ওগো বিদেশিনী পর্ব-০৬

0
128

#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_৬
#সারিকা_হোসাইন

★★★
সাইকিয়াট্রিস্ট এর চেম্বার এর সামনে ওয়েটিং চেয়ার এ বসে আছে রিজভী আর ক্যামেলিয়া।
মাহাদ রিজভী কে এই জায়গার ঠিকানাটি দিয়েছে।
আজকে ক্যামেলিয়ার মন ভালো,সাথে মেঘমেদুর ঠান্ডা আবহাওয়া।

রিজভী ক্যামেলিয়া কে ডাক্তার এর কাছে যাবে কিনা জিজ্ঞেস করতেই ক্যামেলিয়া এক বাক্যে রাজি হয়েছে।

যদিও পা নিয়ে তার হাটতে সমস্যা হচ্ছে।তবুও খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাটতে পারে সে।

মাহাদ বলেছে সাইকিয়াট্রিস্ট এর কক্ষে ক্যামেলিয়া প্রবেশ করলেই মাহাদ ভেতরে ঢুকবে।

এখানেই আশেপাশে অপেক্ষা করছে মাহাদ।

মিনিট দশেক পরেই ক্যামেলিয়ার ডাক পড়লো।

রিজভী ক্যামেলিয়া কে ধরে ডাক্তার এর চেম্বারে নিয়ে গেলো।

ডাক্তার ক্যামেলিয়া কে বসতে বলে রিজভী কে বাইরে অপেক্ষা করতে বললেন।

সাইকাইট্রিস্ট ক্যামেলিয়ার কেইস হিস্টোরি জানতে বিভিন্ন প্রশ্ন শুরু করলেন।

“কেমন আছেন মিস ক্যামেলিয়া?”

“জি ভালো”

“রাতে ভালো ঘুমুতে পেরেছিলেন”

“জি”

সাইকিয়াট্রিস্ট একটি কাউচ্ নির্দেশ করে ক্যামেলিয়া কে বললো

“মিস ক্যামেলিয়া আমরা যদি একটু রিল্যাক্স হয়ে কথা বলি আপনার আপত্তি আছে?”

“ক্যামেলিয়া মাথা নাড়িয়ে না বোধক উত্তর দিলো।

এরপর ক্যামেলিয়া সাইকিয়াট্রি কাউচে গিয়ে বসলো।

একজন মেয়ে এসিস্ট্যান্ট এসে ক্যামেলিয়া কে কাউচে শুইয়ে দিয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট এর প্রয়োজনীয় জিনিস এগিয়ে দিলো।

“চলুন মিস ক্যামেলিয়া আমরা একটি অন্য জগতে হারিয়ে যাই।

ক্যামেলিয়া মাথা দুলিয়ে সায় জানালো।

সাইকিয়াট্রিস্ট একটি হিপ্নোটিক পেন্ডুলাম নিয়ে এলো ক্যামেলিয়ার চোখ বরাবর।
এরপর সেটাকে দুলিয়ে গুনতে থাকলেন

“ওয়ান——টেন”
দুই আঙুলের সাথে তুড়ি বাজাতেই চোখ বন্ধ করে ফেললো ক্যামেলিয়া।

অতি সন্তপর্নে মাহাদ ভেতরে প্রবেশ করে একটি চেয়ারে বসলো।

সাইকিয়াট্রিস্ট ঘড়ি ধরে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে প্রশ্ন শুরু করলেন

“মিস ক্যামেলিয়া আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্চেন?
অস্ফুট স্বরে ক্যামেলিয়া জবাব দিলো “হু”

“কি দেখতে পাচ্ছেন ক্যামেলিয়া?

কিছুক্ষণ মৌন থেকে ধীর কন্ঠে ক্যামেলিয়া বলতে শুরু করলো

“একটি ছোট বাচ্চা তার বাবা মায়ের সাথে খিলখিলিয়ে হাসছে।
বাচ্চাটি ছুটাছুটি করছে,বাচ্চার মা বাবা মন ভরে বাচ্চাটির হাসি উপভোগ করছে।

হঠাৎই বাচ্চাটির মাকে কেউ লুকিয়ে ফেলেছে।মেয়েটি কাঁদছে,মেয়েটির বাবাও কাঁদছে।

মেয়েটি আর তার বাবা মিলে কোথাও তার মা কে খুঁজে পাচ্ছে না।

মা কে হারিয়ে মেয়েটি একাকী বিষন্ন হয়ে ঘরের এক কোনে বসে কাঁদছে।

মেয়েটি আস্তে আস্তে বড় হয়ে যাচ্ছে।
বাসার হেল্পিং হ্যান্ড মেয়েটিকে অযথা বকাবকি করছে,শাসাচ্ছে।

