ওগো বিদেশিনী পর্ব-০৪

0
131

#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_৪
#সারিকা_হোসাইন

——–
“ক্যাপ্টেন মাহাদ’

এয়ার চিফ মার্শাল বেনজির রিয়াজি স্পিকিং”

“জি স্যার বলুন”

“প্লিজ তুমি বিমান বাহিনীতে আবার উইং কমান্ডার হিসেবে জয়েন করো।
আমি প্রমিজ করছি সকল ধরনের সুযোগ তোমাকে দেয়া হবে।
তুমি চাইলে আমি তোমাকে ইন্টার ন্যাশনাল জেট ফ্লাইং এর গ্রুপ ক্যাপ্টেন হিসেবে জয়েন করার ব্যাবস্থা করে দিতে পারি।

প্লিজ কাম ব্যাক ক্যাপ্টেন মাহাদ”

মাহাদ কিছুক্ষণ ঠোঁট কামড়ে চোখ বন্ধ করে ভাবতে থাকলো

এরপর বিনয়ী সুরে বলে উঠলো

“আ উইল টেল ইউ মাই ডিসিশন লেটার স্যার”

ওকে মাই বয়
“আম গিভিং ইউ টাইম টু থিংক।

ফোন কেটে হোটেলের নরম সাদা তুলতুলে বিছানায় শুয়ে পড়লো মাহাদ।
চোখ বন্ধ করে মাহাদ ডুব দিলো আঠারো বছর আগের ভাবনায়।

মাহাদ তখন কেবল ক্লাস ফাইভে পরে।
স্কুল থেকে বাসায় আসার সময় দেখতে পায় একজন পিয়ন তার বাসার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মাহাদ কে দেখতে পেয়েই পিয়ন মাহতাব চৌধুরী নামক ব্যাক্তির কথা জিজ্ঞেস করে ।

মাহাদের বাবা ব্যাবসায়িক কাজে দেশের বাইরে থাকায় মাহাদ তার মাকে ডেকে পিয়নের থেকে চিঠি রিসিভ করে।

চিঠির উপরে প্রেরকের নাম দেখে মিসেস মিতালি তড়িঘড়ি করে ড্রয়িং রুমে বসে সাদা রঙের লম্বা ইনভেলপ টি ছিড়ে একটি ছবি সমেত চিঠি বের করে আনেন।

বন্ধু মাহতাব,

আমাদের এই নিঃসঙ্গ জীবনে তোর অবদান কতখানি তা বলে তোকে ছোট করার কোনো ইচ্ছে আমার নেই।এমিলিকে বিয়ে করার পর সবাই যখন আমার থেকে মুখ ফিরিয়ে আমাদের অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছে তখন তুই আর মিতালি আমার আর এমিলির জীবনে আলো হয়ে এসেছিস।

একমাত্র তোকেই আমি চোখ বন্ধ করে ভরসা করতে পারি।
তুই শুধু আমার বন্ধুই নস ভাইও বটে।
তাই তোর সাথে আরো অটুট বন্ধন গড়ে তুলতে চাই।
আমি সবসময় হেসে খেলে তোকে বলেছিলাম তোর ছেলে মেয়েদের সাথে আমার ছেলেমেয়েদের বিয়ে দিয়ে আমরা বন্ধু থেকে বেয়াই হয়ে যাবো।
তোর ছেলে মাহাদ বরাবরই আমার মন কাড়ে।
এই টুকুন ছেলের কথা বলার ধরন,ব্যাক্তিত্ব আমাকে মুগ্ধ করে।
মাহাদ বড় হয়ে যে একজন সুদর্শন পুরুষ হবে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না।

এমিলিও পুতুলের মতো একটা কন্যা সন্তানের জন্ম দিয়েছে।মেয়েটির ঠোঁট লাল রঙের ক্যামেলিয়া ফুলের ন্যায়। তুলতুলে এই ছোট্ট ফুলটির নাম এমিলি ক্যামেলিয়া রেখেছে।

আমি আমার মেয়েকে তোদের হাতে তুলে দিয়ে সত্যি ই তোর বেয়াই হতে চাই।
তুই কি সেই সুযোগ আমাকে দিবি?

ইতি
নাফিজ

মিতালি ছবিটি উল্টে পাল্টে মুগ্ধ হয়ে দেখলো। সাদা টাওয়েলে জড়ানো একটি ছোট মেয়ে।
মেয়েটি পুতুলের থেকেও সুন্দর।কি সুন্দর গোলাপি মুখ,লাল লাল ঠোঁট আর নীল রঙের চোখ!

