#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_১৮
#সারিকা_হোসাইন
_______
ক্যামেলিয়ার মনে বিষণ্নতার মেঘ জমে মন ভার হয়ে রয়েছে।গত রাতে থেকেই সে মাহাদকে অক্টোপাসের মতো পেঁচিয়ে ধরে আছে।
থেকে থেকে না চাইতেও নেত্র কোল বেয়ে টুপ করে ঝরে পড়ছে মুক্তা দানার মতো ফোটা ফোটা জল।
ক্যামেলিয়ার এহেন অসহায় কান্নারত মুখশ্রী কোনো ভাবেই সহ্য করতে পারছে না মাহাদ।
সব কিছু ছেড়ে ছুড়ে ক্যামেলিয়া কে নিজ বক্ষে লুকিয়ে বসে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে তার।
সারা রাত ক্যামেলিয়া নিজেও ঘুমায়নি মাহাদ কেউ ঘুমুতে দেয়নি।
সারা রাত মাহাদকে এভাবেই জাপ্টে ধরে কেঁদে চলেছে।
পনেরো দিনের অবকাশ কাটানোর পর আজ মাহাদের ফ্লাইট এর ডেট পড়েছে।
যেকোনো মূল্যে আজ তাকে যেতেই হবে।
এদিকে ক্যামেলিয়া নাছোড়বান্দা।
তার এক কথা
“মাহাদ কে ছাড়া সে থাকতে পারবে না”
মাহাদ ক্যামেলিয়া কে বহু ভাবে বুঝিয়ে ব্যার্থ হয়ে হাল ছেড়ে বাকশূন্য হয়ে বসে আছে।
বহমান সময় কারো জন্য থেমে থাকেনা।
আজ পরিস্কার ঝলমলে মেঘমুক্ত আকাশ।মাহাদ কে আজ বিকেল সাড়ে চারটার ফ্লাইটে এটেন্ড করতেই হবে।
এজন্য অবশ্য তাকে আরো ঘন্টা দুয়েক আগেই বাড়ি ছেড়ে বেরুতে হবে।
ফ্লাইং ডিপর্চারে তার ম্যালা কাজ জমা পড়েছে।
ভারী বৃষ্টি আর বাতাসের প্রভাবে যেই ফ্লাইট গুলো পোস্টপন্ড ছিলো সেগুলোর লম্বা এক বিজি শিডিউল তৈরি হয়েছে।
মাহাদ এবার একটু দেরিতে ফিরবে।
ঢাকা এয়ারপোর্ট থেকে এবার কোথায় কোথায় যে তাকে যেতে হবে সে নিজেও জানেনা।
ক্যামেলিয়ার কান্না কাটিতে মাহাদ -ক্যামেলিয়া কেউ সকালের খাবার খায়নি।
মাহাদ চলে যাবে বিধায় বাড়ির কেউ অযথা ডাকাডাকি করে তাদের বিরক্ত করতেও আসেনি।
বহু কষ্টে ক্যামেলিয়া কে নিজের থেকে ছাড়িয়ে চোখের জল মুছিয়ে মাহাদ বুঝাতে লাগলো
“আমি কি চিরদিনের জন্য চলে যাচ্ছি নাকি পাগল?
“খুব দ্রুত ফিরে আসবো প্রমিজ।
“সুযোগ পেলেই তোমাকে ফোন করবো।
বলেই ক্যামেলিয়ার কপালে গাঢ় চুম্বন একে দিলো।
বিছানা ছেড়ে ঝটপট উঠে মাহাদ তার ফ্লাইং লাগেজ বের করে নিজের প্রয়জনীয় জিনিস পত্র গুছাতে শুরু করলো।
মাহাদের ব্যাগের উপর উঠে বসে পড়লো ক্যামেলিয়া।
এরপর কান্না ভেজা কণ্ঠের বলে উঠলো
“আমিও আপনার সাথে যাবো মাহাদ ভাই”
মাহাদ পড়লো মহা ফ্যাসাদে।
ক্যামেলিয়া কে কোমর ধরে লাগেজ থেকে নামিয়ে নিজের কোলে বসালো।
এরপর ক্যামেলিয়ার গাল টিপে মুখে লেপ্টে থাকা বাদামি কোঁকড়া চুল গুলো সরিয়ে আদুরে স্বরে বলে উঠলো―
“তুমি কি ছোট বাচ্চা হয়ে গিয়েছো ক্যামেলিয়া?
আমার সাথে তোমাকে সত্যি ই আমি নিয়ে যেতাম যদি স্পেশাল পাসপোর্ট তোমার থাকতো।
চাইলেই আমরা এক দেশ থেকে আরেক দেশে যেতে পারবো না মনা।
“তোমাকে এভাবে ফেলে যেতে কি আমার ভালো লাগছে বলো?