মেয়েটির কোনো খেলার সাথী নেই তার বাবা ছাড়া।

মেয়েটি একা একা খেলছে,একা একাই কথা বলছে।তার মায়ের জন্য কাঁদছে।হেল্পিং হ্যান্ড তাকে ঠিক সময়ে খাবার ও দিচ্চে না।

মেয়েটির বাবার অনুপস্থিতিতে বাসার কাজের মহিলাটি মেয়েটিকে ইচ্ছেমতো সুযোগ পেলেই কষ্ট দিচ্ছে।

মেয়েটি তার কক্ষে দরজা আটকে তার টেডি দিয়ে মুখ ঢেকে কাঁদছে।

চঞ্চল মেয়েটি ধীরে ধীরে তার চঞ্চলতা হারাচ্ছে,শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে তার মায়ের সাথে কথা বলার বৃথা চেষ্টা চলছে তার।

বলতে বলতে হঠাৎই ক্যামেলিয়া অস্থির হয়ে উঠলো।
ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।

মাহাদ বিচলিত হয়ে উঠে দাঁড়ালো।

সাইকিয়াট্রিস্ট হাতের ইশারায় মাহাদ কে বসতে বললেন।

সাইকিয়াট্রিস্ট উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন

“মিস ক্যামেলিয়া কি হয়েছে আপনি কাঁদছেন কেন?”

মেয়েটির বাবার অনুপস্থিতিতে প্লাম্বার ছেলেটি মেয়েটির স্পর্শকাতর অঙ্গ গুলো খুব খারাপ ভাবে ছুঁয়ে দিচ্ছে।মেয়েটিকে ব্যাথা দিচ্ছে ।মেয়েটি খুব কাঁদছে।

মেয়েটি কেঁদে কেঁদে সাহায্য চাইছে।কিন্তু কেউ নেই তাকে সাহায্য করার।

হেল্পিং হ্যান্ড কে ডাকছে তবুও সে শুনছে না।

প্লাম্বার ছেলেটি খুব বিদঘুটে শব্দে হাসছে।
মেয়েটির ডাকে কেউ সাড়া দিলো না।

ছেলেটি ফিসফিস করে মেয়েটিকে বলছে

“ইফ ইউ টেল এনিওয়ান এবাউট হুয়াটস হ্যাপেন টুডে,আ উইল কিল ইউ”

প্লাম্বার ছেলেটি বিদঘুটে শব্দে হো হো করে হাসছে,মেয়েটি দৌড়ে তার কক্ষে গিয়ে দরজা আটকে বসে বসে কাঁদছে।

এর পর ক্যামেলিয়া চুপ করে চোখ বন্ধ করে শুয়ে আছে।আর কিছুই বলছে না।

সাইকিয়াট্রিস্ট আবার ডেকে উঠলো

“কি হয়েছে মিস ক্যামেলিয়া?আপনি কি আর কিছুই দেখতে পাচ্ছেন না?

একটু বাদে ক্যামেলিয়া আবার বলতে শুরু করলো

“একটা কালো কুৎসিত লোক মেয়েটির আত্মাটাকে একটা কৌটা তে ভরে ফেলেছে।মেয়েটির দেহ শুধু বাইরে পড়ে রয়েছে।

মেয়েটি কোনো কথা বলতে পারেনা,সেই কালো লোক মেয়েটিকে কারো সাথে মিশতে দেয় না।মেয়েটির মনের কথাও কাউকে বলতে দেয়না।

কুৎসিত লোকের অবাধ্য হলেই মেয়েটার গলা টিপে ধরে আর মাথায় খুব যন্ত্রনা দেয়।

প্লাম্বার ছেলেটি আবার এসেছে,মেয়েটি দৌড়ে ভয়ে তার কক্ষে দরজা আটকে রিডিং টেবিলের নীচে লুকিয়ে আছে।দরজায় ধপ ধপ করে কেউ আঘাত করছে।
এই শীতের মাঝেও মেয়েটি ঘামছে।আর হাঁটুতে মুখ লুকিয়ে কাঁদছে।
মেয়েটির বাবা এসে সুপার ম্যানের মতো তাকে বাঁচিয়ে দিলো।মেয়েটি কেনো দরজা বন্ধ করেছে বার বার জিজ্ঞেস করছে তার বাবা।
কিন্তু মেয়েটি কিছুই বলতে পারছে না।

