#কন্ট্রোললেস
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ১৮ ]
চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে এপাশ ওপাশ চোখের পলক ঘুরাল রুমু।হাতে থাকা টোস্ট বিস্কুটে কামড় বসিয়ে আরেকবার চায়ে চুমুক দিল।সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত নেমেছে সোডিয়ামের আলোয় আলোকিত দোকানটা।টঙ দোকানে টানা তিন ঘন্টা যাবৎ বসে আছে সে।দোকানিও বেশ ভালো রুমুর বিপদ শুনে আস্থা দিয়ে বসতে বলেছেন।
মেয়েটা বসল উজ্জ্বলের নাম্বার সহ অন্য কারো নাম্বার তার মুখস্ত নেই।বাবার নাম্বার মুখস্ত পারলেও এখন বাবাকে ফোন দেওয়া যাবে না।বুদ্ধি করে দোকানির ফেসবুক আইডি থেকে উজ্জেলের আইডিতে মেসেজ পাঠাল।মেসেঞ্জারে বেশ কয়েকবার ফোন করল।অথচ উজ্জ্বল অফ লাইনে ছেলেটা নিশ্চয়ই রুমুকে খুঁজতে খুঁজতে পাগল হয়ে গেছে।উজ্জ্বলকে লাইনে না পেয়ে উর্মির আইডি খুঁজে মেসেজ করল ফোন করল অথচ উর্মিও আজ অফ লাইনে।এরা নিশ্চয়ই সবাই চিন্তায় আছে এবং তাকে খুঁজছে।
শেষে কোন উপায় না পেয়ে উজ্জ্বলের বন্ধু সিয়ামকে মেসেজ করল।ভাগ্য ক্রমে সিয়াম তার মেসেজ দেখে এবং উজ্জ্বলের সাথে যোগাযোগ করার সুযোগ করে দেয়।
উজ্জ্বল দোকানির সাথে কথা বলে সঠিক ঠিকানা নেয় এবং জানায় উজ্জ্বল আসছে।অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল অথচ উজ্জ্বলের আসার নাম নেই।
চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে কাপটা যথা স্থানে রাখল রুমু।
” আর কিছু খাইবা মা?”
এক গাল হাসলেন দোকানি।রুমু তার হাসির বিপরীতে মাথা নাড়িয়ে না জানাল।
বাইকের শব্দে মাথা ঘুরাল রুমু,ওই তো উজ্জ্বল এসেছে।ছেলেটা চটজলদি বাইক দাঁড় করিয়ে রুমুর কাছে আসে।
“এখানে কি করছিস?”
” বলবো আগে বাড়ি নিয়ে চলুন।”
উজ্জ্বল কথা বাড়ায় না দোকানিকে ধন্যবাদ জানিয়ে রুমুকে নিয়ে নিজ গন্তব্যে ছুটতে থাকে।
উজ্জ্বলের গা ঘেষে বসেছে রুমু ছেলেটার গায়ের ঘামের গন্ধ তার নাকে লাগছে।
” উজ্জ্বল গোসল করেননি?”
” মুতু করার সময় দিসনি তুই আবার আসলি গোসলের খবর নিয়ে।”
” যাহ দুষ্টু।উজ্জ্বল জানেন পায়ে ভীষণ ব্যথা পেয়েছি।ব্যথা করছে।”
” ব্যথা পেলি কি করে?”
” আজ তো সেই দৌড় দিয়েছিলাম।”
” সত্যি করে বলতো রুমু তুই এখানে এলি কি করে?”
” আমি আর উর্মি আপা রাস্তা পার হবো উর্মি আপা রাস্তার মাঝামাঝিতে আমিও পেছন পেছন আসছিলাম এমন সময় দেখলাম আমার পাশেই রাশেদ ভাইয়ার বন্ধু কিরণ রিক্সায়।আমার মুখে মাক্স ছিল তবুও উনি আমাকে বোধহয় চিনে ফেলেছে।আমার দিকে অবাক হয়ে তাকাতে আমি ভীষণ ঘাবড়ে যাই ডানে বামে না তাকিয়ে রাস্তা পার না হয়ে উলটা দিকে হাটতে থাকি।কিরণ ভাই আমাকে রুমু বলে ডেকে উঠে ব্যস তারপর দিলাম সেই এক দৌড়।উনিও আমার পেছন পেছন আসেন।তারপর দিশ হারিয়ে ফেললাম।জানেন অনেক খুঁজেছি কোন রাস্তা দিয়ে এলাম কিংবা বাড়ির রাস্তা কোনটা আমি মেলাতেই পারিনি।গোলকধাঁধার মতো ঘুরতে ঘুরতে দোকানি আঙ্কেলের কাছে সাহায্য চাই।”
” আর আমি তোর ভাইকে সন্দেহের তালিকায় রেখে দুনিয়ার সব গালি একদিনেই দিয়ে দিলাম।বিশ্বাস কর কলিজা হাতে চলে এসেছিল।”
” ওও এত ভয় পাচ্ছিলেন?সকালেই তো কে জানি বলল আমাকে সন্দেহ করে।”
” তোর কর্মকান্ডে সন্দেহ না করে থাকা যায়?রাশেদের সাথে তোর যোগাযোগ হচ্ছে এটা আমি মানতে পারছি না রুমু।যোগাযোগ হতেই পারে কিন্তু আমার কাছে আড়াল করছিস কেন?”
