ঔজ্জ্বল্যের আলোক প্রহর পর্ব-২৭+২৮

0
5

#ঔজ্জ্বল্যের_আলোক_প্রহর

#পর্বঃ২৭

#লিখাঃতাসফিয়া_তাসনিম

শাহরিয়ার উদ্ভ্রান্তের মতো বাবাকে নিয়ে তাদের পরিচিত হাসপাতালে পৌঁছালো। সেখানে পৌঁছানোর পর দ্রুত চেঁচিয়ে উঠলো,

“ইমারজেন্সি, প্লিজ হেল্প!!”

সাদা ইউনিফর্ম পরা দুইজন পুরুষ নার্স তৎক্ষনাৎ দৌড়ে আসে। একজন স্ট্রেচার ঠেলে আনে, অন্যজন সাহায্য করে তাকে নামাতে। শাহরিয়ার বুঝে ওঠার আগেই দুইজনে মিলে নিশ্বাসহীন মানুষটাকে তার হাত থেকে নিয়ে স্ট্রেচারে শুইয়ে দেয়। এরপরের সময়টা শাহরিয়ার একটা ঘোরের মধ্যে থাকে। ঘোরের মধ্যেই দেখলো বাবাকে নিয়ে স্ট্রেচার এগিয়ে চলেছে ইমারজেন্সি ইউনিট এর দিকে।

____________________°_________________

ফারিয়া উদ্ভ্রান্তের মতো দৌড়ে আসেন। পিছন পিছন আসে মাহিরাও। শাহরিয়ারই ফোন করে জানিয়েছে বাবার হঠাৎ গুরুতর অসুস্থতার কথা। ভদ্রমহিলা এসেই ভয়ার্ত ভাবে জিজ্ঞেস করতে থাকেন কী হয়েছে। ফোনে জিজ্ঞেস করেও লাভ হয়নি, শাহরিয়ার তাৎক্ষণিক ভাবে কল কেটে দিয়েছিলো।
শাহরিয়ার শূন্য দৃষ্টিতে কতক্ষণ চেয়ে থাকে মায়ের দিকে, যেন কোনো কথাই তার বোধগম্য হচ্ছে না। হঠাৎ সম্বিত ফিরে পেলো সে।

“মা, শান্ত হও। ডাক্তার এখনো দেখছেন। আসুক, তারপর জানবো কী অবস্থা। তুমি বসো বেঞ্চে।”

ফারিয়া বসলেন,কিন্তু অস্থিরভাবে ঘনঘন পা নাড়াতে লাগলেন।
শাহরিয়ার মাহিরাকে জিজ্ঞেস করলো,

“রাজীব আসবে? জানিয়েছিলি ওকে?”

মাাহিরা শুষ্ক মুখে সায় জানায়। তাদের উপর দিয়ে বিপদের রেলগাড়ী যাচ্ছে যেন। একটার পর একটা লেগেই আছে, অথচ কোনোটা সমাধান হওয়ার নাম নেই।

“ভাবীকে রেখে এসেছি বাসায়, বাসায় কেউ নেই। তাছাড়া কতক্ষণ না কতক্ষণ থাকা লাগে, বাবুকে নিয়ে তো আসাও যাবে না।”

শাহরিয়ার শুধু মাথা হেলায়, আর কোনো প্রতিক্রিয়া দেয় না।

কিছুক্ষণ পর ডক্টর আসলেন তাদের কাছে। সবাই মূহুর্তেই চঞ্চল হয়ে উঠলো রোগীর অবস্থা জানার জন্য। ডক্টর তাদের পূর্ব পরিচিতই। সোহাইল শাহবাজ আগেও উনার কাছে দেখিয়েছিলেন।

“শাহরিয়ার, তুমি একটু আমার সাথে আসো।”

শাহরিয়ার কথামতন এগিয়ে গেলো ডক্টরের কাছে।

“দেখো, শাহবাজ সাহেবের কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। উনি তো আগে থেকেই হার্টের পেশেন্ট, তিনটা রিং পরানো আছে তার হার্টে।….বিষয়টা একটু ক্রিটিকাল, বুঝলে?”

শাহরিয়ারের ভিতরটা অদ্ভুত আশংকায় ছেয়ে গেলো।

“এখন কী করতে হবে ডক্টর?”

ডক্টর কিছুটা হতাশ স্বরে বললেন,

“এখন চেষ্টা করতে হবে আরকি। উনাকে লাইফ সাপোর্টে রাখতে হবে। তুমি সব ফর্মালিটি কমপ্লিট করে ফেলো জলদি জলদি, উনাকে আইসিইউতে শিফট করতে হবে।”

একটু থামেন তিনি, তারপর খুব ধীর কন্ঠে বললেন,

“দোয়া করো যেন উনি সার্ভাইব করে যান!”

