ওয়েলকাম টু মাই ডার্কসাইড পর্ব-৪৫ এবং শেষ পর্ব

0
14

#ওয়েলকাম_টু_মাই_ডার্কসাইড
#অন্তিম_পর্ব
#সারিকা_হোসাইন

********
ঘন কুয়াশা যুক্ত ঝাপসা নিগুড় অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়েছে কোলাহল পূর্ন রাত।ঘড়ির কাঁটায় সময় কত হয়েছে তা দেখার ফুসরত কারোর ই নেই।কিছুক্ষন আগেই ঘটে গিয়েছে এক অনাকাঙ্ক্ষিত নিদারুণ মর্মান্তিক ঘটনা।এলোমেলো হয়ে জাহাজের নোংরা ডেকে অবচেতন অবস্থায় পড়ে রয়েছে রাজ্য।বন্দুকের চোখা বেয়নেট এর খোঁচা লেগে তার অনেক খানি গাল কেটে তরল রঞ্জন পদার্থের উপস্থিতি হয়েছে।চারপাশে তাকিয়ে কেউ কিছু বুঝে উঠবার আগেই স্মোক গ্রেনেড এর ঘন সাদা রঙের ধোঁয়ায় দৃষ্টির বাইরে চলে গেলো সব কিছু।ঘটনা বেগতিক বুঝে নিজেদের সেফ রাখার জন্য যার যার প্রস্তুতি চলতে লাগলো।মিনিট দুই অতিবাহিত হবার আগেই বিপ বিপ শব্দে সকলের কান খাড়া হলো।কিছু ধোয়ার রেশ কেটে সামান্য দৃষ্টি পরিষ্কার হতেই লাফিয়ে উঠলো প্রত্যেকে।বিশাল বড় বড় সাইজের কয়েকটি টাইম বো*মা জাহাজের পুরো ডেক জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে।সকল টিম মেম্বার নিজেদের জীবন বাঁচাতে মরিয়া হয়ে উঠলো।ওয়াটকির হুড়মুড় সিগন্যাল এ হেলিকপ্টার রেডি করতে ধমকে উঠলেন বেনজির আশফী।ধরাধরি করে কোনো মতে রাজ্যকে কেউ একজন কাঁধে চেপে দ্রুত জাহাজ পরিত্যাগ করার পরিকল্পনা আটলো।
এদিকে ঘন ঘন বিপ বিপ শব্দে সকলের জান যেনো হাতে এসে নামলো।
সমস্ত পরিস্থিতি দূর থেকে অবলোকন করে ক্রুর হাসলো কোনো এক সুদর্শন পুরুষ।

মিনিট দুইয়েকের ভেতর পুরো জাহাজ খালি হলো সেই সাথে জোরে হেলিকপ্টার হাঁকিয়ে পাড়ি দিলো গভীর সমুদ্র।

এদিকে বিপ বিপ শব্দের সমাপ্তি ঘটিয়ে কালারফুল রঙের ব্লাস্টে রঙিন হয়ে উঠলো জাহাজের ওপেন ডেক সহ সমুদ্রের জল।

********
নিজের গোপন কক্ষ থেকে ঝটপট বেরিয়ে যুবরাজের সন্ধান চালালো রেহান।নিজের গার্লফ্রেন্ড এর উপর তার ভরসা আছে শত ভাগ কিন্তু একবার এদিক সেদিক হয়ে গেলে কেল্লা ফতে।
যেই দিক থেকে যুবরাজের গড়িয়ে পড়ার কথা সেই দিকে দৌড়ে এলো রেহান।জলের দিকে তাকিয়ে ডেকে উঠলো

“যুবরাজ বেঁচে আছিস?

একদম নিচতলার বারান্দার রেলিং পাইপ ধরে তর তর করে ঝুলতে থাকতে দেখা গেলো তাকে।বেচারা ভীত শেরহাম এখনো যুবরাজের প্যান্টের বেল্ট আকড়ে ধরে নিজের জীবনের আকুতি করে চলেছে।জাহাজের সমস্ত লাইট অন করে দ্রুত স্পিড বোর্ড নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লো পোক্ত দেহের কয়েকজন ছেলে।
যুবরাজের পা পানি ছুঁই ছুঁই।শেরহামের অনেকটাই জলের নীচে।বেচারা কেঁদে কেটে নিজের জীবন বার বার ভিক্ষা চেয়ে যাচ্ছে যুবরাজের কাছে।একে তো ঝুলে রয়েছে তার উপর কোমরের কাছে আরেকজন ঝুলে রয়েছে।যখন তখন ইজ্যতের ফালুদা হবে তার কোনো গ্যারান্টি নেই।সব মিলিয়ে শেরহামের উপর হিস হিসিয়ে উঠলো যুবরাজ

