#কাব্য_কথা
#পর্ব_২
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে কেউ একজন এক হাত দিয়ে আমার মুখ চেপে ধরে আছে আর অন্য হাতে আমার কোমর শক্ত করে চেপে ধরে আছে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু আমি ব্যর্থ হলাম। পুরো রুমটায় একটাই শব্দ হচ্ছে (উমমম উমমম) যার কারণ হলো আমার মুখ এখনও সে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর তার গরম নিঃশ্বাস পড়ছে আমার চোখে মুখে। হঠাৎ করেই কারো ঠোঁটের ছোঁয়া কপালে অনুভব করলাম। কেউ গভীর ভাবে তার ভালবসার পরশ একে দিয়ে গেলো আমার কপালে হঠাৎ এমন হওয়ায় আমি পুরাই একটা বিদ্যুৎ বিহীন খাম্বায় পরিণত হলাম। কিছুক্ষণ পর আমাকে ছেড়ে দিয়ে আমার হাতে একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে মিলিয়ে গেলো সেই গভীর অন্ধকারে।
আমি ক্লাস রুম থেকে বেরিয়ে আসে জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে থাকি আর ভাবতে থাকি আমার সাথে এখন হইলো টা কী ? হাতে থাকা চিরকুট পড়ে তো আমার অবস্থা কাহিল কারণ তাতে লেখা ছিলো……………. এভাবে আমায় দেখোনা তোমার ওই মায়ায় ভরা চাহুনি আমাকে আমার মাঝে থাকতে দেয় না।
লও ঠ্যালা আমি আবার কার দিকে মায়া দিয়া চাইলাম আমি তো সকাল থাইকা কারো দিকে তাকিয়ে দেখি নাই। তাহলে কে হতে পারে চিন্তা করতে করতে মনে পড়লো কাব্য ভাইয়ার কথা কারণ সকালে তো আমি শুধু তাকেই দেখছি,তার মানে এখন আমার সাথে যা যা হইলো সব কাব্য ভাইয়া……………….. কথাটা বলেই মাথায় হাত দিয়ে নিচে বসে পড়লো কথা। কথার এমন কান্ড দেখে আড়াল থেকে মিটি মিটি হাসছে কাব্য আর বলতে লাগলো…… শেষমেশ কিনা একটা বাচ্চা মেয়ের প্রেমে পড়লাম।
ভার্সিটির মাঠে বসে আছি আমি আর আমার পাশে বসে বসে কাব্য ভাইয়ার গুণ গান গাইছে ইতিকা ……… জানিস দোস্ত কাব্য ভাইয়া আমাদের ভার্সিটির সব থেকে ভালো এবং মেধাবী ছাত্র। উনি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনি অনেক ভদ্র, কোনো মেয়ের সাথে কথা তো দূরের কথা তাকিয়েও দেখে না।
ওর এইসব কথা শুনে নিজেনিজে বলতে লাগলাম,,,,,,,, ভালো না ছাই আমার সাথে যা করেছে তা যদি দেখতি তাইলে আর এত গুণ গাইতি না।
কি করেছে তোর সাথে?আর কে করেছে? বল আমাকে।
ওর কথায় ধেন ভাঙ্গলো আমার ওর দিকে তাকিয়ে দেখি ও আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
আরে কে কী করবে আমার সাথে কি যে বলিস না তুই,তোর মতো একটা শাকচুন্নি আমার পাশে থাকলে আমারে কেউ কিভাবে কি করবো হুম।
আমি শাকচুন্নি? আমাকে তোর এমন মনে হয়?( কান্না কান্না ভঙ্গি করে )
আরে এতে এতো অবাক হওয়ার আর কান্না করার কি হইলো যা সত্যি তাই বলছি দেখ তোর যেই লম্বা লম্বা হাত পা, এইগুলা দেখলে তোরে পুরাই শাকচুন্নির মতো লাগে আমার তো মাঝে মাঝে এটা ভেবে ভয় হয় যে তোর বর বাসর রাতে তোর হাত পা দেখে হার্ট এ্যাটাক করে মরে না যায়। তাইলে তো তুই বিয়ার রাতেই বিধবা হয়ে যাবি। তুই না এই বিষয় টা নিয়ে একটু ভাবিস আমার বিশ্বাস তুই ও আমার সাথে এক মত হইবি।
কি বললি তুই, দাড়া তোরে আমি আজকে আমার এই লম্বা লম্বা হাত পা দিয়া মাইর থেরাপি দিমু খাড়া তুই এই বলে ইতিকা আমার পিছু ছুটছে আর আমিও নিজেকে বাঁচাতে জোরে জোরে দৌড়াচ্ছি হঠাৎ কারো সাথে ধাকা খাই আর কোনো কিছুই সামলাতে না পেরে নিচে পড়ে যাই ভয়ে মুখ খিচকে চোখ বন্ধ করে আছি কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো আমি নিচে পড়লাম আর কোনো ব্যাথা পাইলাম না এটা কিভাবে সম্ভব, কারো ধমক এর শব্দ শুনে আমি আমার ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলাম। চোখ মেলে যা দেখলাম তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না,,,,,,,,,, চোখ মেলে দেখি আমি কাব্য ভাইয়ার বুকের ওপর পড়ে আছি আর তার হার্ট বিট এর শব্দ শুনতে পাচ্ছি কেমন যেন লাগছে অন্য রকম একটা অনুভূতি কী হচ্ছে আমার এইগুলো ভাবতে ভাবতে আবার তার ধমকে ঘোর কাটলো আমার তাড়াতাড়ি তার ওপর থেকে উঠে দাঁড়ালাম।
এই মেয়ে তোমার কি সমস্যা,,,,, ঠিক মতো দেখে হাটতে পারোনা এতো দৌড়া দৌড়ি কিসের শুনি এখনই তো পরে হাতে পায়ে ব্যাথা পাইতা।( ধমক দিয়ে বললেন কথা গুলো)।
আসলে আআমি দেখি নাই সরি ( একটু ভয়ে কথাটা বলাম) ।
দেখবা কেমন করে চোখ থাকলে তো দেখবা।
মানে আপনি কি বলতে চাইছেন আমি চোখে দেখি না?