____________________°__________________

ফারিয়া ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদেই যাচ্ছেন কখন থেকে। উনাকে সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য আপাতত কেউ এগিয়ে আসছে না। সবারই মন মেজাজ বিক্ষিপ্ত। কেউ কাউকে ধরার মতন অবস্থায় নেই। শাহরিয়ার আর মাহিরার হাসবেন্ড রাজীব দুজনে মিলে ছুটোছুটি করে সব ফর্মালিটি কমপ্লিট করে নিয়েছে। কিছুক্ষণ আগেই সোহাইল সাহেবকে আইসিইউ রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। মানুষটাকে ওই এক ঝলক দেখার পর থেকে সকলে আরও বিমর্ষ হয়ে গেছে, ফারিয়াও সেই থেকে অশান্ত মনে কেঁদেই যাচ্ছেন।

আরো কিছুক্ষণ পর শাহরিয়ার হঠাৎ ক্ষেপে উঠলো। মায়ের দিকে ফিরে কিছুটা ধমকের স্বরে বললো,

“মা তুমি থামবে? কাঁদতে হলে বাসায় গিয়ে কাঁদো। এটা হসপিটাল। তোমার জন্য বাকিরা অসুবিধায় পড়ছে!”

ফারিয়া ধমক খেয়ে কয়েক মূহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেলেন। পরক্ষণেই আবার চাপা স্বরে কান্না আরম্ভ করলেন।

“মা শাট আপ! কান্না বন্ধ করো! সব গন্ডগোলের মূল তো তুমিই! এখন কেঁদে কী লাভ? না তুমি অরুকে যেতে দিতে, আর না বাবা টেনশনে এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তো!”

ফারিয়া নিজেকে আরো অপরাধী ভাবতে আরম্ভ করলেন এই কথাগুলো শুনে। মুখে আঁচল চেপে নিঃশব্দে কাঁদতে থাকলেন। মাহিরা দ্রুত মায়ের পাশে বসলো। গরম চোখে ভাইয়ের দিকে তাকালো শাসনের দৃষ্টিতে, কিন্তু শাহরিয়ারের কোনো ভাবান্তর হলো। ভাইয়ের মাথা আসলেই গেছে!

“আরে ভাই কী হয়েছে? সিচুয়েশনটা তো এখন সবার জন্যই খারাপ। এভাবে আন্টিকে দোষারোপ করলে সব আগের মতো হবে? উনার হাসবেন্ড আইসিইউতে। উনার মনের অবস্থা একবারও না ভেবে এগুলো বলা কি ঠিক হলো তোমার? এইসব সিচুয়েশনে ইমোশন কন্ট্রোলে রাখতে হয় ভাই।”

রাজীব শাহরিয়ারের পিঠ চাপড়ে নরম কন্ঠে বললো কথাগুলো। শাহরিয়ারের ভিতরে আসলে কিছুই ঠিক নেই। অরোরার মেসেজের কথা এখনও সে কাউকে জানায়ইনি। সে কার কাছে বলবে নিজের মনের শংকাগুলো? বোনের কোনো খোঁজ নেই, এদিকে বাবা হসপিটালে। এই অবস্থায় কার মাথা ঠিকঠাক কাজ করে?

____________________°_________________

জ্যোতি ঘরে অস্থির হয়ে পায়চারি করছে। গত রাতে তার শ্বশুরকে হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বাসা থেকে যারা গিয়েছে তাদের কেউ এখনো বাসায় আসেনি।
মাহিরাকে অবশ্য কয়েক দফা কল দিয়ে জেনেছে অবস্থা ক্রিটিকাল। বাবার জন্য দোয়া করতে বলেছে সে।

সুমি এসে জিজ্ঞেস করে গেলো রান্নায় কী কী বসাবে। জ্যোতি শর্টকাট কিছু করতে বলে দিয়েছে ওকে।
মহসিন আর জুবায়েরকে সে আর মিতু মিলেই সামলাচ্ছে।
মহসিন গতরাত থেকে মাকে না দেখার কারণে অনেক কান্নাকাটি করেছিলো। পরে জ্যোতি ভুলিয়ে ভালিয়ে ঠান্ডা করেছে। এখন চুপচাপ খেলছে।

____________________°___________________

দুপুরের দিকে শাহরিয়ার বাসায় আসলে জ্যোতি ছুটে যায় তার দিকে।
এক রাতেই চেহারা সুরুতের কী অবস্থা হয়েছে তার! চোখদুটো লাল হয়ে আছে, মাথার চুলও উসকোখুসকো। চোখ কি শুধু না ঘুমানোর কারণে লাল?
জ্যোতির ভীষণে তোলপাড় হলো মানুষটার এমন ভগ্ন অবয়বে।
জ্যোতি ধীর কন্ঠে প্রশ্ন করলো,

“আন্টি আসেনি সাথে?”