“আর একবার বেশি কথা বলে লবনাক্ত পানির নিচে দুই ঘন্টা চু*বি*য়ে রাখবো”

যুবরাজের এহেন হুমকিতে ভয়ে শেরহামের মুখ চুপসে গেলো।আর কিছু না বলে দুই হাতে শক্ত করে যুবরাজের কোমর জড়িয়ে ধরলো।

কিছুক্ষন পরেই স্পিডবোর্ড নিয়ে ছেলেগুলো হাজির হলো সেই সাথে উদ্ধার করলো শেরহাম আর যুবরাজকে।
জাহাজে উঠেই পুলিশের উদ্দেশ্যে দৌড়াতে লাগলো শেরহাম।

“প্লিজ হেল্প,যুবরাজ ম*রেনি।প্লিজ এরেস্ট হিম”

কিন্তু আফসোস জাহাজের কোথাও পুলিশের ছিটেফোঁটা নেই।শেরহামের এমন বোকা উদ্ভ্রান্তের মতো আচরণে হো হো করে হেসে উঠলো যুবরাজ।সেই হাসির শব্দ গর্জে উঠা সমুদ্র আর শো শো বাতাসে মিলে মিশে পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর করে তুলল।
এবার সত্যি সত্যি ভয়ে মিইয়ে গেলো শেরহাম।
জীবনের আশা ছেড়ে দিয়ে সিক্ত কন্ঠে বলে উঠলো

“কি*ল মি”

এই প্রথম শেরহামের প্রতি কঠিন ভাবে মায়া কাজ করলো যুবরাজের।তবে মনে মনে যুবরাজ সিদ্ধান্ত পাল্টালো কি?

রুপোলি চাঁদ যুক্ত কুয়াশা আচ্ছন্ন আকাশের দিকে তাকিয়ে তপ্ত শ্বাস ফেললো যুবরাজ।এরপর রেহানের উদ্দেশ্য বলে উঠলো

“চল আবার নিউইয়র্ক ফেরা যাক”

*********
যুবরাজের নাম নিশানা হীন বাংলোতে রাজ্যকে আনা হয়েছে ভোর সকালের দিকে।সারা রাত হসপিটালেই ছিলো সে।ফজরের ওয়াক্তের একটু পর পরই ডক্টর কে অনেক রিকোয়েস্ট করে রাজ্যের রিলিজের ব্যাবস্থা করেছে এনি।ডক্টর অবশ্য জ্ঞান হীন রাজ্যকে রিলিজ দিতে চায়নি।এনি তার মতো করে ডক্টর কে ম্যানেজ করেছে।

রাজ্যের যখন জ্ঞান ফিরলো তখন সকাল দশটা বেজে কুড়ি মিনিট।
পিট পিট চোখে তাকিয়ে কোথায় আছে সে তা উপলব্ধি করার চেষ্টা করলো।পুরো ঘর দৃষ্টি বুলানোর পর হু হু করে কেঁদে উঠলো রাজ্য।
এই সেই ঘর যেখানে যুবরাজকে নিয়ে তার কেটে গিয়েছে হাজারো আনন্দ মেলা।আজ সে এই ঘরে একা অবস্থান করছে অথচ যুবরাজ সমুদ্রের গহীনে।

সহসাই গত রাতের কথা মস্তিষ্কে হানা দিতেই এনির উপর চরম ক্রোধ জন্মালো তার।নিজের রাগ কোনো ভাবেই কন্ট্রোল করতে না পেরে বিছানা ছেড়ে হনহন করে বেরিয়ে ড্রয়িং রুমে নেমে এলো।
ড্রয়িং রুমে নিজের বাবা মা আর যুবরাজের মা বাবাকে খুবই নরমাল অবস্থায় দেখে বেশ অবাক হলো সে।

“এরা সবাই এখানে কিভাবে এলো?

মিসেস তনুজার কাছে এগিয়ে গিয়ে মলিন কন্ঠে শুধালো

“তোমরা এখানে কি করছো?