মিতালি মুচকি হেসে মাহাদ কে কাছে ডেকে বলেছিলো
“মাহাদ তোর বউ দেখবি?”

ছোট মাহাদ কি তখন আর বউয়ের মানে বুঝে?

তবুও মাথা ঝাকিয়ে সায় জানিয়ে মিতালীর কাছে এসে ছবিটি হাতে তুলে নেয়।
মাহাদ ছবিটির বাচ্চা মেয়েটাকে দেখে বলে উঠে

“আম্মু আসলেই কি এই পুতুলটা আমার বউ?”

মিয়ালি খিলখিলিয়ে হেসে বলেছিলো “হ্যা” ।

এরপর মাহাদ পড়তে বসলেই ড্রয়িং খাতায় বিভিন্ন আঁকিবুকি করে নিজের মনের মতো করে ক্যামেলিয়ার ছবি আঁকার চেষ্টা করতো।

ধীরে ধীরে মাহাদ সত্যিই সুদর্শন পুরুষে রূপান্তরিত হলো সাথে ভালো পড়াশোনা,মেধা শক্তি আর নজরকাড়া উচ্চতা বলে বিমান বাহিনীর অফিসার ক্যাডেট হিসেবে জয়েন করলো।

ক্যামেলিয়া ও পনেরো বছরে পা দিলো।

নাফিজ হাসান নিয়ম করে মাহাদের কাছে ফোন করে জামাই সম্বোধন করে কথা বলতো আর ক্যামেলিয়া সম্পর্কে খুঁটিনাটি বিষয় আলাপ করতো।

এমিলির মৃত্যুর পর ক্যামেলিয়া নিজেকে গুটিয়ে একাকীত্ব সময় কাটায় এসব বলে নাফিজ হাসান অনেক দুঃখ প্রকাশ করতো মাহাদের কাছে।

নাফিজ হাসান মাহাদের অনুরোধে প্রতিদিন একটি করে ক্যামেলিয়ার ছবি পাঠাতো।আর মাহাদ সেগুলো রঙ তুলির আঁচড়ে নিজের মনের মাধুরী মিশিয়ে সুন্দর করে একে তার রুমে রেখে দিতো।

হঠাৎই একদিন মাহাদের মিশনে যাবার ডেট ফিক্সড হলো কঙ্গোগামী জাতিসংঘের শান্তি মিশনে।
সেখানে গিয়ে মাহাদ বেকায়দায় পরে যায়।
ছয় মাসের মিশন হলেও তিন বছর মাহাদ আর দেশে ফিরতে পারেনি।
এদিকে ক্যামেলিয়ার কোনো খুজ ও সে নিতে পারেনি।
এই তিন বছরে ক্যামেলিয়া দেখতে কেমন হয়েছে তাও মাহাদ জানে না।

বিদেশের মাটিতে মাহাদ ডাঙ্গায় তোলা মাছের মতো ছটফট করছে শুধু।
আর সপ্তাহে একদিন বাসায় দুই মিনিটের জন্য কথা বলার সুযোগ পেতো।
এই দুই মিনিট শুধু ক্যামেলিয়া ক্যামেলিয়া বলেই পাগলামি করতো।

অবশেষে দেশে এসেই মাহাদ তার দক্ষতা শক্তিতে অর্জিত উইং কমান্ডার এর পদ ফেলে সামরিক ট্যাগ কে বিদায় জানিয়ে বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ফ্লাইং ক্যাপ্টেন হিসেবে জয়েন করে।

যাতে বিনা বাধায় একনজর ক্যামেলিয়া কে দেখতে পারে।

সুইজারল্যান্ড যাবার পর মাহাদ এভাবে ক্যামেলিয়ার দেখা পাবে ভাবতেই পারেনি।

ভেবেছিলো নাফিজ হাসানের বাসায় গিয়ে তাকে সারপ্রাইজ দেবে।

কিন্তু সবকিছু এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।

রাস্তায় বসে ক্যামেলিয়ার কান্নার কথা ভাবতেই মাহাদের কলিজা মুষড়ে উঠে।

ক্যামেলিয়া নামক আফিমে আসক্ত থাকার কারনে মাহাদ কখনো কোনো মেয়ের দিকে চোখ তুলে তাকিয়ে পর্যন্ত দেখেনি।

