কি নেশায় জড়ালে পর্ব-০৬

0
304

#কি_নেশায়_জড়ালে
#পর্ব_৬
লেখিকা #Sabihatul_Sabha

আহনাফ নিজের জিনিসপত্র নিয়ে গেইটের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।

বুকে দুই হাত গুঁজে আরামসে দাঁড়িয়ে আহনাফ এর দিকে তাকিয়ে আছে রূপা ওর পেছনে ওর আব্বু আম্মু।

আহনাফ রূপার আম্মুর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আন্টি প্লিজ আপনার এই ডাইনী মেয়েকে একটু বুঝান না। এতো সকালে আমি এইগুলো নিয়ে কোথায় যাবো..?

রূপার আম্মু কিছু বলার আগেই রূপা বলে উঠলো, ‘ যেখান থেকে এসেছেন সেখানে যাবেন৷ ভুলেও যেনো আপনাকে এই বাড়ির আশেপাশে না দেখি।’

রূপা আম্মু রেগে গেলেন মেয়ের উপর, ‘ রূপা এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হচ্ছে। তুমি ভুলে যাচ্ছো আহনাফ সোহার দেবর হয়। ‘
রূপা তাচ্ছিল্যের সুরে বলে উঠলো, ‘ তো আমি কি করবো আম্মু..?সোহার দেবর হয় আমার না। ‘

আহনাফ বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ আমি তোমার দেবর কেনো হতে যাবো..? হলে জামাই হবো।’

রূপার আম্মু মেয়ের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, ‘ রাস্তা ছেড়ে আহনাফ কে ভেতরে আসতে দাও। দিন দিন তুমি ধৈর্যের সীমা অতিক্রম করে যাচ্ছো! কিছু বলি না বলে ভেবো না সব সময় তোমার এই বেয়াদব এর মতো ব্যাবহার মেনে নিবো।’
রূপা ওর আম্মুর দিকে ফিরে বললো,’ তোমার কাছে মেয়ের থেকে এই ছেলে বড় হয়ে গেছে..? এই ছেলে এই বাড়িতে থাকলে আমি এই বাড়িতে থাকবো না। ‘

রূপা আম্মু কিছু বলতে গেলেই রূপার আব্বু হাত ধরে থামিয়ে দেয়। কিছু তো হয়েছে! না হলে রূপা এতোটাও বদমেজাজী মেয়ে নয় যে একজন অতিথির সাথে এতোটা বাজে ব্যাবহার করবে।
কতোগুলো বছর মেয়েটা উনাদের ছেড়ে দূরে থেকেছে এখন কাছে পেয়েও আর হারাতে চায় না।
রূপার আব্বু আহনাফ এর সামনে গিয়ে বলে উঠলো, ‘ আহনাফ চার বছর আমার মেয়েটা আমাদের ছেড়ে দূরে থেকেছে এখন যদি আবার চলে যায়। আমাদের শুধু একটাই মেয়ে। এখন তুমি বলো আমরা কি করতে পারি..?
আহনাফ রূপার বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,’ একটা বাসা খুঁজতে সাহায্য করুন না আঙ্কেল! আপনাদের বাসার পাশেই জেনো হয়।
রূপার আব্বু শুষ্ক দৃষ্টিতে আহনাফ এর দিকে তাকালো।
আহনাফ হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো, ‘ না মানে আঙ্কেল এই শহরে কাউকে চিনি না তো তাই। ‘
রূপা বিরক্ত মুখে বাড়ির ভেতর চলে গেলো।

মাহি রূপাকে নিতে এসে আহনাফ কে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো।
সাথে সাথে সেই দিন রূপাকে আহনাফ এর অপমান করা কথাগুলো মনে হতেই মুহূর্তে মনটা বিষিয়ে গেলো।
আহনাফ কে দেখেও না দেখার মতো বাড়ির ভেতর চলে গেলো।
আহনাফ মাহি কে দেখেই চিনে ফেললো। মাহির এমন আজব রিয়াকশন পাত্তাই দিলো না। বাসা খুঁজতে ব্যাগ গুলো এখানে রেখে চলে গেলো। বাসা পেলে ব্যাগগুলো এসে নিয়ে যাবে৷ তবে বাসা নিলে এই বাড়ির আশেপাশেই বাসা নিবে।

