এ শহরে তুমি নেমে এসো পর্ব-৩৮+৩৯

0
234

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৮

ঝিরিঝিরি ধারায় বৃষ্টি পড়ছে। ধীরে ধীরে বৃষ্টির মাত্রা ক্রমশ বাড়ছে। কচু শাক দিয়ে গরম গরম ভাত খেয়েছি। অপূর্ব ভাইয়ের হাতে জাদু আছে বলতে হবে। বউ রান্না জানে না, অথচ স্বামী রান্না করে খাওয়ায়। আমার খাওয়া শেষ করে অপূর্ব ভাইয়ের জন্য খাবার সাজিয়ে রেখেছি। তার আসার নাম নেই, বেশিক্ষণ বৃষ্টিতে ভিজলে ঠান্ডা লেগে যাবে। তাছাড়া না খেয়ে বেশিক্ষণ থাকার অভ্যাস তার নেই। অপূর্ব ভাইয়ের কাছে যাওয়া উচিত। খাবারগুলো একটা ঢাকনা যুক্ত বাটিতে নিলাম। গামছায় প্যাঁচিয়ে নিলাম বাটিটা। আশেপাশে ছাতা খুঁজতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কৃষকদের ঘর ছাতা পাওয়া দুষ্কর। বেড়ার ফাঁকে দুটি টুপি নজর হলো, যা বৃষ্টির দিনে মাথায় নিয়ে কৃষকেরা ধান রোপন ও বপন করে থাকে। মনে মনে তৃপ্তি কর হাসি হাসলাম। চুপি দুটি মাথায় নিয়ে চললাম ধান ক্ষেতের দিকে। সাথে নিয়ে নিলাম ভাতের বাটি। খেতে কৃষকদের দেখা নেই। আশেপাশে কাক পক্ষীও দেখা যাচ্ছে না। এক মনে আইল কে/টে যাচ্ছেন অপূর্ব ভাই। ভিজে জবুথবু অবস্থা তার। দ্রুত পায়ে এগিয়ে গিয়ে টুপিটা তার মাথায় পরিয়ে দিলাম। আইল কা/টায় বিরতি দিয়ে আমার দিকে তাকালেন তিনি। ভ্রু কুঁচকে সন্দিহান গলায় বলেন, “বৃষ্টির ভেতর এখানে আসতে কে বলেছে তোকে? এমনিতেই জ্বর পিছু ছাড়ে না, এবার তো চিরস্থায়ী বাঁধিয়ে ফেলবি তুই।”

“বলেছে আপনাকে? ভালো করতে এলাম, উল্টো আমাকে বকছে। এজন্যই কারো ভালো করতে নেই। বুঝেছেন?” ভেংচি দিয়ে বললাম। টুপিটা মাথায় নিয়ে শক্ত করে বেঁধে নিলেন। বলতে ইচ্ছে করলো, না নিয়ে আসলে মাথায় দেন কিভাবে? মনে মনে উচ্চারণ করে বললাম, “আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছি। চলুন, খাবেন।”

“তুই চোখে দেখতে পারিস না? ক্ষেতের মাঝখানে খাবো কীভাবে? বাড়িতে যা।”

“ঐ গাছের নিচে আসুন। খেতে না পারলে আমি খাইয়ে দেবো। চলুন।” বলে হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলাম কড়াই গাছের নিচে। অনেক বড়ো গাছটা। তার ডালপালা দিয়ে ঘেরা। বৃষ্টি তেমন পরে না। অপূর্ব ভাইয়ের হাতে কাঁদা মেখে আছে। তাই নিজের হাতে খাবার মেখে তার মুখে তুলে দিলাম। খাবার চিবুতে চিবুতে আমাকে দেখলেন। মুচকি হেসে বললেন, “তুই অনেক বড়ো হয়ে গেছিস আরু। আমাদের সেই ছোট্ট আরু নেই। স্বামী সোহাগী হ।”

“বড়ো হবোই তো, স্বামী আছে। দুদিন পর সংসার হবে। আপনি চাইলে আমাদের ছোটো একটা বাচ্চা..
বাক্য শেষ করলাম না। মাথাটা নিচু করে নিলাম। গলা আপনাআপনি থেমে গেল। নিচের দিকে তাকিয়ে লোকমা তুলে দিলাম। টুপ করে কামড় দিলেন হাতে। আহ্! করে উঠলাম। অপূর্ব ভাই পুনরায় বললেন, “তুই নাকি বড়ো হয়ে গেছিস? কই একই তো আছিস। সামান্য একটু কা/ম/ড় সহ্য করতে পারিস না তাহলে ভালোবাসার তীক্ষ্ণ স্পর্শ অনুভব করবি কীভাবে?”