মেয়ের এমন কঠিন প্রশ্নে থতমত খেলো মিসেস তনুজা।দূর থেকে এটা লক্ষ করে সামিনা ছুটে এসে জিজ্ঞেস করলেন

“এভাবে কেউ নিজের মাকে কথা বলে?

সকলের এতো স্বাভাবিক চলাফেরা কিছুতেই সহ্য হলো না রাজ্যের।সামিনার হাসিরত মুখের দিকে তাকিয়ে রাজ্য চোখের জল ছেড়ে বলে উঠলো

“আপনার ছেলে গত কাল রাতে পুলিশের গুলিতে দুনিয়া ছেড়েছে তা কি আপনি জানেন?

রাজ্যের এহেন অদ্ভুত কথায় বেশ অবাক হলেন সামিনা।

হঠাৎই চোখ ডলতে ডলতে এনি বেরিয়ে এলো।

“সকাল সকাল কিসের এতো কথাবার্তা হচ্ছে এখানে?

এনিকে দেখে নিজের রাগ সপ্তম আকাশে ছুলো রাজ্যের।নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে এনির দিকে তেড়ে এগিয়ে যেতেই এনি চিৎকার করে উঠলো

“আরে রিল্যাক্স রিল্যাক্স, তোর ভাই আমাকে যা যা করতে বলেছে আমি তাই করেছি।এখানে আমার বিন্দুমাত্র কোনো দোষ নেই।

এনির আর রাজ্যের কথার মাথামুন্ডু কারো কাছেই স্পষ্ট নয়।সকলের দিকে সতর্ক দৃষ্টি বুলিয়ে রাজ্যকে এক প্রকার টেনে হিচড়ে একটা কক্ষে নিয়ে দরজা লাগিয়ে দিলো এনি।এনির থেকে নিজের হাত ঝটকা দিয়ে সরিয়ে ফুঁসে উঠলো রাজ্য।
এরপর সিক্ত কন্ঠে অস্ফুট স্বরে বলে উঠলো

“তোরা কিভাবে করতে পারলি এই কাজ?

“তাহলে বেনজির আশফী করলে খুশি হতি?

এনির এমন জবাবে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে এনির পানে তাকিয়ে থাকে রাজ্য।

রাজ্যকে আশ্বস্ত করে চতুর এনি সবটাই বুঝিয়ে বলতে উদ্দত হয়।

“যুবরাজ যা করেছে তাতে তার বেঁচে ফেরার সমস্ত পথ বন্ধ।বেনজির আশফী কি সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিলো তা সম্পর্কে তুই আমি সকলেই অবগত।শেরহাম আর সুবহান শেখকে তুলে নিয়ে যাওয়ায় ডিপার্টমেন্ট আরো ক্ষিপ্ত হয়েছিলো।কিন্তু যুবরাজ ও পালিয়ে যাবার পাত্র নয়।এজন্য সাপ ও যাতে ম*রে আর লাঠিও না ভা*ঙে এই খেলা খেলতে হয়েছে।

এই খেলায় আমাকে ইউজ করেছে তোর ভাই।আর যুবরাজ কি সত্যি ম*রে*ছে নাকি।বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ছিলো গায়ে।কিন্তু খবর দার এই কথা কেউ যাতে না জানে।

“তাহলে এখন কি করবো?
উত্তেজিত কন্ঠে কথাটা শুধিয়ে এনির উত্তরের অপেক্ষায় রইলো রাজ্য।

“আপাতত আমার উপর দোষ চাপিয়ে রিজাইন দে”

“তোকেও তো বেনজির আশফী ছাড়বে না”

“আমার কাছে বেনজির আসফিকে কাবু করার ফন্দি আছে।

“কিন্তু যুবরাজ এখন কোথায়?

“ওরা বাণিজ্যিক জাহাজে কোথাও একটা যাবে।কিন্তু কোথায় তা আমি জানিনা”

এনির কথায় মন ভেঙে টুকরো টুকরো হলো রাজ্যের।যাকে এক নজর দেখার জন্য দুই চোখ তৃষিত হয়ে আছে অথচ তার খবর কেউ জানে ই না?

না চাইতেও মন কালো মেঘে ঢেকে বর্ষায় রূপ নিলো।রাজ্যের দুই চোখ থেকে টুপ টুপ করে খসে পড়তে লাগলো মোটা মোটা অশ্রুদানা।

“আপনি কোথায় আছেন যুবরাজ?আপনাকে একটু কাছে পাবার বাসনায় আমার হৃদয় যে মরুভূমির ন্যায় খাঁ খাঁ করছে।আপনি ভালো আছেন তো?

