কাঠগোলাপের মোহে পর্ব-২০ এবং শেষ পর্ব

0
1075

#কাঠগোলাপের মোহে🌻
#মোনামী_শেখ
#part:20+অন্তিম পর্ব

আজ নিয়ে ৫ দিন হয়ে যায় প্রণয় ভাইয়ার সাথে কথা বলিনি।সেদিন প্রণয় ভাইয়ার ওমন ব্যাবহার আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিলো।ঠোঁটে এখনো ব্যাথা তবে সেই ব্যাথা মূল্যহীন হলেও মনের ব্যাথাটাই গুরুত্বপূর্ণ। বাহিরের ঘা শুকালেও মনে ঘা শুকাবার নয়।

নিরা আপুর বিয়ে হয়েছে কাল।তবে আমরা সেখানে যাইনি যেহেতু আমার বা খালামনিদের সাথে বড় মামার
কোনো সম্পর্ক নেই।তবে আহানের পক্ষ থেকে আমাদের ইনভাইট করা হয়েছিল কিন্তু আমরা কেউ যাইনি।

এখন সন্ধ্যা 6টা বাজে।ছাদে দোলনায় বসে আছি।এই সময়টা আমার খুব পছন্দের।সূর্য অস্ত যাচ্ছে। আকাশটা হালকা হালকা লাল আভায় ছেয়ে গেছে।এক ঝাঁক পাখি উড়ছে আকাশের বুক জুড়ে।মৃদু বাতাসে গাছপালার ডগা গুলো দুলছে আপন মনে।ছাদে রঙবেঙ্গের ফুলের গাছ গুলো দেখলেই মনটা ভরে যায়।এত কিছুর মধ্যেও সবকিছুই কেমন শূন্য শূন্য লাগছে।কিছুই ভালো লাগছেনা। অদ্ভুত এক যন্ত্রনা হৃদয় জুড়ে।

মনটা ভালো করার জন্য চোখ বুঝে একটা গানের সুর গলায় তুললাম____

বকুলের মালা শুকাবে
রেখে দেবো তার সুরভি
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছোনাকো আমারি ছবি
আমি মিনতি করে গেলাম
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিবা দুরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম
এই মন তোমাকে দিলাম”!!
এই প্রেম তোমাকে দিলাম”!!

গানটা শেষ হতেই চোখ খুলে সামনে ইভানি আপুকে দেখতে পেলাম।তিনি আমার সামনে দাড়িয়ে ছিলেন।আমার চোখে তার চোখ পড়তেই তিনি মুচকি হেসে আমার পাশে বসলেন।

__ অয়ত্রি তুমি অনেক সুন্দর গান করো???

__না আপু।এই একটু আধটু গান পারি।বাট ওতোটাও না।

___কে বলেছে তুমি একটু আধটু গান পারো??তুমি অনেক সুন্দর গান গাও। তোমার গলার সুর ও অনেক ভালো।

____আমি মুচকি হাসলাম ইভানি আপুর কথায়….

____আচ্ছা অয়ত্রি তোমায় একটা কথা বলি?

____হুম বলেন আপু”!

____তুমি কি প্রণয়কে লাভ করো!??সত্যি বলবা!

আমি এবার ইভানি আপুর কথায় ভরকে গেলাম!!!কি উওর দিবো আমি?এই উত্তরটা তো আমারি অজানা!!

