কুঁড়েঘর পর্ব-৩০+৩১

0
403

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ৩০।

আজকে নিশাদ তার চাকরির প্রথম ইন্টার্ভিউ দিতে যাচ্ছে। ইন্টার্ভিউর টাইম হয়ে গিয়েছে আগেই নিশাদ রাতে দেড়িতে ঘুমানোর কারণে লেট হয়ে যায়। তৈরি হয়েই কোনোরকমে দৌঁড়ে বেরিয়ে যায় নিশাদ।

রিধিশা ভার্সিটিতে এসে আকাশ কুসুম চিন্তা করছে।
” আজকে সকালে নিশাদকে কোথাও দেখলাম না। এমনি তো প্রতিদিনই দাঁড়িয়ে থাকে আমাকে জ্বালানোর জন্য।” জোতি রিধিশাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে বললো
” কিরে এতো কি ভাবিস তুই? তুই ও কি বয়ফ্রেন্ড পেয়েছিস? নাকি নিশাদ ভাইয়াকে নিয়ে ভাবিস?”
রিধিশা বিরক্ত প্রকাশ করে বললো
” কেনো এসব ছাড়া কি আর কিছু নিয়ে ভাবা যায় না নাকি? আর নিশাদকে নিয়ে কেনো ভাববো আমি?”

জোতি মুখ টিপে হেসে বললো
” তোদের ভারত পাকিস্তানের যুদ্ধ তো সব সময় লেগে থাকে। তোদের মাঝে প্রেম টেম হয়ে যায়নি তো!”
রিধিশা চোখ রাঙ্গিয়ে তাকায়
” তুই বেশি বেশি বলছিস। ওই বদ ছেলের সাথে আমার প্রেম হবে? মানুষের কি অভাব পড়েছে নাকি?”
জোতি নিশ্বাস ফেলে বললো
” হাহ তা তো দেখতেই পাবো সামনে।”
” তুই তোর কথা বল। তুই যে কালকে ঝগড়া করলি রেহান ভাইয়ার সাথে। সেটার মিটমাট করেছিস?’

জোতি রাগি গলায় বললো
” খবরদার ওর কথা বলবি না। কালকে লং ড্রাইভে নিয়ে যাবে বলে একটা পার্কে নিয়ে গিয়েছে আমাকে! তাও আবার ভার্সিটির উল্টো দিকে যেই পার্কটা সেখানে নিয়ে গিয়েছে। বাচ্চারা ফুটবল খেলছিলো পার্কে। তারপর রেহান আমাকে আইসক্রিম কিনে আনবে বলে বসিয়ে চলে যায়। পড়ে খুঁজে বের করে দেখি এই ছেলে আরেক মেয়ের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। আর হাতের আইসক্রিম গলে পানির মতো হাত থেকে পরছিলো। আমার রাগে মাথা ফেটে যায়। আর আমি চলে আসি।”

জোতি মুখ ফুলিয়ে আবার বললো
” কি করবো বলতো! ভালোবাসি বলেই কথা না বলে থাকতে পারি না। আমি কথা না বলা পর্যন্ত রেহানের দোষ না থাকলেও কতোবার সরি বলে ক্ষমা চায়। ওর কথার রেসপন্স না দিলে মনের ভেতর ছটফট করে।” রিধিশা আলতো হাসলো। জোতি রিধিশার হাত ধরে গরম লাগায় কপাল ছুঁয়ে বলে
” কিরে তোর তো জ্বর! তুই জ্বর নিয়ে চলে এসেছিস?”
” আরে একটু খানি জ্বর। এতে কিছু হবে না। ক্লাসে মন দে স্যার আসছে।”

