ওগো বিদেশিনী পর্ব-২৮

0
216

#ওগো_বিদেশিনী
#পর্ব_২৮
#সারিকা_হোসাইন
________
তপ্ত নির্জন কাক ডাকা দুপুর।সোনালী রোদের তেজে ঘরে টেকাও দায় হয়ে পড়েছে।
এই রকম তপ্ত দুপুরে বিল্ডিং এর প্রধান ফটকের সামনে দুজন যুবক একজন আরেক জনের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রয়েছে।
নীরবতা ভেদ করে হঠাৎই খুক খুক করে কেশে উঠলো অনিম।
কৌতূহল দমাতে না পেরে রিজভী ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো

“বৃষ্টি হীন পরিবেশে এমন কাকভেজা কোথা থেকে হলে অনিম ভাই?

অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে এই সময়ে এই বাড়িতে রিজভীর দেখা পেয়ে আহাম্মক হয়ে গেলো অনিম।
ছেলেটির নাড়ি নক্ষত্র খুব ভালো ভাবে জানে অনিম।
অযথা টুসীকে হেনস্থা করার কোনো মানে হয়না।

“কিন্তু এই বাঘের হাত থেকে সে কি বলে পালাবে?

এরই মাঝে টুসি হন্তদন্ত করে দৌড়ে ড্রয়িং রুমে এসে দাড়ালো।
অনিমকে রিজভীর সামনে দেখে ভয়ে কান্না চলে আসলো টুসীর।

টুসীর দিকে দৃষ্টি দিয়ে অসহায়ের মতো তাকিয়ে রইলো অনিম ।
এদিকে অনিমের প্রতি রাগে টুসীর মাথা ফেটে যাবার উপক্রম।

‘লোকটা চূড়ান্ত বেয়াদব।”

টুসীর মুখের ভাব দেখে অনিম আমতা আমতা করে বলে উঠলো

“ক্রিমিনাল ধরতে গিয়ে ঘেমে ভিজে গিয়েছি রিজভী”!

অনিমের কথা শুনে রিজভী আকাশ থেকে পড়লো যেনো।

“ঘামে মাথা কিভাবে ভেজালে অনিম ভাই?

দু চোখ বন্ধ করে ঠোঁট কামড়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করলো অনিম।
বিপদের সময় কারো জেরা করা তার মোটেও পছন্দ নয়।
কিন্তু যেখানে সেখানে মেজাজ না বিগড়ানোই ভালো।

রিজভীর দিকে শান্ত চোখে তাকিয়ে অনিম জিজ্ঞাসু স্বরে বলে উঠলো―

―”তুই এতো প্রশ্ন করিস কেনো রিজভী?

রিজভী বুঝে নিলো হয়তো কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেছে।
তাই অনিমকে আর না ঘাটিয়ে ধীর কন্ঠে বলে উঠলো

―”চলো ফ্রেশ হবে।

রিজভী আর অনিম চলে যেতেই টুসি যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
শরীরের সমস্ত ভর ছেড়ে দিয়ে মেঝেতে ধপ করে বসে সোফায় মাথা হেলিয়ে দিলো।
এরপর ধবধবে সাদা ছাদের উল্টোপিঠের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো―

“এ কোন নতুন মুসিবত জীবনে এসে খাড়া হয়েছে মাবুদ!

_________
সাইকিয়াট্রিস্ট এর চেম্বারের সামনে ওয়েটিং চেয়ারে বসে আছে মাহাদ আর ক্যামেলিয়া।
ক্যামেলিয়ার হাত দুটো মাহাদ শক্ত করে ধরে রয়েছে।

“আবার যদি ক্যামেলিয়া মাহাদ কে ভুলে যায় তবে কি সে আর প্রাণে বাঁচবে ?

