িয়ে ধরলেন। ধীরে ধীরে আওড়ালাম, “অপূর্ব ভাই, আপনি এসেছেন? এসেছেন? এসেছেন? আমি জানতাম, আপনি আসবেন।”
“আরু মানুষ আছে, ছাড়।” আমি ছাড়লাম না। অপূর্ব ভাই নিজেই ছাড়িয়ে নিলেন। তার উপর অভিমান জমে উঠল। মুখটা ফিরিয়ে নিলাম। দাঁড়ালাম না। উল্টো হাঁটা দিলাম। অপূর্ব ভাই রিনরিনে গলায় বললেন, “তুর শেফালী এসেছে। তোকে ছাড়া ওরা থাকতে পারে না। তাই দেখা করতে এসেছে। যাবি না।”
উত্তেজিত হয়ে আশেপাশে নজর বুলিয়ে বললাম, “কোথায় তুর, কোথায় শেফালী বলুন না?”
ঝোপের দিকে ইশারা করে বললেন, “ঐ দিকে। আয়।”
অপূর্ব ভাই তার পা জোড়া গতিশীল করে সেদিকে এগিয়ে গেলেন। আমিও অগ্ৰসর হলাম সেদিকে। তৎক্ষণাৎ হাতটা বন্দি হলো অদৃশ্য শক্তিতে। থেমে গেল পা। ঘাড় কাত করে দেখলাম, মিহির ভাই দাঁড়িয়ে আছেন। থমথমে গলায় বলেন, “আর খেলতে হবে না। বাড়িতে চল সবাই।”
“আমার বোনেরা এসেছে, আমি দেখা করব।” নম্র গলায় বললাম।
“মৃধা বাড়ির সাথে আহসান বাড়ির শ/ত্রু/তার কথা তোর অজানা নয়। দাদি মায়ের কড়া নির্দেশ ঐ বাড়ির কারো সাথে যোগাযোগ না রাখা।” হাতটা ধরে বাড়ির দিকে রওনা দিলেন। আমার চোখ দুটো অপূর্ব ভাইয়ের গমন পথের দিকে। আর কখনো দেখা হবেনা, কথা হবেনা। ১৬ বছরের চিরচেনা সেই পরিবেশে কখনো আর ফিরে যেতে পারব না।
ডানহাতটা অপূর্ব ভাই টেনে ধরলেন। বামহাতটা তখনও মিহির ভাইয়ের হাতে বন্দি। দু’জনে দুজনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অপূর্ব ভাই শান্ত অথচ ভয়ংকর গলায় বললেন, “আরুর হাতটা ছাড়ো মিহির।”
“সেদিন একবার কথা বলতে চেয়েছিলাম, কী করেছিলে মনে আছে? ধরে নিয়ে গিয়েছিলে। এবার দেখি কিভাবে ওকে নিয়ে যাও।”
অপূর্ব ভাই হুংকার দিলেন, “আমি ওর হাতটা ছাড়তে বলেছি মিহির।”
“আরু আমাদের মৃধা বাড়ির মেয়ে, আমার বোন। আমার বোনের হাত আমি ধরেছি। তুমি ছাড়ো।”
আমি পড়লাম ফ্যাসাদে। দু’জনে দুইদিক থেকে টেনে চলেছে। এভাবে টানতে থাকলে আরু দুই খণ্ড হয়ে যাবে যে।
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]
#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ২৩
অপেক্ষার প্রহর,
হয় না-কো ভোর,
তবু পথো চেয়ে থাকা।
দিনগুলো ক্লান্তময়,
ক্লান্ত দীর্ঘ শ্বাস।
বিটিভিতে ‘অপেক্ষার প্রহর’ ধারাবাহিক চলছে। গ্ৰামের এক জনম দুখীনি মা তার সন্তানের আগমনের অপেক্ষায় রয়েছে। তার ধারণা সন্তান আসবে। আগে এই ধারাবাহিকটির প্রতি অনুভূতি কাজ না করলেও আজ প্রবল করছে। বুঝতে পারছি কেন এতদিন সবাই এটি দেখেছে। আমিও অপেক্ষায় আছি, সবাইকে দেখার। আনমনে ভাবতে ভাবতে চোখের কোণে থাকা অশ্রুটুকু মুছে নিলাম। দাদিজান তখন নিচে নামলেন। সবাইকে বিটিভি দেখতে দেখে ডাকলেন আবুল চাচাকে। আবুল চাচা দেখতে মোটাসোটা, আর বাদল চাচা চিকন আলীর মতো। দুজনেই উপস্থিত হলো সেখানে। দাদিমা চুপ থেকে বললেন, “তিনদিন আগে তোদের দু’জনকে ক্যাসেড আনতে বলেছিলাম। এনেছিস?