“বলেছি, আসবে না।”

শাহরিয়ার ছোট করে উত্তর দিলো। সে বাসায় এসে জ্যোতির দিকে সরাসরি একবারও তাকায় নি। যেন নিজেকে লুকিয়ে রাখার প্রয়াসে আছে সে। দ্রুত নিজের কামরায় গিয়ে বাথরুমে ঢুকে গেলো শাওয়ার নিতে।

জ্যোতি দ্রুত ওয়ারড্রব থেকে তার কাপড় বার করে হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে রাখলো। আধা ঘণ্টা পর শাহরিয়ার দরজা হালকা খুলে পোশাক নেওয়ার জন্য আস্তে করে ডাক দিলো জ্যোতিকে। জ্যোতি সেখানেই ছিলো, দ্রুত তার হাতে সেগুলো দিয়ে দেয় সে। কিছুক্ষণ পর শাহরিয়ার শুধু প্যান্ট পরে বের হলো। গায়ের উপরের অংশ উন্মুক্ত।
টিশার্ট বিছানায় রেখে ওয়ারড্রব খুলে তাকে ফুল স্লিভ শার্ট বের করতে দেখে জ্যোতি প্রশ্ন,

“এখনই যাবেন আবার?”

শাহরিয়ার হালকা মাথা নাড়ে সম্মতি সূচক ভাবে।

“তাহলে আমি খাবার বেড়ে আনি, কিছু খেয়ে যান।”

“না, খাবো না আমি। তুমি ব্যস্ত হয়ো না।”

জ্যোতি শুনলো না কথা। নিজেই গিয়ে খাবার বেড়ে নিয়ে এলো।
গরম গরম ধোঁয়া উঠা চিকন চালের ভাত আর ডিম ভুনা নিয়ে আসলো সাথে করে। অন্য হাতে আরেকটা বাটিতে মাংসভুনা রয়েছে।
শাহরিয়ার সেসব দেখে মুখ বিকৃত করে ফেললো।

“আমার খাবার কথা মনে আসলেই ভিতরে গা গুলাচ্ছে জ্যোতি। মনে হয় না কিছু মুখে দিতে পারবো।”

জ্যোতি চোখ পাকিয়ে হুমকি দিলো।

“চুপচাপ আমার সামনে বসুন। গতকাল বিকাল থেকে কিছু পড়েনি পেটে, তাই এই অবস্থা। এখন আপনিও যদি অসুস্থ হয়ে পড়েন তাহলে ঘরের বাকিদের সামলাবে কে?”

জ্যোতি তারপর জোর করে নিজ হাতে খাইয়ে দিলো তাকে। শাহরিয়ারও বাধ্য ছেলের মতো খেয়ে নিলো। এতক্ষণ দৌড়ঝাঁপের মধ্যে খাবার কথা মাথায় না থাকলেও পেটে খাবার পড়তেই বুঝতে পারলো তার সত্যিই ভীষণ খিদে পেয়েছিলো।

খাবার শেষ করার পর শাহরিয়ার বেসিনে গিয়ে মুখ ধুইয়ে তোয়ালে মুখ মুছতে নিলে জ্যোতি বাঁধা দেয়। শাহরিয়ারের কাছে এসে নিজের ওড়নার প্রান্ত দিয়ে শাহরিয়ারের ভেজা মুখটা ভীষণ যত্নের সাথে মুছে দেয়।
শাহরিয়ার এক দৃষ্টিতে স্ত্রীর কার্যকলাপ দেখতে থাকে। তাকে মেন্টালি সাপোর্ট দেওয়ার জন্য জ্যোতির এই আপ্রাণ চেষ্টা শাহরিয়ারের হৃদয় ছুঁয়ে গেলো। ভিতর থেকে কাউকে বলতে না পারা কষ্টগুলো যেন এই যত্নের ছোঁয়ায় ঠেলে বেরিয়ে আসতে চাইছে ভিতর থেকে। তবুও নিজেকে সামলে সে সরে দাঁড়ায়।

“একটু পাঁচ মিনিট বসুন। সুমি সবার জন্য খাবার প্যাক করছে। সেগুলো নিয়ে যান।”

শাহরিয়ার তাই চুপচাপ মূর্তির মতন বসলো বিছানায়। চোখদুটো তার ভীষণ শুষ্ক। কেমন যেন কড়কড় করছে চোখদুটো। জ্যোতি এক দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো তার শক্ত মুখটার দিকে, স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে নিজেকে জোর করে কাঠিন্যের খোলসে আবৃত করে রাখছে মানুষটা। আসার পর জুবায়েরের খোঁজ একবারও করেনি লোকটা। অথচ বাহির থেকে এলে আগেই জুবায়েরের কাছে যাওয়া চাই তার। এতেই বোঝা যায় মানুষ কী রকম মানসিক পীড়াতে আছে।
জ্যোতি আলতো করে শাহরিয়ার হাতে হাত রাখে। তারপর মোলায়েম স্বরে বলে,