রূপা রুমে গিয়ে রেডি হয়ে নিলো অফিসে যাওয়ার জন্য।
রূপার আম্মু রেগে রান্না ঘরে গেলেন। মেয়ের এমন ব্যাবহারে উনি বিরক্ত হয়ে উঠেছিন। মেয়েটা তো এমন রুক্ষ ছিলো না।কি হয়েছে চার বছর আগে যা আমার মেয়েটাকে বদলে দিলো। একটা শান্ত সৃষ্ট মেয়েকে এমন বানিয়ে দিলো!!

মাহি রূপার কাছে গিয়ে রাগে গজগজ করতে করতে বললো, ‘ এই শয়তান, বেয়াদব ছেলে এখানে কি করছে..? ভন্ড, প্রতারক একটা।’
রূপা বুঝেও না বুঝার চেষ্টা করে বললো,’ কোন ছেলে.? ‘
মাহি রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ দেখ রূপা একদম না জানার ভান করবি না। ‘
রূপাঃ তোর নতুন ভাড়াটিয়ার কথা বলছিস..?
মাহিঃ নতুন ভাড়াটিয়া..?
রূপাঃ হুম…
মাহি থম মেরে কিছু সময় বসে রইলো। এতো বড় সারপ্রাইজ! কই ভাবলাম সিঙ্গেল কোনো পুলা ভাড়াটিয়া হয়ে আসবে আর আমি মিঙ্গেল হবো। এখন দেখি প্লে বয় জুটলো।

মাহির কথা শুনে রূপা ওর মাথায় ভারি মারলো। ব্যাগ কাঁদে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। মাহিও পিছু পিছু বের হলো।

আজ অফিসে আসতে দশ মিনিট লেট।

দশ মিনিট রূপা অফিসের সামনে টং দোকানে দাঁড়িয়ে চা খেয়েছে।

রূপা অফিসে আসতেই মাহি রাগী দৃষ্টিতে একবার রূপার দিকে তাকালো।
রূপা দেখেও না দেখার মতো নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পরলো।
একটু পর একজন স্টাফ এসে বললো,’ আপনাকে বস যেতে বলেছে। ‘
রূপা শয়তানি হাসি দিয়ে গেলো সাজ্জাদ এর ক্যাবিনে।
সাজ্জাদ রূপার দিকে না তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ মিস রূপা আপনাকে কাল বলে দেওয়া হয়ে ছিলো টাইম টু টাইম অফিসে উপস্থিত থাকতে। আপনি প্রথম দিন দশ মিনিট লেইট। আপনি জানেন যারা অফিসের নিয়ম মেনে চলে না আমি তাদের অফিসে দ্বিতীয় বার রাখি না।
রূপা সাজ্জাদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ তাহলে বের করে দেন। ‘
সাজ্জাদ ফাইল থেকে চোখ তুলে রূপার দিকে তাকালো। রূপা মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে সাজ্জাদ এর উত্তরের অপেক্ষায় তাকিয়ে আছে।
সাজ্জাদ খুব ভালো করেই বুঝেছে রূপা ইচ্ছে করে লেইট করে অফিসে এসেছে। সাজ্জাদ অফিসে আসার সময় দেখেছে রূপা টং দোকানে বসে চা খাচ্ছে।
সাজ্জাদ হাতের কলমটা ঘুরাতে ঘুরাতে বললো,’ ওহু প্রথম ভুলের জন্য শাস্তি… ‘
রূপা ভ্রু কুঁচকে বলে উঠলো, ‘ শাস্তি…!?’
সাজ্জাদ রূপার সামনে এক গাধা ফাইল রাখলো।
রূপা থম মেরে তাকিয়ে আছে আসলে সাজ্জাদ করতে কি চাচ্ছে..?
সাজ্জাদ রূপাকে ইশারা করে বললো, ‘ এই সব গুলো ফাইল শেষ করবেন ব্রেক টাইমের আগে। ‘
রূপা হা করে তাকিয়ে আছে ফাইল গুলোর দিকে। এক এক করে ফাইল গুলো গুণতে শুরু করলো এক,দুই,তিন,…….. দশটা ফাইল!!।
রূপা রাগে ফাইল গুলো হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
রূপা কে রেগে এভাবে বেরিয়ে যেতে দেখে সাজ্জাদ হেঁসে উঠলো।