রাস্তায় ক্যামেলিয়া যখন বসে কাঁদছিলো তখন মাহাদ তার দিকে দৃষ্টি দিয়ে খোলা কাঁধ দেখেই চোখ সরিয়ে নিয়েছে।
নিজের জ্যাকেট দিয়েছে মেয়েটিকে পড়তে তবুও মাহাদ তার মুখের দিকে তাকায়নি।
মেয়েটি গাড়িতে বসে কেঁদেছে মাহাদ শান্তনা পর্যন্ত দেয়নি।

যদি ঘূর্ণাক্ষরেও মাহাদ টের পেতো এটা ক্যামেলিয়া তাহলে মাহাদ তাকে বুকের ভেতর আগলে রাখতো।

নাফিজ হাসানের মৃত্যুর পর ক্যামেলিয়া ডেসপারেট আচরণ করেছে।

সেন্সলেস হয়ে পড়ে ছিলো তিনদিন হসপিটাল এর বেডে।

মাহাদ এমন পরিস্থিতিতে ক্যামেলিয়া কে দেখবে এটা তার কল্পনাতীত ছিলো।

ক্যামেলিয়ার ভিসা এপ্লাই এর জন্য নাফিজ হাসানের কক্ষে প্রয়োজনীয় কাগজ পত্রের তল্লাশি চালাতে গিয়ে ক্যামেলিয়া নামের একটি ফাইল দেখতে পায় মাহাদ।

উল্টে পাল্টে ফাইলটি দেখতেই মাহাদের পায়ের তলার মাটি সরে যায়।
ক্যামেলিয়া পারসোনালিটি ডিসওর্ডার সাইকোলজিক্যাল প্রব্লেমে ভুগছে।

একাকীত্ব, সঙ্গীহীন জীবন ক্যামেলিয়া কে যেকোনো সময় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবে।

মাহাদ দিকবিদিক শূন্য হয়ে ভিসা অফিসে অনেক কাকুতি মিনতি করলেও তারা জানায় পনেরো কার্যদিবসের আগে ভিসা পাওয়া সম্ভব না।

এদিকে মাহাদের ফ্লাইটের ডেট হয়ে যায়।

মাহাদ ক্যামেলিয়ার নানীর কাছে হাত ধরে সব কিছু খুলে বলতে বলতে কেঁদে ফেলে।
বৃদ্ধ মহিলা নাতনীর এমন সূচনীয় অবস্থার কথা শুনে নিজেকে অপরাধী ভেবে কেঁদে ওঠে।

এর পর ক্যামেলিয়ার নানী একয়দিন ক্যামেলিয়ার সাথে ছায়ার মতো থেকে এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে দেয়।
বাকি ব্যাবস্থা মাহাদ তার লিংক লাগিয়ে করিয়েছে।

হঠাৎই মাহাদের ধ্যান ভেঙে যায় মেসেজ টিউনের শব্দে।
আজ তার দেশে ফেরার ফ্লাইটের মেসেজ এসেছে।

মাহাদের আর ঘুম হলো না।
ফ্রেশ হয়ে ইউনিফর্ম পরে হোটেল চেক আউট করে বেরিয়ে এলো।

ক্যামেলিয়া কে দেশে ফিরে সামনে থেকে একনজর দেখা চাই।

★★★★★

আজকের বিকেল টা অলস বিকেল ই বলা যায়,না আকাশে মেঘ আছে না বৃষ্টি,চারপাশ থেকে হু হু করে এলোমেলো বাতাস বইছে।

জানালার ফিনফিনে পাতলা অফ হোয়াইট কার্টেন গুলো বাতাসে এদিক সেদিক উড়াউড়ি করছে।
এই অলস বিকেল ক্যামেলিয়ার খুব ভালো লাগছে।
হঠাৎই শোয়া থেকে উঠে বসলো ক্যামেলিয়া।

নিজের বরাদ্দকৃত কাবার্ড থেকে একটি বক্স বের করলো।
বক্স টি খুলতেই বেরিয়ে এলো মোটা ধূসর রঙের একটি জ্যাকেট।

জ্যাকেট টি রাস্তায় আগন্তুক ছেলেটি তাকে পরিয়ে দিয়েছিলো।
লোকটির হাটু সমান জ্যাকেট ক্যামেলিয়ার পায়ের পাতা পর্যন্ত স্পর্শ করেছে।
ভাবতেই ফিক করে হেসে উঠলো ক্যামেলিয়া।

তার বাবার চিন্তায় হতবাক হয়ে কাঁদতে কাঁদতে লোকটির চেহারার দিকেই তাকায়নি ক্যামেলিয়া।
আর লোকটিও নিজেকে যথেষ্ট রিজার্ভ রেখে তাকে হেল্প করেছে।