ক্যামেলিয়া আবার কেঁদে উঠলো

“মেয়েটির বাবা ও হারিয়ে গেলো, মেয়েটি তার বাবা মা সবাইকে খুঁজছে কিন্তু কেউ নেই।মেয়েটি অন্ধকার একটি জঙ্গলে একা দিকবিদিক শূন্য হয়ে দৌড়াচ্ছে আর কাঁদছে।কিন্তু কেউ নেই সেখানে।

ক্যামেলিয়ার মুখের এসব কথা শুনে মাহাদের চোখের কোনে জল ভিড় করলো।
ক্যামেলিয়া সুস্থ না হলে কি উপায় হবে মাহাদের?ক্যামেলিয়া হীন মাহাদ কিভাবে শ্বাস নেবে এই নিষ্ঠুর ধরণী তে?

হঠাৎই ক্যামেলিয়া মুচকি হেসে উঠলো।

ক্যামেলিয়া বলতে শুরু করলো
মেয়েটির পিছে ধবধবে সাদা কাপড় পরিহিত তলোয়ার সমেত একজন স্যাভিয়র দাঁড়িয়ে আছে।

মেয়েটিকে সে তার চওড়া দেহের পিছনে লুকিয়ে ফেললো।
কালো কুৎসিত লোক আর স্যাভিয়র এর মধ্যে যুদ্ধ চলছে।

কিন্তু কে জিতবে?

হঠাৎই ক্যামেলিয়া চোখ খুলে তাকালো,এবং উঠে বসলো।
এরপর উঠে দাঁড়িয়ে কোনো দিকে না তাকিয়ে বাইরে চলে এলো।

রিজভীর কাছে এসে বলে উঠলো

“এখানে আর ভালো লাগছে না ভাইয়া,তাড়াতাড়ি বাসায় চলো।”

ভেতরে যেহেতু মাহাদ আছে তাই রিজভী কিছু প্রশ্ন না করে হাত ধরে ক্যামেলিয়া কে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো।

******
দেখুন ক্যাপ্টেন মাহাদ মেয়েটি খুব খারাপ ভাবে ডিপ্রেসড।তার সমস্যাটা ধীরে ধীরে প্রকট হচ্ছে।পারসোনালিটি ডিসওর্ডার খুবই খারাপ একটা প্রবলেম।
হীনমন্যতা,নিজেকে নিয়ে সারাক্ষন বিভিন্ন আজেবাজে চিন্তা,ঘুম না হওয়া কারো সাথে মিশতে না পারা এটা তার নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এখন তার বিভিন্ন জিনিসে হ্যালুসিনেশন তৈরি হচ্ছে।

মনোরোগের কোনো ওষুধ হয়না মিস্টার মাহাদ এটা তো জানেন?

“তাহলে কিভাবে এই সমস্যা থেকে ও নিজেকে বের করতে পারবে ডক্টর?”..

“ক্যামেলিয়ার সকল কথা শোনার পর মনে হচ্ছে সে তার মায়ের মৃত্যুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মানে দীর্ঘ আট বছর ধরে একাকীত্ব,ভীতি,রাগের সমন্বয়ে সময় কাটাচ্ছে।

ছোট বেলায় সে সেক্সওয়াল হ্যারেস এর শিকার ও হয়েছে।
সঙ্গীহীন,মায়ের আদর ছাড়া,,খেলার সাথী হীন মেয়েটা ধীরে ধীরে নিজের সব গুলো পজিটিভ দিক হারিয়ে ফেলেছে।

এরপর ডক্টর ক্যামেলিয়ার ফাইল গুলো উল্টে পাল্টে দেখে আবার বলতে শুরু করলেন

“মানুষের ছয়টি মৌলিক আবেগের মধ্যে তিনটি উনি হারিয়ে ফেলেছেন।
আর বাকি তিনটি যথা,ভয়,রাগ আর দুঃখ কে উনি তার সারাখনের সঙ্গী হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
তার মধ্যে বাকি তিনটি আবেগ ও ফিরিয়ে আনতে হবে।

মাহাদ উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো সেই বাকি তিনটি কি?