“না বাঁচবে না।বার বার এমন অসহনীয় যন্ত্রনা সহ্য করা যায় না।

বাহিরে প্রচন্ড ঠান্ডা।মাহাদের হাতের করপুটে থেকেও ক্যামেলিয়ার হাত জমে যাবার উপক্রম।

মাহাদ নিজের মুখের তপ্ত ভাপে ক্যামেলিয়ার হাত গরম করার প্রয়াস চালালো।
এটা দেখে ক্যামেলিয়া ঠোঁট টিপে হেসে উঠলো।
আশেপাশের মানুষজন ক্যামেলিয়া আর মাহাদের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে টিপে একজন আরেক জনকে কুনুই দিয়ে গুঁতো দিয়ে ইশারায় হেসে চলেছে।
এসব দেখে লজ্জায় ক্যামেলিয়ার মুখ রক্তিম আভা ছড়ালো।
জোর করে নিজের হাত দুটো মাহাদের হাতের বাধন থেকে মুক্ত করতে হাত টানা টানি করতে লাগলো।
বিষয়টা মাহাদের ভালো লাগলো না।

“কি ব্যাপার ক্যামেলিয়া হাত দুটো এমন টানাটানি করছো কেনো?

“ক্যামেলিয়া মেকি রাগ দেখিয়ে দাঁত চেপে চেপে বলে উঠলো―

“দেখতে পাচ্ছনা মানুষ হা করে তাকিয়ে আছে?

“আমার বউয়ের যত্ন আমি করছি মানুষের কি?”

“জানিনা”

“না জানলে হাত টানছ কেনো?

ক্যামেলিয়া মাহাদের কথার প্রতিত্তর না করে নিজের হাত গুলো নিজেই ঘষতে ঘষতে বলে উঠলো বেশি কথা না বলে চুপচাপ বসে থাকো।

মাহাদ কি সেসব শোনার পাত্র?

খপ করে ক্যামেলিয়ার হাত নিয়ে নিজের জ্যাকেট এর পকেটে পুড়ে রেখে বলে উঠলো

“আমার বউয়ের হাত আমার কাছেই থাকবে।”

“কার বাপের কি?

মাহাদের এতো এতো ছোট ছোট কেয়ার ক্যামেলিয়ার পেটে ভুরভুর করে প্রজাপতি উড়ায়।

হঠাৎই সাইকিয়াট্রিস্ট এর এসিস্ট্যান্ট ক্যামেলিয়ার সিরিয়াল নম্বর ধরে হাঁক ছেড়ে উঠলো।

এসিস্ট্যান্ট এর ডাক শুনেই মাহাদ ক্যামেলিয়া কে এক প্রকার বগল দাবা করেই সাইকিয়াট্রিস্ট এর কেবিনে ছুটলো।

মাঝ বয়সী ধবধবে ফর্সা সাইকিয়াট্রিস্ট।
ক্যামেলিয়া কে মুচকি হেসে ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে বলে উঠলো

“হ্যালো ক্যামেলিয়া”!

ক্যামেলিয়া সম্ভাষণ জানিয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট এর সাথে আলাপের সমন্বয়ে তার কেইস হিস্টোরি জানালো।
ভয়ার্ত দুরুদুরু বুকে মাহাদ সমস্ত ঘটনাই শুনলো।
এরপর ক্যামেলিয়া কে বিভিন্ন মেডিসিন,সাইকো থেরাপি ,সাইকিয়াট্রিস্ট কনসাল্টিং করে প্রেসক্রিপশন লিখে দিলো।
একজন সহযোগী ক্যামেলিয়া কে নিয়ে বাইরে যেতেই ডক্টর হাসি মুখে মাহাদের হাত চেপে ধরে বলে উঠলো

“ডোন্ট ওয়ারি মিস্টার মাহাদ,আমার যতটুকু মনে হলো সে আগের থেকে অনেকটাই রিকভার করেছে।
আপনাকে আমি বেশি প্রেসার দেবো না।”

“আপনার স্ত্রীর যত্ন আপনি নিজেই ভালো বুঝবেন।
ডিপ্রেশনের রোগীরা ঝরে যাওয়া ফুলের মতো নাজুক।একটু টোকা লাগলেই ঝরঝর করে খসে পড়বে।তাই এদেরকে ঝড়তে দিতে না চাইলে আপনাকে যত্নবান মালি হয়ে পরিচর্যা করতে হবে।”

“আমি আমার স্ত্রীর জন্য সবকিছু করতে পারি ডক্টর”!
“বলুন আমাকে কি করতে হবে”?
উত্তেজিত হয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট কে জিজ্ঞাসা করলো মাহাদ।