তার চোখের দিকে তাকালাম। দুটি চোখ নিরবে দৃষ্টি আদান প্রদান করে চলেছে। তার ভেজা চুল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। সেই মাতাল দৃষ্টিতে এড়িয়ে গেলাম। ক্ষেতের মাঝে জমে থাকা পানিতে হাত চুবিয়ে ধুয়ে নিলাম। বাটিগুলো পরপর গুছিয়ে গামছায় প্যাঁচিয়ে নিলাম। মৃদু গলায় বললাম, “আসি!”

পা বাড়ালাম। পেছন থেকে টেনে ধরলেন কাপড়। থমকে গেলাম আমি। হাতটা ধরে টান দিতেই হুরমুরিয়ে পড়লাম তার বুকে। তার চুল বেয়ে পানিগুলো আমার মুখশ্রীতে ফোঁটায় ফোঁটায় ঝরে পড়ছে। অস্ফুট স্বরে বললাম, “আমি বাড়িতে যাবো।”

“আমি আসতে বলেছি? এসেছিস নিজের ইচ্ছাতে, যাবি আমার ইচ্ছাতে। আমার কাছে আসতে চেয়েছিস বলেই এসেছিস। ‘আমি তো চাইবোই, এ শহরে তুমি নেমে এসো💚!’ একবার যখন তোমার চরণের আবির্ভাব ঘটেছে। আর ফিরতে দিচ্ছি না।”

“মানে?” মৃদু ঠোঁট নাড়িয়ে।

“মানে? খাবার তো নিয়ে এসেছিস? কিন্তু আমার তৃষ্ণা? গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। তৃষ্ণা মেটাবো কীভাবে?”

“বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসবো?”

অপূর্ব ভাই নেশালো দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আরেকটু ঘনিষ্ঠ হলো। একত্রিত হলো দু জোড়া তৃষ্ণার্ত অধর। চলল জল পানের সেই মধুর মুহুর্ত। অদূরে দুটো চড়ুই পাখি গাছের ডালে বসে কিচিরমিচির করে চলেছে। বর্ষার ধাঁচ বাড়ছে। অপূর্ব ভাই সরে গেলেন। আঁচল টেনে খুলে ফেললেন। তার ভিজে উঠা ঠোঁট জোড়া মুছে উঠলেন জায়গা ছেড়ে। গামছায় প্যাঁচানো বাটি আর কো/দা/ল লুকিয়ে রাখলেন ঘাসের আড়ালে। আমি পথ ধরলাম। পেছন থেকে হুট করে এসে কোলে তুলে নিলেন আমায়। ভয় পেয়ে চমকে উঠলাম। আঁকড়ে ধরলাম তার পাঞ্জাবি। অপ্রস্তুত গলায় বললাম, “ছাড়ুন। কেউ দেখবে?”

“কেউ বলতে? গাছের ডালে চড়ুই পাখি ছাড়া কেউ দেখবে না। এই বৃষ্টিতে ঘর থেকে বের হওয়ার সম্ভবনা নেই।”

“তবুও ছাড়ুন। আমার লজ্জা করে।”

“লজ্জার ‘লজ্জা’ করতে ইচ্ছে করছে, করুক। বাধা দিয়েছি না-কি? একটা কথা শোন, বলতে গেলে তোর চেয়ে দ্বিগুণ বয়স আমার। ঠিকঠাক বয়সে বিয়ে করলে দুই বাচ্চার বাবা হয়ে যেতাম। তোর পরিবর্তে তাদের একজনকে কোলে একজনকে পিঠে নিয়ে ঘুরে বেড়াতাম।” অপূর্ব ভাইয়ের কথায় নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। বৃষ্টির ফোঁটা পানির মাঝে পড়ে ছিটে যাচ্ছে। সেই অসাধারণ মুহুর্তের সাক্ষী হলাম।