“আপনার খারাপ লাগলে আমাকে জড়িয়ে ধরতে পারেন। ভিতরে আটকে থাকা কথাগুলো আমার সাথে শেয়ার করতে পারেন। কিছু না হোক, অন্তত মনটা হালকা হবে।”

শাহরিয়ার স্থির হয়ে বসে রইলো। তারপর হঠাৎ জ্যোতিকে সজোরে জড়িয়ে আঁকড়ে ধরে নিজের সাথে। জ্যোতির কাঁধে মুখ ডুবিয়ে পড়ে থাকে নির্জীব হয়ে। জ্যোতি স্পষ্ট মানুষটার দ্রুতগতির হৃৎস্পন্দন টের পাচ্ছে। শাহরিয়ারের গায়ের কম্পন স্পষ্ট টের পাচ্ছে সে। নিজেও তাই শক্ত করে দুই বাহু দিয়ে জড়িয়ে ধরলো তাকে। থেকে থেকে পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো ভরসা দেওয়ার উদ্দেশ্যে।

“রিলাক্স হোন, সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ। বিপদ আসে, আবার চলেও যায়। ভেঙে পড়লে তো হবে না তাই না?”

শাহরিয়ার আরও কিছুক্ষণ তাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে একপর্যায়ে বাঁধন আলগা করে ছেড়ে দেয়।
তারপর কাঁদোকাঁদো স্বরে বললো,

“আমি ভালো নেই জ্যোতি। আমি একদম ভালো নেই! আমার ভিতরে কী চলছে সেটা শুধু আমিই জানি। আমি বলেও বুঝাতে পারবো না তোমাকে।”

জ্যোতি আদুরে স্বরে বললো,

“বলার প্রয়োজন নেই। আমি বুঝে নিবো। আমার কোলে মাথা রেখে শুবেন কিছুক্ষণ?”

শাহরিয়ারের ভিতর ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও না করে দিলো। সময় নেই, হাসপাতালে যেতে হবে আবার।

জ্যোতি কথা বলে চেষ্টা করতে থাকে শাহরিয়ারের মন হালকা করার জন্য।
একপর্যায়ে শাহরিয়ার সত্যিই কিছুটা স্বস্তি বোধ করে। তারপর দ্বিধাদ্বন্দে ভুগে বাবার ফোনটা বের করে অরোরার মেসেজ দেখায় স্ত্রীকে।

জ্যোতি মেসেজটা পড়ে স্তব্ধ হয়ে যায়। মূহুর্তেই গা শিরশির করে ওঠে তার। বুঝতে পারে শাহরিয়ারের এমন দিশেহারা আচরণের হেতু।

“এটা সত্যি অরোরা পাঠিয়েছে?”

শাহরিয়ার অন্যমনস্ক হয়ে বলে,

“জানি না। অরু এতো সহজে গিভ আপ করার মতো মেয়ে না। আমাদের তিন ভাই বোনের মধ্যে সবথেকে গা ছাড়া স্বভাবের ও। ওই ঘটনার পর ওর সাথে আমি নিজে কথা বলেছি। তখন আমি যখন স্বান্তনা দিচ্ছিলাম, ওর কাছে অ্যাপোলোজাইস করছিলাম তখন ও নিজে আমাকে অভয় দিয়েছিলো, বলেছিলো এটা বড় কিছু না। এরকম আরও মেয়ের সাথেও হয়েছে, হচ্ছে। তার হয়তো কিছুটা সময় লাগবে মানিয়ে নিতে, সব ভুলতে, কিন্তু সে পারবে। যেই মেয়ে নিজে এসব বলেছে সেই মেয়ে এই মেসেজ পাঠাবে এটা বিশ্বাসযোগ্য না।”

“আপনি কি অন্য কিছু সন্দেহ করছেন?”

শাহরিয়ার কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে। তারপর বলে,

“আমি বাসায় আসার আগে থানা থেকে ঘুরে এসেছি। আমার মনে হচ্ছে ওকে অপহরণ করা হয়েছে!”

জ্যোতি চোখ কপালে উঠিয়ে বলে,

“কী? আপনি কাউকে সন্দেহ করছেন?”

“রবিন হারামিটাকে সন্দেহ হচ্ছে আমার। এই ব্যাপারেই কথা বলে এসেছি পুলিশ স্টেশনে। দোয়া করো খারাপ কিছু যেন না হয়!”