” আড়াল তো করছি না।”
” সত্যটা বললে ক্ষতি কী?”
” আমি সবটা আপনাকে বলতে চাই কিন্তু মুড খারাপ করে দিয়েছেন।যেদিন মনে হবে বলা যায় সেদিন বলব।”
উজ্জ্বল কথা বাড়ায় না।ক্লান্ত শরীরে ভর করেছে ঘুম তার মাঝে রুমু যেভাবে পিঠে লেপ্টে আছে শরীরটা তাকে অন্য বার্তা দিচ্ছে।
.
বাসায় ফিরে সবার বকুনি খেয়ে রুমু খেয়ে দেয়ে কড়া একটা ঘুম দিয়েছে।উজ্জ্বল তার কাজ শেষ করে বাসায় ফিরল রাত বারোটায়।রুমু তখন গভীর ঘুমে মেয়েটাকে বিরক্ত না করে উজ্জ্বল দ্রুত গোসল শেষ করল।আগামীকাল ভাগ্যে কি যে আছে ভাবতেই তার কলিজা কাঁপছে।কাল রুমুকে নিয়ে বাড়ি যাবে,যে ছেলের নিজের ভরণপোষণের খরচ নিজে চালানোর মুরদ নেই সেই ছেলে কি না আরেকটা মেয়েকে বিয়ে করেছে!আরেকটা মেয়ের দায়িত্ব নিয়েছে।এই সমাজ এসব তো মানবে না।এতে অবশ্য উজ্জ্বলের কিছু যায় আসে না।ভেজা তোয়ালে বারান্দায় রেখে রুমে ফিরল উজ্জ্বল।এলোমেলো ভঙ্গিমায় রুমু ঘুমিয়ে আছে।মেয়েটার মাথা এক দেশে পা আরেক দেশে।টিশার্টের কোনা তুলে পেটের এক পাশ সাদৃশ্যমান।উজ্জ্বল শটান হয়ে শুয়ে পড়ল রুমুকে আঁকড়ে ধরে ফিসফিসিয়ে বলে,
” রুমু এই রুমু।”
” হু..”
” উঠ আমি গোসল করেছি।”
” হু।”
” আরে কলিজা উঠ না।”
“হু।”
” কি হু হু করছিস উঠ না।”
উজ্জ্বলের ডাকাডাকিতে রুমু চোখ মেলে তাকায়।উজ্জ্বল তার ভেজা শরীর নিয়ে তার সাথে কেমন চিপকে আছে।ঘুম ঘুম চোখে রুমুর মাঝে বিরক্তিরা হানা দেয়।
” উফফ উজ্জ্বল ভাই বিরক্ত করবেন না সরুন তো”
” আরে কে ভাই?আমি তোর বর, হাজবেন্ড, স্বামী,পতি।এই চুমু বউ উঠ না কত রাত কেটে গেল দুরুত্বে।”
” উফ ঘুমাতে দিন।অসময়ে জ্বালানো আপনার সবচেয়ে বড় বাজে স্বভাব।”
উজ্জ্বল বাঁধা মানে না।রুমুকে ঠেলে আরো কাছে নিয়ে আসে।ঘুমন্ত মুখখানি কুচকে উজ্জ্বলকে বকতে থাকে অথচ উজ্জ্বল কি বাঁধা মানে?অনেক দিন পর বউটাকে কাছে পেয়েছে তার ধৈর্য শক্তি ধীরে ধীরে কর্পূরের ন্যায় উড়ে যাচ্ছে।উজ্জ্বলের এলোপাতাড়ি চুমুতে রুমুর আর ঘুম হলো না পিটপিট চাহনিতে উজ্জ্বলকে বলে,
” আমার ঘুমটা…”
” চুপ।বিরক্ত করে না চুমু বউ।”
উজ্জ্বলের বাড়াবাড়িতে রুমুর ঘুম উড়ে যায়।মেয়েটা কাঁদো কাঁদো সুরে বলে,
” এইজন্য এতদিন ইচ্ছা করে ঝগড়া করে দূরে দূরে ছিলাম।কারণ আপনি আমাকে ঘুমাতে দেন না।এতদিন অন্তত শান্তির ঘুম দিয়েছিলাম আজ আবার…।”
উজ্জ্বল মুখ তুলে তাকাল।তার কানে যেন অবিশ্বাস্য কোন বাক্য প্রবেশ করেছে।রুমুকে ছেড়ে উঠে বসল সে।
” তার মানে!আমাকে বোকা বানালি?”