এই মেঘলা দিনে
একলা ঘরে
থাকে না-তো মন
কাছে যাবো, কবে পাবো।
ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।
__
পনেরো দিন হয়েছে এখানে এসেছি। কীভাবে পেরিয়ে গেল? বৃদ্ধ ও বৃদ্ধা বসে আসছেন হোগলা বিছিয়ে।
কুঁড়ের ঘরের বেড়া ঘেঁষে শুয়ে আছি। ফাঁক দিয়ে দেখে যাচ্ছি সবকিছু। অপূর্ব ভাই পায়চারি করতে করতে কল করছেন তিস্তা আপুকে। বৃষ্টি নেই কাঠ ফাটা রোদ। তিস্তা আপু রিসিভ করছে না। এমন সময়ে পরপর কয়েকটা লোক ঘরে ঢুকে এলো। কিছু বুঝে উঠার আগেই অপূর্ব ভাইয়ের মাথায় চারবার আ/ঘা/ত করল। অপূর্ব ভাই মাথায় হাত দিয়ে চিৎকার করে উঠলেন। অপূর্ব ভাইয়ের চিৎকার শুনে কাঁথা থেকে বেরিয়ে এলাম। মিহির ভাই, বড়ো চাচা, বাবা, ছোটো চাচা। অপূর্ব ভাই মাটিতে শুয়ে কাতরাচ্ছে। চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে। রক্ত ভিজে যাচ্ছে মাটি। উঠতে গিয়ে চৌকির সাথে হোঁচট খেয়ে অপূর্ব ভাইয়ের গায়ে পড়লাম। জড়িয়ে ধরলাম তাকে। বড়ো চাচার হাত থেকে একটি আ/ঘা/ত আমার মাথায় এসে লাগল। পৃথিবীটা যেন ঘুরে উঠল।

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]

#এ_শহরে_তুমি_নেমে_এসো 💚
#ইফা_আমহৃদ
পর্ব: ৩৯

বৃদ্ধ, বৃদ্ধা পালিয়েছেন ইতোমধ্যে। তারা যেন হিংস্র হয়ে উঠেছে। আমি অপূর্ব ভাইকে এক হাতে জড়িয়ে ধরে রেখেছি। তিনি মাথায় হাত দিয়ে আমার দেহে ভর ছেড়ে দিয়েছেন। বাবা চাচারা আমাকে বাঁচিয়ে অপূর্ব ভাইকে আ/ঘা/ত করছেন। অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললাম, “প্লীজ, অপূর্ব ভাইকে ছেড়ে দিন। ওনাকে আর মা/র/বে/ন না।”

বাবা আমার হাত ধরে টান দিয়ে বললেন, “আরু সরে আয় বলছি। ওই ছেলেকে আজ জানে শেষ করে ফেলবো। কতবড় কলিজা, আমার বাড়ির মেয়ে নিয়ে পালিয়েছিল। কলিজা বের করে দেখব, কতখানি সাহস নিয়ে তোর দিকে হাত বাড়িয়েছিল।”

তারা বিরতিহীন ভাবে আ/ঘা/ত করে যাচ্ছেন। রক্তে আমার জামা ভিজে গেছে। চাচার পা জড়িয়ে ধরে বললাম, “চাচা জান, দোহায় লাগে উনাকে ছেড়ে নিন। উনি আর সহ্য করতে পারছেন না। প্লীজ চাচা।”

আঘা/তে আ/ঘা/তে জ-র্জরিত হয়ে জ্ঞান হারিয়েছেন অপূর্ব ভাই। আমি সামলাতে পারছি না। সবকিছু রেখে ছুটে গেলাম বাইরে। চিৎকার করে বললাম, “কেউ আছেন? আমাকে একটু সাহায্য করুন। আমার স্বামীকে ওরা মে/রে ফেলবে। প্লীজ বাঁচান।”

আশেপাশে কাক পক্ষীর দেখা নেই। আজকের দিনটা আমার জন্য অভিশপ্ত। কীভাবে বাঁচবা তার ঠিক নেই। বিরতি হীন ধারায় অশ্রু ঝরছে। চিৎকার করেও কারো দেখা মিলছে না। পুনরায় অপূর্ব ভাইকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে বললাম, “উনাকে প্লীজ ছেড়ে দিন। ছেলেটা বাঁচবে না। আমার উপরে একটু দয়া করুন।”