********
চোখের পলকে কেটে গিয়েছে দুটি মাস।রাজ্য অনেক আগেই রিজাইন দিয়ে যুবরাজের প্রতীক্ষায় দিন গুনছে।এনির উপর বেশ চড়াও হয়েছেন বেনজির আশফী।একের পর এক চলছে এনির শো কজ।

শেষমেশ নিজের ভুল মাথায় নিয়ে শখের চাকরি থেকে সাসপেন্ড হলো এনি।মুখে দুঃখ প্রকাশ করলেও মনে মনে রেহান কে পাবার বাসনায় তীব্র আনন্দিত হলো।

এই দুই মাসে এনিও বেশ চিন্তিত হলো।

“ওরা কোথায় গেলো?এখনো একটা ফোন দেবার প্রয়োজন মনে করল না।কোনো বিপদ হয়নি তো?

অজানা আতংকে ধীরে ধীরে গ্রাস হলো মন মস্তিষ্ক।

সামিনা আর তনুজাও তলে তলে নিজ নিজ পুত্র শোকে ভেঙে পড়লেন।শক্ত রাখলেন মাঝ বয়সী পুরুষ দুটোকে।

তনুজা আর রেজোয়ান চৌধুরী কে ঠেলে ঠুলে নিজেদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলো রাজ্য।রাজ্যের মনের অবস্থা বুঝতে পেরে সাদাফ চৌধুরী আর সামিনাও রাজ্যকে স্পেস দিলেন।
যুবরাজের বিশাল বাড়িটিতে একা একা দিনের পর দিন প্রহর গুনতে লাগলো রাজ্য।।

“একদিন যুবরাজ ফিরবে আর ঠিক তাদের ভালোবাসার দুস্টু মিষ্টি একটা সংসার হবে”

এভাবেই পেরিয়ে গেলো আরো একটি মাস।
হঠাৎই একদিন এনি মারফত মোটা একটা সাদা খাম এলো রাজ্যের কাছে।
উচ্ছসিত এনির মুখের দিকে তাকিয়ে আহত কন্ঠে রাজ্য জানতে চাইলো

“এটা কি?

“খুলে দেখ”

মন না চাইতেও দুর্বল হাতে কোনো মতে খাম চিড়ে বের করে আনলো কিছু কাগজ আর একটা বিমানের টিকিট।
অবাক নয়নে সেগুলোর উপর নজর বুলাতেই জলে টইটুম্বুর হলো বড় বড় অক্ষিদ্বয়।

রাজ্যকে কাঁদতে দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এলো এনি।তার বিশাল দায়িত্ব এখন।নিজের সংসার গুছানোর পালা যে তার ও শুরু হয়ে গিয়েছে।

********
নিউ ইয়র্ক কোর্টে শেরহামের সকল জবানবন্দি তে যুবরাজের চলমান কেইস ক্লোজড হয়েছে সপ্তাহ খানেক আগে।প্রাথমিক ভাবে তারা শেরহাম কে এরেস্ট করলেও মেডিক্যাল হিস্টোরি ঘেঁটে জানা গিয়েছে শেরহাম পুরোপুরি ভাবেই মস্তিস্ক বিকল একজন মানুষ।এরকম একজন মানুষ কিভাবে ডক্টর হয়েছে এটা নিয়েও শুরু হয়েছে জল্পনা কল্মপনা।শুধু তাই নয়।শেরহামের মস্তিষ্কের উপর চলবে গভীর রিসার্চ।এজন্য শেরহাম কে মেডিকেল সেল এ খুব যত্ন সহকারে রাখা হয়েছে।
আর যুবরাজকে সসম্মানে দেয়া হয়েছে হার্ট স্পেশালিষ্ট এর খেতাব।আগের হসপিটাল ছেড়ে দিয়ে আরো নতুন এবং বড় একটি প্রাইভেট হসপিটালে নিয়োগ পেয়েছে যুবরাজ।আর তার এসিস্ট্যান্ট হিসেবে রয়েছে ডক্টর রেহান।

******
জন f কেননেডি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এ নিজেদের লাগেজপত্র নিয়ে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে এনি আর রাজ্য।তাদেরকে এখান থেকে কারো রিসিভড করার কথা।

“কিন্তু এখনো কেউ আসছে না কেনো?