” আমি কি করবো?আপনি জানেন না আমি ঘুম পাগল।”
” তুই জানিস না আমি তোর জন্য পাগল।”
” উজ্জ্বল…”
” আজ থেকে তোর ঘুম হারাম করার দায়িত্ব আমার।গত কয়েকদিনে তোর চালাকি সুদে আসলে ফেরত নেব।”
রুমু চোখ ছোট করে তাকায়।উজ্জ্বলের বক্ষে নিজেকে অনুভব করতে চুপসে যায়।
” কাল যাবে তো শ্বশুর বাড়ি দ্বিতীয় বাসরের ব্যবস্থা করবো চুমু বউ?”
” আমার ভাই আপনার বাসরে কেরোসিন ঢেলে আ গু ন লাগিয়ে দেবে।”
” চুপ।রোমান্টিক মুহূর্তে এসব জাদরেলের কথা তুলিস কেন?”
” আপনি আমাকে ধমক দিচ্ছেন?থাকবো না আপনার সাথে।”
রুমু সুযোগ খুঁজে উঠে যেতে চায় কিন্তু উজ্জ্বল তার চালাকি বুঝতে পেরে দেহের সাহায্যে চেপে ধরে।উজ্জ্বলের বলীয়ান দেহে রুমু পারে না।
” আমার সাথে থাকবি না?চালাকি করছিস?”
উজ্জ্বল হাসে।নিগূঢ় নিস্তব্ধ সময়টাতে উজ্জ্বলের বুকের কামড়ের দাগটাতে রুমুর চোখ লাগে।মেয়েটা সেই দাগে আঙুলের সাহায্যে ছুঁতে চোখ ভিজে আসে।নিজের জেদের কাছে হেরে কতটা কষ্ট দিল এই মানুষটাকে।বৃদ্ধা আঙুলের সাহায্যে উজ্জ্বল রুমুর চোখ মুছে।রুমু ভেবেছিল উজ্জ্বল তাকে মায়া দেখাচ্ছে অথচ কন্ট্রোললেস উজ্জ্বল পালটা আক্রমণ দেখিয়ে দাঁতের সাহায্যে পিষে দেয় রুমুর ঘাড়, গলা।এসব তো নতুন নয় দাঁতে দাঁত চেপে উজ্জ্বলের এসব পাগলামো সহ্য করছে মেয়েটা।
.
সময়টা সকাল ছয়টা।বিয়ের লাল শাড়ি পরে উজ্জ্বলের বাইক চেপে বসেছে রুমু।উর্মি তামিম তারা সিএনজি করে আসছে।শাড়ি পরে উজ্জ্বলের বাইকে উঠা রুমুর এই প্রথম না।গায়ে হলুদের রাতেও পালিয়েছিল উজ্জ্বলের বাইক বসে।মন মস্তিষ্কের চিন্তাদের ছুটি জানিয়ে উজ্জ্বলের পেট জড়িয়ে বসেছে সে। বাতাসের দাপটে উড়ছে তার চুল।নব বধূর এতটা হই হুল্লোড় দেখলে নিশ্চয়ই যে কেউ অবাক হবে।লাল চুড়িগুলো মেয়েটার হাতে কি সুন্দর মানিয়েছে, গলায় সরু স্বর্নের চিকন চেইনটা গলাটাকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলেছে।উজ্জ্বল তার বউয়ের শতরূপে ঢোক গিলে।সাত সকালের শীতল পরিবেশে রুমুর কেমন ঘুম ঘুম পাচ্ছে সারাটা রাত উজ্জ্বল তাকে ঘুমাতে দেয়নি এই ছেলেটার এত তেজোময় ভাব দেখলে রুমুর ভয় লাগে।আর কারো ভাগ্যে পড়ার ছিল না?তার ভাগ্যেই কেন পড়তে গেল!
পেটে আবদ্ধ থাকা রুমুর হাতটা উজ্জ্বল আকড়ে ধরে।হাতের পৃষ্ঠে চুমু খেয়ে বলে,
“চুমু বউ চা চলবে?”
” হু।”
উজ্জ্বল রাস্তার ধারে বাইক থামায়।একটা টং দোকানে দুই কাপ চায়ের কথা বলে এগিয়ে আসলো বাইকের সামনে।রুমু তখন হাত তুলে হাই দিচ্ছিলো,হাত তোলার দরুনে শাড়ি সরে রুমুর পেটটা সাদৃশ্যমান হয়।উজ্জ্বল সুযোগ বুঝে রুমুর পেটে চিমটি কেটে বলে,
” বড্ড অসময় বউ,এখন তোমার হটনেস না ছড়ালে বেশি খুশি হব।
চলবে….