ভার্সিটি শেষে রিধিশা বাসায় আসার জন্য পথ দেয়। সকাল থেকে শরীর কিছুটা খারাপ থাকলেও ব্রেক টাইমের পর থেকে বেশি শরীর খারাপ লাগছে তাই টিউশনিতে যাওয়ার ইচ্ছে হলো না। শরীর ক্লান্তিতে ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা।
” রিধিশা!”
হাটার মাঝে হঠাৎ পেছন থেকে ডাক শুনে রিধিশা তাকিয়ে দেখে নিশাদ দ্রুত পায়ে তার কাছেই আসছে। রিধিশা শান্ত দৃষ্টিতে নিশাদের দিকে তাকালো। নিশাদ ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করলো
” এদিকে কোথায় যাও? তোমার না এই সময় টিউশনি থাকে?” রিধিশা ধীর গলায় বললো
” বাসায় যাচ্ছি।” নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” তোমার শরীর খারাপ? গলা এমন লাগছে কেনো?”
” নাহ এমনি, আপনি কোথা থেকে আসলেন?”

কথা শেষ করতেই রিধিশার চোখের সামনের সব ঝাপসা হয়ে যায়।
নিশাদ বলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলো কিন্তু তার আগেই রিধিশা মাথা ঘুরে পড়ে যায়। নিশাদ রিধিশা বলে চেঁচিয়ে রিধিশাকে আগলে ধরে। নিশাদ রিধিশার কপালে হাত রেখে চমকে বিড়বিড় করে বললো
” মেয়েটার গায়ে এতো জ্বর! শরীর খারাপ নিয়ে ঘুরছে আবার বলে শরীর খারাপ না!”
নিশাদ ব্যস্ততার সঙ্গে তড়িঘড়ি করে গাড়ি ডেকে রিধিশাকে নিয়ে হসপিটালের দিকে রওনা দেয়।

.
ডক্টর রিধিশার চেকাপ করছে। নিশাদের চিন্তায় কপাল বেয়ে ঘাম ঝরছে। অস্বাভাবিক ভাবে বুক ধড়ফড় করছে নিশাদের। পথে রিধিশার জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করেছিলো কিন্তু জ্ঞান ফিরেনি। নিশাদ রেহানকে কল করে কিন্তু রেহানের কল রিসিভ হয়নি। ডক্টর বের হতেই নিশাদ দ্রুত পায়ে তার কাছে
যেতেই ডক্টর বললো
“১০৫ ডিগ্রি জ্বরের তাপমাত্রা। শরীর এমনিতে দুর্বল থাকায় প্রচণ্ড জ্বরে আরো প্রভাব পড়েছে তাই অজ্ঞান হয়ে গিয়েছে। স্যালাইন দিতে হয়েছে কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরবে।”
নিশাদ ঢোক গিলে চিন্তিত হয়ে বললো
” এছাড়া আর সব ঠিকাছে তো? মানে হঠাৎ করে এতো জ্বর কিভাবে হলো?”

ডক্টর হেসে বলে
” সবই ঠিকাছে। জ্বর খুব বেশি তাই ইনজেকশন দিয়েছি। আশাকরছি কয়েকঘন্টায় জ্বর কিছুটা কমে যাবে।” ডক্টর চলে যায়। নিশাদ কেবিনে ঢুকে পড়লো। রিধিশার দিকে তাকিয়ে নিশাদ রাগি গলায় বললো
” জেদি একটা মেয়ে। একা থেকে মরে গেলেও কি হয়েছে সেটা বলবে না। এতো জ্বর নিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার কি দরকার ছিলো?” নিশাস রেগে বাইরে চলে গেলো আবার ফিরে এসে বেডের পাশে চেয়ার টেনে বসে। রেহান, সূর্যকে কল করতে থাকে রেহান ধরেনি একবারও। সূর্যকে দ্বিতীয় বার কল করতেই রিসিভ করে। নিশাদ রেগে বলে উঠে
” তোদের সব গুলোর কি একসাথে ইন্তেকাল হইছে? রেহান কই? দুইঘন্টা ধরে কয়টা কল দিছি ওর খেয়াল আছে?”