আবুল চাচা মাথা নেড়ে বলে, “জি বেগম সাহেবা। এনেছি।”
“তাহলে চালু কর। আমিও আজ ওদের সাথে টিভি দেখবো।”
দূর থেকে সবকিছু দেখে হাসলাম। শহরে থাকতে অপূর্ব ভাইয়ের ক্যাবল টিভিতে বিটিভি ছাড়া অন্য চ্যানেল দেখেছি। আজ সিডিতে দেখব। আবুল চাচা চালু করলেন সিডি। তৎক্ষণাৎ বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হলো। আঁধারে তলিয়ে গেল সবকিছু। দাদিজান রেগে গেলেন, তার রাগ সবসময় নাকের ডগায় থাকে। সৌর বিদ্যুৎ চালু হলো। সবাই খেতে বসলাম। আমার খেতে ইচ্ছে করলো না। তাই ঘরে গেলাম। ঘুমের মতো লাগল চোখে। ঘুমিয়ে গেলাম। কিছুক্ষণ পর ঘুম ভেঙে গেল। তাকিয়ে দেখি জানালার কাছে ময়না পাখিটা সুরেলা কণ্ঠে ডাকছে, “আরুপাখি, আরুপাখি, আরুপাখি। শুভ জন্মদিন, শুভ জন্মদিন, শুভ জন্মদিন।”
আমি হেসে ফেললাম। ময়নাকে জড়িয়ে ধরলাম। সে তার ডানা দিয়ে আমাকে আগলে নিল। ডানার সাথে বাঁধা এক টুকরো কাগজ দেখতে পেলাম। লাল রঙের সুতা দিয়ে বাঁধা। কাগজটা খুলতে লেখা দেখতে পেলাম, “শুভ জন্মদিন আমাদের আরু পাখি। শুভ জন্মদিন।”
আমি জানালা দিয়ে বাইরে দেখলাম। অপূর্ব ভাইকে আবছা দেখা যাচ্ছে। ময়না উড়ে চলে গেল সেদিকে। অপূর্ব ভাই চলে গেলেন। কাগজটা বুকে জড়িয়ে নিলাম। আমার জন্মদিন ধুমধাম করে হয়। কিন্তু এবার এই বাড়ির কেউ জানতেই পারবে না , আজ আমার জন্মদিন।
তখনি দরজায় করাঘাত পড়ল। দরজার করাঘাত শুনে উঠতে ইচ্ছে করল না। কাগজটা বুকে নিয়ে শুয়ে পড়লাম। পরপর তিনবার টোকা পড়ে থেমে গেল। অতঃপর পায়ের শব্দ শোনা গেল। অর্থাৎ সে চলে গেছে। আমি চোখ গ্ৰথণ করে নিদ্রায় আচ্ছন্ন হওয়ার চেষ্টা করলাম। এক পর্যায়ে সক্ষম হলাম আচ্ছন্ন হতে। বিরতি নিল ক্লান্ত মন ও শরীর।
সকাল আটটা বাজে। সূর্যের আলো আমার ঘরে এসে পৌঁছেছে। অনেক আগেই তার আগমন ঘটেছে। পাখিরা কিচিরমিচির ডাকছে। পুনরায় দরজা টোকা পড়ল। ব্যতিব্যস্ত হলাম এবার। মামা বাড়িতে নয়টা বেজে গেলেও ঘুম থেকে ডাক দিতো না, সাড়ে নয়টায় ঘুম থেকে উঠে দ্রুত ফ্রেশ হয়ে টেবিলে যেতাম। মামি তাড়াতাড়ি করে দুমুঠো ভাত মুখে তুলে দিলেন। কোনোরকম খেয়ে ছুটে যেতাম স্কুলে। রাস্তায় তুর ও শেফালীকে ধরতাম। আজকের দিনের তো কথাই নেই, মামি পায়েস রান্না করতেন। সবার প্রথমে আমার মুখে পায়েস তুলে দিতেন। উপহারে ভরে যেতো আমার ঘর। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম। দরজা খুলে দেখলাম, দাদিজান দাঁড়িয়ে আছেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন, “শুভ জন্মদিন আরশি মৃধা। বেঁচে থাকো এই দোয়া করি।”
আমি এক চিলতে হেসে ফেললাম। বললাম, “আজ আমার জন্মদিন, আপনি কীভাবে জানলেঞ?”
“হম। জানতাম। আমার নাতির জন্মদিন আর আমি জানবো না। তোর নাড়ি নক্ষত্র সব জানি। আমার সাথে এসো।” হাত ধরে নিয়ে গেল সবার কাছে। বৈঠকখানায় বাড়ির সবাই তখন উপস্থিত। শপিং ব্যাগের ছড়াছড়ি। যেন একটা মার্কেট বসেছে। দাদি জান হাতের ইশারায় দেখিয়ে বলেন, “তোমার পরনের উপযোগী কোনো পোশাক নেই। তাই এগুলো তোমার জন্য। (সবচেয়ে আকর্ষণীয় পোশাকটা আমার হাতে দিয়ে বলেন) আজ এটা পরবে। তোমাকে রাজকুমারীর মতো লাগবে।”
বাইরে চ্যাঁচামেচির আওয়াজে মুখরিত হলাম। দাদি জান আমার হাত ধরে নিয়ে গেলেন সেদিকে। বাইরে মানুষের ভিড়। দাদি জান হাতের ইশারা করতেই পরিবেশ শান্ত হয়ে গেল। নম্র গলায় বলতে শুরু করলেন, “আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছেন আপনারা?”