জ্যোতির রবিনের নাম শোনার পর হঠাৎ জান্নাতের কথা মনে পড়ে গেলো, উদ্বেগের সাথে বললো,

“শুনুন, আমি না জান্নাতকে ফোন করেছিলাম। কিন্তু ওর ফোন রিচ আউট হচ্ছে না। আমার কি একবার দেখে আসা উচিত? আসলে ভয় লাগছে, একা বাচ্চা নিয়ে থাকে মেয়েটা।”

“এখন কীভাবে যাবে? এই অবস্থায় বাসায় তো কারো থাকা লাগবে। আচ্ছা আমি দেখি, মাহি আর মাকে বাসায় পাঠাতে পারি কিনা। তারপর সিচুয়েশন বুঝে ড্রাইভার নিয়ে যেও। তবে যাওয়ার আগে অবশ্যই আমাকে জানাবে।”

জ্যোতি সায় জানায়। শাহরিয়ার আনমনে বলে উঠে,

“তোমার কথা শুনে এখন আমারও টেনশন হচ্ছে। আমাদের জন্য মেয়েটা আবার কোনো বিপদে না পড়ে যায়!”

জ্যোতির মনেও একই চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে….

#চলবে……..

#ঔজ্জ্বল্যের_আলোক_প্রহর

#পর্বঃ২৮

#লিখাঃতাসফিয়া_তাসনিম

অরোরা নিখোঁজ হওয়ার পুরো দুই দিন এক রাত পার হয়ে গিয়েছে। পুলিশ এখনও কিছু বের করতে পারেনি। সোহাইল সাহেবের অবস্থাও ভালো না। চব্বিশ ঘণ্টা অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। কিন্তু ডাক্তার শিওরিটি দিতে পারছে না কোনো।
এতসবের কারণে ঘরের পরিস্থিতি একেবারে থমথমে। সর্বত্র যেন মৃত্যু মতো নিরবতা বিরাজ করছে।
শাহরিয়ার ঠেলেঠুলে ফারিয়া আর মাহিরাকে বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছে। তাদের প্রয়োজন হলে সে ডাকবে বলে আশ্বস্ত করার পর মাহিরা মাকে নিয়ে শাহবাজ ম্যানশনে ফিরে আসে। তার ছেলেটাও মাকে ছাড়া দীর্ঘক্ষণ আছে। মহসিনেরও তাকে প্রয়োজন।
ফারিয়া খাওয়া দাওয়া এক প্রকার ছেড়েই দিলেন। সারাক্ষণ কান্নাকাটির উপরেই আছেন। মাহিরা জোর করে অল্প কিছু খাইয়ে দিতে পারলেও এক পর্যায়ে হাল ছেড়ে দিলো। মনে মনে দোয়া করতে থাকলো সব ঠিক হওয়ার।

জ্যোতি এই পরিস্থিতিতে একাই পুরো বাড়ি সামলাচ্ছে। শাহরিয়ার তো বাসায় আসেইনা।

কিচেনে রান্না করছিলো সে, সুমি সাহায্য করছিলো। এমন সময় মাহিরা এসে একটা কেবিনেট ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে কপাল ঢলতে ঢলতে হতাশ হয়ে বললো,

“আমার আর ভালো লাগছে না কিছু। এতো এতো দুশ্চিন্তা আর নিতে পারছি না আমি!”

জ্যোতি সান্ত্বনা দেওয়ার মতো কোনো বাণী খুঁজে পেলো না নিজের অভ্যন্তরে। তাই একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।

মাহিরা মাথা উঁচিয়ে বললো,

“এখন মা-ও কিছু খাচ্ছে না। না খেলে কীভাবে হবে বলো তো? পরে প্রেসার লো হয়ে উনিও যদি হাসপাতালে এডমিট হয় তখন কী হবে? ভাইয়া একা কতদিকে সামলাবে? বুঝিয়েও লাভ হচ্ছে না কোনো!”

জ্যোতি ক্ষীণ কন্ঠে বললো,

“তার মানসিক অবস্থাটা একবার চিন্তা করো মাহি? মেয়ে নিখোঁজ, স্বামী হাসপাতালে। এই অবস্থায় কে ঠিক থাকে? আচ্ছা তুমি দুশ্চিন্তা করো না। দেখি, আমি কিচেনের কাজগুলো সেড়ে নিই, তারপর উনার পাশে বসে একটু বুঝানোর চেষ্টা করবো। এভাবে নাওয়াখাওয়া ছেড়ে দিলে তো বিপদোর ষোলকলা পূর্ণ হবে।”

“হ্যাঁ তাই করো, যদি একটু স্থির হয়।”