” আরে রেহানকে দেখছি ফুটবল খেলতেছিলো মাঠে। মোবাইল হয়তো ব্যাগে রেখে দিছে। কিন্তু এতো কল কেনো? তোর চাকরি হইছে তো?”
” আরে চাকরির কথা বাসায় এসে বলবো। রিধিশা হসপিটালে আছে রেহানকে গিয়ে বল জোতি’কে নিয়ে আসতে।”
” আচ্ছা যাচ্ছি আমি।” নিশাদ রিধিশার দিকে তাকিয়ে থাকে।

.
পিটপিট করে চোখ খুলে রিধিশা। চোখের সামনের ঝাপসা ঝাপসা ভাবটা কেটে ধীরেধীরে স্পষ্ট হলো। রিধিশা পাশে তাকিয়ে নিশাদকে কপালে হাত দিয়ে বসে থাকতে দেখে। রিধিশার রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার কথা মনে আসে। রিধিশা কথা বলার শক্তি পেলো না। বা হাতের আঙুল নাড়িয়ে নিশাদের হাত ছোঁয়।
নিশাদ চমকে রিধিশার দিকে তাকিয়ে উৎসাহিত গলায় বললো
” তোমার জ্ঞান ফিরেছে? কেমন লাগছে এখন? তোমার জ্ঞান ফেরার অপেক্ষা করছি কতোক্ষণ ধরে।”

রিধিশা দুর্বল আর অবুঝ দৃষ্টিতে তাকায়। নিশাদ নিজের কপাল থাপড়ে বিরবির করে বললো
” কি উল্টো পাল্টা কথা বলছি আমি? পাগল হয়ে গিয়েছি বোধয়।” নিশাদ রিধিশার হাতের উপর হাত রেখে বললো
” এখন কেমন লাগছে?”
” ভা…লো।” রিধিশা কোনোরকমে উত্তর দেওয়া চেষ্টা করে। নিশাদ এবার শক্ত গলায় বললো
” হ্যা, কেমন ভালো তা দেখতেই পাচ্ছি। এতো জ্বর নিয়ে ভার্সিটিতে যাওয়ার শখ উঠেছিলো কেনো তোমার? জ্বরের জন্য রাস্তায় অজ্ঞান হয়ে গেলে আজকে আমি না থাকলে তোমাকে কেউ এসে বাঁচাতো? কতো গাড়ি আসে সেই রাস্তা দিয়ে যদি কোনো অঘটন… আর বললাম না।”

রিধিশা শান্ত দৃষ্টিতে নিশাদকে দেখছে। নিশাদের চোখে মুখে নিজের জন্য চিন্তার ছাপ দেখতে পাচ্ছে। নিশাদ রাগি গলায় বললো
” কিছু বলবে তো!” রিধিশা ঠোঁট জোড়া নাড়িয়ে অস্পষ্ট ভাবে কিছু কথা বলে কিন্তু নিশাদের কান পর্যন্ত আসলো না কথা গুলো। জোড়ে বলার জন্য গায়ে একদমই শক্তি নেই। নিশাদ কিছুক্ষণ তাকিয়ে বললো
” খারাপ লাগছে? ডক্টরকে ডাকবো?” রিধিশা চোখের ইশারায় না বোঝালো। নিশাদ রিধিশার পাশে বসে বলল
” সুস্থ হও তারপর নাহয় কথা বলবো সব। একটা গুড নিউজ বলতে এসেছিলাম আর এরমাঝেই অঘটন ঘটে গেলো।” রিধিশা জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকায়। এরমাঝে ডক্টর ঢোকে কেবিনে।

ডক্টর রিধিশাকে দেখতে দেখতে নিশাদের উদ্দেশ্যে বললো
” এখন শান্তি পাচ্ছেন? দুপুর থেকে ৪চারবার ডেকে এনেছেন জ্ঞান ফিরছে না দেখে। এখন জ্ঞান ফিরেছে।” ডক্টরের কথায় রিধিশা নিশাদের দিকে তাকায়। নিশাদ লজ্জা পেয়ে যায়।
তখন তো চিন্তায় মাথায় কাজ করেনি এতো কিছু কি আর ভেবেছে?