ডক্টর মাহাদের দিকে তাকিয়ে নির্বিকার ভাবে বলে উঠলেন
খুশি,উত্তেজনা আর টেন্ডার মানে সংবেদনশীলতা,আদর,ভালোবাসা,কোমলতা ইত্যাদি।

“আমি কিছু মেডিসিন প্রেসক্রাইব করবো।সাথে সাইকো থেরাপি।
যা পেশেন্ট কে সাধারণ অনুভূতি গুলো বুঝতে সহায়তা করবে।
আর আপনারা যতোটা পারেন সময় দিয়ে হোক,আনন্দ দিয়ে হোক ,গল্প করে হোক একা থাকতেই দিবেন না।”

মাহাদ ডক্টর এর থেকে প্রেসক্রিপশন নিয়ে ধন্যবাদ দিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো।
গাড়িতে বসে মাহাদ আনমনে ভাবছে
কিভাবে কি করবে?
এদিকে ভিসার মেয়াদ আছে আর একমাস আঠারো দিন।লম্বা প্রসেসের একটি চিকিৎসা।এমন পরিস্থিতিতে ক্যামেলিয়া কে কিভাবে একা ছাড়বে সে?

*****
ঘড়িতে সময় রাত দশটা বেজে পঁচিশ মিনিট।আজ বাইরে তুমুল বৃষ্টি হচ্ছে সাথে জোড়ালো বাতাস।ঠান্ডা ওয়েদার।
বৃষ্টির তালে তালে নেচে চলেছে গাছের পাতা গুলো। বৃষ্টির দমকে আকাশ আর দেখা যাচ্ছে না।
এমন আবহাওয়া তে ফ্যান ছেড়ে কাঁথা মুড়ি দিয়ে ঘুমুতে অনেক মজা।
একটু আগেই শেষ হয়েছে প্রত্যেকের রাতের খাবার খাওয়া।
সবাই যার যার রুমে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

ক্যামেলিয়া দরজা বন্ধ করতে যাবে এমন সময় ই রুমে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো টুসি আর সুজানা।

ক্যামেলিয়া তাদের এই রুমে আসার হেতু জানতে চাইলো।

সুজানা আগেই টুসি কে সব বুঝিয়ে দিয়েছে

“শোন টুসি,যাদের মানসিক সমস্যা আছে তারা হচ্ছে ছোট বাচ্চাদের মতো।এদের কে সাধারণ মানুষের মতো করে বুঝিয়ে বা জেদ করে,ধমকে কিছু করা যাবে না।

বাচ্চাদের কে বাচ্চা হয়েই হ্যান্ডেল করতে হবে।
বুঝতে পেরেছিস কি বলেছি?

“হ্যা সুজানা আপু বুঝেছি,চলো মিশন স্টার্ট করি।

ক্যামেলিয়ার প্রশ্নে টুসি বলে উঠলো
“ক্যামেলিয়া তুই কি মজার কার্টুন দেখতে চাস আমাদের সাথে?
একটা কার্টুন আছে গোপাল ভাড় নাম

“দেখবি?

“আমাকে কি তোর বাচ্চা মনে হচ্ছে টুসি?
বিছানা গুছাতে গুছাতে জবাব দিলো ক্যামেলিয়া।

সুজানা বলে উঠলো
“ক্যামেলিয়া চলো আমরা আজ সারা রাত মুভি দেখি।অনেক মজার মুভি।

ক্যামেলিয়ার উত্তরের আশা না করেই দুজনে ক্যামেলিয়ার গুছানো বিছানায় শুয়ে গেলো।
একটু বিরক্ত হলো ক্যামেলিয়া।

এরপর দুজনে মিলে ক্যামেলিয়া কে টেনে বিছানায় এনে মধ্যখানে শুইয়ে দিলো।

সুজানা বলে উঠলো
“বৃষ্টির দিনে এই শহরে কালো কালো ভুত ঘুরে বেড়ায় ক্যামেলিয়া।একা ঘুমালেই মানুষের উপর সওয়ার হয় তারা।

কালো ভুতের কথা শুনতেই ক্যামেলিয়া ভীত সন্ত্রস্ত হলো।
চুপচাপ শুয়ে পড়লো সুজানা আর টুসীর মধ্যে।

সুজানা বেছে বেছে একটা ফানি মুভি বের করলো।

এরপর স্টার্ট করতেই টুসি ফিক করে হেসে উঠলো।

হাসি হচ্ছে এমন একটি জিনিস,কেউ হাসলে নিজের ও হাসতে ইচ্ছে করে।
মুভির মধ্যে এমন সব ফানি সিন বের হতে লাগলো
ক্যামেলিয়ার ও হাসি পেয়ে গেলো।
দীর্ঘ দুই ঘন্টা ধরে মুভি চলতে থাকলো আর তারা মন খুলে হাসতে লাগলো।