___বলো অয়ত্রি??

___এই প্রসঙ্গে পরে কথা বলি।আপনি কাউকে ভালোবাসেন না আপু??

আমার কথায় হেসে ফেললো ইভানি আপু…

____ কি হলো আপু হাসলো কেন??হাসার মতো কোনো কথা তো আমি বলিনি…অবাক হয়ে বললাম আমি।

____ আবার আসলে তোমার কথাটা শুনে আমার হাসিই পেলো।

____কেনো??

____ও কিছুনা।আচ্ছা তুমি জানতে চাও আমি কাউকে ভালোবাসি কিনা??

___হ্যাঁ!!!

___আমি প্রণয় কে ভালোবাসি!!

এবার ইভানির আপুর কথায় বুকটা ধক করে উঠলো এবং অতিমাত্রায় অবাকও হলাম।

____ কি হলো অয়ত্রি অবাক হলে আমার কথায়??
কিন্তু আমি সত্যি প্রণয়কে ভালোবাসি।প্রথম দেখায় ওকে ভালোবেসে ফেলেছি।যাকে বলে লাভ এন্ড ফাস্ট সাইট।আমায় বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছিলো।এংজেমেন্টও
হয়ে গিয়েছিলো।বিয়েটাতে সেইভাবে আমি খুশি ছিলাম না।তবুও বাবার কথায় রাজি হয়েছিলাম।জিবনে কোনো ছেলেকে পাত্তা দেই নি আমি।কিন্তু প্রণয়!!প্রণয়কে দেখেই মনে এক অদ্ভুত ও অজানা অনুভূতির সৃষ্টি হয়।আস্তে আস্তে বুঝতে পারি আমি প্রণয়ের উপর উইক হয়ে পড়েছি।ভালোবেসে ফেলেছি অতিমাত্রায় তাকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু যাকে ভালোবাসলাম তাকেই পেলাম না।এটা হয়তো হওয়ার ছিলো।

জানো অয়ত্রি আমি ভার্সিটি পড়াকালিন একটা ছেলে আমাকে ভালোবাসতো।শুধু ভালোবাসতো নাহ পুরো পাগল ছিলো আমার জন্য।ভার্সিটিতে শান্তি মতো চলাফেরা করতে পারতাম না।যেখানেই যেতাম সেই ছেলেটির যেতো।সারাক্ষণ ভালোবাসি ভালোবাসি বলে কানের কাছে ঘ্যান ঘ্যান করতো।আমার খুব বিরক্ত লাগতো। যেহেতু ছেলেটাকে আমি ভালোবাসিনি কখনো।এমন নয় যে ছেলেটা অসুন্দর।
ছেলেটা দেখতেও ভালো পড়া শুনাতেও ভালো ফ্যামেলি স্টাটাসও মোটামুটি ভালো।কিন্তু এত কিছুতেও আমার তাকে ভালো লাগেবি। একদিন ভার্সিটির সবার সামনে আমায় প্রপোজ করায় তাকে থাপ্পড় মেরে অপমান করে তারিয়ে দি।সে শুধু একটাই কথা বলেছিলো সেদিন ___সে আমায় ভালোবাসবে আর বেসেও যাবে সারাজিবন।আমার জন্য জিবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত অপেক্ষা করবে।কথাগুলো বলেই একটা হতাশার শ্বাস ছাড়লো ইভানি আপু।

ইভানি আপুর কথা শুনে বুকের ভেতর তোলপার শুরু হয়ে গিয়েছে।কষ্ট হচ্ছে খুব।বারবার মনে হচ্ছে আমি কোনো ভুল করছি না তো আমি কোনো ভুল করছি নাতো।আমি প্রণয় ভাইয়াকে নিজের অজান্তে কষ্ট দিচ্ছি না তো!!!তিনি রাগা রাগি করেন ঠিকই কিন্তু তার চোখে আমার জন্য তীব্র অনুভূতি দেখেছি।তার জন্য আমার কষ্ট হয়,। আমার অভিমান,অভিযোগ শুধুই সে।
রাজশাহী যাওয়ার তিনি একটা দিনও আমায় ফোন দেননি।এরজন্য খুব কষ্ট পেয়েছিলাম আমি।অভিমানও হয়েছিলো খুব।এসব ভাবছি তখনি ইভানি আপু বলে উঠলেন__

___যানো অয়ত্রি!!!তোমায় না প্রণয় খুব ভালোবাসে।ও মুখে সেই ভাবে প্রকাশ করেনি।কিন্তু বলেছে ও নাকি একজন কে ভালোবাসে।তোমার কথা যখন জানতে পারলাম-তুমিই প্রণয়ের ভালোবাসা।প্রণয় চোখে মুখে তোমার জন্য অনুভূতি বিদ্যামান সর্বদা।এবং আমি এটাও জানি তুমিও প্রণয়কে ভালোবাসো।তোমার চোখে আমি প্রণয়ের জন্য অনুভূতি ও চঞ্চলতা দেখেছি।কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে পারছোনা?? তাইনা!!??