____________________°____________________

জ্যোতি খাবারের ট্রলি নিয়ে ফারিয়ার রুমে ঢুকলো। ঘর পুরো অন্ধকার করে রেখেছেন উনি। হাতড়ে হাতড়ে সুইচবোর্ড খুঁজে আলো জ্বালালো সে।
দেখলো ফারিয়া বিছানায় গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। লাইট জ্বলতেই উনি নড়েচড়ে উঠলেন।
জ্যোতি চুপচাপ ট্রলি একপাশে রেখে উনার পাশে বসলো। তারপর মোলায়েম কন্ঠে ডাক দিলো,

“আন্টি। খাবার এনেছি, খেয়ে নিন।”

ফারিয়া কিছুক্ষণ পর ভাঙাকণ্ঠে উত্তর দিলেন,

“খাবো না, নিয়ে যাও। এভাবে জোড়াজুড়ি করছো কেনো তোমরা?”

জ্যোতি গেলো না। ঠায় বসে রইলো সেখানে। ফারিয়া তখনও মুখ লুকিয়ে আছেন।

জ্যোতি একটু পর বলে,

“আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। সিচুয়েশনটা আমাদের প্রত্যেকের জন্যই দমবন্ধ করা। আর আপনি তো সেখানে একজন মা, একজন স্বামী। আপনার কষ্টটা তো আরো বেশি।”

জ্যোতির কথা ফারিয়া আবার ফুঁপিয়ে উঠলেন। দুঃখ আবার উথলে উঠেছে ভিতরে।

“কিন্তু তারপরও কিছু তো খেতে হবে তাই না? শরীর কি দুঃখ বুঝে? পরে দূর্বল হয়ে পড়লে আঙ্কেলকে যখন রিলিজ দেওয়া হবে তখন আনতে যাবেন কীভাবে? অরু যখন বাসায় আসবে তখন জড়িয়ে ধরে আদর করবেন কীভাবে? এজন্য কি আপনার সুস্থ থাকা জরুরি না? আপনি কী খাবেন বলুন আমাকে, আমি বানিয়ে দিবো।”

ফারিয়া কাঠ হয়ে পড়ে রইলেন। কথাগুলো শোনার পর তার অভ্যন্তরে আলোড়ন হচ্ছে। সত্যিই সোহাইলকে রিলিজ দেওয়া হবে? অরোরা ফিরে আসবে?

এতক্ষণে তিনি মুখের উপর চেপে ধরা বালিশটা সরিয়ে জ্যোতিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে দেখলেন।

জ্যোতি ভিতরে ভিতরে আঁতকে উঠলো ফারিয়ার চেহারা দেখে। কালশিটে পড়ে গিয়েছে কেমন যেন মুখ জুড়ে দীর্ঘক্ষণ কান্নাকাটি আর মানসিক দহনের ফলে, চোখমুখ ফোলা, গালে চোখ বেয়ে গড়িয়ে পরা পানির কিছু ধারা শুকিয়ে চিটচিটে হয়ে আছে, কিছু ধারা আবার তাজা। উনার সুন্দর চুলগুলো এখন কিছুটা কাকের বাসার মতো দেখাচ্ছে।
নিজের কী করুণ হাল করে ফেলেছেন তিনি। জ্যোতির ভিতরে ভীষণ মায়া হলো।
ফারিয়া শোয়া থেকে উঠে বসলেন। কতক্ষণ থম মেরে বসে থেকে হঠাৎ আবার হুহু করে কেঁদে ফেললেন,

“আমার মেয়েটা কই আল্লাহ জানে! এতো দোয়া করছি আমার মেয়েটা আসছে না কেনো? ওকে কেউ অপহরণ করলে তো এতক্ষণে মুক্তিপণ দাবি করে ফেলার কথা। সেটাও তো কেউ করেনি। তবে ও গেলো কোথায়? ”

জ্যোতির জড়িয়ে ধরে উনাকে সান্ত্বনা দিতে ইচ্ছে করলো, কিন্তু আড়ষ্টতার কারণে করতে পারলো না। শুধু উনার হাতদুটো নিজের মুঠিতে নিয়ে মৃদু চাপ দিয়ে বললো,

“ফিরে আসবে ও। আপনি চিন্তা করবেন না প্লিজ। সবাই দোয়া করছে ওর জন্য।”

ফারিয়া তবুও কাঁদতে লাগলেন। হঠাৎ অপ্রকৃতস্থের মতো অদ্ভুত ভাবে বলে উঠলেন,

“তোমার বদদোয়া লেগেছে, বুঝলে? তোমাকে স্বামী সংসার ছাড়া করতে চাইছিলাম, এখন আল্লাহ আর স্বামীকে কেড়ে নিচ্ছেন। আমার মেয়েটাও এখন নিরুদ্দেশ! তোমার হায় লেগেছে, বুঝতে পারছি আমি!”