মাহাদের অবস্থা খেয়াল করে স্মিত হাসলেন সাইকিয়াট্রিস্ট।এরপর ধীর কন্ঠে বলে উঠলেন―

“এতো উত্তেজিত হবার কিছুই নেই মিস্টার মাহাদ।
শুধু খেয়াল রাখবেন হাইপার একটিভিটি যেনো না হয়,ভয় থেকে দূরে রাখবেন।মন ভালো রাখার চেষ্টা করবেন।ছোট ছোট বিষয়েও তাকে হ্যাপি করবেন।
একবারে বেশি মানুষের ভেতর তাকে না নিয়ে ধীরে ধীরে সকলের সাথে মেশাবেন।বিব্রতকর কোনো পরিস্থিতিতে যেনো সে না পড়ে।
আর পনেরো দিন পর পর একটু কনসাল্টিং এর উপর রাখুন।সাথে সাইকো থেরাপি চলুক।

“আই হোপ শি উইল রিকভার ভেরি সুন।

সাইকিয়াট্রিস্ট এর কথায় মাহাদের মাথা থেকে বিশালাকার পাথরের ভারী বোঝাটা যেনো নিমিষেই নেমে গেলো।সাইকিয়াট্রিস্ট কে থ্যাঙ্কস জানিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলো মাহাদ।এরপর ক্যামেলিয়া কে নিয়ে হাটতে হাটতে পার্কিং লটে চলে আসলো।

ক্যামেলিয়া উদ্বিগ্ন হয়ে মাহাদের হাত জড়িয়ে আকুল চোখে মাহাদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।

মাহাদ ক্যামেলিয়ার নীরব চাহনির দিকে তাকিয়ে নিমিষেই বুঝে ফেললো ক্যামেলিয়া কি জানতে চায়?

মুচকি হেসে মাহাদ তার ডান হাত ক্যামেলিয়ার মাথায় আলতো বুলিয়ে আদর করতে করতে বলে উঠলো

“আমরা খুব শীঘ্রই দেশে ফিরে যাবো।তুমি অনেকটাই রিকভার করতে পেরেছো।
বলেই ক্যামেলিয়ার নীল চোখে গাঢ় চুমু আঁকলো মাহাদ।

ক্যামেলিয়া অবুঝ বাচ্চার ন্যায় মাহাদকে জড়িয়ে ধরে বুকে মুখ গুজলো।
মাহাদের সান্নিধ্যে এসে ক্যামেলিয়া ছোট বড় মিলিয়ে হাজারখানেক স্বপ্ন দেখে ফেলেছে।

“স্বপ্ন গুলো সত্যি না হলে ক্যামেলিয়া কি এই ধরনীতে প্রাণ ভরে শ্বাস নেবার জন্য বেঁচে থাকবে?”

নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে কোনো উত্তর পায়না ক্যামেলিয়া।শুধু মাহাদের বক্ষে বিলীন হয় ক্যামেলিয়ার উষ্ণ নেত্র বারী।

★★★★★★
লুসার্ন এর নান্দনিক সৌন্দর্যের মধ্যে সবচেয়ে দৃষ্টিকারা মনোরম সুন্দর হচ্ছে চ্যাপল ব্রিজ।
কাঠের তৈরি ব্রিজটির দুই পাশে বাহারি রঙের ছোট ছোট ফুল দিয়ে সজ্জিত।চ্যাপেল ব্রিজ এর সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়নি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর।দেশ বিদেশের হাজারো দর্শনার্থী লুসার্নের সৌন্দর্য উপভোগ করতে ভিড় জমায় ।

সেই ব্রিজ ধরে সুইজারল্যান্ডের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে মুগ্ধ চোখে দুজন দুজনের বাহু ধরে হেঁটে চলেছে মাহাদ আর ক্যামেলিয়া।
ব্রিজের শেষ মাথায় এসে হঠাৎই ক্যামেলিয়া থমকে দাঁড়িয়ে মাহাদকে খামচে ধরে।ভয়ে তার দৃষ্টি বিস্ফারিত।
ক্যামেলিয়ার পাংশু রক্তহীন মুখের দিকে তাকিয়ে বিচলিত ভঙ্গিতে ক্যামেলিয়ার দৃষ্টি অনুসরণ করে সামনে তাকায় মাহাদ।
মুহূর্তের ব্যাবধানে চোখ মুখ স্বাভাবিক করে প্রতিশোধ নিতে পাড়ার আনন্দে হেসে উঠে মাহাদ।
সেই হাসি যেনো অনেক কিছু বলে দিচ্ছে ক্যামেলিয়া কে।