আর বাসায় সুজানা আছে ,মা আছে চাইলে টুসীর ওখানে চলে যাবে।যা ইচ্ছে তাই করবে।
মাঝে মাঝে এই বজ্জাত ময়না পাখিটার সাথে কথা বলবে।
দেখবে মোটেও আর একা লাগছে না।
“আমার একা লাগবে খুব একা লাগবে মাহাদ ভাই।
“আপনি আমার কমফোর্ট জোন।
“আপনাকে ছাড়া আমার এক সেকেন্ড এক হাজার বছরের সমান।”
বলেই মাহাদকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে কেঁদে উঠলো ক্যামেলিয়া।
মাহাদ ক্যামেলিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে নানা ভাবে শান্তনা দেবার চেষ্টা চালালো।
মাহাদ ঘড়িতে চোখ বুলিয়ে সময় দেখে নিলো।
সব কিছু গুছাতে গুছাতে প্রায় ঘড়ির কাঁটার ঘর দুটো পার হয়ে যাবে।
কিভাবে এই অবুঝ ছোট বৌটাকে হ্যান্ডেল করবে মাহাদ?
দুই হাতের আজলায় ক্যামেলিয়ার মুখ ধরে মাহাদ বলে উঠলো
“যাবার আগে কি তোমাকে একটা খুব খুব ছোট্ট কিউট বেবি দিয়ে যাবো ক্যামেলিয়া?”
“আমাদের বেবি”!
তোমার আর আমার পবিত্র সম্পর্কের নিদর্শন হয়ে থাকবে সেই ছোট কিউট বেবীটা!
বলেই মাহাদ মাদকতা মিশ্রিত চাহনি নিক্ষেপ করলো ক্যামেলিয়ার পানে।
মুহূর্তেই লজ্জায় রক্তিম আভা ছড়ালো ক্যামেলিয়ার নাকের ডগায় আর ফোলা ফোলা গালে।
সেটা দেখে মাহাদ আরো বেসামাল হলো।
সহসাই ক্যামেলিয়ার গলায় লাভ বাইট দিয়ে বলে উঠলো
“আম লুজিং মাই কন্ট্রোল ক্যামেলিয়া,”
“প্লিজ হ্যান্ডেল মি”
মাহাদের উষ্ণ স্পর্শে শিহরিত হয়ে চোখ বুঝে ফেললো ক্যামেলিয়া।
আবেশে মাহাদের শার্টের কলার খামচে ধরে নেশাক্ত দৃষ্টি মেলে বলে উঠলো
“আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু কন্ট্রোল ইউ ক্যাপ্টেন মাহাদ”
“রিয়েলি?”
“ইয়েস”
“অলরাইট, লেট মি বি ক্রেজি”!
*********
দীর্ঘ সময় ধরে মাহাদের কোনো দেখা না পেয়ে রাগে কুহুর চুল ছিড়তে ইচ্ছে করছে।
“কি আছে ওই মেয়ের মাঝে যে সারাদিন ঘরে বন্দি হয়ে বসে থাকতে হবে?”
এই দুনিয়ায় আর কি কারো সুন্দরী বউ নেই নাকি?
এই বিদেশিনীর ভালোবাসায় এতটাই উন্মাদ হয়েছে মাহাদ !
কুহুও তো তাকে ভালোবাসে!
কই সেই ভালবাসা তো কোনোদিন বুঝার চেষ্টা করেনি মাহাদ!
এর আগেও বহুবার কুহু তার ফিলিংস মাহাদকে বোঝাতে ব্যার্থ হয়েছে।
বিদেশিনীর প্রেমে মত্ত হয়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো মাহাদ।
অন্য কারো প্রেম,ভালোলাগা, ভালোবাসা তার চোখেই লাগেনি।মনেও ধরেনি।
বারবার কুহুর কঠিন অনুভূতি কে সাময়িক মোহ বলে বলে কুহুর নরম হৃদয় কে রক্তাক্ত করেছে সে।
এবার যেহেতু কুহু এই বাড়িতে পা রেখেছে,তবে মাহাদকে হাসিল করেই ছাড়বে সে।
সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙ্গুল বাঁকাতে দোষ কোথায়?”
“কতোদিন ধৈর্য ধরে এই মেয়েকে সামলে রাখবে মাহাদ?”
এই মেয়ের উপর মাহাদের বিতৃষ্ণা তুলে তবেই সে ক্ষান্ত হবে।
“পাগল ক্ষেপাতে কি বহু প্রতীক্ষার প্রয়োজন আছে?”