আমি এবার একটু অবাকই হলাম।কারণ আমি নিজেই এতোদিন স্বীকার করতে চাইনি যে আমি প্রণয় ভাইয়াকে ভালোবাসি।এখন আমি যতটা কষ্ট পাচ্ছি তিনিও হয়তো তার চেয়েও বেশি কষ্ট পেয়েছেন।যখন আমি আহানকে পছন্দ করতাম।সেদিন ইভানি আপু আর প্রণয়কে একসাথে দেখে খুব কষ্ট পেয়েছি।বুকের ভেতর চিনচিন করছিলো সেদিন।

অবশ্য ইভানি আপু প্রণয় ভাইয়াকে ভালোবাসে এটা শুনে আমার হিংসে হয়নি কারণ প্রণয় ভাইয়া আমাকে ভালোবাসে।ইভানি আপুর জন্য কষ্ট হচ্ছে।যতই হোক সেও একজন মেয়ে।আমার মতো সেও একজন কে ভালোবেসেছে কিন্তু তাকে পায়নি।এটা কষ্টেরি কথা।
এসব মনে মনে ভাবছি হঠাৎ ইভানির আপুর কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো।

___শোনো অয়ত্রি তুমি আজ তোমার মনের কথা প্রণয়কে জানিয়ে দাও।তোমাদের দাম্পত্যে জীবনে ফের নতুন করে শুরু করো।প্রণয়কে আর কষ্ট দিও না প্লিজ।এটা আমার রিকুয়েষ্ট।

___হুম আপু।বলেই ছাদ থেকে দ্রুত নেমে গেলাম।ইভানি আপুকে রেখেই।

ইভানির চোখ দিয়ে ঝড়ছে অঝোর শ্রাবণ।বুকে চারা দিয়ে উঠছে ভালোবাসার মানুষ কে নিজের করে না পাওয়ার যন্ত্রণা!!!আজ ইভানি অনুতপ্ত__ খুব করে অনুতপ্ত!!সেই একপাক্ষিক প্রেমিকের কথা খুব মনে পড়ছে।তাকে কষ্ট দেওয়ার পরিনাম হয়তো আজ সে পাচ্ছে।হারে হারে বুঝতে পারছে একপাক্ষিক ভালোবাসার কি যন্ত্রনা।

___যদি তুমি ফিরে এসো।অবশ্যই নিজেকে সুদরে নিজের না হোক তোমার ভালোবাসা পরিপূর্ণ করবো।আমি না হয় অপূর্ণই থেকে গেলাম এই ভালোবাসা নামক ইচ্ছেগোলক থেকে!!! ইভানি আকাশের দিকে তাকিয়ে বললো কথা গুলো।

[এখানে ইভানি ভার্সিটির সেই ছেলেটির কথা বলেছে]

রাত তখন ৯টা বাজে।রুমে শুয়ে ফোন চালাচ্ছি।প্রণয় ভাইয়া খাটের কোণায় ল্যাপটপ নিয়ে কি জানি করছে।
খনে খনে আড়চোখে আমাকে দেখছে।আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ফোন চালাচ্ছি।হঠাৎ খালা মনির ডাক পড়ল।নিচ থেকে তিনি আমাকে ডাকছেন।তাই ফোনটা বালিশের নিচে রেখে নিচে গেলাম।

নিচে ডয়িংরুমে খালামনি আর ছোটআব্বু বসে আছে।তাদের মুখ জুড়ে চিন্তার ছাপ দেখেতে পারছি।আমি গিয়ে তাদের মুখো মুখি সোফায় গিয়ে বসলাম।আর বললাম___কি হয়েছে খালামনি ডাকলে কেন???কোনো সমস্যা হয়েছে কি??