ক্যামেলিয়া কে হ্যারেস করা সেই প্লাম্বার ছেলেটির দুটো হাতই কুনুই পর্যন্ত গায়েব।ছেলেটি ব্রিজের এক কোনে বসে বসে ভিক্ষে করছে।
হঠাৎই ছেলেটি মাহাদকে দেখেই কয়েনের কার্টন রেখেই প্রানপনে দৌড়ে পালালো।

এটা দেখে মাহাদ হো হো শব্দ তুলে হাসতে থাকলো।
এই মুহূর্তে মাহাদকে পাগল ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছেনা ক্যামেলিয়ার কাছে।আশেপাশের মানুষজন ভ্রু কুঁচকে মাহাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে।
সেসবে মাহাদের কোনো ভ্রূক্ষেপই নেই যেনো।
কীয়তক্ষন বাদে হাসি থামিয়ে ক্যামেলিয়া কে কাছে টেনে নিলো মাহাদ।
বাইরে প্রচন্ড শীত।যখন তখন তুষারপাত হবে এরকম অবস্থা।
ক্যামেলিয়া কে নিজের সাথে মিশিয়ে নিজের গায়ের ট্রেঞ্চ কোট দিয়ে জড়িয়ে ধরলো ক্যামেলিয়া কে।
ক্যামেলিয়ার শীতল পিঠ মাহাদের উষ্ণ বুকে গিয়ে ঠেকলো।
দুরুদুরু বক্ষে চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে ফেললো ক্যামেলিয়া।

ক্যামেলিয়ার কানে কানে ফিসফিস করে শক্ত কন্ঠে মাহাদ বলে উঠলো

“আমি ওর হাত দুটো কেটে নিয়েছি ক্যামেলিয়া।”

“কেনো জানো?”

“ওর নোংরা হাত দুটো আমার বউয়ের মূল্যবান জিনিস ধরার সাহস করেছিলো।”

ক্যামেলিয়া কে কোন প্রকার কথা বলার সুযোগ না দিয়ে কানে মৃদু বাইট করে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে মাহাদ বলে উঠলো―

” বরফ পড়তে পারে যেকোনো সময়।”
“চলো ঘরে গিয়ে প্রেম করি”
“তোমার বিন্দুমাত্র উষ্ণতা আমার বরফ জমা হৃদয়ে মুহূর্তের ব্যাবধানে আগুন ধরায়”

মাহাদ চূড়ান্ত বেহায়া এটা ক্যামেলিয়া খুব ভালো করেই জানে।তাই কোনো প্রকার নির্লজ্জ্যতার ব্যাখ্যা না দিয়ে মাহাদের সাথে সাথে দৌড় লাগালো।

********
বহু দিন বাদে সুজানা আর রিজভী বাইরে বেরিয়েছে একটু নিজেদের মতো করে সময় কাটাতে।
রিজভীর ব্র্যান্ডেড দামি গাড়িটি সাইসাই করে ছুটে চলেছে রাস্তার পর রাস্তা।
রিজভী গাড়ি চালাচ্ছে আর সুজানার সাথে নানান বিষয় নিয়ে কথা বলে চলেছে।
হঠাৎই রিজভী খেয়াল করলো সুজানার মুখভাব কেমন অস্থির অস্থির।
বিচলিত হয়ে রিজভী জিজ্ঞেস করলো
“তোর কি কিছু হয়েছে?তোর চোখ মুখের অবস্থা এমন কেনো?

“ক ক কই কি হয়েছে?কিচ্ছু হয়নি আমি ঠিক আছি।
আমতা আমতা করে কোনো রকম উত্তর দিয়ে চুপ মেরে বসে রইলো সুজানা।
ফাঁকা রাস্তা পাশে সুন্দরী প্রেমিকা।
রিজভীর মনে হলো একটু প্রেমালাপ করলে মন্দ হয়না।যেই ভাবনা সেই কাজ।
হঠাৎই গলা খাকরি দিয়ে রিজভী বলে উঠলো

“ভেবেছি তোকে আর তুই বলে ডাকবো না।দুদিন পর বউ হবি।বউকে তুই ডাকলে লোকে রিক্সাওয়ালা বলবে।

“আমার ডিসিশন টা কেমন?