মনে মনে মাহাদ চলে যাবার পর ক্যামেলিয়ার বিধস্ত অবস্থা ভেবেই ক্রুর হাসলো কুহু।
ক্যামেলিয়ার হাসি খুশি মুখশ্রী মনে পড়তেই রাগে পায়ের ব্যাথা ভুলে সকলের চোখের আড়ালে মাহাদের কক্ষের দরজায় এসে কান পাতলো কুহু।
ক্যামেলিয়ার আনন্দঘন মৃদু আর্তনাদ আর শীৎকারের অস্পষ্ট আওয়াজে রাগে শরীর জলে গেলো কুহুর।
ক্যামেলিয়ার প্রতি খু/ন চেপে দরজা ভেঙে ফেলতে ইচ্ছে হলো তার।
কোনোভাবেই নিজের রাগ সংবরন করতে না পেরে নিজের চুল নিজেই টেনে ধরে মনে মনে বলে উঠলো―
“তোর এই সুখ যদি আমি না ছুটিয়েছি তবে আমার নাম কুহু নয়”
মাহাদ এবার ফিরে তোকে আর এই বাড়িতে পাবেনা দেখিস।
এক তুড়িতে তোকে এই বাড়িছাড়া করবো আমি ।
“স্কাউনড্রেল ব্লাডি বিচ কোথাকার”
______
বিমর্ষ মুখে নিজের রিডিং টেবিলে বসে বসে অযথা আঁকিবুকি করছে সুজানা।
যখন মন খারাপ থাকে তখন পুরো পৃথিবী বিষাদ লাগে।
হঠাৎই পিছন থেকে গলা খাকরি দিয়ে উঠলো টুসী।
টুসীর গলার আওয়াজ শুনে ভাবের কোনো পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেলো না সুজানার।
নীরবে দাঁড়িয়ে নিজের মনের কথা গুলো প্রথমে সাজিয়ে নিলো টুসি।
এরপর জিহবা দিয়ে নিজের শুষ্ক ঠোঁট জোড়া ভিজিয়ে রিনরিনে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো
“তুমি কি ভাইয়াকে ভালোবাসো সুজানা আপু?””
টুসীর মুখে এমন কথা শুনে আঁকিবুকির হাত থেমে গেলো সুজানার।
কিছুক্ষন সে মৌন থেকে টুসীর পানে দৃষ্টি নিবদ্ধ করলো।
এরপর ভেজা কন্ঠে বলে উঠলো
“তোর ভাই কঠিন হৃদয়ের পুরুষ টুসী।
“সেই কঠিন হৃদয়ের মানুষটাকে ভালোবেসে আমি ঘোর পাপ করেছি।”
“সেই পাপের সাজা হিসেবে কি পেয়েছি জানিস?
“তাকে ভুলতে না পারার যাবজ্জীবন কষ্টদন্ড”
সুজানার কথায় টুসীর মনে কালো মেঘের পাহাড় জমলো।
টুসি আরো অনেক আগে থেকেই বুঝতে পেরেছিল সুজানার মনের অব্যাক্ত অনুভূতি।
কিন্তু রিজভীর ঠাটবাট এর সামনে টিকতে পারবে না বলে টুসি সুজানার জন্য কিছুই করতে পারেনি।
কিন্তু ধীরে ধীরে হাসিখুশি সুজানা মলিনতার চাদরে নিজেকে মুড়িয়ে নিচ্ছে এটা কোনো ভাবেই মানতে পারছে না টুসি।
যে করেই হোক সুজানার মনে রিজভী যেই দহনের সৃষ্টি করেছে টুসি তা নিভিয়ে দেবে।
দরকার পড়লে নিজের মায়ের কাছে গিয়ে সব বলে দেবে সে।
——–
ডিউটি ইউনিফর্ম পরে নিজেকে তৈরি করে নিলো মাহাদ।
ব্যাগ পত্র গুছিয়ে ক্যামেলিয়ার কাঁধ জড়িয়ে সিঁড়ি বেয়ে ড্রয়িং রুমে নেমে এলো।
মিসেস শাহানা আর কুহু বাদে সকলেই উপস্থিত আছে এখানে।
মিতালি চৌধুরী কে উদ্দেশ্য করে মাহাদ গমগমে কন্ঠে বলে উঠলো
“আমানত হিসেবে ক্যামেলিয়া কে রেখে যাচ্ছি এই বাড়িতে।ওর সামান্যতম মন খারাপের কারনও আমি বরদাস্ত করবো না।
বাড়ির প্রত্যেক টা সদস্য কান খুলে শুনে রাখো
“যার জন্য ক্যামেলিয়া তার মনে এক চুল পরিমাণও কষ্ট পাবে ফিরে এসে তার নাম জানতে পারলে ডিরেক্ট পুঁ/তে ফেলবো।
মাহাদ এসব কথা কেনো বলছে মিসেস মিতালি সহ সকলেই সেটা আঁচ করতে পেরেছে।
তবুও মুখে কিছু না বলে মাহাদ কে আশস্ত করলো সকলে।
আরো কিছু হুঁশিয়ারি দিয়ে মাহাদ টুটুল কে কল করে গাড়ি বের করতে বললো।
ক্যামেলিয়া মাহাদের পিছু পিছু বাইরে চলে আসলো।
গাড়িতে ওঠার আগ পর্যন্ত মাহাদ ক্যামেলিয়ার হাত ধরে রাখলো পরম মমতায়।
টুটুল গাড়ি নিয়ে আসতেই ক্যামেলিয়ার হাতে মৃদু চুম্বন দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করে বিষন্ন মনে অসহায় ভঙ্গিতে ক্যামেলিয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো মাহাদ
এরপর আহত কন্ঠে বলে উঠলো―
“ঠিক মতো খাবার খাবে,ভালো মেয়ের মতো সকলের সাথে প্রাণ খুলে সব শেয়ার করবে আর বেশি বেশি হাসবে।
“যদি একটাও না করেছো তাহলে কিন্তু আর ফিরবো না বলে দিলাম।
মাহাদের মুখে এমন ভয়ানক কথা শুনে সহসাই ক্যামেলিয়া তার চিকন সরু তুলতুলে হাতের করপুটের সহায়তায় মাহাদের মুখ চেপে ধরলো।
“এমন কথা বলবেন না প্লিজ।আপনি না ফিরে এলে আমি আর বাঁচবো না মাহাদ।
“তাহলে আমি যা যা বলেছি তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে কথা দাও”
“কথা দিলাম আমি আপনার সব কথা মেনে চলবো।”
ক্যামেলিয়া কে বুকে টেনে মাথায় চুমু একে বলে উঠলো
“কারো কথা কানে নিয়ে মাথা গরম করবে না।ঠিক আছে?