___নাহ কোনো সমস্যা হয়নি।তবে তোকে আজ কিছু বলতে চাই। বললেন খালা মনি।

___হুম বলো?? ভ্রু কুচকে বললাম আমি।

___তুই জানতে চাস? তোর বাবা মা তোর সাথে খারাপ ব্যাবহার ও মারধোর কেন করতো???বললেন ছোট আব্বু।

___ হুম মিহি কন্ঠে বলে উঠলাম আমি।

___তুই যাদের নিজের বাবা মা বোন ভাই ভাবছিস।তারা তোর নিজের বাবা মা নয়।খালামনি কাঠ কাঠ গলায় বলে উঠলো।

___মনে হয় আমার মাথায় বাজ পড়লো খালামনির কথায়!!নিজের কানকে বা খালামনিকে বিশ্বাস করতে পারছিনা।এই কথাটা শুনে বুকে মধ্যে মোচর দিয়ে উঠলো।চোখে পানি টলমল করছে।

__ ককক কি বলছো খালা মনি??অবিশ্বাস্যও স্বরে বলে উঠলাম আমি।

___তোর খালা মনি যা বলছে সব ঠিক।
আমার বাবা মানে তোর দাদা তোকে একটা নির্জন রাস্তার ধারে কুড়িয়ে পায়।এবং তোকে এনে আমার ভাই যাকে তুই বাবা ভাবিস তার হাতে তোকে দেয়।এবং তোকে ভালোভাবে মানুষ করতে বলে।তোকে ১ বছর পর্যন্ত তোর দাদাই মানুষ করেছে। তিনি যখন মারা যান তখন তোকে ওদের হাতে তুলে দেয়।তোকে মেয়ের পরিচয়ে বড় করতে বলে তোর দাদা।তোর বাবাকে ওয়াদা করায় এবং তোর দাদার শেষ ইচ্ছে বলে তোকে ওরা মেয়ের পরিচয়ে বড় করেছে।কিন্তু মেয়ের মতো ভালোবাসাটা দেয়নি।বলেই চোশমার নিচ থেকে চোখের পানি মুছলেন ছোট আব্বু!!!

খালামনিও কাঁদছে।আমি শূন্য চোখে তাদের দিকে চেয়ে থাকলাম কিছুক্ষণ।

__খালামনি আমি তাহলে এতিম।বলোনা আমি কি এতিম???বলেই ডুকরে উঠলাম।

খালামনি আমাকে জরিয়ে ধরলো।আমিও তাকে ঝাপটে ধরে কাদতে লাগলাম।কষ্টে আমার কলিজা ছিরে যাওয়ার মতো অবস্থা।কানে একটাই কথা বাজছে
আমি এতিম!আমি এতিম!!

আমার নিজের কেউ নেই।আমার নিজের বাবা মা নেই।আমার অন্যদের মতো একটা পরিবার নেই!!আমায় রাস্তায় ফেলে চলে গেছিলো আমার বাবা–মা!!! আমি এতোটাই অভাগি।আমি এতিমমমম।

বারবার ডুকরে ডুকরে কান্না করছি কিন্তু কষ্টটা কমছেই নাহ!!!বরং বেরেই চলেছে।

হঠাৎ চোখ দুটো ঝাপসা হয়ে আসলো।মাথাটা ঘুরছে।
কেমন জেনো লাগছে আমার!!!হঠাৎ জ্ঞান হারালাম।

________________________________

রাত ১২টা_______

পিটপিট করে চোখ খুলে দেখলাম আমি বিছানায় শুয়ে আছি।আমার হাত ধরে বসে আছেন প্রণয় ভাইয়া।
তার পাশেই দারানো খালামনি,ছোট আব্বু,ইভানি আপু।
তাদের চোখ দেখে বুঝতে পারলাম তারা আমার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষায় ছিলো।

