ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব-২০+২১

0
14

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_২০
#সারিকা_হোসাইন

_______
পুরো নিউইয়র্ক শহর বরফের উঁচু উঁচু স্তূপে ভরে গিয়েছে।সজীব রঙিন শহর মুহূর্তের ব্যাবধানে থুরথুরে বুড়ির পাকা চুলের ন্যায় সাদায় রূপান্তরিত হয়েছে।গাছের ডালপালা পর্যন্ত বরফে ঢেকে একাকার।মানুষের ঘরের দরজা জানালা বরফের কঠিন আস্তরনে ঢাকা পড়েছে।সিটি করপোরেশন থেকে উদ্যোগ নিয়ে সকালের মধ্যেই সমস্ত বরফ কেটে কেটে পরিস্কার করা হবে পুরো শহর।তা না হলে কেউ নিজেদের বাড়ি থেকে বের হতে পারবে না।আপাত দৃষ্টিতে কোনো পশুপাখি দৃষ্টি গত হচ্ছে না।কে জানে? হয়তো বা তাদেরও সলীল সমাধি হয়েছে এই তুষার স্তূপের নীচে।রাস্তার মাইলস্টোন গুলোর অস্তিত্ব পর্যন্ত বিলীন হয়েছে।দিক নির্ধারণ করাও যেনো কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।দৃষ্টি যত দূর যাচ্ছে ততো দূর পর্যন্ত বরফে থই থই।

এমন বিদীর্ণ পরিস্থিতি তে উন্মাদের ন্যায় খালি পায়ে দৌড়ে চলেছে যুবরাজ।গায়ে নেই কোনো ভারী শীত বস্ত্র।কটন কাপড়ের কমলা রঙা কয়েদী পোশাক খানা এই হিম শীতল ঝড়ে শীত নিবারণে চরম ভাবে ব্যার্থ হচ্ছে।মাটিতে পা রাখতে গেলেই থরে থরে সাজানো বরফের স্তূপে হাটু পর্যন্ত ডেবে যাচ্ছে।মনে হচ্ছে কোনো অশরীরী আত্মা পায়ে শিকল পরিয়ে পাতালে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে।ঘন্টা দুয়েক দৌড়ানোর পর অসাড় হয়ে বরফের স্তূপের উপর শুয়ে পড়লো যুবরাজ।

“কোথায় আছিস তুই রেহান?কোথায় খুঁজবো তোকে আমি?তুই কি বেঁচে আছিস?আমি কখনোই চাইবো না আমার জন্য তোর কোনো প্রকার ক্ষতি হোক।না হলে আমি কখনোই নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না।আমি সব সময় মনে প্রানে চাইবো সমস্ত দুনিয়া একদিকে যাক তবুও তুই ভালো থাক।তোর বোনের কান্না আমি সহ্য করতে পারবো না রে”

বরফের উপর টান টান হয়ে হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে একমনে নিজের জীবনের রথ বদলের ভাবনা ভেবে চলেছে যুবরাজ।যেদিকেই তাকাচ্ছে চারিধারে ধূ ধূ মরুভূমি বৈ আর কিছুই চোখে ধরা দিচ্চে না।
নিজের নির্মম ভাগ্যের উপর শ্লেষত্বক হাসলো যুবরাজ।

“কি থেকে কি হয়ে গেলি যুবরাজ?যেদিন তোর মা মরে গিয়েছে সেদিনই তোর জীবনের সকল সুখ শান্তি কেঁড়ে নিয়ে চলে গিয়েছে।তুই বরবাদ হয়ে গিয়েছিস।কিসের ডক্টর তুই?তুই তো একজন খুনি মেয়েটা বিশ্বাস করে তোকে দায়িত্ব দিলো আর তুই মেয়েটাকেই নিঃস্ব করে দিলি?ছিঃ”

খুনি কথাটা বারবার যুবরাজের কানের কাছে কর্কশ স্বরে বাজতে লাগলো।মনে হচ্ছে কোনো বেসুরে গলা ঢাকঢোল পিটিয়ে যুবরাজের কানের কাছে বিশ্রী শব্দে কথা খানা বলে চলেছে।মুহূর্তেই যুবরাজ উন্মাদের ন্যায় আচরণ করতে লাগলো।শীতল দুই হাত দিয়ে নিজের রক্ত জমে যাওয়া দুই কানে চেপে ধরে বরফে গড়াগড়ি করতে লাগলো।গলার সর্বোচ্চ তেজ ঢেলে হুংকার ছেড়ে গর্জন করতে লাগলো।

“আই সে স্টপ,আদার ওয়াইজ আই উইল কিল ইউ”

কে শুনে কার কথা?মস্তিষ্ক বার বার তিরস্কার করে হো হো শব্দ তুলে হাসতে হাসতে বলে উঠলো
“ইউ আর এ কিলার,ইউ আর এ কিলার ডক্টর ইউভরাজ”!