ক্যামেলিয়া মাহাদের টাইয়ের নট ঠিক করতে করতে বলে উঠলো
“আচ্ছা!
এরপর ক্যামেলিয়া কে আলবিদা জানিয়ে গাড়িতে উঠে বসলো মাহাদ।
মাহাদের গাড়ি স্টার্ট হতেই নীরবে ক্যামেলিয়ার নেত্র বেয়ে খসে পড়লো দুফোটা জল।
ধীরে ধীরে মেইন গেট পার হয়ে বড় রাস্তা ধরলো মাহাদের গাড়ি।
পিছন ফিরে অসহায় ক্যামেলিয়া কে দেখে হৃদয়ে সূক্ষ্ণ ব্যাথা অনুভব করলো মাহাদ।
ফুঁস করে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে উঠলো
“তোমার ভাবি বড্ড ছেলে মানুষ টুটুল।”
এদিকে একাকী ক্যামেলিয়া কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে সুজানা আর টুসি এসে ক্যামেলিয়ার দুই হাত চেপে ধরে একপ্রকার বগল দাবা করে ঘরের ভেতর নিয়ে চললো।
______
সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে আর কিছু সময় বাকি।
কোহিনুর কে নিয়ে মিসেস মিতালি রাতের রান্নাবান্নার জোগাড় করছেন।
মাহাদ চলে যাবার পর ক্যামেলিয়া আর রুম থেকে বের হয়নি।
টুসি আর সুজানা ড্রয়িং রুমে বসে কিভাবে ক্যামেলিয়া কে এইকদিন হ্যাপি রাখা যায়,কিভাবে দিন গুলো স্পেশাল ভাবে স্পেন্ড করা যায় তার একটা প্যানিং বানাচ্ছে।
হঠাৎই টুং শব্দে কলিং বেল বেজে ।
মিসেস মিতালি সুজানাকে হাক ছেড়ে ডেকে বলে উঠলেন
“দরজা খুলে দেখ তোর বাবা এসেছে বোধ হয়।
সুজানা দ্রুত পায়ে দরজা খুলতেই বিস্ফারিত নেত্রে তাকিয়ে রইলো দরজা ধরে।
“এভাবে হা হয়ে তাকিয়ে আছিস কেনো জায়গা ছেড়ে দে।ভেতরে যাবো।
বলেই সুজানা কে ধাক্কা দিয়ে ভেতরে ঢুকে মিসেস মিতালির কাছে রান্না ঘরে চলে গেলো রিজভী।
অসময়ে এমন বিধস্ত এলোমেলো অবস্থায় রিজভী কে এবাড়িতে দেখে অবাক হয়ে মিসেস মিতালি জিজ্ঞেস করলেন―
“তুই এসময়ে?
বলেই উপরের কেবিনেট থেকে মশলার ডিব্বা পারতে নিলেন মিসেস মিতালি।
লম্বা হাতে কেবিনেট থেকে স্পাইস বক্স বের করে মিসেস মিতালীর হাতে দিয়ে রিজভী বলে উঠলো
“আমাকে তোমার মেয়ের জামাই বানাবে খালামণি?