নিশাদের ভাবনার মাঝে ডক্টর বললো
” আজকের রাতটা থাকতে হবে এখানে। শরীর বেশি দুর্বল পেশেন্টের। কন্ডিশন খারাপও হতে পারে আবার তাই রিস্ক না নেওয়া বেটার।” ডক্টর চলে যায়।
নিশাদ ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার ফোন করলো রেহানকে। ফোন রিং হচ্ছে এখনও। নিশাদ রেহানের ফোনের রিংটোনের শব্দ শুনতে পেয়ে বাইরে তাকায়।
রেহান আর জোতি কেবিনে ঢুকতেই নিশাদ ক্ষিপ্ত গলায় বললো
” কতো ঘন্টা আগে তোদের জানিয়েছি আসার জন্য?
দুপুর পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়েছে আর তোদের আসার সময় হয়েছে? না আসলেই হতো!”

” আরে হোস্টেল থেকে বের হতেই দিচ্ছিলো না। কিসের নাকি স্ট্রেট রুলস করেছে। কতো কিছু করে এসেছি!”
জোতি রিধিশার কাছে গিয়ে দেখে রিধিশা আবার ঘুমিয়ে গিয়েছে। নিশাদ জোতিকে বললো
” তুমি জানতে না রিধিশার জ্বর ছিলো?” জোতি মাথা নেড়ে বললো
” হ্যা জানতাম। ক্লাসে ওকে বলেছিলাম বাসায় ফিরে রেস্ট নিতে কিন্তু রিধি বললো একটু জ্বরে কিছু হবে না। ক্লাসে আরো বলেছিলাম কিন্তু শোনেনি।
রিধিশার দিকে তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকায় নিশাদ। এতো জেদি কেনো বুঝে না নিশাদ।

চলবে………

#কুঁড়েঘর
#লেখিকা–মার্জিয়া রহমান হিমা
[ দ্বিতীয় পরিচ্ছদ ]
। পর্ব ৩১।

সন্ধ্যা পেড়িয়ে রাত হয়ে যায় কিছু সময়ের ব্যাবধানে। রিধিশাকে আজকে হসপিটালেই থাকতে হবে। জোতি রিধিশার সাথে থাকতে চায় আর নিশাদও যেতে চাইছে না। রেহান নিশাদকে বললো
” তোর চাকরির কি খবর? ইন্টার্ভিউ কেমন দিয়েছিলি?”
” অনেক ভালোছিলো আর চাকরিটাও হয়ে গিয়েছে।”
রেহান অবাক হয়ে বললো
” চাকরি হয়েছে বলবি না আগে? সূর্য আর সাদি চিন্তা করছিলো।” নিশাদ গম্ভীর গলায় বললো
” চিন্তা দূর করতেই তো আসছিলাম। মাঝ পথেই রিধিশাকে পেলাম তারপর তো চিন্তায় বলাই হলো না।

জোতি নিশাদের কাছে এসে বললো
” তাহলে ভাইয়া আপনার তো অফিস আছে। আপনি বাসায় চলে যান আমি আছি তো।” নিশাদ ভ্রু কুঁচকে বললো
” বাইরের কোনো কিছুর দরকার হলে কি তুমি আনতে পারবে? আর কালকে ফ্রাইডে অফিস বন্ধ। আর শনি বারও তো এখন বন্ধ থাকে। তাই আমার অফিস নিয়ে চিন্তা করতে হবে না। আমি আজকে রাতে এখানেই আছি।”
রেহান কোমড়ে হাত রেখে দুজনের দিকে তাকিয়ে বললো
” তাহলে আমি আর একা গিয়ে কি করবো? আমিও আজকে থেকে যাচ্ছি।”