হ্যা।
কি দেখি না আমি?
তুমি যদি চোখে দেখতে তাহলে আমাকে আর এতো কষ্ট করতে হতো না?
মানে বুঝি নাই একটু বুঝায় বলেন।( জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে)
বুঝবা না তোমার বয়স হয় নাই পিচ্ছি।
কি আমি পিচ্ছি আপনি জানেন আমার বয়স 18 বছর 10মাস 23দিন জুন মাসের 10তারিখে 19 বছরে পা দিবো আর আপনি আমাকে পিচ্ছি বলতেছেন। জানেন আমি এই ভার্সিটির ইংরেজি বিভাগ এর প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তাহলে এখন আমাকে আপনি বুঝান আমি পিচ্ছি কিভাবে হইলাম।
আমার কথা শুনে উনি হু হা করে হেসে উঠলো আমি তার ওই হাসির দিকে তাকিয়ে তার হাসির মায়ায় পড়ে গেলাম। ইশশ কত সুন্দর লাগছে তাকে, মনেতো চাইছে তার গালে একটা চুমু দিয়ে দিতে। হঠাৎ ইতিকার ধাক্কাতে ঘোর কাটলো আমার। ও আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো কথা কাব্য ভাইয়াকে এইসব কি বলছিস তুই।
তুই চুপ কর আমাকে পিচ্ছি কেনো বললো তাকে সেটা জিজ্ঞেস কর।
এই মেয়ে,,,,,,,,,,,, কাব্য ভাইয়া কিছু বলার আগেই আমি বলে উঠলাম……. কি কখন থেকে এই মেয়ে এই মেয়ে করছেন আমার একটা নাম আছে নীলাঞ্জনা আহছান কথা ।
কথা থাম কাব্য ভাইয়া রেগে যাচ্ছে।( ইতি)
কাব্য ভাইয়ার রাগ উঠলে আমার কি? এতো বড়ো বুড়া বেডা ঠিকমতো আমার নাম নিতে পারে না আবার আমাকে বলে পিচ্ছি। আমি তো ঠিকই তার নাম নিতে পারি সাথে ভাইয়া ও ডাকি।
আমার এমন কথায় আর বারবার ভাইয়া ডাকায় আমার দিকে তাকিয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলে উঠলো,,,,, আর একবার যদি ভাইয়া ডাকছো আর মুখে মুখে তর্ক করছো তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবেনা। মাইন্ড ইট।
কথা টা বলেই উনি চলে গেলেন। আমি ও ভাব নিয়ে চলে আসলাম বাসায়। বাসায় ফিরে গোসল করে খেয়ে দিলাম একটা লম্বা ঘুম। ঘুম থেকে উঠে দেখি ভাইয়া আমার পাশে বসে আছে। আমি তার দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরে জিজ্ঞেস করলাম…… তোমার তো এক সপ্তাহ পরে আসার কথা ছিল এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে ফিরে আসছো?
(আমরা দুই ভাইবোন ভাইয়া আমার বড়। ব্যাবসার কাজে কিছু দিনের জন্য সিলেট গিয়েছিল)
কাজটা তাড়াতারি শেষ হয়ে গেছে তাই ফিরে আসলাম। কেনো তুই খুশি হসনি?
ভাইয়াকে আবারও জড়িয়ে ধরে বলে উঠলাম,, তোমাকে অনেক মিস করছি আমি।
তারপর ফ্রেশ হয়ে ভাইয়ার সাথে অনেক্ষন আড্ডা দিলাম একটুপর আব্বা বাসায় আসলো কিছু সময় আমরা সবাই একসাথে গল্প করলাম। তারপর রাতের খাবার খেয়ে যার যার মতো ঘুমিয়ে পড়লাম।
ক্লাসে বসে বসে আমি সবার সাথে মজা করছিলাম এমন সময় ক্লাসে ঢুকলো আমাদের প্রাণপ্রিয় সালাম স্যার আর সাথে আছে কাব্য ভাইয়া। ফরমাল ড্রেসে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে তার থেকে চোখ সরাতে কষ্ট হচ্ছে কিন্ত কিছুক্ষণ পরে সালাম স্যারের মুখে যা শুনলাম টার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না…………..।
#চলবে…….