#চলবে
#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_১৯
#সারিকা_হোসাইন
_____
ঝলমলে তেজ কিরণ নিয়ে সূর্যটা তার আলোর ছটা ছড়িয়ে দিয়েছে পুরো ধরণী জুড়ে।
দীর্ঘ বর্ষণে ভেজা রাস্তাঘাট, মাটিতে যেই জল জমে ছিলো তা মুহূর্তেই শুষে নিচ্ছে সেই তেজী রোদ।
ঠান্ডা নির্মল বাতাস যুক্ত পরিবেশ নিমিষেই উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
কোহিনুর আর মিতালি সমান তালে সকাল থেকে গাধার খাটুনি খেটে চলেছেন
দু বছর পর হৃদিতা আসবে আজ।
মিসেস মিতালি প্রথম বারের মতো তার তুলোর মতো সাদা তুলতুলে নাতিকে ছুঁয়ে দেখবেন।
খুশিতে আনমনে বারবার হেসে উঠছেন তিনি।
সকল কাজকর্ম শেষ করে নিজেই এয়ারপোর্ট যাবেন হৃদিতাকে রিসিভ করতে।
মাহতাব চৌধুরী ব্যাবসায়িক কাজে দেশের বাইরে গিয়েছেন।
মাহাদ যাবার পর ক্যামেলিয়া টুকটাক দরকার ছাড়া বাইরেই বের হয়নি খুব একটা।সময় মতো সুজানা না হলে কোহিনুর তার রুমে খাবার দিয়ে আসে।
গতকাল রিজভীর সাথে টুসীও বাড়ি ফিরে গিয়েছে।তার ভার্সিটিতে ভর্তির ডেট পড়েছে।এজন্য ইচ্ছে থাকা সত্তেও থাকতে পারেনি।
এদিকে শাহানা বেগম এতো অপমানের পরেও এবাড়িতেই পরে রয়েছেন।
সুজানা যেহেতু বাসায়ই থাকবে সেহেতু কুহু বা শাহানা কে নিয়ে এতো মাথা ঘামালেন না মিতালি।
আর ক্যামেলিয়া তো বাইরেই খুব একটা আসেনা।তাই কুহুর সাথে ঝামেলা বাধার চান্স ও কম।
সকল কাজকর্ম শেষ করতে করতে দুপুর একটা পেরিয়ে গেলো।
দুটোয় এয়ারপোর্ট এ নামবে হৃদি।
মিসেস মিতালি ঘড়ি দেখে ঝটপট রেডি হয়ে সুজানাকে সব কিছু বুঝিয়ে দিলেন।
“সব সময় ওই শয়তান দুটোর দিকে নজর রাখবি।ওদের মতিগতি একটু হলেও বুঝতে পেরেছি।মা যাবো আর আসবো।কুহু বা তোর ফুপু মাহাদের ঘরের ধারে কাছেও যেনো ঘেঁষতে না পারে”
“তুমি কোনো চিন্তা করোনা আম্মু।দরকার পড়লে আমি ঐ রুমেই থাকবো।তুমি যাও।আর তোমার আসতে তো বেশি সময় লাগার কথা না।এতো অল্প সময়ে কিছুই করতে পারবে না।”
মিসেস মিতালি সুজানার সাথে কথা শেষ করে ক্যামেলিয়ার রুমের দরজায় আস্তে করে নক করলেন।
মিনিট দুয়েক পরে ক্যামেলিয়া দরজা খুলতেই মিসেস মিতালি হাসি মুখে নরম কন্ঠে বলে উঠলেন
“তোমার হৃদি আপুকে আনতে এয়ারপোর্ট যাচ্ছি।কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে সুজানার কাছে চাইবে কেমন?মা যাই হুমম?
ক্যামেলিয়া স্মিত হেসে মিসেস মিতালীর কথায় ঘাড় কাত করে সায় জানালো।
“আন্টি আমার কোনো প্রবলেম হবে না।আপনি সাবধানে যাবেন।
ক্যামেলিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দ্রুততার সহিত সিঁড়ি বেয়ে নামতে নামতে টুটুল কে কল করলেন মিসেস মিতালি।
——
মিসেস মিতালি বেরিয়ে যেতেই মিনিট দশেক পর নিস্তব্ধ পরিবেশ ভেঙে তুমুল শব্দে কলিং বেল বেজে উঠলো।
হৃদি পাবদা মাছের ভুনা খুব পছন্দ করে।
কাজ সব গুছাতে না পারার কারণে মিসেস মিতালি সুজানাকে নির্দেশ দিয়েছেন কড়া করে মাছ গুলো ভেজে পেঁয়াজ দিয়ে ভুনা করতে।
কলিংবেল এর শব্দে বিরক্ত হয়ে দরজা খুলতেই রিজভী হড়বড় করে রুমে ঢুকে পড়লো।
“একটু পানি দে সুজানা বাইরে প্রচন্ড গরম।গলা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে গিয়েছে।”
রিজভীর এই সময়ে হঠাৎ আগমনের হেতু বুঝতে পারলো না সুজানা।
অসভ্য লোকটি ইদানিং হুটহাট এবাড়িতে চলে আসে।
সুজানা পানি নিয়ে আসতেই ঢকঢক করে এক নিঃশ্বাসে পুরো গ্লাসের পানি সাবাড় করলো রিজভী।
“পানি এতো স্বাদ লাগলো কেনো কি নিশিয়েছিস?
“তুমি কি এসব আজেবাজে কথা বলতে এখানে এসেছো রিজভী ভাই?”
“তোর কাছে কি মনে হয় আজেবাজে কথা বলার মতো অঢেল সময় আমার আছে?
“তাহলে কেনো এসেছো?
“এসে মনে হয় ভুল করেছি আচ্ছা চলে যাই”
“আমি কি চলে যেতে বলেছি তোমায়?