হঠাৎই ক্যামেলিয়া খেয়াল করলো তার ভালো লাগছে অনেক।দম বন্ধ লাগছে না।মাথায় ভোঁতা যন্ত্রনা টাও আর হচ্ছে না।

মুভি শেষ করে তারা তাদের স্কুল কলেজের জীবনের গল্প জুড়লো।

বন্ধু বান্ধবীদের সাথে মজার মজার স্মৃতি বলতে লাগলো।

ক্যামেলিয়ার জীবনে সেরকম কোনো মজার বা আনন্দের স্মৃতি নেই।
কিন্তু হঠাৎই তার টুসি আর সুজানার কাছে আর্ট গ্যালারিতে ঘটে যাওয়া কথা গুলো বলতে ইচ্ছে হলো।

ওই দিন সে হঠাৎই অবাক হয়েছে সাথে এক অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি পেয়েছে।

আর সেই জ্যাকেট ওয়ালার জ্যাকেট এর কথাটা।

এরপর ক্যামেলিয়া দ্বিধান্বিত ইতঃস্ততায় রুমের লাইট অন করে কাবার্ড খুলে জ্যকেট টি বের করলো।

জ্যাকেট টি দেখেই সুজানা মুখ টিপে হেসে টুসীকে চোখ দিয়ে ইশারা করলো।

টুসি অবাকের ভান ধরে জিজ্ঞেস করলো

“এই গরম দেশে এতো ভারী জ্যাকেট কেনো এনেছিস ক্যামু?

“এটা একটি ছেলে আমাকে পরিয়ে দিয়েছিলো পাপা যেদিন হসপিটাল এ ছিলো ওইদিন।
জানো ওইদিন খুব তুষার পড়ছিলো।
থেমে থেমে লাজুক হয়ে বলল ক্যামেলিয়া।

“জ্যাকেট ওয়ালার চেহারা দেখেছো তুমি ক্যামেলিয়া?”
উৎসুক হয়ে জানতে চাইলো সুজানা

ক্যামেলিয়া মাথা নেড়ে না বোধক উত্তর করলো।
এরপর ক্যামেলিয়া তাদের ধীরে ধীরে সেই আর্ট গ্যালারির কথা গুলো ও বললো।।

সুজানা হঠাৎই ক্যামেলিয়ার দুই বাহু চেপে ধরে বলে উঠলো

“কাল আমি তোমাকে একটা সারপ্রাইজ দিবো।তুমি কি সেটা গ্রহণ করবে ক্যামেলিয়া?

টুসি মনে মনে আল্লাহ কে ডাকছে যাতে ক্যামেলিয়া রাজি হয়।

ক্যামেলিয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে বললো
“আচ্ছা ঠিক আছে”

******
সারা রাত মাহাদ এক ফোটাও ঘুমুতে পারেনি।পুরো উইকেন্ড মাহাদের কোনো কাজ নেই।
শুয়ে শুয়ে ভাবছে কি করা যায়,হঠাৎই মাহাদের আঁকা ক্যামেলিয়ার নতুন পেইন্ট টাতে চোখ গেলো।

তড়িৎ গতিতে উঠে গিয়ে পেইন্টিং এ নজর দিলো।
ক্যামেলিয়ার অধরের নিচের কালো কুচকুচে তিলটা মাহাদ আঁকতে ভুলে গেছে।

এতবড় ভুল কিভাবে তার দ্বারা হলো?

দ্রুত তুলি আর রঙ নিয়ে মাহাদ তিলটা আকলো।

এরপর একটি টাওয়েল নিয়ে ওয়াশ রুমে প্রবেশ করলো।

শাওয়ার এর নিচে ভিজতে ভিজতে হঠাৎ ই মাহাদের মাথায় রক্ত উঠে গেলো।
হাত মুঠি করে টাইলস করা সাদা দেয়ালে সজোড়ে মারলো এক ঘুষি।

এর পর দুই হাত দেয়ালে ঠেকিয়ে ভিজতে ভিজতে ভাবতে লাগলো

কিভাবে ওই প্লাম্বার তার নোংরা হাতে ক্যামেলিয়া কে ছুঁয়েছে?

যেভাবেই হোক মাহাদ তাকে খুঁজে বের করবে এবং তার হাত দুটো কেটে নেবে।

#চলবে