___সবাই এখান রুমে যাও কাল কথা হবে।বললো প্রণয় ভাইয়া।

তার কথায় প্রতিবাদ করলো না কেউ।সবাই চলে গেলো বিনা শব্দে।

উঠে বসার চেষ্টা করলাম।কিন্তু পারলাম না।মাথাটা ভার হয়ে আছে।প্রণয় ভাইয়া আমাকে শোয়া থেকে তুলে বসিয়ে দিলেন।

___জান পাখি।এখন কেমন লাগছে??সুস্থ লাগছে তো??আমার গালে হাতে স্পর্শ করে বললো কথা গুলো বললো প্রণয় ভাই।তার মুখের দিকে তাকালাম।তার চুল গুলো উশকোখুশকো।মুখটায় বিষাদের ছায়া চোখে অপার চঞ্চলতা।দেখেই বোঝা যাচ্ছে আমি যাতনা কষ্ট পেয়েছি! তার চেয়ে আমার কষ্ট দেখে বেশি কষ্ট পাচ্ছে প্রণয় ভাইয়া। আমার ফের কিছুক্ষণ আগের কষ্টটা বুকে চারা দিয়ে উঠলো।

প্রণয় ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম আমি।
তিনি আমায় জড়িয়ে ধরলেন।আমি কেঁদেই যাচ্ছি।
তিনি মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর বলছেন কেঁদো না জান পাখি প্লিজ।শরীর খারাপ করবে।

কেন জানিনা তার কথায় আমি ভরসা পাচ্ছি।তার বুকে মাথা রেখে অন্যরকম শান্তি অনুভব হচ্ছে।

এভাবেই কিছুক্ষণ পর ঘুমিয়ে গেছি টেরি পায়নি।

____________________

চোখে কিছুর তীব্র আলোর ঝলকানিতে ঘুম ভাঙ্গলো।
আস্তে আস্তে চোখ খুলে দেখলাম সূর্যের আলো জানালা ভেদ করে চোখে মুখে পড়ছে।নড়ে চড়ে উঠতে গেলেই আটকে গেলাম।কারণ প্রণয় ভাইয়া আমাকে আস্টেপিস্টে জড়িয়ে ধরে আছে।তার দৃষ্টি আমার উপর।তাকে এভাবে দেখে লজ্জা পেলাম।

চুলগুলো এলোমেলো।ঘুমঘুম চোখ,ঠোঁটের কোণে মুচকি আছি।আমার হৃদয়কে কাপিয়ে তুলছে।

__ জানপাখি এভাবে তাকাবে না বলেদিলাম।আমি কন্টললেস হয়ে পরবো।তখন কিন্তু আমাকে দোষারপ করতে পারবেনা।বলেন মুচকি হাসি দিলেন তিনি।

তার কথায় একরাশ লজ্জা আময় ঘিরে ধরলো।

তিনি এবার আমার কপালে টুপ করে চুমু দিয়ে বললেন __আমার লজ্জাবতী বউরে।

তার মুখে বউ ডাক শুনে কেমন এক অদ্ভুত সুখানুভূতি হলো।হৃদয় ঘুরে ছেয়ে গেলো প্রাশান্তির ছায়া।
কিন্ত হঠাৎ কালকের কথাগুলো আবার মনে পড়ে গেলো।মনে পড়ে গেলো আমি এতিম।আমি এতিম..

তখনি আবার বুকজুড়ে হাহাকার করে উঠলো।
প্রণয় ভাইয়াকে ধাক্কা দিয়ে নিজের কাছ থেকে সরিয়ে
হনহন করে ওয়াশরুমে গেলাম।

তিনি আমার ব্যাবহার দেখে হতবাক হয়েছেন।এটা নিশ্চিত আমি।

ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই প্রণয় ভাইয়া আমার দিকে তাকালেন।এরপর ওশাসরুমে ধুঁকলো।

আমি রেডি হয়ে নিচে গেলাম।

নিচে ইভানি আপু,খালামনি, ছোট আব্বু,শাপলাকে দেখতে পেলাম।

নিচে যেতেই খালামনি বলে উঠলো___মা তোর শরীর ঠিক আছে তো???