***********
রাত যখন প্রায় এগারোটার কাছাকাছি তখনই তুষার ঝড় থেমে গিয়েছে।এখন আর হিম শীতল ভারী বাতাস ও বইছে না।শুধু চারপাশে তুলোর মতো হালকা বরফ ঝরে পড়ছে।
নিজেদের বিশাল বড় এপার্টমেন্ট এর অন্ধকার বৃহৎ কক্ষে আরামদায়ক তুলতুলে বিছানায় বুকের উপর দুই হাত রেখে চিৎ হয়ে সটান শুয়ে আছে ম্যাগান।একদিকে নিজের বাবার আকস্মিক মৃত্যু অপরদিকে নিজের পছন্দের মানুষের কারাভোগ সব কিছুই যেনো চরম হতাশায় ডুবিয়ে দিয়েছে এই অষ্টাদশী কিশোরীকে।যুবরাজকে বাঁচানোর সকল চেষ্টা করেও সে ব্যার্থ হয়েছে।স্বজন হীন একাকী ম্যাগান আর কি ই বা করতে পারবে তার ভালো লাগার পুরুষের জন্য?

“কিভাবে আপনাকে আমি মুক্ত করবো ডক্টর?বাবাকে হারিয়ে কোনো রকমে বেঁচে আছি আপনাকে হারালে একদম মরে যাবো আমি।”

হঠাৎই দুই চোখ উপচে জলের ফোয়ারা বেরিয়ে এলো কিশোরীর।বালিশে মুখ গুজে গুমরে উঠা কান্নাকে লুকানোর বৃথা চেষ্টা চালালো।কিছুক্ষণ ওভাবেই উপুড় হয়ে নিজের কান্নাকে গিলে খেয়ে ভারী কম্বল সরিয়ে বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ালো সে।সুইচ বোর্ড হাতড়ে পুরো কক্ষকে ফকফকে আলোকিত করলো।
ওয়াশরুম থেকে মুখে হালকা উষ্ণ পানির ঝাপটা দিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে ধীরে সুস্থে পাতানো টুলটাতে বসলো।
একটা টিস্যু দিয়ে আলতো হাতে মুখ মুছে আয়নায় চোখ বুলালো।
এই কদিনেই চোখের নিচ জুড়ে কালি জমে গিয়েছে,চোখ দুটো গর্তে ঢুকে গিয়েছে।নির্ঘুম রাত কাটানোর কারনে মুখশ্রী জুড়ে মলিনতার আবির্ভাব ঘটেছে।

গভীর ভাবে আয়নায় নজর বুলাতে বুলাতে হঠাৎই ম্যাগান এর দৃষ্টি বিস্ফারিত হলো।আয়নায় অদ্ভুত রকমের দুটি চোখের প্রতিবিম্ব দেখে বসা থেকে চট করে উঠে দাঁড়ালো সে।এমন ক্রুর চাহনি ম্যাগান এর আগে কখনো দেখেনি।কি অদ্ভুত জঘন্য চাহনি!মনে হচ্ছে চোখ দিয়েই সব কিছু গিলে খাচ্ছে।লকলকে লাল জিভটা দিয়ে সমানে নিজের ওষ্ঠদ্বয় লেহন করে চলেছে পিছনে থাকা ব্যাক্তি।

এমন ভয়ঙ্কর দৃশ্য দেখে ভয়ে কলিজা পর্যন্ত কেঁপে উঠলো তার।হিমশীতল বরফ ঝরা রাতেও তার চিবুক বেয়ে উষ্ণ ঘাম গড়িয়ে পড়তে লাগলো।কন্ঠ রোধ হয়ে গলার কাছে শক্ত হয়ে আটকে রইলো।পিছন ফিরে সেই মানুষটির চেহারা দেখার সাহস পর্যন্ত হলো না তার।
ম্যাগান জানে এই অন্ধকার ঘুটঘুটে ঝড়ো রাতে তার করুন আর্তনাদ কেউ শুনবে না।তবুও শেষ চেষ্টা সে করে দেখতে চায়।কিন্তু আজ যেনো সে বোবা হয়েই রইলো।চিৎকার তো দূর ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজ পর্যন্ত বেরুলো না কন্ঠনালী দিয়ে।মনে হচ্ছে বাইরের প্রকৃতির মতো তারও সমস্ত কিছু জমে বরফে রূপান্তরিত হয়েছে।

লোকটি এক পা দু পা করে করে টাইলস মাড়িয়ে ঠকঠক শব্দ তুলে ম্যাগানের দিকে এগুতে লাগলো।কুৎসিত লোকটির ভারী ঘন ফসফসে নিঃশাস এই নিস্তব্ধ রাতে দেয়ালের প্রতিটি কোনায় কোনায় বাড়ি খেয়ে আন্দোলিত হচ্ছে।যা অসহায় রমণীর ভয় আরও দ্বিগুন বাড়িয়ে দিচ্ছে।।
কিংকর্তব্যবিমূঢ় বালিকা ড্রেসিং টেবিলের উপর দুই হাত রেখে ঠাঁয় শক্ত হয়ে ওভাবেই দাঁড়িয়ে রইলো।লোকটির গায়ের ওয়াইনের উটকো গন্ধ জানান দিচ্ছে সে তার খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়িয়েছে।এবার সে একটু ঘুরে দাঁড়ানোর সাহস করলো।
ড্রেসিং টেবিলের উপর থাকা প্রসাধনীর কাঁচের বোতল টি চট করে হাতে নিয়ে সামান্য সাহস সঞ্চয় করে কিঞ্চিৎ ঘাড় ঘুরিয়ে আগন্তুক এর দিকে নজর দিলো।
সাথে সাথেই নিজের হাতের বস্তুটি মেঝেতে পড়ে ঝনঝন শব্দে নিস্তব্ধ রাতের সকল স্তব্ধতা ভঙ্গ করলো।

“ডক্টর ফাইয়াজ!