রূপা নিজের ডেস্কে এসে বিরবির করে সাজ্জাদ এর চোদ্দগুষ্টি কে উদ্ধার করছে বকে। এই দুই ভাই ওর জীবনে আসেই জাহান্নাম বানিয়ে দিতে। এতোগুলা ফাইল কখন, কিভাবে শেষ করবে…!?

সাজ্জাদ এর ক্যাবিন থেকে রূপাকে দেখা যায়। কিন্তু কাঁচ এর জন্য রূপা সাজ্জাদকে দেখতে পারে না।

দেখতে দেখতে লাঞ্চ টাইম চলে আসে রূপা ফাইলের দিকে তাকিয়ে দেখে মাত্র পাঁচটা শেষ হয়েছে। সাথে সাথে সাজ্জাদ এর ফোন আসে ওর ক্যাবিনে ফাইল নিয়ে যাওয়ার জন্য।
রূপা বিরক্ত হয়ে ফাইল গুলো হাতে নিলো, যেনো এই লোক ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় গুণতে ছিলো এক মিনিট ও এদিক ওদিক হতে পারলো না ফোন চলে আসলো। রূপা উপরের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ উফ আল্লাহ আমার সাথেই কেনো বার বার এমন হয়। এই লোকের অফিস যানলে কখনো ইন্টারভিউ দিতে আসতাম না।

রূপা বসে আছে সাজ্জাদের সামনে।

সাজ্জাদঃ আপনি তিন ঘন্টায় মাত্র পাঁচটা শেষ করেছেন। আপনি সত্যি কাজ করেছেন নাকি অন্য দিকে মন ছিলো..?’

সাজ্জাদের এমন কথা শুনে রূপা রেগে গেলেও তা প্রকাশ করল।
রূপাঃ কাজ ভালো না লাগলে, পছন্দ না হলে আপনার কোম্পানি থেকে বের করে দিন।
সাজ্জাদ হাসলো রূপার কথা শুনে । কথায় কথায় বের করে দেন কথাটা জেনো রূপার অবাস হয়ে গেছে।

এখন লাঞ্চ টাইম সবাই লাঞ্চ করতে গেছে।

সাজ্জাদ একজন কে ফোন দিয়ে বললো রূপার সব কিছু গুছিয়ে এখানে নিয়ে আসতে ।
রূপার মুখে বিজয়ের হাসি ফুটে উঠলো। যাক ওর প্লেন কাজ করেছে। সাজ্জাদ নিজে ওকে বের করে দিচ্ছে।

লোকটা সব কিছু নিয়ে আসতে রূপা ব্যাগপত্র গুছিয়ে বললো,’ ধন্যবাদ স্যার…’
সাজ্জাদ রূপার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ মোস্ট ওয়েলকাম। ‘

সাজ্জাদ লোকটার উদ্দেশ্য বললো,’ আমার সামনের সোফার সাথে একটা টেবিল আজকের জন্য সেট করে দিন।
লোকটা তাই করলো।
রূপা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে এখানে সাজ্জাদ কি করতে চাচ্ছে..? যাই করুক তাতে আমার কি। আমি এখান থেকে যেতে পারলেই হলো। আবার অন্য কোম্পানিতে ইন্টারভিউ দিতে হবে।

রূপা সামনে তাকাতেই সাজ্জাদ এমন কথা বললো সাথে সাথে রূপার হাসি উধাও হয়ে গেলো। সারা মুখে অন্ধকার নেমে আসলো। মনে মনে একটা কথাই আওড়ালো বার বার ওর সাথেই কেনো এমন হয়..??

চলবে….
ভুলত্রুটি মার্জনীয়।