জ্যোতি কেঁপে উঠলো। মনের অজান্তেই ইস্তেগফার পাঠ করে দ্রুত বসা থেকে উঠে বিভ্রান্তির সাথে বললো,

“আন্টি এসব কী বলছেন? ”

ফারিয়া গাল মুছতে মুছতে বললো,

“আমি ঠিকই বলেছি। তোমার সাথে কম তো করিনি। এসবেরই কর্মফল পাচ্ছি এখন!”

জ্যোতি দিশেহারা বোধ করলো। ভীষণ জোর দিয়ে বললো,

“আমি কাউকে বদদোয়া দেইনি। আপনি এভাবে চিন্তা করা বন্ধ করুন। বিপদ সবার জীবনেই আসে। বিপদ দিয়ে আল্লাহ পরীক্ষা করেন। এটাকে আপনি পরীক্ষা হিসেবেই নিন।”

“বদদোয়া মুখে দেওয়ার দরকার হয় না, বান্দার অজান্তেই আল্লাহর দরবারে চলে যায়। আর আমি বোকা সেটা ভুলে বসেছিলাম। আল্লাহ মাফ করুক আমাকে। আমি বুঝতে পারছি আমার খামতি গুলো। তোমাকে সর্বস্বান্ত করার উন্মাদনায় নেমেছিলাম, এখন আল্লাহ আমাকে সর্বস্বান্ত করে দিচ্ছেন। আমি আর সহ্য করতে পারছি না জ্যোতি! আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে!”

জ্যোতি ভেবেই পেলো না তার এখন কী করা দরকার। কতক্ষণ স্থির থেকে ফারিয়া আবার বললেন,

“তুমি আমাকে ক্ষমা করে দেও প্লিজ। আমার নাদান মেয়েটাকেও ক্ষমা করে দিও। ও জানে আনজানে তোমার সাথে বহুবার বেয়াদবি করেছে। ওকে মাফ করে দিও ছেলেমানুষি মনে করে।”

জ্যোতি ফারিয়ার পাশে পুনরায় বসো কোমল কন্ঠে বললো,

“আন্টি আপনি মানসিক ভাবে ভালো নেই। এখন এসব চিন্তা করার সময় না। আপনি নিজের প্রতি একটু যত্নবান হোন। সব ঠিক হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।”

“না, আগে বলো ক্ষমা করেছো?”

জ্যোতি বোকার মতো তাকিয়ে রইলো অবুঝের মতো জেদ ধরে থাকা মধ্যবয়সী মহিলাটির দিকে।
তাকে শান্ত করতে মোলায়েম কন্ঠে বললো,

“হ্যাঁ, করে দিয়েছি। মন থেকে করে দিয়েছি। আপনি আর এসব নিয়ে চিন্তা করবেন না প্লিজ।”

ফারিয়া যেন একটু স্বস্তি বোধ করলেন। কতক্ষণ একভাবে বসে থেকে হঠাৎ বললেন,

“কী রান্না হয়েছে আজকে?”

জ্যোতির মুখে হাসি ফুটে উঠলো কথাটা শুনে। দ্রুত ট্রলি সামনে নিয়ে এনে খাবারের ঢাকনাগুলো সরাতে লাগলো।

_____________________°__________________

জ্যোতি কলিং বেলে প্রেস করে অপেক্ষা করতে থাকে বাইরে।
কেউ দরজা খুলছে না দেখে কিছুক্ষণ আবার কলিং বেল চাপে। এক মিনিট পর জান্নাতের প্রশ্ন ভেসে আসে ভিতর থেকে,

“কে?”

“আমি, জ্যোতি।”

বেশ কয়েক মূহুর্ত কেটে যাওয়ার পর জান্নাত থমথমে মুখে দরজা খুলে দেয়। তার মাথায় বড় করে ওড়না টেনে দেওয়ার দরুন কপাল, ভ্রু অনেকটাই ঢাকা।

জ্যোতি জান্নাতের হাবভাব দেখে ভ্রু কুটি করে বললো,

“বাইরেই দাঁড় করিয়ে রাখবি?”

জান্নাত অপ্রস্তুত হয়ে যায়, দ্রুত বলে,

“না, আয় ভিতরে আয়।”

জ্যোতি তাকে পাশ কাটিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে করতে উদ্বিগ্ন স্বরে বললো,

“তোকে এতোবার কল দিলাম, অথচ তোর পাত্তাই পাওয়া গেলো না! কোথায় ছিলি তুই ফোন বন্ধ করে? আমি কত টেনশনে ছিলাম জানিস?”