হঠাৎই তাদের সামনে কালো রঙের একটি মার্সিডিজ বেনজ এসে থামলো।
সেখান থেকে নেমে এলো একজন ব্রিটিশ বডিগার্ড প্লাস ড্রাইভার।
আমেরিকান একসেন্টে সুন্দর করে রাজ্যের নাম ধরে বলে উঠলো

“ম্যাডাম আপনার রাজ্যে চলুন”

স্মিত হেসে এনি আর রাজ্য গাড়িতে উঠে বসলো।শুরু হলো তাদের যাত্রা।

*********
অফ হুয়াইট রঙের দূতলা বিশিষ্ট সুন্দর একটি বাড়ি।সেই বাড়ির সামনের এক সাইডে বৃহতাকার ফুলের বাগান।তাতে রয়েছে নাম না জানা বাহারি ফুল।আরেক পাশে গাড়ি পার্কিং এর ব্যাবস্থা।সেখানে আধুনিক মডেলের দুটো গাড়ি।বাড়িটির অনন্য নান্দনিক সৌন্দর্য মন কাড়লো রাজ্য আর এনির।
তাদের গাড়ি দেখতে পেয়ে বিশাল কালো রঙের লোহার কারুকাজ খচিত গেট খুলে মেলে ধরলো গার্ড।
ধীর গতিতে গাড়িটি পৌঁছে গেলো পার্কিং এরিয়ায়।

গাড়ি থেকে ব্রিটিশ লোকটি নেমে রাজ্যের হাতে একটি চাবি দিয়ে বলে উঠলো

“স্যারের আজকে জরুরি অপারেশন আছে।আসতে রাত হবে।এই চাবি নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করুন।আর স্যার আসার অপেক্ষা করুন।
মাঝ বয়সী লোকটি হাসি মুখে চাবি দিয়ে প্রস্থান নিলো।রাজ্যকে দেখে দুজন লোক দৌড়ে এসে ব্যাগ পত্র নিয়ে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলো।বাড়ির দরজা খুলতেই আরো একটি মাঝবয়সী মেয়ে এসে দাড়ালো।মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে কুশলাদি বিনিময় করে এনিকে গেস্ট রুম দেখিয়ে দিয়ে রাজ্যকে বলে উঠলো

“প্লিজ ম্যাডাম ফলো মি”

দূতলায় হাতের ডান পাশের শেষের ঘরটা ইশারা করে বলে উঠলো

“এটা ডক্টর ইউভির বেড রুম”

মনে মনে অদ্ভুত এক আনন্দ আর উচ্ছাসে কেঁপে উঠা শরীর নিয়ে ধীর পায়ে কক্ষের দিকে পা বাড়ালো রাজ্য।
এই ঘরটিতে তার পরিচিত ভালোবাসার পুরুষের ছোয়া আছে গন্ধ আছে আর আছে বিচরণ।
তিনটি মাস কে রাজ্যের কাছে তিশনত শতাব্দী মনে হয়েছে।আর এখন যুবরাজের বাড়িতে ফেরার কত গুলো ঘন্টা মনে হচ্ছে যুগের পর যুগ।

ঘরটিতে প্রবেশ করে বেশ অবাক হলো রাজ্য।এই ঘরটা হুবুহু যুবরাজের বাংলো ঘরের মতো।ঘরের ভেতর চারপাশে নজর বুলাতেই কর্নার ছোট টেবিলটার রঙিন একটা চিরকুট পেলো রাজ্য।
দ্রুত হাতে খুলতেই টানা টানা অক্ষরে লিখা চোখে পড়লো

“ম্যাডাম সব কিছু আপনার মন মতো গুছানো হয়েছে।হাত বাড়ালেই যা চাইবে তাই পাবে।খুব শীঘ্রই দেখা হচ্ছে”!