“বলিসনি কিন্তু ভাবে বোঝাচ্চিস”
“হৃদি আপু আসবে আমার কাজ আছে কেনো এসেছো তাড়াতাড়ি সেই কথা বলো।
ফুঁস করে স্বাস ছাড়লো রিজভী।কিছুক্ষন নীরবতা পালন করলো মেঝের দিকে দৃষ্টি পেতে।
এরপর মাথা তুলে সুজানার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলে উঠলো
“কাল তোর মাকে একটা প্রশ্ন করেছিলাম।উত্তর না দিয়ে আমার কান মলে দিয়েছে।সেজন্য আজ আবার এসেছি প্রশ্নটা করতে।
“কি প্রশ্ন রিজভী ভাই”
“তোকে আমার কাছে বিয়ে দেবে কিনা সেই প্রশ্ন”
বলেই সুজানার পানে ব্যাকুল দৃষ্টি নিয়ে তাকালো রিজভী।
নিজের বিয়ে সম্পর্কে রিজভীর মুখে এমন নির্লিপ্ত কথা শুনে লজ্জায় রক্তিম হলো সুজানার গাল।
হঠাৎই রিজভী খপ করে সুজানার হাত চেপে ধরলো।
আকস্মিক উষ্ণ স্পর্শে কেঁপে উঠলো সুজানার শীর্ন লাউয়ের ডগার ন্যায় দেহ খানা।
আবেগ মেশানো গলায় রিজভী বলে উঠলো
“অফিস থেকে দুঘন্টার জন্য বেরিয়ে এসেছি।
অফিসে খুব চাপ তবুও এসেছি।
কারন তুই আমাকে চম্বুকের মতো টানছিলি।”
“এই দুই ঘন্টা আমি তোকে জড়িয়ে ধরে কাটাতে চাই সুজানা।
মানবি আমার এই অন্যায় আবদার?”
রিজভীর এমন আবদারে চোখের কোন থেকে খসে পড়লো সুজানার অভিমানের জল।
মাথা উপর নিচ করে সায় জানাতেই রিজভী বলে উঠলো
“চল আমার সাথে”
**********
বাড়ি ফাঁকা হবার মোক্ষম সুযোগের অপেক্ষায় কয়েকদিন ধরেই প্রহর গুনে চলেছে কুহু আর শাহানা।
চোরা চোখে সারাক্ষন নজরদারি করে চলেছেন তিনি।
সুজানা বাসা থেকে বেরিয়ে যেতেই
ধীরপায়ে শাহানা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলেন ড্রয়িং রুমে।
আশেপাশে সতর্ক দৃষ্টি ঘুরালেন।
সুজানা নেই,মিতালিও নেই।
কোহিনুরের ছোট কক্ষে উকি মারতেই শাহানার কুৎসিত হাসি প্রশস্ত হলো।
কাজকর্ম শেষে সুখনিদ্রায় গিয়েছে মেয়েটি।
রান্নাঘরে গিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করলো শাহানা।
মুখে ক্রুর হাসি ঝুলিয়ে ফ্রাইং প্যানে তেল ঢেলে চুলার আঁচ বাড়িয়ে দুতলায় উঠে গেলেন।
ক্যামেলিয়া মাহাদের গা থেকে খোলে রাখা শার্ট জড়িয়ে ধরে নীরবে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে।
মাহাদ চলে গিয়েছে তেইশ ঘন্টা,সাতন্ন মিনিট দশ সেকেন্ড ধরে।
এখনো ক্যামেলিয়া কে মাহাদ কোনো ফোন করেনি।
বার কয়েক মাহাদের নম্বর ডায়াল করে সংযোগ পায়নি ক্যামেলিয়া।
এমন অবস্থায় তার দমবন্ধ লাগছে।
কোনো মতেই কান্না রোধ করতে পারছে না সে।
জোরে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে ইচ্ছে করছে তার।
হঠাৎই দরজায় ঠক ঠক শব্দে কড়া নাড়লো কেউ।
ঝটপট মাহাদের শার্ট লুকিয়ে চোখের জল মুছে ফেললো ক্যামেলিয়া।
দরজা খোলার আগেই আবার শব্দ হতেই তড়িঘড়ি করে দরজা খুলতেই শাহানার চেহারা দেখে মেজাজের পারদ চটে গেলো ক্যামেলিয়ার।
কি চাই প্রশ্ন করার আগেই মুখে মায়াবী হাসি ঝুলিয়ে শাহানা বলে উঠলো
“সুজানা বাইরে গেছে গা।কোহিনুর ঘুমায়,চুলার কাছে কয়ডা মাছ রাইখা গেছে,তোমারে ভাজতে কইয়া গেছে।হৃদি আইয়া খাইবো।
“মাছ ভাজার কথা শুনেই ক্যামেলিয়ার ভ্রু কুঁচকে এলো।
সে রান্না জানেনা এটা বাসার সবাই জানে।সুজানা এই অসময়ে তাকে মাছ ভাজতে বলে কোথায় যাবে?”