মেয়েটিকে আর কোনো রূপ বাক্য বিনিময় করতে না দিয়ে নোঙরা দুই শক্ত হাতে জাপ্টে ধরতে নিলেই সরে দাঁড়াতে চায় ম্যাগান।সাথে সাথেই মেঝেতে পড়ে থাকা চূর্ণবিচূর্ণ হওয়া কাচ ম্যাগান এর পদ্মের ন্যায় কোমল পা দুটিকে নিষ্ঠুর ভাবে ছেদন করে।
ব্যাথায় মৃদু ককিয়ে উঠে মেঝেতে বসে পড়ে মেয়েটি।
মেয়েটির ভীতু কাতরতা মিশ্রিত চেহারা শেরহামের ব্যাকুলতা আরো হাজার গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে।

কন্ঠে খানিক মাধুর্য ঢেলে শেরহাম ম্যাগান এর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো
“আমাকে আর অপেক্ষা করিয়ে রেখোনা সুইটহার্ট।তোমার তুলতুলে নরম শরীরের উষ্ণ তাপ আমার প্রচন্ড প্রয়োজন এই মুহূর্তে ম্যাগান গ্যাব্রিয়েলা।”

কথা খানা বলেই শেরহাম মাদকতা মিশ্রিত হিংস্র চাহনি নিক্ষেপ করলো ম্যাগান এর পানে।
শেরহামের এমন নোংরা প্রস্তাবে থরথর করে কেঁপে উঠলো ম্যাগান।ভেতর থেকে নাড়ি ভুঁড়ি উগলে বমি বেরিয়ে আসার উপক্রম হলো।লজ্জায় ঘৃণায় বড় বড় নেত্র যুগল থেকে অবিরত ধারায় নোনা জল গড়াতে লাগলো।

শেরহাম হাটু গেড়ে নীচে বসে ম্যাগান এর মুখের দিকে হাত বাড়ালো।

“ডোন্ট টাচ মি উইথ ইউর ডার্টি হ্যান্ড!
কথা খানা প্রচন্ড তেজের সহিত বলে শেরহামের হাত ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দিলো ম্যাগান।

এতো টুকুন একটা মেয়ের মুখে এমন ক্রোধ মিশ্রিত অপমান জনক কথায় শেরহামের রাগ তরতর করে বাড়তে লাগলো।নিজের জ্ঞান বোধ হারিয়ে কষিয়ে এক চড় বসিয়ে দিল ম্যাগান এর গালে।

“হাউ ডেয়ার ইউ ব্লাডি হুয়াট শেইমলেস বিস্ট?আ উইল ফা*ইউ”

শেরহামের চড়ের দাপট কুলাতে না পেরে ভাঙা কাঁচের উপরেই মুখ থুবড়ে পরে গেলো ম্যাগান।সাথে সাথে বিকট অসহনীয় চিৎকারে আকাশ বাতাস ভারী করে তুললো সে।

ছোট টুকরো টুকরো কাঁচ ভাঙা গুলো ম্যাগান এর চোখে মুখে ঢুকে একাকার অবস্থা।মেয়েটির শুভ্র দাগ হীন তুলতুলে মুখশ্রী মুহূর্তের ব্যাবধানে ভয়ানক রক্তাক্ত হয়ে উঠলো।

ব্যাথায় মেয়েটি ডুকরে কেঁদে উঠলো

“প্লিজ ডোন্ট টাচ মি,লেট মি লাইভ,আই লাভ ইউভরাজ,প্লিজ ডোন্ট টার্নিস(কলঙ্কিত) মি।”

মেয়েটির এমন রোদন আহাজারি শেরহামের মনে এক অদ্ভুত তৃপ্তি এনে দিলো।যুবরাজের নাম শোনা মাত্র মাথার ভেতর বাড়তে থাকা রাগ কিলবিল করে উঠলো।

ম্যাগান এর ঝলমলে বাদামি চুলের গোছা চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো
“আমি খাবার পর কিছু অবশিষ্ট থাকলে সেটা তোর প্রেমিক পুরুষ যুবরাজ খাবে”