সুজানা উত্তর দেবার পরিবর্তে আরো অস্থির ভাব প্রকাশ করে ঠোঁট গোল করে করে শ্বাস ছেড়ে যাচ্ছে শুধু।

সুজানার এতো অস্থিরতার কারন কোনো ভাবেই বুঝতে পারছে না রিজভী।
হয়তো সুজানা লজ্জা পাচ্ছে একসাথে এতদিন পর এভাবে তাই রিজভী প্রসঙ্গ পাল্টে আবার বলে উঠলো

“বিয়ের পর তোকে কিভাবে আদর করবো জানিস?

হঠাৎই সুজানা চিল্লিয়ে বলে উঠলো

“আল্লাহর দোহাই লাগে রিজভী ভাই আর একটা কথাও বলবেন না।আমি কোনো ভাবেই আর কন্ট্রোল করতে পারছি না।

“আপনার গাড়ি কিন্তু ভাসিয়ে দেবো আমি!”

কথাটা বলার সাথে সাথে রিজভী মাঝ রাস্তায় গাড়ির ব্রেক কষে বলে উঠলো

“হিসু পেয়েছে আগে বলবি না?

কাঁদো কাঁদো হয়ে সুজানা রিজভীর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো―
“মরে যাচ্ছি রিজভী ভাই”

রিজভী কোনো মতে গাড়ি রাস্তার কিনারায় সাইড করে সুজানার সিট বেল্ট খুলে সুজানার হাত ধরে গাড়ির বাইরে বের করে আনলো।
এরপর সুজানাকে ভয়ার্ত স্বরে বলে উঠলো

“এখানে কেউ নেই,আমি পাহারায় আছি ”

রিজভীর এমন কথায় সুজানা যেনো একশো হাত মাটির নিচে ঢুকে গেলো।
এরপর পেটে হাত চেপে ধরে বলে উঠলো

“আপনি মশকরা করছেন আমার সাথে?
“এটা কি মশকরার সময়?

“আমি মোটেও মজা করছি না তোর সাথে সুজানা,তুই আমার অবস্থা বুঝবি না।মনে হচ্ছে হিসু তোর নয় আমার চেপেছে।আর সেটা খুউব খুউব ইমারজেন্সি।

উদ্বিগ্ন স্বরে উত্তর দিলো রিজভী।

সুজানা দৌড়ে গাড়িতে বসে বলে উঠলো

“নাটক কম করে গাড়ি স্টার্ট দিন আর আশেপাশে কোনো রেস্টুরেন্ট বা পেট্রোল পাম্প আছে কিনা সেটা গুগলে সার্চ করুন।

এমন কঠিন সিচুয়েশনে সুজানার উপস্থিত বুদ্ধি দেখে মনে মনে খুশি হলো রিজভী।কিন্তু এখন খুশি প্রকাশের সময় নয়।

সুজানার মুখের হাবভাব ধীরে ধীরে বেহাল হচ্ছে।

গুগল ঘেঁটে পাঁচ মিনিটের রাস্তা ছুটে গ্রাম সাইডে একটা ছোট রেস্টুরেন্টের মতো দেখতে পেলো রিজভী।
মরীচিকার পিছনে ছুটা বেদুইনের মতো চকচকে চোখে সুজানাকে নিয়ে দৌড়ে ভেতরে প্রবেশ করলো রিজভী।
সুজানাকে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে বাইরে এসে অস্থির হয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো।
মিনিট পাঁচেক পরে ফুরফুরে সুজানাকে দেখে দেহে প্রাণ ফিরে পেলো যেনো রিজভী।

ঝরঝরে মুচকি হাসি রত সুজানার মুখের দিকে অনিমেষ মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে নিজেকে নিজেই শুধালো রিজভী―

“প্রেমিকার সামান্য কষ্ট প্রেমিকের হৃদয়ে এভাবেও পীড়া দেয়?

#চলবে