ক্যামেলিয়া দু তিন বার অবশ্য তার দিকে তাকিয়ে ছিলো।কিন্তু আগন্তুক মোটা মাফলারে নাক মুখ পেঁচিয়ে গাড়ি চালানোতে ব্যাস্ত ছিলো।
ওইদিন হঠাৎই বরফ পড়ছিলো,খুব সাবধানে লোকটি গাড়ি চালাচ্ছিলো।
ক্যামেলিয়া লোকটির চোখ দেখেছে শুধু।
চোখ তো নয় যেনো হার্পি ঈগলের দৃষ্টি।

জ্যাকেট টি গায়ে জড়িয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালো ক্যামেলিয়া।
তার বডির সাইজ থেকে দ্বিগুন বড় জ্যাকেট টি।
আয়নায় নিজেকে খুটিয়ে দেখতেই হঠাৎ দরজায় নকের আওয়াজ হলো।

তড়িঘড়ি করে জ্যাকেট টি কাবার্ড এ ভরে দরজা খুলে দিলো ক্যামেলিয়া।

হাই তুলতে তুলতে টুসি বলে উঠলো

“সবাই চা খাবে,তোকে ডাকছে তাড়াতাড়ি আয়”

নিজের গায়ের হাটু সমান লম্বা শার্ট আর লোজ প্লাজু প্যান্ট ঠিক করে গলায় স্কার্ফ পেঁচিয়ে নীচে নেমে এলো ক্যামেলিয়া।

ক্যামেলিয়ার দাদু আশফিক হাসান তার পাশে বসতে বললেন ক্যামেলিয়া কে।
ভদ্রতা বজায় রেখে আস্তে ধীরে সোজা হয়ে বসে চায়ের কাপ হাতে নিলো ক্যামেলিয়া।

মিসেস নাজনীন বলে উঠলেন
“অনেক গরম সাবধানে ধরে খাস”

ক্যামেলিয়া হালকা মাথা দুলিয়ে অল্প ফু দিয়ে চায়ে চুমুক দিলো।

হঠাৎই কলিং বেলের আওয়াজ বেজে উঠলো।

রিজভী উঠে গেলো দরজা খুলতে।

দরজা খুলেই বলে উঠলো
“আরে ভাই!
“কবে ফিরলে?

মিসেস নাজনীন গলা উঁচিয়ে জিজ্ঞেস করলো কে এসেছে রিজভী?

“গমগমে আওয়াজে উত্তর এলো
“খালামণি আমি”

মিসেস নাজনীন আহ্লাদী কন্ঠে বলে উঠলো

― মাহাদ নাকি?

আওয়াজ অনুসরণ করে উপরে চোখ তুলে তাকালো ক্যামেলিয়া।

ভ্রু কুঁচকে নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করলো আর্ট গ্যালারির সেই ছেলেটা এটা না?

“যার দিকে সে হা করে তাকিয়ে ছিলো!”

হঠাৎই লজ্জায় আর ইতঃস্ততায় ক্যামেলিয়ার বুক কেঁপে উঠলো সাথে সারা শরীর কাঁপতে থাকলো।
এ কেমন অস্বস্তি ক্যামেলিয়া জানেনা।

এই জায়গা থেকে দ্রুত পালাতে হবে,না হলে জ্ঞান হারাবে ক্যামেলিয়া।

এই লোকের সাথে তার কোনো কানেকশন নেই তবুও সে অস্বস্তি ফিল করছে।অস্বস্তি তে ক্যামেলিয়া বসেই থাকতে পারছে না।

তাই বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো ক্যামেলিয়া।

মাহাদ কেবলই তার হাতে থাকা চকলেটস এর প্যাকেট টা টুসীর দিকে এগিয়ে দিচ্ছিলো
অমনি ঝনঝন শব্দে আর মৃদু আর্তনাদে থমকে গেলো মাহাদ।

গরম চায়ের সিরামিকের কেটলি চা সমেত ক্যামেলিয়ার পায়ে পড়েছে।
ক্যামেলিয়া মাম্মা বলে আর্তনাদ করে চোখ মুখ খিচে সোফায় বসে পড়লো।

মাহাদের হাত থেকে নিচে পড়ে গেলো চকলেট এর প্যাকেট।

সকলেই দৌড়ে ক্যামেলিয়ার কাছে আসে, মাহাদ দিকবিদিক শূন্য হয়ে ঠাঁয় সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে।