কথাটা বলে আর এক সেকেন্ডও অপেক্ষা করলো না শেরহাম।টানতে টানতে ক্ষতবিক্ষত ম্যাগান কে বিছানায় ছুড়ে ফেললো।
মেয়েটি নিজেকে বাঁচানোর সর্বাত্বক চেষ্টা চালালো।
পাঁচ ফিট তিন ইঞ্চি শীর্ন দেহের বালিকা কি আর দানবীয় বডিবিল্ডার এর মত পোক্ত শরীরের শক্তির সাথে কুলিয়ে উঠতে পারে?
ধস্তাধস্তির এক পর্যায়ে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে ম্যাগান।কিন্তু সেসবে শেরহামের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই।শকুনের মতো মেয়েটিকে ভোগে সে ব্যাস্ত।
দীর্ঘদিনের ক্ষুধার্ত বাঘ যেমন শিকার দেখলে সব কিছু ভুলে গিয়ে আক্রমন করে ঠিক তেমনি শেরহাম ম্যাগান কে ভোগ দখলে ব্যাস্ত হলো।
মেয়েটির সারা শরীর হিংস্র কামড়ের দাগে রক্তাক্ত হলো।মেয়েটির নগ্ন শরীর অসংখ্য গভীর আচড়ের দাগে ক্ষতবিক্ষত হয়ে রইলো।
নিজের যন্ত্রনা মিটিয়ে তৃপ্তি সহকারে আয়েশী ভঙ্গিতে উঠে দাঁড়ালো শেরহাম।
নিজের কাপড় পরিধান করতে করতে অবচেতন ম্যাগান এর দিকে অবজ্ঞা জনক দৃষ্টি ফেলে তাচ্ছিল্য হাসলো সাথে একদলা থুথু ছিটালো।
“তোর জন্য কিছুই রাখতে পারলাম না রে যুবরাজ।তার আগেই শালী মরে গেলো”

_______
রাত কতো হয়েছে যুবরাজের জানা নেই।বহু চেষ্টার পর রেহানের ফ্ল্যাটে আসতে সক্ষম হয়েছে যুবরাজ।বরফ ঠেলে সরিয়ে কোনো মতে রেহানের কক্ষে প্রবেশ করলো যুবরাজ।শীতের প্রকোপে তার ধবধবে ফর্সা শরীর নীলাভ বর্ণ ধারণ করেছে।সেসবে মোটেও পাত্তা দিচ্ছে না সে।হন্যে হয়ে রেহানের খুজ চালাতে লাগলো যুবরাজ।চতুর যুবরাজ জানে রেহান এখানে নেই।তবুও মনের উদ্বেগ বলে একটা কথা আছে।

সারা ফ্ল্যাট খুঁজেও রেহানের অস্তিত্ব পাওয়া গেলো না কোথাও।
রেহানের কক্ষের ফায়ার প্লেসে আগুন জ্বালিয়ে ঘর কিছুটা উষ্ণ করার চেষ্টা চালালো যুবরাজ।এরপর রেহানের গোপন লকার এর চাবি খুঁজতে লাগলো ঘরময়।আধ ঘন্টা তল্লাশি চালিয়েও যখন কোনো চাবি পেলো না তখন সেটার তালা ভাঙলো যুবরাজ।
লকারের এক কোনে কিছু কাগজপত্র, একটা মেয়ের ছবি,মেয়েটি যুবরাজের অন্তরের খুব কাছে বসবাস করে।কিছু সিরিঞ্জ,কাঁচের শিশি আর একটা চিঠি সমেত জিপিএস ট্র্যাকার।

“আমি জানিনা আদৌ তোর মুক্তি মিলবে কি না,তবুও তোর জন্য আমার লাস্ট বার্তা।আমি শেরহামের সকল গোপনীয়তা জেনে ফেলেছি।তোকে বরবাদ করতে ও যা খুশি তাই করতে পারে।শেরহাম স্কিজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত।ও সবসময় আলাদা একটা জগতে থাকতে ভালোবাসে।যত ধরনের হিংস্র সহিংসতা রয়েছে সব তার পছন্দ।তোর সাথে ওর ব্যাক্তি গত কোনো শত্রুতা নেই।ওর মনের ভ্রমে সে তোর পিছে লেগে আছে।এবং তোর মৃত্যু দিয়ে ওর এই নোংরা খেলা শেষ হবে।যতক্ষন না তোর মৃত্যু হবে ততক্ষণ শেরহাম তোর আশেপাশের মানুষের ক্ষতি করবে এমনকি তাদের খুন করতেও সে দুবার ভাববে না।
আর একটা কথা আমার বোনকে দেখে রাখিস।বাবা মা কে আমার মৃত্যুর খবর পাঠিয়ে দিস,।কারন আমি জানি শেরহাম আমাকে মেরে ফেলবে।ডাস্টবিনে ইচ্ছে করেই প্রমান গুলো শেরহাম রেখেছিলো।তুই আমি দুজনেই ওর ট্র্যাপে কঠিন ভাবে পা দিয়ে ফেলেছি।
আর হ্যা একটা জিপিএস ট্র্যাকার রেখে গেলাম।এটার ডিভাইস আমার কাছে আছে।রেড বাটন টিপলেই আমার লোকেশন তুই পেয়ে যাবি।কেনো জানি মনে হচ্ছে তুই জেল থেকে পালাবি।তাই আগেই সব ব্যাবস্থা করে গেলাম।যদি আমার বিকৃত লাশ টি খুঁজে পাস প্লিজ ঘৃণা করিস না।
ইতি তোর বোকা বন্ধু
“রেহান ”