বাবা চ্যাঁচিয়ে বললেন, “কতবড় সাহস আমাদের বাড়ি থেকে আমাদের মেয়েকে তুলে নিয়ে এসেছে। ইচ্ছে করছে, কুঁ/চি কুঁ/চি করে শেয়াল কুকুরকে খেতে দেই।”

হাত জোর করে মাটির কাছে মিনতি করলাম, মাটি ফাঁক হয়ে যাক। আমরা দুজনে সেই ফাঁকে ঢুকে যায়। অপূর্ব ভাইয়ের জীবনটা বেঁচে যাক।
মিহির ভাই বাবা আর চাচাকে সামলে বললেন, “হয়েছে। এবার আরুকে নিয়ে আমরা চলে যাই। বুড়া বুড়ি অনেক আগে ঘর থেকে বের হয়েছে। যদি পুলিশে খবর দেয়, এতক্ষণে চলে আসার কথা।”

চাচা বললেন, “তাহলে এই হা/রা/মি/র বাচ্চাকে জ্যন্ত ছেড়ে দিবো?”

“আপনাদের মনে হয়, অপূর্ব জ্যন্ত আছে? বেঁচে নেই। বেঁচে থাকলেও হাসপাতালে নিতে নিতে মৃ/ত্যু নিশ্চিত। চলুন আমরা চলে যাই।” মিহির ভাইয়ের কথাতে শান্ত হলেন তাঁরা। আমি যেন জীবন্ত পাথর হয়ে গেলাম। আমার চোখের সামনে প্রিয় মানুষটি হারিয়ে যাবেন ভেবেই আধমরা আমি। বাবা হাতটা ধরে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। অসাড় হয়ে যাওয়া শরীর চলছে না। বাবা চিৎকার করে বললেন, “আরু, অপূর্ব-র ভালো চাইলে চলে আয়।”

“আমি যাবো না, অপূর্ব ভাইকে রেখে কোথায় যাবো না।” সাহসে কুলায় না সেই কথাটি বলতে। বাবা হাত ধরে টানতেই তার সাথে সাথে দেহটি চলল ধীর গতিতে। অপূর্ব ভাইয়ের হাতটা তখন দৃঢ় করে ধরা। ধীরে ধীরে বন্ধন আলগা হয়ে গেল। বাবা টানতে টানতে তাদের নিয়ে আসা গাড়িতে তুললেন আমায়। চলতে শুরু করল গাড়ি। ঠিক সময়ে তাকে হাসপাতালে না নিলে বাঁচানো সম্ভব নয়। মামা বাড়ির কেউ অপূর্ব ভাইয়ের কথা জানে না, জানে না তার অবস্থান, বাড়ি ঘর। হঠাৎ করেই মস্তিষ্ক সচল হয়ে উঠল। গায়ের ওড়নাটা দুই অংশ করলাম। অপূর্ব ভাইয়ের রক্ত দিয়ে লিখতে বসলাম তার বাড়ির ঠিকানা, ফোন নাম্বার। একটা হারিয়ে গেলে অন্যটা পাবেন। এই আশাতে দুই খণ্ডতে লিখলাম। জানালা দিয়ে ফেলে দিলাম বাইরে। চোখ জোড়া নিভে গেল। তলিয়ে গেল আঁধারে। অল্প আঘাতে আমি কাতর হয়ে গেছি, আমার অপূর্ব ভাই..
মনে মনে নিজের মৃত্যু কামনা করলাম। মামি যখন জিজ্ঞেস করবেন, তার ভালোবাসার কী প্রতিদান দিলাম। তখন উত্তর দেওয়ার জন্য যাতে এই শ্বাসনালীতে অক্সিজেন না থাকে। তলিয়ে যায় যেন মাটির তলদেশে।

সাথী ভালোবাসা মন ভোলে না
কখনো চলার পথে দুটি পথ মিলে যায়, কখনো এভাবে তারা দুটি দিকে চলে যায়।
মন তাদের সাথে চলে না
ও ভালোবাসা মন ভোলে না।
_____

চাঁদ মামা আকাশ থেকে নিরুদ্দেশ। মিটিমিটি করে জ্বলে থাকা তাঁরারা আজ গম্ভীর হয়ে আছে। ডান হাতে স্যালাইনের ক্যানেল ঝুলছে। আমাকে ঘিরে রয়েছে বাড়ির সবাই। কারো মুখে বলি নেই। ডাক্তার সাহেব শিউরে বসে আছেন। ঝাপসা দৃষ্টিতে দেখছি সবটা। চাচা উত্তেজিত হয়ে বলেন, “আরু কেমন আছে এখন?”