___হুম।বলেই সোফায় আসলাম।

খালা মনি এসে আমার পাশে বসলো।মাথা আলতো স্পর্শ করে বললো__আমাকে কি তোর মা বলে মানিশ না??আমরা কি তোকে তোর মা বাবার আদর দিতে পারিনি??!

___ না খালামনি এভাবে বলো না।তোমরা ছারা আমার আর কে আছে??তোমরাই তো আমাকে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন ভালোবাসা দিয়ে বড় করছো।বাবা মায়ের অভাব কি বুঝিনি তোমাদের কাছে এসে।

___তাহলে কেন তুই নিজেকে এতিম ভাবিস??
বলেন ছোট আব্বু…

___কিন্তু এটা তো সত্যি যে আমি এতিম।

___তুই যদি আর একবার বলিস এতিম তাহলে তুই আমাকে আর খালা মনি বলে ডাকবিনা।
কাঠ কাঠ গলায় বললো খালামনি।

__প্লিজ খালামনি এভাবে বলিওনা।আমি আর কক্ষনো বলবো না এই কথা।

__একটা শর্ত আছে??

___কি শর্ত খালামনি?একটা শুকনো ঢোক গিলে বললাম আমি!

___তোকে এখন থেকে আমাকে মা আর তোর ছোট আব্বুকে আব্বু বলে ডাকতে হবে শুধু ডাকতে নয় মন থেকে মানতেও হবে???বল পারবি??

___আমি খালামনিকে জড়িয়ে ধরে বললাম..খুব পারবো খালামনি।

উপস্থিত সবাই আমার কথায় হেঁসে দিলো।

মনটা এতোক্ষণে হালকা হলো
নিজেকে আর একা ভাববো না।কারণ আমার পরিবার আছে আমার বাবা মা ও আছে।

___অয়ত্রি নিজেকে একা ভাববেনা।তোমার এত কিউট কিউট বাবা মা থাকতে তুমি নিজেকে এতিম ভাবো??এটা কিন্তু ঠিক নয়।বললো ইভানি আপু।

ইভানি আপুর কথায় হেঁসে উঠলো সবাই
সাথে আমিও।

সবাই খাবার খেতে বসালাম।তখনি নিচে এলো প্রণয় ভাইয়া।

আমার দিকে একবার তাকিয়ে৷ হনহন করে বাড়ির বাইরে চলে গেলো প্রণয় ভাইয়া।

সবাই একটু অবাক হলো কিন্তু আমি নই।কারণ তিনি আমার উপরে রাগ করছে।কিন্তু আজ তার সব রাগ,অভিমান,অভিযোগ, কষ্ট সব ভুলিয়ে দেবো।অনেক বড়ো সারপ্রাইজ দিবো তাকে।মনে মনে বলেই হাসলাম।

এরপর সবাই খাওয়া দাওয়া করে গেলাম।কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে দিলাম।
_____________________________

এদিকে নিরা আহনকে সবসময় স্বাভাবিক ও খুশিতে
রাখার চেষ্টা করে।আর আহান নিরার ব্যবাহার ও তার প্রতি কেয়ার দেখে অবাক এক কথায় মুগ্ধ।

নিরা আর আহানের সম্পর্কো টা স্বাভাবিক তবে আহান নিরুকে পুরোপুরি ভাবে অয়ত্রির জায়গায় বসাতে পারেনি।তবু আহান খুব করে চেষ্টা করে নিজেকে স্বাভাবিক রাখার।