শাহানার সামনে নিজেকে অদক্ষ প্রমান করে আজেবাজে কথা শোনার কোনো ইচ্ছে নেই এইমুহূর্তে ক্যামেলিয়ার।
শাহানাকে কোনো রকমে বিদেয় করে কিছুক্ষন চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো ক্যামেলিয়া।
এরপর ধীর পায়ে সিঁড়ি বেয়ে নেমে কাউকে না দেখতে পেয়ে রান্না ঘরে ঢুকে গেলো।
পানিতে ভেজানো বড় বড় পাবদা মাছ আর ধোয়া উঠা গরম তেল দেখে ভয়ে গলা শুকিয়ে উঠলো ক্যামেলিয়ার।
কিছুক্ষন চিন্তা ভাবনা করে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে মাছ গুলো পানি থেকে তুলে তেলে দিতেই ফট ফট শব্দ তুলে ফুটতে শুরু করলো।
ডুবন্ত তেলে পানি সহ মাছের কারনে বড় বড় তেলের উপচে উঠা ফোটা ক্যামেলিয়ার হাতে,শরীরে পরে নিমিষেই জ্বালার সৃষ্টি করলো।
ভয়ে ক্যামেলিয়া চুলার কাছেই মেঝেতে বসে গেলো।
উত্তপ্ত গরম তেল ছিটে এসে ক্যামেলিয়ার ঘাড়ে, পিঠে পড়তে লাগলো।আর ক্যামেলিয়া দুই কান চেপে ধরে অসহায় ভঙ্গিতে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে।
এই দৃশ্য দেখে শাহানা হাতে একটি খুন্তি নিয়ে ক্যামেলিয়া কে দেখিয়ে দেখিয়ে হো হো রব তুলে হাসতে লাগলো।
শাহানার হাসির শব্দ অনুসরণ করে পিছনে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে গেলো ক্যামেলিয়া।
শাহানার দিকে দৃষ্টি মেলে ভয়ে কুঁকড়ে চুলার আরো কাছে চলে এলো ক্যামেলিয়া।
“নাহ এটা শাহানা নয়,এটা তো ক্যামেলিয়ার বাসার সেই হেল্পিং হ্যান্ড এরিয়ানা।
ঐতো এরিয়ানা এগিয়ে এসে গরম খুন্তি ক্যামেলিয়ার শরীরে ছুঁইয়ে দিতে চাইছে।
গরম তেলের অত্যন্ত উত্তপ্ত ছোয়া ক্যামেলিয়ার কাছে এরিয়ানার করা অত্যাচার মনে হচ্ছে।বাস্তব থেকে হ্যালুসিনেশন টার্মে চলে গেলো ক্যামেলিয়া।
এদিকে মাছ পুড়ে তেল ছিটে গরম তেলে আগুন ধরে যাবার অবস্থা।
ক্যামেলিয়ার সেসবে কোনো হুশ নেই।
সে এই মুহূর্তে নিজের বাড়ির রান্নাঘরে এরিয়ানার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এমন ফিল হচ্ছে।
এরিয়ানা তাকে খুব কষ্ট দিবে।মে/রে ফেলবে।
এরিয়ানার হাত থেকে কে বাঁচাবে এখন তাকে?
গরম তেল ক্যামেলিয়ার হাত পুড়িয়ে দিচ্ছে কিন্তু ক্যামেলিয়া অনুভূতি হীন হয়ে শাহানাকে দেখে চলেছে।
ঘটনা বুঝতে পেরে শাহানা হাসি থামিয়ে দ্রুত চুলা বন্ধ করে ক্যামেলিয়ার হাত ধরে টেনে হিচড়ে মাহাদের রুমে এনে সজোড়ে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেয়।
মোটা লম্বা উচ্চতার শাহানার কাছে ক্যামেলিয়ার শক্তি হাতি পিঁপড়ের মতো।
মুখ থুবড়ে মেঝেতে পড়ে ব্যাথায় ককিয়ে উঠলো ক্যামেলিয়া।
এরপর ধীরে ধীরে কাঁপতে কাঁপতে উঠে টেবিলের কোনায় চলে গেলো।
“লুকাতে হবে,কেউ নেই এই অন্ধকার ঘরে,কে বাঁচাবে এখন তাকে?
এদিকে শাহানা রান্না ঘরে গিয়ে পুড়ে যাওয়া মাছ ফেলে দিয়ে ফ্রিজ থেকে নতুন মাছ বের করে সব কিছু পরিস্কার করে আগের মতো রান্নাঘর বানিয়ে নিজের কক্ষে চলে আসলেন।
এরপর বিছানায় বাবু হয়ে বসে আবার হো হো করে হাসতে থাকে।
“কি হয়েছে মা এভাবে পাগলের মতো হাসছো কেনো?