#চলবে

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#পর্ব_২১
#সারিকা_হোসাইন

_______
শরতের শেষ রাতে আকাশে কৃষ্ণপক্ষের চাঁদ উঠেছে।কাস্তের ন্যায় বাঁকা চাঁদটি ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের শেষ ভাগ কে ক্ষীণ আলোয় আলোকিত করার বৃথা চেষ্টা চালাচ্ছে।গুমোট প্রকৃতি থমথমে রূপ ধারণ করে মাটির তলের ভ্যাপসা উত্তাপ কে সারা ধরনী ময় ছড়িয়ে দিতে উগ্র হয়েছে।মাঝে মাঝে মৃদু দখিনা হাওয়া গাছের ফাক ফোকর গলিয়ে গায়ে এসে অল্প ছুঁয়ে দিচ্চে।আর কিছুক্ষন পরেই রাতের সকল কালিমা দূর হয়ে আলোকিত ভোর আসবে।আবার নতুন এক শুভ বা অশুভ দিনের সূচনা হবে।

শহর জুড়ে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন সময়ে খুবই নির্মম নিষ্ঠুর ভাবে নানান বয়সের মানুষ খু*ন হচ্ছে। পুলিশ,আর্মি,গোয়েন্দা পুলিশের স্পেশাল ফোর্স কেউ ই কোনোভাবেই সেই সিরিয়াল কিলারের হদিস পাচ্ছে না।ডিপার্টমেন্ট জুড়ে অস্থিরতা বিরাজমান।রুক্ষ বেনজির আশফী পর্যন্ত ঠান্ডা মাথায় ভাঙা হাত সমেত বাকি অফিসার দের নিয়ে ব্রিফ মিটিংয়ে কেস সলভড করতে দিক নির্দেশনা দিয়ে চলেছেন সমানে।তবুও যেনো কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।

দিনে রাতে মিলিয়ে সাড়ে বাইশ ঘন্টা ডিউটি সেরে রাজ্য সবেই বাসায় ফিরেছে।একদিকে ডিউটির চাপ অন্যদিকে শেরহাম নামক মানুষটার অতি রঞ্জিত বাড়াবাড়ি কোনোটাই তার ভালো ঠেকছে না।সারাদিনের কর্মব্যাস্ততার মধ্যেও যুবরাজের চিন্তা বারবার হানা দিচ্ছে বেহায়া মস্তিষ্কে।

এই অদ্ভুত পুরুষটা তাকে বেশ বেকাবু করে ফেলেছে এই কদিনে এটা রাজ্য খুব ভালো করেই বুঝতে পেরেছে।তাই জন্যই তো চিফের চোখ ফাঁকি দিয়ে একবার করে হলেও গুলশান সোসাইটির সেই এপার্টমেন্টের কাছে বেশ কয়েকবার ঢু মেরে এসেছে সে।কিন্তু আফসোসের বিষয় এই এক সপ্তাহে একদিন ও যুবরাজের দেখা পায়নি সে।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় শেরহাম কে বেশ কয়েকবার ওই এলাকায় সন্দেহ জনক ভাবে ঘুরাঘুরি করতে দেখা গিয়েছে !

আনমনে নিজের ইউনিফর্ম এর বাটন খুলে চলেছে রাজ্য

“শেরহাম ওই এলাকায় এভাবে চোরের মতো কেনো ঘুরছে?লোকটাকে মোটেও সুবিধার লাগছে না।তার আচরণ গুলো পর্যন্ত অদ্ভুত।একবার তাকে ফলো করবো নাকি?

শার্ট খুলে হ্যাঙ্গারে ঝুলাতেই হঠাৎই বেলকনির থাই গ্লাস এর দিকে নজর যায় রাজ্যের।লম্বা চওড়া এক বিশালাকার মানবের কালো ছায়া সেখানে স্পষ্ট।সারা রাতের ডিউটির পর যেখানে একটু আরামের ঘুমের প্রয়োজন সেই সময়ে এমন আগন্তুক এর আবির্ভাব মোটেও ভালো ঠেকলো না রাজ্যের কাছে।লোকটির অস্তিত্ব তার মস্তিষ্কে ক্রোধের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ সৃষ্টি করলো।

“তুই যেই হোস তোকে আমি দেখে ছাড়বো”

রাগে ফোস ফোস করতে করতে কোমরে গুঁজে রাখা রিভলবার হাতে নিয়ে ধপাধপ পা ফেলে বেলকনির দিকে অগ্রসর হলো রাজ্য।
কয়েক কদম যেতেই মৃদু বাতাসের ঝাপটায় অতি পরিচিত পুরুষালি সুবাস ভুরভুর করে নাসা রন্ধ্রে বাড়ি খেলো।