নিশাদ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললো
” এমন ভাবে বলছিস যেনো পিকনিক করতে বসেছি আমরা! হসপিটাল এটা।” রেহান চেয়ারে টেনে বসে বললো
” ধুর হসপিটাল তো কি হয়েছে? আমরা কি নাচ গান করবো নাকি?” ওদের কথা বলার মাঝে রিধিশার ফোন বেজে উঠে। তিনজনের দৃষ্টি ফোনের দিকে যায়। জোতি গিয়েই কে ফোন করেছে না দেখে রিসিভ করে কথা বলতে থাকে। কথা শেষে নিশাদ জিজ্ঞেস করে
” কে ছিলো?”
জোতি গা ছাড়া ভাব নিয়ে বললো
” একটা ছেলে। রিধি’র ভাইয়া মনে হয়।” রেহান ভ্রু কুঁচকে বললো
” মনে হয় মানে? নাম দেখোনি কে?” জোতির বোকার মতো মাথা নেড়ে না বললো।

.
নিশাদ রিধিশার পাশে বসে আছে। জোতি আর রেহান নিচে গিয়েছে। রিধিশার মলিন চেহারাটা দেখে নিশাদের বুকের বা পাশ’টা ব্যাথা করছে। নিশাদ রিধিশার মাথা হাত বুলিয়ে দিতে থাকে। রিধিশার ঘুম ভেঙ্গে যায়। রিধিশা দুর্বল দৃষ্টিতে তাকায় নিশাদের দিকে। নিশাদ তড়িঘড়ি করে তার হাত সরিয়ে নেয়। রিধিশাকে দেখে মনে হলো নিশাদকে দেখে অবাক হয়েছে। রিধিশা ধীর গলায় বললো
” আপনি এখনও আছেন? বাসায় যাবেন না?” নিশাদ গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো
” বাসায় যাওয়ার পথ বন্ধ করে বলছো বাসায় যাবেন না? স্বার্থপর মেয়ে! তাড়াতাড়ি সুস্থ হও তোমাকে পানি চুবিয়ে শাস্তি দেবো। আমাকে কতো চিন্তায় ফেলেছিলে!”

রিধিশা মিহি হেসে বললো
” আমাকে নিয়ে এতো চিন্তা কিসের আপনার? আমার জন্য এতো চিন্তা কেনো করেন আপনি?”
” কোথায় চিন্তা করি আমি তোমার জন্য? তোমার জন্য অন্যকেউ থাকলেও আমি এমন করতাম ঠিকাছে? নিজেকে স্পেশাল মনে করো না, হুহ!”
রিধিশা শান্ত চোখে তাকিয়ে থাকে নিশাদের দিকে। কিছুক্ষণ পর বললো
” আমি বাসায় যাবো। নিয়ে চলুন আমাকে।” নিশাদ
বললো
” যেতে পারবে না তুমি। আজকে এখানেই থাকতে হবে তোমাকে।” রিধিশা জেদি গলায় বললো
” না আমি বাসায় যাবোই আপনি ডক্টরকে বলুন।”