“সময় অইলে দেকতে পারবি।হৃদি আওনের আগে ঘরের বাইরে বাইর অইবি না।
কুহু ঘটনার আগা মাথা না বুঝে মায়ের কথায় সায় জানিয়ে চুপ করে বসে বসে অন্য ভাবনা ভাবতে লাগলো।
—–
নিজের ঘরে টেবিলের কোনায় হাটু তে মাথা রেখে কেঁপে কেঁপে ফুঁপিয়ে চলছে ক্যামেলিয়া।
“প্লিজ ডোন্ট বিট মি,”
“আ উইল অবেই অল ইউর অর্ডারস”
বার বার একই কথা বলে কাঁদে চলেছে ক্যামেলিয়া।
ক্যামেলিয়ার এমন অবস্থা দেখে খাঁচায় থাকা ময়না পাখিটি সমানে খাঁচার ভেতর ঝাপাঝাঁপি করে চলছে।
ময়নাপাখির ঝাপাঝাঁপির শব্দে ক্যামেলিয়া আরো গুটিয়ে যাচ্ছে ভয়ে।
এবার এরিয়ানা তাকে মেরেই ফেলবে।
ক্যামেলিয়া কে খুঁজতে খুঁজতে সে এখানে পর্যন্ত চলে এসেছে।
মাহাদ তো বাড়িতে নেই তাহলে কে বাঁচাবে তাকে?
এদিকে নরম চামড়ায় গরম তেলের ছিটা পড়ে বড় বড় ফোস্কার সৃষ্টি করেছে।
সেদিকে ক্যামেলিয়ার কোনো হুশ,অনুভূতি কিচ্ছু নেই।
ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে ক্যামেলিয়া কেঁদেই যাচ্ছে।
হঠাৎই বিছানার উপর থাকা ক্যামেলিয়ার ফোন কর্কশ শব্দ তুলে বাজতে শুরু করে।
ফোনের রিংটোন এর শব্দে ক্যামেলিয়া আরো জোরে ডুকরে কেঁদে ওঠে।
নিজের চুল নিজেই খামচে ধরে।
খাঁচার ভিতর ময়না পাখিটি চিৎকার করে ডেকে উঠে
‘মাহাদ,মাহাদ।
কিন্তু দুনিয়াবী কোনো ধ্যানে ক্যামেলিয়া নেই।
সে তার অন্ধকার জগতের গোলকধাঁধায় আটকে গিয়েছে।
______
সুজানাদের গার্ডেন এরিয়াতে নিজের গাড়িতে সুজানাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে আছে রিজভী।
দুজন মানুষের কম্পন রত নিঃশ্বাসের শব্দ ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যাচ্ছে না।
নীরবতা ভেঙে সুজানা বলে উঠলো
“যেতে হবে রিজভী ভাই,মা এসে যাবে।”
“আরেকটু থাক না সুজানা”
“অলরেডি দু ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছে রিজভী ভাই”
“হাজার হাজার ঘন্টা পেরিয়ে যাক,তবুও তুই আমার বুকে থাক।
খুব শান্তি পাচ্ছি,অনেক দিন পর বুকের আগুন নিভলো জানিস?
“তোমার এতো ভালোবাসা এতোদিন কোথায় ছিলো?
“গোপন ছিলো মনের গুপ্ত কুঠুরিতে।জানিস না গোপনে,দূর থেকে ভালোবেসে যাওয়া সবচেয়ে যন্ত্রনা দায়ক মধুর অনুভূতি?
প্রকাশ করলেই মধু শেষ।
“কবে থেকে তুমি আমাকে ভালোবাসো?
“যেদিন প্রথম আমার কোলে হিসু করেছিলি কিন্তু আমার একটুও খারাপ লাগেনি সেদিন থেকে”
“এবার ভেবে দেখ কবে থেকে তোকে ভালোবাসি”!
“তুই আমার পাঁচ বছরের ছোট”
রিজভীর কোলে সুজানা হিসু করেছে এটা ভাবতেই লজ্জায় কান গরম হয়ে যাচ্ছে তার ।
আর এই বেহায়া লোক কি সুন্দর চোখ বুঝে নির্বিকার রয়েছে।
হঠাৎই রিজভীর ফোনের ভাইব্রেশন এর শব্দে সজাগ হয় দুজনে।
স্ক্রিনে মাহাদের নম্বর দেখে ভ্রু কুঁচকে যায় রিজভীর।
ফোন কানে তুলে হ্যালো বলার আগেই ওপাশ থেকে মাহাদের উদ্বিগ্ন কন্ঠ স্বর শোনা যায়।
“সুজানা,ক্যামেলিয়া কেউ ফোন তুলছে না।মা এয়ারপোর্ট এ ,দ্রুত আমাদের বাড়িতে গিয়ে দেখতো কি হয়েছে!
রিজভী মাহাদ কে শান্তনা দিয়ে ফোন কাটতেই গাড়ি থেকে নেমে বাসার দিকে দৌড় দেয় সুজানা।
সুজানার পিছে পিছে রিজভিও দৌড়ে বাসার ভেতর ঢুকে দূতলার সিঁড়ি বেয়ে মাহাদের কক্ষের সামনে এসে দাঁড়ায়।
সপাটে সুজানা আর রিজভী দরজা খুলতেই ভয়ে চিৎকার করে উঠে ক্যামেলিয়া।
ক্যামেলিয়ার বিধস্ত অবস্থা দেখে আতঙ্কে কেঁদে ওঠে সুজানা।
ভয় জড়ানো কন্ঠে ডেকে উঠে―
“ভাবি
#চলবে