হাত থেকে রিভলবার টি আপনা আপনি পড়ে গিয়ে টাইলসের মেঝেতে কর্কশ শব্দ তুললো।এমন শব্দেও ওপাশের মানবের অবস্থার কোনো পরিবর্তন ঘটলো না।
নিজের হাত দুটো শক্ত করে মুষ্ঠি পাকিয়ে স্ট্যাচু হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো রাজ্য।
না চাইতেও বুকের খাঁচা ঠেলে কান্নার হিড়িক আসছে তার।এই অসভ্য পুরুষের জন্য হঠাৎ এমন অহেতুক কান্নার মানে খুঁজে পাচ্ছে না রাজ্য।

“এই নিষ্ঠুর পুরুষ যদি জানে এই মানবীর অশ্রু কণা তার জন্য ঝড়ছে তবে কি সে অনুতপ্ত হবে নাকি হাসি ঠাট্টা করে উড়িয়ে দেবে?আমি তো তাকে এখনো ভালো করে চিন্তেই পারলাম না।আর না পারলাম তার মনের পাজেল সলভড করতে।”

ধীরে ধীরে ঠকঠক শব্দ তুলে বেলকনি থেকে রাজ্যের কক্ষের দিকে এগিয়ে এলো যুবক।নিজের উপচে উঠা অশ্রুকে কঠিন ভাবে ঠেকাতে চোখ বন্ধ করে মাথা নিচু করে ফেললো রাজ্য।নিজেকে কোনো ভাবেই আর ধরে রাখতে পারছে না সে।

“একা একা ভালোবেসে কাছে পাবার বাসনা বুঝি এতোটাই যন্ত্রণাদায়ক?

রাজ্যের চোখ থেকে মোটা মোটা ভারী অশ্রুদানা খসে মেঝেতে বিলীন হয়ে যাচ্ছে সমানে।সামনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সেই নোনা জলের ঢেউ উপভোগ করছে যুবকটি।লজ্জায় কষ্টে থরথর করে কেঁপে উঠতেই সামনে দাঁড়ানো কঠিন হৃদয়ের পুরুষের শার্টের কলার খামচে ধরে বুকে মাথা রেখে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রাজ্য।

“আপনি খুব খারাপ যুবরাজ শাহীর,আপনি জঘন্য।আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য করে ঠিক দূরে সরে গেলেন আপনি।একবার আমার খুজটাও নিলেন না”

রাজ্যের এমন অসহায় আহাজারীর কান্নায় চোখে জ্বালা শুরু হলো যুবরাজের।নিজের ভেতরের অসহ্য যন্ত্রনা গিলে খাবার বৃথা চেষ্টায় তার অ্যাডামস অ্যাপল পর্যন্ত বিষিয়ে উঠলো।নিজের শক্ত খোলস থেকে বেরিয়ে পেশীবহুল বৃহৎ শক্ত দুই হাতের বেষ্টনীতে রাজ্যকে আবদ্ধ করে ধরে আসা গলায় নিজের অপরাধ স্বীকার করলো যুবরাজ

“আম সরি, আম রিয়েলি সরি মাই বিলভড।আমার নিজেকে আয়ত্তে আনতে গিয়ে তোমাকেই কষ্ট দিয়ে ফেলেছি ।আমাকে শাস্তি দাও”

যুবরাজের মুখে শাস্তির কথা শুনে কলার ছেড়ে যুবরাজের মায়াবী মুখের দিকে তাকালো রাজ্য।অন্ধকার কক্ষে চাঁদের মৃদু আলোয় তার ছলছলে চোখ স্পষ্ট।যুবরাজকে দুই হাতে শক্ত করে জড়িয়ে পুনরায় যুবরাজের বুকে মাথা ছোয়ালো রাজ্য।

রাজ্যের মাথায় গাঢ় চুম্বন একে খোলা জানালা ভেদ করে দূর আকাশের বাঁকা চাঁদের দিকে দৃষ্টি পাতলো যুবরাজ।

“তুমি আমাকে ভালোবেসে ভুল করছো রাজ্য।আমাকে ভালোবাসলে বেঁচে থেকেই মৃত্যু যন্ত্রনা পাবে তুমি।আমি কখনোই চাইবো না তোমার ভাইয়ের সাথে যেই ঘটনা ঘটেছে তার দ্বিতীয় বার পুনরাবৃত্তি হোক।এরজন্য আমাকে মরতে হলে তাতেই আমি রাজি আছি।”

মনে মনে কথা গুলো বলে নিজের থেকে সরিয়ে রাজ্যের দুই বাহু ধরে সামনে দাঁড় করালো যুবরাজ।নিজের সকল দরদ লুকিয়ে রাজ্যকে স্বাভাবিক করতে দুস্টু চোখে এক ভ্রু উঁচিয়ে রসিকতা মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠলো

“তুমি কি আমাকে সিডিউস করার ধান্দা করছো জান?আমি কিন্তু এমনি এক কাঠি উপরে।আমাকে এভাবে আকর্ষণীয় রূপে সিডিউস করার কোনো প্রয়োজন নেই।দেবো নাকি এক চোট ভালোবাসা?