জান্নাত জবাব দেয় না। জ্যোতিকে বসতে বলে নিজের রুমে গিয়ে আফরাকে দেখে আসে। আফরা ঘুমাচ্ছিলো, কলিং বেলের আওয়াজে উঠে গেছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই মেয়েকে নিয়ে জ্যোতির সামনে আসলো।

“ফোন বন্ধ করে রেখেছিলি কেনো?”

“ফোন নষ্ট হয়ে গেছে।”

নিজের মেয়েকে নিয়ে ব্যস্ত থাকতে থাকতে সোজাসাপটা বললো সে।
জ্যোতির কাছে জান্নাতের আচরণ বেশ অসংলগ্ন ঠেকলো।
এভাবে ওর সামনে ওড়না টেনে বসে আছে কেনো মেয়েটা?

“আমার ননদ দুই দিন ধরে মিসিং!”

জান্নাত যেন জমে গেলো। একে একে চোখের সামনে ভাসতে থাকলো কিছু টুকরো টুকরো স্মৃতি। কিন্তু তবুও চুপ করে রইলো। কোনো প্রশ্ন করলো না জানার জন্য।

জান্নাতের হাতে হঠাৎ চোখ পড়তেই জ্যোতির ভ্রু কুঁচকে গেলো। বেশ ছড়ানো কালশিটে দাগ পড়ে আছে।
হঠাৎ কী মনে হতেই বললো,

“তুই এভাবে ওড়না পড়ে আছিস কেনো?”

“এমনি, এটা জিজ্ঞেস করার কী আছে।”

“তোর মুখ ভালো করে দেখা যাচ্ছে না তাই জিজ্ঞেস করছি।”

জ্যোতি বেশ শীতল কন্ঠে বলে কথাটা। হঠাৎ জান্নাত কিছু বুঝে উঠার আগেই সে ওড়নাটা টেনে নামিয়ে দিলো। পরের দৃশ্যটা দেখে সে হতবাক হয়ে গেলো একেবারে।
কপালে সেলাই করা, কয়েক জায়গায় কালচে দাগ। স্পষ্ট মারধরের চিহ্ন!
জান্নাত জ্যোতির আকস্মিক এই কাজে হকচকিয়ে গেলেও হুশ ফিরতেই দ্রুত পুনরায় ওড়না টেনে উদ্ভ্রান্তের মতো বললো,

“আশ্চর্য! এমন করলি কেনো?”

আস্তে আস্তে জ্যোতির মুখে কাঠিন্য ভর করলো। হিমশীতল কন্ঠে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো সে,

“তোকে মেরেছে কেউ?”

জান্নাত তটস্থ হয়ে বললো,

“কে মারবে? আজব তো!”

“মিথ্যা বলবি না খবরদার! রবিন এসেছিলো? ও মেরেছে তোকে? এমন হলে রবিনের উপর পুলিশ কেস হবে–”

জান্নাত এবার ভীষণ রেগে গেলো হুট করেই,

“এতো প্রশ্ন ভালো লাগে না আমার! বিরক্ত লাগে! আমার জীবন নিয়ে তোর মাথা না ঘামালেও চলবে জ্যোতি!”

জ্যোতি কাতর চোখে তাকালো বান্ধবীর দিকে। ভীষণ অপমানিত বোধ করছে সে জান্নাতের কথাটায়। আসার পর থেকে তার সাথে জান্নাতের ব্যবহার শীতল, যেন জান্নাত খুশি হয়নি তার আসাতে। তার আত্মসম্মানবোধে আঘাত লেগেছে ভীষণ বিষয়টা। তাই উঠে দাঁড়িয়ে বললো,

“আচ্ছা, আমি তাহলে আসি। আমার আসাতে সম্ভবত তুই বিরক্ত হয়েছিস।”

জান্নাত কোনো প্রতিত্তোর করলো না। এমনকি বাঁধাও দিলো না তাকে।

জ্যোতি চলে যাওয়ার আগে মনস্থির করে ঘুরে দাঁড়ালো কিছু বলার উদ্দেশ্যে,

“তোকে একটা কথা বলি- যখন কেউ তোর পরোয়া করে তখন তোরও উচিত তার পরোয়া করা, সেটা যদি না পারিস তাহলে উচিত তার অনুভূতির কদর করা। কিন্তু তুই এটা কখনোই কারো সাথে করিসনি এই জীবনে। যাইহোক, ভালো থাক।”

বলে দ্রুত পদক্ষেপে চলে গেলো সে সদর দরজার কাছে।দরজা খুলে বাইরে বের হতেই যাবে এমন সময় জান্নাত পিছন থেকে রোবটের মতো বলে উঠলো,

“আসিফ আমাকে তালাক দিয়েছে জ্যোতি। আমি কিছু কারণে মানসিক ভাবে ঠিক নেই। কিছু মনে করিস না আমার ব্যবহারে।”

#চলবে……..