নিরাকে নিজের জিবন সাথী হিসেবে পেয়ে আহান খুব খুশি।যেহেতু বিয়ে একটা পবিত্র সম্পর্ক সেহেতু আল্লাহ অবশ্যই তাদের মধ্যে ভালোবাসা সৃষ্টি করবে।

নিরা ছাদে কর্ণিশ ঘেঁসে দাড়িয়ে আছে। রাত তখন ১০ টা।মনটা খারাপ তার। যখন অয়ত্রি কোনো তার বিষয়ে সব বললো।অয়ত্রিকে নিজের বোনের মতোই দেখে নিরা।অয়ত্রি এতদিনে সুখের ঠিকানা পেয়েছে।প্রণয় তাকে খুব ভালোবাসে। আর অয়ত্রিও।

এসব ভাবছিলো তখনি তার পাশে এসে দাড়ালো আহান।

আহান নিরুকে কোলে তুলে নিয়ে দোলনায় বসিয়ে দিলো।আহানের এহেন আচরণে হতবাক।

___নিরুপাখি অবাক হোয়না।তুমি আমার কাঁধে মাথা রাখো।আজ আমরা দুজনে চন্দ্র বিলাস করবো। বিলাস করবো।

নিরা আহানের কথায় হেঁসে কাঁধে মাথা রাখলো।আহানও মুচকি হাসলো।দুজনেই চাঁদের দিকে তাকিয়ে নিস্তব্ধ ভালোবাসার নিয়ে চন্দ্রবিলাস করছে!!

_____________________________________________

এদিকে ইভানি ব্যালকানিতে দাড়িয়ে আছে।মনে হাজার
চঞ্চলতা ও ব্যাকুলতা।খনে খনে পরছে দীর্ঘশ্বাস।তার ভালোবাসার মানুষটি তার হয়নি।তবে তার ভালোবাসার মানুষটি পেয়েছে তো তার ভালোবাসার মানুষটিকে।প্রণয় খুশি থাকলেসেও খুশি।

প্রিয় অতি চেয়েও পাইনিকো তোমারে
হয়তো ললাটে লেখাই ছিলো মোর এটাই
তাই বলিয়া কি বাঁধিয়া রাখিবো তোমারে??
না,না,আমিতো তাহা করিবো না।
তোমারে উড়িয়ে দিবো ওই নিলাম্বর মুক্ত আকাশে।
মন আকাশে পাখি হয়ে থাকিয়ো মোর নিজ মনে।
ধরা নাহি পাইলাম তোমার।দেখা তো পাইবো সাঁঝ বিকেলে!!! 👉(মোনামি শেখ)…..!!!

[নিচে লেখিকা তার মনে কথা প্রকাশ করেছেন তা পড়বেন প্লিজ।১মিনিট সময় কি দিতে পারবেনা???]

🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼🌼

রাত বাজে ১১টা প্রণয় বাড়ি ফিরে রুমে ডুকতে অবাক কারণ রুমের লাইট ওফ।সে একটু এগিয়ে রুমে লাইট অন করতে যাবে তখনি কেউ মোম বাতি জ্বালাতে শুরু করে।প্রণয় ভ্রু কুঁচকে দেখে যাচ্ছে।মোমবাতি জ্বালানো ব্যাক্তি টাকে একটু আধটু দেখা যাচ্ছে তার পেছন থেকে।

সব মোমবাতি জ্বালানো হলেই সেই ব্যাক্তিটি পেছন ঘুরে তাকালো।

প্রণয় সেই মানুষটিকে দেখে বড়সর ধরণের একটা শক খেলো।কারণ প্রণয়ের সামনে বউ সেজে হাসি মুখ নিয়ে দাড়িয়ে আছি আমি।

আমি এগিয়ে গিয়ে তার সামনে দাঁড়ালাম। প্রণয় ভাইয়ার গলা জড়িয়ে ধরলাম।সে এবার আরো অবাক হলো।এবার তাকে আরো অবাক করে দেওয়ার জন্য কপালে টুপ করে একটা কিস করে বসলাম।