নিশার ধমক দিয়ে বললো
” চুপ করে মুখটা বন্ধ করে রাখো। এতোক্ষণ ধরে গলা দিয়ে আওয়াজই বের হচ্ছিলো না। আর এখন আবার শুরু হয়েছে তার জেদ। এতো জেদি কিভাবে হয়েছো তুমি? বাসায় গিয়ে আরো অসুস্থ হলে হয়ে পড়লে কে দেখবে তোমাকে? আর হসপিটালেই বা কে নিয়ে আসবে? ডক্টর যা বলেছে চুপচাপ শোনো নাহলে বলো আমাকে ক্যাম্পাসের পাশের লেকে তোমাকে ফেলে দিয়ে আসি।” রিধিশা মুখ কালো করে শুইয়ে থাকে। নিশাদ বিড়বিড় করে রিধিশাকে বকে যাচ্ছে।
কিছুক্ষণ পর জোতি আর রেহান খাবার নিয়ে আসে। সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে।
.
রাত বাড়তেই রিধিশার আবারও গা কাপিয়ে তীব্র জ্বর
আসে। একসময় নিশ্বাস নিতে সমস্যা দেখা যায় তখন অক্সিজেন দেওয়া হয় রিধিশাকে। নিশাদ চিন্তায় অস্থির হয়ে উঠেছে। এক দণ্ড বসতে পারছে না বারবার পাইচারি করছে আর ডক্টরের সাথে কথা বলছে। রেহান নিশাদের এতো অস্থিরতা দেখে ভাবনায় পড়ে যাচ্ছে বারবার।

.
ঘুমের ঘোড় কাটিয়ে জেগে উঠে রিধিশা। চারপাশে তাকিয়ে দেখে বেডের এক পাশে নিশাদ মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। জোতি আর রেহান চেয়ারে বসে দেয়ালে হেলান দিয়ে একে অপরের কাধে মাথা রেখে। তিনজনকে দেখে খারাপ লাগলো রিধিশার। তার জন্য তিনজন কতো কষ্ট করছে।

রিধিশাকে নিয়ে বাসায় ফিরে যাচ্ছে। জোতি রিধিশার সাথে হাটতে হাটতে বললো
” তোর জন্য নিশাদ ভাইয়ার কালকে কি ছটফটানি! বারবার অস্থির হয়ে যাচ্ছিলো রাতে। আমার তো মনে হয় ভাইয়া তোকে খুব ভালোবাসে।” রিধিশা আলতো হেসে বললো
” কে বলেছে তোকে? আমার জায়গায় অন্যকেউ থাকলে এমনই করতেন উনি নিজে বলেছেন আমাকে। তাই এসব উল্টো পাল্টা ভাবিস না।”
জোতি নাকচ স্বরে বললো
” তুই বললেই হলো তাই না? আমিও একজনকে ভালোবাসি ঠিকাছে! কে কাকে ভালোবাসে সেটা দেখলেই হয়তো বুঝতে পারিনা। কিন্তু কিছু কিছু ভালোবাসায় তাদের আচার-আচরণ, কেয়ার, অস্থিরতা এসব দেখেই বোঝা যায় বা উপলব্ধি করা যায় যে সে ভালোবাসে কিনা। তোকে বুঝতে না দেওয়ার জন্য হয়তো ভাইয়া এমন বলেছে কিন্তু ভাইয়ার মনে তোর জন্য অনুভূতি রয়েছে।”

রিধিশা কথা ঘুমানোর জন্য বললো
” তুই হাটবি তো নাকি! এতো ধীরেধীরে হাটছিস যেনো আমি না তুই অসুস্থ ছিলি।” জোতি হাটার গতি বাড়িয়ে বললো
” আরে বাবা হাটছি তো।”
রিশিশাকে বাসায় নিয়ে আসে। জোতি রিধিশার সাথেই থাকবে সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।

নিশাদ বাসায় ঢুকতেই সূর্য আর সাদি হামলে পড়ে। নিশাদ ওদের শান্ত করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে এসে তিজনকে চাকরির ইন্টার্ভিউর কথা বলতে থাকে। সূর্য আর সাদিও খুশি হয়ে যায়। সূর্য আনন্দিত গলায় বললো
” আংকেল’কে জানিয়েছিস তো!” নিশাদ মাথা নেড়ে বললো
” না, হসপিটালে খেয়ালই ছিলো না। জানাবো আজকে।” সাদি জিজ্ঞেস করলো
” কিন্তু রিদিশার কি হয়েছিলো? হঠাৎ এতো অসুস্থ?”
রেহান মাথায় চাটি মেরে বললো
” অসুস্থ কি আগের থেকে বলে কয়ে আসে নাকি মেহমানদের মত?”
নিশাদ তিনজনকে বলে রুমে এসে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। ঘুম হয়নি কালকে তাই মাথা ব্যাথা করছে।