যুবরাজের এমন ঠোঁট কাটা কথায় লজ্জায় দুই কান ঝা ঝা করে উঠলো রাজ্যের।নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই চাপা আর্তনাদ করে দুই হাত ক্র্শ করে বুকে চেপে ধরলো।চিকন ফিতার সাদা রঙের ভেস্ট ভেদ করে শরীরের নিষিদ্ধ জিনিসের শেপ দৃষ্টি গত।হ্যাঙ্গারে ঝোলানো শার্টের দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে দুই ঠোঁট চেপে ধরে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে রইলো রাজ্য।

“আপনি আসলেই একটা অসভ্য।আপনি ভুতের মতো ওখানে কোন দুঃখে দাঁড়িয়ে ছিলেন?

―তাই বলে ভুতের সামনে তুমি শার্ট খুলে চলে যাবে?

―ইচ্ছে করে গিয়েছি নাকি?

―তাহলে কিভাবে গিয়েছো?

―আরে আমি ভেবেছি কোনো কিলার এজন্য…….

―এজন্য কিলার কে কিল করতে তুমি শার্ট খুলে ফেলবে?

রাজ্য মৃদু চিৎকার করে বলে উঠলো

“আমি ড্রেস চেঞ্জ করতে গিয়ে আপনাকে দেখেছি।

―ওহ আমার জন্য শার্ট খুলেছো?

রাজ্য যুবরাজের বুকে হালকা পাঞ্চ মেরে নেশাক্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“আর একবার আমাকে জ্বালালে একদম মে*রে দেবো।

“এরকম ঘোর লাগানো দৃশ্য দেখে আমি হাজার বার মরতে রাজি আছি সোনামনি!”

“এবার কিন্তু আমার সত্যি সত্যি অনেক লজ্জা লাগছে”

ঝকঝকে সাদা দাঁতে নিজের ওষ্ঠ কামড়ে ধরে মেপে হাসলো যুবরাজ।এরপর ঘোর লাগানো কন্ঠে বলে উঠলো

“এভাবে লজ্জার কি আছে বেইব?হাত দুটো ছাড়া তো আর কিছুই দেখা যাচ্ছে না।এতেই এতো লাজ?আমি নিজে থেকে যা যা দেখেছি সেটা জানলে তো তুমি এক্ষুনি ম*রে যাবে!

“কি দেখেছেন আপনি?
অবাক স্বরে নেত্র বিস্ফারিত করে শুধালো রাজ্য।

একটা চেয়ার টেনে বসে রাজ্যকে হাতে ধরে টেনে কোলে বসিয়ে তার গলার ভাঁজে মুখ ডুবিয়ে মাদকতা মিশ্রিত কন্ঠে যুবরাজ বলে উঠলো
“সব”!

যুবরাজের উষ্ণ স্পর্শে কেঁপে উঠে যুবরাজের ঘাড়ের চুলে টেনে ধরলো রাজ্য।শিহরণ জাগানো এই স্পর্শ তার সহ্যের বাহিরে।মনে হচ্ছে এমন স্পর্শ সে আগেও পেয়েছে।

“এই স্পর্শ আমার খুব চেনা যুবরাজ শাহীর”

“আমি দিয়েছি তাই”
নেশাক্ত কন্ঠে সহজ স্বীকারোক্তি যুবরাজের।

“কবে”?
অবাক মিশ্রিত কন্ঠে জানতে চায় রাজ্য।

দ্বিধাহীন উত্তর দেয় যুবরাজ

“প্রতিদিন”

যুবরাজের কোল থেকে চট করে উঠে দাঁড়ালো রাজ্য।চারপাশে ইতোমধ্যে ভোরের আলো ফুটতে শুরু করেছে।অল্প কিছুক্ষণ এর মধ্যেই সূর্যটা লাল আভা ছড়াবে।মোডের ব্যাঘাত ঘটায় অসহায় বাচ্চাদের মতো মুখশ্রী নিয়ে রাজ্যের পানে চাইলো যুবরাজ।তার ইনোসেন্ট চেহারা দেখে মনে হচ্ছে কেউ তাকে চকলেট এর লোভ দেখিয়ে সামনে থেকে কেড়ে নিয়েছে।

“কি হয়েছে সোনা?উঠে গেলে কেনো?

“আপনি প্রতিদিন এসে কি করেছেন আমার সাথে সত্যি করে বলুন”

কাঁদো কাঁদো মুখশ্রী তে কথা খানা বলে যুবরাজের উত্তেরের প্রতীক্ষায় রইলো রাজ্য।

ফুঁস করে লম্বা শ্বাস ছেড়ে যুবরাজ হাঁটুতে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়ালো যুবরাজ।এরপর সিরিয়াস ভঙ্গিতে বলে উঠলো

“কিছু করলে এতদিন তোমার ছেলে আমাকে পাপা ডাকতো।”

“একদম হেঁয়ালি করবেন না আমার সাথে।সত্যি সত্যি আমি কিন্তু সিরিয়াস মোডে আছি।”