সবাই সালামের উত্তর নিয়ে দাদি জান ‘কেমন আছেন?’ জানতে চাইলেন। দাদি জান উত্তরে বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। গতকাল গ্ৰামের সবাইকে বলে দিয়েছিলাম আজ সকাল আটটায় উপস্থিত হতে। আপনারা এসেছেন, আমার কথা রেখেছেন। আমি সন্তুষ্ট হয়েছি। এবার আসা যাক মূল কথায়, কেন আমি আপনাদের ডেকে পাঠিয়েছি।” সবাই সায় দিল। দাদি জান আমাকে সবার সামনে নিয়ে এলেন। বললেন, “এই হচ্ছে আমার নাতি। আমার মেজো ছেলের একমাত্র মেয়ে আরশি মৃধা আরু। আমার পরে আমার এই নাতি নেতৃত্ব দিবে। আমার এই নাতির জন্মের পর আমি তাকে দেখিনি। গতকাল প্রথম দেখেছি। আরুর জন্মের এক বছর পর মামার বাড়িতে চলে গেছিল। যে আমাদের চির শ/ত্রু। আমি নিজের কাছে প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, আরুকে এই বাড়িতে ফিরে আনব। আমি কথা রেখেছি। কারো কাছে মাথানত করিনি। আর সবচেয়ে বড়ো কথা, আজ আরুর জন্মদিন। সবাই ওর জন্য দোয়া করবেন।”
দাদি জান থামতেই উচ্চ ধ্বনিতে শুনতে পেলাম জন্মদিনের শুভেচ্ছা। সবকিছু আজ পূর্ণ মনে হলো। আমি হেসে দাদিজানকে জড়িয়ে ধরলাম। দাদিজানও আমার পিঠে হাত রাখলেন।
___
দিঘির পাড়ে বসে ঢিল ছুড়ে দিচ্ছি জলে। পাশে কলস রাখা। পানি দিতে এসে আসন পেতে বসেছি। মনটা বড্ড অশান্ত। আজ স্কুলে যাবো না ভেবে নিয়েছি। এমন সময়ে একজন আগন্তুক পাশে বসল। ঘাড় কাত করে দেখলাম তাকে। অপূর্ব ভাই এসেছেন। আনমনে ভেবে হাতে চিমটি কে/টে পরখ করে নিলাম। সত্যি অপূর্ব ভাই এসেছেন। অভিমানী গলায় বললাম, “আপনি এখানে? কাল রাতে চো/রের মতো এসে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সামনাসামনি জানাতে পারেন নি?”
অপূর্ব ভাই তার ফোনটা বের করলেন। অন্যহাতে আমাকে ব্যঙ্গ করতে দিঘির জলে ঢিল ছুড়ছেন। উত্তর না পেয়ে ধৈর্যহারা হয়ে আমি বললাম, “কী হলো? বলছেন না কেন?”
“মা, নাও আরুর সাথে কথা বলো।”
মামিকে উদ্দেশ্য করে ফোনে কথাটা বললেন। অতঃপর ফোনটা এগিয়ে দিলেন। মামি ওপাশ থেকে আমার নাম জপে যাচ্ছেন। কাঁপা কাঁপা হাতে ফোনটা নিয়ে বললাম, “মামি।”
“তোকে কতদিন বলেছি, ফোন ধরার পর সাগে সালাম বিনিময় করবি। কথা মনে থাকে না?”
“স্যরি!” ছোটো করে।
“অপূর্ব কাছে পায়েস পাঠিয়েছি তোর জন্য। খেয়ে নিস। এবার নিজ হাতে খাওয়াতে পারিনি, তাতে কী? অপু খাইয়ে দিবে। আর মামির উপর রাগ করিস না।” অপূর্ব ভাইয়ের অন্যপাশে টিফিন ক্যারিয়ার রাখা। খেতে ইচ্ছে করছে ভিশন। তবুও বললাম, “নিজ হাতে যখন খাওয়াতে পারবে না, তাহলে কষ্ট করে রান্না করতে গেলে কেন?”
“ওটা অভ্যাস, ভালোবাসা। তুই বুঝবি না।বড়ো হ, তখন বুঝবি।” কল বিচ্ছিন্ন হলো। অপূর্ব ভাই ফোনটা নিয়ে পকেটে রেখে দিলেন। দিঘির এদিকে কেউ আসবে না। মামাদের বাড়িতে ওয়াশরুম ঘরে নেই বিধায় সবাই দিঘিতে গোসল করতে আসে। এখানে ঘরে ঘরে ওয়াশরুম, তাই নিশ্চিন্ত। অপূর্ব ভাই টিফিন ক্যারিয়ার খুললেন। চামচ দিয়ে মুখে দিলেন পায়েস। আমার চোখের কোণে পানি চিকচিক করছিল। আলতো হাতে মুছিয়ে দিয়ে বললেন, “আরে পা/গ/লীটা আমার। কাঁদছিস কেন? সবকিছু খুব শীঘ্রই ঠিক হয়ে যাবে।”
[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]