“ভালো নেই, মেন্টালি ডিপ্রেশড। ট্রমের ভেতরে আটকে আছে। নিজে থেকে বাঁচতে চাইছে না।” ডাক্তার সাহেব ব্যাগ নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। দাদি জান বিচলিত হয়ে বললেন, “তাহলে এখন করণীয় কী? আমাদের সোনামণিকে এভাবে ফেলে রাখতে পারি না।”

“আমার পক্ষে যতটুকু করা সম্ভব। ততটুকু করেছি। এরচেয়ে বেশি করা সম্ভব নয়। আজ তাহলে উঠি। অন্য কোনো প্রয়োজনে আবার ডাকবেন। আসি।” ডাক্তার সাহেব প্রস্থান করলেন। নিষ্পলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি হাতের দিকে। মাথায় মোটা ব্যান্ডেজ। দাদি যাওয়ার পূর্বে বলে গেলেন, “স্যালাইন স্টপ করে কিছু খাওয়াও নয়না। তারপরে একটু ঘুমালেই শরীর ঠিক হয়ে যাবে। তোমরা আসো, ভিড় করো না।”

চোখের সামনে সেই ভয়ংকর দৃশ্য গুলো ভেসে উঠছে। অপূর্ব ভাই কাতরাচ্ছেন। কাতরাতে কাতরাতে বলছেন, “আরু বাঁচা আমাকে। তোর বাবা চাচারা আমাদের সুখে শান্তিতে থাকতে দিবে না। আমাকে বাঁচতে দিবে না। তোকে বিধবা করে দিবে।”

মাথায় প্রচণ্ড যন্ত্রনা করছে। ছিঁড়ে যাচ্ছে সবকিছু। দু’হাতে মাথা চেপে চিৎকার করে উঠলাম, “আহ্! তাকে বাঁচাও। তাকে বাঁচাও। ওরা শেষ করে ফেলবে। আমি বিধবা হবো না, অপূর্ব ভাই আপনার কিছু হবে না।”

নয়না চাচি এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন, “কাকে বাঁচাবো? আরু চোখ মেলে দেখো। এখানে কেউ নেই।”

“মিথ্যা বলছো তোমরা, ঐ তো তাকে মা/র/ছে। আমার শরীর তার রক্তে মেখে আছে। আমি অপূর্ব ভাইকে ভালোবাসি। তোমরা প্লীজ তাকে কিছু করো না।” চোখ বন্ধ করে কথা গুলো বললাম। চোখের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রু ধারা। আমাকে সামলানোর জন্য সবাই আছে। কিন্তু অপূর্ব ভাইকে কেউ ধরছে না। সবকিছু অগোছালো রেখে দাদি জান চিৎকার করে বললেন, “যা আবুল। মিজান সাহেব এখনো বেশিদূর যেতে পারে নি। ওনাকে নিয়ে আয়। (নয়নাকে উদ্দেশ্য করে) ওর মাথার নিচে হাত দাও। মাথা সেনসিটিভ ইস্যু। আঘা/ত লাগলে মারাত্মক আকার ধারণ করবে।”

ডাক্তার ফিরে এলেন। সবাই চেপে ধরেছে আমায়। হঠাৎ করেই শক্তি বেড়ে গেছে। সূচের ফোটানোর মতো ব্যথা অনুভব করলাম। ইনজেকশন পুশ করলেন। মিনিট দুই লাগল শরীর অসাড় হতে। অতঃপর জ্ঞান হারিয়ে লুটিয়ে পড়লাম বিছানায়। অন্ধকারে আবৃত হলো চোখজোড়া। অপূর্ব ভাই চিৎকার করে বলছেন না, আমাকে বাঁচা আরু। কোথায় গেল তার কণ্ঠস্বর।

তবুও ওষ্ঠদ্বয় নাড়িয়ে উচ্চারণ করছি, “অপূর্ব ভাই আপনার আরু, আপনার কিছু হতে দিবে না। একটু ভরসা করুন তাকে।’

[চলবে.. ইন শা আল্লাহ]