দু পা এগিয়ে রাজ্যের এলোমেলো হওয়া চুল গুলো কানের পিঠে গুঁজে দিয়ে যুবরাজ আদুরে কন্ঠে বলে উঠলো

“আরে পাগল কিছুই করিনি।শুধু চুমু খেয়ে জড়িয়ে ধরেছি।সারা রাত ঘুমিয়ে আবার ভোর বেলা চলে গেছি।তোমার অনুমতি ছাড়া ওসব করার ছেলে আমি নই বাবু।”

“তাহলে আমি টের পেলাম না কেনো?
বড় বড় চোখে জানতে চাইলো রাজ্য।

“ঘুমের ইনজেকশন দিয়েছি না হলে তুমি আমাকে আদরের জন্য খামচে ধরতে”

“আপনি একটা অসভ্য বেহায়া”
মেকি রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো রাজ্য।

“জানি”
বলেই দাঁত কেলিয়ে বিগলিত হাসলো যুবরাজ

“আমি এখন ঘুমাবো।আপনি চলে যান।মা দেখে ফেললে সর্বনাশ হবে”

যাবার কথা মনে পড়তেই মন ভার হলো যুবরাজের।বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে রাজ্যের দুই হাত ধরে আবদার জানালো

“আরেকটু থাকি?
“একদম না”
“যাবো?
“আলবাত”
“না গেলে কি হবে?
“বাবা আপনাকে ফাঁসিতে ঝুলাবে”
“আমি ফাঁসিতে ঝুলতে রাজি আছি”

*********
“তোর মাংসের টেস্ট কেমন হবে যুবরাজ?আর তোর কলিজার ভুনা?”
তোকে কিছু করতে না পেরে শহরের অসহায় মানুষ গুলোকে অযথা মেরে যাচ্ছি”এটা কোনো কথা বল?
অবশ্য এর জন্য তুই পুরোপুরি দায়ী।আমাকে কেউ দোষ দিতে পারবে না।আজ যদি আমার হাতে তুই মরে যাস তাহলেই তো সব খেল খতম।।

ডক্টর রেহানের বোনকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম কষ্ট দিয়ে মারতে চেয়েছিলাম।ভেবেছিলাম ওটা তোর প্রেয়সী।
প্রেয়সীর নৃশংস মৃত্যু একজন প্রেমিক পুরুষের জন্য কতোটা কষ্টের এটা তোর থেকে ভালো আর কে জানে বল?
কিন্তু খুঁজ নিয়ে জেনেছি তোর সাথে মেয়েটির কোনো লেনাদেনা নেই।কিন্তু আমি ডিসাইড করেছি ওকে মারবো।তোর সাথে লেনাদেনা থাকুক বা না থাকুক।
আমাকে ইগনোর এর সাহস দেখিয়েছে এই টুকুন মেয়ে।শেরহামের জীবনে কোনো অপ্রাপ্তির রেকর্ড থাকবে না।আমি ঠিক ওকে বিয়ে করে আমার আসল রূপ চেনাবো।

ঘুটঘুটে অন্ধকার কক্ষে পাতানো ইজি চেয়ারে সমানে দোলে দোলে আবোল তাবোল বকে যাচ্ছে শেরহাম।পুরো ঘর অগোছালো নোংরা আর আষ্টেময় গন্ধে বমির উদ্রেক তোলার জন্য যথেষ্ট।সেই অসহনীয় পরিবেশে দিব্যি খোশমেজাজে দিন রাত পার করছে শেরহাম।পুরো ঘর জুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে মানুষের হাড়, দাঁত আর মাথার খুলি।আবার কারো কারো অর্ধ পচে যাওয়া ক্ষত বিক্ষত শরীর।বাইরে থেকে ফিটফাট প্রাসাদ তুল্য বাড়িটির ভেতরে এমন ভ্যাম্পায়ার দুর্গ এটা ভেতরে না প্রবেশ করলে কেউ বাইরে থেকে অনুমান ই করতে পারবে না।

শেরহামের চিন্তার ব্যাঘাত ঘটলো টেলিফোন এর টুনটুন শব্দে।শব্দ শেরহামের একদম পছন্দ নয়।অন্ধকার কক্ষ আর নীরবতা মিশ্রিত পরিবেশ দুটো তার বেশ পছন্দ।টেলিফোন এর শব্দে ক্রোধে গড়গড় করতে করতে চেয়ার ফেলে নিজের কক্ষ পেরিয়ে রক্তাক্ত সিঁড়ি বেয়ে ড্রয়িং রুমে নেমে এলো শেরহাম।এদিকে অস্বস্তিকর টেলিফোন বেজেই চলেছে।
রাগে গজ গজ করতে করতে দাঁত খেচিয়ে ফোন কানে তুললো শেরহাম।

“কি ব্যাপার আব্দুল ফোন তুলছিস না কেনো?আর ওই পাগল টার কি অবস্থা?

“মমের মতো আব্দুল কে ও রান্না করে খেয়ে ফেলেছি বাবা।বেশি তদারকি আমার একদম পছন্দ নয়।

#চলবে।