একদিকে গরম চা পড়াতে পা জ্বলে ছারখার হয়ে যাচ্ছে অন্য দিকে কেটলি ভেঙে পায়ের পাতা কেটে গিয়েছে।
ব্যাথায় যন্ত্রনায় নাকের ডগা লাল হয়ে গেলো ক্যামেলিয়ার।
সাথে চোখ থেকে খসে পড়লো দু ফোটা মোটা অশ্রু দানা।

টুসি দৌড়ে রিজভীর রুম থেকে ফার্স্ট এইড বক্স আনলো।

মিসেস নাজনীন ফ্রিজ থেকে বরফ এনে ক্যামেলিয়ার পায়ে লাগিয়ে দিলেন।

নাবিল হাসান আর বৃদ্ধ আশফিক অস্থির হয়ে গেলেন এমন ঘটনায়।

কেটলি ভালোভাবে না রাখার জন্য মিসেস নাজনীন কে ধমকাতে শুরু করলেন নাবিল হাসান।

ক্যামেলিয়ার কাছে গিয়ে জ্বলুনি আর ব্যাথা কমাতে না পারার ব্যার্থতায় হাত মুষ্টিবদ্ধ করে মেঝের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে রাখলো মাহাদ।

ক্যামেলিয়া কে ছোবার কোনো অধিকার তার নেই।
কিন্তু বেহায়া মন ছুঁয়ে দিতে চাচ্ছে।
খুব যত্ন সহকারে রক্ত পরিস্কার করে মলম লাগাতে ইচ্ছে করছে।

কিছু সময় পর হন্তদন্ত হয়ে রিজভীর কাছে এসে গাম্ভীর্যপূর্ণ কন্ঠে বলে উঠলো
―জায়গা ছেড়ে দে রিজভী।

রিজভী বাধ্য দাসের ন্যায় দ্রুত উঠে মাহাদ কে বসার ব্যাবস্থা করে দিলো।
মাহাদ দ্রুত ফার্স্ট এইড বক্স খুলে এন্টিসেপটিক আর তুলা বের করলো।
যত্ন সহকারে ক্যামেলিয়ার পদ্মের পাপড়ির ন্যায় পা টা নিজের হাঁটুর উপর রাখলো।

ফু দিয়ে দিয়ে ক্ষত থেকে রক্ত পরিস্কার করলো।
ভালোই কেটেছে পা টা।
ওয়েন্টমেন্ট লাগাতে নিলেই ক্যামেলিয়া ব্যাথায় পা টান দিলো।

আহত চোখে মাহাদ তাকালো ক্যামেলিয়ার দিকে।
ক্যামেলিয়া মুখ তুলে মাহাদের দিকে দৃষ্টি দিলো।

কান্না আটকে রাখতে গিয়ে চোখ লাল বর্ন ধারণ করেছে তার।

মাহাদ আবার সন্তর্পণে পা টেনে নিয়ে এমন ভাবে মলম লাগালো যেনো আঙ্গুল ও টের পেলোনা সেই স্পর্শ।

এরপর সাদা রিবন গজ বের করে পায়ে পেঁচিয়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো ।

মাহাদ গমগমে কন্ঠে টুসীকে জিজ্ঞেস করলো

“কোন রুমে থাকে ও?

টুসি আঙুলের সাহায্যে রুম নির্দেশ করতেই মাহাদ এক ঝটকায় কোলে তুলে নিলো ক্যামেলিয়া কে।

লজ্জায় ,ভয়ে ক্যামেলিয়া আড়ষ্ট হলো।
মাহাদ ধপাধপ পা ফেলে এগিয়ে চললো দুতলায় ক্যামেলিয়ার কক্ষের দিকে।

রুমে এসে ক্যামেলিয়া কে বিছানায় বসিয়ে চলে আসতে নিলো মাহাদ।

হঠাৎই ক্যামেলিয়ার কি হলো কে জানে?
চোখ বন্ধ করে খামচে ধরলো মাহাদের শার্টের কলার।

মাহাদ আহত জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ক্যামেলিয়ার দিকে তাকাতেই কাঁপা কাঁপা হাতে কলার ছেড়ে অস্ফুট স্বরে ক্যামেলিয়া বলে উঠলো
“সরি”

লজ্জা অবনত ক্যামেলিয়ার মুখ দেখে সেই জায়গায় আর এক সেকেন্ড ও দাঁড়ালো না মাহাদ।

#চলবে