আমাকে কি ক্ষমা করা যায়না প্রণয় ভাইয়া।আমরা কি আবার নিজেদের জিবন নতুন করে শুরু করতে পারিনা?? হ্যাঁ আমি অনেক ভুল করেছি আপনাকে কষ্টও দিয়েছি কিন্তু সেটা নিজের অজান্তে।এবং সব জানার পরেও আপনাকে কষ্ট দিয়েছি।তার জন্য ক্ষমা করে দিন প্লিজ??!মিনতি কন্ঠে বলে উঠলাম আমি।

তিনি কিছুক্ষণ চুপ থাকলেন এর পর বললেন___ক্ষমা করে দিতে পারি তবে একটা শর্তে??!

___আমি আপনার সব শর্তে রাজি!!!

___আমাকে আর প্রণয় ভাইয়া বলে ডাকতে পারবিনা।
শুধু প্রণয় বলে ডাকবি।আর আপনি আপনি করা যাবেনা তুমি ছারা।বুঝেছো মাই লাভলি ওয়াইফ??

___হুম বুঝতে পেরেছি।কি বলেছেন আপনি!!

___আবার আপনি??

____ওহ সরি।

___এবার তুমি এমন কিছু বলো যাতে আমি খুশি হয়ে যাই!!!প্রণয় ভাইয়া বললো।

আমি কিছুক্ষণ ভেবে আমার মুখটা তার কানের কাছে নিয়ে ফিসফিসে বললাম____আই লাভ ইউ!!!আমি তোমাকে ভালোবাসি প্রণয়!!!বলেই তার কানের পাতায়
একটা চুমু খেলাম।শিউরে উঠলো প্রণয় ভাইয়া।আর আমার কোমর টেনে বুকের সাথে জড়িয়ে ধরে বললো___আই লাভ ইউ টু মাই লাভলি ওয়াইফ।
আমি তার কথা শুনে মুচকি হাঁসলাম।

আমি তার দিকে তাকিয়ে আছি আর সেও আমার দিকে তাকিয়ে আছে।দুজনের চোখে ভালোবাসার উত্তাল ঢেউ উঠেছে।দুজনের দুটি হৃদয় আজ মিশে একটিতে পরিণত হয়েছে।আমি আমার হৃদয় তার হৃদয়ে স্থাপন করলাম।

প্রণয় আমার ঠোঁটে তার ঠোঁট মিশিয়ে দিলো।আবেশে শুষে নিতে লাগলো আমার উষ্ঠ।না জানি কত বছরের তৃষ্ণা নিবারণ হবে আজ!!!👇

👉ইভানি ও আহান👇

[ অনেকেই ইভানিকে অপছন্দ করেন।তবে আমি নায়ক নায়িকার চেয়ে ইভানিকে বেশি পছন্দ করি।ইভানির মতো অনেকেই আছেন।যারা গোপনে প্রিয় মানুষটাকে ভালোবেসে যায়।প্রিয় মানুষটার ভালো থাকাই তাদের
কাছ ভালোথাকার ঔষুধ!!! তারাই ভালোবাসা কি তা বেশি করে উপলব্ধি করতে পারে।আর আহান ও আমার প্রিয় চরিত্র। আহান অয়ত্রি ভালোবেসেও অয়ত্রিকে পায়নি।তবুও স কোনো মিলেনি করেনি।নিজেকে প্রণয় ও অয়ত্রির কাছ থেকে দূরে সরানো চেষ্টা করছে।অন্য প্রমিকদের মত নিজেকে অন্ধকারে জগৎ ঠেলে দেয়নি।বরং সে নতুন করে আবার জিবনটা শুরু করেছে।নিরা আর আহানের জুটিটা অনেক কিউট ]

[সবার কাছে ক্ষমা চাচ্ছি যদি কোনো ভুলত্রুটি করে থাকি বা কারো মনে কষ্ট দিয়ে থাকি তাহলে মাফ করে দিবেন।]

সমাপ্ত