______________

কয়েকদিন অসুস্থ থেকে রিধিশা এখন সুস্থ হয়ে উঠেছে। জোতি রিধিশার সঙ্গেই থেকেছে তিনদিন গতকালই গিয়েছে হোস্টেলে। রিধিশার দেখাশোনা করার সাথে সাথে রেহানের সাথে চুটিয়ে প্রেম করেছে। রিধিধা ক্যালেন্ডারে আজকের তারিখ দেখে সেইদিনের তোলা ইন্টার্ভিউর ছবিটা দেখলো। আগামীকাল ইন্টার্ভিউ ডেট। রিধিশা ভাবছে একবার ট্রায় করে দেখবে।
টিউশনি থেকে এসে রিধিশা সব কিছু প্রস্তুত করে রাখে আগামীকালকের জন্য।

.
রিধিশা লিফট থেকে বের হতেই নিশাদ প্রথম দিনের মতো কালো জ্যাকেট পড়ে দাঁড়িয়ে থাকতে ফেখে ভয় পেয়ে যায়। রিধিশা বুকে থু থু দিয়ে রাগি গলায়!বললো
” আরে সমস্যা কি আপনার? এভাবে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে?” নিশাদ দাঁত কেলিয়ে বললো
” আমি দাঁড়িয়ে থাকি তোমার জন্য। একটু আগে আরেকজন আসলো সে ভয় পেলো না কিন্তু তুমি ঠিকই ভয় পেলে। আমাকে ভয় পাও নাকি তুমি?”
রিধিশা স্নেহাদের ফ্ল্যাটের দিকে যেতে যেতে বললো
” আপনাকে ভয় পাবো কেনো আমি? আপনি ভুত না বাঘ?”
” আমি বাঘ বুঝছো? আমাকে ভয় পাবা তাহলে শরীর স্বাস্থ্য ভালো থাকবে।”

রিধিশা নিশাদের দিকে তাকিয়ে ভেংচি দেয়। আচমকা নিশাদ রিধিশার হাত ধরে দেয়ালে মিশিয়ে রিধিশার দুই পাশে দেয়ালে হাত রাখে। রিধিশা বিস্ময়ের সাথে চোখ বড় বড় করে তাকায়। নিশাদ বাঁকা হেসে তাকিয়ে আছে। রিধিশার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে যায়। রিধিশা ভীতু স্বরে বললো
” ক…কি! ককি চাই আপনার?” নিশাদ মুখ এগিয়ে নিয়ে আসতে থাকে ধীরেধীরে। রিধিশা খিঁচে চোখ বন্ধ করে নেয়। নিশাদ ঠোঁট কামড়ে হেসে রিধিশার মুখে ফু দিয়ে বললো
” কি ভাবছিলে তুমি? তোমার সাথে রোমেন্স করবো আমি? ছি! এতো খারাপ ভাবনা নিয়ে চলো!”

রিধিশা চোখে খুলে তাকায়। লজ্জায় আর অপমানে মুখ থমথমে হয়ে গেলো। রিধিশা নিশাদের বুকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো
” আপনি তো কতো ভালো ভাবেন থাকেন। শয়তান ছেলে।” নিশাদ রাগি গলায় বললো
” কি বললে তুমি?” রিধিশা স্নেহাদের দরজায় টোকা দিয়ে বললো
” শয়তান নিশাদ একটা বিষাদ।” নিশাদ তেড়ে আসতেই স্নেহাদের দরজা খোলে দেয়। রিধিশা হেসে দৌঁড়ে ঢুকে পড়ে। নিশাদ মুখ ফুলিয়ে নিজের ফ্ল্যাটে ঢুকে গেলো।

চলবে…….