চিঠিটা পড়তেই অনিন্দ্য ভালো লাগায় ছেয়ে গেলো তনুমন।
আগ্রহ বসত ওক কাঠের আকর্ষণীয় কাবার্ড এর দরজার পাল্লা খুলতেই চক্ষু ছানা বড়া।খুব সুনিপুণ ভাবে রাজ্য যেসব কাপড়চোপড় পরে তা গুছানো।
মনে মনে তৃপ্তির হাসি হেসে একটা ডেনিম লোজ প্যান্ট আর টি শার্ট নিয়ে শাওয়ার এ চলে গেলো রাজ্য।
লম্বা একটা হট শাওয়ার নিয়ে নেমে এলো কিচেনে।
এনিও তার সব কিছু গুছিয়ে ফ্রেশ হয়ে রাজ্যকে হেল্প করতে এলো।
কিচেনের সকল আইটেম দিয়ে নিজেদের পছন্দ মতো রান্না সেরে নিয়ে টেবিলে গুছাতে গুছাতে সন্ধ্যা নেমে এলো।লম্বা জার্নি প্লাস নির্ঘুম রাত কাটানোর কারনে খুব ক্লান্ত হয়ে পড়লো রাজ্য।
এনিকে রেখে সামান্য ঘুমুতে চাইলো।যাবার আগে পইপই করে এনিকে হুঁশিয়ার করলো

“ওরা ফিরলেই আমাকে ডাকবি”

ঘাড় কাত করে এনি সায় জানতেই নিজেদের কক্ষে ফিরে এলো রাজ্য।তুলতুলে নরম বিছানায় পাতলা ব্ল্যাঙকেট গায়ে জড়াতেই অতল ঘুমে তলিয়ে গেলো সে।
কতক্ষন এভাবে ঘুমালো জানেনা রাজ্য।তার ঘুম ভাঙলো কারো উষ্ণ স্পর্শে।চট করে চোখ মেলে তাকাতেই ডিম লাইটের মৃদু হলদেটে আলোয় দৃষ্টি গত হলো নিজের বহু চেনা পরিচিত মুখায়ব।
যুবরাজের শক্ত পুরুষালি বাহুতে বন্দি রাজ্য।
আকস্মিক যুবরাজকে কাছে পেয়ে শক্ত দুই হাতে জাপ্টে ধরলো রাজ্য।একদম ছোট বিড়াল ছানার ন্যায় যুবরাজের বুকের সাথে মিশে রইলো।

“আই মিসড ইউ সো মাচ”

“আই অলসো”

দীর্ঘদিন বাদে ভালোবাসার মানুষটি কে কাছে পেয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো রাজ্য।এই কান্না দুঃখের কান্না নয়।এটা বিরহের কান্না।রাজ্যের ঝলমলে চুলে বিলি কেটে রাজ্যকে পরম যত্নে সামলে নিলো যুবরাজ।

কিছুক্ষন এভাবেই কেটে যাবার পর রাজ্য মেকি অভিমান দেখিয়ে শুধালো
“ডাকলেন না কেনো?
রাজ্যের দুই চোখের পাতায় গভীর চুমু একে যুবরাজ বলে উঠলো

“ডাকলে কি আর এতো স্নিগ্ধ সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারতাম?
এই সৌন্দর্য যে আমি মৃ*ত্যুর আগ মুহূর্ত পর্যন্ত উপভোগ করতে চাই ডিয়ার বউ”

ধীরে ধীরে শক্ত হলো আলিঙ্গন বাড়তে থাকলো উষ্ণতা বিনিময়।অবাধ্য হাতের বিচরনে জাগ্রত হলো চাওয়া পাওয়া। মুহূর্তের ব্যাবধানে খড়খরে শুকনো হৃদয় প্লাবিত হলো ভালোবাসার জোয়ারে।

*********
পেরিয়ে গিয়েছে তিনটি বছর।এই তিন বছরে অনেক কিছুই ঘটেছে।কিন্তু সবটাই ভালোই ঘটেছে।সাদাফ শাহীর আর সামিনা একে বারে নিউ ইয়র্ক চলে এসেছেন।রেহান নিজেও বড় একটা বাড়ি কিনেছে।সেখানে এনির আর তার ছোট একটা সংসার হয়েছে।তাদের ঘর আলো করে ফুটফুটে একটি মেয়ে শিশুর জন্ম হয়েছে।মিসেস তনুজা আর রেজোয়ান চৌধুরী ও তাদের সাথেই থাকেন।

আর যুবরাজ আর রাজ্য?
তাদেরও ঘর আলো করে এসেছে একটা পুত্র সন্তান।হুবুহু যুবরাজের কার্বন কপি।বয়স তার দুইয়ের ঘরে।কথায় বেশ পাকা।
কথায় কথায় সবাইকে আধা বাংলা আধা ইংরেজিতে হুমকি দেয়

“আমাল পাপাকে চেনো?ইক দুম পুঁ*তে দেবে”

*********সমাপ্ত*******